22-06-2020, 06:13 PM
(This post was last modified: 08-02-2021, 06:30 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।২।।
মানোয়ারার সঙ্গে স্নান করতে যায় বলদেব। ভাইজানের কপালে জোটেও মানোয়ারা ভাবে।এই ছেলেটা মজার একটা অভিজ্ঞতা।পুরুষের খবরদারিতে চলতে হয় মেয়েদের,কারও উপর খবরদারির সুযোগ পেলে ছাড়তে কেইবা চায়।লোকটার সঙ্গে একটু আলাপ করা যেতে পারে। কিন্তু কি বলবে?
--তোমার বিয়া করতে ইচ্ছা হয় কেন?
--অপা আমারে কিছু বললেং
--আমি তোমার অপা? তোমার বয়স কত?
--জ্বে সামনের রাস পুর্নিমায় এক কুড়ি চার হবার কথা।
--বললা না তো বিয়া করার ইচ্ছা হয় কেন?
--সারাদিন খাটাখাটনির পর এট্টু বাতাস দিবে,পানি আগাইয়া দিবে....দুইটা সুখ-দুঃখের কথা--।
--তুমি তো বেশ কথা কও।
--জ্বী আপনে কওয়াইলেন।
--আমি? তুমি তো বললা।
--অপা আপনে জিগাইলেন তাই বললাম।
কথা বলতে বলতে উদাস হয়ে যায় বলদেব।মানোয়ারা মূখ টিপে হাসে।অদ্ভুত মানুষ সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য বৌ? ওরা পুকুর ধারে এসে গেছে।
--সাবান মেখে গোসল করে আসো,বাড়ি চিনতে পারবে তো?
--জ্বি,যে পথে আসছি সেই পথে তো?
--না, ঘুর পথে।উজবুক আর কারে কয়।
--জ্বি, কিছু বললেন?
--হ্যাঁ।সেই পথে আসবা।মানোয়ারা ভাবে বলদা নাম সার্থক।
হন হন করে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। বলদেব অবশেষে চৌধুরী বাড়িতে বহাল হয়ে গেল। ফাইফরমাস খাটে। 'বলা এইটা করো, বলা অইটা করো" তাছাড়া বড় কর্তাকে ম্যাসেজ করা তো আছেই। ওকে সবাই বকায়,ভাল লাগে ওর কথা শুনতে। এই প্যাঁচালো সংসারে এমন একজন সরল মানুষ যেন মরুভুমিতে পান্থপাদপের ছায়া। ছোট বড় মেয়ে পুরুষ সবার পছন্দ বলদেবকে। সে কোন কাজ পারে না যার প্রযোজন তাকেই তার মত করে আদায় করে নিতে হবে।যেমন আগুন দিয়ে বিড়ি ধরাও,শীতের তাপ পোয়াও, আন্ধার দূর করো বা কারো ঘর জ্বালাও। সেইটা তোমার বিবেচ্য আগুনের না।যে যেমন ভাবে চায় বলদেব তারে সেইভাবে সেবা করে।মুখে বিরক্তি বা না নাই।এমন একটা লোকের অঞ্চলে জনপ্রিয় হতে সময় লাগেনা।
বলদেব চুপচাপ অলস বসে থাকতে পারে না। হাতে যখন কাজ থাকে না বলদেব গ্রাম ঘুরতে বের হয়।
গ্রামের পুব দিকের সীমানায় কয়েক ঘর কুমোরের বাস।লোকে বলে কুমোর পাড়া।একটা বাড়ির দাওয়ায় সারি সারি রঙ নাকরা কাচা মাটির পুতুল রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে।উঠানে কাদামাটির উপর মধ্য বয়সী এক মহিলা হাটু অবধি কাপড় তুলে পা দিয়ে নেচে নেচে মাটি মাখছে।বলদেব দাঁড়িয়ে পড়ে মাটি মাখা দেখতে থাকে। মহিলার নজরে পড়তে নাচ থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি দেখতেছো।
--এত মাটি দিয়ে কি হবে?
--এ গিরামে তুমারে আগে তো দেখি নাই।থাক কই?
--নতুন এসিছি।মোবারক সাহেবরে চিনেন?
--বড় কত্তা?তানারে কে না চেনে।
--হ্যা ওনার বাড়ি কামে লেগেছি।
--কি কাম করো?
--গরুরে জাব দেওয়া বাগানে নিড়েন দেওয়া যেমন যেমন কয়।
--তুমি হিদু না?
--তা বলতি পারেন।
--সেইটা কি কথা?তুমার নাম কি?
--আমার প্রকৃত নাম বলদেব সোম কেউ বলে বলা কেউ বলে বলদা।
মহিলা খিল খিল করে হেসে ফেলে।মানুষটা বেশ মজার।নাম শুনে মনে হচ্ছে মোছলমান নয়।
একটি বছর পনেরোর মেয়ে বাটিতে করে চা নিয়ে এল।মহিলা মাটি হতে নেমে পায়ের কাদা কেখে বালতির জলে হাত ধুয়ে মেয়েটির হাত হতে এক ভাড় চা নিয়ে বলল,চা খাবা?
--কেউ বললি না বলতি পারিনে।
মুচকি হেসে মেয়েটিকে আরেকটা ভাড় আনতে বলল।বলদেবকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলল,আমরা কুমোর আমার স্বামী--এই ছেড়ি তোর বাপের নাম কি বল।
--নিতাই চন্দ্র পাল।
--পোতিমা গড়ে।একডাকে গিরামে সবাই চেনে।বেশ জাঁক করে স্বামীর গুন গায়।
--কি প্রতিমা গড়ে?
--যে যেমন বায়না দেয়।দুগগা কালি শেতলা।
নিতাই পালের বউ সাধারনত পরপুরুষের সঙ্গে এত কথা বলে না।এই মানুষটা অন্যরকম অনাবিল চোখের দৃষ্টি।বেশ কথা বলে শুনতে ইচ্ছে করে।জিজ্ঞেস করে।কিছু বলতিছেন না?
--ভাবতিছি আপনে পা দিয়ে মাটি ছানতিছিলেন কিন্তু প্রতিমা হয়ে গিলি পা দিতি পারবেন না।
শিউরে ওঠে নিতাই পালের বউ।এইভাবে তো কখনো ভাবেনি।
বলদেব বলে,জলে ভিজোলে আবার যেকে সেই মাটি।মানুষের মত।এক মাটিতে কতরকমের প্রতিমা একমানুষের কত রকম রূপ।যে যেমন পারে কাজে লাগায়।
নিতাই পালের বউ মুগ্ধ বিস্ময়ে বলদেবের কথা শোনে।মায়া বোধ হয় জিজ্ঞেস করে,মুড়ি খাবা?
বলদেব লাজুক হাসে।এই এক দোষ, খাবার ব্যাপারে না বলতে পারে না।
নিতাই পালের বউ মেয়েকে বলল,যাতো এক বাটি মুড়ি নিয়ে আয়।
মানোয়ারার সঙ্গে স্নান করতে যায় বলদেব। ভাইজানের কপালে জোটেও মানোয়ারা ভাবে।এই ছেলেটা মজার একটা অভিজ্ঞতা।পুরুষের খবরদারিতে চলতে হয় মেয়েদের,কারও উপর খবরদারির সুযোগ পেলে ছাড়তে কেইবা চায়।লোকটার সঙ্গে একটু আলাপ করা যেতে পারে। কিন্তু কি বলবে?
--তোমার বিয়া করতে ইচ্ছা হয় কেন?
--অপা আমারে কিছু বললেং
--আমি তোমার অপা? তোমার বয়স কত?
--জ্বে সামনের রাস পুর্নিমায় এক কুড়ি চার হবার কথা।
--বললা না তো বিয়া করার ইচ্ছা হয় কেন?
--সারাদিন খাটাখাটনির পর এট্টু বাতাস দিবে,পানি আগাইয়া দিবে....দুইটা সুখ-দুঃখের কথা--।
--তুমি তো বেশ কথা কও।
--জ্বী আপনে কওয়াইলেন।
--আমি? তুমি তো বললা।
--অপা আপনে জিগাইলেন তাই বললাম।
কথা বলতে বলতে উদাস হয়ে যায় বলদেব।মানোয়ারা মূখ টিপে হাসে।অদ্ভুত মানুষ সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য বৌ? ওরা পুকুর ধারে এসে গেছে।
--সাবান মেখে গোসল করে আসো,বাড়ি চিনতে পারবে তো?
--জ্বি,যে পথে আসছি সেই পথে তো?
--না, ঘুর পথে।উজবুক আর কারে কয়।
--জ্বি, কিছু বললেন?
--হ্যাঁ।সেই পথে আসবা।মানোয়ারা ভাবে বলদা নাম সার্থক।
হন হন করে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। বলদেব অবশেষে চৌধুরী বাড়িতে বহাল হয়ে গেল। ফাইফরমাস খাটে। 'বলা এইটা করো, বলা অইটা করো" তাছাড়া বড় কর্তাকে ম্যাসেজ করা তো আছেই। ওকে সবাই বকায়,ভাল লাগে ওর কথা শুনতে। এই প্যাঁচালো সংসারে এমন একজন সরল মানুষ যেন মরুভুমিতে পান্থপাদপের ছায়া। ছোট বড় মেয়ে পুরুষ সবার পছন্দ বলদেবকে। সে কোন কাজ পারে না যার প্রযোজন তাকেই তার মত করে আদায় করে নিতে হবে।যেমন আগুন দিয়ে বিড়ি ধরাও,শীতের তাপ পোয়াও, আন্ধার দূর করো বা কারো ঘর জ্বালাও। সেইটা তোমার বিবেচ্য আগুনের না।যে যেমন ভাবে চায় বলদেব তারে সেইভাবে সেবা করে।মুখে বিরক্তি বা না নাই।এমন একটা লোকের অঞ্চলে জনপ্রিয় হতে সময় লাগেনা।
বলদেব চুপচাপ অলস বসে থাকতে পারে না। হাতে যখন কাজ থাকে না বলদেব গ্রাম ঘুরতে বের হয়।
গ্রামের পুব দিকের সীমানায় কয়েক ঘর কুমোরের বাস।লোকে বলে কুমোর পাড়া।একটা বাড়ির দাওয়ায় সারি সারি রঙ নাকরা কাচা মাটির পুতুল রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে।উঠানে কাদামাটির উপর মধ্য বয়সী এক মহিলা হাটু অবধি কাপড় তুলে পা দিয়ে নেচে নেচে মাটি মাখছে।বলদেব দাঁড়িয়ে পড়ে মাটি মাখা দেখতে থাকে। মহিলার নজরে পড়তে নাচ থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি দেখতেছো।
--এত মাটি দিয়ে কি হবে?
--এ গিরামে তুমারে আগে তো দেখি নাই।থাক কই?
--নতুন এসিছি।মোবারক সাহেবরে চিনেন?
--বড় কত্তা?তানারে কে না চেনে।
--হ্যা ওনার বাড়ি কামে লেগেছি।
--কি কাম করো?
--গরুরে জাব দেওয়া বাগানে নিড়েন দেওয়া যেমন যেমন কয়।
--তুমি হিদু না?
--তা বলতি পারেন।
--সেইটা কি কথা?তুমার নাম কি?
--আমার প্রকৃত নাম বলদেব সোম কেউ বলে বলা কেউ বলে বলদা।
মহিলা খিল খিল করে হেসে ফেলে।মানুষটা বেশ মজার।নাম শুনে মনে হচ্ছে মোছলমান নয়।
একটি বছর পনেরোর মেয়ে বাটিতে করে চা নিয়ে এল।মহিলা মাটি হতে নেমে পায়ের কাদা কেখে বালতির জলে হাত ধুয়ে মেয়েটির হাত হতে এক ভাড় চা নিয়ে বলল,চা খাবা?
--কেউ বললি না বলতি পারিনে।
মুচকি হেসে মেয়েটিকে আরেকটা ভাড় আনতে বলল।বলদেবকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলল,আমরা কুমোর আমার স্বামী--এই ছেড়ি তোর বাপের নাম কি বল।
--নিতাই চন্দ্র পাল।
--পোতিমা গড়ে।একডাকে গিরামে সবাই চেনে।বেশ জাঁক করে স্বামীর গুন গায়।
--কি প্রতিমা গড়ে?
--যে যেমন বায়না দেয়।দুগগা কালি শেতলা।
নিতাই পালের বউ সাধারনত পরপুরুষের সঙ্গে এত কথা বলে না।এই মানুষটা অন্যরকম অনাবিল চোখের দৃষ্টি।বেশ কথা বলে শুনতে ইচ্ছে করে।জিজ্ঞেস করে।কিছু বলতিছেন না?
--ভাবতিছি আপনে পা দিয়ে মাটি ছানতিছিলেন কিন্তু প্রতিমা হয়ে গিলি পা দিতি পারবেন না।
শিউরে ওঠে নিতাই পালের বউ।এইভাবে তো কখনো ভাবেনি।
বলদেব বলে,জলে ভিজোলে আবার যেকে সেই মাটি।মানুষের মত।এক মাটিতে কতরকমের প্রতিমা একমানুষের কত রকম রূপ।যে যেমন পারে কাজে লাগায়।
নিতাই পালের বউ মুগ্ধ বিস্ময়ে বলদেবের কথা শোনে।মায়া বোধ হয় জিজ্ঞেস করে,মুড়ি খাবা?
বলদেব লাজুক হাসে।এই এক দোষ, খাবার ব্যাপারে না বলতে পারে না।
নিতাই পালের বউ মেয়েকে বলল,যাতো এক বাটি মুড়ি নিয়ে আয়।