Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
শিকড় (কালেক্টেড) "Complete"
#27
সৌম্যগন্ধা
জীবনে প্রথম আমার প্রথম সন্তান কে জন্মদিনে রান্না করে খাওয়াতে পারলাম। সারা সন্ধ্যা অনুর উপস্থিতি আমাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রেখেছিল। কি সুন্দর মেয়ে, কি মিষ্টি কথা। রজত ওকে গান গাইতে বললে “ আমি আমার সব চাইতে প্রিয় বাংলা গান গাইছি, কেমন”, গাইল “তুমি এলে, অনেকদিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো, তুমি এলে এলোমেল অনেক কথাই মনে হোল” একেবারে আমার মনের কথা। শেষে যখন “ আমার অনেক কাজের মাঝে যেন হাঠাৎ ছুটি হোল”, জল এনে দিল চোখে । কি সুন্দর ভাবে বড় করেছে ওকে কাকলি। খাবার পর ডিস ধোবার সময় হাত লাগাল।কথায় কথায় বলল “আমার জন্মদাত্রী আমার ১১ মাস বয়েসে ফেলে পালিয়ে যান।তানার চলে যাওয়া আমি বুঝি নি, কেননা মা আছেন। জন্মদাত্রী আলাদা কিছু হতেন না। মা আর আমার দুজেনেরই ভুবনজোড়া মেয়ে আর মা।কিন্তু বাবার জীবন শেষ হয়ে গেছে। বাবা প্রায়ই বলতেন “ চলে গেল কেন, চাইলে তো ডিভোর্স দিতাম, পালিয়ে কেন গেল। আমার সর্টকামিংস গুলো কোনদিন জানতে পারলাম না। বাবা আর বিয়ে করেন নি। দাদু দিদিমা এখনও বাবার সামনে মুখ তুলে কথা বলতে পারেন না” লজ্জ্বায় মাথা নিচু করে নিলাম, চোখের জল ঢাকতে বার বার চোখে জল দিচ্ছিলাম। জিজ্ঞাসা করতে মিথ্যার আশ্রয় নিলাম” সাবান ঢুকেছে”।চলে ষাবার সময় নিজেকে সামলাতে পারলাম না। জল ভরা চোখে জড়িয়ে নিয়ে বললাম” আমার যদি তোমার মতো একটা মেয়ে থাকত”। হেসে উত্তর দিল “বন্ধুর মা তো নিজের মা। আমি আবার আসব, বার বার আসব”
কিচেন এ ডিস ধোবার সময় দেখলাম গলায় একটি সোনার চেনে ত্রিনয়ন আঁকা রুপোর লকেট, একটু বড়। বলল মা পরিয়ে দিয়েছেন। আমি কি পারতাম এত সুন্দর ভাবে ওকে বড় করতে? বোধহয় না, কারন আমার ‘অসভ্য আমি’।

অহনা


অহনা


আমি আর সন্দীপ ইচ্ছা করেই সমকে এভোএড করতে থাকলাম। কিন্তু সম লেগেই থাকে। যাই হোক মাস দুই পর ওই পার্কে আমি আর সন্দীপ হাঁটছি, সম এলো দৌড়াতে দৌড়াতে
......অনা, আজ আমার জন্মদিন, মা তোমাদের দুজনকে নিমন্ত্রন করেছেন, চল।
......শুভ জন্মদিন সম। কিন্তু আমরা ষেতে পারব না
...... কেন অনা, আমার যে আর বন্ধু নেই সুধু তোমরা দুজন। প্লিস চল
......না সম ভাল লাগছে না। যাব না
......কিন্তু কেন? আমরা সবাই তোমায় ভালবাসি, তুমি কেন যাবে না
......যাব না সম। মিছা মিছি বল না। ভাল লাগছে না
......তখন থেকে খালি একই কথা বলে জাচ্ছ, ভাল লাগছে না, কিন্তু কেন তুমি আমাকে এভোএড করছ আজকাল, কি করেছি আমি, তোমাকে বলতেই হবে?...।।সম আমার হাত ধরে ঝাঁকানি দিতে
......হাত ছাড় সম
......না ছাড়বো না, তোমায় উত্তর দিতেই হবে
......হাত ছাড় সম, ভাল লাগছে না আমার......চেচিয়ে উঠলাম আমি
সন্দীপ এসে সমকে সরাতে গেলে, এক ঝটকায় সন্দীপকে ফেলে দিল সম। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল, সপাটে চড় মারলাম সমকে
......তুমি আমায় মারলে, এই জন্যই মা বাঙ্গালিদের সঙ্গে মিশতে না করে
আগুন লাগল মাথায় ওর মা-এর কথা শুনে, কলার ধরে হিস হিস করে উঠলাম
.........শুনবে তুমি, সত্যি কথা, সহ্য করতে পারবে সত্য কে
.........কি সত্য অনা, কি সত্যর কথা তুমি বলছ
......বাড়ি গিয়ে তোমার মা-কে জিজ্ঞাসা কর অনিমেষ ঘোষাল কে, তোমার বাবাকে জিজ্ঞাসা কর শেখর সেন কে। যাও সত্যর মুখোমুখি দাড়াও... দু হাতে এক ধাক্কায় সমকে মাটিতে ফেলে অনেক খানি দৌড়ে এক বেঞ্চিতে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। সন্দীপ এসে পাশে বসে জড়িয়ে ধরে
.........অনু এ তুমি কি করলে, অনু এ তুমি কি করলে? ......সন্দীপের কাধে মাথা রেখে কাঁদছি । পরাজিত সৈনিকের মতো আস্তে আস্তে সম এসে সামনে দাঁড়াল
......অনা, তোমার প্রশ্নর ঠিকঠাক উত্তর যদি না পাই, তাহলে কোনদিন আর আসব না......ধির পায়ে নিজের মৃতদেহ বহন করছে এমন ভাবে হেটে গেল সম
......অনু আজকের রাত তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। আজ ভয়ঙ্কর রাত।
সন্দীপের ঘরে ঢুকে প্রথমেই একটা বোতল চোখে পড়ল, বেশ খানিকটা মদ আছে। বোতল খুলে ধক ধক করে খেতেই সন্দীপ বোতল ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করল। এক ঝটকায় ওকে সরিয়ে আরও খানিকটা খেয়ে চুপ করে বসে থাকতে থাকতে কেঁদে দিলাম সন্দীপ কে জড়িয়ে, জানিনা কখন ঘুমিয়ে পরেছি ওই অবস্থাতেই। ঘুম ভেঙ্গে গেল মোবাইলের শব্দে, ঘুম চোখে মনে হোল সমের নম্বর
......হ্যালো
......অ.........নু এ তুই কি করলি অ...নু......সমের মা। অজানা আশঙ্কায় বুক কেপে উঠল কোনক্রমে জিজ্ঞাসা করলাম
......কি হয়েছে?
.........তুই কি করলি অনু......কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন সমের মা
......কি হয়েছে বলুন......চিৎকার করে উঠলাম
......সম, হাতের শিরা কেটে ফেলেছে......অনু তুই কি সর্বনাশ করলি...কান্নায়
কথা বলতে পারছেন না সমের মা......সন্দীপ লাফ মেরে ফোন নিয়ে
......হ্যাঁ হ্যাঁ, আসছি এখুনি আসছি আমরা......
 বিছানায় উথালি পাথালি কেঁদে চলেছি। কিছুতেই সন্দীপ আমাকে শান্ত করতে পারছে না।সন্দীপের কোন কথাই মাথায় ঢুকছে না, পাসের ঘর থেকে আলম আর আয়েশা এসেও আমাকে শান্ত করতে পারছে না। সজোরে এক চড়, সন্দীপের আছড়ে পড়ল গালে
......তখন থেকে খালি কাঁদছ আর চিৎকার, যেটা করার দরকার সেটা না করে। ওকে ভেনটিলেসন এ দিয়েছে, এখুনি চল হাসপাতাল...... কি করে যে জামা, জ্যাকেট পরে হাসপাতালে এলাম জানিনা। তখনও কেঁদে চলেছি। ভিসিটরস এর জায়গায় দেখি সমের বাবা আর মা জড়াজড়ি করে কাঁদছেন। কাছে গিয়ে দাড়াতে চোখ তুলে তাকালেন যাতে সুধুই শূন্যতা সব হারানর ছবি। গালে হাত রাখতেই, দু হাতে জাপটে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বিভ্বল হয়ে ওনাকে টেনে নিলাম বুকে, সব ভালবাসা, মমতা, করুণা বাধ ভেঙ্গে ঝরে পড়ল ওনার মাথায় গালে বুকে
.........অনু আমার পাপের ফল রে অনু, আমার পাপ। যে অন্যায়, অবিচার, অপমান, প্রতারণা তোদের সবার সাথে করেছি, তার ফল রে অনু , আমার পাপ...ফোফাতে ফোফাতে বললেন সমের মা
......চুপ করুন প্লিস, ওই সব কথা এখন একদম বলবেন না......হাত দিয়ে মুখ চাপা দিলাম
......অনিমেষ বলত, পাপ আর সত্য কখন চাপা থাকেনা। প্রকাশ পাবেই......বাবার নাম শুনেই ওই অবস্থাতেও রাগ হোল, হাত ছারিয়ে নিলাম। বুঝতে পেরে আমার একটা হাত ধরে কাদতে থাকলেন । সন্দীপ গিয়ে সমের বাবার পাশে বসতে শিশুর মতন সন্দীপকে জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে কাঁদছেন। নিজেকে ধিক্কার দিলাম মনে মনে।।“ এ কি করলাম আমি। ছি ছি...এখন যদি খারাপ কিছু হয়, সারা জীবন কি বলব নিজেকে” কান্না ঝরে চলেছে দু চোখে
......তুই আর সম দুজনেই আমার গর্ভের রে অনু, দুজনেই আমার সন্তান...একটু জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। খেয়াল করলাম উনি আজ আমাকে প্রথম থেকেই ‘তুই’ করে সম্বোধন করছেন।মাটিতে মিশে ষেতে ইচ্ছা করল নিজের কৃতকর্মে। সমস্ত রাত সমের মা আমাকে ধরে বসে রইলেন। সকালে আমি আর সন্দীপ জোর করে বাড়ি পাঠালাম, ফ্রেস হতে, “ আপনারা না আসা পর্যন্ত আমরা থাকব”। ঘণ্টা ২ পর ফিরলে আমি আর সন্দীপ, সন্দীপের বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে ফোন লাগালাম মাকে। কলকাতায় তখন রাত ১ টা। উদ্বিগ্ন মুখে সবাই ক্যামেরার সামনে
.........মা, এ আমি কি করলাম, মা। আমি এখন কি করব .........আর কিছু বলতে পারলাম না
সন্দীপ সব ঘটনা জানাল মাথা ঠাণ্ডা করে
......অ.........নু, এ তুই কি করলি অনু..এই ভুল তুই কি করে করলি, হায় ভগবান.......দু হাতে মুখ ঢেকে মা, বাবা আর কাকু দুজন দুজনকে জড়িয়ে , অঙ্কু মা-কে জড়িয়ে ধরে। আরও একটু কথা বলে আবার আমরা হাসপাতালে।এই ভাবে ৩ দিন ষাবার পর হাসপাতাল থেকে জানালো ‘ভেরি ক্রিটিকাল বলছি না তবে ক্রিটিকাল’ । এই ভাবে আরও ৫ দিন পর হাসপাতাল জানালো “আউট অফ ডেঞ্জার”।এই ৮ দিন আমি আর সন্দীপ সবসময় সমের মা আর বাবার পাশে থাকতাম। কলকাতা থেকে অনবরত ফোন আসত। মা, বাবা, কাকু, অঙ্কু, দাদু দিদিমা, শেখর দাদু, অম্লান কাকু, মামা সবার। ফোন এর ভলুম ইচ্ছা করেই জোরে দেওয়া ছিল যাতে পাশের লোক শুনতে পায়। ফোন আসলেই সমের মা-এর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত, যদি একবার দি! কিন্তু আমি কি করব ওপাশ থেকে একজনও একবারের জন্য ওনাদের নাম নেয়নি। ওনাদের অস্তিত্বই অস্বিকার করছে সবাই।১২ দিনের মাথায় সাধারন বেড এ সম কে দিয়েছে। আমি একদিন গেছি বিকালে তখন সমের মা বাবা আসেনি, সমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে চোখ খুলে হাসল
......তুমি আর আমি ক্রিসমাস এর ছুটিতে কলকাতা যাব, কেমন?
ওই অবস্থায় মিষ্টি করে হেসে দিল, “সম এ কদিনে আমার প্রচুর কাজ বাকি পরে গেছে, ফোন করে খবর নেব, একটু ব্যাস্ত থাকব। তুমিও ফোন করবে কেমন”। আবার সেই মিষ্টি হাসি হেসে ঘাড় নাড়াল। সত্যি প্রচুর কাজ জমে গেছিল আমার আর সন্দীপের। বেচারি সন্দীপ আমার প্রেমে পরে নাজেহাল হতে হয়েছে এ কদিন, কিন্তু দেখলেই বোঝা যায় যা করছে, অন্তর থেকেই করছে।
সৌম্যগন্ধা
সম আজ ৫ দিন বাড়ি এসেছে। বাড়ি? কবরখানাতেও এত শুন্যতা বোধহয় হয়না। sound of silence। সুধু নিস্তব্দতার শব্দ শোনা যায় খেয়াল করলে। সম খুব দুর্বল, খুব কম কথা বলে।ষে টুকু দরকার সুধু সেই টুকুই।রাতে ডিনার টেবিলে খেতে বসেছি, সবাই চুপ, সমের ফোন বেজে উঠল, বুঝলাম অনুর ফোন।“ হ্যালো, তুমি এখন আসতে চাও” সম চোখ দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে ‘হ্যাঁ’ বললাম ঘাড় নাড়িয়ে সানন্দে। অনু আসল রাত ৯ টার পর একা, সন্দীপের গাড়ি নিয়ে। আমি আর রজত দুজনেই দরজার কাছে অপেখ্যা করছিলাম। দামি বালুচরি শাড়ি, গায়ে ফুল হাতা লাল রঙের পোলো নেক সোয়েটার, পায়ে মোজা আর জুতো একটু হিল তোলা।এক রাস কাল চুল পিঠে ছরান,কাধে একটা বড় ব্যাগ। অনু আসতেই আমার বাড়ি আবার আগের দিনের মতো প্রাণবন্ত হয়ে উঠল ওর ছোঁয়ায়। ঘরে ঢুকে সমকে জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে ব্যাগ রেখে আঁচল কোমরে গুজে, হাটু মুরে বসে, একে একে একটা মেটাল প্লেট, একটু চন্দনের পেস্ট, একটু ঘাস, ধান, আর একটা মোমবাতি বার করে সাজিয়ে রাখল। আমার দিকে তাকিয়ে “ ঘরে কি প্রদীপ আছে, না হলে মোমবাতি জালাতে হবে” আমি উঠে প্রদিপ এনে জ্বালিয়ে স্ট্যান্ড এর ওপর রেখে দিলাম। উঠে হাত ধুয়ে এসে বা হাঁতে চন্দন এর পেস্ট লাগিয়ে সমের কপালে ছুঁইয়ে জোরে জোরে উচ্চারণ করল “ ভাইএর কপালে দিলাম ফোটা.জমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা....” ৩ বার একই ভাবে মন্ত্র পরে, ওই ধান আর ঘাস একটু নিয়ে সমের মাথায় ছড়িয়ে দিয়ে, প্রদিপের ভাপ হাঁতে নিয়ে সমের মাথায়, বুকে লাগিয়ে দিল। উঠে এসে আমাকে আর রজত কে প্রনাম করে সমের পাশে বসে একটা ঢাকা দেওয়া বাটি বার করে চামচে দিয়ে সম কে দু তিন বার পায়েস খাইয়ে দিল। ব্যাগ থেকে বার করল একটা বই “ ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া” আর একটা ১০০ ডলারের নোট সমকে দিয়ে
......ইন্ডিয়া ষাবার আগে এই বই টা পড়বি কেমন?......ঘাড় নেরে সম প্রশ্ন করল
......এই রিচুয়াল এর কি মানে, এই টা কেন করলে?
......ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে বোন এই রিচুয়াল পালন করে। যাতে ভাই ভাল থাকে, কোন বিপদ আপদ না হয় তাই
......তার মানে আমি তোমার ভাই?
......হ্যাঁ তুই আমার ছোট ভাই আর আমি তোর দিদি......এক দৃষ্টি তে সম দেখছে অনুকে। আবেগে দিদি দিদি দিদি বলে জাপটে ধরে সম
......দিদি তোমায় আজ গডেস এর মতো লাগছে।
......ধুর বোকা আমি তোর দিদি
.........এতদিন ধরে চেয়েছি একটা ভাই বা বোন ,যে রকম হোক, কেউ একজন যাকে বলতে পারি, যে এ আর আমি একই শিকড়ের। কিন্তু আমাকে সারা জীবন মিথ্যা বলা হয়েছে। ষাদের সব চাইতে বেশি ভালবাসতাম, ষারা আমার পৃথিবী ছিল, তারাই মিথ্যা বলেছে। দিদি বুঝতে পারবে না এইটা কতখানি অপমান।আমার বাবা, আমার মা আমাকে মিথ্যা বলেছে, লায়ার, চিটার আমি ঘ্রি......অনু হাত দিয়ে মুখ চিপে ধরল
.........সম ঘৃণা করতে নেই। মা শিখিয়েছেন, ঘৃণা করলে সেই ঘৃণা ১০ গুন হয়ে ফিরে আসে। কখনও কাউকে ঘৃণা করবি না। এই দ্যাখ তোর জন্য কি এসেছে
......কি দিদি?
......এখান থেকে কলকাতার এয়ার টিকেট, যাওয়া আসা দুটোই। কে পাঠিয়েছে জানিস
......কে দিদি
...... শেখর সেন।তোর দাদু। ফেরার টা ওপেন, তুই ইচ্ছা মতো ফিরবি। তুই যখন হাসপাতালে ছিলি মা কালিঘাটে তোর জন্য পুজো দিয়েছে। বাবা জীবনে প্রথম কালিমন্দিরে যায় তোর জন্য। অঙ্কু বাবা মা দাদু দিদিমা, শেখর দাদু সবাই আমাকে বার বার ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে ‘আমাদের সম’ কবে আসবে।
.........আমার জন্য এত লোক অপেখ্যা করছে
.........করছে তো, দেখ না একবার গিয়ে, সবাই তোকে নিয়ে কি করে। সবাই সুধু তোর জন্য বসে আছে
সম দিদি দিদি বলে দু হাঁতে জাপটে ধরল অনুকে। অনু পরম স্নেহে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি আর রজত চোখ চাপা দিয়ে চলে এলাম বারান্দায়, এক কোনে। এই অন্ধকারই ভাল। কোথায় লুকাব? হাসপাতালে অনুর ফোনে অনবরত ফোন আসত কলকাতা থেকে, কেউ একবারও আমাদের কথা জিজ্ঞাসা করেনি। আমাদের অস্তিত্ব অস্বিকার করছে সবাই।আউটকাস্ট, অচ্ছুৎ সবার কাছে। আমাদের জন্য পৃথিবীর কেউ কোনদিন অপেখ্যা করবে না, কেউ জানতে চাইবে না আমরা বেঁচে আছি না নেই,কেউ কোনদিন দেখতে চাইবেনা। আমাদের অতীত আমরা উপড়ে ফেলে এসেছি, ভবিষ্যতে আছে একাকীত্ব।আমাদের কোন আপনজন নেই, কেউ কোথাও নেই। আমাদের কথা কেউ জানতে চাইবেনা কোনদিন। আমাদের ছেলে, সেও কি আর আমাদের থাকবে, কে জানে?
বেশ কিছুক্ষন পর অনু এলো বারান্দায় আর এসেই লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আমার পাশে এসে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। চোখ তুলে তাকালাম, হাসল
.........সম আমার সাথে আমাদের বাড়ি যাবে, সেখানে ওর কোন অসুবিধা বা অসম্মান হবে না, আমি ঠিক বলছি তো? ......অস্ফুট ‘হ্যাঁ’ বেরিয়ে এলো। আমি হাত দিয়ে ওর হাত ধরলাম , চাপ দিল দু হাতে, রজতের দিকে তাকিয়ে হাসল
......আমি এখন যাই, বাড়ি গিয়ে ক্যামেরা চালিয়ে মা-কে সব কথা বলতে হবে, না হলে ঘুমাবে না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জানতে চাইবে, আমি মা-কে কোন কষ্ট দিতে চাই না, যাই কেমন...ঘুরে হাটা সুরু করল। থাকতে না পেরে ডাকলাম”অনু”, থেমে গিয়ে ঘুরে এসে আমার সামনে হাটু মুড়ে বসে সোয়েটার এর ভিতর থেকে ওই রুপোর ত্রিনয়ন আঁকা লকেট বার করে আলতো চুমু দিয়ে, আমার চোখে চোখ রেখে
......আমার জন্মদিনে আপনি বার বার এইটার কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন। আমার প্রথম জন্মদিনে মা আমায় পরিয়ে দিয়েছিলেন। বড় হলে বলেছেন কোনদিন যেন না খুলি। আমি খুলব না। আমি মা-এর কথার অবাধ্য কোনদিন হব না। লকেটের ভিতর একটা ছোট খাপ আছে, তাতে প্লাস্টিকে মোরা একটা ছোট কাগজ আছে যেটা আমার ১১ মাস বয়েসে, আমাদের বাড়ির এক অদ্ভুত স্তব্দতার দিনে আমার তোশকের নিচে মা পেয়েছিলেন। ......কথা শেষ করে দু হাতে আমার মুখ ধরে কপালে চুমু দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গাড়ির দিকে হাটতে লাগল।
গত প্রায় এক মাসে এত ঘটনা ঘটে গেল, অনু একবারও আমাকে ‘তুমি’ করে বলেনি বা ‘মা’ ডাকেনি। কেনই বা ডাকবে? ওর মা তো সৌম্যগন্ধা যাকে শিকড় সমেত উপড়ে মেরে ফেলে, পালিয়ে এসেছি। সৌম্যগন্ধা মৃত।সারা গায়ে জ্যোৎস্নার আলো মেখে পরির মতন হেটে যাচ্ছে কাকলির মেয়ে অহনা, আমার “প্রথম আলো”

(সমাপ্ত)
[+] 12 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শিকড় (কালেক্টেড) "Complete" - by pnigpong - 20-06-2020, 06:12 PM



Users browsing this thread: