Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব
#12
[৯]

রত্নাকর শুয়ে শুয়ে মায়ের কথা ভাবে। বয়স অনুপাতে শরীর ভেঙ্গে গেছে। মনে শান্তি না থাকলে শরীরে তার প্রভাব পড়বে। জনা যেমন বলছিল সেও তেমনি বলে দিয়েছে। কে জানে বিশ্বাস করেছে কিনা? খুশিদি বলত, তুই গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারিস না। অনেকদিন পর মনে পড়ল খুশিদির কথা। কত কাছের মানুষ ছিল এখন পাঞ্জাবের ফিরোজপুরের কোথায় কে জানে। পাঞ্জাবী শুনলে প্রথমেই ভাংড়া নাচের কথা মনে আসে কিন্তু খুশিদির রবীন্দ্র সঙ্গীত খুব পছন্দ। অবাঙালী কোনো মেয়েকে অমন মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে দেখেনি কখনো। খুশিদি একটু রাফ টাইপ মেয়েদের মত কোমল স্বভাব নয়। হয়তো পাঞ্জাবের জল হাওয়ার গুণ। বাড়ীতে এসেছিল শেষ দেখাটা হল না। মিলিটারি আণ্টির মত জনাও আর পাত্তা দেবেনা ভেবেছিল। ফোন পেয়ে একটু অবাক হয়েছে। সঞ্জয়ের জন্য কষ্ট হয়। ওর মা বোধহয় আর উঠে বসতে পারবেনা। টুনি ক্লাস এইটে পড়ে। ঐটুকু মেয়ে রান্না করে ভেবে চোখে জল চলে এল। রান্না ছাড়া সঞ্জয় অবশ্য আর সব কাজ করে। কাল যাবে কিনা ঠিক করতে পারছে না। লতিকা মেয়েটার স্বভাব চরিত্র ভাল না। পর মুহূর্তে মনে হল তার নিজের চরিত্রই বা কেমন? তার একটুও ইচ্ছে ছিলনা জোর করে করিয়েছে বললে কেউ বিশ্বাস করবে?
নন্তু না ঘুমানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অবশ্য কালিনাথের বেশি সময় লাগেনা। পাছার কাছে বসতে মনীষা হাটু ভাজ করে থাকে। তারপর মিনিট সাত-আট পরেই ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে। মনীষা বাথরুমে গিয়ে ধুয়ে এসে সবে শুয়েছে, হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, সাড়ে-বারোটা। এত রাতে কে হতে পারে? বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, কে-এ?
বাইরে থেকে আওয়াজ এল, উমাদা, উমাদা।
কপালে ভাজ পড়ে, মনীষা এদিক ওদিক দেখে দরজা খুলে চমকে ওঠে, সঞ্জয় আলুথালু চুল। মনীষা বলল, কি হয়েছে? তুমি অমন করছো কেন?
বৌদি মার অবস্থা ভাল নয়, একটু উমাদাকে ডেকে দেবে?
ভিতরে এসে বোস। আমি ডাকছি।
ইতিমধ্যে উমানাথ ঘুম থেকে উঠে এসেছে, কি ব্যাপার রে সনজু?
মা কাটা পাঠার মত ছটফট করছে, কি করবো বুঝতে পারছিনা।
তুই বোস। বৌদি কিছু টাকা দাওতো?
গায়ে জামা গলিয়ে সঞ্জয়কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ঠাকুর-পোর চলে যাবার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মনীষা। অথচ ওর দাদার মধ্যে অন্যের জন্য কোনো ফিলিংস নেই।
ডা.ব্যানার্জির বাড়ীতে তখনো আলো জ্বলছে। এত রাতে ঘুমাননি নাকি? বেল বাজাতে বেরিয়ে এলেন ডা.ব্যানার্জি, দরজার আড়ালে সোমলতা। ডা.ব্যানার্জি বললেন, ও তোমরা? কি ব্যাপার?
ওর মার পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ডাক্তারবাবু। উমানাথ বলল।
হসপিটালে নিয়ে যাও। ডাক্তার ব্যানার্জি বললেন।
আড়াল থেকে সোমলতা বেরিয়ে এসে বলল, বাপি কি হয়েছে না জেনে হাসপাতালে চলে যাবে?
ডা.ব্যানার্জি চিন্তিতভাবে বললেন, তুই কি বলছিস একবার দেখে আসব?
অবশ্যই। নাহলে কি করে বুঝবে?
আচ্ছা চলো।
উমাদা তুমি একটু দাঁড়াও। সোমলতা ভিতর থেকে একটা এ্যাটাচি ব্যাগ এনে উমানাথের হাতে দিয়ে বলল, বাপি কিছুক্ষন আগে চেম্বার থেকে ফিরেছে।
ডাক্তার ব্যনার্জি এ্যাটাচি খুলে প্রেশার নিলেন, স্টেথো দিয়ে পরীক্ষা করে বললেন, এত রাতে ওষূধ কোথায় পাবে?
আপনি লিখে দিন ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কি হয়েছে ডাক্তারবাবু?
কত কি হতে পারে। ইউএসজিটা করাও দেখি কি ব্যাপার। আলসার হতে পারে আবার।
আবার কি ডাক্তারবাবু?
কাল সকালে টেস্টটা করাও।
ডা ব্যানার্জী বাসায় ফিরতে সোমলতা হাত থেকে এ্যাটাচিটা নিল। ড.ব্যানার্জি পকেট থেকে দুটো একশো টাকার নোট বের করে মেয়ের হাতে দিল। সোমলতা নোটদুটো দেখে বুঝল ফিজ নিয়েছে। জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে বাপি?
আলসার আবার ম্যালিগ্ন্যাণ্টও হতে পারে। দেখা যাক টেষ্ট করে কি বেরোয়।
ম্যালিগন্যাণ্ট? সোমলতার চোখ ছল ছল করে উঠল। সঞ্জয়ের মা অনেকদিন ধরে ভুগছে। ক্যান্সার হলে বেচারি কি যে করবে?
দোকান খুলিয়ে ওষুধ এনে খাইয়ে দিতে যন্ত্রণা কিছুটা উপশম হল। সঞ্জয় বলল, উমাদা তুমি যাও। কাল তোমার আবার অফিস আছে। ও তোমার টাকাটা।
ঠিক আছে পরে দিবি। সকালে সোনোগ্রাফিটা করাবি।
সঞ্জয় রাতে ঘুমায় না। বাবা আর টুনিকে অনেক বলে ঘুমোতে পাঠিয়েছে। মায়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কত কথা মনে পড়ে। দেখতে দেখতে জানলা দিয়ে ভোরের আলো এসে পড়ে ঘরের মেঝেতে। বীনাপাণী চোখ মেলে দেখলেন, ছেলে বসে বসে ঝিমোচ্ছে।
সঞ্জয় মাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, ঘুম হয়েছিল?
বীনাপানি হাসলেন। সঞ্জয় জিজ্ঞেস করে, হাসছো কেন?
আমি ঘুমোই নি, চোখ বুজে ছিলাম। শিয়রে ছেলে জেগে থাকলে কোন মা ঘুমোতে পারে?
সঞ্জয় ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে ফুপিয়ে কেদে ফেলে।
ঘুম থেকে উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে চা খেয়ে রত্নাকর ভাবল, যাই একটু ঘুরে আসি। কদিন পর কলেজ খুলে গেলে সকালে বেরনো বন্ধ। নীচে নেমে চমকে ওঠে। ভুত দেখছে নাতো? বাড়ীর নীচে রাস্তার ধারে সোমলতা দাঁড়িয়ে কেন? কাছে যেতে মৃদু হেসে সোমলতা জিজ্ঞেস করে, ভাল আছো?
হ্যা তুমি এখানে? কি ব্যাপার?
ব্যাপার কিছুই নয়। ওকে বাসে তুলতে যাচ্ছিলাম। সিগারেট কিনতে গেছে তাই।
রত্নাকর দেখল উলটো দিকের দোকানে একটি সুপুরুষ যুবক, নাকের উপর চশমা। লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, রিলেটিভ?
না না, বাপির বন্দুর ছেলে। কাল রাতে আমাদের বাড়িতে ছিল।
রত্নাকরের মন খারাপ হয়। যুবকটি এক রাশ ধোয়া ছেড়ে রাস্তা পেরিয়ে এদিকে আসছে। যুবকটি কাছে এলে সোমলতা বলল, সমু পরিচয় করিয়ে দিই। রত্নাকর সোম, আমরা এক কলেজে পড়তাম। সোমনাথ মুখার্জি হবু ডাক্তার, ন্যাশনালে ইণ্টারণশিপ করছে।
যুবকটি হেসে করমর্দন করে বলল, সোমুর কাছে আপনার কথা শুনেছি।
জানো রতি একজন লেখক।
সোমনাথ বলল, তাই? আমি অবশ্য একেবারে বেরসিক। কলেজে যা একটু গল্প কবিতা পড়েছি।
ও হ্যা শুনেছো, সঞ্জয়ের মা খুব অসুস্থ। উমাদা কাল রাতে বাপিকে ডাকতে এসেছিল। আসি আবার পরে কথা হবে?
ওরা বাস রাস্তার দিকে চলে গেল। বেকুবের মত হা-করে তাকিয়ে থাকে রত্নাকর। বাপির বন্ধুর ছেলে, ডাক্তারি পড়ে। কয়েক বছর পর হয়তো অন্য পরিচয় হবে। বাপির নয় বলবে আমার। বেশ মানাবে দুটিতে। মনে মনে বলল, সোমলতা তোমরা সুখী হও।
রত্নাকর সিড়ি বেয়ে উপরে এসে নিজের ঘরে শুয়ে পড়ে। মনোরমা ছেলেকে বললেন, এই অবেলায় শুয়ে পড়লি? শরীর খারাপ লাগছে?
না।
কপালে হাত দিয়ে বললেন, না কপাল তো ঠাণ্ডা। তাহলে কি মন খারাপ?
রত্নাকর মায়ের হাত চেপে ধরে উঠে বসল। মনোরমা বললেন, রান্না হয়ে গেছে, স্নান করে খেয়ে নে।
মা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
তোর কি হয়েছে বলতো?
তুমি বাবাকে খুব ভালবাসতে?
এ আবার কি কথা?
বাবাকে তোমার মাঝে মাঝে মনে পড়েনা?
মনোরমা গম্ভীরভাবে বললেন, না।
একদম ভুলে গেছো?
না। যে মনে আছে তাকে মাঝে মাঝে কেন মনে পড়বে?
মনোরমা দ্রুত উঠে চলে যেতে যেতে বললেন, স্নান করে নে। আড়ালে গিয়ে আঁচলে চোখ মুছলেন।
রত্নাকর খেতে বসে কেমন অন্যমনস্কভাবে ভাত নাড়াচাড়া করে। মনোরমা জিজ্ঞেস করলেন, তোর কি হয়েছে বলতো?
রত্নাকর মুখ তুলে বলল, কাল রাতে সঞ্জয়ের মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।
কি হয়েছিল?
আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। ভাবছি একবার দেখে আসি।
বাবা নেই কত বছর হয়ে গেল। মা এখনো সেই স্মৃতি আকড়ে বসে আছে। এই সম্পর্ক কি প্রেম? কখনো তার মনে হয়নি সোমলতার কথা, তাকে জড়িয়ে বন্ধু-বান্ধবরা মজা করতো। সঞ্জয়ের বাড়ি গিয়ে খোজ নিতে টুনি বেরিয়ে এসে বলল, ও রতিদা? দাদা তো বাড়ী নেই।
মাসীমা কেমন আছে?
মাকে নিয়ে দাদা আল্ট্রাসোনগ্রাফী করাতে গেছে।
কোথায় নিরীক্ষাতে?
হ্যা আসার সময় হয়ে এল, তুমি বসবে?
না আমি এগিয়ে দেখি।
নিরীক্ষা বাস রাস্তার ওদিকে, এ অঞ্চলে সবাই ওখানেই যায়। নিরীক্ষায় পৌছে দেখল সঞ্জয় মাথা নীচু করে বসে আছে। তাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, এইমাত্র ঢোকালো। বাবাকে জোর করে কাজে পাঠিয়েছি। কাল রাতে যা ধকল গেল কি বলব। কথা বলতে বলতে দেখল একটা ছোট দরজা দিয়ে মাসীমাকে ধরে একটি লোক বাইরে চেয়ারে বসিয়ে দিল। সঞ্জয় বলল, রতি তুই দাড়া আমি একটা রিক্সা নিয়ে আসি।
রত্নাকর মাসীমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মায়ের কথা মনে পড়ল। মাও মাসীমার বয়সী হবে। মার যদি এরকম কিছু হয়ে যায় ভেবে শিউরে উঠল। সঞ্জয় রিক্সা নিয়ে আসতে মাসীমাকে ধরে রিক্সায় তুলে দিল। সঞ্জয় অস্বস্তি বোধ করে। রত্নাকর বলল, ঠিক আছে তুই যা। আমি হেটেই চলে যাবো।
রত্নাকর হাটতে থাকে। সোমলতা আর সোমনাথ দুজনের নামে মিল আছে। ওরা পরস্পরকে পছন্দ করে। একে নিশ্চয়ই প্রেম বলা যায় না। বিয়ে হলে সুখী সংসার হবে। একজন আরেকজনের কথা ভাববে। আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে খেয়াল হয় জনার বাড়ীর কাছে চলে এসেছে। বারান্দায় রেলিং এ কনুইয়ের ভর দিয়ে ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে জনা। তার জন্য অপেক্ষা করছে ভেবে ভাল লাগল। রূপোলি রঙের সার্টিনের গাউনে আলো পড়ে ঝিকমিক করছে। উপর দিকে তাকাতে হাসি বিনিময় হয়। মোবাইল টিপে সময় দেখল দুটো বাজে প্রায়। রত্নাকর পায়ে পায়ে উপরে উঠে এল। রত্নাকরের এসময় একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় দরকার।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব - by stallionblack7 - 26-02-2019, 08:30 PM



Users browsing this thread: