Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.06 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller চন্দ্র-কথা By তমাল মজুমদার
#21
চন্দ্র-কথা -১৪

মুখে না বললেও সবার চেহরায় খুসির ঝলক দেখলো তমাল. ভালো লাগার সঙ্গে সঙ্গে মনটা ও খারাপ হয়ে গেলো ওদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা ভেবে. লাঞ্চ এর পরে তমাল বাইরে দাড়িয়ে সিগার খাচ্ছিল… অম্বরিস এসে পাশে দাড়িয়ে মাথা চুলকালো…

তমাল বলল… কিছু বলবেন?

অম্বর বলল.. অপরাধ নেবেন না বাবু… অনেকদিন বিলিতি মাল খায়নি… তাই আপনার টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা বোতলও এনেছি..

তমাল বলল… ঠিক আছে… খান আজকে… তবে আর নয় কিন্তু. দোকান খুলি… তারপর যতো খুশি খাবেন.

অম্বর নাচতে নাচতে চলে গেলো.

কবিতাটা নিয়ে তমাল যতো ভাবছে.. তত খট্‌কা লাগছে মনে. এটা শুধু উপদেশ হতেই পারে না. কিছু একটা শুকৌশলে লুকিয়ে রাখা হয়েছে কথার জাল বুনে. আজকের দিনে কবিতাটা সহজ মনে হচ্ছে বোঝা… কিন্তু চন্দ্রনাথ যখন লিখেছিল… তখনও চলিত বাংলা এতটা বুঝতও না মানুষ.

সেই জন্যই তিনি এই রকম ভাষা ব্যবহার করেছিলেন. লোকটা সত্যিই বুদ্ধিমান আর শিক্ষিত ছিল. তিনি চান নি কবিতাটার মানে সবাই বুঝুক.. তিনি চেয়েছিলেন এমন কেউ মানেটা বুঝুক… যে তার মতই বুদ্ধিমান হবে.. কিন্তু কেন? কী আছে এর ভিতরে. নিশ্চয় দামী কিছু.

বহুমুল্ল্য কিছু তিনি লুকিয়ে রেখে গেছেন তার উত্তর পুরুষদের জন্য.. যাতে তারা যখন খুব খারাপ অবস্থায় পরবে… সেটা যে পড়বেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন… তখন যেন সেটা কাজে লাগে. আবার এটাও চান নি যে উশৃঙ্কল কারো হাতে পরে ধংশ হোক. যে খুজে পাবে সে অবস্যই শিক্ষিত আর বুদ্ধিমান হবে. তখন সে সেটা রক্ষাও করতে পারবে. তার একটায় মানে দাড়ায়… ট্রেজার… গুপ্তধন !!!

যুক্তিটাকে গুপ্তধন সম্পর্কে নিশ্চিত করতেই সে দ্রুত ঘরে চলে এলো. দুপুরের খাওয়াটা বেশ জোরদার হয়েছে… বাকি সবাই দিবা-নিদ্রায় মগ্ন… চিন্তা করার এটাই ঠিক সময়… সে কবিতাটা বের করে মেলে ধরলো.. তারপর বার বার পড়তে লাগলো.

“জীবনটাও চাঁদ এর মতো/সামনে আলো পিছে খটো/যখন আলোয় বসতে থাকে, কেউ দেখেনা অন্ধকার/হঠাৎ আঁধার ঘনায় যখন, চতুর্দিকে বন্ধ দ্বার.” একবার… ২বার… ৩বার… অনেকবার পড়লো তমাল… কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না. তারপর ২ন্ড প্যারাতে চলে এলো… ” ভয় পেয়না অন্ধকারে/ফুটবে আলো চন্দ্র হারে/ কানক প্রবায় বরও জীবন, সঠিক শ্রম আর কাজে/ দুয়ার খুলে বাইরে এসো, দাড়াও জগত মাঝে.”

বেশ কয়েকবার পড়ার পরে এই লাইন গুলোর ভিতর বেশ কিছু অসংগতি মনে হলো তার. “ফুটবে আলো চন্দ্র হারে”.. .. চন্দ্র হারে… কথাটা বেমানান… চন্দ্র হারে? নাকি চন্দ্রাহার এ? চন্দ্রাহার মেয়েদের একটা গহনারও নাম.. এর পরে যেটা খট্‌কা লাগে তা হলো… ” কানক প্রবায় বরও জীবন…. ” কানক মানে সোনা… গোল্ড.. চাঁদ এর কথা বলতে বলতে গোল্ড এর কথা কেন আসবে? হতে পারে উজ্জলতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে… তবুও খট্‌কাটা যাচ্ছে না তমালের. তাহলে কী অনেক সোনা আর রত্ন খচিতও চন্দ্রাহার রেখে গেছেন চন্দ্রনাথ?

এতটাই দামী সেই হার যে ফুটবে আলো চন্দ্রাহারে বলে বোঝাতে চেয়েছেন? তাও আবার অন্ধকার কাটিয়ে দেবার মতো আলো… এমন কী অন্ধকারে ভয় পেতেও নিষেধ করেছেন. শুধু একটা চন্দ্রাহারে সব অন্ধকার দূর করে দিতে পারে?

তমালের মাথা ঝিম ঝিম করে উঠলো… আর উত্তেজনায় শরীরটা টান টান হয়ে গেলো. একটার পর একটা সিগারেট ধংশ করতে লাগলো আর কবিতা টায় ডুবে গেলো সে. পরের প্যারগ্রাফে চলে গেলো সে.

“দৃষ্টি রেখো চতুর্পাশে/কোথায় সুযোগ, কখন আসে/ অপেক্ষা আর ধৈর্য রেখো, ইন্দু-সম শহনশীল/ কামনে সে জোৎস্না পেতে জমায় আলো টিল টিল.”…. বার বার পড়েও কিছুই বুঝলো না তমাল. অনেক সময় গুপ্তধন এর সূত্রতে মানুষকে ধোকা দিতে অর্থহীন কিছু কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়… এটাও সেরকমই হতে পারে…

সে পরের প্যারাতে চলে গেলো….

“মধ্য বয়স পথ দেখাবে/ কোথায় মাথা খুড়তে হবে/ সঠিক পথের সন্ধানেতে, চক্রাকারে ঘুরছে হায়!/ আকার বারে আকার কমে, সোলো-কলা পুর্ণ হয়./”..

তমালের মাথাটাও চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো. প্রথমবার যখন কবিতাটা পড়ে…

তখন থেকেই এই প্যারাগ্রাফ তাই তার সব চাইতে দুর্বদ্ধ মনে হয়েছে. একদিক থেকে দেখলে পাগলের প্রলাপ মনে হয় ব্যাপারটা… “মধ্য বয়স পথ দেখাবে…” কার মধ্য বয়স? কিসের মধ্য বয়স? এত বয়স থাকতে মধ্য বয়সই বা কেন? তারপরে… ” কোথায় মাথা খুড়তে হবে”.. মাথা খুড়বে কেন? মাথা তো মানুষ হতাশ হয়ে খোড়ে. কথায় বলে মাথা খুড়ে মরা… তাহলে আসার বাণী এর ভিতর হঠাৎ মাথা খোড়া এলো কিভাবে?

পরের লাইনটা তো একদম হিভুরু ভাষার মতো দুর্বদ্ধ… “সঠিক পথের সন্ধানেতে, চক্রাকারে ঘুরছে হায়!”…. কে ঘুরছে চক্রাকারে? কী ঘুরছে? আবার হতাশা সূচক হায় শব্দটাও রয়েছে. মাথাটায় গোলমাল হয়ে যাচ্ছে তমালের.

তারপর লিখেছেন… “আকার বারে আকার কমে, সোলো-কলা পুর্ণ হয়.” কিসের আকার বারছে কমছে? ভাবতে ভাবতে যখন তমালের পাগল পাগল অবস্থা… তখন হঠাৎ মনে হলো… আরে চন্দ্রনাথ চাঁদ এর কথা বলেন নি তো? “মধ্য বয়স পথ দেখাবে..” মানে চাঁদ যখন মধ্য বয়সে পরবে… মানে মাঝ রাতে…

তখনই সংকেত পাওয়া যাবে গুপ্তধনের… হ্যাঁ.. হ্যাঁ… হতে পারে… হতে পারে… নিজেকেই নিজে বলল তমাল. “সঠিক পথের সন্ধানেতে চক্রাকারে ঘুরছে হায়!” হ্যাঁ… চাঁদও ঘুরে ঘুরে চলে. তার মানে চাঁদ ওঠার পরে ঘুরতে ঘুরতে যখন মাঝ বয়সে অর্থাত মধ্য রাতে পৌছাবে.. তখনই সোলো-কলা পুর্ণ… মানে কার্য সিদ্ধি হবে.

মনে মনে খুশি হয়ে উঠলো তমাল… তার চোখ দুটো চক চক করছে উত্তেজনায়. কিন্তু খুশিটা বেশীক্ষণ টিকলও না তার… পরের প্যারাটা পড়ার পরে. “পূর্ণিমা আর অমনীসা/একই শশির দুটি দশা/উল্টো সোজা দুইই সঠিক, দুটো থেকেই শিক্ষা নাও/ডাইনে এবং বাঁয়ে ঘুরে, সঠিক লক্ষ্যে পৌছে যাও !!!”… চন্দ্রনাথকে মনে মনে একটা বিচ্ছিরি গাল দিলো তমাল.

মাথাটা গুলিয়ে দিতে লোকটার জুড়ি নেই. উল্টো সোজার দন্ধতে ফেলে দিয়েছে লোকটা… সঠিক লক্ষ্যে এগোনো তো দূরের কথা কোথাও পৌছাতে পারছে না তমাল. কাগজটা ভাজ করে রাখলো তমাল. যথেস্ট হয়েছে এখনকার মতো. আর বেশি ভাবলে ভুলই ভাববে সে.

তবে একটা জিনিস তমালের কাছে পরিস্কার… গুপ্তধন আছেই.

আর সে সেটা উদ্ধার করেই ছাড়বে. কিছুতে হার মানবে না তমাল… এটা তার নিজের কাছে নিজের প্রতিজ্ঞা. গার্গিকে সে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েই গরলমুরি ছাড়বে.

বিকাল বেলা তমাল গার্গি আর কুহেলিকে নিয়ে হাটতে বেরলো. ৩জন হাটতে হাটতে সেই খাল পারে চলে গেলো. তমাল বলল… একটা সুখবর আছে… গার্গি আর কুহেলি দুজনই তমালের দিকে তাকলো.

তমাল বলল… তোমার জন্য দামী কিছু লুকিয়ে রেখে গেছেন তোমার এক পূর্ব পুরুষ… এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত.

চিৎকার করে উঠলো কুহেলি… গুপ্তধন !!! এত জোরে চেঁচানো ঠিক হলো না বুঝে গলা নামিয়ে আবার বলল.. গুপ্তধন?!

তমাল মাথা নারল.

কুহেলি বলল.. তুমি বের করে ফেলেছ সমাধান? ওয়াও তমাল দা… ইউ র গ্রেট !

তমাল বলল… আরে দাড়াও দাড়াও… শুধু বুঝেছি গুপ্তধন আছে… কিন্তু কোথায় আছে তার কিছুই আন্দাজ় করতে পরিনি.

ও… মুশরে পড়লো কুহেলি… তারপর আবার উত্তেজিত হয়ে বলল… নো প্রব্লেম… আমি তোমাকে জানি.. তুমি ঠিকই বের করে ফেলবে !

তমাল মাথা নারল… হ্যাঁ… বের না করে আমি যাচ্ছি না. এবার গার্গির মুখেও হাঁসি ফুঁটে উঠলো. তারপর একটা নির্জন জায়গা দেখে ৩জন বশ্লো…

আর দুপুরে যা যা বুঝেছে সেগুলো গার্গি আর কুহেলির সাথে আলোচনা করলো. কুহেলি বলল… হ্যাঁ বেশ খটমট ব্যাপার. আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না.

তমাল বলল… ” মধ্য বয়স পথ দেখাবে/কোথায় মাথা খুড়তে হবে”… এর মানে মাঝ রাতে চাঁদ এর আলোই এ পথ দেখাবে. কিন্তু কিছুতে বুঝতে পারছি না কোথায় খুজবো? চাঁদ তো সারা পৃথিবীতে আলো দায়… সমস্ত দুনিয়া জুড়ে তো আর সূত্র খোজা যায় না? একটা নির্দিস্ট জায়গা চাই… সেই জায়গাটা কোথায় এটাই বুঝতে পারছি না.

এর পর ৩জনই চুপ করে গেলো…

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: চন্দ্র-কথা By তমাল মজুমদার - by Kolir kesto - 19-06-2020, 10:24 AM



Users browsing this thread: