Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.06 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller চন্দ্র-কথা By তমাল মজুমদার
#10
 চন্দ্র-কথা – ৬

এক রাস ধুলো উড়িয়ে এসে সেই ধুলোর মেঘের ভিতর এ তাদের নামিয়ে দিয়ে গেলো ট্রেকার. যেখানে ওরা নামলো… সেটা একটা ফাঁকা জায়গা. স্টপেজ বোঝানোর জন্যই যেন জোড় করে একটা চায়ের দোকান রয়েছে. যেমন প্রত্তন্তও কোনো গ্রামে পোস্ত-মাস্টার বদ্ধও হয়ে থাকে… যদি ভুল করে কোনো চিঠি এসে পরে…. অনেকটা সেই রকম.
চায়ের দোকান তার মাথায় এক সময় সাইগ্নবোর্ডও ছিল.. কিন্তু তাকে মাথায় তুলে রাখতে দোকানটা যেন আর রাজী নয়.. তাই অবহেলায় এক পাশে পড়ে রয়েছে. তমাল বলল… চলো একটু চা খাওয়া যাক… পরোপকারের এমন সুযোগ বেশি একটা পাবে না.
কুহেলি বলল… চলো. দুজনে চায়ের দোকানে পৌছে চায়ের কাপ.. কেট্‌লি… স্টোব… সবই দেখলো… শুধু দেখতে পেলো না দোকানদার কে. দুজনেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো. দোকান খুলে রেখে কোথায় চলে গেলো লোকটা? অবস্য গেলেই বা কী? এতটাই জন-বিরল জায়গাটা যে চোরও বোধ হয় এখানে বিরল প্রজাতি.
আর চুরি করবেই বা কী?… পেট এ কোনুই এর খছা খেয়ে তমাল কুহেলির দিকে তাকতেই দেখলো সে হাস্চ্ছে… আর চোখের ইসারায় তাকে কিছু দেখাচ্ছে. তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো… সাইগ্নবোর্ডটা যেখানে পরে আছে… তার পিছন থেকে উকি মারছে একটা ঝালমুড়ির বাক্স… ট্রেনে যে বাক্স করে ঝাল্মুরি বিক্রি হয়… যে গুলো দেখলে মনে হয় মা মরা এক গাদা ছোট ছোট ছেলে-পুলে কোলে পিঠে ঝুলিয়ে বাবা ঘুরে বেড়াছে…. সেই রকম একটা বাক্স.
কুহেলি বলল… খিদে লেগেছে… লোকটা থাকলে ঝালমুরি আর চা ভালই লাগতো.
তমাল বলল না বাবা… বাক্সটার সামনে সাইগ্নবোর্ড এ কী লেখা দেখেচ্ছো? গরল-মুড়ি…. আমি অন্তত এই জনও-বিরল জায়গায়… বিস্ মাখা মুড়ি খেতে পারবো না… দুজনেই হো হো করে হেঁসে উঠলো. তমাল আর কুহেলি খুনসুটি আর ইয়ার্কিতে এতই মসগুল ছিল যে কেউ তাদের ডাকছে… শুনতেই পেলো না প্রথমে.
হাঁসি থামতে হঠাৎ কানে এলো… এই কুহু… কুহেলি?… কী রে কালা হয়ে গেলি নাকি…. এই যে… এদিকে… কী রে হতছারি…. রাস্তার ওপার থেকে এক হাতে সাইকেলের হ্যান্ডল ধরে অন্য হাত নাড়িয়ে একটা মেয়ে তাদের ডাকছে.
তমাল আর কুহেলি দুজনই সেদিকে তাকলো… প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে গেলো কুহেলি…… আরেএএ…. গাআর্গিইইইই…. তুইইই…… এমন ভাবে ছুটলো যে কলকাতা হলে কম পক্ষে তিনটে গাড়ির নীচে চাপা পড়ত… কিন্তু এখানে গার্গি নামের মেয়েটা চাপা পড়লো কুহেলির আলিঙ্গনে.
কুহেলি তার গলা জড়িয়ে ধরেছে এত জোরে যে আর একটু হলে কুহেলি.. গার্গি… আর সাইকেল… তিনজন এ গরাগরী খেত. কোনো রকমে কুহেলিকে ছাড়িয়ে সাইকেল স্ট্যান্ড করতে করতে গার্গি বলল… বাবাহ… এতক্ষণ ধরে ডাকছি… কী এত কথা বলছিলি?
কুহেলি বলল… তোদের চায়ের দোকানদারকে খুজছিলাম. গার্গি বলল… কে?
জগাই দা? সে তো এখন বাড়িতে ঘুমাচ্ছে… আসবে সেই বিকালে… যখন অফিস থেকে লোক জন ফিরতে শুরু করবে… এখন বেশি কেউ আসে না.
কুহেলি বলল… হ্যাঁ সেই জন্যই মাল পত্রের সাথে “পয়জন” বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে.
গার্গি বলল… মানে?
কুহেলি হাঁসতে হাঁসতে বলল… ওই যে? “গরল”?
দুজন এ হেঁসে উঠলো. ২বন্ধু কে পুনর্মিলন এর একটু সুযোগ দিয়ে তারপর তমাল তাদের দিকে হটতে শুরু করলো. তার চোখ কেড়ে নিয়েছে গার্গি… আপনা থেকেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো একটা শব্দ… ওয়াও ! দারুন মিস্টি দেখতে মেয়েটা… তবে রসগোল্লা টাইপ নয় মোটেই. ভিষণ ভালো ফিগার. সস্তা একটা সালবার কামিজ পড়ে আছে… একটু বেশিই ঢোলা… তারপরেও তার শরীরের ভাস্কর্য লুকিয়ে রাখতে পারেনি.
কুহেলি আর গার্গির পাশে এসে দাড়ালো তমাল… গার্গি নমস্কার করে বলল… কেমন আছেন তমাল দা? এত আন্তরিকতার সাথে বলল… যেন তমাল তার কতদিন এর চেনা.
তমাল উপলব্ধি করলো… গাছের সবুজ রং… দূষণহীন বাতাস… ধোয় মুক্ত আকাশের মতো আন্তরিকতাটাও এখানে জীবিত রয়েছে. তমালও মিস্টি করে হেঁসে জবাব দিলো… ভালো আছি গার্গি. তুমি ভালো তো?
গার্গি মাথা নারল.
তমাল বলল… সাইকেল এ এসেছ.. কতোটা দূর তোমাদের বাড়ি এখন থেকে?
গার্গি বলল… মিনিট ১০এক লাগবে হেঁটে গেলে.
তমাল বলল… তাহলে চলো… যাওয়া যাক. তারপর সাইকেল এর ক্যারিয়ার এ নিজের সূটকেসটা তুলে কুহেলির বাগটা হ্যান্ডল এ ঝুলিয়ে সাইকেলটা নিজেই ঠেলতে লাগলো তমাল.. কুহেলি আর গার্গি হাত ধরা ধরি করে পাশে পাশে চলেছে.
পাকা রাস্তা ছেড়ে তারা কাঁচা রাস্তায় নেমে এলো… তমাল জিজ্ঞেস করলো… এ দিকটা তো বেশ নির্জন.
গার্গি বলল… হ্যাঁ. আগে আমাদের বাড়ির যখন ভালো সময় ছিল… রাস্তা ঘাট চওড়া ছিল আর পরিস্কার ছিল. অবস্থা পরে যেতেই আমাদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ও নিজের জৌলুস হারিয়েছে তমাল দা… বিষন্নও এক টুকরো হাঁসি দেখা গেলো গার্গির মুখে.
এক সময় তারা পৌছে গেলো গার্গিদের বাড়ির সামনে…… ……গার্গিদের বাড়িতে ঢোকার ঠিক আগে থমকে দাড়িয়ে পড়লো তমাল. তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো. সে যেন একটা ইতিহাস এর সামনে দাড়িয়ে আছে. ১০০ বছর আগে ফিরে গেলো সে যেন… মনের চোখে দেখতে পেলো… সেই সময় এ বাড়িতে ঢুকতে হলে উর্দি পড়া দাড়ওয়ান এর প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাকে সন্তুস্ট করতে হতো আগে… তারপর বিশাল তালা খুলে প্রকান্ড লোহার গেট দুপাশে সরে যেতে যেতে গোল নুড়ি-পাথর বসানো রাস্তায় স্বাগতো জানাতো. প্রকান্ড উঠান পেরিয়ে প্রসাদ-সম বাড়িতে পৌছাতে হতো.
উঠানের মাঝে একটা পাথরের মূর্তি… সামনের পা দুটো সুন্নে তুলে দুরন্ত গতির রস টেনে থমকে দাড়িয়ে সৌর্য আর দম্ভের প্রকাশ করছে একটা পেশী বহুল ঘোড়া. আজও সবই আছে…
কিন্তু কাল এর নিষ্ঠুরতায় আর নিজেদের উশৃন্খলতায় ক্ষয়-রোগে জড়া-জীর্ন দশা. বিশাল লোহার গেট আজ আর নেই… সস্তা কাঠ দিয়ে কোনো রকমে একটা কপট তৈরী করা হয়েছে… যা দুপাশের রাজকীয় স্তম্ভ দুটোর সঙ্গে…
যদিও তারাও বার্ধক্যে নুয়ে পড়েছে… একান্তই বে-মানান. অবস্য গেট এ কপট লাগানোর দরকার এ ছিল না… কারণ চারপাশের পাচিল এ গেট এর চাইতে ও বড়ো বড়ো ছিদ্র তৈরী হয়েছে. কপটটা শুধু যেন এ বাড়ির লুপ্ত-সম্মান কে শেষ শ্রদ্ধা জানতেই তৈরী হয়েছে… কার্যকারিতা নেই কোনো.
গার্গি তাদের দুজন কে নিয়ে গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলও… আগে কার দিন হলে হয়তো এই সময় কোথাও সংখ বেজে উঠলো.. কিন্তু এখন শুধু ঘন ধরা কাঠের পাল্লায় লাগানো মরছে ধরা লোহার কব্জার আর্তনাদ ছাড়া আর কোনো শব্দ হলো না.
রাস্তাটা এখনো নুরী-পাথর বিছানো… কারণ পাথর সহজে খয়ে যায় না. কাল এর সাক্ষী দিতে তারা অনেকদিন অবিকৃতো থাকে.. যদিও ঘনত্ব হারিয়েছে. উঠান এর মূর্তি তার কাছে এসে আবার দাড়িয়ে পড়লো তমাল. অসাধারণ ভাস্কর্য… খুব বেশি বড়ো নয় পাথরের ঘাড়াটা… তবে বিখ্যাত কোনো শিল্পী অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছিল… দেখলেই বোঝা যায়. উচ্চতায় ৭ ফুট মতো হবে…
কিন্তু ঘোড়াটার ফুলে ওটা পেশী থেকে এখনো যেন শক্তি চূইয়ে পড়ছে. তমাল একবার হাত বললো ঘোড়া তার গায়ে. তারপর এগিয়ে চলল সামনে. কুহেলি যেমন বলেছিল… তেমনই জির্ন দশা বাড়িটার. দোতলা বাড়ি… রূম ও অনেক গুলো.. কিন্তু তার কটা যে বসবাস যোগ্য আছে… সে বিষয়ে সন্দেহ জাগে.
বাড়িটার নির্মাণ শৈলিও একটু অদ্ভুত. পাথর আর ইটের সংমিশ্রণে তৈরী বাড়িটা. কিছু কিছু অংশ পাথর দিয়ে তৈরী… বাকিটা ইটের. যে অংশ গুলো পাথরের সেগুলো এখনো অবিকৃত রয়েছে… ইট প্রায় খয়ে গেছে.
আর এই পরিতক্ত বাড়িটাকে আরও অদ্ভুত করেছে. রাজা ভিখারীর পোষাক পড়লে যেমন দেখতে ভালো লাগে না… অনেকটা সেরকম. সামনে অনেক গুলো বড়ো বড়ো পাথরের তম… আর মাঝখানে একটা গাড়ি-বারান্দা রয়েছে পাথরের.

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চন্দ্র-কথা By তমাল মজুমদার - by Kolir kesto - 18-06-2020, 04:14 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)