14-06-2020, 05:14 PM
ত্রয়োদশ পর্ব
চক্রবর্তি বাড়ীর বন্ধ দরজার সামনে দাড়িয়ে মনে হল এই সেই পাড়া যেখানে আমার শৈশব কেটেছে ধুলো বাতাস মেখে বড় হয়েছি,কলেজ কলেজে বা বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে হাপিয়ে ওঠা মন বাড়ী ফিরে এই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আকুলিত হয়ে উঠত, দরজার ওপাশে আমার জন্য জমা আছে আদর স্নেহ ভালবাসা,আমার একান্ত আশ্রয় কখনো তিরস্কার জোটেনি তা নয় কিন্তু তাতে ছিল না বিদ্বেষের বাষ্প। আজ সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেন এত সঙ্কোচ কিসের দ্বিধা চেপে ধরছে আমার হাত?
সুটকেস পাশে নামিয়ে রেখে সসঙ্কোচে কড়া নাড়লাম।কোনো সাড়া নেই।আবার কড়া নাড়লাম এবার একটু জোরে।ভিতর থেকে আওয়াজ এল, খুলছি--খুলছি কে-এ-এ?
মনে হচ্ছে ফাল্গুণীর গলা।অবাক হয়ে যাবে আমাকে দেখে। উচ্ছসিত হয়ে বলবে,কিরে মণি তুইইই?
ফাল্গুণী দরজা খুলে বিস্মিত চোখ মেলে বলল,ঠাকুরঝি তুমি এখন?
--কেমন আছিস ফাল্গুণী?
উপর থেকে মা জিজ্ঞেস করে,কে বউমা?
ফাল্গুণী গলা তুলে বলল,ঠাকুরঝি।
--কে ঠাকুরঝি?
--আপনার কটা মেয়ে?গলা নামিয়ে আমাকে বলল,ঠাকুরঝি কিছু মনে কোর না আমরা একসময় কলেজে পড়েছি ঠিকই এখন আমি তোমার দাদার স্ত্রী।তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে না।
আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে আমার সামনে ফাল্গুণী নয় যেন অন্য কেউ কথা বলছে।জানি না আমার জন্য এ বাড়িতে সাজানো আছে আরো কত বিস্ময়। প্রত্যুত্তর না দিয়ে ওকে পাস কাটিয়ে উপরে উঠে গেলাম।মা বলল,কিরে মণি কোনো খবর না দিয়ে এত রাতে?
--কেন খবর না দিয়ে আসতে ণেই?
--তুই একা আর কেউ আসেনি?
--পশুপতিবাবু এসেছিলেন।
--বেয়াই?কি বলছিস তুই?নীচে দাড় করিয়ে রেখেছিস?
--ব্যস্ত হয়োনা,আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছেন।
অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে লাবণ্য। ঘরের ভিতর থেকে রমেশবাবু জিজ্ঞেস করলেন,লাবণ্য কার সঙ্গে কথা বলছো?
--মণি এসেছে।আচ্ছা মা সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? রাগারাগি করে আসিস নি তো?
--মা ওরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
--তাড়িয়ে দিয়েছে?লাবণ্যর মুখে কথা যোগায় না। অসহায়ভাবে মেয়েকে দেখে বলে,যা তোর বাবার সঙ্গে দেখা করে আয়।তুই খাবি তো?
--না মা আমার ক্ষিধে ণেই।
--খাবি তো বল,ভাত আছে।
--আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
বাবার ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কেমন আছো?
বাবা চোখ মেলে আমাকে দেখে হাসলেন।তুই কেমন আছিস মা?
--ভালো।কাল কথা বলবো এখন আসি?
ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতে আমি বেরিয়ে এলাম।বাইরে মা আমার অপেক্ষায় ছিল,আমাকে নিয়ে ঘরে নিয়ে বলল,তুই এই ঘরে থাকিস।কাপড় ছেড়ে নে,আমি আসছি।
শুয়ে অপেক্ষা করছি কখন মন ফোন করে?অন্ধকারে বুঝতে পারি মা আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল। আমি জানতাম আজ রাতে মা আমার পাশেই শোবে।আমি উঠে বসলাম।মা জিজ্ঞেস করে,কিরে উঠলি কেন?
এখন মনের ফোন আসার কথা।মাকে বললাম,একটু বাথরুম যাবো।
বাথরুমে মুততে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।কতক্ষণ হবে খেয়াল নেই,বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে মা,কিরে মণি কি করছিস?
মনে মনে হাসলাম মার আশঙ্কা ঠিক নয়।সে রকম কিছু করার মত আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়িনি,বাথরুম থেকে
বেরিয়ে হেসে বললাম,ঘুম আসছিল না তাই চোখে মুখে একটু জল দিলাম।
আমরা দুজনে এসে শুয়ে পড়লাম।মোবাইলের সুইচ অফ,ফোন করলেও আর পাবে না। মা জিজ্ঞেস করে,অতনু এসব জানে?
--সে তো এখনও ফেরেনি এসে জানতে পারবে।
--অতনু জানে না তাহলে বেয়াই মশায় কি করে--।
মাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম,ছেলের বাপ হিসেবে এই অধিকার তার থাকবে না?
--তুই কি আমাদের কথা বলছিস? আমরা তোর ভালর জন্য করেছিলাম।
--ভাল তো দেখতে পাচ্ছো?মা প্লিজ আমার এখন এসব ভাল লাগছে না।
--হ্যা মা তুই ঘুমো।লাবণ্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।মনে মনে ভাবে বাড়ী পর্যন্ত এসে একবার দেখা করল না?এ কেমন ভদ্রতা? সকাল হোক তপুর সঙ্গে কথা বলে দেখছি কি করা যায়?
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তপেনের সঙ্গে কথা বলে লাবণ্য।তপেন কিছু বলার আগে মৌমিতা বলল,মা সুদেব আমাদের সহকর্মী আর সে তার শ্বশুরের পক্ষেই কথা বলবে।তাকে কিছু বলতে যাওয়ার মানে হয় না।কিছু মনে করবেন না ঠাকুরঝি হয়তো এমন কিছু করেছে যার জন্য তাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়ছে।আপনি পারবেন আমাকে বের করে দিতে?
--বউমা মণি কিছু করেনি বলছি না কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই চুপি চুপি বাড়ী পৌছে দেওয়া এ কেমন ভদ্রতা?
অভিমানে লাবণ্যর চোখে জল এসে যায়।বৌমা পরের মেয়ে তার কথা ধরছে না কিন্তু তপু পেটের ছেলে মণি তার বোন চুপচাপ দাঁড়িয়ে বউয়ের কথা শুনল মুখে রা কাড়ল না?
আমার জন্য মায়ের এই দুর্ভাবনা আমাকে পীড়িত করে।ঘুরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে আছি।ফাল্গুনী উপরে উঠে এসেছে,গলা পাচ্ছি।
--কিছু বলবে বউমা?
--কি বলবো চিন্তায় সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।ও বলছিল অফিসে লোকজনকে মুখ দেখাবে কি করে?
--কেন লজ্জা পাবার মত কি এমন ঘটল?
--ঠাকুরঝিকে নাকি তাড়িয়ে দিয়েছে?যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলবো ঠাকুরঝি নিশ্চয়ই কিছু করেছে না হলে কেউ রাত দুপুরে--।
--বউমা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।বুঝতে পারছিনা তুমি এত সিয়োর হলে কিভাবে? তোমাকে একটা কথা বলবো? মণির উপর তোমার এত রাগ কেন বলতো বউমা,কই ওকেতো তোমার বিরুদ্ধে কোনোদিন কিছ বলতে শুনিনি।
রাগে আমার শরীর নিসপিস করছে ইচ্ছে হচ্ছিল বাইরে গিয়ে মাকে বলি আমার রাগ তোমার উপর। ফাল্গুণী আবার শুরু করে,জিজ্ঞেস না করলেও একটা কথা আমাকে বলতে হবে মা।বাড়ীতে ননদ ননদ-জামাই এলে সবারই আনন্দ হয়।চিরকালের জন্য তো নয় দু-দিন ভাল মন্দ খাওয়া সিনেমা দেখা কে না চায় বলুন। কিন্তু আপনারা আর ক-দিন এরপর তো আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে।
ঘর থেকে বাবা চিৎকার করে উঠলেন,লাবণ্য।তুমি সমুকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলো।
মা ছুটে বাবার ঘরে গেল। শুনতে পাচ্ছি মা বলছে,কি হল তুমি অমন করছো কেন?
ঘরে বসে ফুসছি আমার বাবার যদি কিছু হয় ফাল্গুণি তোর সুখের সংসারে আগুণ জ্বালিয়ে দেব।বাবার গলা পেলাম,ঠিক আছে ভয় পাবার কিছু নেই,অত শীঘ্রী আমি যাচ্ছিনা। মণি কোথায়?
মোবাইল অন করতে টুং করে মেসেজ ঢুকল। মা ঢুকে বলল,তোকে ডাকছে তুই যা।
--কি হয়েছে মা?
--কি আবার হবে নিজের সর্বনাশ নিজে করেছো এবার বারোভুতের লাথি ঝ্যাটা খাও।
মায়ের উপর আমার রাগ হয় না। এসব কথা বলে মায়ের মন যদি একটু হালকা হয় হোক,সারা জীবন একলা হাতে সংসার সামলেছে ছেলে মেয়ে মানুষ করেছে বিনিময়ে যা পাচ্ছে তাতে সব মায়ের মন আনন্দে আপ্লুত হবে বই কি।আমি বাবার ঘরে গেলাম।আমাকে দেখে হাত বাড়িয়ে মাথার কাছে বসতে ইঙ্গিত করলেন। আমি বসে বাবার মাথায় হাত বোলাতে থাকি।বাবা চোখ বুজে আছেন প্রশান্তিতে একসময় বললেন,তুই ভুলেও ভাবিস না কারো দয়ায় এখানে আছিস।
--বাবা তুমি কথা বোলোনা।
--শোন মা এই বাড়ী আমার প্রতিটা ইট আমার টাকায় কেনা।
--বাবা তুমি চুপ করো।তোমার কষ্ট হচ্ছে।আমি পরে শুনবো আমি তো আছি।
--আমার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দেতো মা।রমেশবাবু বললেন।
আমি চাদর সরিয়ে বাবার বুকে হাত বোলাতে থাকি।বুঝতে পারি বাবা ঘুমোচ্ছেন।নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন না।মুখ দিয়ে ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। মা ঢুকল চা নিয়ে বাবাকে দেখে বলল,ঘুমোচ্ছে? তা হলে তুই নে।চায়ের কাপ আমাকে এগিয়ে দিল। মা বাবার পাশে বসে বলল,দেখতো রান্না ঘরে,ভাত উতল এলে আমাকে ডাকবি।
আমি চায়ের কাপ নিয়ে চলে এসে ঘরে ঢূকে মেসেজ খুললাম,সুইচ অফ কেন?আমার উপর রাগ করেছো?মন।
মনে মনে বলি আমার ঘর ভেঙ্গে দিয়ে এখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে 'রাগ করেছো?'লোকের ঘর ভাঙ্গতে খুব মজা তাই না?
ভাতের হাড়ির ঢকনা ফোস ফোস করে উঠছে নামছে আমি মাকে ডাকলাম না। ন্যাকড়া দিয়ে হাড়ী ধরে একটা সসপ্যানে উপুড় করে দিলাম।গলগল করে ফ্যান বেরোতে থাকে।পিছনে তাকিয়ে দেখলাম দরজা ধরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখছে মা। চোখাচুখি হতে হেসে মা বলল,কাল রাতে খাসনি,স্নান করে আয় দাদাদের সঙ্গে খেয়ে নিবি।
স্নান সেরে ফিরে এসে দেখলাম টেবিলে চারটে থালায় খাবার দেওয়া হয়েছে।বড়দা বৌদি বসে গেছে মা বলল,তুইও বসে যা।
আমি বসে গেলাম। মৌমিতা আমাকে আড়চোখে দেখল।ছোড়দা এসে আরেক জায়গায় বসে গেল। কেউ কোনো কথা বলছে না কারণ সম্ভবত আমি।ফাল্গুণী এসে জিজ্ঞেস করল,মা আমি কোথায় বসবো?
--বউমা ওরা উঠলেই তোমাকে দিচ্ছি।তোমার তো আর অফিসের তাড়া নেই।
--আমার অফিস নেই,এদের সবার অফিস আছে?
ফাল্গুণীর উদ্দেশ্য আমি তাতে সন্দেহ নেই।মা বলল,ওভাবে কথা বলছো কেন? রাতে মণি খায়নি তাই বললাম তুই বসে যা।
--আপনি জানেন না বেলা করে খেলে আমার মাথা ধরে?ফাল্গুণী ছোড়দাকে উদ্দেশ্যে বলল,তোমাকে বলেছিলাম না এই শুরু হয়ে গেল।মুখ গোমড়া করে ফাল্গুণী নীচে নেমে গেল।
অর্ধেক খেয়েই ছোড়দা উঠে পড়ে।মা বলল,কিরে সমু তুই উঠলি?
--আমার পেট ভরে গেছে মা।বাবা ডাকছিলেন কেন?
--তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর।
ছোড়দা হাত মুখ ধুয়ে বাবার ঘরে ঢুকল কি কথা হয় শোনার জন্য সবার কান খাড়া। ছোড়দা বলল,বাবা তুমি ডেকেছো?
রমেশবাবু কাগজ পড়ছিলেন,কাগজ থেকে মুখ তুলে বললেন,ও তুমি? অফিস যাচ্ছো?
--হ্যা,তুমি নাকি খোজ করছিলে?
--সমু এখানে তোমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?
--অসুবিধের কি আছে?
--বউমাকে জিজ্ঞেস করে দেখো।অবশ্য অসুবিধে হলে আমার কিছু করার নেই,অন্যত্র দেখতে হবে তোমাদের।
--আর কিছু বলবে?
--হ্যা তোমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে তুমি এসো।
গভীর মুখে ছোড়দা বেরিয়ে আসতে মা বলল,সমু নীচে গিয়ে বউমাকে পাঠিয়ে দিস,খেতে দিচ্ছি।
বড়দা বড়বৌদি মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।বাবার কথা ওরা শুনেছে।
রাতে মা বলল,মণি তুই আজ একা এ ঘরে শোও,আমি তোর বাবার সঙ্গে শুচ্ছি?
আমি খুশি হলাম বললাম,ঠিক আছে মা।
মা যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলে,তুই বৌমার কথায় কিছু মনে করিস না মা।
মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মায়া হল মনে মনে বলি,মাগো তুমি যত চেষ্টাই করোনা অপমানের আঁচ থেকে মেয়েকে বাঁচানো আজ তোমার সাধ্যাতীত।আমি কিছু মনে করিনি,এতো আমার প্রাপ্য মাগো। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।সুইচ বন্ধ করার দরকার নেই,মাথার কাছে মোবাইল রেখে দিলাম। এখন ছোড়দা আর ফাল্গুণী নিশ্চয়ই নিজেদের মধ্যে বাবার কথা আলোচনা করছে সকালে ঘটনা।বাবার কথা শুনে বড়দাও কিছুটা সংযত। কাল ফোন করে পায়নি এখন করতে কি হয়েছে?ফোন বেজে ওঠে। অনেকদিন বাঁচবে মন।কানে ধরে বলি,হ্যালো?
--তোমার ননদ ফিরেছে?
--জানি না,ফিরলেও বলতে পারবো না আমি আমার ঘরে শুয়ে পড়েছি।কেন তনিমার কি হয়েছে?
--বাদ দাও অন্যের কথা তুমি কেমন আছো?কাল সারারাত যতবার ফোন করছি শুনছি সুইচ অফ। জানো সারারাত ঘুমোতে পারিনি।
মজা লাগল বললাম,ডাক্তার দেখাও।
--তুমি খুব নির্মম।তুমি কি সবার প্রতি নির্মম নাকি শুধু আমার প্রতি?
--হি-হি-হি শুধু তোমার প্রতি।
--এটাই প্রেমের লক্ষণ।প্রেমিককে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া কিন্তু অন্যে কষ্ট দিলে একেবারে বাঘিনী।
--প্রেম নিয়ে তোমার দেখছি অনেক জ্ঞান।
--কেন ভুল বললাম?
আমি চুপ করে থাকি।মন জিজ্ঞেস করল,কিছু বলছো না যে?
--কি বলবো?
--যা খুশি,তোমার কথা শোনার জন্যই তো ফোন করি।
--শুধু কথা,আর কিছু চাও না?
--তুমি তো আমার, তোমার কাছে কি চাইবো?
--একটা গান শুনবে?
--তুমি গাইবে? তোমার শাশুড়ী আড়ি পেতে নেই তো?
--থাকুক আমার গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে। কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। আমি গুন গুন করে গাইলাম,আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি বাহির পানে চোখ মেলেছি হৃদয় পানে চাইনি.....।গান শেষ হতে জিজ্ঞেস করলাম,কিছু বলছো না যে?
--আমি আর কি বলবো তুমিই তো সব বলে দিলে?
--কিছুই বলার নেই?
--বুকের বোতাম খোলো--খুলেছো?
--হ্যা খুলেছি।
--এবার বুকের দিকে দেখো।
আমি নিজের বুকের দিকে দেখলাম পাশাপাশি দুটি স্তন।
--কিছু দেখতে পাচ্ছো না?
--কি দেখতে পাবো?
--ভাল করে দেখো,ওখানে মনকে দেখত পাচ্ছো না?
শরীরে শিহরণ খেলে গেল।মন কাছে থাকলে দু-হাতে জড়িয়ে ধরতাম বুকে।
ও পাশ থেকে শুনতে পেলাম,শুভ রাত্রি।
বালিশে মুখ গুজে কেঁদে ফেললাম।এই বিশাল পৃথিবীতে নিজেকে মনে হচ্ছিল বড় একা কোথাও বুঝি আমার জন্য একটু ঠাঁই নেই।এখন মনে হচ্ছে আছে একটা জায়গা আছে যা একান্ত আমার।
চক্রবর্তি বাড়ীর বন্ধ দরজার সামনে দাড়িয়ে মনে হল এই সেই পাড়া যেখানে আমার শৈশব কেটেছে ধুলো বাতাস মেখে বড় হয়েছি,কলেজ কলেজে বা বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে হাপিয়ে ওঠা মন বাড়ী ফিরে এই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আকুলিত হয়ে উঠত, দরজার ওপাশে আমার জন্য জমা আছে আদর স্নেহ ভালবাসা,আমার একান্ত আশ্রয় কখনো তিরস্কার জোটেনি তা নয় কিন্তু তাতে ছিল না বিদ্বেষের বাষ্প। আজ সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেন এত সঙ্কোচ কিসের দ্বিধা চেপে ধরছে আমার হাত?
সুটকেস পাশে নামিয়ে রেখে সসঙ্কোচে কড়া নাড়লাম।কোনো সাড়া নেই।আবার কড়া নাড়লাম এবার একটু জোরে।ভিতর থেকে আওয়াজ এল, খুলছি--খুলছি কে-এ-এ?
মনে হচ্ছে ফাল্গুণীর গলা।অবাক হয়ে যাবে আমাকে দেখে। উচ্ছসিত হয়ে বলবে,কিরে মণি তুইইই?
ফাল্গুণী দরজা খুলে বিস্মিত চোখ মেলে বলল,ঠাকুরঝি তুমি এখন?
--কেমন আছিস ফাল্গুণী?
উপর থেকে মা জিজ্ঞেস করে,কে বউমা?
ফাল্গুণী গলা তুলে বলল,ঠাকুরঝি।
--কে ঠাকুরঝি?
--আপনার কটা মেয়ে?গলা নামিয়ে আমাকে বলল,ঠাকুরঝি কিছু মনে কোর না আমরা একসময় কলেজে পড়েছি ঠিকই এখন আমি তোমার দাদার স্ত্রী।তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে না।
আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে আমার সামনে ফাল্গুণী নয় যেন অন্য কেউ কথা বলছে।জানি না আমার জন্য এ বাড়িতে সাজানো আছে আরো কত বিস্ময়। প্রত্যুত্তর না দিয়ে ওকে পাস কাটিয়ে উপরে উঠে গেলাম।মা বলল,কিরে মণি কোনো খবর না দিয়ে এত রাতে?
--কেন খবর না দিয়ে আসতে ণেই?
--তুই একা আর কেউ আসেনি?
--পশুপতিবাবু এসেছিলেন।
--বেয়াই?কি বলছিস তুই?নীচে দাড় করিয়ে রেখেছিস?
--ব্যস্ত হয়োনা,আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছেন।
অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে লাবণ্য। ঘরের ভিতর থেকে রমেশবাবু জিজ্ঞেস করলেন,লাবণ্য কার সঙ্গে কথা বলছো?
--মণি এসেছে।আচ্ছা মা সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? রাগারাগি করে আসিস নি তো?
--মা ওরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
--তাড়িয়ে দিয়েছে?লাবণ্যর মুখে কথা যোগায় না। অসহায়ভাবে মেয়েকে দেখে বলে,যা তোর বাবার সঙ্গে দেখা করে আয়।তুই খাবি তো?
--না মা আমার ক্ষিধে ণেই।
--খাবি তো বল,ভাত আছে।
--আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
বাবার ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কেমন আছো?
বাবা চোখ মেলে আমাকে দেখে হাসলেন।তুই কেমন আছিস মা?
--ভালো।কাল কথা বলবো এখন আসি?
ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতে আমি বেরিয়ে এলাম।বাইরে মা আমার অপেক্ষায় ছিল,আমাকে নিয়ে ঘরে নিয়ে বলল,তুই এই ঘরে থাকিস।কাপড় ছেড়ে নে,আমি আসছি।
শুয়ে অপেক্ষা করছি কখন মন ফোন করে?অন্ধকারে বুঝতে পারি মা আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল। আমি জানতাম আজ রাতে মা আমার পাশেই শোবে।আমি উঠে বসলাম।মা জিজ্ঞেস করে,কিরে উঠলি কেন?
এখন মনের ফোন আসার কথা।মাকে বললাম,একটু বাথরুম যাবো।
বাথরুমে মুততে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।কতক্ষণ হবে খেয়াল নেই,বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে মা,কিরে মণি কি করছিস?
মনে মনে হাসলাম মার আশঙ্কা ঠিক নয়।সে রকম কিছু করার মত আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়িনি,বাথরুম থেকে
বেরিয়ে হেসে বললাম,ঘুম আসছিল না তাই চোখে মুখে একটু জল দিলাম।
আমরা দুজনে এসে শুয়ে পড়লাম।মোবাইলের সুইচ অফ,ফোন করলেও আর পাবে না। মা জিজ্ঞেস করে,অতনু এসব জানে?
--সে তো এখনও ফেরেনি এসে জানতে পারবে।
--অতনু জানে না তাহলে বেয়াই মশায় কি করে--।
মাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম,ছেলের বাপ হিসেবে এই অধিকার তার থাকবে না?
--তুই কি আমাদের কথা বলছিস? আমরা তোর ভালর জন্য করেছিলাম।
--ভাল তো দেখতে পাচ্ছো?মা প্লিজ আমার এখন এসব ভাল লাগছে না।
--হ্যা মা তুই ঘুমো।লাবণ্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।মনে মনে ভাবে বাড়ী পর্যন্ত এসে একবার দেখা করল না?এ কেমন ভদ্রতা? সকাল হোক তপুর সঙ্গে কথা বলে দেখছি কি করা যায়?
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তপেনের সঙ্গে কথা বলে লাবণ্য।তপেন কিছু বলার আগে মৌমিতা বলল,মা সুদেব আমাদের সহকর্মী আর সে তার শ্বশুরের পক্ষেই কথা বলবে।তাকে কিছু বলতে যাওয়ার মানে হয় না।কিছু মনে করবেন না ঠাকুরঝি হয়তো এমন কিছু করেছে যার জন্য তাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়ছে।আপনি পারবেন আমাকে বের করে দিতে?
--বউমা মণি কিছু করেনি বলছি না কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই চুপি চুপি বাড়ী পৌছে দেওয়া এ কেমন ভদ্রতা?
অভিমানে লাবণ্যর চোখে জল এসে যায়।বৌমা পরের মেয়ে তার কথা ধরছে না কিন্তু তপু পেটের ছেলে মণি তার বোন চুপচাপ দাঁড়িয়ে বউয়ের কথা শুনল মুখে রা কাড়ল না?
আমার জন্য মায়ের এই দুর্ভাবনা আমাকে পীড়িত করে।ঘুরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে আছি।ফাল্গুনী উপরে উঠে এসেছে,গলা পাচ্ছি।
--কিছু বলবে বউমা?
--কি বলবো চিন্তায় সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।ও বলছিল অফিসে লোকজনকে মুখ দেখাবে কি করে?
--কেন লজ্জা পাবার মত কি এমন ঘটল?
--ঠাকুরঝিকে নাকি তাড়িয়ে দিয়েছে?যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলবো ঠাকুরঝি নিশ্চয়ই কিছু করেছে না হলে কেউ রাত দুপুরে--।
--বউমা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।বুঝতে পারছিনা তুমি এত সিয়োর হলে কিভাবে? তোমাকে একটা কথা বলবো? মণির উপর তোমার এত রাগ কেন বলতো বউমা,কই ওকেতো তোমার বিরুদ্ধে কোনোদিন কিছ বলতে শুনিনি।
রাগে আমার শরীর নিসপিস করছে ইচ্ছে হচ্ছিল বাইরে গিয়ে মাকে বলি আমার রাগ তোমার উপর। ফাল্গুণী আবার শুরু করে,জিজ্ঞেস না করলেও একটা কথা আমাকে বলতে হবে মা।বাড়ীতে ননদ ননদ-জামাই এলে সবারই আনন্দ হয়।চিরকালের জন্য তো নয় দু-দিন ভাল মন্দ খাওয়া সিনেমা দেখা কে না চায় বলুন। কিন্তু আপনারা আর ক-দিন এরপর তো আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে।
ঘর থেকে বাবা চিৎকার করে উঠলেন,লাবণ্য।তুমি সমুকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলো।
মা ছুটে বাবার ঘরে গেল। শুনতে পাচ্ছি মা বলছে,কি হল তুমি অমন করছো কেন?
ঘরে বসে ফুসছি আমার বাবার যদি কিছু হয় ফাল্গুণি তোর সুখের সংসারে আগুণ জ্বালিয়ে দেব।বাবার গলা পেলাম,ঠিক আছে ভয় পাবার কিছু নেই,অত শীঘ্রী আমি যাচ্ছিনা। মণি কোথায়?
মোবাইল অন করতে টুং করে মেসেজ ঢুকল। মা ঢুকে বলল,তোকে ডাকছে তুই যা।
--কি হয়েছে মা?
--কি আবার হবে নিজের সর্বনাশ নিজে করেছো এবার বারোভুতের লাথি ঝ্যাটা খাও।
মায়ের উপর আমার রাগ হয় না। এসব কথা বলে মায়ের মন যদি একটু হালকা হয় হোক,সারা জীবন একলা হাতে সংসার সামলেছে ছেলে মেয়ে মানুষ করেছে বিনিময়ে যা পাচ্ছে তাতে সব মায়ের মন আনন্দে আপ্লুত হবে বই কি।আমি বাবার ঘরে গেলাম।আমাকে দেখে হাত বাড়িয়ে মাথার কাছে বসতে ইঙ্গিত করলেন। আমি বসে বাবার মাথায় হাত বোলাতে থাকি।বাবা চোখ বুজে আছেন প্রশান্তিতে একসময় বললেন,তুই ভুলেও ভাবিস না কারো দয়ায় এখানে আছিস।
--বাবা তুমি কথা বোলোনা।
--শোন মা এই বাড়ী আমার প্রতিটা ইট আমার টাকায় কেনা।
--বাবা তুমি চুপ করো।তোমার কষ্ট হচ্ছে।আমি পরে শুনবো আমি তো আছি।
--আমার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দেতো মা।রমেশবাবু বললেন।
আমি চাদর সরিয়ে বাবার বুকে হাত বোলাতে থাকি।বুঝতে পারি বাবা ঘুমোচ্ছেন।নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন না।মুখ দিয়ে ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। মা ঢুকল চা নিয়ে বাবাকে দেখে বলল,ঘুমোচ্ছে? তা হলে তুই নে।চায়ের কাপ আমাকে এগিয়ে দিল। মা বাবার পাশে বসে বলল,দেখতো রান্না ঘরে,ভাত উতল এলে আমাকে ডাকবি।
আমি চায়ের কাপ নিয়ে চলে এসে ঘরে ঢূকে মেসেজ খুললাম,সুইচ অফ কেন?আমার উপর রাগ করেছো?মন।
মনে মনে বলি আমার ঘর ভেঙ্গে দিয়ে এখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে 'রাগ করেছো?'লোকের ঘর ভাঙ্গতে খুব মজা তাই না?
ভাতের হাড়ির ঢকনা ফোস ফোস করে উঠছে নামছে আমি মাকে ডাকলাম না। ন্যাকড়া দিয়ে হাড়ী ধরে একটা সসপ্যানে উপুড় করে দিলাম।গলগল করে ফ্যান বেরোতে থাকে।পিছনে তাকিয়ে দেখলাম দরজা ধরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখছে মা। চোখাচুখি হতে হেসে মা বলল,কাল রাতে খাসনি,স্নান করে আয় দাদাদের সঙ্গে খেয়ে নিবি।
স্নান সেরে ফিরে এসে দেখলাম টেবিলে চারটে থালায় খাবার দেওয়া হয়েছে।বড়দা বৌদি বসে গেছে মা বলল,তুইও বসে যা।
আমি বসে গেলাম। মৌমিতা আমাকে আড়চোখে দেখল।ছোড়দা এসে আরেক জায়গায় বসে গেল। কেউ কোনো কথা বলছে না কারণ সম্ভবত আমি।ফাল্গুণী এসে জিজ্ঞেস করল,মা আমি কোথায় বসবো?
--বউমা ওরা উঠলেই তোমাকে দিচ্ছি।তোমার তো আর অফিসের তাড়া নেই।
--আমার অফিস নেই,এদের সবার অফিস আছে?
ফাল্গুণীর উদ্দেশ্য আমি তাতে সন্দেহ নেই।মা বলল,ওভাবে কথা বলছো কেন? রাতে মণি খায়নি তাই বললাম তুই বসে যা।
--আপনি জানেন না বেলা করে খেলে আমার মাথা ধরে?ফাল্গুণী ছোড়দাকে উদ্দেশ্যে বলল,তোমাকে বলেছিলাম না এই শুরু হয়ে গেল।মুখ গোমড়া করে ফাল্গুণী নীচে নেমে গেল।
অর্ধেক খেয়েই ছোড়দা উঠে পড়ে।মা বলল,কিরে সমু তুই উঠলি?
--আমার পেট ভরে গেছে মা।বাবা ডাকছিলেন কেন?
--তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর।
ছোড়দা হাত মুখ ধুয়ে বাবার ঘরে ঢুকল কি কথা হয় শোনার জন্য সবার কান খাড়া। ছোড়দা বলল,বাবা তুমি ডেকেছো?
রমেশবাবু কাগজ পড়ছিলেন,কাগজ থেকে মুখ তুলে বললেন,ও তুমি? অফিস যাচ্ছো?
--হ্যা,তুমি নাকি খোজ করছিলে?
--সমু এখানে তোমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?
--অসুবিধের কি আছে?
--বউমাকে জিজ্ঞেস করে দেখো।অবশ্য অসুবিধে হলে আমার কিছু করার নেই,অন্যত্র দেখতে হবে তোমাদের।
--আর কিছু বলবে?
--হ্যা তোমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে তুমি এসো।
গভীর মুখে ছোড়দা বেরিয়ে আসতে মা বলল,সমু নীচে গিয়ে বউমাকে পাঠিয়ে দিস,খেতে দিচ্ছি।
বড়দা বড়বৌদি মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।বাবার কথা ওরা শুনেছে।
রাতে মা বলল,মণি তুই আজ একা এ ঘরে শোও,আমি তোর বাবার সঙ্গে শুচ্ছি?
আমি খুশি হলাম বললাম,ঠিক আছে মা।
মা যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলে,তুই বৌমার কথায় কিছু মনে করিস না মা।
মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মায়া হল মনে মনে বলি,মাগো তুমি যত চেষ্টাই করোনা অপমানের আঁচ থেকে মেয়েকে বাঁচানো আজ তোমার সাধ্যাতীত।আমি কিছু মনে করিনি,এতো আমার প্রাপ্য মাগো। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।সুইচ বন্ধ করার দরকার নেই,মাথার কাছে মোবাইল রেখে দিলাম। এখন ছোড়দা আর ফাল্গুণী নিশ্চয়ই নিজেদের মধ্যে বাবার কথা আলোচনা করছে সকালে ঘটনা।বাবার কথা শুনে বড়দাও কিছুটা সংযত। কাল ফোন করে পায়নি এখন করতে কি হয়েছে?ফোন বেজে ওঠে। অনেকদিন বাঁচবে মন।কানে ধরে বলি,হ্যালো?
--তোমার ননদ ফিরেছে?
--জানি না,ফিরলেও বলতে পারবো না আমি আমার ঘরে শুয়ে পড়েছি।কেন তনিমার কি হয়েছে?
--বাদ দাও অন্যের কথা তুমি কেমন আছো?কাল সারারাত যতবার ফোন করছি শুনছি সুইচ অফ। জানো সারারাত ঘুমোতে পারিনি।
মজা লাগল বললাম,ডাক্তার দেখাও।
--তুমি খুব নির্মম।তুমি কি সবার প্রতি নির্মম নাকি শুধু আমার প্রতি?
--হি-হি-হি শুধু তোমার প্রতি।
--এটাই প্রেমের লক্ষণ।প্রেমিককে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া কিন্তু অন্যে কষ্ট দিলে একেবারে বাঘিনী।
--প্রেম নিয়ে তোমার দেখছি অনেক জ্ঞান।
--কেন ভুল বললাম?
আমি চুপ করে থাকি।মন জিজ্ঞেস করল,কিছু বলছো না যে?
--কি বলবো?
--যা খুশি,তোমার কথা শোনার জন্যই তো ফোন করি।
--শুধু কথা,আর কিছু চাও না?
--তুমি তো আমার, তোমার কাছে কি চাইবো?
--একটা গান শুনবে?
--তুমি গাইবে? তোমার শাশুড়ী আড়ি পেতে নেই তো?
--থাকুক আমার গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে। কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। আমি গুন গুন করে গাইলাম,আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি বাহির পানে চোখ মেলেছি হৃদয় পানে চাইনি.....।গান শেষ হতে জিজ্ঞেস করলাম,কিছু বলছো না যে?
--আমি আর কি বলবো তুমিই তো সব বলে দিলে?
--কিছুই বলার নেই?
--বুকের বোতাম খোলো--খুলেছো?
--হ্যা খুলেছি।
--এবার বুকের দিকে দেখো।
আমি নিজের বুকের দিকে দেখলাম পাশাপাশি দুটি স্তন।
--কিছু দেখতে পাচ্ছো না?
--কি দেখতে পাবো?
--ভাল করে দেখো,ওখানে মনকে দেখত পাচ্ছো না?
শরীরে শিহরণ খেলে গেল।মন কাছে থাকলে দু-হাতে জড়িয়ে ধরতাম বুকে।
ও পাশ থেকে শুনতে পেলাম,শুভ রাত্রি।
বালিশে মুখ গুজে কেঁদে ফেললাম।এই বিশাল পৃথিবীতে নিজেকে মনে হচ্ছিল বড় একা কোথাও বুঝি আমার জন্য একটু ঠাঁই নেই।এখন মনে হচ্ছে আছে একটা জায়গা আছে যা একান্ত আমার।