14-06-2020, 12:12 PM
(This post was last modified: 14-06-2020, 04:55 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দ্বাদশ পর্ব
আমি এখন পিঞ্জিরাবদ্ধ পাখি।সবার ইচ্ছেতে চলতে হবে আমাকে আমার কোনো ইচ্ছে নেই।নিজেদের মেয়ে সারাদিন কোথায় কোথায় টো-টো করে চরে বেড়াচ্ছে তাতে দোষ নেই যত জুলুম পরের মেয়ের প্রতি।তনিমা এখন আমার জানলা,ওর মাধ্যমে দেখতে হয় বাইরের দুনিয়া।নানা খবর দেয় আমাকে। সকালে বুঝতে পারিনি কিন্তু বেলা যত বাড়তে থাকে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ আমাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরে।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে মনে হল কিছু একটা করতে হবে।
সাড়ে পাঁচটা বাজে এতক্ষণে মন নিশ্চয়ই হতাশ হয়ে চলে গেছে।শাড়ী পরলাম চুলে চিরুণী বোলালাম,একটু যাই পার্কে খানিক হেটে চলে আসবো।ঘর থেকে বেরিয়েছি নির্মলা সুন্দরীর গলা,কোথায় যাচ্ছো বউমা?
--একটু কাজ আছে।
--জানতে চাইছি কি কাজ?
--আমার মোবাইলে ব্যালান্স শেষ হয়ে গেছে টপআপ ভরতে হবে।
--ঠীক আছে তনিমা আসুক ওকে বোলো।
--ও কখন আসবে আমার এখনই দরকার। আর কি বলে শোনার অপেক্ষা না করেই সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলাম।
সহ্যের একটা সীমা থাকে। আমি কচি খুকি নই। হাটতে হাটতে এগোতে থাকি দেশবন্ধু পার্কের গেটের কাছে গিয়ে দেখলাম একটু দূরে গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে মন। গা জ্বলে গেল ভাবছে আমি ওর কথায় এসেছি। কড়া করে শুনিয়ে দেবার জন্য ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। গাড়ীর কাছে যেতে দরজা খুলে বলল,ওঠো।
মানেটা কি ও বললেই উঠতে হবে আমার ইচ্ছের কোনো দাম ণেই? রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করতে চাই না আমি গাড়ীতে উঠে বসলাম।মন গাড়ীতে উঠতে গাড়ী ছেড়ে দিল। আমি অবাক হয়ে বলি,একি কোথায় যাচ্ছি। মন মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলল।মামার বাড়ী নাকি? ড্রাইভারের সামনে কিছু বললাম না। কিছটা গিয়ে গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়তে মন বলল,শিউজি আপনি নাস্তা পানি করে আসুন।আমরা একটু কথা বলছি।
মন বলেছিল জরুরী কি কথা বলবে,সত্যিই কি কিছু কথা আছে?
--মণি বিশ্বাস করো তোমাকে দারুণ দেখতে লাগছে।মন বলল।
--ওসব বাজে কথা রাখো,জরুরী কি কথা বলবে বলেছিলে?
--তার আগে বলো তোমার কাজ ছিল তবু তুমি এলে যে?
--তোমার কথায় আসিনি,আমি নিজের ইচ্ছেতে এসেছি।
--বুঝলাম আমি তোমাকে কাধে করে আনিনি আমার ইচ্ছেতে আসোনি কিন্তু আমার কাছে এসেছো।
আমি ডান পা মুড়ে সিটে তুলে ওর দিকে ঘুরে বসে বললাম,তুমি কি বলবে বলেছিলে সেটা শুনতে এসেছি তোমার সঙ্গে গল্প করতে আসিনি।
মণিশঙ্কর বা-পা তুলে আমার মুখোমুখি হয়ে বলল,মণি তুমি কি বদলাবে না?
--কত বদলাবো যে যা বলেছে তাই শুনেছি আর কত করবো?আমি ফুপিয়ে কেঁদে ফেললাম। মন আমার মাথা বুকে চেপে শান্ত করতে লাগল।একটু পরেই নিজের বোকামী বুঝতে পেরে চোখ মুছে বললাম,সত্যিই কি তোমার কোনো জরুরী কথা আছে?
--আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি?
--তুমি এখন সিগারেট খাও? এখন ধরাও আমার দিব্যি রইল বেশি সিগারেট খাবে না।
মণিশঙ্কর সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলল,বিয়ের দিন সঙ্গে ছিল সেকি তোমার ননদ?
--হ্যা তনিমা আমার ছোট ননদ,কেন?
--একটি ছেলে নাম শুভদীপ একটা কল সেণ্টারে চাকরি করে।ছেলেটি ভাল নয়।
--ভাল নয় মানে?
--তোমার ছোড়দা চেনে ওর বিয়েতে এসেছিল।ফোনের মারফত মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নানাভাবে ভুলিয়ে শারীরি সম্পর্ক শুধু নয় ছবি তুলে ব্লাকমেল করে।তোমার ননদকে প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা যায়।
এইটা মনের জরুরী দরকার। এবার জলের মত পরিস্কার কেন সজলকে আর পছন্দ নয়। বৌদির বিয়ের আগের কথা জানার এত কেন কৌতুহল? ভাবছি বাড়ীতে কি করে তনিমার কথা বলবো,কেউ কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? মনকে জিজ্ঞেস করি,আচ্ছা মন ওই যে শুভদীপ না কি সে কি আমার সম্পর্কে কিছু জানে?
--কি জানবে?জানার আছেই বা কি? আমার হাত ধরে নিজের বুকে চেপে বলল,একটা ব্যাপার সে আমার এখানে চাপা আছে।যেদিন আমাকে দাহ করা হবে সেদিন ছাই হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে শিউরে উঠলাম বললাম,আজেবাজে কথা বললে আমি এক্ষণি নেমে যাবো।
মন আমার হাটূ চেপে ধরে বলল,স্যরি আর বলবো না।
আমার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি এল জিজ্ঞেস করলাম,মন সেই মেয়েটার কথা বল একসময় যে তোমাকে ভালবাসতো।
মন চুপ করে থাকে জিজ্ঞেস করলাম,কি ব্যাপার বলো তুমি নাকি মিথ্যে বলোনা?
--ভাবছি।
--কিভাবে বানাবে তাই ভবছো?
--তা নয় কোথা থেকে শুরু করবো সেটা ভাবছি।
--একেবারে প্রথম থেকে কিছু বাদ দেবে না।
মন আমার দিকে তাকিয়ে সরলভাবে হেসে বলল,তোমাকে বলতে লজ্জা ণেই,তুমি কাউকে বোলনা।
মনে মনে ভাবি কে না কে জনে জনে তার কথা বলতে বয়ে গেছে আমার।আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি।
--মণি তুমি তো আমার অবস্থা জানো কিন্তু ওদের বাড়ীর অবস্থা সোশ্যাল স্টাটাস আমাদের থেকে উপরে।আমরা তে-রাস্তার মোড়ে আড্ডা দিতাম।আর মেয়েটি রোজ ভোরবেলা ঐখান দিয়ে বইয়ের গোছা বুকে চেপে কলেজে যেত।লক্ষ্য করতাম যেতে যেতে আড়চোখে আমাকে দেখছে।নিজেকে তখন আর একটা সাধারণ ছেলে বলে মনে হতনা।
--দাড়াও মেয়েটার তো একটা নাম ছিল?
--তার নাম কি বলবো মালা,তোমার আপত্তি নেইতো?
--আমার আপত্তি থাকবে কেন?মালা না হয়ে যদি মণিমালাও হত আমি কেন আপত্তি করতে যাব।একই নামের কতজন হয়।আমাদের কলেজে তিনজন মিতা ছিল।
--রোদ ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কলেজ যাওয়া আসার পথে কেউ না থাকুক আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। রবিবার এলে মন খারাপ হত সেদিন কলেজ ছুটি মালার সঙ্গে দেখা হবে না।
মনে মনে হাসি লায়লা মজনু-র মজনু আমার কাছে বসে।তখন থেকে খালি দেখাদেখি কাহিনী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গোত্তা খাচ্ছে জিজ্ঞেস করলাম,মন এবার বলো কে প্রথম প্রস্তাব করেছিল? মানে বলে না 'আই লাভ ইউ' বা ঐরকম কিছু কে বলেছিল?
মন হাসল তারপর জানলা দিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল,আমরা কেউ কাউকে মুখ ফুটে ওকথা বলিনি।
--ওমা তাহলে কি করে বুঝলে?তুমি ভালবাসলেও মালাও যে তোমাকে ভালবাসে তা তো নাও হতে পারে।
--আমাদের দুজনের মধ্যে ছিল আভিজাত্যের প্রাচীর সেই বেড়া টপকে একটা বেকার সাধারণ ঘরের ছেলে সাহস পায়নি।মালাও সম্ভবত একই কারণে অন্তরে যে কথা লালন করত মুখে সে কথা বলতে পারেনি।
--এতো এক তরফা একে মোটেই প্রেম বলা যায় না।
--না এক তরফা নয়।মন জোর দিয়ে বলল,যখনই ওদের বাড়ী গিয়েছি উপর থেকে নীচে নেমে এসেছে , সামনে না এসে আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখত।কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ফরমাস করতো আমার বিরুদ্ধে কেউ বললে সে প্রতিবাদ করতো--এর পরও তুমি বলবে একতরফা?
আমি মনের বুকে দুম দুম করে ঘুষি মেরে বললাম,অসভ্য ছেলে আমার সঙ্গে ইয়ার্কি হচ্ছে? মালা কে আমি জানি না ভেবেছো?জানো মন ডলিপিসি তোমাকে আমাকে জড়িয়ে মা কে বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলেছিল।
--আর মাসীমা ভয় পেয়ে মেয়ের অন্যত্র বিয়ে স্থির করলেন। মা দুঃখ পাবে ভেবে মেয়েটি মেনে নেয় মায়ের ইচ্ছে,আমি সব জানি মণি।
--বড়দা বেশি তাড়াহুড়ো করছিল।
--বোনটিকে ঘাড় থেকে নামিয়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে অফিস কলিগের সঙ্গে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছিল।
--তুমি এত জানো?
--সবাই জানে,তুমি সরল সাদাসিধে সংসারের প্যাচ পয়জার তুমি বোঝো না।তাই তো আমার তোমাকে নিয়ে চিন্তা।
মণিমালা ভাবে সত্যিই কি মনকে ভালবাসে।সব সময় ওর কথা মনে পড়ে ডাকতেই চলে এল একি ভালবাসা? মণিমালা বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করছি অপ্রিয় হলেও সত্যি করে বলবে।গরীব বেকার দেখে মেয়েটি বলতে পারল না তার পরও তুমি কি করে বলবে প্রেম?
--মণি প্রেম মানে আগুণে ঝাপ দেওয়া নয়।তুমি সত্যি করে বলতো প্রতি মুহুর্তে তোমার আমার কথা মনে পড়ে কিনা?তুমি বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছো কই তাদের কথা কি এমন করে মনে পড়ে তোমার? যখন শুনলে দেবযানী আণ্টির সঙ্গে অবাঞ্ছিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছি আমি কেন তুমি কষ্ট পাবে?আজ আমি উপার্জন করছি গাড়ী করে যাতায়ত করছি আর তুমি এখানে ওদের খপ্পরে পড়ে নিত্য লাঞ্ছিত হচ্ছো তুমি জানো না কি কষ্ট হয় আমার? সব থাকলেও নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়।
আমি মনকে জড়িয়ে ধরে বলি,মন প্লিজ আর বোলনা।
মন আমার গলা জড়িয়ে ধরে কম্পিত ঠোট ধীরে ধীরে আমার ঠোটের উপর রাখে।আমি জিভ ঠেলে দিলাম মুখের ভিতর। জানলার বাইরে নজর পড়ল বিস্মিতচোখে তাকিয়ে আছেন আমার শ্বশুর পশুপতি।চোখাচুখি হতে দ্রুত বাড়ীর দিকে পা বাড়ালেন। মনকে বললাম,অনেক দেরী হল আজ আসি?
মন দরজা খুলে বলল,কেমন থাকো আমাকে বলবে,কোনো কিছু লুকাবে না।আর হ্যা তোমার ননদের ব্যাপারটা আমি বলেছি বোলো না।
কোনো কথাই আমার কানে যাচ্ছে না।মুহূর্তে কি ঘটে মন বুঝতেই পারেনি। আমার চোখ যাকে খুজছে তাকে দেখতে পাচ্ছিনা,তাহলে কি পার্কে আড্ডায় চলে গেলেন? মুখের সামনে ভেসে উঠল নির্মলা সুন্দরীর ভয়াল মুখ। যা না হয়েছে তার বহুগুণ করে বাড়িয়ে ছেলেকে নালিশ করবে।অনেক বিশেষণ বর্ষিত হবে আমার উপর সব সহ্য করে যাওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে আমার?মনে মনে প্রস্তুত হই আমি। সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখলাম তনিমাও ফিরে এসেছে। নিজের ঘরে ঢুকে ভাবছি চেঞ্জ করবো তনিমা এসে বলল,বৌদি তোমাকে বাবা ডাকছে।
বুঝলাম মেয়ের সামনে আমাকে অপদস্ত করবে। আমি শ্বশুর মশায়ের সামনে মাথা নীচু করে দাড়ালাম। উনি চেয়ারে বসে নির্মলা সুন্দরী খাটে পাছা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আর দরজায় হেলান দিয়ে তনিমা।
--বউমা আজও কি আমি ভুল দেখেছি? শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন পশুপতি।
আমি কোনো উত্তর দিলাম না,এর কোনো উত্তর হয় না।
--সঙের মত দাঁড়িয়ে রইলে কথা কানে যাচ্ছে না? নির্মলা বললেন।
--আমি তো বলিনি আগেরদিন আপনি ভুল দেখেছেন।
--লজ্জা করছে না মুখ নাড়তে?ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছটা মাস তর সইলো না,শরীরে এত জ্বালা?
এই বয়সে পদ্মমধুর রস খেতে আপনার লজ্জা করল না একথা বলতে রুচিতে বাধল বললাম,মা একটু ভদ্রভাবে কথা বলবেন।
--কি আস্পর্ধা দেখেছো ছেনাল মেয়ে আবার মুখে মুখে কথা,ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোন নাগরের সঙ্গে কথা বলো আমি জানি না ভেবেছো?
--আপনি কি কার সঙ্গে কি করেন কি বই পড়েন সেসব কেউ জানে না ভেবেছেন।
--বোউদি মুখ সামলে কথা বলবে।বিয়ের আগে কার সাথে প্রেমপত্র চালাচালি করতে সে কথা কারো জানতে বাকী ণেই।
--তনিমা তুমি শুভদীপকে চেনো?
--কে শুভদীপ?তনিমা থতমত খেয়ে যায়।
--কল সেণ্টারে চাকরি করে শুভদীপ।
--মোটেই না ও আই টি ইঞ্জনীয়ার।
--চিনতে পেরেছো তাহলে?
--বৌদি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি শুভ সম্পর্কে আর একটা কথাও বলবে না। তনিমা ভয় দেখাল।
--দেখো তুমি দেখো কি সেয়ানা মেয়েছেলে নিজে পাঁক ঘেটে এখন আমার মেয়েটার গায়ে পাঁক মাখাচ্ছে।
--আঃ তোমরা একটু থামবে?পশুপতি বিরক্ত হলেন।
--শোনো এই মেয়ে যদি এ বাড়ি থাকে তাহলে আমি জল স্পর্শ করবো না বলে দিলাম।তুমি এই পাপ এখনই বিদায় করো।
--ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।এখন কি ট্যাক্সি পাওয়া যাবে?
--চলো আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি। পশুপতি বললেন।
--তুমি কোথায় যাবে? নির্মলা সুন্দরী স্বামীকে বাধা দিলেন।
--তুমি চুপ করো।রাস্তাঘাটে কিছু একটা হয়ে গেলে শেষে পুলিশে টানাটানি শুরু হবে।
পুলিশে টানাটানির ভয়,প্রথমে ভেবেছিলাম পশুপতি সহানুভুতিশীল।ট্যাক্সি দাড় করিয়ে পশুপতি পিছনের দরজা খুলে বললেন,এসো।
আমি কর্ণপাত না করে সামনের দরজা খুলে ড্রাইভারের পাশে বসলাম। পশুপতি বিরক্ত হয়ে পিছনে বসলেন। চিরকাল অন্যের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছি আর নয়। বাড়ীর সামনে গাড়ী দাড়াতে মিটার দেখে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম।
পশুপতি গাড়ীতে বসে রইলেন,বুঝলাম উনি নামবেন না।ট্যাক্সি চলে গেল।
পিছনে ফেলে এসেছি শ্বশুরবাড়ি সামনে চক্রবর্তীদের বন্ধ দরজা।আমাকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া হবে অনুমান করার চেষ্টা করি।এই মুহূর্তে মনকে বড় আপন বলে মনে হল।আমি কাউকে ভালবাসতাম নিজেই বুঝতে পারিনি এমন হয় নাকি?
আমি এখন পিঞ্জিরাবদ্ধ পাখি।সবার ইচ্ছেতে চলতে হবে আমাকে আমার কোনো ইচ্ছে নেই।নিজেদের মেয়ে সারাদিন কোথায় কোথায় টো-টো করে চরে বেড়াচ্ছে তাতে দোষ নেই যত জুলুম পরের মেয়ের প্রতি।তনিমা এখন আমার জানলা,ওর মাধ্যমে দেখতে হয় বাইরের দুনিয়া।নানা খবর দেয় আমাকে। সকালে বুঝতে পারিনি কিন্তু বেলা যত বাড়তে থাকে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ আমাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরে।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে মনে হল কিছু একটা করতে হবে।
সাড়ে পাঁচটা বাজে এতক্ষণে মন নিশ্চয়ই হতাশ হয়ে চলে গেছে।শাড়ী পরলাম চুলে চিরুণী বোলালাম,একটু যাই পার্কে খানিক হেটে চলে আসবো।ঘর থেকে বেরিয়েছি নির্মলা সুন্দরীর গলা,কোথায় যাচ্ছো বউমা?
--একটু কাজ আছে।
--জানতে চাইছি কি কাজ?
--আমার মোবাইলে ব্যালান্স শেষ হয়ে গেছে টপআপ ভরতে হবে।
--ঠীক আছে তনিমা আসুক ওকে বোলো।
--ও কখন আসবে আমার এখনই দরকার। আর কি বলে শোনার অপেক্ষা না করেই সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলাম।
সহ্যের একটা সীমা থাকে। আমি কচি খুকি নই। হাটতে হাটতে এগোতে থাকি দেশবন্ধু পার্কের গেটের কাছে গিয়ে দেখলাম একটু দূরে গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে মন। গা জ্বলে গেল ভাবছে আমি ওর কথায় এসেছি। কড়া করে শুনিয়ে দেবার জন্য ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। গাড়ীর কাছে যেতে দরজা খুলে বলল,ওঠো।
মানেটা কি ও বললেই উঠতে হবে আমার ইচ্ছের কোনো দাম ণেই? রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করতে চাই না আমি গাড়ীতে উঠে বসলাম।মন গাড়ীতে উঠতে গাড়ী ছেড়ে দিল। আমি অবাক হয়ে বলি,একি কোথায় যাচ্ছি। মন মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলল।মামার বাড়ী নাকি? ড্রাইভারের সামনে কিছু বললাম না। কিছটা গিয়ে গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়তে মন বলল,শিউজি আপনি নাস্তা পানি করে আসুন।আমরা একটু কথা বলছি।
মন বলেছিল জরুরী কি কথা বলবে,সত্যিই কি কিছু কথা আছে?
--মণি বিশ্বাস করো তোমাকে দারুণ দেখতে লাগছে।মন বলল।
--ওসব বাজে কথা রাখো,জরুরী কি কথা বলবে বলেছিলে?
--তার আগে বলো তোমার কাজ ছিল তবু তুমি এলে যে?
--তোমার কথায় আসিনি,আমি নিজের ইচ্ছেতে এসেছি।
--বুঝলাম আমি তোমাকে কাধে করে আনিনি আমার ইচ্ছেতে আসোনি কিন্তু আমার কাছে এসেছো।
আমি ডান পা মুড়ে সিটে তুলে ওর দিকে ঘুরে বসে বললাম,তুমি কি বলবে বলেছিলে সেটা শুনতে এসেছি তোমার সঙ্গে গল্প করতে আসিনি।
মণিশঙ্কর বা-পা তুলে আমার মুখোমুখি হয়ে বলল,মণি তুমি কি বদলাবে না?
--কত বদলাবো যে যা বলেছে তাই শুনেছি আর কত করবো?আমি ফুপিয়ে কেঁদে ফেললাম। মন আমার মাথা বুকে চেপে শান্ত করতে লাগল।একটু পরেই নিজের বোকামী বুঝতে পেরে চোখ মুছে বললাম,সত্যিই কি তোমার কোনো জরুরী কথা আছে?
--আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি?
--তুমি এখন সিগারেট খাও? এখন ধরাও আমার দিব্যি রইল বেশি সিগারেট খাবে না।
মণিশঙ্কর সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলল,বিয়ের দিন সঙ্গে ছিল সেকি তোমার ননদ?
--হ্যা তনিমা আমার ছোট ননদ,কেন?
--একটি ছেলে নাম শুভদীপ একটা কল সেণ্টারে চাকরি করে।ছেলেটি ভাল নয়।
--ভাল নয় মানে?
--তোমার ছোড়দা চেনে ওর বিয়েতে এসেছিল।ফোনের মারফত মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নানাভাবে ভুলিয়ে শারীরি সম্পর্ক শুধু নয় ছবি তুলে ব্লাকমেল করে।তোমার ননদকে প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা যায়।
এইটা মনের জরুরী দরকার। এবার জলের মত পরিস্কার কেন সজলকে আর পছন্দ নয়। বৌদির বিয়ের আগের কথা জানার এত কেন কৌতুহল? ভাবছি বাড়ীতে কি করে তনিমার কথা বলবো,কেউ কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? মনকে জিজ্ঞেস করি,আচ্ছা মন ওই যে শুভদীপ না কি সে কি আমার সম্পর্কে কিছু জানে?
--কি জানবে?জানার আছেই বা কি? আমার হাত ধরে নিজের বুকে চেপে বলল,একটা ব্যাপার সে আমার এখানে চাপা আছে।যেদিন আমাকে দাহ করা হবে সেদিন ছাই হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে শিউরে উঠলাম বললাম,আজেবাজে কথা বললে আমি এক্ষণি নেমে যাবো।
মন আমার হাটূ চেপে ধরে বলল,স্যরি আর বলবো না।
আমার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি এল জিজ্ঞেস করলাম,মন সেই মেয়েটার কথা বল একসময় যে তোমাকে ভালবাসতো।
মন চুপ করে থাকে জিজ্ঞেস করলাম,কি ব্যাপার বলো তুমি নাকি মিথ্যে বলোনা?
--ভাবছি।
--কিভাবে বানাবে তাই ভবছো?
--তা নয় কোথা থেকে শুরু করবো সেটা ভাবছি।
--একেবারে প্রথম থেকে কিছু বাদ দেবে না।
মন আমার দিকে তাকিয়ে সরলভাবে হেসে বলল,তোমাকে বলতে লজ্জা ণেই,তুমি কাউকে বোলনা।
মনে মনে ভাবি কে না কে জনে জনে তার কথা বলতে বয়ে গেছে আমার।আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি।
--মণি তুমি তো আমার অবস্থা জানো কিন্তু ওদের বাড়ীর অবস্থা সোশ্যাল স্টাটাস আমাদের থেকে উপরে।আমরা তে-রাস্তার মোড়ে আড্ডা দিতাম।আর মেয়েটি রোজ ভোরবেলা ঐখান দিয়ে বইয়ের গোছা বুকে চেপে কলেজে যেত।লক্ষ্য করতাম যেতে যেতে আড়চোখে আমাকে দেখছে।নিজেকে তখন আর একটা সাধারণ ছেলে বলে মনে হতনা।
--দাড়াও মেয়েটার তো একটা নাম ছিল?
--তার নাম কি বলবো মালা,তোমার আপত্তি নেইতো?
--আমার আপত্তি থাকবে কেন?মালা না হয়ে যদি মণিমালাও হত আমি কেন আপত্তি করতে যাব।একই নামের কতজন হয়।আমাদের কলেজে তিনজন মিতা ছিল।
--রোদ ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কলেজ যাওয়া আসার পথে কেউ না থাকুক আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। রবিবার এলে মন খারাপ হত সেদিন কলেজ ছুটি মালার সঙ্গে দেখা হবে না।
মনে মনে হাসি লায়লা মজনু-র মজনু আমার কাছে বসে।তখন থেকে খালি দেখাদেখি কাহিনী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গোত্তা খাচ্ছে জিজ্ঞেস করলাম,মন এবার বলো কে প্রথম প্রস্তাব করেছিল? মানে বলে না 'আই লাভ ইউ' বা ঐরকম কিছু কে বলেছিল?
মন হাসল তারপর জানলা দিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল,আমরা কেউ কাউকে মুখ ফুটে ওকথা বলিনি।
--ওমা তাহলে কি করে বুঝলে?তুমি ভালবাসলেও মালাও যে তোমাকে ভালবাসে তা তো নাও হতে পারে।
--আমাদের দুজনের মধ্যে ছিল আভিজাত্যের প্রাচীর সেই বেড়া টপকে একটা বেকার সাধারণ ঘরের ছেলে সাহস পায়নি।মালাও সম্ভবত একই কারণে অন্তরে যে কথা লালন করত মুখে সে কথা বলতে পারেনি।
--এতো এক তরফা একে মোটেই প্রেম বলা যায় না।
--না এক তরফা নয়।মন জোর দিয়ে বলল,যখনই ওদের বাড়ী গিয়েছি উপর থেকে নীচে নেমে এসেছে , সামনে না এসে আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখত।কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ফরমাস করতো আমার বিরুদ্ধে কেউ বললে সে প্রতিবাদ করতো--এর পরও তুমি বলবে একতরফা?
আমি মনের বুকে দুম দুম করে ঘুষি মেরে বললাম,অসভ্য ছেলে আমার সঙ্গে ইয়ার্কি হচ্ছে? মালা কে আমি জানি না ভেবেছো?জানো মন ডলিপিসি তোমাকে আমাকে জড়িয়ে মা কে বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলেছিল।
--আর মাসীমা ভয় পেয়ে মেয়ের অন্যত্র বিয়ে স্থির করলেন। মা দুঃখ পাবে ভেবে মেয়েটি মেনে নেয় মায়ের ইচ্ছে,আমি সব জানি মণি।
--বড়দা বেশি তাড়াহুড়ো করছিল।
--বোনটিকে ঘাড় থেকে নামিয়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে অফিস কলিগের সঙ্গে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছিল।
--তুমি এত জানো?
--সবাই জানে,তুমি সরল সাদাসিধে সংসারের প্যাচ পয়জার তুমি বোঝো না।তাই তো আমার তোমাকে নিয়ে চিন্তা।
মণিমালা ভাবে সত্যিই কি মনকে ভালবাসে।সব সময় ওর কথা মনে পড়ে ডাকতেই চলে এল একি ভালবাসা? মণিমালা বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করছি অপ্রিয় হলেও সত্যি করে বলবে।গরীব বেকার দেখে মেয়েটি বলতে পারল না তার পরও তুমি কি করে বলবে প্রেম?
--মণি প্রেম মানে আগুণে ঝাপ দেওয়া নয়।তুমি সত্যি করে বলতো প্রতি মুহুর্তে তোমার আমার কথা মনে পড়ে কিনা?তুমি বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছো কই তাদের কথা কি এমন করে মনে পড়ে তোমার? যখন শুনলে দেবযানী আণ্টির সঙ্গে অবাঞ্ছিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছি আমি কেন তুমি কষ্ট পাবে?আজ আমি উপার্জন করছি গাড়ী করে যাতায়ত করছি আর তুমি এখানে ওদের খপ্পরে পড়ে নিত্য লাঞ্ছিত হচ্ছো তুমি জানো না কি কষ্ট হয় আমার? সব থাকলেও নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়।
আমি মনকে জড়িয়ে ধরে বলি,মন প্লিজ আর বোলনা।
মন আমার গলা জড়িয়ে ধরে কম্পিত ঠোট ধীরে ধীরে আমার ঠোটের উপর রাখে।আমি জিভ ঠেলে দিলাম মুখের ভিতর। জানলার বাইরে নজর পড়ল বিস্মিতচোখে তাকিয়ে আছেন আমার শ্বশুর পশুপতি।চোখাচুখি হতে দ্রুত বাড়ীর দিকে পা বাড়ালেন। মনকে বললাম,অনেক দেরী হল আজ আসি?
মন দরজা খুলে বলল,কেমন থাকো আমাকে বলবে,কোনো কিছু লুকাবে না।আর হ্যা তোমার ননদের ব্যাপারটা আমি বলেছি বোলো না।
কোনো কথাই আমার কানে যাচ্ছে না।মুহূর্তে কি ঘটে মন বুঝতেই পারেনি। আমার চোখ যাকে খুজছে তাকে দেখতে পাচ্ছিনা,তাহলে কি পার্কে আড্ডায় চলে গেলেন? মুখের সামনে ভেসে উঠল নির্মলা সুন্দরীর ভয়াল মুখ। যা না হয়েছে তার বহুগুণ করে বাড়িয়ে ছেলেকে নালিশ করবে।অনেক বিশেষণ বর্ষিত হবে আমার উপর সব সহ্য করে যাওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে আমার?মনে মনে প্রস্তুত হই আমি। সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখলাম তনিমাও ফিরে এসেছে। নিজের ঘরে ঢুকে ভাবছি চেঞ্জ করবো তনিমা এসে বলল,বৌদি তোমাকে বাবা ডাকছে।
বুঝলাম মেয়ের সামনে আমাকে অপদস্ত করবে। আমি শ্বশুর মশায়ের সামনে মাথা নীচু করে দাড়ালাম। উনি চেয়ারে বসে নির্মলা সুন্দরী খাটে পাছা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আর দরজায় হেলান দিয়ে তনিমা।
--বউমা আজও কি আমি ভুল দেখেছি? শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন পশুপতি।
আমি কোনো উত্তর দিলাম না,এর কোনো উত্তর হয় না।
--সঙের মত দাঁড়িয়ে রইলে কথা কানে যাচ্ছে না? নির্মলা বললেন।
--আমি তো বলিনি আগেরদিন আপনি ভুল দেখেছেন।
--লজ্জা করছে না মুখ নাড়তে?ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছটা মাস তর সইলো না,শরীরে এত জ্বালা?
এই বয়সে পদ্মমধুর রস খেতে আপনার লজ্জা করল না একথা বলতে রুচিতে বাধল বললাম,মা একটু ভদ্রভাবে কথা বলবেন।
--কি আস্পর্ধা দেখেছো ছেনাল মেয়ে আবার মুখে মুখে কথা,ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোন নাগরের সঙ্গে কথা বলো আমি জানি না ভেবেছো?
--আপনি কি কার সঙ্গে কি করেন কি বই পড়েন সেসব কেউ জানে না ভেবেছেন।
--বোউদি মুখ সামলে কথা বলবে।বিয়ের আগে কার সাথে প্রেমপত্র চালাচালি করতে সে কথা কারো জানতে বাকী ণেই।
--তনিমা তুমি শুভদীপকে চেনো?
--কে শুভদীপ?তনিমা থতমত খেয়ে যায়।
--কল সেণ্টারে চাকরি করে শুভদীপ।
--মোটেই না ও আই টি ইঞ্জনীয়ার।
--চিনতে পেরেছো তাহলে?
--বৌদি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি শুভ সম্পর্কে আর একটা কথাও বলবে না। তনিমা ভয় দেখাল।
--দেখো তুমি দেখো কি সেয়ানা মেয়েছেলে নিজে পাঁক ঘেটে এখন আমার মেয়েটার গায়ে পাঁক মাখাচ্ছে।
--আঃ তোমরা একটু থামবে?পশুপতি বিরক্ত হলেন।
--শোনো এই মেয়ে যদি এ বাড়ি থাকে তাহলে আমি জল স্পর্শ করবো না বলে দিলাম।তুমি এই পাপ এখনই বিদায় করো।
--ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।এখন কি ট্যাক্সি পাওয়া যাবে?
--চলো আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি। পশুপতি বললেন।
--তুমি কোথায় যাবে? নির্মলা সুন্দরী স্বামীকে বাধা দিলেন।
--তুমি চুপ করো।রাস্তাঘাটে কিছু একটা হয়ে গেলে শেষে পুলিশে টানাটানি শুরু হবে।
পুলিশে টানাটানির ভয়,প্রথমে ভেবেছিলাম পশুপতি সহানুভুতিশীল।ট্যাক্সি দাড় করিয়ে পশুপতি পিছনের দরজা খুলে বললেন,এসো।
আমি কর্ণপাত না করে সামনের দরজা খুলে ড্রাইভারের পাশে বসলাম। পশুপতি বিরক্ত হয়ে পিছনে বসলেন। চিরকাল অন্যের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছি আর নয়। বাড়ীর সামনে গাড়ী দাড়াতে মিটার দেখে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম।
পশুপতি গাড়ীতে বসে রইলেন,বুঝলাম উনি নামবেন না।ট্যাক্সি চলে গেল।
পিছনে ফেলে এসেছি শ্বশুরবাড়ি সামনে চক্রবর্তীদের বন্ধ দরজা।আমাকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া হবে অনুমান করার চেষ্টা করি।এই মুহূর্তে মনকে বড় আপন বলে মনে হল।আমি কাউকে ভালবাসতাম নিজেই বুঝতে পারিনি এমন হয় নাকি?