12-06-2020, 09:59 AM
তমাল :- আপনি সমর বাবু… এটুকু জানি.. কতদিন আছেন এই বাড়ি তে?
সমর :-তা অনেক দিন হয়ে গেলো… ইন্দ্রর বাবার অমল থেকেই ওদের জমি জমা দেখা শোনা করি.
তমাল :- মাইনে কেমন পান? চলে যায় আপনার?
সমর :- হ্যাঁ.. হ্যাঁ… মাইনে ভালই পাই… তার উপর বিয়েথা করিনি… নিজের বলতে তেমন কেউ নেই… চলে যায় আমার.
তমাল :- আপনাকে দেখে তো বেশ শৌখিন লোক বলেই মনে হচ্ছে… তা সখ টখ মেটে তো পারিশ্রমিকে?
সমর :- এই মিটিয়ে নি আর কী…
তমাল :- অবিবাহিতদের একটু অন্য রকম সখ টখও থাকে… আপনার আছে নাকি সেরকম কিছু? চোখ টিপে একটু ফজ়িল ইশারা করলো তমাল…
সমর :- (একটু লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো) মদের নেশা খুব একটু নেই আমার… তবে…. অন্যটা…. বুঝতেই পারছেন… হে হে….
তমাল :- হ্যাঁ… বুঝেছি… এই বাড়িতে যে সব ঘটছে… সেটা কে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সমর :- (নড়ে চড়ে বসলো… তারপর গলা পরিষ্কার করে বলল…) দেখুন… ভগবান বিশ্বাস করলে ভূতও বিশ্বাস করতে হয়…. এ বাড়ির উপর কোনো রুস্ট আত্মার দৃষ্টি পড়েছে… আমি অনেকবার বলেছি একজন পুরোহিত ডেকে একটু পুজো আর্চা করিয়ে নিতে… কিন্তু আজ কাল কার ছেলে… কথা কানে নেয় না… আমি বাপু ভিষণ ভয়ে আছি.. কখন কী হয়ে যায় কিছুই বলা যায় না… এবাড়ির পাঠ আমার উঠলো মনে হচ্ছে… রাতে ভালো ঘুম হয় না ভয়ে জানেন?
তমাল :- কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় না খুব ভয়ে বা আতঙ্কে আছেন?
সমর :- মনের ভয় কী সব সময় চেহরায় ফোটে তমাল বাবু? জানেন কী মনের অবস্থা আমার….. আমাদের গ্রামে মুখার্জীদের বাড়িতেও একবার এইরকম…. কথা শেষ করতে দিলো না তমাল… বলল….
তমাল :- আচ্ছা পাড়ার ছেলেরা মিলে কোনো দুস্টুমি করছে বলে আপনার মনে হয় না? ধরুন কোনো রাগ বা পুরানো শত্রুতা?
সমর :- না না… এই বাড়ির সাথে কোনো শত্রুতা নেই পাড়ার কারো… আমি অনেকদিন আছি… সেরকম কোনো ঘটনা মনে পড়ছে না…
তমাল :- ঠিক আছে… আপনি আসুন… পরে দরকার হলে আবার কথা বলবো…
সমর :- আচ্ছা… নমস্কার…
সমর বাবু চলে যেতে তমাল টুসিকে দিয়ে ভূপেন বাবুকে ডেকে পাঠালো…..
তমাল :- নমস্কার… বসূন ভূপেন কাকু..
ভূপেন :- নমস্কার বাবু….
তমাল :- আপনি কতদিন আছেন এই বাড়ি তে?
ভূপেন :- তা বাবু… অনেকদিন হলো… তা ধরুন দেড় কুরি বছর তো হবেই… আগে বড়ো বাবুর জমিতে কাজ করতাম… বাবু নিয়ে এলেন এখানে… সেই থেকে এখানেই আছি…
তমাল :- তার মানে ৩০ বছর হয়ে গেলো… ইন্দ্রনীলের জন্মের আগে থেকেই আছেন এই বাড়িতে…
ভূপেন :- হ্যাঁ… ছোট দাদবাবুকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি বলতে পারেন.
তমাল :- আপনার গ্রামের বাড়িতে কে কে আছেন?
ভূপেন :- আমার ২ মেয়ে ২ ছেলে বাবু. মেয়ে দুটোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি…. বড়ো ছেলেটাকে মানে ওই রতনকে ছোট দাদবাবু এখানে নিয়ে এলেন… এখন গ্রামে রতনের মা আর আমার ছোট ছেলে থাকে বাবু.
তমাল :- এখানে যা বেতন পান তাতে সংসার চলে?
ভূপেন :- গরীব মানুষের সংসার… চলে যায় বাবু.. ছোট ছেলেটা স্কূলে গেলই না… সে গ্রামে লোকের বাড়ি বাড়ি জন খাটে.. ১৫/২০ কাটা জমিও আছে… বৌ সেখানে সবজি ফলায়… আর রতন এখন এখানে কাজ করে… আপনাদের আশীর্বাদে এখন চলে যায় বাবু…
তমাল :- বাহ ! তাহলে ভালই চলে যায় আপনাদের. আচ্ছা এই বাড়িতে কিছুদিন যে উপদ্রব শুরু হয়েছে…সেটা আপনার কী বলে মনে হয়?
ভূপেন :- খুব অবাক কান্ড বাবু… শহরের ভিতর ভূতের উপদ্রব হয় বলে তো শুনুনি… কিন্তু পাহারা দিয়েও কিছু ধরতে পারছি না… কী যে বলি বাবু… আমি নিজেই বুঝতে পারছি না… আমি মুক্খু মানুষ… তেনাদের মর্জি টর্জি বুঝি না..
তমাল :- পাড়ার ছেলেদের… বা কোনো ক্লাবের সাথে বাড়ির কোনো ঝগড়া হয়েছিল? জানেন আপনি?
ভূপেন :- সে অনেকদিন আগের কথা… তা প্রায় ১০ বছর হবে… পুজোর চাঁদা নিয়ে একবার ঝামেলা হয়েছিল… বড়বাবু একটা ছেলেকে চর মেরেছিলেন… তারপর থানা পুলিস ও হয়েছিল… কিন্তু তারপর সব চুকে বুকে গেছে বাবু… ২…৪…৫ বছরের ভিতর কোনো ঝগড়া তো মনে পরে না….
তমাল :- সমর বাবুকে আপনার কেমন মনে হয়?
ভূপেন :- বাবু উনি শিক্ষিত মানুষ… ম্যানেজার… ওনার ব্যাপার সেপার আমি বুঝি না… আর আমার সাথে কথাও কম হয় বাবু….
তমাল :- আর টুসি?
ভূপেন :- ফাজ়িল মেয়ে একটা… আমার একটুও পছন্দ না ওকে… রতনটার উর্তি বয়স… ওকে নিয়েই চিন্তা বাবু…
তমাল :- এই বাড়ির কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?
ভূপেন :- না বাবু….
তমাল :- ঠিক আছে… রতন ফিরেছে দোকান থেকে?
ভূপেন :- হ্যাঁ বাবু ফিরেছে… ডেকে দেবো?
তমাল :- হ্যাঁ… ওকে একটু ডেকে দিন. আপনি আসুন.. পরে দরকার পড়লে আবার কথা বলবো.
ভূপেন :- আচ্ছা নমস্কার বাবু….
ভূপেন বাবু যাবার একটু পরেই রতন এলো…
তমাল :- এসো রতন… ওখানে বোসো.
রতন :- স্যরী দাদা… আপনি এসেছেন শুনেছি… কিন্তু কাজের জন্য দেখা করে উঠতে পারিনি… নমস্কার দিদি…
তমাল :- কী কাজ করো তুমি রতন?
রতন :- সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একটা নির্মান কোম্পানীতে কাজ করি দাদা. বলতে পারেন আমি সর্ব-ঘটে-কাঠালি-কলা লেবার… যেসব নতুন বাড়ি তৈরী হয় সেগুলোর দেখাশোনা করি… আবার লেবার দের সাথে কাজও করি… এই যেমন মোজ়াইক মেশীন চালানো… টাইল্স কাটা… ইলেক্ট্রিক এর মিস্ত্রির সাথে যোগারের কাজ করা.. পাইপ লাইন বসানোতে সাহায্য করা… এই সব.
তমাল :- আর তার পরে? তুমি তো রাত ১০ টার আগে ফেরো না শুনেছি..
রতন :- বিকালে একটা গ্রিল কারখানায় গ্রিল বানায় দাদা. কাজের খুব চাপ থাকে… তাই ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়…
তমাল :- হ্যাঁ… তুমি তো অনেক পরিশ্রম করো দেখছি..
রতন :- গরীব এর ছেলে দাদা… কিন্তু চিরদিন কী গরীব থাকবো বলুন? বাবা লোকের বাড়ি কাজ করে অনেক কস্টে আমাদের খাইয়েছে পড়িয়েছে… দেখি শেষ বয়সে ওনাকে একটু সুখে রাখা যায় কী না… আর এই বয়সে পরিশ্রম করবো না তো কবে করবো দাদা?
তমাল :- ঠিক বলেছ… কতো পাও মাসে?
রতন :- হে হে…তা দাদা মন্দ হয় না… আর কয়েক বছর শরীর ঠিক থাকলে ভাবছি গ্রামের বাড়িটা পাকা করে ফেলব… খুব কস্ট হয় দাদা বর্ষা কালে..
তমাল :- আচ্ছা… রতনে বাড়ির ভূত সম্পর্কে তোমার ধারণা কী?
রতন :- ভূত!?… কিসের ভূত? আপনিও বিশ্বাস করেন নাকি এগুলো ভূতের কারবার? কেউ বা কারা শয়তানী করছে দাদা… ঠিক শালাদের একদিন ধরে ফেলবো..
তককে তককে আছি দাদা… যেদিন ধরব বানচোদদের এমন ক্যালানী….. স্যরী দাদা… মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে….
তমাল :- ঠিক আছে… তো তোমার মনে হয় বাইরের কেউ করছে?
রতন :- দাদা… সত্যি বলবো?… (একটু এগিয়ে এসে গলা নিচু করে বলল) বাইরেরও হতে পারে…. আবার ভিতরেরও হতে পারে….
তমাল :- ভিতরের মানে? কাকে সন্দেহ করো তুমি? সব খুলে ভালো আমাকে রতন.
রতন :- কে আবার? ম্যানেজার বাবু… ১ নম্বরের মাগীবাজ় শালা… ইসস্ স্যরী দাদা… আবার মুখ ফস্কে….
তমাল :- ঠিক আছে বলে যাও… গুণে রেখো… শেষে সব গুলো স্যরী একবরে বলে দিও…
রতন :- হে হে হে হে… দাদা ওই ম্যানেজার খারাপ পাড়ায় যায়… আরও কী করে জানেন? মেয়েদের ঘরে রাতে উকি মারে… বোকাচো… ধাত ! আমি অনেক বার দেখেছি… রাতেও বৌদি.. কুহেলি দিদিমনি… এমন কী টুসির ঘরের জানলায়ও উকি মারে রাতে. আর রোজ রাতে ওর মাল খাওয়া চাই চাই…
তমাল :- কিন্তু সমর বাবু যে বললেন মদ বেশি খান না?
রতন :- মহা চুতিয়া লোক তো… বেশি খায় না? বোতল কে বোতল দাদা…
তমাল :- বুঝলাম… কিন্তু এর সাথে ভূতের উপদ্রবের কী সম্পর্ক?
রতন :- (মাথা চুলকাতে চুলকাতে) এই তাই তো আমিও বুঝতে পারছি না দাদা… এসব করে ওর লাভ কী? আরও একটা ব্যাপার আছে দাদা… বলাটা ঠিক হবে কী না ভাবছি…
তমাল :- বলো বলো… কিছু লুকিয়ো না… আমি তো বাইরের লোক… আমার কাছে বলতে আপত্তি কিসের?
রতন :- হ্যাঁ… আচ্ছা বলছি… কুহেলিদির অনেক চাহনেওয়ালা আছে পাড়ায়… কুহেলি দি যখন বাইরে যায়… বা কলেজ যায়… পিছন পিছন অনেকেই ফলো করে… আমার বন্ধু বান্ধবদের কাছে খবর পাই দাদা… এই পাড়ার একটা ছেলে আছে… বড়লোক এর বিগ্রানও পোলা… একবার দিদির সাথে একটু ভাব করার চেস্টা করেছিল….. বাজ়ার এর ভিতর দিদি চর মারে ওকে… ছেলেটা দেখে নেবে.. বদলা নেবে বলে শাঁশিয়ে ছিল…
তমাল :- তাই নাকি? কতদিন আগের কথা?
রতন :- এই ধরুন মাস ছয়েক কী চারেক আগে.
তমাল :- আচ্ছা তুমি এখন এসো রতন… টুসিকে একটু ডেকে দাও… রতন উঠব উঠব করেও উঠছে না… একটু উসখুস করছে দেখে তমাল বলল…
তমাল :- কিছু বলবে রতন? বলার থাকলে বলে ফেলো… লুকিয়ো না.
রতন :- দাদা ধর্মও সংকটে পরে গেছি… আমি এই বাড়ির নুন খাই.. এবাড়ির ক্ষতি হোক চাইনা… আবার যে প্রোমটারের কাছে কাজ করি তার সঙ্গে বিশ্বাস-ঘাতকতা করতেও মন সায় দেয় না… তাই ভাবছি…….
তমাল :- রতন অন্যায় সব সময় অন্যায়ই এ.. সেটা জেনেও চুপ করে থাকাও অন্যায়.
রতন :- হ্যাঁ… আসলে এই বাড়িটা তো দেখেছেন… শহরের ভিতর এত বড়ো জায়গা… লোক মোটে ৩ জন.. কুহেলি দির বিয়ে হয়ে গেলে দাদা আর বৌদি… অথচ বিশাল দাম জায়গা তার. এখানে কম করে ৪টে বিল্ডিংগ হবে উচু উচু… তাই আমার ওই মালিক প্রমোটার এর অনেক দিন এর নজর বাড়িটার উপর. কিছুদিন আগে ইন্দ্রদা যখন এসেছিল আমার মালিক ইন্দ্রদাকে প্রস্তাব দিয়েছিল বাড়িটা বিক্রি করার. কিন্তু ইন্দ্রদা রাজী হয়নি. লোকটার সাথে কাজ করি তো? তাই জানি প্রমোটাররা কোনো জমির পিছনে পড়লে কতো নীচে নামতে পারে… ভূতের ভয় দেখিয়ে তাড়াতে পারলে সস্তায় জমিটা পাওয়া যায়… তাই ভাবছিলাম…..
তমাল :- থ্যাঙ্ক ইউ রতন… খুব ভালো করেছ এটা আমাকে বলে… তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো. আচ্ছা রতন.. তুমি আর আমি মিলে ফাঁদ পেতে বদমাশ গুলোকে ধরতে পারি না? থাকবে আমার সাথে?
চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলো রতন….
সমর :-তা অনেক দিন হয়ে গেলো… ইন্দ্রর বাবার অমল থেকেই ওদের জমি জমা দেখা শোনা করি.
তমাল :- মাইনে কেমন পান? চলে যায় আপনার?
সমর :- হ্যাঁ.. হ্যাঁ… মাইনে ভালই পাই… তার উপর বিয়েথা করিনি… নিজের বলতে তেমন কেউ নেই… চলে যায় আমার.
তমাল :- আপনাকে দেখে তো বেশ শৌখিন লোক বলেই মনে হচ্ছে… তা সখ টখ মেটে তো পারিশ্রমিকে?
সমর :- এই মিটিয়ে নি আর কী…
তমাল :- অবিবাহিতদের একটু অন্য রকম সখ টখও থাকে… আপনার আছে নাকি সেরকম কিছু? চোখ টিপে একটু ফজ়িল ইশারা করলো তমাল…
সমর :- (একটু লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো) মদের নেশা খুব একটু নেই আমার… তবে…. অন্যটা…. বুঝতেই পারছেন… হে হে….
তমাল :- হ্যাঁ… বুঝেছি… এই বাড়িতে যে সব ঘটছে… সেটা কে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সমর :- (নড়ে চড়ে বসলো… তারপর গলা পরিষ্কার করে বলল…) দেখুন… ভগবান বিশ্বাস করলে ভূতও বিশ্বাস করতে হয়…. এ বাড়ির উপর কোনো রুস্ট আত্মার দৃষ্টি পড়েছে… আমি অনেকবার বলেছি একজন পুরোহিত ডেকে একটু পুজো আর্চা করিয়ে নিতে… কিন্তু আজ কাল কার ছেলে… কথা কানে নেয় না… আমি বাপু ভিষণ ভয়ে আছি.. কখন কী হয়ে যায় কিছুই বলা যায় না… এবাড়ির পাঠ আমার উঠলো মনে হচ্ছে… রাতে ভালো ঘুম হয় না ভয়ে জানেন?
তমাল :- কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় না খুব ভয়ে বা আতঙ্কে আছেন?
সমর :- মনের ভয় কী সব সময় চেহরায় ফোটে তমাল বাবু? জানেন কী মনের অবস্থা আমার….. আমাদের গ্রামে মুখার্জীদের বাড়িতেও একবার এইরকম…. কথা শেষ করতে দিলো না তমাল… বলল….
তমাল :- আচ্ছা পাড়ার ছেলেরা মিলে কোনো দুস্টুমি করছে বলে আপনার মনে হয় না? ধরুন কোনো রাগ বা পুরানো শত্রুতা?
সমর :- না না… এই বাড়ির সাথে কোনো শত্রুতা নেই পাড়ার কারো… আমি অনেকদিন আছি… সেরকম কোনো ঘটনা মনে পড়ছে না…
তমাল :- ঠিক আছে… আপনি আসুন… পরে দরকার হলে আবার কথা বলবো…
সমর :- আচ্ছা… নমস্কার…
সমর বাবু চলে যেতে তমাল টুসিকে দিয়ে ভূপেন বাবুকে ডেকে পাঠালো…..
তমাল :- নমস্কার… বসূন ভূপেন কাকু..
ভূপেন :- নমস্কার বাবু….
তমাল :- আপনি কতদিন আছেন এই বাড়ি তে?
ভূপেন :- তা বাবু… অনেকদিন হলো… তা ধরুন দেড় কুরি বছর তো হবেই… আগে বড়ো বাবুর জমিতে কাজ করতাম… বাবু নিয়ে এলেন এখানে… সেই থেকে এখানেই আছি…
তমাল :- তার মানে ৩০ বছর হয়ে গেলো… ইন্দ্রনীলের জন্মের আগে থেকেই আছেন এই বাড়িতে…
ভূপেন :- হ্যাঁ… ছোট দাদবাবুকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি বলতে পারেন.
তমাল :- আপনার গ্রামের বাড়িতে কে কে আছেন?
ভূপেন :- আমার ২ মেয়ে ২ ছেলে বাবু. মেয়ে দুটোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি…. বড়ো ছেলেটাকে মানে ওই রতনকে ছোট দাদবাবু এখানে নিয়ে এলেন… এখন গ্রামে রতনের মা আর আমার ছোট ছেলে থাকে বাবু.
তমাল :- এখানে যা বেতন পান তাতে সংসার চলে?
ভূপেন :- গরীব মানুষের সংসার… চলে যায় বাবু.. ছোট ছেলেটা স্কূলে গেলই না… সে গ্রামে লোকের বাড়ি বাড়ি জন খাটে.. ১৫/২০ কাটা জমিও আছে… বৌ সেখানে সবজি ফলায়… আর রতন এখন এখানে কাজ করে… আপনাদের আশীর্বাদে এখন চলে যায় বাবু…
তমাল :- বাহ ! তাহলে ভালই চলে যায় আপনাদের. আচ্ছা এই বাড়িতে কিছুদিন যে উপদ্রব শুরু হয়েছে…সেটা আপনার কী বলে মনে হয়?
ভূপেন :- খুব অবাক কান্ড বাবু… শহরের ভিতর ভূতের উপদ্রব হয় বলে তো শুনুনি… কিন্তু পাহারা দিয়েও কিছু ধরতে পারছি না… কী যে বলি বাবু… আমি নিজেই বুঝতে পারছি না… আমি মুক্খু মানুষ… তেনাদের মর্জি টর্জি বুঝি না..
তমাল :- পাড়ার ছেলেদের… বা কোনো ক্লাবের সাথে বাড়ির কোনো ঝগড়া হয়েছিল? জানেন আপনি?
ভূপেন :- সে অনেকদিন আগের কথা… তা প্রায় ১০ বছর হবে… পুজোর চাঁদা নিয়ে একবার ঝামেলা হয়েছিল… বড়বাবু একটা ছেলেকে চর মেরেছিলেন… তারপর থানা পুলিস ও হয়েছিল… কিন্তু তারপর সব চুকে বুকে গেছে বাবু… ২…৪…৫ বছরের ভিতর কোনো ঝগড়া তো মনে পরে না….
তমাল :- সমর বাবুকে আপনার কেমন মনে হয়?
ভূপেন :- বাবু উনি শিক্ষিত মানুষ… ম্যানেজার… ওনার ব্যাপার সেপার আমি বুঝি না… আর আমার সাথে কথাও কম হয় বাবু….
তমাল :- আর টুসি?
ভূপেন :- ফাজ়িল মেয়ে একটা… আমার একটুও পছন্দ না ওকে… রতনটার উর্তি বয়স… ওকে নিয়েই চিন্তা বাবু…
তমাল :- এই বাড়ির কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?
ভূপেন :- না বাবু….
তমাল :- ঠিক আছে… রতন ফিরেছে দোকান থেকে?
ভূপেন :- হ্যাঁ বাবু ফিরেছে… ডেকে দেবো?
তমাল :- হ্যাঁ… ওকে একটু ডেকে দিন. আপনি আসুন.. পরে দরকার পড়লে আবার কথা বলবো.
ভূপেন :- আচ্ছা নমস্কার বাবু….
ভূপেন বাবু যাবার একটু পরেই রতন এলো…
তমাল :- এসো রতন… ওখানে বোসো.
রতন :- স্যরী দাদা… আপনি এসেছেন শুনেছি… কিন্তু কাজের জন্য দেখা করে উঠতে পারিনি… নমস্কার দিদি…
তমাল :- কী কাজ করো তুমি রতন?
রতন :- সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একটা নির্মান কোম্পানীতে কাজ করি দাদা. বলতে পারেন আমি সর্ব-ঘটে-কাঠালি-কলা লেবার… যেসব নতুন বাড়ি তৈরী হয় সেগুলোর দেখাশোনা করি… আবার লেবার দের সাথে কাজও করি… এই যেমন মোজ়াইক মেশীন চালানো… টাইল্স কাটা… ইলেক্ট্রিক এর মিস্ত্রির সাথে যোগারের কাজ করা.. পাইপ লাইন বসানোতে সাহায্য করা… এই সব.
তমাল :- আর তার পরে? তুমি তো রাত ১০ টার আগে ফেরো না শুনেছি..
রতন :- বিকালে একটা গ্রিল কারখানায় গ্রিল বানায় দাদা. কাজের খুব চাপ থাকে… তাই ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়…
তমাল :- হ্যাঁ… তুমি তো অনেক পরিশ্রম করো দেখছি..
রতন :- গরীব এর ছেলে দাদা… কিন্তু চিরদিন কী গরীব থাকবো বলুন? বাবা লোকের বাড়ি কাজ করে অনেক কস্টে আমাদের খাইয়েছে পড়িয়েছে… দেখি শেষ বয়সে ওনাকে একটু সুখে রাখা যায় কী না… আর এই বয়সে পরিশ্রম করবো না তো কবে করবো দাদা?
তমাল :- ঠিক বলেছ… কতো পাও মাসে?
রতন :- হে হে…তা দাদা মন্দ হয় না… আর কয়েক বছর শরীর ঠিক থাকলে ভাবছি গ্রামের বাড়িটা পাকা করে ফেলব… খুব কস্ট হয় দাদা বর্ষা কালে..
তমাল :- আচ্ছা… রতনে বাড়ির ভূত সম্পর্কে তোমার ধারণা কী?
রতন :- ভূত!?… কিসের ভূত? আপনিও বিশ্বাস করেন নাকি এগুলো ভূতের কারবার? কেউ বা কারা শয়তানী করছে দাদা… ঠিক শালাদের একদিন ধরে ফেলবো..
তককে তককে আছি দাদা… যেদিন ধরব বানচোদদের এমন ক্যালানী….. স্যরী দাদা… মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে….
তমাল :- ঠিক আছে… তো তোমার মনে হয় বাইরের কেউ করছে?
রতন :- দাদা… সত্যি বলবো?… (একটু এগিয়ে এসে গলা নিচু করে বলল) বাইরেরও হতে পারে…. আবার ভিতরেরও হতে পারে….
তমাল :- ভিতরের মানে? কাকে সন্দেহ করো তুমি? সব খুলে ভালো আমাকে রতন.
রতন :- কে আবার? ম্যানেজার বাবু… ১ নম্বরের মাগীবাজ় শালা… ইসস্ স্যরী দাদা… আবার মুখ ফস্কে….
তমাল :- ঠিক আছে বলে যাও… গুণে রেখো… শেষে সব গুলো স্যরী একবরে বলে দিও…
রতন :- হে হে হে হে… দাদা ওই ম্যানেজার খারাপ পাড়ায় যায়… আরও কী করে জানেন? মেয়েদের ঘরে রাতে উকি মারে… বোকাচো… ধাত ! আমি অনেক বার দেখেছি… রাতেও বৌদি.. কুহেলি দিদিমনি… এমন কী টুসির ঘরের জানলায়ও উকি মারে রাতে. আর রোজ রাতে ওর মাল খাওয়া চাই চাই…
তমাল :- কিন্তু সমর বাবু যে বললেন মদ বেশি খান না?
রতন :- মহা চুতিয়া লোক তো… বেশি খায় না? বোতল কে বোতল দাদা…
তমাল :- বুঝলাম… কিন্তু এর সাথে ভূতের উপদ্রবের কী সম্পর্ক?
রতন :- (মাথা চুলকাতে চুলকাতে) এই তাই তো আমিও বুঝতে পারছি না দাদা… এসব করে ওর লাভ কী? আরও একটা ব্যাপার আছে দাদা… বলাটা ঠিক হবে কী না ভাবছি…
তমাল :- বলো বলো… কিছু লুকিয়ো না… আমি তো বাইরের লোক… আমার কাছে বলতে আপত্তি কিসের?
রতন :- হ্যাঁ… আচ্ছা বলছি… কুহেলিদির অনেক চাহনেওয়ালা আছে পাড়ায়… কুহেলি দি যখন বাইরে যায়… বা কলেজ যায়… পিছন পিছন অনেকেই ফলো করে… আমার বন্ধু বান্ধবদের কাছে খবর পাই দাদা… এই পাড়ার একটা ছেলে আছে… বড়লোক এর বিগ্রানও পোলা… একবার দিদির সাথে একটু ভাব করার চেস্টা করেছিল….. বাজ়ার এর ভিতর দিদি চর মারে ওকে… ছেলেটা দেখে নেবে.. বদলা নেবে বলে শাঁশিয়ে ছিল…
তমাল :- তাই নাকি? কতদিন আগের কথা?
রতন :- এই ধরুন মাস ছয়েক কী চারেক আগে.
তমাল :- আচ্ছা তুমি এখন এসো রতন… টুসিকে একটু ডেকে দাও… রতন উঠব উঠব করেও উঠছে না… একটু উসখুস করছে দেখে তমাল বলল…
তমাল :- কিছু বলবে রতন? বলার থাকলে বলে ফেলো… লুকিয়ো না.
রতন :- দাদা ধর্মও সংকটে পরে গেছি… আমি এই বাড়ির নুন খাই.. এবাড়ির ক্ষতি হোক চাইনা… আবার যে প্রোমটারের কাছে কাজ করি তার সঙ্গে বিশ্বাস-ঘাতকতা করতেও মন সায় দেয় না… তাই ভাবছি…….
তমাল :- রতন অন্যায় সব সময় অন্যায়ই এ.. সেটা জেনেও চুপ করে থাকাও অন্যায়.
রতন :- হ্যাঁ… আসলে এই বাড়িটা তো দেখেছেন… শহরের ভিতর এত বড়ো জায়গা… লোক মোটে ৩ জন.. কুহেলি দির বিয়ে হয়ে গেলে দাদা আর বৌদি… অথচ বিশাল দাম জায়গা তার. এখানে কম করে ৪টে বিল্ডিংগ হবে উচু উচু… তাই আমার ওই মালিক প্রমোটার এর অনেক দিন এর নজর বাড়িটার উপর. কিছুদিন আগে ইন্দ্রদা যখন এসেছিল আমার মালিক ইন্দ্রদাকে প্রস্তাব দিয়েছিল বাড়িটা বিক্রি করার. কিন্তু ইন্দ্রদা রাজী হয়নি. লোকটার সাথে কাজ করি তো? তাই জানি প্রমোটাররা কোনো জমির পিছনে পড়লে কতো নীচে নামতে পারে… ভূতের ভয় দেখিয়ে তাড়াতে পারলে সস্তায় জমিটা পাওয়া যায়… তাই ভাবছিলাম…..
তমাল :- থ্যাঙ্ক ইউ রতন… খুব ভালো করেছ এটা আমাকে বলে… তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো. আচ্ছা রতন.. তুমি আর আমি মিলে ফাঁদ পেতে বদমাশ গুলোকে ধরতে পারি না? থাকবে আমার সাথে?
চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলো রতন….
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!