Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery যেখানে যার নিয়তি/কামদেব
#16
তৃতীয় পর্ব



            মনিদা চলে গেল ছোড়দার ঘরে দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে দিলাম।একটা চিন্তা মশার মত বিন বিন করছে,মণিদা কাউকে গল্প করবে নাতো?একান সেকান হতে জানাজানি হলে কি করে মুখ দেখাব?ছোড়দা জানতে পারলে মণিদার যা হাল হবে ভাবছি।বন্ধুদের অনেকের প্রেমিক আছে তারা কেউ আমার মত করেনি।মুহূর্তে কি যে হয়ে গেল দোষ আমারই মণিদা মানা করেছিল।মা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি উপরে উঠে দেখলাম।বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ইজের খুলে ফেলে কচলে কচলে ধুয়ে ফেললাম।ভাল করে দেখি কোথাও কিছু লেগে আছে কিনা।
কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে।বাথরুমে কে?
আমি।সাড়া দিলাম।তাড়াতাড়ি প্যাণ্ট পরে বেরিয়ে দেখলাম অস্থির মুখে দাঁড়িয়ে মা।আমাকে প্রায় ঠেলে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। বুঝলাম অনেকক্ষন চেপে রেখেছিল।               
 সন্ধ্যেবেলা একটা মেসেজ এল।মণিদা পাঠিয়েছে।কি করে জানলো আমার নম্বর?আমি তো মণিদাকে নম্বর দিইনি। আমার ঘরে এসে ভাল করে পড়লাম,চিন্তা করতে মানা করেছে কাল সকালে কলেজ যাবার সময় তে-রাস্তার মোড়ে একটা ট্যাবলেট নিয়ে অপেক্ষা করবে খেলে আর কোনো ভয় থাকবে না। কে আসছে মনে হল মোবাইল পাশে সরিয়ে রাখলাম।ছোড়দা ঢুকে জিজ্ঞেস করল,তোকে এত করে বললাম নজর রাখিস।
--কেন কি হয়েছে?
--কি হয়েছে? কম্পিউটার টেবিলে  একটা একশো টাকার নোট ছিল পাচ্ছিনা,নিশ্চয়ই ঐ ব্যাটা সরিয়েছে।
--দ্যাখ ছোড়দা না দেখে কাউকে সন্দেহ করা ঠিক না।আমি সারাক্ষণ ছিলাম।
--তাহলে কি উড়ে গেল?
--উড়ে যাবে কেন ভাল করে দেখ তুই কোথায় রেখছিস?
--কতটুকু চিনিস ওকে?এখন দেখছি আমারই ভুল হয়েছে ওকে ডাকা।
--তুই এমন বলছিস যেন দয়া করে ডেকেছিস,স্বার্থ ছিল বলেই ডেকেছিলি।যে জন্য ডেকেছিলি তা কি করে দেয় নি?
ছোড়দা ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপার বলতো তুই হঠাৎ ওর হয়ে ওকালতি করছিস?
--ওকালতি করলাম কোথায়? আমি কি বলেছি ও টাকা নেয়নি?আমি বলেছি নিশ্চিত না হয়ে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।
ছোড়দা রাগ করে চলে গেল।ভেবেছিলাম টাকাটা দিয়ে দেবো ছোড়দা এসে এমন শুরু করল?অন্য কথায় জড়িয়ে পড়লাম, এখন আর দেওয়া যাবে না।দিলে ভাববে মণিদাকে বাঁচাতে আমি টাকা দিচ্ছি। আমি কি সত্যিই মণিদার হয়ে ওকালতি করেছি? মণিদা আমার কে যে ওকালতি করতে যাবো?  মণিদা আমার বিপদের কথা ভেবে চিন্তিত না হলে মেসেজ করবে কেন? কাল সকালে বলেছে ওষুধ দেবে, মেসেজটা পাবার পর আরেক দুশ্চিন্তা মণিমালার মাথায় ঢুকলো।ওষুধ দেবে মানে ঊনিশ-কুড়ি বয়সের একটা মেয়ের পক্ষে বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়।এদিকটা তার মাথায় আসেনি।পেটে হাত বোলায় হায় ভগবান কিছু হয়ে গেলে কেলেঙ্কারীর শেষ থাকবে না।কি ট্যাবলেট দেবে তাতে কি কাজ হবে মণিদার আশ্বাস পেলেও ভাল করে ঘুম হল না রাতে।খালি ভেবেছি কখন সকাল হবে? ঐসব ছবি কি করে তোলে? অন্যের সামনে করতে লজ্জা করল না? এক অদ্ভুত অনুভুতি হয় মনে।দেবযানী আণ্টি একটা স্কুলের টিচার,এইসব ছবি দেখে? আণ্টিরও বুঝি তার মত হয়েছিল।     
সকালে মা বলল,কি ব্যাপার বলতো অন্যদিন ডেকে ঘুম থেকে তোলা যায় না আজ এত সকালে উঠে পড়লি?
---বারে কলেজ যাবো না?চা হয়েছে?
--করছি রে বাবা করছি টিফিনটা করে চা করছি।আমার তো আর দশটা হাত না।
--তুমি এমন বলছো যেন আমি কিছু করিনা?
--আমি আবার সে কথা কখন বললাম?এই নে চাটা ছেকে তোর বাবাকে দিয়ে তুই নিয়ে নে।
বাবাকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে খবরের কাগজ পাশে সরিয়ে রেখে কাপ নিতে নিতে বললেন,কাগজ আর পড়া যাবে না।খালি এক খবর।
আড়চোখে দেখলাম শিরোনাম--আবার ;.,।বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।;., মানে কি একে অপরকে  জোর করে যদি করে কিন্তু মণিদা কি আমার উপর জোর করছিল?আমার কি নীরব সম্মতি ছিল না? বড় রাস্তায় গিয়ে দূর থেকে দেখতে পেলাম মণিদা ফুটপাথে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে, আমাকে দেখে একটু চঞ্চল হল। আমি মাথা নীচু করে হাটতে থাকি।
তে-রাস্তার মোড়ে আসতে মণিদা আমার গা ঘেষে যেতে একটা ছোট প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,সকালে একটা বিকেলে একটা। আমি মুঠো করে ধরে চারপাশ দেখলাম কেউ দেখছে কি না? তারপর দ্রুত পায়ে কলেজের দিকে হাটতে লাগলাম।
কলেজে গিয়ে বাথরুমে দেখলাম ইমকন।এতে কি কাজ হবে? বোতল খুলে ঢক ঢক করে জল খেয়ে একটা ট্যাবলেট গিলে ফেললাম। মনে মনে বলি থ্যাঙ্ক ইউ মণিদা। অবশ্য তোমার জন্যই এসব হয়েছে। যা হবার হয়েছে আমি তোমার দোষ দিতে চাই না।মণিদা  এবার মণিমালার আশা ছেড়ে দাও।কিন্তু দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়েনা।
স্নান খাওয়া হয়নি সবে কলেজ থেকে ফিরেছি ছোড়দা ডাকল,মণি শোন।
ছোড়দার ঘরে যেতে আমার সামনে একটা একশো টাকার নোট মেলে ধরে জিজ্ঞেস করল,বলতো এটা কি?
অবাক হলাম এ আবার কি খেলা? বললাম,কি আবার টাকা।
উপর থেকে মা ডাকছে,তাড়াতাড়ি স্নান করে খেতে আয়,আমি  চলে আসছি ছোড়দা জিজ্ঞেস করল, কোথায় পেলাম জিজ্ঞেস করলি নাতো?
হেসে বললাম,বারে আমি কি করে বলবো?
--ব্যাটাকে চেপে ধরতে বাছাধন সুরসুর করে টাকাটা বের করে দিল।তুই বলছিলি না আমি মিথ্যে সন্দেহ করি?
আমার বিস্ময়ের সীমা থাকে না।ঘরে এসে বইয়ের ভাঁজে দেখলাম টাকাটা রয়েছে।মণিদা নিজের কাধে দোষটা নিয়ে টাকা দিয়ে দিল?নাকি ছোড়দা আমাকে বোকা বানাবার জন্য বানিয়ে বলল?মেসেজ এল, ওষুধটা মনে করে খেয়েছো তো? তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার খুলে দিলাম। বিপদ আমার ওনার চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না। মণিদা তুমি আমাকে ভুলে যাও।দিন দশেক পর মনে হল--দ্রুত বাথরুমে গেলাম।যা ভেবেছি তাই উরু বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।উফস মাসিক হতেই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো যাক মণিদার ওষুধে কাজ হয়েছে।আর ভয় নেই।
পরীক্ষার ব্যস্ততায় মণিদার কথা তেমন মনে পড়ে না।উত্তর না দিলেও মণিদা এক তরফাভাবে মেসেজ পাঠায়।মা একদিন তার ঘরে নিয়ে গিয়ে চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করে,মণিশঙ্কর তোকে চিঠি দিয়েছে?
আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা আমার, কি বলছে মা? কি বলছো মণিদার সঙ্গে আমার দেখাই হয় না।
মা বলল,আমি আজকের কথা বলছিনা। তে-রাস্তার মোড়ে তোর হাতে চিঠি গুজে দেয় নি?মণি মা আমাকে সত্যি করে বল।
--তার আগে বলতো তোমাকে কে বলেছে?
--তা জেনে তোর কি হবে চিঠি দিয়েছে কি না তুই বল।
--ডলিপিসি বলেছে?
--যদি ডলি বলেই থাকে তোর ভালোর জন্যই বলেছে।
--মা আমার ভাল কাউকে ভাবতে হবে না।
--শোন মণি ওই বেকার লম্পট বাঁদরটাকে আমি কিছুতেই মেনে নেবো না তুমি জেনে রেখো। কি সাহস আমার মেয়ের দিকে নজর?
--উফ মা কি আরম্ভ করলে বলতো?শান্তিতে আমাকে পরীক্ষাটা দিতে দেবে তো?
--ঠিক আছে পরিক্ষা দাও তারপর আমি আর দেরী করবো না,অনেক পড়াশোনা হয়েছে।
মণিদা আমাকে চিঠি দিয়েছে ডলিপিসি বানিয়ে বানিয়ে কেন বলল একথা?মনে পড়ল তে-রাস্তার মোড়ে মণিদা কাগজে মুড়ে ওষুধ দিয়েছিল সেটা বোধহয় ডলিপিসি দেখেছে।মণিদা ঠিকই বলেছে লোক বাড়িয়ে বলতে ভালবাসে। মণিদার ধৈর্য আছে আমি রিপলাই করি না তবু নিয়মিত 'ভাল করে পরীক্ষা দাও' 'বেশি রাত অবধি পোড়ো না' 'শরীরের দিকে খেয়াল রেখো' মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছে। হাসিও পায় দুঃখও হয় মনে মনে বলি মণিদা এখানে সুবিধে হবে না, তুমি মণিমালাকে ভুলে অন্য মেয়ে দেখো।        

রেজাল্ট বের হয়নি তার আগেই বড়দা একপক্ষকে নিয়ে উপস্থিত।টুং করে শব্দ হতে মেসেজ খুলে দেখি 'বিয়ের চেষ্টা হচ্ছে?তোমাকে একবার দেখলেই পছন্দ করবে,ভাল থেকো।' মনটা খারাপ হল,বেচারি সব খবর রাখে।কোনো রাগ বা অভিমান নেই শুধু শুভ কামনা।মণিদা তুমি কোন ধাতুতে গড়া? বাবা মা আর ছেলে এসেছিল,মণিদার কথাই ঠিক হয়ে গেল, এক দেখাতেই ওদের আমাকে পছন্দ হয়েছে। মা অবশ্য বলছিল আর কয়েক জায়গায় দেখলে হত না? বাবা বললেন,দেখো ছেলেটা খারাপ নয় বি-টেক ইঞ্জিনীয়ার বে-সরকারী সংস্থায় কাজ করে।আরো কয়েক জায়গায় দেখালে আরো ভাল ছেলে পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে।তুই কি বলিস বড়খোকা?
বড়খোকা মানে বড়দা তপেন চক্রবর্তি,আমার বিয়ে  হলে বড়দার বিয়ে হবে,বড়দা বলল,আমার কলিগের শালা আমি যতদুর জানি ছেলেটা খারাপ নয়।মা বলছিল চুলের কথা বিয়ের পর যদি টাক পড়তো তাহলে কি তুমি জামাইকে ত্যাগ করতে?
--আমি অতশত জানি নে বাপু তোমরা যা ভাল বোঝো করো।আমি শুধু চাই মণির ভাত কাপড়ের যেন অভাব না হয়।মা হাল ছেড়ে দিল।
বিয়েতে ছোড়দার অনেক বন্ধু এসেছিল কিন্তু মণিদাকে নেমন্তন্ন করা হয় নি।না হয় একটা প্লেট বাড়তো মণিদাকে নেমন্তন্ন করলে কি হত? ছোড়দাটা এত অকৃতজ্ঞ হতে পারে ভাবিনি।যারা এসেছিল প্রায় সবাই ছোড়দার অফিস কলিগ।ছোড়দা পাস করার পর একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে।মণিদার ভাগ্যটাই খারাপ অথচ তার চাকরির দরকার ছিল বেশি।
একটা গানের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে? "রোদ জ্বলা দুপুরে সুর তুলে নুপুরে বাস থেকে তুমি যবে নামতে একটি কিশোর ছেলে একা কেন দাঁড়িয়ে সে কথা কি কোনোদিন ভাবতে?" মা কাদছে বাবার চোখে জল বড়দা ছোড়দার মুখ থম থমে মাথায় ঘোমটা ট্যাক্সিতে উঠতে গিয়ে দেখলাম একটু দূরে রোদের মধ্যে স্মিত হাসি মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মণিদা।রাগ হয় মনে মনে বলি তুমি কেন দাঁড়িয়ে আছো তোমাকে তো এরা নেমন্তন্ন করে নি।বেহায়া কোথাকার একটু লজ্জা থাকতে নেই। নিজেকে সামলাতে পারি না আমি হু-হু করে কেঁদে ফেললাম।ডলিপিসি আমাকে ধরে বলল,দুর বোকা কাঁদছিস কেন,শ্বশুর বাড়িই হল মেয়েদের আসল বাড়ী।
গাড়ী স্টার্ট করতে শঙ্খ উলুধ্বনি বেজে উঠল।গাড়ি পিছনের কাচ দিয়ে দেখলাম মণিদা উদাস চোখে তাকিয়ে আছে।
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: যেখানে যার নিয়তি/কামদেব - by kumdev - 11-06-2020, 01:59 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)