25-02-2019, 05:18 PM
পর্ব ১৩ দীপার প্রেম
পরের দিন অফিস এ আছি, ভাবলাম দিপাকে একটা ফোন করি. দীপা ওপাশ থেকে বলে উঠলো হ্যালো. আমি বললাম দীপা আমি সমু বলছি, আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে. ওপাশ থেকে ও বলে উঠলো প্লিজ শোননা আগে আমার কিছু কথা আছে. আমি ২ মিনিট এর মধ্যে ঘরে ঢুকছি তারপর তোমার সাথে কথা বলব. আমি ফোন তা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম. ১ মিনিট পর ও বলল তুমি লাঞ্চ করেছ গো ? দিপাকে কেমন যেন একটু আলাদা রকম লাগছে. আমি বললাম হা করেছি, তুমি কিছু খেয়েছ তো? বেশি দেরী করে স্নান করবেনা, ঠান্ডা লেগে যাবে. ও বলল আমি সকাল থেকে কিছু খায়নি. আমি অবাক হয়ে বললাম কি হয়েছে তোমার সোনা শরীর খারাপ, একবার জেথিমাকে ফোন তা দাও. ও বলল না আমার শরীর খারাপ নয়, আমি ইচ্ছে করে খায়নি. আমি বললাম তুমি কি পাগল হয়ে গেছ দীপা. লক্ষী টি যাও প্লিজ খেয়ে নাও. ও বলল না আমি খাবনা. আমি বললাম কি হয়েছে সোনা আমার ওপর অভিমান হয়েছে. ও বলল না আমার নিজের ওপর অভিমান হয়েছে. তুমি বাড়ি আস তোমার সাথে আগে কথা বলব তারপর খাব. আমি বললাম প্লিজ দীপা খেয়ে নাও আমি আজ তারাতারি বাড়ি চলে আসবো, প্লিজ খেয়ে নাও. ও বলল না আমি কিছু জানিনা আগে আমি তোমার সাথে কথা বলব তারপর খাব. আমি বললাম সোনা আজ তোমার সালোয়ার তা বদলে সারি নিয়ে আসবো, কিছু গয়না বানাতে দিয়েছি ওগুলো আনতে হবে, একটু তো দেরী হবেই. প্লিজ আমার দিব্বি তুমি এক্ষুনি খাবে. ও বলল না আমি কোনো দিব্বি তিব্বি মানবনা, আমি তোমায় না দেখলে খাবনা. আগে আমি তোমার সাথে কথা বলব ভালো করে তারপর খাব. আর তোমায় সালোয়ার তা বদলাতে হবেনা, আমি সালোয়ার পরব ঠিক করেছি. যখন প্রথম বার জেঠিমা আর বাড়ির বাকিরা দিপাকে দেখতে গেছিল তখন দীপার বাবা সবাইকে বলেছিল আমার মেয়ে একটু জেদী আর প্রচন্ড অভিমানী. দয়া করে আপনারা ওকে নিজের মতন করে একটু মানুষ করে নেবেন. জেঠিমা অনার দুহাত ধরে বলেছিলেন, বেয়াই মশাই আমাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে নেই. আপনার মেয়ে আপনার ওপর যতটা অভিমান দেখায় আমি কথা দিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি অভিমান আমাদের ওপর দেখাবে. আমিও জানি দীপার এই অভিমানী আর জেদী স্বভাবটা ঠিক কতটা প্রবল. অগত্তা আমি ওকে কথা দিয়ে দিলাম যে আমি এক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসছি. অফিস এ কোনো রকমে মানেজ করে আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম.
আমি ৪০ মিনিট এর মধ্যেই বাড়িতে পৌছে গেলাম. দেখি রান্নাঘরে দীপা জেঠিমা কাকিমা আর মায়ের সাথে রান্না করছে. আমার আওয়াজ পেয়েই ও বাইরে বেরিয়ে এলো. জেঠিমা আমায় দেখে মুখ টিপে হাসলো. আমি হাত পা ধুয়ে ওপরে আসতে লাগলাম. দীপা আবার রান্না ঘরে ঢুকলো, হয়ত আমার জন্য চা আর জলখাবার নিয়ে ও আসবে. আমি আমার ঘরে ঢোকার কিছু পরে দেখি জেঠিমা আমার ঘরে ঢুকলেন. আমায় দেখে জেঠিমা বললেন কিরে সমু কাল রাতে বৌমাকে কি বকেছিস নাকি. আমি বললাম কি না তো. কেন ও তোমায় কি বলেছে যে আমি ওকে বকেছি. জেঠিমা বললেন আর বলিসনা এত জেদী মেয়ে এই দীপা, কতবার জিগ্গেস করলাম কি হয়েছে বল, সমু কিছু বললে আমায় বল আমি ওকে বকে দেব. কিছুতেই কিছু বললনা. সকাল থেকে জল স্পর্শ পর্যন্ত করেনি. আমি বললাম সমু আসলে আজ ওকে খুব বকব, তোর্ মতো এত সুন্দরী আর মিষ্টি বুকে কেউ বকতে পারে. আমার কথা শুনে ও দৌড়ে কলপারে চলে গেল আর হাউ হাউ করে কাদতে শুরু করলো. কত বোঝালাম তারপর শান্ত হলো. তুই ও তারাতারি চলে এলি, কি হয়েছে বল তো. এবার জেঠিমা একটু গম্ভীর হয়ে বললেন শোন সমু তুই বিদেশ বিভুই তে থেকেছিস বলে নিজেকে বিশাল বারো ভাবিসনা. বৌমাকে আমি নিজে পছন্দ করে এনেছি, ও কষ্ট পেলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবনা. আমি কিছুই বলতে পারলামনা. শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি. মুখটা তুলতেই দেখি দরজার সামনে দীপা দাড়িয়ে আছে, ওর চোখ দুটো ছল ছল করছে. জেথিমাও সেটা বুঝতে পারলেন, জেঠিমা অর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন এইত রানিমা এসে গাছেন, নাও তোমার বরকে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম ওকে বক মার যা ইচ্ছে তাই কারো. দীপা মাটির দিকে তাকিয়ে আর হাতে একটা ট্রে এর মধ্যে জলখাবার আর চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে. জেঠিমা দরজার কাছে গিয়ে দুহাত দিয়ে অর দুগাল টিপে দিয়ে বললেন, পাগলি মেয়ে একটা. জেঠিমা চলে গেলেন. দীপা আসতে আসতে সামনে এগিয়ে এলো. আমি অর হাতের প্লেট এ রাখা রুটিটা ছিড়ে তরকারী মাখিয়ে অর মুখের সামনে ধরলাম. ও দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলল. আমি ওর হাত থেকে প্লেট তা নিয়ে নিলাম. ওর দিকে তাকিয়েই থাকলাম. ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে. আমি এবার খুব আসতে বললাম খেয়ে নাও লক্ষিটি নয়তো আমিও খাবনা. ও আবার দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলল. ওর দু চোখ জলে ভরে গেছে. আমি প্লেট তা টেবিল এ রেখে ওর দিকে তাকালাম, ওর সারির আচলটা ধরে ওর দুচোখ মুছিয়ে দিলাম. আমি বললাম কি হয়েছে সোনা তুমি কি বলবে আমায় বল, কাদছ কেন আমায় বল. ও কিছু না বলে নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকলো. আমি আবার বললাম প্লিজ সোনা তাকাও আমার দিকে, বলে দুহাত দিয়ে ওর মুখটা ওপরে তুললাম. এবার ও আমার দিকে তাকালো. দেখি ওর গলাটা কাপছে. আমি বললাম কি হয়েছে সোনা বল আমায়. ও প্রচন্ড জোরে ফুপিয়ে কেদে উঠলো আর আমার বুকটা জড়িয়ে ধরল.
দীপা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর বলছে তুমি আমায় একটুও ভালবাসনা. তুমি আমায় একটুও বোঝনা. আমি বুঝতে পারছিলামনা ঠিক কি বলব. আমি শুধু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছি. ও বলল আমি জানি তুমি কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছ. কিন্তু তুমি কি যেন আমি সারারাত জেগে ছিলাম. তুমি প্রায় ২ ঘন্টা বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম. তুমি একবার পেছন ঘুরে দেখলেনা. বেশ করেছ আমার মতো একটা গ্রামের মুর্খ মেয়েকে তোমায় বুঝতে হবেনা. বলেই ও মাথা তা তুলে নিয়ে পেছন ফিরে চলতে শুরু করলো, আমি একটু এগিয়ে গিয়ে ওর একটা হাত ধরে জোরে টান মারলাম. ও আবার আমার বুকে এসে পড়ল. আমি ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে বললাম তুমি সব কথা আমায় বলবে, আমার ভুল হয়েছে আমি জানি কিন্তু আমার দিব্বি রইলো তুমি সব আমায় বলবে. ও আবার কাদতে কাদতে বলতে শুরু করলো কাল সারারাত আমি তোমার পাশে সুয়ে সুয়ে কেদেছি তুমি একবার আমার দিকে ফিরে চাইলেনা. সকালেও বেরিয়ে চলে গেলে. আমি হয়ত তোমায় ভুল বুঝেছি, আমি তো সাধারণ মেয়ে. কিন্তু তুমি তো আমার মতো নয় সবাই তোমার কত নাম করে, কত বলে এরকম ছেলে পুরো জেলাতে আর একটা নেই. তুমি কেন বুঝলেনা. আমি ওর পিঠটা আল্টো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, আমায় ক্ষমা কারো দীপা. তুমি যে কাল সারারাত ঘুমাওনি কাদছিলে তা আমি জানতাম. আমার মাথায় প্রচুর রাগ কাল আমার খুব রাগ হয়ে গেছিল তাই আমি কিছু বলিনি. সকালে অফিস এর তারাহুড়ো ছিল তাই কিছু বলতে পারিনি. ভেবেছিলাম অফিস থেকে ফিরে তোমায় বলব. অফিস এ খুব মন খারাপ করছিল, আমিও আজ কিছুই খেতে পারিনি. বারবার মনে হচ্ছিল তোমায় ফোন করে সরি বলি. আমি ফোন করলাম কিন্তু কিছু বলার সুযোগ পেলামনা. জানত দীপা তোমার কপালে অনেক ভালো ছেলে লেখা ছিল ভুল করে আমার মতো একটা বাজে লোক জুট গেল. দীপা নিজের দান হাতটা দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে আমায় কথাটা শেষ করতে দিলনা. এবার ও বলল তুমি খাওনি আগে তুমি খাবে তারপর আমরা কথা বলব. আমি বললাম না আগে তুমি খাবে. ও বলল পাগলামো করনা খাও নয়তো শরীর খারাপ করবে. আমি বললাম না আগে তুমি খাবে. আমি খাটে বসে গেলাম আর দীপার হাত ধরে টেনে ওকে আমার কোলে বসিয়ে দিলাম. দীপাও কোনো আপত্তি করলনা. দীপার মধ্যে একটা রাতের মধ্যে বিশাল চেঞ্জ হয়েছে. আমি রুটিটা ছিড়ে আবার ওর মুখের কাছে নিয়ে গালাম, এবার ও হা করলো আর রুটিটা খেয়ে নিল. এবার ও রুটিটা ছিড়ে আমার মুখে দিল. আমাদের খাওয়া হয়ে গেল. দীপা কিন্তু আমার কোলেই বসে থাকলো. আমরা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম. এই হাসিটা ছিল বিশাল তৃপ্তির হাসি নিজের আপনজনকে কাছে পাওয়ার হাসি. দীপা আমার দিকে তাকিয়ে বলল জানত আমি খুব বাজে মেয়ে. আমি অর দিকে তাকিয়ে বললাম হা জনিত তুমি ভিশন খারাপ. ও বা হাতটা মুঠো করে আমার কাধে আসতে করে একটা ঘুষি মারলো. তারপর নিজের মাথাটা আবার আমার বুকে দিয়ে বলতে লাগলো. তুমি জাননা আমি কতটা খারাপ. আমি অর মাথায় হাত বলাতে বলাতে বললাম বলনা কতটা খারাপ. ও বলল তোমায় এত কষ্ট দিলাম তাও বুঝলেনা আমি কতটা খারাপ. আমি বললাম কে কাকে কষ্ট দিল তুমি আমায় না আমি তোমায়. ও বলল না তুমি কোনো কষ্টই দাওনি, আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি. আমি বললাম না দীপা তুমি আমায় কষ্ট দাওনি. আমি কাল রাতে খুব হতাশ হয়ে গেছিলাম আসলে জানতো আমার ছোটবেলাতা খুব কষ্টে কেটেছে. ও আমায় চুপ করিয়ে দিয়ে বলল আমায় জেঠিমা সব ই বলেছেন. আমি বললাম না জেঠিমা সব কিছু বলেননি. জেঠিমা অনেক কিছুই জানেননা. ও চুপ করে থাকলো. আমি বললাম তোমাকে সব বলব. আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম, আসলে তোমায় দেখতে এত সুন্দরী আমার মনে বার বার এটা মনে হত যে তুমি বোধ হয় আমায় পছন্দ করনা. ও বলল সুন্দরী না ছাই, একদম বাদরী. আমি বললাম তাই চলত আয়নার সামনে. ওকে জোর করে আয়নার সামনে নিয়ে গেলাম. তারপর আমরা দুজনেই আয়নার দিকে তাকালাম. আমি বললাম এবার বল তুমি সুন্দর না কুত্সিত. ও বলল কুত্সিত. আমি হেসে বললাম তবে রে আমার বুকে কুত্সিত বলা, বলে অর কোমরে খুব করে কাতুকুতু দিতে লাগলাম. ওত হাসতে হাসতে পাগল হয়ে লাফাতে লাগলো আর বলল আমায় ছার প্লিজ ছার সমু. আমি আসতে আসতে ওকে ছাড়লাম. আবার আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে ওকে বললাম কুত্সিত তো আমি. আমার খুব লজ্জা করে তোমার সাথে বাইরে বেরোতে, মনে হয় সবাই আমায় দেখে হাসে. দীপা আমার দিকে ঘুরে বলল একই বলছ তুমি. ও দুহাত দিয়ে আমার গাল দুপাশ থেকে ধরে বলল আমি তোমার জন্য গর্ব করি তাই আমি তোমায় ভালবাসি. আমার বরঞ্চ লজ্জা করে তোমার সাথে রাস্তায় বেরোতে, লোকে কিভাবে জানিনা হয়ত ভাবে এত শিক্ষিত একটা লোকের কপালে এরকম একটা মুর্খ বউ জুটল. আমি ওকে পুরো কথাটা শেষ করতে দিলামনা হাত দিয়ে অর মুখটা চেপে ধরলাম. ওর দুচোখ আবার ছল ছল করতে শুরু করেছে. আমি কিছু বললামনা. ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে আমায় বলল হা সমু আমি তোমায় খুব ভালবাসি. আমি তোমায় এতটাই ভালবাসি যে তুমি কখনো চাইলেও আমায় এতটা ভালবাসতে পারবেনা. আমার দিকে ও তাকিয়েই থাকলো. দীপা বলল তুমি যেন কবে থেকে তোমায় আমি এত ভালবাসি. আমি চুপ করে থাকলাম. ও বলল যখন জেঠিমা আমাদের বাড়িতে সম্বন্ধ নিয়ে এলেন তখন একটা কথা বলেছিলেন, আমাদের ছেলেকে দেখতে বিশাল নয় কিন্তু একদম খাটি সোনা. ও মেয়ে দেখলে লজ্জা পায়, জীবনে মেয়েদের সাথে কখনো কথা বলেনি, ও হয়ত আপনার মেয়েকে দেখতেও চাইবেনা. আমি যা মেয়ে পছন্দ করব তাকেই ও বিয়ে করবে. কিন্তু আপনারা ওকে দেখে নিন. সেই কথা মতো জেঠিমা আমাদের তোমার অফিস এর ঠিকানা দিয়েছিলেন. আমি বাবা আর মা একদিন জেঠিমা কে জানিয়ে তোমাদের অফিস কেন্টিন এ গেলাম. তুমি এলে খাবার খেলে একটা বাচ্চা ওয়েটার কে ১০০ টাকা দিয়ে বললে মাকে ওষুধ কিনে দিতে. বাকি স্টাফ রা কি বাজে বাজে কথা বলছিল কিন্তু তোমার মুখের ভাষা তোমার ব্যবহার সব ই মার্জিত ছিল. যারা বিদেশ থেকে আসে তাদের বাপরে কত বাজে কথা শুনি. এক মুহুর্তে তুমি সব ধারণা পাল্টে দিলে. বাড়ি ফেরার পর বাবা আমায় জিগ্গেস করলেন কেমন লাগলো তোমায়, আমি লজ্জায় হেসে ঘরে ঢুকে গাছিলাম. আমায় আর কেউ কিছু জিগ্গেস করেনি. জেঠিমা তোমার একটা ফটো দিয়ে গাচিলেন রোজ আমি ওটাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতাম. আমি তো তোমারি. নিজেকে সেদিন থেকে তোমার দাসী মনে করি. তুমি আমায় যা খেতে দেবে যা পড়তে দেবে তাতেই আমি খুশি. তোমার সুখ ই আমার সুখ. তাহলে কাল রাতে হঠাত এত তারাহুর কেন করতে গেলে. আমি তো তোমারি, আমার মনটা আগে তোমার বোঝা উচিত. আমি ওর দুহাত ধরে বললাম দীপা ক্ষমা কর আমায় আমি বুঝতে পারিনি এতকিছু. প্লিজ আমায় ক্ষমা কর. ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি আর কখনো আমার কাছে ক্ষমা চাইবেনা. আমি তোমায় বললামনা যে আমি তোমার দাসী. আমার দিকে তাকিয়ে আর আমার দু গালে হাত দিয়ে ও আমায় বলল আমি চাইলে কাল তোমাকে সুখী করতে পারতাম. তোমার মতো এত ভালো একটা মানুষ কে সুখী করতে না পারলে আমি কখনো বাচতে পারবনা. আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি. ও আমার গালে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আর বলছে সমু আমি তোমাকে এখনো সব দিতে পারি যা একটা মেয়ে একটা ছেলেকে দিতে পারে. কিন্তু সমু আমরা কি এখনো একে অপরকে চিনেছি, জেনেছি. আমি তোমায় চিনেছি কারণ বাবা মার থেকে জেঠিমার থেকে তোমার প্রচুর প্রসংসা শুনেছি. তোমার বাপরে আমি সব জানি. কিন্তু তুমি কতটুকু যেন আমার বাপারে. আমি তো তোমারি সমু. আমায় একটু বোঝো আগে. আমি খুব লজ্জায় পরে গেছি. দীপা বলল জানো আমি কেন এত কেদেছি. আমি খুব আসতে বললাম কেন? ও বলল আমি বিয়ের আগে থেকে কত ভেবে রেখেছি তুমি যেন আমাকে পেয়ে খুশি থাক, কিন্তু কাল আমি ই তোমায় ফিরিয়ে দিলাম. আমি বললাম তুমি ঠিক করেছ দীপা. আমি আমার ভুল বুঝেছি. আমি ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম দীপা আজ থেকে তুমি সমুর দীপা আর আমি দীপার সমু. ও আমায় বলল দেখো তুমি আর কোনো কষ্ট পাবেনা, আমি রোজ রাতে তোমার পা টিপে দেব, মাথা টিপে দেব. তুমি যা চাইবে আমার সাথে তাই কর. আমি আসতে আসতে ওকে ছাড়লাম. দীপা বলল এবার আমি যাই নয়তো লোকে তোমায় বউ পাগল বলবে. আমি হেসে বললাম হা যাও. ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল আসছি. ও বেরিয়ে যাচ্ছিল আমি পেছন থেকে বললাম দীপা আজ বিকেলে ঘুরতে যাবে. ও পেছন ঘুরে হেসে বলল নিয়ে যাবে? আমিও হেসে বললাম হা. ও হেসে মাথাটা নেড়ে জানিয়ে দিল ঠিক আছে যাব. দীপা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি চেঞ্জ করে নিলাম. প্রায় ১০ মিনিট পর জেঠিমা আমার ঘরে ঢুকলো. জেঠিমা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলল কি রে সমু বউকে এত খুশি লাগছে কেন, আমি কিছু জিগ্গেস করলেই মাটির দিকে তাকিয়ে হাসছে. প্রচুর লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে আমার কথা গুলো শুনে. কি মন্ত্র পড়ালিরে পাগলি মেয়েটাকে. আমি হেসে বললাম না কিছু নয়. জেঠিমা আসতে আসতে আমার দিকে এগিয়ে এলো. বিছানার ওপর ওর সালোয়ারের প্যাকেট তা পরেছিল. ওটা তুলে নিয়ে ভালো করে দেখে বলল আচ্ছা এটাই তাহলে মন্ত্র. আচ্ছা তাহলে নিজের বউকেও শেষ অবধি ঘুষ দিয়ে খুশি করতে হলো. আমি বললাম না এরকম কিছু নয়. জেঠিমা সালোয়ার তা নিয়ে দুরে বাইরে বেরিয়ে গেল. আমি পেছন পেছন গেলাম বলতে বলতে জেঠিমা ওটা দিয়ে দাও, খারাপ হবে বলে দিছি. আমি রান্না ঘরের বাইরে দাড়িয়ে থাকলাম. ওখানে জেঠিমা সবাইকে দেখাতে লাগলো, দেখো সমু নতুন বউ এর জন্য কি এনেছে. ওদিকে দীপা তো মুখে দুহাত দিয়ে লজ্জায় ঢেকে ফেলেছে. জেঠিমা বার বার একই কথা বলে যাওয়ায় ও লজ্জায় দুরে রুম থেকে বেরিয়ে এলো. আমায় দেখে থমকে দাড়িয়ে গেল, তারপর জিভটা বার করে আমায় একটা ভেংচি কেটে আমাদের ঘরটায় চলে গেল.
পরের দিন অফিস এ আছি, ভাবলাম দিপাকে একটা ফোন করি. দীপা ওপাশ থেকে বলে উঠলো হ্যালো. আমি বললাম দীপা আমি সমু বলছি, আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে. ওপাশ থেকে ও বলে উঠলো প্লিজ শোননা আগে আমার কিছু কথা আছে. আমি ২ মিনিট এর মধ্যে ঘরে ঢুকছি তারপর তোমার সাথে কথা বলব. আমি ফোন তা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম. ১ মিনিট পর ও বলল তুমি লাঞ্চ করেছ গো ? দিপাকে কেমন যেন একটু আলাদা রকম লাগছে. আমি বললাম হা করেছি, তুমি কিছু খেয়েছ তো? বেশি দেরী করে স্নান করবেনা, ঠান্ডা লেগে যাবে. ও বলল আমি সকাল থেকে কিছু খায়নি. আমি অবাক হয়ে বললাম কি হয়েছে তোমার সোনা শরীর খারাপ, একবার জেথিমাকে ফোন তা দাও. ও বলল না আমার শরীর খারাপ নয়, আমি ইচ্ছে করে খায়নি. আমি বললাম তুমি কি পাগল হয়ে গেছ দীপা. লক্ষী টি যাও প্লিজ খেয়ে নাও. ও বলল না আমি খাবনা. আমি বললাম কি হয়েছে সোনা আমার ওপর অভিমান হয়েছে. ও বলল না আমার নিজের ওপর অভিমান হয়েছে. তুমি বাড়ি আস তোমার সাথে আগে কথা বলব তারপর খাব. আমি বললাম প্লিজ দীপা খেয়ে নাও আমি আজ তারাতারি বাড়ি চলে আসবো, প্লিজ খেয়ে নাও. ও বলল না আমি কিছু জানিনা আগে আমি তোমার সাথে কথা বলব তারপর খাব. আমি বললাম সোনা আজ তোমার সালোয়ার তা বদলে সারি নিয়ে আসবো, কিছু গয়না বানাতে দিয়েছি ওগুলো আনতে হবে, একটু তো দেরী হবেই. প্লিজ আমার দিব্বি তুমি এক্ষুনি খাবে. ও বলল না আমি কোনো দিব্বি তিব্বি মানবনা, আমি তোমায় না দেখলে খাবনা. আগে আমি তোমার সাথে কথা বলব ভালো করে তারপর খাব. আর তোমায় সালোয়ার তা বদলাতে হবেনা, আমি সালোয়ার পরব ঠিক করেছি. যখন প্রথম বার জেঠিমা আর বাড়ির বাকিরা দিপাকে দেখতে গেছিল তখন দীপার বাবা সবাইকে বলেছিল আমার মেয়ে একটু জেদী আর প্রচন্ড অভিমানী. দয়া করে আপনারা ওকে নিজের মতন করে একটু মানুষ করে নেবেন. জেঠিমা অনার দুহাত ধরে বলেছিলেন, বেয়াই মশাই আমাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে নেই. আপনার মেয়ে আপনার ওপর যতটা অভিমান দেখায় আমি কথা দিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি অভিমান আমাদের ওপর দেখাবে. আমিও জানি দীপার এই অভিমানী আর জেদী স্বভাবটা ঠিক কতটা প্রবল. অগত্তা আমি ওকে কথা দিয়ে দিলাম যে আমি এক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসছি. অফিস এ কোনো রকমে মানেজ করে আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম.
আমি ৪০ মিনিট এর মধ্যেই বাড়িতে পৌছে গেলাম. দেখি রান্নাঘরে দীপা জেঠিমা কাকিমা আর মায়ের সাথে রান্না করছে. আমার আওয়াজ পেয়েই ও বাইরে বেরিয়ে এলো. জেঠিমা আমায় দেখে মুখ টিপে হাসলো. আমি হাত পা ধুয়ে ওপরে আসতে লাগলাম. দীপা আবার রান্না ঘরে ঢুকলো, হয়ত আমার জন্য চা আর জলখাবার নিয়ে ও আসবে. আমি আমার ঘরে ঢোকার কিছু পরে দেখি জেঠিমা আমার ঘরে ঢুকলেন. আমায় দেখে জেঠিমা বললেন কিরে সমু কাল রাতে বৌমাকে কি বকেছিস নাকি. আমি বললাম কি না তো. কেন ও তোমায় কি বলেছে যে আমি ওকে বকেছি. জেঠিমা বললেন আর বলিসনা এত জেদী মেয়ে এই দীপা, কতবার জিগ্গেস করলাম কি হয়েছে বল, সমু কিছু বললে আমায় বল আমি ওকে বকে দেব. কিছুতেই কিছু বললনা. সকাল থেকে জল স্পর্শ পর্যন্ত করেনি. আমি বললাম সমু আসলে আজ ওকে খুব বকব, তোর্ মতো এত সুন্দরী আর মিষ্টি বুকে কেউ বকতে পারে. আমার কথা শুনে ও দৌড়ে কলপারে চলে গেল আর হাউ হাউ করে কাদতে শুরু করলো. কত বোঝালাম তারপর শান্ত হলো. তুই ও তারাতারি চলে এলি, কি হয়েছে বল তো. এবার জেঠিমা একটু গম্ভীর হয়ে বললেন শোন সমু তুই বিদেশ বিভুই তে থেকেছিস বলে নিজেকে বিশাল বারো ভাবিসনা. বৌমাকে আমি নিজে পছন্দ করে এনেছি, ও কষ্ট পেলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবনা. আমি কিছুই বলতে পারলামনা. শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি. মুখটা তুলতেই দেখি দরজার সামনে দীপা দাড়িয়ে আছে, ওর চোখ দুটো ছল ছল করছে. জেথিমাও সেটা বুঝতে পারলেন, জেঠিমা অর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন এইত রানিমা এসে গাছেন, নাও তোমার বরকে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম ওকে বক মার যা ইচ্ছে তাই কারো. দীপা মাটির দিকে তাকিয়ে আর হাতে একটা ট্রে এর মধ্যে জলখাবার আর চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে. জেঠিমা দরজার কাছে গিয়ে দুহাত দিয়ে অর দুগাল টিপে দিয়ে বললেন, পাগলি মেয়ে একটা. জেঠিমা চলে গেলেন. দীপা আসতে আসতে সামনে এগিয়ে এলো. আমি অর হাতের প্লেট এ রাখা রুটিটা ছিড়ে তরকারী মাখিয়ে অর মুখের সামনে ধরলাম. ও দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলল. আমি ওর হাত থেকে প্লেট তা নিয়ে নিলাম. ওর দিকে তাকিয়েই থাকলাম. ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে. আমি এবার খুব আসতে বললাম খেয়ে নাও লক্ষিটি নয়তো আমিও খাবনা. ও আবার দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলল. ওর দু চোখ জলে ভরে গেছে. আমি প্লেট তা টেবিল এ রেখে ওর দিকে তাকালাম, ওর সারির আচলটা ধরে ওর দুচোখ মুছিয়ে দিলাম. আমি বললাম কি হয়েছে সোনা তুমি কি বলবে আমায় বল, কাদছ কেন আমায় বল. ও কিছু না বলে নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকলো. আমি আবার বললাম প্লিজ সোনা তাকাও আমার দিকে, বলে দুহাত দিয়ে ওর মুখটা ওপরে তুললাম. এবার ও আমার দিকে তাকালো. দেখি ওর গলাটা কাপছে. আমি বললাম কি হয়েছে সোনা বল আমায়. ও প্রচন্ড জোরে ফুপিয়ে কেদে উঠলো আর আমার বুকটা জড়িয়ে ধরল.
দীপা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর বলছে তুমি আমায় একটুও ভালবাসনা. তুমি আমায় একটুও বোঝনা. আমি বুঝতে পারছিলামনা ঠিক কি বলব. আমি শুধু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছি. ও বলল আমি জানি তুমি কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছ. কিন্তু তুমি কি যেন আমি সারারাত জেগে ছিলাম. তুমি প্রায় ২ ঘন্টা বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম. তুমি একবার পেছন ঘুরে দেখলেনা. বেশ করেছ আমার মতো একটা গ্রামের মুর্খ মেয়েকে তোমায় বুঝতে হবেনা. বলেই ও মাথা তা তুলে নিয়ে পেছন ফিরে চলতে শুরু করলো, আমি একটু এগিয়ে গিয়ে ওর একটা হাত ধরে জোরে টান মারলাম. ও আবার আমার বুকে এসে পড়ল. আমি ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে বললাম তুমি সব কথা আমায় বলবে, আমার ভুল হয়েছে আমি জানি কিন্তু আমার দিব্বি রইলো তুমি সব আমায় বলবে. ও আবার কাদতে কাদতে বলতে শুরু করলো কাল সারারাত আমি তোমার পাশে সুয়ে সুয়ে কেদেছি তুমি একবার আমার দিকে ফিরে চাইলেনা. সকালেও বেরিয়ে চলে গেলে. আমি হয়ত তোমায় ভুল বুঝেছি, আমি তো সাধারণ মেয়ে. কিন্তু তুমি তো আমার মতো নয় সবাই তোমার কত নাম করে, কত বলে এরকম ছেলে পুরো জেলাতে আর একটা নেই. তুমি কেন বুঝলেনা. আমি ওর পিঠটা আল্টো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, আমায় ক্ষমা কারো দীপা. তুমি যে কাল সারারাত ঘুমাওনি কাদছিলে তা আমি জানতাম. আমার মাথায় প্রচুর রাগ কাল আমার খুব রাগ হয়ে গেছিল তাই আমি কিছু বলিনি. সকালে অফিস এর তারাহুড়ো ছিল তাই কিছু বলতে পারিনি. ভেবেছিলাম অফিস থেকে ফিরে তোমায় বলব. অফিস এ খুব মন খারাপ করছিল, আমিও আজ কিছুই খেতে পারিনি. বারবার মনে হচ্ছিল তোমায় ফোন করে সরি বলি. আমি ফোন করলাম কিন্তু কিছু বলার সুযোগ পেলামনা. জানত দীপা তোমার কপালে অনেক ভালো ছেলে লেখা ছিল ভুল করে আমার মতো একটা বাজে লোক জুট গেল. দীপা নিজের দান হাতটা দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে আমায় কথাটা শেষ করতে দিলনা. এবার ও বলল তুমি খাওনি আগে তুমি খাবে তারপর আমরা কথা বলব. আমি বললাম না আগে তুমি খাবে. ও বলল পাগলামো করনা খাও নয়তো শরীর খারাপ করবে. আমি বললাম না আগে তুমি খাবে. আমি খাটে বসে গেলাম আর দীপার হাত ধরে টেনে ওকে আমার কোলে বসিয়ে দিলাম. দীপাও কোনো আপত্তি করলনা. দীপার মধ্যে একটা রাতের মধ্যে বিশাল চেঞ্জ হয়েছে. আমি রুটিটা ছিড়ে আবার ওর মুখের কাছে নিয়ে গালাম, এবার ও হা করলো আর রুটিটা খেয়ে নিল. এবার ও রুটিটা ছিড়ে আমার মুখে দিল. আমাদের খাওয়া হয়ে গেল. দীপা কিন্তু আমার কোলেই বসে থাকলো. আমরা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম. এই হাসিটা ছিল বিশাল তৃপ্তির হাসি নিজের আপনজনকে কাছে পাওয়ার হাসি. দীপা আমার দিকে তাকিয়ে বলল জানত আমি খুব বাজে মেয়ে. আমি অর দিকে তাকিয়ে বললাম হা জনিত তুমি ভিশন খারাপ. ও বা হাতটা মুঠো করে আমার কাধে আসতে করে একটা ঘুষি মারলো. তারপর নিজের মাথাটা আবার আমার বুকে দিয়ে বলতে লাগলো. তুমি জাননা আমি কতটা খারাপ. আমি অর মাথায় হাত বলাতে বলাতে বললাম বলনা কতটা খারাপ. ও বলল তোমায় এত কষ্ট দিলাম তাও বুঝলেনা আমি কতটা খারাপ. আমি বললাম কে কাকে কষ্ট দিল তুমি আমায় না আমি তোমায়. ও বলল না তুমি কোনো কষ্টই দাওনি, আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি. আমি বললাম না দীপা তুমি আমায় কষ্ট দাওনি. আমি কাল রাতে খুব হতাশ হয়ে গেছিলাম আসলে জানতো আমার ছোটবেলাতা খুব কষ্টে কেটেছে. ও আমায় চুপ করিয়ে দিয়ে বলল আমায় জেঠিমা সব ই বলেছেন. আমি বললাম না জেঠিমা সব কিছু বলেননি. জেঠিমা অনেক কিছুই জানেননা. ও চুপ করে থাকলো. আমি বললাম তোমাকে সব বলব. আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম, আসলে তোমায় দেখতে এত সুন্দরী আমার মনে বার বার এটা মনে হত যে তুমি বোধ হয় আমায় পছন্দ করনা. ও বলল সুন্দরী না ছাই, একদম বাদরী. আমি বললাম তাই চলত আয়নার সামনে. ওকে জোর করে আয়নার সামনে নিয়ে গেলাম. তারপর আমরা দুজনেই আয়নার দিকে তাকালাম. আমি বললাম এবার বল তুমি সুন্দর না কুত্সিত. ও বলল কুত্সিত. আমি হেসে বললাম তবে রে আমার বুকে কুত্সিত বলা, বলে অর কোমরে খুব করে কাতুকুতু দিতে লাগলাম. ওত হাসতে হাসতে পাগল হয়ে লাফাতে লাগলো আর বলল আমায় ছার প্লিজ ছার সমু. আমি আসতে আসতে ওকে ছাড়লাম. আবার আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে ওকে বললাম কুত্সিত তো আমি. আমার খুব লজ্জা করে তোমার সাথে বাইরে বেরোতে, মনে হয় সবাই আমায় দেখে হাসে. দীপা আমার দিকে ঘুরে বলল একই বলছ তুমি. ও দুহাত দিয়ে আমার গাল দুপাশ থেকে ধরে বলল আমি তোমার জন্য গর্ব করি তাই আমি তোমায় ভালবাসি. আমার বরঞ্চ লজ্জা করে তোমার সাথে রাস্তায় বেরোতে, লোকে কিভাবে জানিনা হয়ত ভাবে এত শিক্ষিত একটা লোকের কপালে এরকম একটা মুর্খ বউ জুটল. আমি ওকে পুরো কথাটা শেষ করতে দিলামনা হাত দিয়ে অর মুখটা চেপে ধরলাম. ওর দুচোখ আবার ছল ছল করতে শুরু করেছে. আমি কিছু বললামনা. ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে আমায় বলল হা সমু আমি তোমায় খুব ভালবাসি. আমি তোমায় এতটাই ভালবাসি যে তুমি কখনো চাইলেও আমায় এতটা ভালবাসতে পারবেনা. আমার দিকে ও তাকিয়েই থাকলো. দীপা বলল তুমি যেন কবে থেকে তোমায় আমি এত ভালবাসি. আমি চুপ করে থাকলাম. ও বলল যখন জেঠিমা আমাদের বাড়িতে সম্বন্ধ নিয়ে এলেন তখন একটা কথা বলেছিলেন, আমাদের ছেলেকে দেখতে বিশাল নয় কিন্তু একদম খাটি সোনা. ও মেয়ে দেখলে লজ্জা পায়, জীবনে মেয়েদের সাথে কখনো কথা বলেনি, ও হয়ত আপনার মেয়েকে দেখতেও চাইবেনা. আমি যা মেয়ে পছন্দ করব তাকেই ও বিয়ে করবে. কিন্তু আপনারা ওকে দেখে নিন. সেই কথা মতো জেঠিমা আমাদের তোমার অফিস এর ঠিকানা দিয়েছিলেন. আমি বাবা আর মা একদিন জেঠিমা কে জানিয়ে তোমাদের অফিস কেন্টিন এ গেলাম. তুমি এলে খাবার খেলে একটা বাচ্চা ওয়েটার কে ১০০ টাকা দিয়ে বললে মাকে ওষুধ কিনে দিতে. বাকি স্টাফ রা কি বাজে বাজে কথা বলছিল কিন্তু তোমার মুখের ভাষা তোমার ব্যবহার সব ই মার্জিত ছিল. যারা বিদেশ থেকে আসে তাদের বাপরে কত বাজে কথা শুনি. এক মুহুর্তে তুমি সব ধারণা পাল্টে দিলে. বাড়ি ফেরার পর বাবা আমায় জিগ্গেস করলেন কেমন লাগলো তোমায়, আমি লজ্জায় হেসে ঘরে ঢুকে গাছিলাম. আমায় আর কেউ কিছু জিগ্গেস করেনি. জেঠিমা তোমার একটা ফটো দিয়ে গাচিলেন রোজ আমি ওটাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতাম. আমি তো তোমারি. নিজেকে সেদিন থেকে তোমার দাসী মনে করি. তুমি আমায় যা খেতে দেবে যা পড়তে দেবে তাতেই আমি খুশি. তোমার সুখ ই আমার সুখ. তাহলে কাল রাতে হঠাত এত তারাহুর কেন করতে গেলে. আমি তো তোমারি, আমার মনটা আগে তোমার বোঝা উচিত. আমি ওর দুহাত ধরে বললাম দীপা ক্ষমা কর আমায় আমি বুঝতে পারিনি এতকিছু. প্লিজ আমায় ক্ষমা কর. ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি আর কখনো আমার কাছে ক্ষমা চাইবেনা. আমি তোমায় বললামনা যে আমি তোমার দাসী. আমার দিকে তাকিয়ে আর আমার দু গালে হাত দিয়ে ও আমায় বলল আমি চাইলে কাল তোমাকে সুখী করতে পারতাম. তোমার মতো এত ভালো একটা মানুষ কে সুখী করতে না পারলে আমি কখনো বাচতে পারবনা. আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি. ও আমার গালে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আর বলছে সমু আমি তোমাকে এখনো সব দিতে পারি যা একটা মেয়ে একটা ছেলেকে দিতে পারে. কিন্তু সমু আমরা কি এখনো একে অপরকে চিনেছি, জেনেছি. আমি তোমায় চিনেছি কারণ বাবা মার থেকে জেঠিমার থেকে তোমার প্রচুর প্রসংসা শুনেছি. তোমার বাপরে আমি সব জানি. কিন্তু তুমি কতটুকু যেন আমার বাপারে. আমি তো তোমারি সমু. আমায় একটু বোঝো আগে. আমি খুব লজ্জায় পরে গেছি. দীপা বলল জানো আমি কেন এত কেদেছি. আমি খুব আসতে বললাম কেন? ও বলল আমি বিয়ের আগে থেকে কত ভেবে রেখেছি তুমি যেন আমাকে পেয়ে খুশি থাক, কিন্তু কাল আমি ই তোমায় ফিরিয়ে দিলাম. আমি বললাম তুমি ঠিক করেছ দীপা. আমি আমার ভুল বুঝেছি. আমি ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম দীপা আজ থেকে তুমি সমুর দীপা আর আমি দীপার সমু. ও আমায় বলল দেখো তুমি আর কোনো কষ্ট পাবেনা, আমি রোজ রাতে তোমার পা টিপে দেব, মাথা টিপে দেব. তুমি যা চাইবে আমার সাথে তাই কর. আমি আসতে আসতে ওকে ছাড়লাম. দীপা বলল এবার আমি যাই নয়তো লোকে তোমায় বউ পাগল বলবে. আমি হেসে বললাম হা যাও. ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল আসছি. ও বেরিয়ে যাচ্ছিল আমি পেছন থেকে বললাম দীপা আজ বিকেলে ঘুরতে যাবে. ও পেছন ঘুরে হেসে বলল নিয়ে যাবে? আমিও হেসে বললাম হা. ও হেসে মাথাটা নেড়ে জানিয়ে দিল ঠিক আছে যাব. দীপা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি চেঞ্জ করে নিলাম. প্রায় ১০ মিনিট পর জেঠিমা আমার ঘরে ঢুকলো. জেঠিমা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলল কি রে সমু বউকে এত খুশি লাগছে কেন, আমি কিছু জিগ্গেস করলেই মাটির দিকে তাকিয়ে হাসছে. প্রচুর লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে আমার কথা গুলো শুনে. কি মন্ত্র পড়ালিরে পাগলি মেয়েটাকে. আমি হেসে বললাম না কিছু নয়. জেঠিমা আসতে আসতে আমার দিকে এগিয়ে এলো. বিছানার ওপর ওর সালোয়ারের প্যাকেট তা পরেছিল. ওটা তুলে নিয়ে ভালো করে দেখে বলল আচ্ছা এটাই তাহলে মন্ত্র. আচ্ছা তাহলে নিজের বউকেও শেষ অবধি ঘুষ দিয়ে খুশি করতে হলো. আমি বললাম না এরকম কিছু নয়. জেঠিমা সালোয়ার তা নিয়ে দুরে বাইরে বেরিয়ে গেল. আমি পেছন পেছন গেলাম বলতে বলতে জেঠিমা ওটা দিয়ে দাও, খারাপ হবে বলে দিছি. আমি রান্না ঘরের বাইরে দাড়িয়ে থাকলাম. ওখানে জেঠিমা সবাইকে দেখাতে লাগলো, দেখো সমু নতুন বউ এর জন্য কি এনেছে. ওদিকে দীপা তো মুখে দুহাত দিয়ে লজ্জায় ঢেকে ফেলেছে. জেঠিমা বার বার একই কথা বলে যাওয়ায় ও লজ্জায় দুরে রুম থেকে বেরিয়ে এলো. আমায় দেখে থমকে দাড়িয়ে গেল, তারপর জিভটা বার করে আমায় একটা ভেংচি কেটে আমাদের ঘরটায় চলে গেল.