25-02-2019, 12:56 PM
- উঁ হুঁ...
- কেন?
- উমম না...কি সব লিখেছি...
- বারে, তুমি যে আমার সব গোপন কথা জেনে নিয়েছো...
- আচ্ছা...হাসবে না তো...
- উঁ হু...
আরো কিছুক্ষন কেটে গেছে। অনেকগুলো অজানা কথা জানতে পেরে বা বলতে পেরে দুজনেই খুশী যদিও খুব একটা যে জানার দরকার ছিল তাও নয়…তবুও ভালোই হয়েছে, আর কোনো প্রশ্ন নেই কারুর বুকের ভেতরে। মন ভরে গেলে শরীরের কথা মনে পড়েছে একে অপরকে আদর করতে করতে, একটু একটু করে এগিয়ে গেছে অন্য এক সুখের খোঁজে। মনের খোঁজ তো আগেই পাওয়া হয়ে গিয়েছিল, অন্য সুখের খোঁজ করতে গিয়ে একে অপরের শরীরকে বোঝাটাও জরুরী থাকায় সময় নিয়েছে নিজেদের মতো করে, তাড়াহুড়ো করতে চায়নি কেউই......তারপর এক সময় দুটো পরিশ্রান্ত শরীর তৃপ্ত মনে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বোঝেনি।
একজনের ঘুম ভেঙ্গেছে আগে। সারা শরীর যেন তখোনো অবশ হয়ে আছে সুখের আবেশে। বেশ কিছুক্ষন ঘোরের ভেতরে শুয়ে থাকার পর কোনোরকমে তাকিয়ে দেখলো ও তখোনো গভীর ঘুমের ভেতরে, কখন ঘুমের ঘোরে দুজন দুজনের থেকে দুরে সরে গেছে জানেনা... কাছে যেতে ইচ্ছে করলেও যদি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় ভেবেও আস্তে করে কাছে এসে ওর গা ঘেঁষে শুয়ে থাকতে থাকতে আবার চোখ বুজে এলো। আধো ঘুম আধো জাগরনের ভেতরে থেকে ভাবছিল কাল রাতের কথা...নিজেই জানে না কখন ওর মুখে এক চিলতে হাসি তো কখনও বা সুখের অভিব্যাক্তি। সবটুকু মনে না পড়লেও কিছু কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে...নিজের মুখে না বলতে পারলেও ও যেন কি করে বুঝে যাচ্ছিল আমি কি চাইছিলাম ভাবতে গিয়েও বুঝতে পারলো না কি করে ও বুঝতে পারছিল। অনেক কিছুই মনে পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু শেষের দিকে কি হয়েছিল ভাবতে গিয়েও মনে করতে পারলো না, কি করে মনে পড়বে...ও কি আর সজ্ঞানে ছিল নাকি থাকা সম্ভব ছিল...
ঘুম জড়ানো গলায় ওর মৌমি ডাক শুনে উঁ বলে সাড়া দিয়ে অপেক্ষা করছিল কি বলে শোনার জন্য। ডেকেও কিছু না বলাতে বুঝলো ও আবার ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। নামটা মিষ্টি নাকি ওর মুখে শুনতে মিষ্টি লাগছে ভাবতে গিয়ে নিজের মনেই বারে বারে মৌ-মি উচ্চারন করতে করতে ভালো লাগায় বুক ভরে উঠলে ওরও ইচ্ছে হচ্ছিল ওকেও কিছু একটা নামে ডাকতে যেটা শুধু ওরই জন্য কিন্তু অনেক ভেবেও কিছু ঠিক করতে না পেরে নিজের অজান্তেই একটু জোরে বলে ফেলেছে ধ্যাত, আমি একটা কি যেন। কারুর হাত কিছু যেন খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে এসে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে নিজেই আস্তে করে তার বুকের ভেতরে ঢুকে গিয়ে চুপ করে থাকলে সে জিজ্ঞেস করেছে কি ভাবছিলে? কই কিছু না তো বললে জিজ্ঞেস করেছে এই যে বললে ধ্যাত, আমি যেন একটা কি। ভাবছিলাম তোমাকে কি নামে ডাকবো শুনে অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল তুমি আমাকে নাড়ুগোপাল বলে ডাকতে পারো...
- ধ্যাত, কি বিচ্ছিরি...
- খুব বিচ্ছিরি?
- হু...
- তাহলে?
- থাক, পরে ভাববো...
- আচ্ছা...
- ঘুম হয়েছে?
- উ হু...
- কেন?
- আবার ইচ্ছে করছিল...
- কি?
- খেতে?
- কি?
- তোমাকে...
- রাক্ষস কোথাকার...
- তাই?
- হু, রাক্ষসই তো...তবে বেশ ভা-লো...
- ভালো...তোমার ঘুম হয়েছে?
- না...
- কেন?
- ভয়ে...
- কিসের?
- রাক্ষসের...
- এই যে বললে রাক্ষসটা নাকি ভালো ছিল...
- ওটাই তো ভয়ের...
- কেন?
- খেতে চাইলে না বলতে পারবো না যে...
দুজনে মিলে আবোল তাবোল বকে যেতে যেতে ঘড়ির মৃদু আওয়াজে একজনের খেয়াল হয়েছে এবারে ওঠা উচিত... স্নান করতে হবে, ওকে তুলে বিছানাটা ঠিক করতে হবে, না হলে আর কেউ লাগুক না লাগুক ছোড়দিটা তো আছেই তার জন্য। এই, ছাড়ো...বললে উত্তর এসেছে আমি কি তোমাকে আটকে রেখেছি নাকি?
- ইস, কে জড়িয়ে ধরে আছে আমাকে শুনি...
- ও তো তোমার সেই ভা-লো রাক্ষসটা...
- হু, বুঝেছি...এই যে ভালো রাক্ষস... ছাড়ো...
‘আচ্ছা এসো’ বলে সেই ভালো রাক্ষসটা ওকে ছেড়ে দিতে গিয়েও আবার কাছে টেনে নিয়ে বলেছে মুখটা একবার আয়নায় দেখে নিয়ে তারপর বাইরে যেও...কেমন। কথাটা শুনে ও কি বলতে চেয়েছে বুঝতে পেরে লজ্জায় সারা গা শিরশির করে উঠল। তারপরেই মনে পড়ল ও তো একা নয়...আমিও তো...তাহলে তো শুধু আমার মুখটা আয়নায় দেখলে হবে না...
উঠে যাওয়ার আগে এই, দেখি তো বলে ওর দিকে ভালো করে তাকাতে গিয়ে আবছা আলোতেও বুঝলো...ওর মুখে, গলায়, বুকে...আর কোথায় কোথায় লেগেছে কে জানে। ইশ, এই জন্যই ছোড়দিটা সিঁথিতে সিঁদুর লাগিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিল এই যাঃ...অভ্যেস নেই তো, বুঝতে পারিনি...একটু বেশী হয়ে গেল। যাকগে, আজ থাক...কাল থেকে না হয় একটু ছুঁইয়ে দেবে...বুঝেছো...
দেখতে দেখতে বর্ষা চলে গিয়ে এসেছে শরৎ...উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই এসেছে শীত। তারপর বসন্ত কবে যেন এসে চলে গেছে, ফিরে এসেছে আরো একটা গ্রীষ্ম। এতগুলো দিন যেন স্বপ্নের ভেতরে থেকে কেটে গেছে। কিভাবে যে দিনগুলো এসেছে আর গেছে বোঝার জায়গায় ওরা ছিল না। সবাই নাকি বলে ওরা মেড ফর ইচ আদার। একজনকে ছাড়া অন্যজনকে নাকি ভাবাই যায় না। না বললেও অবশ্য কোনো ক্ষতি ছিল না... কে কি বললো তাতে ওদের কি যায় আসে...ওরা দুজনে দুজনায় মশগুল থেকেই খুশী...
সারা দুপুর কাটফাটা রোদ ছড়িয়ে সুর্য এখন মুখ লুকিয়েছে ঘন কালো মেঘের আড়ালে। আকাশে বাতাসে কালবৈশাখীর আভাস, চারদিক থমথম করছে। যে কোন মুহুর্তেই ঝড় শুরু হবে হবে করছে। হাতে হাত লাগিয়ে ছাদের টব গুলোকে নামিয়ে দেওয়া হয়ে গেলে শুক্লাদি নীচে গেছে। ঝড় ওঠার আগে জানলাগুলো আটকে না দিলে আবার সারা বাড়ী ধুলোয় ভরে যাবে। মৌ একা একা দোলনাতে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল...মনটা খুব একটা ভালো নেই। না থাকার কারন আর কিছুই নয়...অরিত্র বাড়ীতে নেই, অফিসের কাজে বাইরে আছে।
এই দোলনাটা আগে ছিল না...এই তো গত বছর পুজোর পর লাগানো হয়েছে...শুধু দোলনাটা নয়, তার সাথে মানানসই একটা ছাউনিও আছে...প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে চেয়ে একা একা বসে থাকলেও কিভাবে সময় কেটে যায় বোঝাই যায় না। দেখলে মনে হবে যেন এক টুকরো একটা বাগান...ছোট্ট একটা চারদিক খোলা কুঁড়ে ঘর...আর তার মাঝে এই দোলনাটা...কতদিন মাঝ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর ওরা দুজনে এসে এখানে বসে গল্প করেছে...কখোনো বা শুধুই দুজনে দুজনের সান্যিদ্ধ উপভোগ করেছে চুপ করে বসে থেকে...
পরের দিন দুপুরের পর থেকে মৌয়ের জ্বর এসেছে, সাথে গা হাত পা ব্যাথা। একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে ছিল ও, সামান্য জ্বর হলেও বলতে গেলেই তো আবার সবাই চিন্তায় পড়ে গিয়ে ওকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। ভেবেছিল বিকেলে অরিত্র ফিরে আসার আগে জ্বর কমে যাবে হয়তো, তেমন কিছু তো নয়...বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য সর্দি জ্বর। কাল বিকেলে একা একা ছাদে বসে থাকতে থাকতে মনটা খুব উদাশ হয়ে গিয়েছিল...এমনিতেই ও বাড়ীতে নেই, মনটা একেবারেই ভালো ছিল না... তার উপরে দুপুরের গায়ে জ্বালা ধরানো গরমের পর মরশুমের প্রথম বৃষ্টি...ও আজ বাড়ীতে থাকলে দুজনে মিলে বৃষ্টিতে ভিজতাম ভাবতে গিয়ে আরো যেন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল...ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন উঠে গেছে বুঝতে পারেনি হয়তো...কেমন যেন একটা ঘোরের ভেতরে থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বেশ কিছুক্ষন পর শুক্লাদির ডাকে ফিরে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল...
অরিত্র বাড়ী ফিরে এসে জোর করে ডাক্তার দাদুর কাছে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। যাওয়ার আগে সামান্য জ্বরে এত চিন্তা করার কি আছে বলতে গেলে মৃদু বকুনি খেয়েছে ওর কাছে কাছে। দাদু দিদানরা আদর করে ওকে বকে দেয় অনেক সময় কিন্তু তাতে ওর কিছু মনে না হলেও অরিত্র কেন বকে দিল ভেবে অভিমানে বুক ভরে গিয়েছিল...
ডাক্তার দাদুর ওষুধ খেয়ে রাতে জ্বর কিছুটা কমে গেলেও পুরোপুরি নেমে যায়নি, তার উপরে আবার বেশ কিছুটা দুর্বলতাও ছিল। অরিত্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে আস্তে করে উঠে বসেছে। জ্বর একেবারে না কমে যাওয়ায় কিছুটা হলেও চিন্তা ছিল। আজকাল আবার সামান্য জ্বর থেকেও কতকিছু হচ্ছে শোনা যায়। এখুনি না শুয়ে পড়ে আরো কিছুক্ষন দেখে না হয় ঘুমোবে ভেবে রিডিং লাইটটা জ্বালিয়ে একটা বই পড়ার কথা ভাবতে ভাবতে মৌয়ের ডাকে সাড়া দিতে হল...ও ঘুমোয় নি, দুর্বলতা থাকায় সাড়া ছিল না দেখে অরিত্র ভেবেছিল ও ঘুমিয়ে পড়েছে। কাছে সরে গেলে মৌ ওর হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরে কি যেন বলল দেখে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কষ্ট হচ্ছে কিনা। আস্তে করে শুধু না বলে ও চুপ করে থাকলে অরিত্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমোবার চেস্টা করতে বললেও ও শোনেনি...এমনিতেই শরীর খারাপের জন্য গলা ভারী হয়েছিল...অভিমানী গলায় বলেছে... না, ঘুমোবো না...তুমি বকলে কেন আমায়...তোমার কথা ভাবতে গিয়েই তো ভিজতে ইচ্ছে হয়েছিল...
ওর অভিমান ভাঙ্গাতে আদর করতে হয়েছে... অনেক কথা বলতে হয়েছে... বুকে মাথা রেখে ও চুপ করে থেকে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেও অরিত্র ঘুম আসছিল না...অভিমান ভাঙ্গাতে পেরে ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা ভালো লাগায় ভরে উঠল...দুটো দিন মাত্র দুজন দুজনকে কাছে পায়নি...তাতেই যেন মনে হচ্ছিল কতদিন পরে দেখা হয়েছে...কত যেন কথা জমে আছে বুকের ভেতরে...
বালিশের পাশে রাখা ডাইরিটা আগে খেয়াল করেনি...কি মনে করে হাতে নিয়েছে... দেখবো কি দেখবো না করেও প্রথম পাতার দিকে তাকিয়েছে... ঝরঝরে মুক্তোর মত গোটা গোটা হাতের লেখা... দু চারটে লাইন পড়েই বুঝতে পারলো এটা শুধু ডাইরী বললে ভুল হবে...এটা ওর ওর মনের আয়না......কোনো কিছুই গোপন করা নেই...পাতা গুলো উলটে যেতে যেতে এক জায়গায় চোখ আটকে গেল...
ফিরে এলাম আবার...
অনেক দিন ডাইরী লেখার সময় পাইনি...কি করে লিখবো বলো...এখন তো আর আমি একা নই...আমাদের বিয়ে হয়ে গেল...তারপর আমরা গেলাম হানিমুনে...ফিরে এসে আবার এখানে ওখানে যাওয়া...সময়ই পাইনা...দাদু দিদানরা তো আছেই...সাথে আছে একজন খুব দুষ্টু...দুপুরে যখন লিখতে বসি... শুধু তার কথা মনে পড়ে যায়...কাল সারাদিন কি করলাম...কি কি হয়েছে...কিছুই মনেই পড়তে চায় না...তবুও জোর করে লিখতে শুরু করছি আজ থেকে...এই, শোনো না...পড়তে গিয়ে হাসবে না কিন্তু...জানোই তো আমার লজ্জা করে...তাই তো তোমায় দিই না পড়তে...কখোনো বা যদি তোমার হাতে আমার ডাইরীটা পড়ে গেছে দেখেছি...তোমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছি...তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে খুনসুটি করে যাও...দেবো দেবো করেও দিতে চাওনা...আমি কি জানি না নাকি, কেন তুমি ওরকম করো...আসলে তোমার তখন আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে তাই তুমি...ইশ, না...না...শুধু তো তুমি নয়...আমারও তো তোমার ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে... আচ্ছা থাক এখন ওসব কথা...এবারে লিখি...কেমন...
আমাদের প্রথম রাত...ফুলশজ্জা...
আমাদের প্রথম রাতের কথা লিখতে গিয়ে পারলাম না...ওই রাতটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন ছিল বুঝতে পারছি না...মনে করে করে লিখতে গিয়ে শিউরে উঠছি...তোমাকে কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছে...ধ্যাত...থাক...পরে কখোনো লিখবো...তার থেকে বরং পরের দিন থেকে শুরু করি.....
আবার কাছে পেলাম তোমায়...
আমাদের ফুলশজ্জার পরের দিন দুপুর...বাড়ীতে আত্মীয় স্বজনরা থাকায় ছেলেদের আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল...বাকি ছিলাম আমরা মেয়েরা... খেতে বসে গল্প করতে করতে দেরী হয়ে গিয়েছিল আমার ফিরে আসতে...তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে দেখে আর ডাকিনি, ফিরে এসে ছোড়দির সাথে গল্প করছিলাম...মনটা পড়ে ছিল তোমার কাছে...খুব ইচ্ছে করছিল তোমাকে একবার দেখে আসি। লজ্জায় যেতে পারছিলাম না...জানোই তো তোমার বোন কেমন বিচ্ছু...পেছনে লেগে মাথা খারাপ করে দেয়। তারপর কি হয়েছে বলোতো...আমরা সবাই মিলে ছাদে যাচ্ছিলাম...মিষ্টিরা সামনে, আমি আর ছোড়দি পেছনে...আমাদের শোয়ার ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছোড়দি আমার হাতটা ধরে ইশারা করেছে ভেতরে যেতে...আমি লজ্জায় মুখ নীচু করে নিয়ে মাথা নেড়ে বলেছিলাম...না থাক...ছোড়দি জোর করে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা টেনে দিতে গিয়ে বলেছিল...আমি উপরে আছি...দেখা করে চলে এসো... তারপর... ছোড়দি চলে গেছে বুঝে গিয়ে আমি এক পা এক পা করে তোমার দিকে এগিয়ে এসেছি...তুমি কোল বালিশটা বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছিলে...তোমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা করছিল...ভীষন ইচ্ছে করছিল তোমাকে আলতো করে চুমু দিই...আদর করি...এত কিছু ইচ্ছে করলেও চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম...কেউ যদি এসে যায় ভেবে লজ্জায় কিছু করতে পারছি না আবার ওদিকে সময়ও চলে যাচ্ছে...এখুনি আমাকে আবার ফিরে যেতে হবে ভেবে বুঝতে পারছিলাম না কি করবো...না থাক, এখন যাই ভেবে ফিরে আসবো বলে দরজার কাছে ফিরে এসে কি মনে করে পেছন ফিরে তাকিয়েছি তোমার দিকে... তুমি তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে...তোমার চোখে চোখ আটকে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো...তারপর...তোমার দুচোখের নীরব ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি...ত্রস্ত হরিনীর মতো দৌড়ে এসে কোনো কিছু না ভেবেই ঝাঁপ দিয়েছিলাম তোমার বুকে...তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে...আমিও হয়তো তাই করেছিলাম...কে কাকে বুকে চেপে ধরে পিষে ফেলতে চেয়েছিলাম জানি না...তারপর হয়তো খেয়াল হয়েছিল আমাকে দেখতে না পেলে ভাইবোনেরা কেউ ফিরে আসতে পারে। আস্তে করে বলেছিলাম ...এই ছাড়ো। ছাড়ার ইচ্ছে একেবারেই নেই তো ছাড়বে কেন ভেবে হয়তো তুমি বলেছিলে...একটু তো ঘুমিয়ে নিতে পারতে। ইচ্ছে তো করছিল তোমার পাশে থাকতে, ওরা না ছাড়লে কি করবো ভেবে বলেছিলাম ...কেন, আজ রাতেও ঘুমোতে দেবে না...আবার দুষ্টুমি করবে? তুমি কি বলেছিলে যেন...ও হ্যাঁ...তুমি বলেছিলে হু, করবোই তো...তোমার কথা শুনে আমি বলেছিলাম...ইস, কোরবোই তো...এত আদর করলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করবে নাকি তোমাকে? তুমি বলেছিলে ...না ছাড়তে ইচ্ছে করলে ছাড়বে না... সবাই কি ভাববে বলোতো বললে তুমি বলেছিলে... সে যা ভাবে ভাবুক... আমার কি...
ঠিকই তো...তোমার কি...তুমি তো আমাকে ছাড়া আর কিছু জানো না...বোঝো না...জানতেও চাও না...বুঝতেও চাও না...
অরিত্র মন দিয়ে ওর লেখা পড়তে পড়তে ভালোলাগার রেশ বুকে নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পর ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলো আগের থেকে ঠান্ডা, জ্বর একটু কমেছে বুঝে মুখ নামিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে আবার পড়তে শুরু করেছে...
মধুচন্দ্রিমা
সত্যিই কি মিষ্টি শব্দটা...দুটো সুখী হৃদয়ের নিজেদের ভেতরে একাত্ম হয়ে গিয়ে নিজেদেরকে নতুন করে জানার...নতুন করে চেনার.......একে অপরকে বোঝার আর এক নাম....... ম-ধু-চ-ন্দ্রি-মা...
জানি, আমার মতো সুখ সবাই পায় না...সবাই তো আর তোমার মতো ভালবাসতে জানে না আর ভালোবাসা পেতে জানে না। হ্যাঁ, ঠিকই তো ভালোবাসতে গেলে ভালোবাসা নিতেও জানতে হয়...তাই না?
জানো তো...একটু একটু করে আমাদের যাওয়ার সময় যত এগিয়ে আসছিল...আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতিতে ভরে উঠছিল...ঠিক কিসের অনুভুতি আমাকে জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবো না...সেই অনুভুতি শুধু নিজে অনুভব করা যায়...মুখ ফুটে কাউকে বলা হয়তো যায় না...এতদিন তোমাকে একভাবে দেখার পর...বোঝার পর... সবেমাত্র তোমার ভেতরের আসল মানুষটাকে বুঝতে শুরু করেছি...তোমার সব কিছুই যেন একেবারে নতুন ভাবে আমার কাছে ধরা পড়ছে একটু একটু করে...নতুন করে চেনার ঠিক সেই মুহুর্তে তোমাকে একেবারে নিজের মতো করে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা যেন আমাকে অস্থির করে তুলছিল...ইশ, না না...তুমি আবার হয়তো ভাবছো যে আমি শুধু ওইসবের কথা ভেবে অস্থির হয়ে পড়ছিলাম...উঁ হু...কথাটা একেবারে সত্যিও নয় আবার একেবারে মিথ্যেও নয়...তোমার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেবার ভেতরে যে কি সুখ তা কি আমি বুঝি না... নাকি চাই না...সাথে সাথে তোমাকে আরো বেশী করে জানার ইচ্ছেটাও ছিল...মনটা ছটপট করে উঠতো...তুমি আর আমি একেবারে নিজেদের মতো করে একে অপরকে কাছে পেলে...তুমি কি করো...কিভাবে আমাকে দেখতে চাও...কিভাবে পেতে চাও জানার জন্য... সাথে সাথে আমাকেও কি করতে হবে ভাবতে শুরু করেছি...আমারও তো তোমাকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল...আমি যেমন তোমাকে জানতে চাইছি তেমনি তুমিও তো আমাকে আরো বুঝতে চাইতে...তাই না...
দেখতে দেখতে আমাদের যাওয়ার দিন এসে গিয়েছিল...আমরা দুজনে এক বৃষ্টির দুপুরে পৌঁছেছিলাম গোয়া। ভেবেছিলাম আর পাঁচটা হোটেলের মতোই হবে আমাদের হোটেল...সমুদ্রের দিকে মুখ করে আর পাঁচটা হোটেলের মতোই একটা বিল্ডিং... জানো তো কি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ওখানে পৌঁছে...চারিদিকে শুধু সবুজ...কিছু চেনা আর কিছু না জানা কতরকমের গাছ, কোনটা ফুলে ভরা, কোনটায় শুধু পাতা...তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট ছবির মতো সুন্দর এক একটা কটেজ...আমাদের কটেজটা একেবারে উপরের দিকে ছোট্ট একটা টিলার উপরে...বেশ কিছুটা নীচে সমুদ্রের নীল জল...এতদুর থেকে ঢেউগুলোও যেন কত ছোট দেখাচ্ছে... ভেতরে ঢুকে আরো একবার অবাক হবার পালা...এত সুন্দর সাজানো গোছানো...ছবিতে দেখেছি এর আগে কিন্তু ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে নিয়ে আসবে এরকম একটা জায়গায়। আমাকে অবাক হয়ে যেতে দেখে আরো কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা... তোমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে থেকে বুঝিয়েছিলাম আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে...আর তার থেকেও বড় কথা তুমি সাথে থাকলে এই পৃথিবীর যে কোন জায়গাই আমার কাছে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর...
বিশ্বাসই হচ্ছিল না শুধু তুমি আর আমি...আর কেউ কোথাও নেই...কোনো কিছু ভাবার নেই। দুজনে মিলে যখন যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি...সময়ের কথা কে মনে রাখবে বলো... এক একটা মুহুর্ত যেন এক একটা স্বপ্নের টুকরো। তুমি চাওনি সেই স্বপ্নের টুকরো গুলোকে শুধুমাত্র শরীরের কথা ভেবে গুঁড়িয়ে দিতে..ঘন্টার পর ঘন্টা কিভাবে কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না...কখোনো বা পাশাপাশি বসে থাকা...কখোনো বা হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাওয়া, সব কিছুতেই যেন আমরা খুশী ছিলাম। তোমার আমাকে নিবিড় করে চাওয়ার সেই সব মুহুর্ত গুলো যেন আজও আমার মনে গেঁথে আছে। আমার সব থেকে ভালো কি লেগেছিল জানো? তুমি একবারের জন্যও চাওনি আমার স্বাভাবিক স্বভাবে কিছু পরিবর্তন আসুক...তুমি চেয়েছিলে তোমার মৌমি সোনা সেই আগের মতোই একটু নরম...একটু লাজুক থাকুক...আমি তোমার অনেক কাছের হয়ে গেলেও যেন থাকে কিছু অদেখা...অচেনা...তুমি মুখে কিছু না বলেও বুঝিয়েছিলে সবই যদি দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যায় তাহলে কি আর দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেটা থাকবে? থাক না একটু আড়াল...
একদিন তুমি আমাকে সাজিয়েছিলে নিজের মতো করে... গলায় পরিয়ে দিয়েছিলে গুলঞ্চ ফুলের মালা, চুলে গুঁজে দিয়েছিলে আরো দুটো ফুল...শুধু কি তাই? হাতেও ছিল ফুলের বালা। তুমি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলে...আয়নায় নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিলাম না...ঠিক যেন আমি কোনো স্বল্পবাস দ্বীপবাসীনি... লাজুক মুখে চুপ করে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম... আমার অবাধ্য চোখ দেখতে চাইছিল তোমাকে..নিজের অজান্তেই মুখ তুলে তাকিয়েছিলাম... তুমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে...ভাবছিলাম, দুষ্টুটা এখন কি কিছু ভাবছে নাকি শুধুই দেখে যাচ্ছে? না না...শুধু তো দেখছে বলে মনে হচ্ছে না...ওর চোখ দুটো যেভাবে বুজে আসছে মাঝে মাঝে তাতে তো মনে হচ্ছে যেটুকু আবরন আছে আমার শরীরে তা না থাকলে কি হোতো তাই ভাবছে। ইস, কি অসভ্য...না, আমি আর পারছি না এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে...কেমন যেন শিহরন জাগছে... পা দুটো থরথর করে কেঁপে উঠছে...তুমি হয়তো বুঝেছিলে আমাকে...কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলে পাশ ফিরে যেতে চেয়েছি, না...কিছুতেই দেখতে দেবো না তোমাকে... ওইভাবে আবরনের আড়ালে থেকেও নিরাবরন হয়ে যেতে তোমার মনের ক্যমেরায়...শুনবে নাকি তুমি আমার কথা...চুমু দিতে দিতে তোমার একটা দুষ্টু হাতটা কোথায় যেন ঘোরা ফেরা করছিল...আঃ, ইস...উমমম...না-আ...করে বাধা দিলে শুনছেটা কে? আমার নাকের পাটা নাকি ফুলে ফুলে উঠছিল, ফর্সা মুখে রক্ত জমে গিয়ে নাকি আরো মিষ্টি দেখাচ্ছিল...চোখ খুলে রাখতে না পেরে তোমাকে নিজের উপরে টেনে নিয়ে আশ্লেষ ভরা গলায় বিড়বিড় করে কি বলেছি নিজেই জানি না... তারপর? কি জানি তারপর কি হয়েছিল...তুমি কি আমাকে আর কিছু মনে রাখার সুযোগ দিয়েছিল?
আরো একটা রাতের কথা কি ভুলতে পারবো নাকি কখোনো? মাঝ রাত কখন পেরিয়ে গেছে জানিই না... আমাদের কটেজের সামনের বাগানে দোলনায় আমরা দুজনে...তোমার বুকে মাথা রেখে আমি শুয়েছিলাম...আকাশে ঘন মেঘ...মাঝে মাঝে উল্টোপাল্টা হাওয়া এসে চারদিকের গাছগুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। পাশের নারকেল গাছ থেকে একটা ডাবের কুশি খসে পড়ল একটু দুরেই... দোলনায় তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে একবার মুখ তুলে ভালো করে তোমার বুকে নিজেকে আটকে রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল...নাই বা গেলাম আজ শুতে...এখানেই থেকে যাই না আজ রাতটা... এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি জল গায়ে এসে পড়ছে...পড়ুক না...কি আসে যায় তাতে...
আস্তে আস্তে বৃষ্টির জোর বাড়ছে...একটু কি শীত শীত করছে? তাই হবে হয়তো...দুরের গার্ডেন লাইটের আবছা আলো বৃষ্টি ভেদ করে এতদুর আসছে না ঠিক...আলো আঁধারের লুকোচুরি আর ঝমঝম বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে দুই প্রেমিক হৃদয় চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছে একে অপরকে...কোথায় আছে বোঝার কিছু আছে কি? দোলনাতে চুপচাপ শুয়ে থাকা যায়...আদর করা যায় কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু? কখন আমাকে বুকে তুলে নিয়ে তুমি গার্ডেন চেয়ারে চলে এসেছে বোঝার দরকার হয়তো ছিল না...তারপর? তারপর তোমার সেই পৃথিবী ভোলানো ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলে...আমিও পারিনি নিজেকে আটকে রাখতে...আমাদের আকাঙ্খার উত্তাপে বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের শরীরকে আর ভেজাতে না পেরে হয়তো বাস্প হয়ে ফিরে যাচ্ছিল... হয়তো জ্ঞান হারিয়েছিলাম তোমার আমার সেই ভালোবাসার স্ত্রোতে ভেসে যেতে যেতে...তারপর একটু একটু করে আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমাকে...তুমি আমাকে বুকে আগলে রেখেছিলে...কি যে হয়েছিল তারপর কে জানে আমার...এই খোলা আকাশের নীচে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ ভাবতে গিয়ে কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছিলাম না...কিভাবে যে টাওয়েলটা গায়ে জড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম কে জানে...তুমি ফিরে এলে আমার পেছনে পেছনে...ভীষন অভিমান হচ্ছিল যখন তুমি আমার দিকে তাকিয়েছিলে দুষ্টুমির হাসিতে তোমার মুখ ভরিয়ে...ভাবছিলাম...না তাকাবো না তোমার দিকে...অসভ্য, জংলী একটা ভুত...ছি ছি...লজ্জা নেই...যদিও এত রাতে ওখানে কেউ থাকার কথা নয়...তবুও কেউ দেখেছে কিনা কে জানে ভাবতে ভাবতে শুনলাম এই, সোনা...তাকাও প্লিজ...তোমার অনুনয়ের গলায় বলা কথাগুলো শুনেও আমি জেদ করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম...তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়ালে...আমাকে বোঝাবার চেস্টা করলে...আমি কি পারবো বলো তোমার কথা ফেরাতে...সবকিছু ভুলে গিয়ে তোমার হাতের বাঁধনে নিজেকে সমর্পন করেছিলাম ...আবার সেই সুখের মুহুর্ত গুলোর কথা মনে পড়ে গেলে আর নিজেও কি করেছি মনে পড়ে গেলে লজ্জা পেয়ে গিয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে শুনলাম এই, চলো স্নান করে আসি। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলেছিলাম...উমম না...এক সাথে না...তুমি আবার দুষ্টুমি করবে। আমি না না করলে কি হবে...তুমি কি শুনবে নাকি? ঠিক সেই আমাকে কোলে করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে... এত সময় বৃষ্টিতে ভেজার পর ভীষন শীত করছিল...তোমার বুকের ভেতরে কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি...দুজনে মিলে থেকে উষ্ণ জলের ধারায় ভিজতে ভিজতে অনুভব করেছিলাম তোমার আকাঙ্খার উষ্ণতা...একটু একটু করে সেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছিল আমার সারা শরীর মনে...আবার আমরা দুজনে হারিয়ে গিয়েছিলাম দুজনায়...
আর পারছি না গো লিখতে আজ...পরে আবার লিখবো ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সেই গানটার কথা... ‘আজ তবে এইটুকু থাক... বাকি কথা পরে হবে’...
আমার আকাশ
উমম...আ-মা-র আ-কা-শ...আচ্ছা বলোতো...আমার আকাশ...এটার মানে কি? হুম...কি এত ভাবছো বলোতো...ইশ...বলতে পারলে না তো? আচ্ছা শোনো...আমার আকাশ মানে হচ্ছে...তু-মি...শুধু তুমি। জানোতো...তুমি আমাকে যখন মৌ-মি বলে ডেকেছিলে...তোমার মুখে যেন আরো মিষ্টি লাগছিল শুনতে...তখনই আমার ইচ্ছে করছিল...তোমাকেও এমন একটা নামে ডাকবো যা শুধু তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। অনেক ভেবে ভেবেও কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলাম না কি নামে তোমাকে ডাকা যায়। ভীষন খারাপ লাগতো...কাঁদতে ইচ্ছে করতো। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তুমি ভাবতে হয়তো আমার মন খারাপ... বার বার জানতে চাইতে কি হয়েছে..তোমাকে বলতে পারতাম না কেন আমার মন খারাপ...আরো খারাপ লাগতো।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে... একদিন সন্ধের মুখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একা একা...সূর্য অস্ত গেছে অনেক আগেই...পুর্নিমার মিষ্টি চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যেতে শুরু করেছে...তোমার কথা ভাবতে ভাবতে দেখছি আকাশের বুকে নাম না জানা এক নিঃসঙ্গ পাখীর উড়ে যাওয়া... মুগ্ধ চোখে তার উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে খুশীতে বুক ভরে উঠেছিল...ওই পাখীটার মতোই তো আমি... মনে পড়ে গেল তোমার লেখা কথাগুলো...সবাই যখন তোমাকে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বলেছিল তখন তো তুমি আমাকে ফেলে চলে আসোনি স্বার্থপরের মতো... কোনো কিছু না ভেবেই বুকে আগলে রেখেছিলে...নিয়ে এসেছিলে সাথে করে একটা অসহায় অজ্ঞান মেয়েকে... হারিয়ে যেতে দাওনি তাকে...আকাশের মতোই বিশাল হৃদয় নিয়ে তোমার বুকে আশ্রয় দিয়েছিলে...তাই তোমাকে আমার আকাশ ছাড়া আর কি নামে ডাকবো বলো...
তোমার ছোট্ট ইচ্ছে
বাড়ীতে শাড়ী, সালোয়ার কামিজ বা অন্য যা খুশী একটা পরলেই হয়... আর কারুর কোনো আপত্তি নেই তো কি হয়েছে তোমার তাতে ভীষন আপত্তি আছে তবে সেটা শুধু বিশেষ সময়ের জন্য...অন্য সময় যাই পরি না কেন তোমার কিছু বলার নেই...আমি নাকি যাই পরিনা কেন তাতেই আমাকে ভীষন সুন্দর দেখায়...কি জানি তাই হবে হয়তো...তোমার চোখেই তো আমি নিজেকে দেখতে পাই। শুধু তোমার ইচ্ছেতেই ছুটির দিনের সকালে স্নান করার পর শাড়ী পরতেই হবে আমাকে...না হলে যে তুমি আবার অভিমান করে বসে থাকবে। স্নান করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ীটা ঠিক করে পরতে গিয়ে তাকাবো না ভাবতে ভাবতেও নিজের অজান্তে আড় চোখে তোমার দিকে তাকাবো...আমি তোমাকে ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর তুমি তোমার পুরোনো সঙ্গীকে খুঁজে পেতে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে চুপ করে শুয়ে আছো দেখে নিজের কাজে মন দেবো। তোমার দিকে আর ফিরে না তাকালেও আমি জানি বুকের আঁচলটা সরিয়ে আবার ঠিক করে নেওয়ার সময়টুকুতে তুমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে। কি যে ভালোবাসো শুধু দেখে যেতে তা হয়তো শুধু তুমিই বোঝ। তুমি ভালোবাসো দেখে যেতে তাই হয়তো আমার যেন কিছুতেই ইচ্ছে করবে না তাড়াতাড়ি আঁচলটা ঠিক করে নিতে...তোমাকে দেখাবার অছিলায় বারে বারে মনে হবে...কোথায় ঠিক করা হল আমার বুকের আঁচল...শুধু কি তাই নাকি...হাঁটু ভাঁজ করে পা দিয়ে শাড়ির পাড় চেপে ধরে শাড়ীটাকে আরো কিছুটা নামিয়ে দেওয়া দেখতে নাকি তোমার এত ভালো লাগে যে বলে বোঝাতে পারবে না। তারপর? তারপর...তোমাকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি কপট শাষন করার ভঙ্গীমাতে চোখ পাকিয়ে তাকালে নাকি তোমার ঠিক তখনই আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে...আর তাই আমাকে তারপর তোমার কাছে এগিয়ে যেতে হয়...কাছেই যখন এসেছি তখন কি আর এমনি এমনি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি...তোমার চোখে চোখ রেখে কি যেন ইচ্ছে করবে আমার আর তাই তোমার আরো কাছে এসে আলতো করে একটা ছোট্ট চুমু দিতে হয়...তাতে তোমার ইচ্ছেটা আরো একটু বাড়বে...দুহাত বাড়িয়ে দেবে...তাই তো আমার নিজেকে সমর্পন করতে হবে তোমার দুহাতের বাঁধনে... তুমি আমার বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে থাকবে...আমি শিউরে উঠতে উঠতে অস্ফুট স্বরে এই ছাড়ো বললে আরো বেশী করে মুখ গুঁজে দেবে বুকে...মুখ ঘষতে ঘষতে বলবে...উমমম...না ছাড়বো না...তারপরে আমাকে টেনে নেবে আরো কাছে... আমার বুকের আঁচল যেন তোমার ছোঁয়া পেয়ে নিজেই হারিয়ে যাবে একটু একটু করে...তুমি বুক ভরে আমার সদ্যস্নাত শরীরের সুগন্ধ নিতে নিতে আরো কিছু পেতে চাইবে...তোমার দুষ্টুমির সাথে আমি পেরে উঠবো না নাকি নিজেই ছাড়া পেতে চাইবো না কে জানে...কখন যে তোমার আমার মাঝের শেষ আবরনটুকু হারিয়ে যায় তুমিই জানো...তারপর তোমার দুষ্টু ঠোঁট দুটোর ছোঁয়া পেয়ে আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ফেলতে মনে হয়... ইশ, আর নয় এখন...ফিস ফিস করে বলি...এই...ছাড়ো...লক্ষী সোনা আমার... একবার নয় দুবার নয়...বারে বারে শুনেও তুমি আমাকে ছাড়তে চাও না...তারপর কি মনে করে নিজেই ছেড়ে দিয়ে দুষ্টুমি ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে যেন বলতে চাইবে...তোমারও তো ভালো লাগছে তাই না? আমি লজ্জা পেয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজেকে তোমার চোখের আড়ালে নিয়ে যেতে যেতে নিজের মনেই বলবো...লাগে তো ভালো...ভীষন ভালো...
- কেন?
- উমম না...কি সব লিখেছি...
- বারে, তুমি যে আমার সব গোপন কথা জেনে নিয়েছো...
- আচ্ছা...হাসবে না তো...
- উঁ হু...
আরো কিছুক্ষন কেটে গেছে। অনেকগুলো অজানা কথা জানতে পেরে বা বলতে পেরে দুজনেই খুশী যদিও খুব একটা যে জানার দরকার ছিল তাও নয়…তবুও ভালোই হয়েছে, আর কোনো প্রশ্ন নেই কারুর বুকের ভেতরে। মন ভরে গেলে শরীরের কথা মনে পড়েছে একে অপরকে আদর করতে করতে, একটু একটু করে এগিয়ে গেছে অন্য এক সুখের খোঁজে। মনের খোঁজ তো আগেই পাওয়া হয়ে গিয়েছিল, অন্য সুখের খোঁজ করতে গিয়ে একে অপরের শরীরকে বোঝাটাও জরুরী থাকায় সময় নিয়েছে নিজেদের মতো করে, তাড়াহুড়ো করতে চায়নি কেউই......তারপর এক সময় দুটো পরিশ্রান্ত শরীর তৃপ্ত মনে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বোঝেনি।
একজনের ঘুম ভেঙ্গেছে আগে। সারা শরীর যেন তখোনো অবশ হয়ে আছে সুখের আবেশে। বেশ কিছুক্ষন ঘোরের ভেতরে শুয়ে থাকার পর কোনোরকমে তাকিয়ে দেখলো ও তখোনো গভীর ঘুমের ভেতরে, কখন ঘুমের ঘোরে দুজন দুজনের থেকে দুরে সরে গেছে জানেনা... কাছে যেতে ইচ্ছে করলেও যদি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় ভেবেও আস্তে করে কাছে এসে ওর গা ঘেঁষে শুয়ে থাকতে থাকতে আবার চোখ বুজে এলো। আধো ঘুম আধো জাগরনের ভেতরে থেকে ভাবছিল কাল রাতের কথা...নিজেই জানে না কখন ওর মুখে এক চিলতে হাসি তো কখনও বা সুখের অভিব্যাক্তি। সবটুকু মনে না পড়লেও কিছু কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে...নিজের মুখে না বলতে পারলেও ও যেন কি করে বুঝে যাচ্ছিল আমি কি চাইছিলাম ভাবতে গিয়েও বুঝতে পারলো না কি করে ও বুঝতে পারছিল। অনেক কিছুই মনে পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু শেষের দিকে কি হয়েছিল ভাবতে গিয়েও মনে করতে পারলো না, কি করে মনে পড়বে...ও কি আর সজ্ঞানে ছিল নাকি থাকা সম্ভব ছিল...
ঘুম জড়ানো গলায় ওর মৌমি ডাক শুনে উঁ বলে সাড়া দিয়ে অপেক্ষা করছিল কি বলে শোনার জন্য। ডেকেও কিছু না বলাতে বুঝলো ও আবার ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। নামটা মিষ্টি নাকি ওর মুখে শুনতে মিষ্টি লাগছে ভাবতে গিয়ে নিজের মনেই বারে বারে মৌ-মি উচ্চারন করতে করতে ভালো লাগায় বুক ভরে উঠলে ওরও ইচ্ছে হচ্ছিল ওকেও কিছু একটা নামে ডাকতে যেটা শুধু ওরই জন্য কিন্তু অনেক ভেবেও কিছু ঠিক করতে না পেরে নিজের অজান্তেই একটু জোরে বলে ফেলেছে ধ্যাত, আমি একটা কি যেন। কারুর হাত কিছু যেন খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে এসে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে নিজেই আস্তে করে তার বুকের ভেতরে ঢুকে গিয়ে চুপ করে থাকলে সে জিজ্ঞেস করেছে কি ভাবছিলে? কই কিছু না তো বললে জিজ্ঞেস করেছে এই যে বললে ধ্যাত, আমি যেন একটা কি। ভাবছিলাম তোমাকে কি নামে ডাকবো শুনে অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল তুমি আমাকে নাড়ুগোপাল বলে ডাকতে পারো...
- ধ্যাত, কি বিচ্ছিরি...
- খুব বিচ্ছিরি?
- হু...
- তাহলে?
- থাক, পরে ভাববো...
- আচ্ছা...
- ঘুম হয়েছে?
- উ হু...
- কেন?
- আবার ইচ্ছে করছিল...
- কি?
- খেতে?
- কি?
- তোমাকে...
- রাক্ষস কোথাকার...
- তাই?
- হু, রাক্ষসই তো...তবে বেশ ভা-লো...
- ভালো...তোমার ঘুম হয়েছে?
- না...
- কেন?
- ভয়ে...
- কিসের?
- রাক্ষসের...
- এই যে বললে রাক্ষসটা নাকি ভালো ছিল...
- ওটাই তো ভয়ের...
- কেন?
- খেতে চাইলে না বলতে পারবো না যে...
দুজনে মিলে আবোল তাবোল বকে যেতে যেতে ঘড়ির মৃদু আওয়াজে একজনের খেয়াল হয়েছে এবারে ওঠা উচিত... স্নান করতে হবে, ওকে তুলে বিছানাটা ঠিক করতে হবে, না হলে আর কেউ লাগুক না লাগুক ছোড়দিটা তো আছেই তার জন্য। এই, ছাড়ো...বললে উত্তর এসেছে আমি কি তোমাকে আটকে রেখেছি নাকি?
- ইস, কে জড়িয়ে ধরে আছে আমাকে শুনি...
- ও তো তোমার সেই ভা-লো রাক্ষসটা...
- হু, বুঝেছি...এই যে ভালো রাক্ষস... ছাড়ো...
‘আচ্ছা এসো’ বলে সেই ভালো রাক্ষসটা ওকে ছেড়ে দিতে গিয়েও আবার কাছে টেনে নিয়ে বলেছে মুখটা একবার আয়নায় দেখে নিয়ে তারপর বাইরে যেও...কেমন। কথাটা শুনে ও কি বলতে চেয়েছে বুঝতে পেরে লজ্জায় সারা গা শিরশির করে উঠল। তারপরেই মনে পড়ল ও তো একা নয়...আমিও তো...তাহলে তো শুধু আমার মুখটা আয়নায় দেখলে হবে না...
উঠে যাওয়ার আগে এই, দেখি তো বলে ওর দিকে ভালো করে তাকাতে গিয়ে আবছা আলোতেও বুঝলো...ওর মুখে, গলায়, বুকে...আর কোথায় কোথায় লেগেছে কে জানে। ইশ, এই জন্যই ছোড়দিটা সিঁথিতে সিঁদুর লাগিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিল এই যাঃ...অভ্যেস নেই তো, বুঝতে পারিনি...একটু বেশী হয়ে গেল। যাকগে, আজ থাক...কাল থেকে না হয় একটু ছুঁইয়ে দেবে...বুঝেছো...
দেখতে দেখতে বর্ষা চলে গিয়ে এসেছে শরৎ...উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই এসেছে শীত। তারপর বসন্ত কবে যেন এসে চলে গেছে, ফিরে এসেছে আরো একটা গ্রীষ্ম। এতগুলো দিন যেন স্বপ্নের ভেতরে থেকে কেটে গেছে। কিভাবে যে দিনগুলো এসেছে আর গেছে বোঝার জায়গায় ওরা ছিল না। সবাই নাকি বলে ওরা মেড ফর ইচ আদার। একজনকে ছাড়া অন্যজনকে নাকি ভাবাই যায় না। না বললেও অবশ্য কোনো ক্ষতি ছিল না... কে কি বললো তাতে ওদের কি যায় আসে...ওরা দুজনে দুজনায় মশগুল থেকেই খুশী...
সারা দুপুর কাটফাটা রোদ ছড়িয়ে সুর্য এখন মুখ লুকিয়েছে ঘন কালো মেঘের আড়ালে। আকাশে বাতাসে কালবৈশাখীর আভাস, চারদিক থমথম করছে। যে কোন মুহুর্তেই ঝড় শুরু হবে হবে করছে। হাতে হাত লাগিয়ে ছাদের টব গুলোকে নামিয়ে দেওয়া হয়ে গেলে শুক্লাদি নীচে গেছে। ঝড় ওঠার আগে জানলাগুলো আটকে না দিলে আবার সারা বাড়ী ধুলোয় ভরে যাবে। মৌ একা একা দোলনাতে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল...মনটা খুব একটা ভালো নেই। না থাকার কারন আর কিছুই নয়...অরিত্র বাড়ীতে নেই, অফিসের কাজে বাইরে আছে।
এই দোলনাটা আগে ছিল না...এই তো গত বছর পুজোর পর লাগানো হয়েছে...শুধু দোলনাটা নয়, তার সাথে মানানসই একটা ছাউনিও আছে...প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে চেয়ে একা একা বসে থাকলেও কিভাবে সময় কেটে যায় বোঝাই যায় না। দেখলে মনে হবে যেন এক টুকরো একটা বাগান...ছোট্ট একটা চারদিক খোলা কুঁড়ে ঘর...আর তার মাঝে এই দোলনাটা...কতদিন মাঝ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর ওরা দুজনে এসে এখানে বসে গল্প করেছে...কখোনো বা শুধুই দুজনে দুজনের সান্যিদ্ধ উপভোগ করেছে চুপ করে বসে থেকে...
পরের দিন দুপুরের পর থেকে মৌয়ের জ্বর এসেছে, সাথে গা হাত পা ব্যাথা। একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে ছিল ও, সামান্য জ্বর হলেও বলতে গেলেই তো আবার সবাই চিন্তায় পড়ে গিয়ে ওকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। ভেবেছিল বিকেলে অরিত্র ফিরে আসার আগে জ্বর কমে যাবে হয়তো, তেমন কিছু তো নয়...বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য সর্দি জ্বর। কাল বিকেলে একা একা ছাদে বসে থাকতে থাকতে মনটা খুব উদাশ হয়ে গিয়েছিল...এমনিতেই ও বাড়ীতে নেই, মনটা একেবারেই ভালো ছিল না... তার উপরে দুপুরের গায়ে জ্বালা ধরানো গরমের পর মরশুমের প্রথম বৃষ্টি...ও আজ বাড়ীতে থাকলে দুজনে মিলে বৃষ্টিতে ভিজতাম ভাবতে গিয়ে আরো যেন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল...ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন উঠে গেছে বুঝতে পারেনি হয়তো...কেমন যেন একটা ঘোরের ভেতরে থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বেশ কিছুক্ষন পর শুক্লাদির ডাকে ফিরে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল...
অরিত্র বাড়ী ফিরে এসে জোর করে ডাক্তার দাদুর কাছে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। যাওয়ার আগে সামান্য জ্বরে এত চিন্তা করার কি আছে বলতে গেলে মৃদু বকুনি খেয়েছে ওর কাছে কাছে। দাদু দিদানরা আদর করে ওকে বকে দেয় অনেক সময় কিন্তু তাতে ওর কিছু মনে না হলেও অরিত্র কেন বকে দিল ভেবে অভিমানে বুক ভরে গিয়েছিল...
ডাক্তার দাদুর ওষুধ খেয়ে রাতে জ্বর কিছুটা কমে গেলেও পুরোপুরি নেমে যায়নি, তার উপরে আবার বেশ কিছুটা দুর্বলতাও ছিল। অরিত্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে আস্তে করে উঠে বসেছে। জ্বর একেবারে না কমে যাওয়ায় কিছুটা হলেও চিন্তা ছিল। আজকাল আবার সামান্য জ্বর থেকেও কতকিছু হচ্ছে শোনা যায়। এখুনি না শুয়ে পড়ে আরো কিছুক্ষন দেখে না হয় ঘুমোবে ভেবে রিডিং লাইটটা জ্বালিয়ে একটা বই পড়ার কথা ভাবতে ভাবতে মৌয়ের ডাকে সাড়া দিতে হল...ও ঘুমোয় নি, দুর্বলতা থাকায় সাড়া ছিল না দেখে অরিত্র ভেবেছিল ও ঘুমিয়ে পড়েছে। কাছে সরে গেলে মৌ ওর হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরে কি যেন বলল দেখে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কষ্ট হচ্ছে কিনা। আস্তে করে শুধু না বলে ও চুপ করে থাকলে অরিত্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমোবার চেস্টা করতে বললেও ও শোনেনি...এমনিতেই শরীর খারাপের জন্য গলা ভারী হয়েছিল...অভিমানী গলায় বলেছে... না, ঘুমোবো না...তুমি বকলে কেন আমায়...তোমার কথা ভাবতে গিয়েই তো ভিজতে ইচ্ছে হয়েছিল...
ওর অভিমান ভাঙ্গাতে আদর করতে হয়েছে... অনেক কথা বলতে হয়েছে... বুকে মাথা রেখে ও চুপ করে থেকে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেও অরিত্র ঘুম আসছিল না...অভিমান ভাঙ্গাতে পেরে ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা ভালো লাগায় ভরে উঠল...দুটো দিন মাত্র দুজন দুজনকে কাছে পায়নি...তাতেই যেন মনে হচ্ছিল কতদিন পরে দেখা হয়েছে...কত যেন কথা জমে আছে বুকের ভেতরে...
বালিশের পাশে রাখা ডাইরিটা আগে খেয়াল করেনি...কি মনে করে হাতে নিয়েছে... দেখবো কি দেখবো না করেও প্রথম পাতার দিকে তাকিয়েছে... ঝরঝরে মুক্তোর মত গোটা গোটা হাতের লেখা... দু চারটে লাইন পড়েই বুঝতে পারলো এটা শুধু ডাইরী বললে ভুল হবে...এটা ওর ওর মনের আয়না......কোনো কিছুই গোপন করা নেই...পাতা গুলো উলটে যেতে যেতে এক জায়গায় চোখ আটকে গেল...
ফিরে এলাম আবার...
অনেক দিন ডাইরী লেখার সময় পাইনি...কি করে লিখবো বলো...এখন তো আর আমি একা নই...আমাদের বিয়ে হয়ে গেল...তারপর আমরা গেলাম হানিমুনে...ফিরে এসে আবার এখানে ওখানে যাওয়া...সময়ই পাইনা...দাদু দিদানরা তো আছেই...সাথে আছে একজন খুব দুষ্টু...দুপুরে যখন লিখতে বসি... শুধু তার কথা মনে পড়ে যায়...কাল সারাদিন কি করলাম...কি কি হয়েছে...কিছুই মনেই পড়তে চায় না...তবুও জোর করে লিখতে শুরু করছি আজ থেকে...এই, শোনো না...পড়তে গিয়ে হাসবে না কিন্তু...জানোই তো আমার লজ্জা করে...তাই তো তোমায় দিই না পড়তে...কখোনো বা যদি তোমার হাতে আমার ডাইরীটা পড়ে গেছে দেখেছি...তোমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছি...তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে খুনসুটি করে যাও...দেবো দেবো করেও দিতে চাওনা...আমি কি জানি না নাকি, কেন তুমি ওরকম করো...আসলে তোমার তখন আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে তাই তুমি...ইশ, না...না...শুধু তো তুমি নয়...আমারও তো তোমার ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে... আচ্ছা থাক এখন ওসব কথা...এবারে লিখি...কেমন...
আমাদের প্রথম রাত...ফুলশজ্জা...
আমাদের প্রথম রাতের কথা লিখতে গিয়ে পারলাম না...ওই রাতটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন ছিল বুঝতে পারছি না...মনে করে করে লিখতে গিয়ে শিউরে উঠছি...তোমাকে কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছে...ধ্যাত...থাক...পরে কখোনো লিখবো...তার থেকে বরং পরের দিন থেকে শুরু করি.....
আবার কাছে পেলাম তোমায়...
আমাদের ফুলশজ্জার পরের দিন দুপুর...বাড়ীতে আত্মীয় স্বজনরা থাকায় ছেলেদের আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল...বাকি ছিলাম আমরা মেয়েরা... খেতে বসে গল্প করতে করতে দেরী হয়ে গিয়েছিল আমার ফিরে আসতে...তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে দেখে আর ডাকিনি, ফিরে এসে ছোড়দির সাথে গল্প করছিলাম...মনটা পড়ে ছিল তোমার কাছে...খুব ইচ্ছে করছিল তোমাকে একবার দেখে আসি। লজ্জায় যেতে পারছিলাম না...জানোই তো তোমার বোন কেমন বিচ্ছু...পেছনে লেগে মাথা খারাপ করে দেয়। তারপর কি হয়েছে বলোতো...আমরা সবাই মিলে ছাদে যাচ্ছিলাম...মিষ্টিরা সামনে, আমি আর ছোড়দি পেছনে...আমাদের শোয়ার ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছোড়দি আমার হাতটা ধরে ইশারা করেছে ভেতরে যেতে...আমি লজ্জায় মুখ নীচু করে নিয়ে মাথা নেড়ে বলেছিলাম...না থাক...ছোড়দি জোর করে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা টেনে দিতে গিয়ে বলেছিল...আমি উপরে আছি...দেখা করে চলে এসো... তারপর... ছোড়দি চলে গেছে বুঝে গিয়ে আমি এক পা এক পা করে তোমার দিকে এগিয়ে এসেছি...তুমি কোল বালিশটা বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছিলে...তোমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা করছিল...ভীষন ইচ্ছে করছিল তোমাকে আলতো করে চুমু দিই...আদর করি...এত কিছু ইচ্ছে করলেও চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম...কেউ যদি এসে যায় ভেবে লজ্জায় কিছু করতে পারছি না আবার ওদিকে সময়ও চলে যাচ্ছে...এখুনি আমাকে আবার ফিরে যেতে হবে ভেবে বুঝতে পারছিলাম না কি করবো...না থাক, এখন যাই ভেবে ফিরে আসবো বলে দরজার কাছে ফিরে এসে কি মনে করে পেছন ফিরে তাকিয়েছি তোমার দিকে... তুমি তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে...তোমার চোখে চোখ আটকে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো...তারপর...তোমার দুচোখের নীরব ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি...ত্রস্ত হরিনীর মতো দৌড়ে এসে কোনো কিছু না ভেবেই ঝাঁপ দিয়েছিলাম তোমার বুকে...তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে...আমিও হয়তো তাই করেছিলাম...কে কাকে বুকে চেপে ধরে পিষে ফেলতে চেয়েছিলাম জানি না...তারপর হয়তো খেয়াল হয়েছিল আমাকে দেখতে না পেলে ভাইবোনেরা কেউ ফিরে আসতে পারে। আস্তে করে বলেছিলাম ...এই ছাড়ো। ছাড়ার ইচ্ছে একেবারেই নেই তো ছাড়বে কেন ভেবে হয়তো তুমি বলেছিলে...একটু তো ঘুমিয়ে নিতে পারতে। ইচ্ছে তো করছিল তোমার পাশে থাকতে, ওরা না ছাড়লে কি করবো ভেবে বলেছিলাম ...কেন, আজ রাতেও ঘুমোতে দেবে না...আবার দুষ্টুমি করবে? তুমি কি বলেছিলে যেন...ও হ্যাঁ...তুমি বলেছিলে হু, করবোই তো...তোমার কথা শুনে আমি বলেছিলাম...ইস, কোরবোই তো...এত আদর করলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করবে নাকি তোমাকে? তুমি বলেছিলে ...না ছাড়তে ইচ্ছে করলে ছাড়বে না... সবাই কি ভাববে বলোতো বললে তুমি বলেছিলে... সে যা ভাবে ভাবুক... আমার কি...
ঠিকই তো...তোমার কি...তুমি তো আমাকে ছাড়া আর কিছু জানো না...বোঝো না...জানতেও চাও না...বুঝতেও চাও না...
অরিত্র মন দিয়ে ওর লেখা পড়তে পড়তে ভালোলাগার রেশ বুকে নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পর ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলো আগের থেকে ঠান্ডা, জ্বর একটু কমেছে বুঝে মুখ নামিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে আবার পড়তে শুরু করেছে...
মধুচন্দ্রিমা
সত্যিই কি মিষ্টি শব্দটা...দুটো সুখী হৃদয়ের নিজেদের ভেতরে একাত্ম হয়ে গিয়ে নিজেদেরকে নতুন করে জানার...নতুন করে চেনার.......একে অপরকে বোঝার আর এক নাম....... ম-ধু-চ-ন্দ্রি-মা...
জানি, আমার মতো সুখ সবাই পায় না...সবাই তো আর তোমার মতো ভালবাসতে জানে না আর ভালোবাসা পেতে জানে না। হ্যাঁ, ঠিকই তো ভালোবাসতে গেলে ভালোবাসা নিতেও জানতে হয়...তাই না?
জানো তো...একটু একটু করে আমাদের যাওয়ার সময় যত এগিয়ে আসছিল...আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতিতে ভরে উঠছিল...ঠিক কিসের অনুভুতি আমাকে জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবো না...সেই অনুভুতি শুধু নিজে অনুভব করা যায়...মুখ ফুটে কাউকে বলা হয়তো যায় না...এতদিন তোমাকে একভাবে দেখার পর...বোঝার পর... সবেমাত্র তোমার ভেতরের আসল মানুষটাকে বুঝতে শুরু করেছি...তোমার সব কিছুই যেন একেবারে নতুন ভাবে আমার কাছে ধরা পড়ছে একটু একটু করে...নতুন করে চেনার ঠিক সেই মুহুর্তে তোমাকে একেবারে নিজের মতো করে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা যেন আমাকে অস্থির করে তুলছিল...ইশ, না না...তুমি আবার হয়তো ভাবছো যে আমি শুধু ওইসবের কথা ভেবে অস্থির হয়ে পড়ছিলাম...উঁ হু...কথাটা একেবারে সত্যিও নয় আবার একেবারে মিথ্যেও নয়...তোমার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেবার ভেতরে যে কি সুখ তা কি আমি বুঝি না... নাকি চাই না...সাথে সাথে তোমাকে আরো বেশী করে জানার ইচ্ছেটাও ছিল...মনটা ছটপট করে উঠতো...তুমি আর আমি একেবারে নিজেদের মতো করে একে অপরকে কাছে পেলে...তুমি কি করো...কিভাবে আমাকে দেখতে চাও...কিভাবে পেতে চাও জানার জন্য... সাথে সাথে আমাকেও কি করতে হবে ভাবতে শুরু করেছি...আমারও তো তোমাকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল...আমি যেমন তোমাকে জানতে চাইছি তেমনি তুমিও তো আমাকে আরো বুঝতে চাইতে...তাই না...
দেখতে দেখতে আমাদের যাওয়ার দিন এসে গিয়েছিল...আমরা দুজনে এক বৃষ্টির দুপুরে পৌঁছেছিলাম গোয়া। ভেবেছিলাম আর পাঁচটা হোটেলের মতোই হবে আমাদের হোটেল...সমুদ্রের দিকে মুখ করে আর পাঁচটা হোটেলের মতোই একটা বিল্ডিং... জানো তো কি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ওখানে পৌঁছে...চারিদিকে শুধু সবুজ...কিছু চেনা আর কিছু না জানা কতরকমের গাছ, কোনটা ফুলে ভরা, কোনটায় শুধু পাতা...তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট ছবির মতো সুন্দর এক একটা কটেজ...আমাদের কটেজটা একেবারে উপরের দিকে ছোট্ট একটা টিলার উপরে...বেশ কিছুটা নীচে সমুদ্রের নীল জল...এতদুর থেকে ঢেউগুলোও যেন কত ছোট দেখাচ্ছে... ভেতরে ঢুকে আরো একবার অবাক হবার পালা...এত সুন্দর সাজানো গোছানো...ছবিতে দেখেছি এর আগে কিন্তু ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে নিয়ে আসবে এরকম একটা জায়গায়। আমাকে অবাক হয়ে যেতে দেখে আরো কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা... তোমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে থেকে বুঝিয়েছিলাম আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে...আর তার থেকেও বড় কথা তুমি সাথে থাকলে এই পৃথিবীর যে কোন জায়গাই আমার কাছে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর...
বিশ্বাসই হচ্ছিল না শুধু তুমি আর আমি...আর কেউ কোথাও নেই...কোনো কিছু ভাবার নেই। দুজনে মিলে যখন যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি...সময়ের কথা কে মনে রাখবে বলো... এক একটা মুহুর্ত যেন এক একটা স্বপ্নের টুকরো। তুমি চাওনি সেই স্বপ্নের টুকরো গুলোকে শুধুমাত্র শরীরের কথা ভেবে গুঁড়িয়ে দিতে..ঘন্টার পর ঘন্টা কিভাবে কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না...কখোনো বা পাশাপাশি বসে থাকা...কখোনো বা হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাওয়া, সব কিছুতেই যেন আমরা খুশী ছিলাম। তোমার আমাকে নিবিড় করে চাওয়ার সেই সব মুহুর্ত গুলো যেন আজও আমার মনে গেঁথে আছে। আমার সব থেকে ভালো কি লেগেছিল জানো? তুমি একবারের জন্যও চাওনি আমার স্বাভাবিক স্বভাবে কিছু পরিবর্তন আসুক...তুমি চেয়েছিলে তোমার মৌমি সোনা সেই আগের মতোই একটু নরম...একটু লাজুক থাকুক...আমি তোমার অনেক কাছের হয়ে গেলেও যেন থাকে কিছু অদেখা...অচেনা...তুমি মুখে কিছু না বলেও বুঝিয়েছিলে সবই যদি দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যায় তাহলে কি আর দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেটা থাকবে? থাক না একটু আড়াল...
একদিন তুমি আমাকে সাজিয়েছিলে নিজের মতো করে... গলায় পরিয়ে দিয়েছিলে গুলঞ্চ ফুলের মালা, চুলে গুঁজে দিয়েছিলে আরো দুটো ফুল...শুধু কি তাই? হাতেও ছিল ফুলের বালা। তুমি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলে...আয়নায় নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিলাম না...ঠিক যেন আমি কোনো স্বল্পবাস দ্বীপবাসীনি... লাজুক মুখে চুপ করে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম... আমার অবাধ্য চোখ দেখতে চাইছিল তোমাকে..নিজের অজান্তেই মুখ তুলে তাকিয়েছিলাম... তুমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে...ভাবছিলাম, দুষ্টুটা এখন কি কিছু ভাবছে নাকি শুধুই দেখে যাচ্ছে? না না...শুধু তো দেখছে বলে মনে হচ্ছে না...ওর চোখ দুটো যেভাবে বুজে আসছে মাঝে মাঝে তাতে তো মনে হচ্ছে যেটুকু আবরন আছে আমার শরীরে তা না থাকলে কি হোতো তাই ভাবছে। ইস, কি অসভ্য...না, আমি আর পারছি না এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে...কেমন যেন শিহরন জাগছে... পা দুটো থরথর করে কেঁপে উঠছে...তুমি হয়তো বুঝেছিলে আমাকে...কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলে পাশ ফিরে যেতে চেয়েছি, না...কিছুতেই দেখতে দেবো না তোমাকে... ওইভাবে আবরনের আড়ালে থেকেও নিরাবরন হয়ে যেতে তোমার মনের ক্যমেরায়...শুনবে নাকি তুমি আমার কথা...চুমু দিতে দিতে তোমার একটা দুষ্টু হাতটা কোথায় যেন ঘোরা ফেরা করছিল...আঃ, ইস...উমমম...না-আ...করে বাধা দিলে শুনছেটা কে? আমার নাকের পাটা নাকি ফুলে ফুলে উঠছিল, ফর্সা মুখে রক্ত জমে গিয়ে নাকি আরো মিষ্টি দেখাচ্ছিল...চোখ খুলে রাখতে না পেরে তোমাকে নিজের উপরে টেনে নিয়ে আশ্লেষ ভরা গলায় বিড়বিড় করে কি বলেছি নিজেই জানি না... তারপর? কি জানি তারপর কি হয়েছিল...তুমি কি আমাকে আর কিছু মনে রাখার সুযোগ দিয়েছিল?
আরো একটা রাতের কথা কি ভুলতে পারবো নাকি কখোনো? মাঝ রাত কখন পেরিয়ে গেছে জানিই না... আমাদের কটেজের সামনের বাগানে দোলনায় আমরা দুজনে...তোমার বুকে মাথা রেখে আমি শুয়েছিলাম...আকাশে ঘন মেঘ...মাঝে মাঝে উল্টোপাল্টা হাওয়া এসে চারদিকের গাছগুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। পাশের নারকেল গাছ থেকে একটা ডাবের কুশি খসে পড়ল একটু দুরেই... দোলনায় তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে একবার মুখ তুলে ভালো করে তোমার বুকে নিজেকে আটকে রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল...নাই বা গেলাম আজ শুতে...এখানেই থেকে যাই না আজ রাতটা... এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি জল গায়ে এসে পড়ছে...পড়ুক না...কি আসে যায় তাতে...
আস্তে আস্তে বৃষ্টির জোর বাড়ছে...একটু কি শীত শীত করছে? তাই হবে হয়তো...দুরের গার্ডেন লাইটের আবছা আলো বৃষ্টি ভেদ করে এতদুর আসছে না ঠিক...আলো আঁধারের লুকোচুরি আর ঝমঝম বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে দুই প্রেমিক হৃদয় চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছে একে অপরকে...কোথায় আছে বোঝার কিছু আছে কি? দোলনাতে চুপচাপ শুয়ে থাকা যায়...আদর করা যায় কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু? কখন আমাকে বুকে তুলে নিয়ে তুমি গার্ডেন চেয়ারে চলে এসেছে বোঝার দরকার হয়তো ছিল না...তারপর? তারপর তোমার সেই পৃথিবী ভোলানো ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলে...আমিও পারিনি নিজেকে আটকে রাখতে...আমাদের আকাঙ্খার উত্তাপে বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের শরীরকে আর ভেজাতে না পেরে হয়তো বাস্প হয়ে ফিরে যাচ্ছিল... হয়তো জ্ঞান হারিয়েছিলাম তোমার আমার সেই ভালোবাসার স্ত্রোতে ভেসে যেতে যেতে...তারপর একটু একটু করে আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমাকে...তুমি আমাকে বুকে আগলে রেখেছিলে...কি যে হয়েছিল তারপর কে জানে আমার...এই খোলা আকাশের নীচে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ ভাবতে গিয়ে কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছিলাম না...কিভাবে যে টাওয়েলটা গায়ে জড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম কে জানে...তুমি ফিরে এলে আমার পেছনে পেছনে...ভীষন অভিমান হচ্ছিল যখন তুমি আমার দিকে তাকিয়েছিলে দুষ্টুমির হাসিতে তোমার মুখ ভরিয়ে...ভাবছিলাম...না তাকাবো না তোমার দিকে...অসভ্য, জংলী একটা ভুত...ছি ছি...লজ্জা নেই...যদিও এত রাতে ওখানে কেউ থাকার কথা নয়...তবুও কেউ দেখেছে কিনা কে জানে ভাবতে ভাবতে শুনলাম এই, সোনা...তাকাও প্লিজ...তোমার অনুনয়ের গলায় বলা কথাগুলো শুনেও আমি জেদ করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম...তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়ালে...আমাকে বোঝাবার চেস্টা করলে...আমি কি পারবো বলো তোমার কথা ফেরাতে...সবকিছু ভুলে গিয়ে তোমার হাতের বাঁধনে নিজেকে সমর্পন করেছিলাম ...আবার সেই সুখের মুহুর্ত গুলোর কথা মনে পড়ে গেলে আর নিজেও কি করেছি মনে পড়ে গেলে লজ্জা পেয়ে গিয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে শুনলাম এই, চলো স্নান করে আসি। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলেছিলাম...উমম না...এক সাথে না...তুমি আবার দুষ্টুমি করবে। আমি না না করলে কি হবে...তুমি কি শুনবে নাকি? ঠিক সেই আমাকে কোলে করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে... এত সময় বৃষ্টিতে ভেজার পর ভীষন শীত করছিল...তোমার বুকের ভেতরে কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি...দুজনে মিলে থেকে উষ্ণ জলের ধারায় ভিজতে ভিজতে অনুভব করেছিলাম তোমার আকাঙ্খার উষ্ণতা...একটু একটু করে সেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছিল আমার সারা শরীর মনে...আবার আমরা দুজনে হারিয়ে গিয়েছিলাম দুজনায়...
আর পারছি না গো লিখতে আজ...পরে আবার লিখবো ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সেই গানটার কথা... ‘আজ তবে এইটুকু থাক... বাকি কথা পরে হবে’...
আমার আকাশ
উমম...আ-মা-র আ-কা-শ...আচ্ছা বলোতো...আমার আকাশ...এটার মানে কি? হুম...কি এত ভাবছো বলোতো...ইশ...বলতে পারলে না তো? আচ্ছা শোনো...আমার আকাশ মানে হচ্ছে...তু-মি...শুধু তুমি। জানোতো...তুমি আমাকে যখন মৌ-মি বলে ডেকেছিলে...তোমার মুখে যেন আরো মিষ্টি লাগছিল শুনতে...তখনই আমার ইচ্ছে করছিল...তোমাকেও এমন একটা নামে ডাকবো যা শুধু তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। অনেক ভেবে ভেবেও কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলাম না কি নামে তোমাকে ডাকা যায়। ভীষন খারাপ লাগতো...কাঁদতে ইচ্ছে করতো। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তুমি ভাবতে হয়তো আমার মন খারাপ... বার বার জানতে চাইতে কি হয়েছে..তোমাকে বলতে পারতাম না কেন আমার মন খারাপ...আরো খারাপ লাগতো।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে... একদিন সন্ধের মুখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একা একা...সূর্য অস্ত গেছে অনেক আগেই...পুর্নিমার মিষ্টি চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যেতে শুরু করেছে...তোমার কথা ভাবতে ভাবতে দেখছি আকাশের বুকে নাম না জানা এক নিঃসঙ্গ পাখীর উড়ে যাওয়া... মুগ্ধ চোখে তার উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে খুশীতে বুক ভরে উঠেছিল...ওই পাখীটার মতোই তো আমি... মনে পড়ে গেল তোমার লেখা কথাগুলো...সবাই যখন তোমাকে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বলেছিল তখন তো তুমি আমাকে ফেলে চলে আসোনি স্বার্থপরের মতো... কোনো কিছু না ভেবেই বুকে আগলে রেখেছিলে...নিয়ে এসেছিলে সাথে করে একটা অসহায় অজ্ঞান মেয়েকে... হারিয়ে যেতে দাওনি তাকে...আকাশের মতোই বিশাল হৃদয় নিয়ে তোমার বুকে আশ্রয় দিয়েছিলে...তাই তোমাকে আমার আকাশ ছাড়া আর কি নামে ডাকবো বলো...
তোমার ছোট্ট ইচ্ছে
বাড়ীতে শাড়ী, সালোয়ার কামিজ বা অন্য যা খুশী একটা পরলেই হয়... আর কারুর কোনো আপত্তি নেই তো কি হয়েছে তোমার তাতে ভীষন আপত্তি আছে তবে সেটা শুধু বিশেষ সময়ের জন্য...অন্য সময় যাই পরি না কেন তোমার কিছু বলার নেই...আমি নাকি যাই পরিনা কেন তাতেই আমাকে ভীষন সুন্দর দেখায়...কি জানি তাই হবে হয়তো...তোমার চোখেই তো আমি নিজেকে দেখতে পাই। শুধু তোমার ইচ্ছেতেই ছুটির দিনের সকালে স্নান করার পর শাড়ী পরতেই হবে আমাকে...না হলে যে তুমি আবার অভিমান করে বসে থাকবে। স্নান করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ীটা ঠিক করে পরতে গিয়ে তাকাবো না ভাবতে ভাবতেও নিজের অজান্তে আড় চোখে তোমার দিকে তাকাবো...আমি তোমাকে ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর তুমি তোমার পুরোনো সঙ্গীকে খুঁজে পেতে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে চুপ করে শুয়ে আছো দেখে নিজের কাজে মন দেবো। তোমার দিকে আর ফিরে না তাকালেও আমি জানি বুকের আঁচলটা সরিয়ে আবার ঠিক করে নেওয়ার সময়টুকুতে তুমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে। কি যে ভালোবাসো শুধু দেখে যেতে তা হয়তো শুধু তুমিই বোঝ। তুমি ভালোবাসো দেখে যেতে তাই হয়তো আমার যেন কিছুতেই ইচ্ছে করবে না তাড়াতাড়ি আঁচলটা ঠিক করে নিতে...তোমাকে দেখাবার অছিলায় বারে বারে মনে হবে...কোথায় ঠিক করা হল আমার বুকের আঁচল...শুধু কি তাই নাকি...হাঁটু ভাঁজ করে পা দিয়ে শাড়ির পাড় চেপে ধরে শাড়ীটাকে আরো কিছুটা নামিয়ে দেওয়া দেখতে নাকি তোমার এত ভালো লাগে যে বলে বোঝাতে পারবে না। তারপর? তারপর...তোমাকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি কপট শাষন করার ভঙ্গীমাতে চোখ পাকিয়ে তাকালে নাকি তোমার ঠিক তখনই আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে...আর তাই আমাকে তারপর তোমার কাছে এগিয়ে যেতে হয়...কাছেই যখন এসেছি তখন কি আর এমনি এমনি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি...তোমার চোখে চোখ রেখে কি যেন ইচ্ছে করবে আমার আর তাই তোমার আরো কাছে এসে আলতো করে একটা ছোট্ট চুমু দিতে হয়...তাতে তোমার ইচ্ছেটা আরো একটু বাড়বে...দুহাত বাড়িয়ে দেবে...তাই তো আমার নিজেকে সমর্পন করতে হবে তোমার দুহাতের বাঁধনে... তুমি আমার বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে থাকবে...আমি শিউরে উঠতে উঠতে অস্ফুট স্বরে এই ছাড়ো বললে আরো বেশী করে মুখ গুঁজে দেবে বুকে...মুখ ঘষতে ঘষতে বলবে...উমমম...না ছাড়বো না...তারপরে আমাকে টেনে নেবে আরো কাছে... আমার বুকের আঁচল যেন তোমার ছোঁয়া পেয়ে নিজেই হারিয়ে যাবে একটু একটু করে...তুমি বুক ভরে আমার সদ্যস্নাত শরীরের সুগন্ধ নিতে নিতে আরো কিছু পেতে চাইবে...তোমার দুষ্টুমির সাথে আমি পেরে উঠবো না নাকি নিজেই ছাড়া পেতে চাইবো না কে জানে...কখন যে তোমার আমার মাঝের শেষ আবরনটুকু হারিয়ে যায় তুমিই জানো...তারপর তোমার দুষ্টু ঠোঁট দুটোর ছোঁয়া পেয়ে আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ফেলতে মনে হয়... ইশ, আর নয় এখন...ফিস ফিস করে বলি...এই...ছাড়ো...লক্ষী সোনা আমার... একবার নয় দুবার নয়...বারে বারে শুনেও তুমি আমাকে ছাড়তে চাও না...তারপর কি মনে করে নিজেই ছেড়ে দিয়ে দুষ্টুমি ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে যেন বলতে চাইবে...তোমারও তো ভালো লাগছে তাই না? আমি লজ্জা পেয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজেকে তোমার চোখের আড়ালে নিয়ে যেতে যেতে নিজের মনেই বলবো...লাগে তো ভালো...ভীষন ভালো...