Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#16
গ্রামের কিসব জরুরী মিটিং থাকায় দাদু আর মামা একটু আগে বেরিয়ে গেলেন, আজকাল নাকি গ্রামের ব্যাপার ট্যাপার একেবারেই পালটে গেছে, তাই না গেলে নয়। মৌ ওদিকে ওর দিদাদের সাথে গল্প করছে দেখে অরিত্র বাইরের বারান্দায় একা বসে ছিল। খুব একটা যে খারাপ লাগছে তা নয়, বরং একা একা চুপচাপ নিজের মতো করে বসে থাকতে ভালোই লাগছে। এই কিছুক্ষন আগেও টিম টিম করে বাতি জ্বলছিল কিন্তু একটু আগে যে সেই কারেন্ট গেল আর ফিরে আসার নাম নেই। অবশ্য তাতে যে খুব একটা কিছু অসুবিধা হচ্ছে তা নয়। নিস্তব্ধ গ্রামের নরম চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া দেখার সৌভাগ্য এখানে না এলে হয়তো কোনোদিনই হতো না। সন্ধের মুখে এত কিছু খাওয়ার অভ্যাস নেই তার উপর এত রাস্তা গাড়ী চালানোটাও কম ঝক্কির নয়, বেশ ক্লান্ত লাগছিল, চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়ছে দেখে মামীমা ডেকে নিয়ে গিয়ে ওর শোয়ার ব্যবস্থা করে দিল। দোতলার দক্ষিনমুখো ঘর, খোলা জানলা দিয়ে ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া আসছে... ঘুম আসতে তাই আর দেরী হয়নি। ঘুমের ভেতরে থেকে মনে হচ্ছিল কেউ যেন ডাকছে মিষ্টি গলায়এইওঠো না
অরিত্র কোনোরকমে চোখ খুলে প্রথমে কিছু বুঝতে পারছিল না কোথায় আছে। আস্তে আস্তে ঘুমের ঘোর কেটে গেলে টিমটিমে আলোয় মৌকে ওর পাশে বসে থাকতে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলোবোধ হয় স্নান করে নিয়েছেদুধ সাদা সালোয়ার কামিজ, কপালে ছোট্ট কালো টিপ...অবাধ্য চুলের গোছা মুখের উপরে এসে পড়তে চাইছে...অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল ওকে। সাথে সাথে সেই চেনা মেয়েলী সুগন্ধ বুক ভরে টেনে নিতে নিতে ওর হাতটা বুকে চেপে ধরে পাশ ফিরে আবার চোখ বুজে শুয়ে থাকলে মৌ আস্তে করে বলল এইছাড়োকোনো জবাব না দিয়ে ওর হাতটা আরো ভালো করে বুকে চেপে ধরলে মৌ মুখ নামিয়ে কানের পাশে ফিস ফিস করে বলললক্ষীটি ছাড়োকেউ এসে যাবে
-              উমমছাড়তে ইচ্ছে করছে না
-              এই...
-              আসুক নাআমি তো শুধু তোমার হাত ধরে আছি
 
খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল জানলার পাশের আম গাছটায় বসে থাকা কোনো নাম না জানা পাখীর ডাক শুনে। কাল রাতের কথা মনে পড়ে যেতে লজ্জায় সারা শরীর শিরশির করে উঠল। এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়দুষ্টুটা শুধু ওর হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরে ছিল, কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না দেখে চুপ করে ওর পাশে বসে থাকতে থাকতে খুব ইচ্ছে করছিল জড়িয়ে ধরতেকেউ এসে গেলে কি হবে ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মামন দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেরী দেখে হয়তো মামীমা ওকে দিয়ে ডাকতে পাঠিয়েছিল। ওকে মুখ তুলে তাকাতে দেখে মামন ফিক করে হেসে…’মা খেতে ডাকছেবলেই দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বোনটা কতটা কি দেখেছে বা বুঝেছে ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে তাকালো। মামন কোল বালিশটা জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। মেয়েটা বেশ দেখতে হয়েছেওর দিদির থেকেও বোধহয় আরো মিষ্টি দেখতেবাড়ন্ত শরীরবয়সের তুলনায় হয়তো একটু বেশী বড় লাগে দেখতেযদিও মিষ্টি মুখটাতে একটা নিস্পাপ ভাবপাশ ফিরে শোয়ার জন্য ঢিলে ফ্রকের ফাঁক দিয়ে বাড়ন্ত শরীরের স্পষ্ট হাতছানিহাত বাড়িয়ে আলতো ভাবে ওর ফ্রকটা ঠিক করে দিয়ে নিজের দিকে তাকালো। আশেপাশে কেউ না থাকলেও নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেলওর ও তো একই অবস্থাকামিজের দুটো হুক ঘুমের ভেতরে কিভাবে যেন খুলে গেছেইসকতটা ভেতর অব্দি দেখা যাচ্ছেএমন নয় যে নিজেকে এই প্রথম দেখছেরোজই তো দেখে কিন্তু আজ যেন জীবনে প্রথম বার এত লজ্জা পেল দুষ্টূ ছেলেটার কথা ভাবতে ভাবতেরাতে তো ঘরের দরজা ভেজানো থাকতো আগেএমন হয়নি তো দুষ্টূ ছেলেটা কোনোদিন ওর অজান্তে এসে দেখে গেছেনিজেই নিজেকে বোঝালোনানাও তো এমন নয়এত সুযোগ পেয়েও কাছেই আসতে চায় না তো চুরি করে দেখবে কেনকি দরকার ওর চুরি করে দেখারতারপরেই ভাবলোইসদেখলে দেখুক নাওরই তো দেখার কথাবুকের ভেতরে একটা ভালো লাগার অনুভুতিতে ভরে উঠলআবার কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। ঘুম ভাঙ্গলো মামীমার ডাকেএইমৌওঠঅরিত্রকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে ধড়পড় করে উঠে বসে চোখ কচলে মামীমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললআশে পাশে আছে হয়তো
-              না রেঅর্ক খুঁজে এসেছেকোথাও নেই...
-              গাড়ীটা কোথায়?
-              নিচেই আছে
-              ফোনটা আছে?
-              কি জানিতুই একবার দেখ না মাখুব চিন্তা হচ্ছে রে
মামীমার চিন্তাটা ওর বুকের ভেতরটা তোলপাড় করতে শুরু করে দিলতাড়াতাড়ি উঠে দক্ষিনের ঘরটায় গিয়ে বালিশের পাশে মোবাইলটা পেয়ে গিয়ে আর কিছু ভাবতে পারছিল নাকোথায় যেতে পারে? এমন কিছু তো হয়নি যে না বলে চলে যাবেতাছাড়া গাড়ী ছাড়াই বা কিভাবে যাবে? বুকের ভেতর থেকে এক দলা কান্না উঠে আসতে চাইছেকোনো রকমে নিজেকে সামলে অর্ককে বললভাইআর এক বার দেখ নাকোথায় আর যাবেএখানেই কোথাও আছেতুই হয়তো ঠিক করে দেখিস নি
নিচের বারান্দায় দাদুরা সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে, কারুর মুখে কথা নেইমামা উঠোনে পায়চারী করতে করতে কাকে যেন ফোন করার চেষ্টা করছেঅর্ক গেট থেকে বেরিয়ে গিয়েই আবার দৌড়ে ফিরে এসে বললদিদিদিদিআসছে। ওর কথা শুনে সবাই যেন প্রান ফিরে পেলওদিকে ওরিত্র গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলপেছনে লালুসবাইকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরিত্র বুঝতে পারছিল না কি হয়েছেজিজ্ঞেস করলকিছু হয়েছে? ওকে নিয়েই যে সবাই চিন্তা করছিল ওর বোঝার কথা নয়মামীমা এগিয়ে গিয়ে বললনা না কিছু হয়নিআসলে তোমাকে দেখতে না পেয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলামনতুন জায়গাতাছাড়াআজকাল এদিকেও শুনছি মাওবাদীরা যাওয়া আসা করছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অরিত্র খুব অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে বললআসলেখুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলকেউ ওঠেন নি দেখে ভাবলাম একবার চারদিকটা ঘুরে আসিআমি ঠিক বুঝতে পারিনি। মৌ এতক্ষন চুপচাপ ছিলএকটু যেন রেগে গিয়ে বললতুমি জানোআমাদের সবার কি অবস্থা
-              না মানেলালু সাথে ছিলআরো আগে চলে আসতাম
দাদু ওর অবস্থা বুঝতে পেরে বললেনআচ্ছাঠিক আছেযা হবার হয়ে গেছেতুমি বাবাহাত মুখ ধুয়ে নাও
 
সবাই মিলে বসে সকালের চা খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, অর্ক আর মামনের জন্য চায়ের বদলে হরলিকস। অরিত্রকে চুপচাপ থাকতে দেখে মামা মৌকে কাছে ডেকে আস্তে করে বললেনচা খেয়ে নিয়ে একবার অরিত্রর সাথে আলাদা করে কথা বলছেলেটা খুব মন মরা হয়ে গেছে। মৌ মাথা নেড়ে জানালো আচ্ছা ঠিক আছে। ওর নিজেরও খুব খারাপ লাগছিলওই ভাবে না বললেই হত। আসলে মামাদের কাছে ও ছোট হয়ে যাচ্ছে এটা সহ্য করতে না পেরে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। একটু পরে মামা বেরিয়ে গেল কাউকে ডাকতে,কাল নাকি খাওয়া দাওয়ার তেমন কিছু ব্যাবস্থা করা যায়নিতাই আজ না করলেই নয়। দাদু অর্ককে সাথে নিয়ে মাছ ধরার জন্য যাদের আসার কথা তারা যদি দেরী করে ফেলে তাই তাগাদা দিতে গেছে। অরিত্র উপরের ঘরে বসে, কয়েকটা ফোন করার ছিলএক এক করে করা হয়ে গেলে জানলার বাইরে বাগানের দিকে তাকিয়ে বসে দুটো শালিক বেশ কিছুক্ষন ধরে ঝগড়া করছেতাই বসে বসে দেখছিল। মনটা একটু খারাপও ছিলনা বুঝে সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়ে নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হচ্ছিল। যতই ওরা মুখে বলুক ঠিক আছে তবুও খুব খারাপ লাগছিল। মৌ ঘরে ঢুকে ওকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, ঠিক কি ভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছিল নাকখোনো ওকে জোর গলায় কিছু বলতে হবে ভাবেনিআজ যে কি হয়ে গেল কে জানে। অরিত্র ওকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললসবাই খুব খারাপ ভাবছে তাই না? আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা এমন জায়গায় চলে যাবে...
-              তুমি আমার উপরে রাগ করেছোতাই না
অরিত্র ওকে একেবারে অন্য কথা বলতে শুনে অবাক হয়ে গিয়ে বললতোমার উপর রাগ করবো কেনঠিকই তো বলেছো
-              সত্যিই রাগ করনি?
অরিত্র, ওর যে কথাটা ওই ভাবে বলে খুব খারাপ লেগেছে বুঝতে পেরে বললউঁ হুঁএক্কেবারে নয়এইএকটু হাসবে? কি বিচ্ছিরি লাগছে...
-              লাগুকআমার কি খারাপ লাগছে আর উনাকে এখন আমায় হেসে দেখাতে হবে
-              আচ্ছা বাবাএখন না হোক পরে না হয় হাসবেএখন বলতো, যে জন্য এসেছি তার একটা তো হয়ে গেছে, বাকি যেটা আছে সেটা কি বলতে পেরেছো?
মৌ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললনাঃকি করে বলবো বুঝতে পারছি না
-              জানতামতো কি করবে?
মৌ ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললএইতুমি বলতে পারবে না?
-              আমি?
-              হুঁ
অরিত্র একটু ভেবে নিয়ে বললকি বলবো? দাদুআমি আপনার নাতনী মৌ-কে বিয়ে করতে চাইঅনুমতি দিন? ওর হাত পা নেড়ে বলার ভঙ্গী দেখে মৌ না হেসে থাকতে না পেরে বললধ্যাততুমি না খালি ইয়ার্কি করপ্লিজকিছু একটা ভাবোকাল তো চলে যাবোতার আগে তো বলতে হবে
-              হুমদাঁড়াওদেখি কি করা যায়আচ্ছা তুমি কি তোমার বাবার ব্যাপারটা বলেছো?
মৌ মুখ নিচু করে নিয়ে বললনাবলতে পারিনিসবাই এত খুশী হয়েছে আমাকে দেখে আর পারলাম না বলতেখুব কষ্ট পাবে
-              ওনারা কিছু জিজ্ঞেস করেন নি?
-              করেছিলআমি অন্য কথা বলে এড়িয়ে গেছি
অরিত্র একটু ভেবে নিয়ে বললবলতে তো হবেইঠিক আছেতুমি চিন্তা কোরো নাআচ্ছাআমার ব্যাপারে কিছু বলেছো?
-              নাতেমন কিছু নয়তবেমাসী আর মামীমা মনে হয় কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে
-              তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিল কি? নাকি তোমার এমনিই মনে হচ্ছে?
-              জিজ্ঞেস করেনিতবে বলছিলছেলেটা কেমনদেখে তো বেশ ভালো মনে হচ্ছেমানেএকটু অন্য ভাবেআমি ঠিক বোঝাতে পারছি না
-              ওক্কেচলোচিন্তা করে লাভ নেই
মৌকে দেখে মনে হল ওর কথা শুনে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হয়ে বললএইআমি যাইমামীমা জিজ্ঞেস করছিল তুমি লুচি বেগুন ভাজা নাকি পরোটা আলুর দমকি খাবে। অরিত্র হেসে ফেলে বললকাল থেকে যা খাওয়া চলছে মনে হয় না সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারবো বলো গিয়ে জল মুড়ি পেলে খুব ভালো হয়
-              ধ্যাততাই আবার বলা যায় নাকি কম করে না হয় খাবে
-              বললে আর কে শুনছে বলো? আতিথেয়তার অত্যাচার যে কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি...
মৌ হেসে ফেলে বলল এইওরকম করে বলছো কেন
 
দাদু আর মামার সাথে বসে জলখাবার খেতে খেতে অরিত্রর কথা হচ্ছিল। মৌকে অর্ক ডেকে নিয়ে গেছে মাছ ধরা দেখতে, মামনও সাথে গেছে, দিদি এসেছে তাই আজ ওরা কেউই কলেজে যাবে না। মামীমা সামনে বসে কার কি লাগবে দেখাশোনা করতে করতে বললএবারে তেমন কিছু খাওয়াতে পারলাম না, আবার কিন্তু আসা চাই। খেতে খেতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর এদিকে মামীমা বলছে নাকি কিছুই খাওয়াতে পারলো না শুনে অরিত্র মজা করে বললএত খাওয়ালেআমি আর আসছি না বাবা। দাদু পাশ থেকে বললেনতোমরা ভাই আজকালকার ছেলেপুলেরা খেতেই পারো নাএ আর এমন কি খাওয়াআমাদের সময়ে যদি দেখতেখাওয়া কাকে বলে। অরিত্র হেসে ফেলে বললআপনাদের সময়ে তো আর আমাদের মতো এতো চাপ ছিল নাধীরে সুস্থে সব কিছু করার সময় ছিল। দাদু ওর কথা শুনে বললেনতা অবশ্য ঠিক তবে তোমাকে কিন্তু ভাই আবার আসতেই হবেনা হলে আমাদের মৌ মাকে কে নিয়ে আসবে বলোওর বাবা তো আর কোনোদিন নিয়ে এলো নাকি যে হয়ে গেলকত করে বলেছিলাম তুমি বিয়ে করতে চাইছো করমেয়েটাকে আমাদেরকে দিয়ে দাও। দাদুর কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো অরিত্রর, খাওয়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করলআপনারা পরে আর যোগাযোগ করেননি? দাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেনতা আর করিনিকতবার ছেলেটা গেছে তার ঠিক নেইকোনোবারই জামাই এর সাথে দেখা হয়নিব্যাবসার কাজে সব সময় বাইরে বাইরে থাকেমেয়েটার সাথেও দেখা করতে দিতো না ওর মা যে ফোন নাম্বারটা ছিল সেটাতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে লাভ হয়নিওদেরই একজন কর্মচারীর কাছে জানা গিয়েছিল জামাইকেও নাকি উল্টোপাল্টা বলতোযাতে আমাদের সাথে না যোগাযোগ রাখেশেষের দিকে তো খুব অপমান করতো শুনে আমিই যেতে বারন করে দিয়েছিলামসেও আজ হয়ে গেল পাঁচ ছ বছরতুমি বাবাআমাকে কথা দাওমৌকে নিয়ে আবার আসবে। অরিত্রর একটু সময় চুপ করে থেকে মনে হল এখনই বলা ভালো, কথা যখন উঠেছে তখন আর দেরী করে লাভ নেই। ও গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বললআমার কিছু বলার আছে মৌয়ের ব্যাপারেএকটু সময় লাগবেবড়রা সবাই থাকলে ভালো হয়।
 
দাদুর কথায় ঘরের আবহাওয়া একটু থমথমে হয়ে গিয়েছিলসাথে সাথে অরিত্ররকেও ওইভাবে বলতে দেখে সবাই যেন কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যি কথা বলতে কি অপ্রত্যাশিত ভাবে মৌকে পেয়ে বাকি কিছুর ব্যাপারে কেউই সেভাবে ভাবতে পারেনি বা সেভাবে কথা বলার সময়ও ছিল না। বাকি ছিল মাসী আর দিদামামীমা গিয়ে ওদেরকে ডেকে নিয়ে এলে অরিত্র বলতে শুরু করলঅনেক কিছু ঘটেছে কিন্তু সবটা হয়তো জানিনা। যেটুকু জেনেছিমোটামুটি ভাবে বলার চেষ্টা করছিএকটু আগে থেকে না বললে বুঝতে পারবেন না তাই আমাকে দিয়েই শুরু করছিআমি ছোটবেলা থেকেই আমার দাদু দিদানের সাথে থাকিমা বাবাকে হারিয়েছি অনেক ছোটোবেলায়বছর দুয়েক আগে একদিন অফিস থেকে ফেরার সময়ে ট্রেনের খুব গন্ডগোলে অনেক রাতে কোনোরকমে ট্রেনে উঠতে পেরেছিলামওখানেই মৌকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়সাথে কেউ ছিল নাবলতে পারেননিতান্তই মানবিক কারনে অত রাতে ওকে ফেলে চলে যেতে না পেরে বাড়ী নিয়ে যাইবেশ কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে উঠলেও কথা বলতে পারতো নাএমনকি ওর স্মৃতিশক্তিও নষ্ট হয়ে গিয়েছিলঅনেক ভাবে চেষ্টা করেওও কেকোথায় বাড়ী জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনিঅনেক ডাক্তারও দেখানো হয়েছিল কিন্তু কিছু লাভ হয়নিডাক্তারদের মতে কোনো শক পেয়ে হয়তো এইসব হয়েছেভালো হতেও পারে আবার নাও হতে পারেএই অবস্থাতে ওকে কোনো সরকারী হোমে পাঠানোর কথা আমরা ভাবতে পারিনি হোমগুলোতে মেয়েদের নিয়ে কি নোংরামো হয়। ততদিনে অবশ্য ওর উপরে আমাদের সবার এত মায়া পড়ে গিয়েছিল যে কিছুটা হলেও রিস্ক নিয়ে আমাদের কাছেই রাখা হয়কিছুদিন পর পূজোর সময় কাকতালীয়ভাবে আমাদেরই পরিচিত একটি মেয়ের কাছ থেকে একটা সামান্য সুত্র ধরে ওর বাড়ীর খোঁজ পাওয়া যায়কিন্তু বাড়ীর কাউকে পাওয়া যায়নি কথা বলার জন্যকোথাও যেন বেড়াতে গিয়েছিল। যে সময়ে ওই খোঁজটা পাওয়া যায় তখন আমরা সবাই মিলে দার্জিলিং বেড়াতে গেছিওখানে আমি একটা দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাই ওর সামনে খুব সম্ভবত আরো একটা শক পেয়ে ওর কথা বলা শুরু হয়েছিল কিন্তু স্মৃতি ফিরে আসেনি
 
অরিত্র এতটা বলে থেমে গেলে কেউ কোনো কথা বলতে পারছিল নাসবাই কেমন যেন একটা অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে অরিত্র যদি ওইদিন ওকে না নিয়ে যেত সাথে করে তাহলে মেয়েটার কপালে কি হতে পারতো ভেবে সবাই যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। দিদা হঠাৎ ডুকরে কেঁদে ফেলে উঠে এসে অরিত্রকে জড়িয়ে ধরলোকিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু কান্নার দমকে বোঝা যাচ্ছিল নামামীমা এসে দিদাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললমাওকে বলতে দাওবিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই তো ভগবান ওকে পাঠিয়েছিল। দিদাকে কোনোরকমে শান্ত করে সরিয়ে নিয়ে গেলে দাদু চোখের জল মুছতে মুছতে বললেনভাইতারপর বলো
 
তারপর দার্জিলিং থেকে ফিরে এসে ওর বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া হয় কি হয়েছিল জানতে কারন আমরা না জানলেও অনুমান করেছিলাম যে নিশ্চয় কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটনা আছে আর সেটা না জানা পর্যন্ত ওকে সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে নাওর মা মুখ না খুললেও পরে ওর ভাই বোনের সাথে আলাদা করে দেখা করে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওদের মা মৌকে ভীষন ভাবে টর্চার করতোবেশির ভাগটাই মানসিকভালো যা সব কিছু নিজের ছেলে মেয়ের জন্য কিন্তু ওকে একেবারে দেখতে পারতো নাকোথাও একা একা যেতে দিতো নাকারুর সাথে মিশতে দিতো নাভাই বোনেরা কিন্তু ওকে ভীষন ভালোবাসতো কিন্তু মায়ের ভয়ে কিছু করতে বা বলতে পারতো নাতারপর একদিন সন্ধে থেকে নাকি দিদিকে পাওয়া যাচ্ছিল নামা একাই বাড়ীতে ছিল ওই সময়ওরা ভাই বোন পড়তে গিয়েছিল
মামীমা জিজ্ঞেস করলওর বাবা মানে রজতদা কিছু বলে না?
অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আস্তে করে বললউনি আর নেই। বছর তিনেক আগে একটা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ঘরের মধ্যে শ্মশানের নিস্তব্ধতাদাদু হাতের পেছন দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে ধরা গলায় বললেনভগবান ওকে শান্তিতে রাখুনএকটাই দুঃখ নিয়ে হয়তো চলে গেছে অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারলো না। মামা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেনকাকে যে ঘরে নিয়ে এলোসংসারটাকে শেষ করে দিল একেবারে। আরো একটা খারাপ খবর পেয়ে যেন মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছিল না কারুরই। বেশ কিছুক্ষন সবাই চুপচাপ থাকার পর মামা ওকে তারপরে কি হয়েছে বলতে বললেন
 
পরদিন ওদের বকখালি যাবার কথা ছিলমা যাওয়া ক্যানসেল করে দেয় কিন্তু দিদিকে খোঁজার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেখায় নিউল্টে ওদের ভাই বোনকে মারধোর করে যেহেতু ওরা দিদির খোঁজ করতে বলেছিল। এরপর ওদের মাকে না জানিয়ে ভাই বোনকে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয় যদি ওদেরকে দেখে মৌ চিনতে পারে কিন্তু সেটাও কাজে দেয়নি। ওর কোনো রকম উত্তেজনা যাতে না হয় কারন তাতে আরো খারাপ হতে পারে বলে ডাক্তার বারবার সাবধান করে দিয়েছিল তাই ভাই বোনের পরিচয় দেওয়াও যায়নি। ওরা ভাইবোনে মাঝে মাঝে এসে দেখে যেতএই ভাবে চলছিলএর মাঝে আমি দুবার কিছুদিনের জন্য বাইরে গিয়েছিমাঝে আমার জেঠতুতো দিদির বিয়ে হয়, তারপর আমি কিছুদিনের জন্য যখন আবার বাইরে তখন দাদু একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। দাদুর ওই অবস্থা দেখে মৌয়ের কি হয়েছিল জানিনাকান্নাকাটি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলপরের দিন সকালে জ্জান ফিরে আসেনিজের পুরোনো স্মৃতি ফিরে আসে কিন্তু আমি যে ভয়টা পাচ্ছিলাম তাই হয়মাঝের ঘটনাগুলো ওর স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। এর মধ্যে ও আমাদের বাড়ী থেকে চলে যেতে চাইলে ওর কি হয়েছিল আর চলে গেলে কি হতে পারে বোঝাতে থাকতে রাজী হয় কিন্তু নিজেকে ভীষন ভাবে গুটীয়ে নেয়কারুর সাথে কথা বলতো নাচুপচাপ নিজের ঘরে বসে থাকতো। ওর ভাই বোন এলে যা একটু আধটু কথা বলতোযতটা সম্ভব বাড়ীর সবাই অনেক চেষ্টা করেছিল ওর সাথে কথা বলার কিন্তু তেমন কিছু কাজ হয়নি প্রথম দিকেতারপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও একেবারে আগের মতো হতে হতে বেশ কিছু দিন কেটে যায়সেটাও এই কয়েকদিন আগে
 
সবাই চুপচাপ বসে শুনছিল, কারুরই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না এমন হতে পারেপ্রাথমিক মানসিক ধাক্কাটা এর মধ্যে একটু একটু করে কেটে উঠেছে সবার ভেতরে... যাই হোক না কেন এখন তো মেয়েটার আর কোনো ভয় বা সমস্যা নেই। মামা অরিত্রকে থামতে দেখে চায়ের কথা বলে বললেনঅরিত্র এক নাগাড়ে কথা বলছে ওরও কিছুটা বিশ্রাম হয়ে যাবে। মামীমা উঠে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এলে পর চা খেতে খেতে মামা বললেন এখন তো আর কিছু সমস্যা নেইতাই তো’? অরিত্র একটু চুপ করে থেকে বলল ওর মায়ের দিক থেকে ঠিক কি ঘটেছিল যার জন্য ওকে বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল সেটা এখোনো জানা নেই তবে ও মায়ের মুখোমুখি হতে রাজী হয়েছে। ওদিকটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলে খুব ভালো হয়, আর কোনো সমস্যা থাকবে না তাহলে। যত সমস্যা তো সম্পত্তি আর টাকা নিয়ে তাই ওর ইচ্ছে সবকিছু দিয়ে দেবে। ইচ্ছে আছে এখান থেকে ফিরে যাবার পর কিছু একটা ভেবে ঠিক করে ফেলতে ওই ব্যাপারে। আর, এদিকে আপনাদের সাথেও দেখা হয়ে গেল... মৌ সবকিছু ফিরিয়ে দেবে শুনে মামীমা বেশ অবাক হয়ে গিয়ে বলল... কেন ফিরিয়ে দেবে, ওর নিজের কথা ভাবতে হবে না? ওরও তো ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে...এতক্ষনে শেষ কথাটা বলার সুযোগ পেয়ে অরিত্র বলল... ওর টাকা যদি ও ফিরিয়ে দিতে চায় তো আমাদের কোনো কিছু বলার নেই বা অসুবিধাও নেই। মামা বোধ হয় বুঝতে পারলেন ও কি বলতে চাইছে...ওর দিকে তাকিয়ে বললেন...যদি কিছু মনে না করো, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? তুমি কি...অরিত্র মুখটা নিচু করে নিয়ে বলল...ঠিকই ধরেছেন... আপনাদের অমত না থাকলে আমরা...
 
দাদু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় অর্ক হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এসে ঘরে ঢুকে বলল দাদুকি বড় একটা কাতলা মাছ উঠেছে দেখবে চলো। অর্ক দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে মাছের যা সাইজ দেখালো তাতে সবার হেসে ওঠা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। দাদু গম্ভীর ভাবে বললেন আচ্ছাউঠুকতোর দিদি কোথায়’?
-              কোন দিদি?
-              কোন দিদি আবারমৌ। যা ডেকে নিয়ে আয়...
অর্ক একটু যেন মুষড়ে গেল, ভেবেছিল এত বড় একটা খবর দিলে খুশি হবে সবাই। তা নয়ওকে এখন দিদিকে ডেকে আনতে হবে। বড়রা যে কখন কি চায় বোঝা দায় ভেবে আচ্ছাযাচ্ছিবলে মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে গেল। একটু পরে মামনকে সাথে নিয়ে মৌ ফিরে এলেও অর্ক আর ফিরে আসেনিওর কাছে বড়দের গোমড়া মুখ দেখার থেকে মাছ ধরা দেখা অনেক ভালো। মৌ সবাইকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল দাদু কি হয়েছেঅর্ক মুখ ভার করে ফিরে গেলবকা দিয়েছো নাকি? দাদু আগের মতোই গম্ভীর হয়ে বললেন নাতোকে বকবো বলে ডেকে আনালাম
-              কেন দাদুআমি আবার কি করলাম?
দাদু এবারে হাসি মুখে বললেন আয় মাআমার কাছে আয়। মৌ পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে বললেন তুই কি রে? এত বড় একটা খবরকাল থেকে একেবারে চেপে গেছিস। দাদু কি বলতে চাইছে বুঝতে পেরে মৌ লজ্জায় মুখ লাল করে নিয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। সবাই খুশী মনে হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে...মামন ব্যাপারটা কি হতে পারে আঁচ করে মায়ের কানের কাছে গিয়ে ফিফফিস করে বলল মাদিদি আর অরিত্রদা কিইয়েমানে’…
মামীমা মেয়েকে আস্তে করে মিষ্টি একটা বকা দিয়ে বলল পাকামো করতে হবে নাযা এখান থেকেপরে শুনবি। মায়ের বকা খেয়েও মামন আদুরে গলায় বলল ও মাবলো না ঠিক বলছি কিনা। দাদু হেসে ফেলে বললেন থাক নাকি হয়েছেদিদির বিয়েও আনন্দ করবে না তো কে করবে। দাদু বলে দিয়েছে থাকতে তাই আর কে কি বলছে দেখার দরকার নেই। মামন ওর কিশোরী সুলভ আনন্দের সাথে দিদিকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল দিদিআমি কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম’…
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
মৌ কথা কও by Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:21 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:22 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:23 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:24 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:25 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:27 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:29 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:30 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:31 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:32 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:40 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:42 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:43 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:44 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:46 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)