Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#12
আরো মাস খানেক কেটে গেছে। মৌ সেই যে সব কিছু শোনার পরেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে কোনো এক অজানা কারনে, তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বেশীর ভাগ সময়েই চুপচাপ নিজের ঘরে বসে থাকে। মাঝে রুপসা আর পুবালী এসে ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি, কান্নাকাটি করে ওদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে। একটু আধটু দিদানদের সাথে কথা বললেও অরিত্রকে দেখলেই নিজেকে এতটা গুটিয়ে নিতো যে বাধ্য হয়ে ওর সামনে আসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। একমাত্র ওর ভাই বোন এলে ওদের সাথেই যা কিছূটা কথা বলেতাও যে খুব একটা স্বাভাবিক তাও নয়। নিশ্চয় কিছু কারন আছে যেটা ও প্রকাশ করতে পারছে নাযদি তাই হয় তাহলে জোর করে কিছু করার জন্য খারাপ কিছু হতে পারে ভেবে ওরা পিছিয়ে এসেছে। দেখা যাক, আস্তে আস্তে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে বা ও নিজের থেকে প্রকাশ করতে পারবে ওর মনে কি আছে। ওকে শুধু এইটুকু বোঝানো গেছে যে ও যেন এখান থেকে চলে যাবার কথা না ভাবে আর যদি ও চলে যেতে চায়ও তাহলে যেন অন্তত দিদানদেরকে আগে থেকে জানায় কোথায় যেতে চায়। এটা ওর ভালোর জন্য বলা হচ্ছে বুঝে হয়তো চুপচাপ মেনে নিয়েছে।
 
অরিত্রর দিন গুলো একটা একটা করে কেটে যাচ্ছে, সবকিছুই প্রায় আগের মতোই, তবুও যেন কতো আলাদা। এখন আর অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলে বিশেষ কেউ একজন ওর জন্য জানলার গ্রীলটা ধরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে না। ও ফিরছে দেখতে পেলেই পড়ি মরি করে দৌড়ে এসে শরীরের ভাষায় নীরবে বলে নাকেন এত দেরী করলে তুমি? একই বাড়ীতে থেকেও যেন ও কতদুরেএর থেকে বেশী যন্ত্রনার বোধহয় আর কিছু হয় না। ও যদি এখানে না থাকতো তাহলে হয়তো এতটা খারাপ লাগতো না, কষ্ট হলেও মেনে নিতে হত যে ওর জীবন থেকে মৌ হারিয়ে গেছে। কিন্তু ওর ভালোর কথা ভেবেই যত কষ্ট হোক তবুও মেনে নিয়েছে ওর এখানে থাকাটা।
 
পুজ়ো এসে গেল প্রায়, কোনো কিছুই আর এবারে করা হয়ে ওঠেনিকারুরই মানসিকতা ছিল না কিছু করারএই পুজ়োটা বোধহয় ওদের জীবনের সব থেকে খারাপ কাটবে। দাদুরা বারন করলেও তার ভেতরেই ও একা গিয়ে সবার জন্য কিছু না কিছু কিনে এনেছিল পুজোর ঠিক আগে আগেযতই নিজের বুকের ভেতরে কুরে কুরে খেয়ে যাওয়া যন্ত্রনা থাকুক, যাকে যা দেবার তাতে যেন কোনো ত্রুটি না থাকে সেদিকে যতটা সম্ভব নজর দিয়েছে ।মৌকে আর নিজের হাতে দিতে পারেনি,দিদানের হাতে দিয়েছিল ওকে দেবার জন্য। পরে দিদানের কাছে শুনেছিল, মৌ নিয়েছে ওটা, কিন্তু দেখে বোঝা যায়নি ও খুশী কি খুশী নয়। দেখতে দেখতে পূজো এসে গেল। সপ্তমীর সন্ধে, দাদুরা সবাই পুজোর ওখানে, না গেলে অনেকে অনেক প্রশ্ন করবে তাই যেতে হয়েছে। অরিত্র শরীর খারাপ বলে যেতে পারবে না জানিয়ে দিয়েছে আগেই। এক মাত্র শুভ জানতো আসল ঘটনাটাও বাকিদেরকে সামলে নিয়েছিল আগেই। রাত প্রায় নটা বাজে, অরিত্র একা একা ছাদে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলচারিদিকে আলোর রোশনাই, ঢাক বাজছে পূজো প্যান্ডেলেসবার মনে খুশী, ওর মনের ভেতরে শুধুই অন্ধকার। গত বছর এই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। মৌকে নিয়ে বেরিয়েছিল ওই রাতে ওর পছন্দ করে দেওয়া ড্রেসটা পরে। সত্যিই ওকে খুব সুন্দর লাগছিল সেদিন ওই জমকালো পোষাকে। ওর সাথে বেরোতে পেরে কি না খুশী ছিল সেদিন ভাবতেই বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। সব কটা প্যান্ডেলে গাড়ী থেকে নেমে ও অরিত্রর গা গা ঘেঁষে হাত চেপে ধরে থাকছিল, মনে হচ্ছিল যেন ঠাকুর দেখার জন্য ও বেরোয় নি। ওর আসল ইচ্ছে অরিত্রর সাথে একেবারে একা একা থাকবে। রাত দুটো নাগাদ ওকে কিছু খাবে কিনা জিজ্ঞেস করাতে লাজুক হেসে মুখ নীচু করে নিয়েছিল। ওর মুখটা তুলে ধরে বলতে হয়েছিলএই মৌকিছু খাওসেই কখন খেয়েছো। ইশারা করে কিছুটা দুরের একটা ফুচকার দোকান ও দেখিয়েছিল তারপর। সামান্য ফুচকা খেতে চাওয়ার কথা জানাতে গিয়ে ওর লজ্জা পাওয়া দেখে ভালো লাগার সাথে সাথে হাসিও পেয়েছিল। ফুচকাওয়ালার বোধ হয় আজ ভালো বিক্রি হয়নি বা অনেক সময় কোনো কাস্টমার ছিল না। ওদের দুজনকে পেয়ে বেশ যত্ন করে আস্তে আস্তে দিচ্ছিল যাতে ওদের খেতে অসুবিধা না হয়, একা একা ও খেতে রাজী না হওয়ায় নিজেকেও খেতে হয়েছিল ওর সাথে। মনে আছে, একটা ফুচকা হাতে নিয়ে সবে মুখের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলমৌ এর দিকে তাকালে, বুঝেছিলওটা ওকে খাইয়ে দিতে হবে। হাসি মুখে ওর দিকে এগিয়ে দিলে খুব খুশী হয়ে খেতে খেতে নিজেরটা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছিলএবারে আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো। তারপরের গুলো ওরা একে অপরের হাতেই খেয়েছিল। ওদের এত খুশী দেখে বুড়ো ফুচকাওয়ালাও যেন ওদেরকে খাওয়ানোতে মজ়ে গিয়ে নিজেই হিসেব গুলিয়ে ফেলেছিল প্রায়। ভোর সাড়ে তিনটের সময় ফিরে বাড়ীর সামনে গাড়ীটা থামাতেই ও হাতটা চেপে ধরে কিছু যেন বলতে চাইছিল। ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে সামনের দিকে ইশারা করে বুঝিয়েছিল ওকে নিয়ে নদীর পাড়ে যেতে হবে। চারদিক নিস্তব্ধ, কেউ কোথাও নেইনির্জন নদীর পাড়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপরে ওরা দুজনে পাশাপাশি বসে। হাওয়াতে মোটামুটি ঠান্ডার আমেজওদেরকে যেন আরো ঠান্ডার অনুভুতিতে ভরিয়ে দিচ্ছিল। শুধু কি ঠান্ডা হাওয়া ওদেরকে মাঝে মাঝে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল? হয়তো শুধু তাই নয়আরো কাছাকাছি আসার ইচ্ছেতেই হয়তো শীত করছিল দুজনের। কখন ওরা আরো কাছাকাছি এসে দুজনে দুজনের সান্নিধ্যে থেকে একে অপরের শরীরের উত্তাপে নিজেকে তৃপ্ত করেছে বুঝতে পারেনিদুরে কোথাও থেকে কোনো মসজিদের আজান কানে ভেসে এলে ইচ্ছে না থাকলেও উঠতে হয়েছিলভোর হতে যে আর দেরী নেই।
 
এবছর আর কোথাও বেড়াতে যাবারও প্রশ্ন ছিল না। অফিস যেতে হয় তাই যায়ওখানে কাউকে বুঝতেও দিতে চায়নি যে ওর কিছু হয়েছেকিন্তু ওকে চুপচাপ থাকতে দেখে অনেকেই প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে গেছে। কালী পূজোর পর আবার অফিস থেকে কিছুদিনের জন্য বাইরে যেতে বললে জানিয়েছে দু একদিন পরে জানাবে যেতে পারবে কিনা। দাদুদেরকে বলাতে, না করেনি… ‘দিন গুলো তো কেটে যাচ্ছেতুই না থাকলেও চলে যাবেযা ঘুরে আয়বলেছে দাদু।
 
আজ দুদিন হোলো অরিত্র চলে এসেছে, এবারেও সিঙ্গাপুর। বেশ কিছু দিন হয়ে গেল ডাইরি লেখা হয়নি ভেবে দাদুদের সাথে কথা বলা হয়ে গেলে ডাইরিটা ব্যাগ থেকে বের করতে গিয়েও খুঁজে পেলো না। বেশ কিছুক্ষন বসে চিন্তা করেও ঠিক মনে করতে পারলো না এবারে ব্যাগে নিয়েছিল কিনা ডাইরিটা। হয়তো ভুলে গেছে নিতে, ভেবে তখনকার মতো ছেড়ে দিয়েছে। ঠিক আছে, এই কদিন না হয় সফট কপিতে রেখে দেবেফিরে গিয়ে লিখে নেবে ভেবে অনেক রাত অব্দি বসে লিখতে লিখতে কখন যে প্রায় ভোর হয়ে এসেছে বুঝতে পারেনি। অফিস থেকে দেওয়া ওর স্কাইহাই এপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাতে কফির কাপটা নিয়ে উদাস হয়ে সামনেই কিছুটা দুরে বয়ে যাওয়া নদীর দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোর কথা ভাবছিল। ঘরের ভেতর থেকে ওর ল্যাপটপে বেজে যাওয়া Elvis Presley র ওর অনেক দিনের প্রিয় একটা গান ভেসে আসছে...
Maybe I didn't treat you
Quite as good as I should have
Maybe I didn't love you
Quite as often as I could have
Little things I should have said and done
I just never took the time
 
You were always on my mind
You were always on my mind
 
Tell me, tell me that your sweet love hasn't died
Give me, give me one more chance
To keep you satisfied, satisfied
 
Maybe I didn't hold you
All those lonely, lonely times
And I guess I never told you
I'm so happy that you're mine
If I make you feel second best
Girl, I'm sorry I was blind
 
You were always on my mind
You were always on my mind
 
Tell me, tell me that your sweet love hasn't died
Give me, give me one more chance
To keep you satisfied, satisfied
 
Little things I should have said and done
I just never took the time
You were always on my mind
You are always on my mind
You are always on my mind…...
 
মৌকে পেয়েও হারানোর ভয়টা মনের ভেতরে ছিল কিন্তু সত্যিই যে মিলে যাবে এত তাড়াতাড়ি হয়তো ভাবেনি। বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো গানটা শুনতে শুনতেভাবছিল, যদি এমন হোতোগানের কথা গুলো নিজের মুখেই বলতে পারতো ওকেকিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়ওকে দেখলেই যে মৌ নিজেকে গুটিয়ে নেয় কোনো এক অজানা কারনেতাহলে কি সত্যিই তাই? ওর খুব কাছের কেউ আছে যাকে ও চায়। তাই বা কি করে হয়যদি কেউ থাকতো তাহলে ও কেন বলছে না বা ফিরে যাচ্ছে না তার কাছেআস্তে আস্তে পুর্ব দিক লাল হয়ে উঠতে শুরু করল, আর একটু পরেই সুর্য উঠবে, আরো একটা হাসিখুশী সুখী দিনের শুরু হবে এই সুন্দর সুর্যোদয়েয় ভেতর দিয়ে...কিন্তু সেই সুন্দর দিনটা ওর জন্য নয়... এই সুন্দর ভাবে শুরু হওয়া দিনটা ওর জন্য বয়ে নিয়ে আসবে না কোনো সুখের ঠিকানার সন্ধান...
 
প্রকৃতির নিয়মে একটা একটা করে দিন কেটে যাচ্ছিল। অরিত্রকে আগের মতোই রোজ বাড়ীতে ফোন করতে হয় বা করে, পার্থক্য শুধু একটাই, দাদুদের সাথে কথা হয়ে গেলে আর কাউকে ফোন করার থাকে না। আর কেউ নেই ওকে বলার…’কেন তুমি এত দেরী করলে? যাও আমি তোমার সাথে কথা বলবো না। ফোনে কান পেতে অপেক্ষা করারও প্রয়োজন নেই আর দুর থেকে ভেসে আসা সেই মিষ্টি আওয়াজ শোনার জন্য। জেঠু জেঠিমা বা দিদিদের সাথে মাঝে মাঝে কথা হলেও রুপসা প্রায়ই ওকে ফোন করে, ভাই বোনে দুজন দুজনকে বোঝাবার চেস্টা করে যদিও কেউই জানে কি বোঝাচ্ছে। রুপসার সেই অপরাধবোধটা এখোনো কাটেনি। ও এখোনো সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করে। অরিত্র ওকে যতই বোঝাক না কেন যে ও বোনের জোরাজুরিতে এগোয়নি, নিজের থেকেই এগিয়েছিল সবকিছু জেনে বুঝেই... তবুও ও বলেই দিয়েছে...অসম্ভব কিছু ঘটে গিয়ে যদি মৌ আবার তোর কাছে ফিরে আসে তো ঠিক আছে, যদি তা না হয় তো নিজেকে কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারবো নারে দাদাভাই। বোন কোনো অবস্থাতেই নিজের মত থেকে সরবে না বুঝে আজকাল আর অরিত্র ওকে নতুন করে ওই ব্যাপারে বোঝাবার চেস্টা করে না।
আরো দিন সাতেক পর, অরিত্র দাদুর সাথে কথা বলতে গিয়ে জানতে পারল মৌ আজ সকালে কোথাও গিয়েছিল, বিকেলের দিকে মুখ শুকনো করে ফিরে এসে নাকি নিজের ঘরে কান্নাকাটি করেছে। দাদুর কাছ থেকে আরো কিছু জানা যায় যদি ভেবে জিজ্ঞেস করলকোথায় গিয়েছিল জিজ্ঞেস করেছিলে তোমরা?
-              তোর দিদান জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু ও এড়িয়ে যাচ্ছে দেখে আর জোর করেনি।
-              ঠিক আছে, আমি বিল্টুদেরকে ফোন করে দেখছি যদি ওরা কিছু বলতে পারে।
দাদুর সাথে কথা হয়ে গেলে সাথে সাথেই বিল্টুকে ফোন করল কিন্তু বিল্টু বা মিষ্টির কাছ থেকে কিছু জানা গেল না, উলটে ওরাও শুনে অবাক হয়ে গেল দেখে ওদেরকে পারলে পরের দিনই একবার দিদির সাথে দেখা করতে বলে দিল এই বলে যে ও একা একা বেরোলে আবার কোথায় কি হয়ে যাবে বলা যায় না। ওরা যদি দিদির সাথে কথা বলে যদি আটকাতে পারে তাহলে খুব ভালো হয়। সব কিছু শুনে ওরা ভাইবোনে পরের দিনই আসবে বলেছে। সবার সাথে কথা বলা হয়ে গেলে ও কোথায় যেতে পারে আর ফিরে এসেই বা কেন কান্নাকাটি করেছে অনেক ভেবেও কোনো কুল কিনারা খুঁজে পেলো নাঅনেক কিছুই মাথায় এলো কিন্তু কোনোটাই ঠিক বলে মনে হল না শেষ পর্যন্ত। যদি ওর কেউ থাকে তাহলে এতদিন অপেক্ষা করল কেন তার কাছে যেতে? আচ্ছা, সত্যিই যদি ধরে নি কেউ আছে তাহলে ফিরে এসে কান্নাকাটি করল কেন? তাহলে কি সে ফিরিয়ে দিয়েছে? তাই বা কি করে হবেওর তো খামতি নেই কোনো কিছুতেইদেখতে শুনতে এত সুন্দর..মিষ্টি ব্যাবহার...ওর মতো মেয়েকে নিজের জীবনসাথী হিসেবে পেতে কে না চাইবে। হতে পারে ওর এতদিন কোনো খোঁজ খবর না থাকায় ছেলেটি হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে।
পরের দিন বিল্টুকে বিকেলের দিকে ফোন করল কি হয়েছে জানার জন্য কিন্তু ও তেমন কিছু বলতে পারল না দেখে জিজ্ঞেস করল ওর বাইরে একা একা না যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা। বিল্টু জানালো হ্যাঁ, বলেছি
-              কি বলেছে তাতে?
-              চুপ করে ছিল কিছুক্ষন, তারপর বলল যাবো আর কোথায়যাওয়ার জায়গা কি আছে
-              আর কিছু কথা হয়েছে?
-              নাখুব একটা কথা বলছে না দেখে আমরাও ঠিক বুঝতে পারছি না।
-              তাহলে এক কাজ করো... রোজ তোমার দিদির সাথে অন্তত একবার হলেও তুমি বা মিষ্টি কথা বলো ফোনো, বুঝতেই পারছো আমরা খুব চিন্তায় আছি ওকে নিয়ে।
-              জানি অরিত্রদা... তোমরা না থাকলে দিদির কি যে হোতো ভাবতেই ভয় লাগে।
গতকাল যা যা হতে পারে ভেবেছিল সেখান থেকে আবার চিন্তা করা শুরু হয়ে গেল নিজের থেকেই। চুপ করে বসে ভাবছিল... নিশ্চয় ওর কেউ আছে যার কাছে ও গিয়েছিল এবং সে ফিরিয়ে দিয়েছে... তাই ও ফিরে এসে কান্নাকাটি করেছে এবং আজ বলেছে... যাওয়ার কি জায়গা আছে’... এতটা চিন্তা করার পর মনে হল... আচ্ছা তাই যদি হয় তাহলে কি আমি ওকে বলতে পারি আমার কাছে ফিরে আসতে? এই পর্যন্ত ভেবে মনের ভেতরে একটু ভালো লাগার রেশ এসেই মিলিয়ে গেল অন্য একটা কথা ভেবে। নিজেই নিজেকে প্রশ্নটা করেও সদুত্তর পেলো না এই ভেবে যে যদি আমি যা ভাবছি তা না হয় আর ও না বলে দেয় তাহলে তো রাস্তাটা একেবারের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, তার থেকে ভালো অপেক্ষা করে দেখি কি হয়...এমনও তো হতে পারে আমি ওকে আবার ফিরে পেলাম। আর যদি তা না হয় তাহলে মেনে নিতে হবে...আর কি করার আছে? আমি তো আগে থেকেই ভেবেছিলাম যে এমন কিছু একটা হতেও পারে। এমনি ভাবেই দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল, রোজই সেই একই কথা গুলো ভাবে আর নিজে নিজে উত্তর দিয়ে নিজেই আবার খারিজ করে দেয়। কোনো কিছুই যখন আর মাথায় ঢুকতে চায় না তখন অপেক্ষা করি...দেখা যাক না কি হয় ভেবে নিজেকে বোঝাবার চেস্টা করে।
 
অরিত্র ফিরে আসার পর দাদুদের সাথে আলোচনা করে একদিন বিল্টুর সাথে দেখা করল। মৌ নিজে থেকে তো কিছু বলছে না ঠিক কি হয়েছিল বা ও কি চায়, দাদু দু একবার কথা বলার চেস্টা করলেও মায়ের সাথেও দেখা করার কোনো উৎসাহ স্বাভাবিক ভাবেই দেখায় নি। ও যদি চায় তাহলে মা মেয়েকে মুখোমুখি করানো যেতে পারে বলে বিল্টুকে বোঝালে ও সব শুনে বললআমিও দু এক বার দিদিকে জিজ্ঞেস করেছি কি হয়েছিলকিন্তু কেন জানিনা বলতে চাইছে না।
-              ঠিক আছে, দেখো না আরো একবার চেষ্টা করে।
-              দেখি, কি করা যায়। আমার মনে হয় তোমরাও থাকলে ভালো হয়।
-              আমার মনে হয় আমি থাকলে তোমার দিদি কিছু বলতে চাইবে না...জানোই তো আমাকে কেমন এড়িয়ে যায় এখোনো।
-              তবুও, তোমার থাকার দরকার আছে...আমরা তো আর এতকিছু বুঝবো না।
যেমন ভাবা হয়েছিল সেই মতো বিল্টুরা এসেছে। বিকেলের দিকে সবাই মিলে বসে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করা হল কিন্তু সবকিছু শোনার পরও ও চুপ করে আছে দেখে অরিত্র বাধ্য হয়ে বললতুমি যদি চুপ করে থাকো তাহলে তো তোমার সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। মৌ আরো কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর আস্তে করে বললআমার জন্য যদি অসুবিধা হয়, আমি না হয় চলে যাবো। দিদান এতক্ষন চুপ ছিল, ওর চলে যাবার কথা ওঠাতে বললতুমি ভুল করছো মৌ, আমরা কেউই চাইছি না তুমি চলে যাও। তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না তুমি আমাদের কতটা কাছের হয়ে গেছো। আমরা শুধু চাইছি তোমার যা কিছু সমস্যা আছে সেগুলো মিটে যাক। তারপর তুমি যদি না চাও এখানে থাকতে আমরা তো আর জোর করতে পারি না। তবে তুমি এটা মনে কোরো না যে তোমার জন্য আমাদের কিছু অসুবিধা হচ্ছে। দিদানের কথা শুনে ও আস্তে করে বললসমস্যা তো একটাইটাকাআমি যদি ওগুলো দিয়ে দি, তাহলে তো সব মিটেই যাবে। দাদু ওর কথা শুনে বললতোমার যদি মনে হয় টাকা দিয়ে দিলে মিটে যাবে তো দিয়ে দাও...ঝামেলা মিটে যাবে।
-              তারপর?
-              তারপর তোমার কি হবে তাই তো?
-              হ্যাঁ
-              আমরা তো আছিইতুমি আমাদেরকে পর ভাবছো কেন?
-              জানি নাআমাকে একটু ভাবতে হবে।
-              ঠিক আছে, তুমি তাহলে ভেবে জানিওআমাদের দিক থাকে কিন্তু তোমাকে চলে যেতে বলার কোনো প্রশ্ন আগেও ছিল না আর এখোনো নেই। তুমি যতদিন চাও আমাদের কাছে থাকো...
 
দেখতে দেখতে আরো মাস দুয়েক কেটে গেছে। মৌ কি ডিশিশান নিয়েছে জানায়নি কিন্তু কিছুটা হলেও যেন ওর ভেতরে পরিবর্তন এসেছে আস্তে আস্তে কিন্তু সেটা অরিত্রর ব্যাপারে একেবারেই নয়। আগেও যেমন ওকে এড়িয়ে যেতো সেরকমই আছে কিন্তু দাদু দিদানদের সাথে আগের থেকে অনেক বেশী মেশার চেষ্টা করে। সবাই ভেবেছে দেখা যাক, আরো কিছুদিন গেলে হয়তো আরো কিছুটা স্বাভাবিক হবে। বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে ও একাই ঘরের দরজা বন্ধ করে শোয় রাতে যেটা আগে করতো না। অরিত্র ব্যাপারটা নিয়ে যে একেবারেই ভাবেনি তা নয়...কখোনো ভেবেছে তাহলে কি ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না? ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে আমি ওর উপরে জোর করবো? কথাগুলো ভেবেও নিজেই নিজেকে বলেছে...নাঃ, তা কি করে হবে। ওর ঘরে তো অনেক রাত পর্যন্ত আলো জ্বালানো থাকে... বই পড়ে হয়তো। আজকাল অফিস থেকে বেরোতে বেশী রাত হয়ে গেলে আর বাড়ী না ফিরে দিদানকে জানিয়ে দিয়ে ভবানীপুরের বাড়িতে চলে যায়। কি আর তফাৎ আছে এখানে আর ওখানে? যন্ত্রনা তো দু জায়গাতেই আছে। শুধু ধরনটা যা আলাদা। দিদির বিয়ের পর এমনিতেই জেঠিমারা খুব একা হয়ে গেছে, ওকে পেলে তবু একটা রাতের জন্য হলেও খুশী হয়। প্রথম প্রথম জেঠিমারা মৌ-এর ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলার চেস্টা করতো কিন্তু ও চায় না দেখে এখন আর কিছু বলে না। একটা রাতের জন্য এসেছে ছেলেটা, থাক ওকে আর কষ্ট দিয়ে লাভ নেই ভেবে নিজেদেরকে সান্তনা দেয়। অনেকদিন হয়ে গেল রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না, বারে বারে ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে চুপ করে শুয়েও থাকতে পারে না। উঠে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে কি ভাবে নিজেই বোঝে না। যতই মাথার ভেতরটা ফাঁকা করে দেবার চেস্টা করুক না কেন বারে বারে পুরোনো স্মৃতি গুলো ভীড় করে আসে। মাঝে মাঝে ভেবেছে এই ধরনের সমস্যায় অনেকেই তো ড্রিঙ্ক করে...তাতে নাকি দুঃখ ভোলা যায়, ভাবলেও আবার নিজের থেকে পিছিয়ে এসেছে... আমার যা হবে হোক...যে তিনটে মানুষ আমার মুখ চেয়ে বেঁচে আছে তাদেরকে তো আর কেউ নেই দেখার। নিজের জন্য না হোক ওদের জন্য আমাকে স্বাভাবিক থাকতেই হবে যেভাবেই হোক...ভেতরে না হলেও বাইরেটা দেখে যেন কেউ না বোঝে আমার ভেতরে কি হচ্ছে। যতই ও নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেস্টা করুক না কেন সবাই বোঝে ও কি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। প্রায়দিন রাতে দিদান বা শুক্লাদি ওর ঘরে এসে দেখে যায় ঘুমোতে পারছে কিনা। মাঝে মাঝে ওদের কাছে ধরাও পড়ে যায়...ওকে কাছে টেনে নিয়ে সান্তনা দেবার চেস্টা করে নিজেরাই কেঁদে ফেলে দিদানরা... মা বাবা হারানো ছেলেটাকে খুশী দেখতে চাওয়া ছাড়া আর কিছু যাদের কাম্য নয় তাদের কাছে ওকে এইভাবে দিনের পর দিন যন্ত্রনা পেতে দেখার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো ভেবে নিজেরাই কষ্ট পেলেও কোনোদিন ওদের কেউই এর জন্য মৌকে দায়ী করেনি। এটাই ওর ভবিতব্যে ছিল ভেবে মেনে নিয়েছে এই ভেবে যে মেয়েটা তো আর নিজের থেকে আসেনি বা থাকতে চায়নি...ওরাই চেয়েছিল ও এখানে থাকুক।
এর মাঝে কোনো এক শনিবার বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় সুস্মিতাকে উল্টোডাঙ্গায় দেখতে পেয়ে কি মনে করে গাড়ী থেকে নেমে দৌড়ে যায় দেখা করতে। ব্যাপারটা হঠাৎই এমন ভাবে ঘটে যায় যে নিজেই ভাবেনি যে এই সেই মেয়ে যাকে ও একটা সময় এড়িয়ে যেতে গিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই ভুলে গিয়েছিল বাধ্য হয়ে। সুস্মিতা হঠৎ ওকে ওইভাবে দৌড়ে আসতে দেখে বেশ অবাক হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল...আরে অরিত্রদা...তুমি? ওর প্রশ্নটা শুনে প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল... আরে, বাড়ী ফিরছিলাম...তোমাকে দেখতে পেয়ে চলে এলাম।
-              বাব্বা, কি সৌভাগ্য আমার... বলো কেমন আছো?
-              আমি এই এক রকম আছি...তুমি?
সুস্মিতা ওর উত্তরটা শুনে কেমন কেমন লাগছে বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করল...বুঝলাম না...এক রকম মানে?
-              ওই এক রকম মানে এক রকম...বলো তোমার কি খবর...
-              আমার খবর বেশ ভালোই... যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম তা নয়...
-              তার মানে তুমি তোমার বরকে ভালোবাসতে পেরেছো...তাই তো?
সুস্মিতা হেসে ফেলে বলল... তা ছাড়া আর কিছু করার আছে কি? তবে জানো তো ও বড্ড ভালো...আমি নিজের থেকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছিলাম বিয়ের আগেই...সব কিছু জেনেই ও আমাকে বলেছিল...চিন্তা কোরো না, তুমি যে আমার কাছে কিছু লুকোতে চাওনি এটাই আমার কাছে অনেক। সুস্মিতা যে সুখী হয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো। খুব ইচ্ছে করছিল কিছুক্ষন ওর সাথে সময় কাটায়...সাতপাঁচ না ভেবেই বলে ফেলল... তোমার হাতে কি সময় আছে? যদি তোমার অসুবিধা না থাকে তাহলে চলো না কোথাও গিয়ে একটু বসি। সুস্মিতা ওর আগ্রহ দেখে বলল...ঠিক আছে, চলো। আমার তেমন কোনো তাড়া নেই।
একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুজনের কথা হচ্ছিল। অরিত্র যতই নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেস্টা করুক না কেন ও যে মৌ এর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছে এটা বুঝতে না পারার কথা নয়। সুস্মিতা বাধ্য হয়ে বলল...অরিত্রদা, আমি তো তোমার কাছে কিছু আড়াল করিনি...তুমি কেন এড়িয়ে যাচ্ছো আমাকে? বলো না কি হয়েছে? সুস্মিতার আন্তরিক ভাবে বলা কথাটা এড়িয়ে যেতে না পেরে একটু একটু করে বলল ওকে ঠিক কি কি হয়েছে। এতদিন নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে গিয়ে কারুর কাছে নিজের কথা তেমন ভাবে বলতে না করতে পেরে যে কষ্ট পাচ্ছিল আজ তা বলতে পেরে নিজেকে যেন একটু হাল্কা লাগছিল। কিছুটা শোনার পর ওকে মুখ নিচু করে বসে থাকতে দেখে সুস্মিতা বলল...তুমি কেন ওকে সরাসরি জিজ্ঞেস করছো না ও কি চায়? অরিত্র মুখ তুলে একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার মুখ নিচু করে নিয়ে আস্তে করে বলল... তুমি হয়তো জানো না, আমি জোর করতে পারি না। তার থেকেও বড় কথা ও কেন যে আমাকে এড়িয়ে যায় বুঝতে পারি না। সবকিছু শোনার পর সুস্মিতা ওর সাথে কথা বলার জন্য আসতে চাইলে অরিত্র ওকে বারন করে বলল...কোনো লাভ হবে না সুমি, তুমি হয়তো জানো না আমার ছোড়দি আর ছোটো বোনের সাথে ওর কতটা কাছের সম্পর্ক ছিল। সব কিছু ওকে জানানোর পরেও তাদেরকেও ফিরিয়ে দিয়েছে বারে বারে। আমি সত্যিই বুঝতে পারি না ওর সমস্যাটা ঠিক কোথায়...আমরা তো ওর কোনো ক্ষতি চাই না...কেন যে ও সেটা বুঝতে চাইছে না কে জানে। সুস্মিতা কিছুক্ষন চুপ পরে থাকার পর নিজের মনেই যেন উত্তর দিল... কিছু তো একটা আছে যেটা ও পারছে না বলতে...
অরিত্রর এরপরে আরো বার তিনেক সুস্মিতার সাথে দেখা হয়েছে। দেখা হয়েছে বললে হয়তো ভুল হবে, মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলতে গিয়ে নিজেরাই ঠিক করেছে দেখা করবে। এতদিন বোনেদেরকে বোঝাতে গিয়ে নিজের আসল অবস্থার কথা কিছুটা হলেও চেপে যেতে হত যাতে ওরাও এতটা কষ্ট না পায় কিন্তু সুস্মিতার সাথে মন খুলে শেয়ার করার পর থেকে কিছুটা হলেও যেন শান্তি পায়। নিজের থেকে দেখা করতে বললেও শেষের দিন ওকে অবাক করে দিয়ে সুস্মিতা কেঁদে ফেলে বলল... অরিত্রদা প্লিজ তুমি আর আমার সাথে দেখা কোরো না। আমি সত্যিই আর পারছি না। অরিত্র চুপ করে থেকে ওর কথাগুলো শুনে বলল...আমি তো তোমার কাছে কিছু আশা করে আসি না সুমি, এতদিন কারুর কাছে নিজেকে এতটা খুলে ধরতে না পেরে হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছিলাম...তাই হয়তো তোমাকে বলতে পারি বলে বার বার ফিরে আসি। সুস্মিতা নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের জল মুছে বলল...জানি অরিত্রদা, কেন জানি না আমি তোমার এই অবস্থায় নিজেকে খুব দুর্বল করে ফেলছি, ইচ্ছে করছে তোমার পাশে দাঁড়াই আরো বেশী করে কিন্তু ভেবে দেখলাম সেটা ঠিক হবে না। অনেক কষ্ট করে কিছুটা হলেও তোমাকে ভুলতে পেরেছি, তার থেকেও বড় কথা ও আমাকে বিশ্বাস করেছে, আমি ওকে ঠকাতে পারবো না। ওর এই কথার পর আর কিছু বলার ছিল না অরিত্রর। যদিও বা এতদিন পর কাউকে বলতে পেরে কিছুটা হালকা হতে পারার সুযোগ এসেছিল, সেটাও আর সম্ভব হল না ধরে রাখা যেখানে ও সুস্মিতাকে কোনোভাবেই দায়ী করতে পারবে না। সবকিছু মেনে নিয়ে আসার আগে ও বলে এসেছে...যদি পারো আমাদের যে দেখা হয়েছিল ভুলে যেও। বিশ্বাস করো আমিও চাইনা আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হোক। সুস্মিতা উঠে এসে ওর হাত ধরে বলেছিল...প্লিজ অরিত্রদা তুমি আমকে ভুল বুঝলে না তো? অরিত্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিয়েছে... ভুল বোঝার কিছু নেই সুমি।
 
এরপরে আরো কিছুদিন কেটে গেছে। মে মাসের মাঝামাঝি, গরম পড়ে গেছে মোটামুটি ভালোই। রবিবারের সকাল, বাড়ীতে থাকলে এখোনো রবিবারের বাজারটা ও-ই করে। বাজার থেকে ফিরে এসে নিজের ঘরে বসে খবরের কাগজটা দেখছিল। দরজার কাছে কেউ এসে দাঁড়ালো মনে হতে মুখ তুলে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠল...যা দেখছে তা কি সত্যি?
মৌ দাঁড়িয়ে আছে দরজার ঠিক বাইরে। অনেকদিন হয়ে গেল অরিত্র থাকাকালীন মৌ এই ঘরে আসে না, আজ ওকে আসতে দেখে একটু অবাক হয়ে গিয়েও বললবাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেনভেতরে এসো। বুকের ভেতরে একটা অভিমান দলা পাকিয়ে উঠে আসছিলবলতে ইচ্ছে করছিলআজ এতদিন পরে মনে পড়ল আমাকে? মৌকে ভেতরে আসতে বলে খবরের কাগজ়টা ভাঁজ করে পাশে রেখে দিয়ে ভাবছিলও নিশ্চয় কিছু বলবেনা হলে তো আসার কথা নয়। ভেতরে ঢুকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে বসতে বলল অরিত্র। এতদিন পর আজ এক ঝলকের জন্য দেখলেও হল একটু যেন রোগা হয়ে গেছে ও। মুখটাও যেন বেশ শুকনো লাগছে। মৌ ভেতরে এসে বসলেও কিছু না বলে চুপ করেছিল। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে বসে থাকার পর বাধ্য হয়ে অরিত্র জিজ্ঞেস করলোকিছু বলবে? মৌ মুখ নিচু করে থেকে আস্তে করে উত্তর দিলহ্যাঁ। জানলার বাইরের ফুলে ভরা মাধবীলতা গাছটায় একটা টুনটুনি পাখি দোল খাচ্ছিলঅরিত্র পাখীটাকে দেখতে দেখতে বললবলো। মনের ভেতরে একটা ক্ষীন আশা উঁকি দিয়ে চলে গেলএতদিন ধরে যা চেয়ে এসেছিআজ কি তা পাবো? পরক্ষনেই সেই ক্ষীন আশা বিলীন হয়ে গিয়ে হতাশায় বুক ভরে গেলকি করে সম্ভবএই মৌ তো সে নয় যে এক সময় ওকে বলেছিল…’কাছে থাকতে চাও না তো ডাকো কেন’? মৌকে এর পরেও চুপ করে বসে থাকতে দেখে অরিত্র ওর দিকে ফিরে তাকালে ও নিজের আঙ্গুলে ওড়নার এক প্রান্ত জড়াতে জড়াতে বললআমার কিছু বলার ছিল। অরিত্র ওকে বলো বলার পরেও কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকার পর বললএখন নাবিকেলে। তারপরেই মুখ তুলে অরিত্রর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলতুমি থাকবে তো বিকেলে? কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয়তো দুজনের চোখে চোখ আটকে গিয়েছিল নিজেদের অজান্তেই। মৌ ওর চোখে কি খুঁজতে চেয়েছে না বুঝলেও অরিত্র অবচেতন মনে হয়তো খুঁজতে চেয়েছিল ওর চোখের সেই হারিয়ে যাওয়া আকুতি, কিছু বলতে চাওয়ার ইচ্ছে... কিন্তু দেখতে পেলো কি তা? মনে হল ওর দুচোখে যেন যন্ত্রনার স্পষ্ট আভাস, চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আস্তে করে বলল...হ্যাঁ থাকবো। উত্তরটা দিয়ে ও ভাবছিল... এতদিন পরে তুমি আমাকে কিছু বলতে চাইছো... আমি কি পারবো তোমাকে এড়িয়ে যেতে? ওদিক থেকে আর কোনো সাড়া না পেয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখলো মৌ নেই...কখন যেন নিঃশব্দে ফিরে গেছে... 
Like Reply


Messages In This Thread
মৌ কথা কও by Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:21 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:22 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:23 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:24 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:25 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:27 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:29 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:30 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:31 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:32 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:40 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:42 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:43 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:44 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:46 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)