Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#10
দেখতে দেখতে এক মাস প্রায় কেটে গেছে। রোজ ওদের কি এত কথা হয়েছে নিজেরাই জানে না, বোঝে নি। বোঝার চেষ্টা ও করেনি। এরকম একটা সন্ধে, মোটামুটি ঠান্ডা বাইরে, কেউ একজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন ডাক আসবে, কানের পাশেই ফোন, ফোনের রিসিভ বাটনে আঙ্গুলটা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। ইস, আজকে এত কি কথা বলছে দাদুদের সাথে, ভুলে গেছে নাকি আর একজন কখন থেকে বসে আছে। বুকে ওর কোল বালিশটা চেপে ধরে স্বপ্নের ভেতরে চলে যেতে যেতে মনে হল কেউ জিজ্ঞেস করছেএইকি করছো?
 
কখন রিং এসেছে আর ও রিসিভ করেছে নিজেই জানে না, দুষ্টুমি ভরা স্বরে উত্তর দিলোউমমকি করছি?
 
হুম
 
বলবো না
 
কেন?
 
তুমি এত দেরী করলে কেন?
 
হুমদাদুর ডাক্তার দেখানোর খোঁজ নিচ্ছিলাম।
 
আমি আছি নাতুমি এত চিন্তা করো কেন?
 
জানি, তবুও জিজ্ঞেস করে নিলাম।
 
কি করছি? তুমিই বআচ্ছা চলোতুমিই বা কি করে জানবে। উমমজানোআমি এখন তোমার বিছানায় শুয়ে আছিওইদিন তুমি আমাকে যেখানে শুইয়ে দিয়ে আদর করেছিলেঠিক সেখানেই।
 
তাই? তা আজ তো কেউ নেই আদর করার
 
আছে তো।
 
কে?
 
তোমার কোল বালিশটা আমার বুকে জড়িয়ে ধরে আছি আর ভাবছি তুমি আমাকে আদর করছো
 
ইস, যাই একবার, ওটাকে গঙ্গায় ফেলে দেব। আমার জায়গায় ওটা কেন থাকবে
 
না ফেলবে নাতুমি না থাকলে, কে আমাকে আদর করবেলো
 
আচ্ছা ঠিক আছে ফেলবো নাএবার বলো
 
দাঁড়াও না, আরো একটা আছেগান শুনছিলাম
 
কি গান?
 
উমমদাঁড়াওআওয়াজটা বাড়িয়ে দিদুজনে মিলে শুনবোকেমন?
 
হুমদাও
 
মনে হল বহু দুর থেকে ভেসে এলোসেই কথা গুলোযা শুনতে পেলে মন চায়না আর কিছু
 
 
 
ভালোবাসিভালোবাসি
 
এই সুরেকাছে দূরেজলে স্থলে বাজায় বাজায় বাঁশিভালোবাসিভালোবাসি
 
আকাশে তার বুকের মাঝেব্যাথা বাজেদিগন্তে তার কালো আঁখিআঁখির জলেযায় ভাসি
 
ভালোবাসিভালোবাসি ভালোবাসি
 
সেই সুরেসাগর কুলেবাঁধন খুলেঅতল রোদনউঠে দুলে
 
সেই সুরেসাগর কুলেবাঁধন খুলেঅতল রোদনউঠে দুলে
 
সেই সুরেবাজে মনেঅকারনে ভুলে যাওয়া গানের বানীভোলা দিনের কাঁদনকাঁদন হাসি ভালোবাসিভালোবাসিভালোবাসিভালোবাসি
 
এই সুরেকাছে দূরেজলে স্থলে বাজায় বাজায় বাঁশিভালোবাসিভালোবাসি
 
আকাশে তার বুকের মাঝেব্যাথা বাজেদিগন্তে তার কালো আঁখিআঁখির জলেযায় ভাসি
 
ভালোবাসিভালোবাসি ভালোবাসি
 
গানটা শেষ হয়ে গেলেও বুকের ভেতরে ভালো লাগার রেশ টা থেকে গেছেফিস ফিস করে একজন জিজ্ঞেস করলএইকি শুনলে?
 
উত্তর এলোতুমি আমাকে বললে
 
অধীর আগ্রহে আগের জন জিজ্ঞেস করলকি? বুকের ভেতরে দ্রিম দ্রিম আওয়াজও কি বলে শোনার জন্য
 
ভালোবাসি”…
 
ওই ছোট্ট কথাটা শুনে বুক ভরা ভালোলাগা নিয়ে ফিস ফিস স্বরে জবাব দিতুমিও তো বললে আমাকে…“ভালোবাসিভালোবাসি”…
 
 
 
 
 
দুমাস হতে আর দুদিন বাকি আছে। মাঝে একজন বলেছেএই, জানো তোখুব লজ্জা করে, তোমার সাথে এতক্ষন ধরে কথা বলি, দিদানরা কি ভাবে কে জানে। মেজদির ওখানে যে ক দিন ছিলাম কোনো ব্যাপার ছিল না, জেঠিমা বুঝতেই পারতো না আমি ফোনে আছি।
 
উত্তর এসেছেকিছু ভাবে নাসবাই বোঝে।
 
কি বোঝে?
 
কে জানেওরা কি বোঝে।
 
ধ্যাত, তুমি না
 
হুম, জানি তোআমি খুব দুষ্টু।
 
তাই তোতাছাড়া আবার কি।
 
এই, জানো তো
 
কি?
 
থাক, দেখা হলে বলব।
 
এই, লো না।
 
উমমএকটা চুমু দেবে?
 
না দেব না, বিচ্ছু কোথাকার
 
এইপ্লিজদাওনা
 
ছোট্ট একটা মিষ্টি আওয়াজ ভেসে এলো কানে
 
 
 
একটি মিষ্টি মেয়ের আজ খুশীর অন্ত নেইআজ ওর ও ফিরে আসছে। এই তো আসার সময় হয়ে এলো বলে। বারে বারে জানলার কাছে গিয়ে দেখছে, এলো কিনা। আসুক, খুব বকে দেবোকথাই বলবো না। কত করে বললামকি হয়েছে, গেলে, তোমাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এলে। আমি কি বাচ্চা নাকি, হারিয়ে যাবো। শুনলোই নাইস, কত কথানা, দাদুর শরীর খারাপ,তুমি একা একা কি করে আসবে। আরে বাবা, তেমন হলে পুবালী দি কে বলাই যেতো, আমাকে নিয়ে যেতো এসে। তাও কি শুনলো নাকিনা নাছোড়দির এখন সময় কোথায়, অফিস, তারপর আবার বিয়েটা ঘাড়ের উপরে এসে গেছে। রুপসা হলে ঠিক ছিলও অনেক স্মার্ট। ইস,আমি যেন স্মার্ট নই। এই তো ট্রেনে চেপে দমদম আর ওখান থেকে না হয় একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিতাম। তাতেও আপত্তি, একা সুন্দরী মেয়ে পেয়ে যদি ট্যাক্সি অন্য কোথাও নিয়ে চলে যায়। ইস, এতো সোজা নাকি, নিয়ে চলে গেলেই হল।
 
ইস, কত কি মিস করলাম জানো? তোমার তো গাড়ী বুক করাই আছে, আসার সময় কি সুন্দর তোমার একেবারে গা ঘেঁষে বসতাম, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে, তোমার কাঁধে মাথা রেখে গল্প করতে করতে আসা যেত। গাড়ির ড্রাইভার তো আর আমাদের কে চেনে না, লুকিয়ে তুমি আমাকে একটা হলেও তো চুমু খেতে পারতে। আমিও দিতাম না হয় আধখানা চুমু। তার বেশী চাইলেও দিতাম না, কেন দেবো ব, আমি যে সেদিন তোমাকে ফোনে চুমু দিলাম, তুমি তারপরে কতক্ষন চুপ করে থাকলে,কই আমাকে তো দিলে না একটা চুমু। ইস, জানো , কত কথা জমে আছেফোনে এত কিছু বলা যায় নাকি। জানলার গ্রীল টা দুহাতে ধরে চোখ বুজে স্বপ্নের ভেতরে থাকতে থাকতে মনে হল একটা গাড়ী এসে দাঁড়ালো। নিশ্বাস আটকে গেছে, কেউ এক জন ওর দিকে তাকিয়ে আছেদুজনের চোখাচুখি হয়ে গেলে কেউ যেন চোখ ফেরাতে পারছিল না। স্বপ্নটা বেশী সময় ধরে দেখা গেল না। দাদুরা বেরিয়ে এসেছে। তাই ওকেও নীচে নেমে আসতে হল।
 
ইস, হটাত এত লজ্জা কোথা থেকে এলো কে জানে মেয়েটার, শুক্লাদির পেছনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। কাঠবিড়ালীর মতো উঁকি দিয়ে দেখছে ওকেএই ক দিনে কি একটু মোটা হয়েছে? ধুস, মনে তো হচ্ছে তো একই রকমনা নাএকটু যেন ফর্সা হয়ে গেছেনানাতাও তো নয়ওর গায়ের রং তো এরকমই। তাহলে? কি হয়েছে? হুম বুঝেছিএকটু যেন বেশী হ্যান্ডসাম লাগছে। তাই, হবেএখন আর আগের মতো বুদ্ধু বুদ্ধু দেখাচ্ছে না তো। ইস, ওকে বুদ্ধু বুদ্ধু লাগে নাকি দেখতে? সবাই ওকে বুদ্ধু বললে কি ও বুদ্ধু হয়ে যাবে নাকি।
 
সন্ধে সাড়ে সাতটা প্রায় বাজে। দাদুদের সাথে অনেক সময় ধরে গল্প করতে হয়েছে অরিত্রকেজায়গাটা কেমন, ওখানকার মানুষ জন কিরকমইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে দিদানের বকুনি খেয়ে তবে দাদু ওকে ছেড়েছে। অরিত্র নিজের ঘরে উঠে এসেছে একটু আগে, ভালো করে স্নান করতে হবে হাল্কা গরম জলে, না হলে শরীরটা ঠিক হবে না। শাওয়ারের উষ্ণ ধারায় ভিজতে ভিজতে মৌ এর লজ্জা পাওয়া মিষ্টি মুখটা মনের আয়নায় ভেসে উঠল। বুকের ভেতরের ভালো লাগা সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল হাসি হয়ে। ভুলেই গেছে স্নান শেষ করতে হবে। নিজেই জানে না কতক্ষন হয়েছে ও স্নানে ঢুকেছে। বাথরুমের দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দেবার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলো মৌ ছাড়া আর কেউ নয়খুব ইচ্ছে হল আস্তে করে দরজাটা খুলে ওকে ভেতরে টেনে নেয়কতদিন হয়ে গেছে, ওকে আদর করতে পারেনি, চুমু খেতে পারেনি। এখন তো আর কেউ উপরে আসবে না, যতক্ষন খুশী ওকে আদর করতে পারবে। নিজেকে সামলে নিতে হনাঃএখন এই ভাবে ওকে এখানে টেনে নিয়ে আসাটা ঠিক হবে না। ও লজ্জা পেয়ে যাবে ওকে দেখলেতাছাড়া ভেজা গায়ে ওকে জড়িয়ে ধরলে ওর জামাকাপড়ও ভিজে যাবেদিদানরা কি ভাববেথাক। আস্তে করে সাড়া দিল ভেতর থেকেহ্যাঁআসছিহয়ে এসেছে। মিষ্টি মেয়ের আরো মিষ্টি আওয়াজ ভেসে এলো কানেতোমার জন্য কফি নিয়ে এসেছিঠান্ডা হয়ে যাবে কিন্তুদেরী কোরো না।
-              উমমমতাই? ঠান্ডা হবে কেন?
-              বা রেঠান্ডা হবে না?
-              উঁ হূঁতুমি আছো তো
-              ইস, তুমি আছো তোএকদম দুষ্টূমি নয়তাড়াতাড়ি এসো...
-              হুআসছি
 
মৌ কফির কাপটা ঢাকা দিয়ে জানলার কাছে গিয়ে কি ভেবে জানলাটা খুলে দিলে এক ঝলক শীতের ঠান্ডা হাওয়া ঘরের ভেতরে এসে ওকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলে ঘরে ইনভার্টারের আলো থাকলেও বাইরেটা চাঁদের মিষ্টি আলোয় ভেসে যাচ্ছেআজ কি পূর্নিমা? কি জানিহবে হয়তো। চাঁদের নরম আলো নদীর ছোটো ছোটো ঢেউ গুলোকে যেন আদর করে দিয়ে যাচ্ছে। শীতের সন্ধেচারদিক প্রায় নিস্তব্ধনিঃসঙ্গ নদীর বুকে একটা খড় বোঝাই নৌকো জল টানার ছপ ছপ আওয়াজ করে আস্তে আস্তে পেরিয়ে গেলমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খেয়াল করেনি কখন ওর ও এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। ওর সদ্যস্নাত শরীরের সুগন্ধ বুক ভরে নিতে নিতে মনে হচ্ছিল এই বাঁধন যেন না আর খোলে। কখন ওর ও ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বুকে চেপে ধরেছে হয়তো বুঝতে পারেনিমৌ ওর দুষ্টুর বুকে মাথা রেখে বুক ভরা ভালোলাগা নিয়ে ভাবছিলসারা বিকেলটা কত অভিমান হচ্ছিল ওর উপরেকই, এখন তো আর কিছু মনে হচ্ছে নাবুকে টেনে নিয়েছে বলে সব অভিমান গলে জল হয়ে গেল? জানি তো, এটাই ভালোবাসা। কাছে না পেলে অভিমান হয়কাছে পেয়ে গেলে মনে হয়কি জানিকি মনে হয়ইচ্ছে করে শুধু যেন ওর কাছে থাকতে পারি। এই, কিছু কি বললে তুমি? কি জানিমনে হল তুমি কিছু বললে আমাকেআমার যে এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে নামন চাইছেতোমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।
- এই মৌ
- উঁ
- কি ভাবছো?
অস্ফুট স্বরে জবাব এলোজানি না। অরিত্র ওর মুখটা তুলে ধরলে চোখে চোখ রেখে তাকালোদুচোখে নীরব জিজ্ঞাসালো, ডাকলে কেন
-              কথা বলবে না আমার সাথে?
মাথা নেড়ে জানালোনা
-              কেন?
ঠোঁট ফুলিয়ে উত্তর দিলআমার ইচ্ছে
- হুমতাহলে আমি যাইদাদুর কাছে
- ইসকেন?
- বা রে তুমি কথা না বললেআমি কি করি।
- উমমআমার ইচ্ছে করছে না
দুষ্টু ছেলেটা ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলকি ইচ্ছে করছে?
- জানি না
- এই, দেবে না?
- নাদেবো না
- কেন?
- জানি না
- সবেতেই জানি না?
- হু
- আমি জানি
- কি?
মুখে কিছু না বলে, চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে নেমে এলো তৃষিত ঠোঁট, ছুঁয়ে থাকল আর এক জনের তির তির করে কেঁপে যাওয়া ঠোঁটেমন ভরে গেছে ওরমন যা চাইছিল তা পেয়ে গেছেএখন আর কথা বলতে অসুবিধা নেই ভেবে মনে পড়ে গেলইসআমি ওকে আটকে রেখেছি কেনভেবে বলতে হতোমার কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে
-              হোকআমার চাই না এখন
-              ইসকেনএত কষ্ট করে বানালাম তোমার জন্য...
-              কফি বানানো সব থেকে সোজা
-              তুমি কিচ্ছু জানো না
-              উমম কি আছেশুধু দুধ চিনি আর কফি...
-              ইসআমার ভালোবাসা নেই বুঝি ওতে? আর কারুর জন্য তো বানাইনিশুধু তোমার জন্য
-              জানিতবুও
-              কি?
মুখে কিছু না বললেও একজনের আঙ্গুল আলতো ভাবে ছুঁয়ে গেল ওর নরম ঠোঁটেযেন বোঝাতে চাইলো এখানে যে আরো বেশী ভালোবাসা আছে আর তাই বুঝে একজন প্রশ্ন করেছে...
-              আর কোথাও নেই?
-              আছে
-              কোথায়?
এবারেও আর কিছু না বলে ওকে কোলে তুলে নিলে দুহাতে ওর গলা জ়ড়িয়ে ধরে নিয়ে তাকিয়ে থাকলো চোখে চোখ রেখেকখন ওকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়েছে হয়তো বোঝেনি...চোখে চোখে দুজনের কি কথা হচ্ছে আর কেউ দেখলেও বুঝবে না কিন্তু ওদের একজনের নীরবে বলে যাওয়া কথা আর একজনের বুঝতে অসুবিধা হয়নি...দু চোখের দৃষ্টিতে বুঝিয়েছে..আমি তো জানি তুমি আমার কোথায় আরো বেশী ভালোবাসা আছে জানো আর এটাও জানি তুমি এখন কি চাইছো...আমি কি তোমাকে না বলবো বলো...আমিও তো চাইছি...তুমি তোমার ভালোবাসাকে খুঁজে নাও। ওর নীরব সম্মতি পেয়ে গিয়ে আকাঙ্খা ভরা বুকে একজন মুখ ডুবিয়েছে সেই ভালোবাসার খোঁজে...আর একজন চোখ বুজে থেকে সেই পরম আকাঙ্খিত স্পর্শ সুখ নিজের শরীর মন দিয়ে অনুভব করতে করতে ভাবছে...আমার মতো সুখী কে আর আছে।
 
পুবালীর বিয়ের আর মাত্র দিন পাঁচেক বাকি আছে। মৌকে দিয়ে আসতে হয়েছে ওর কাছে, আর কটা দিন বাদেই জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেএই সময় খুব কাছের কাউকে সাথে পাওয়াটা খুব দরকার। অরিত্রও অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে দু এক দিন ছাড়া ঘুরে আসছে, সব কিছু ঠিক করা হয়ে গেলেও এই সময় পাশে থাকার আলাদা মানে আছে। এমনিতে দাদুরা খুব একটা কোথাও না গেলেও বিয়েতে আসতেই হবে, জেঠু জ়েঠিমা এসে খুব করে বলে গেছেনা গেলে চলবে না। বিয়ের দুদিন আগেই দাদুদেরকে নিয়ে অরিত্রকে চলে আসতে হয়েছে। রুপসারাও চলে এসেছে একই দিনেকিছুক্ষন আগে আর পরে। এমনিতেই এত বড় বাড়ী প্রায় খালি পড়ে থাকে, মাত্র তিনটে মানুষ থাকলেও মনে হয় যেন কেউ নেই। এখন যেন বাড়ীটা ভরে উঠছে একটু একটু করে। এত আনন্দের মাঝেও দাদু দিদানের সাথে সাথে নিজেরও কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল দাদু আর দিদানকে বাবা মায়ের ঘরে চুপ করে বসে থাকতে দেখে। আজ যদি ওরা থাকতো ভেবে নিজের বুকের ভেতরটাও যেন রক্তাত হয়ে উঠতে চাইছিল। আনন্দের দিনে বুকে দুঃখ জমিয়ে রাখতে নেই তাই নিজেকে সামলে নিয়ে দাদু দিদানকে ডেকে নিয়ে গেল নিচে
একা রুপসাই যেন পুরো বাড়ীটা মাতিয়ে রেখেছে। সত্যিই পারে মেয়েটা, এত প্রান চঞ্চলওর কাছে থাকলে দুঃখ বলে কিছু আছে যেন মনেই হয় না। ওর সাথে পড়ে মৌ-ও যেন প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। বিয়ের আগের দিন, আরো কিছু আত্মীয় স্বজন এসে গিয়ে বাড়ীটা আরো গমগম করছেদুপুরে খেতে অনেকটাই দেরী হয়েছে গিয়েছেঅরিত্র ছাদে উঠে প্যান্ডেলটা ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখে একটা চেয়ারে বসে ভাবছিল আর কিছু বাকি আছে কিনা দেখে নেবার। পেছন থেকে কেউ ওর দুচোখে হাত চেপে ধরলে ও প্রায় চমকে উঠল। চোখের উপর কার হাত হতে পারে বুঝতে গিয়ে মনে হল... নামৌ নয় মনে হচ্ছেও কাছে এলেই কেমন যেন অন্যরকম লাগেঠিক কি রকম কেউ জিজ্ঞেস করলে বোঝাতে পারবে না কিন্তু নিজে ঠিক বুঝতে পারেহুমমরুপসা ছাড়া আর কেউ নয় ভেবে বললএই রুপসা ছাড়বলার পরেও হাত টা চোখের উপর থেকে সরে না গিয়ে আরো চেপে ধরল। তার মানে কি রুপসা নয়? নারুপসাই হবে ভেবে বললরুপসা ছাড়আমি বুঝে গেছিতুই ছাড়া আর কেউ নয়। রুপসা খিল খিল করে হেসে উঠে হাতটা সরিয়ে নিয়ে পেছন থেকে সামনে এসে কোমরে হাত রেখে বললকি করে বুঝলি দাদা ভাই?
- মনে হ
- নামৌ-ও তো হতে পারতোআগে বল কি করে বুঝলি
কি বলবে ওকে, এটা যে নিজের মন দিয়ে অনুভব করার জিনিষ, মুখে বলে তো আর বোঝানো যায় না সব কিছুহেসে ফেলে বললমৌ ওরকম করবে না জানি।
- ইস, মৌ ওরকম করবে না জানিকেন করবে না শুনি? ওর কি ইচ্ছে করে না নাকিকখন থেকে মন খারাপ করে আছে। তুই একবারও ওর সাথে কথা বলেছিস আজ সকাল থেকে।
- আরে তোরা ব্যাস্ত সবাই।
- ঘোড়ার ডিম ব্যাস্ত। জানিস না নাকি বিয়ে বাড়িতে মেয়েরা হচ্ছে Busy without business… দেখে মনে হবে কত না কাজ করছেআসলে ঘোড়ার ডিমের কাজকে কেমন সেজেছে তাই দেখে বেড়ানো ছাড়া আর নেই তো কিছু করার
- তাই?
- হুতাছাড়া আবার কিএই মৌকি হ, এদিকে এসোআমাকে কি তোমার হয়ে ওর সাথে গল্প করতে হবে নাকি?
অরিত্র পেছন ফিরে দেখে মৌ কিছুটা দুরে মুখে ওড়নাটা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর লজ্জা মাখানো মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে গেল রুপসা সামনে দাঁড়িয়ে আছেওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলেএখুনি হয়তো পেছনে লাগবে। ও ভুলে গেলে কি হবে? রুপসা বলেই ফেলল- হুম, এই তোচোখের পলক পড়ে না যেএই মৌআসতে পারছো না এদিকে? মৌ আসছে না দেখে রুপসা নিজেই এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললউঃআর পারিনাকি লজ্জামরে যাই
 
আজ বিয়ের দিন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যে কজন আত্মীয় স্বজন আসার বাকি ছিল তারাও এসে গেছে এক এক করে। এত দিন ধরে যে বাড়ীতে মাত্র তিনটে মানুষ থাকতো সেই বাড়ীটাকে যেন চেনাই যাচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে যেন চাঁদের হাট বসে গেছে। দীর্ঘদিন এই বাড়ীতে কোনো আনন্দ অনুষ্ঠান হয়নি বলে জেঠুরা কাউকে বাদ রাখেননি নিমন্ত্রন করতে, শুধু তাই নয় সবাই যাতে আসে তার জন্য নিমন্ত্রন করে আসার পরেও আবার ফোনে যোগাযোগ করেছেন। দু এক জন যাদের খুব অসুবিধা আছে তারা ছাড়া প্রত্যেকেই এসেছেন। এতদিন পর আবার সবার সাথে দেখা হবার সুযোগ কেউ ছাড়তে চান নি। অরিত্র আর রুপসার অবস্থা খুব খারাপ, বহুদিন পর দেখা সাক্ষাত হওয়াতে আর এত জনের ভীড়ে কাউকে সকালে মাসীমনি বলে ডেকেছে তো দুপুরে ভুল করে পিসীমনি বলে ডেকে ফেলেছে। কেউ হয়তো সবার সামনে গাল টিপে আদর করে ফেলে বলেছে...ও মা রুপসা..তুই কতো বড় হয়ে গেছিস। সেই তোর অন্নপ্রাশনে এসে তোকে কোলে করে নিয়ে কান্না থামিয়েছিলাম। অরিত্রর সাথেও কম বেশী একই ব্যাপার ঘটেছে। মৌ প্রায় সারাক্ষন রুপসার সাথে থাকায় ওর পরিচয় নিয়েও স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠলে ও রাখঢাক না করেই বলে দিয়েছে...এ হোলো আমার আদরের হবু বৌদি...মৌ। অরিত্রকে যারা মনে রেখেছে তারা খুব খুশী এত মিষ্টি মেয়ে এই বাড়ীর বৌ হয়ে আসবে জেনে। কিছুটা অন্যরকমের ঘটনাও ঘটে গেছে হঠাৎ করে, কেউ একজন মৌ এর পরিচয় জানতো না। মেয়েটাকে দেখে এত ভালো লেগে গেছে যে কোনো কিছু না বুঝেই নিজের নাতির সাথে বিয়ে দেওয়া যায় কিনা সেই নিয়ে জেঠিমার সাথে কথা বলে ফেলেছে। তারপরে জেঠিমার কাছ থেকে শুনে লজ্জায় কি করবে নিজেই ঠিক করতে পারছিল না। জেঠিমার কাছ থেকে পুবালী আর পুবালীর কাছ থেকে রুপসা শুনেই প্রায় লাফাতে লাফাতে অরিত্র কোথায় আছে খুঁজে পেতে বের করে বলেছে...দাদাভাই...সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছিল রে। ওর কথা বলার ভঙ্গী দেখে অরিত্র কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করেছে...কি হয়েছে? তারপর বোনের কাছে শুনে হেসে ফেললে রুপসা রেগে গিয়ে বলেছে... তুই কি রে দাদাভাই? তোর এটা ছোট ব্যাপার মনে হচ্ছে? আমার শুনেই রাগে গা রি রি করছে আর তুই হাসছিস?
-              কি করবো...বিয়ে বাড়িতে এসব একটু আধটু হবে, তুই তো আছিস ওকে আগলে রাখার জন্য...
-              হু...তুই তো আছিস...আমি কি পাহারাদার নাকি যে তোর জিনিষ পাহারা দেবো...আচ্ছা শোন না...সন্ধেবেলা কিন্তু তুই আবার এদিক ওদিক কেটে পড়িস না...আমাদের কাছে কাছে থাকবি...বুঝলি?
-              কেন রে?
-              ধুস তুই না কিছু বুঝিস না...বর যাত্রীদের ভেতরে তো কিছু ছেলে থাকবেই...
-              সে তো থাকবেই...কি হয়েছে তাতে? একটু না হয় তাকাবে...
-              শোন তোকে এত সাধু সাজতে হবে না...তুই আমাদের পাশে পাশে থাকলে বুঝে যাবে বুকিং হয়ে আছে...ঝাড়ি মেরে লাভ নেই...বুঝলি?
বোনের কথা শুনে আর হাসি চেপে রাখতে না পেরে অরিত্র বলল...আচ্ছা এক কাজ করি...তোর পেছনে লিখে দেবো বুকিং ওপেন আর ওর পেছনে লিখে দেবো বুকিং ক্লোজড, তাহলে আর ওর দিকে কেউ তাকাবে না ... উল্টে তোর কপালে কেউ একটা জুটে যেতে পারে।
 
বিকেলে এক ফাঁকে পুবালী কাকু কাকীমার ঘরে এসেছে প্রনাম করে যেতে, সাথে রুপসা আর মৌ। এর পরেই বিউটিশিয়ান সাজাতে এসে যাবে তাই আর সময় পাবে না আসার। যতই বাড়ীতে লোকজন আসুক এই ঘরটা বন্ধ করা ছিল, জেঠু জেঠিমা একেবারেই চায় না এই ঘরের কোনো কিছু এদিক ওদিক হোক। পুবালীর প্রনাম করা হয়ে গেলে রুপসা মৌকে কাকু কাকীমার ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল...কে বলো তো? মৌ একটু অবাক হয়ে বলল...জানি না নাকি...তোমার কাকু। রুপসা হাসি মুখে বলল...হু...সে তো আমার কাকু বটেই...আর কি? ছোড়দি কি শুনতে চাইছে বুঝতে পেরে মৌ এড়িয়ে গিয়ে আস্তে করে বলল...ওর বাবা। হু...সেটাও ঠিক...আর কি? বলো বলো...।
দিদি কিছুতেই ছাড়বে না দেখে মৌ আস্তে করে বলল...এখোনো তো হয়নি। ইস...এখোনো হয়নি...কি হয়েছে তাতে? মৌ বেশ লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে দেখে হেসে ফেলে বলল...আচ্ছা থাক...আর এত লজ্জা পেতে হবে না। তারপরেই কথা ঘুরিয়ে বলল...কাকুর ছবিটা দেখো...কি হ্যান্ডসামআমার তো ভীষন ভালো লাগে...কাকীমাও কি সুন্দর...দাদাভাইটা ওই জন্যই এত হ্যান্ডু হয়েছে...তাই না? মৌ এতক্ষনে পেছনে লাগার সু্যোগ পেয়ে মুখ টিপে হেসে বলল... হু তাই হবে...তোমার তো আবার দেখলেই নাকি বুকের ভেতরে ছলাৎ ছলাৎ করে উঠতো। রুপসাও ছাড়ার পাত্রী নয়, কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বলল...আমার তো না হয় ছলাৎ ছলাৎ করে উঠতো ...আর তোমার? তোমার তো বড় বড় ঢেউ ওঠে...চারদিক ভাসিয়ে নিয়ে যায়...তাই না? ছোড়দির পেছনে লাগতে গিয়ে যে নিজেই বিপদে পড়ে যাবে বুঝতে পারেনি। কি বলবে বুঝতে না পেরে পুবালীর দিকে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি গোছের ভাব করে তাকালে ও হেসে ফেলে বলল...রুপসা তুইও না...খুব ফাজিল আছিস...পেছনে লাগতে পারলে যেন আর কিছু চাই না। 
Like Reply


Messages In This Thread
মৌ কথা কও by Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:21 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:22 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:23 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:24 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:25 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:27 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:29 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:30 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:31 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:32 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:40 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:42 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:43 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:44 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:46 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)