Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#9
মুখটা নীচু করে নিয়ে আস্তে আস্তে বললতাছাড়া আবার কি? প্রেম একবারই আসেআমি অন্তত তাই মনে করি
 
কি বলবে ওকে নিজেও জানতো নাবন্ধুর বোন হিসেবে দেখতোভালো যে লাগতো নাতা নয়কিন্তু ওর কাছে সেই ভালো লাগার অন্য কোনো মানে ছিল নাসুস্মিতা যে এতটা এগোবে বুঝতে পারেনি যখন বুঝেছিল তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল।
 
একটা কথা বলবো? কিছু মনে করবে না তো?
 
বলো
 
আমি কিন্তুতোমাকে
 
বুঝেছিলা্মঅনেক পরেতখন অনেক দেরী হয়ে গেছেযাক গে বাদ দাওঅনেক কিছু তো আমরা চাইসব কিছু তো আর পাওয়া যায় নাখুব টেনশান হয়নতুন করে আর একজনকে ভালোবাসতে হবেজানি না পারবো কিনাতবুও চেষ্টা করতে হবেএকটাই সান্তনাযাকে ভালোবাসা দিতে চেয়েছিলামসে আমাকে ঠকায় নিনিতে পারবে না বুঝে দুরে সরে গিয়েআমাকে হয়তো কিছুটা হলেওবাঁচিয়ে দিয়ে গেছে।
 
চুপ করে দাঁড়িয়ে ওর কথা গুলো শুনছিলবলার তো কিছুই নেই ওকেতবুও শেষের কথা গুলো শুনে বুকের ভেতরের পাথরটা কিছুটা হলে যেন সরে গেল। পেছন থেকে পবনের গলা শুনে ফিরে তাকালোওকে দেখতে না পেয়ে খুঁজে এসেছেসাথে মৌমৌ প্রথমে হয়তো বুঝতে পারেনি ও কারুর সাথে আছে বা ওকে দেখতে পেয়ে আর কিছুর খেয়াল করতে পারেনিমিষ্টি বকুনীর স্বরে বললএইকি ব্যাপার বলোতো তোমারকখন থেকে দাঁড়িয়ে আছিতারপরেই বোধহয় সুস্মিতা কে দেখে একটু থমকে গিয়ে চুপ করে গেল।
 
 
 
অরিত্র ওদের আলাপ করিয়ে দিতে দিতে সুস্মিতা নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছিলহাসি মুখে বললঅরিত্রদা এসো কিন্তু বিয়েতেএই মৌতোমারও আসা চাইনা এলে কিন্তু খুব রাগ করবোযাবার আগে মৌ এর হাত ধরে হাসতে হাসতে বললএই মৌকিছু মনে করবে না তোএকটা কথা বলবো?
 
না নালো না
 
তোমাকে দেখে কিন্তু আমার খুব হিংসে হচ্ছে। এই, প্লিজ কিছু মনে করবে না কিন্তুএমনিই বললাম।
 
রাতে খেতে বসে মৌ বেশ চুপচাপখুব আস্তে আস্তে ওকে খেতে দেখে দিদান জিজ্ঞেস করলকি হয়েছে রে মৌশরীর খারাপ? ভালো লাগছে না?
 
একটু ভারী গলায় বললনাএমনিইঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে
 
অরিত্র উল্টোদিকে বসে খেতে খেতে মুখ তুলে তাকালোসারা মুখে বিষন্নতাবুঝতে অসুবিধা হল নাকারনটা কি হতে পারে। একজন মেয়ে হয়ে আর একজনের ব্যাথা ভরা মুখ দেখলে না বোঝাটা খুব একটা অসম্ভব নয়। বাকি সবার খাওয়া হয়ে গেছে দেখে অরিত্র বললদাদুতোমরা যাওআমি আছি। ব্যাপারটা এমনই যে ভালো না লাগলেও ওর সাথে কথা বলতে হবেনা হলে ও কি বুঝে বসে থাকবে কে জানেভাবতে ভাবতে আবার ওর দিকে তাকালোমুখ নিচু করে বসে আছেবিশেষ কিছুই খায়নি। খেয়ে নিতে বলাতে মুখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার মুখ নামিয়ে নিয়ে বললভালো লাগছেনা।
 
রাতে ক্ষিধে পেয়ে যাবে তো।
 
অভিমানী গলায় আস্তে করে বললইচ্ছে করছেনা।
 
কেন?
 
এমনি
 
 
 
ও নিজের থেকে কিছু বলবে না বুঝতে পেরে বলতেহলসুস্মিতা আমার বন্ধুর বোন
 
আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি
 
মৌ নিজের মুখে কিছু না বললেও মনের ভেতরে কি আছে না বোঝার কথা নয়কিন্তু কি করে ওকে বুঝিয়ে বলবে ঠিক করতে পারছিল না। একটু চুপ করে থাকার পর বললতুমি যেটা ভাবছো তা নয়তবে
 
ওকে থেমে যেতে দেখে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলোকিছু না বলে মুখ নামিয়ে নিয়ে বসেছিলবুকের ভেতরের কষ্টটা ভীষন ভাবে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে
 
আমার দিক থেকে কিছু না থাকলেওসুস্মিতা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। বোঝা গেল না কি বুঝলোআগের মতোই চুপ করে বসে ছিল পাথরের মতোএকটা আঙ্গুল দিয়ে ডিসের উপরে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে
 
প্লিজবিশ্বাস করআমি সরে এসেছিলাম
 
এতক্ষন পরে একটাই কথা জিজ্ঞেস করলতোমার দিক থেকে সত্যিই কিছু ছিল না?
 
না
 
কিছুক্ষন আর কোনো কথা হোলো নাদুজনেই চুপ করে বসে ছিলএকজন ভাবছিলও কি বিশ্বাস করেছে আমার কথা? যদি না করতে পারে তো সারা জীবনের জন্য সন্দেহের একটা কাঁটা বুকের ভেতরে থেকে যাবে। আর একজন ভাবছিলআমাকে হয়তো ও খুব খারাপ ভাবছেওর দুচোখে কান্নার আভাসনা বুঝে কেন ওর সাথে এরকম করলামধরা গলায় বললকিছু মনে কোরো নাবুঝতে পারিনি
 
নিজের কানকেই যেন বিস্বাস হচ্ছিল নাকি বলছে ও? ও যে কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পেরে বললনা কিছু মনে করিনি। তুমি কেন অন্য কেউ হলেও একই হোতো।
 
কিছুক্ষন দুজনেই চুপঅরিত্রকে এর পরেও গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখে বললআমি জানিতোমার খারাপ লেগেছে
 
মুখে হাসি আনতে চেয়েও পারলো নাখুব ম্লান দেখালো সেই হাসিতোমার জন্য নয়সুস্মিতার একটা কথা মনে পড়ে গেল
 
জিজ্জেস করা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছিল না মৌচুপ করে থেকে অপেক্ষা করছিলযদি ও নিজের থেকে বলে
 
অরিত্র টেবিলে রাখা জলের গ্লাসটার ভেতর দিয়ে ওদিকে দেখার চেষ্টা করতে করতে নিজের মনেই বললতোমার জানতে ইচ্ছে করছে না?
 

 
কি বললো জানো… ‘হয়তো এখোনো ভালোবাসি’… কিছুতেই ভুলতে পারছি নাখুব খারাপ লাগছেওর জন্য। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললচলো তোমাকে দিয়ে আসি
 
কোথায়?
 
ভালো লাগছে নাএতক্ষন তোমার কথা ভেবে খারাপ লাগছিল আর এখন ওর কথা ভেবে
 
একা একা তো আরো খারাপ লাগবে
 
আজ খুব খেতে ইচ্ছে করছে
 
আমি তোমার সাথে থাকবো?
 
থাকবে? ঠিক আছেচলোবলে আসিনা হলে দিদানরা চিন্তা করবে।
 
রাত সাড়ে এগারোটামৌ খেতে পারেনি বলে ওর জন্য আরো একবার কিছু খাওয়ার আর সাথে নিজের জন্য একটা বড় পেগ আনানো হয়েছে। সোফাতে ওর বুকে মাথা রেখে মৌ বসেএক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে থেকে একটু একটু করে খাইয়ে দিতে দিতে দুজনে কথা বলছে। খাইয়ে দিতে গেলে আঙ্গুলে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বললতুমি খাবে না?
 
আমি খেয়েছি তো।
 
ইস, আমি দেখিনি নাকি। একটু খেয়েই তো সব ফেলে দিলে।
 
হবে হয়তো।
 
এই, ছাড়ো না।
 
কেন?
 
তোমাকে খাইয়ে দি।
 
গ্লাসটা না ছোঁয়া অবস্থায় পড়ে আছে। দুজনের ভেতরের গুমোট হাওয়া কেটে গেছে তাই আর ওটার দরকার পড়েনি।
 
এই, তুমি যে ওটা আনালেখেলে না তো?
 
থাকখাবো না।
 
কেন?
 
এমনিআর তো দরকার নেই।
 
এই, এবারে যাই? অনেক রাত হয়েছে।
 
উমমনা
 
ছোটো দিদান উঠে পড়লে?
 
উঠবে নাঠান্ডা পড়েছে।
 
না গোকি ভাববে তাই না?
 
কিছু ভাববে নাআমাদের কে চেনেতোমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না?
 
তাহলে, কি করবো আমরা?
 
উমমকিছু নাচুপচাপ বসে থাকবোগল্প করবো।
 
মৌ ফিসফিস করে বললতাই?
 
হুম, তাই
 
আর কিছু নয় তো?
 
উঁ হুঁ।
 
সত্যি?
 
না।
 
তাহলে?
 
তাহলে? তাহলে আমার মৌ সোনা আমাকে অনেকগুলো ওই দেবে
 
কি?
 
ওই যে পরশুআসার সময়ে
 
একটাও পাবে না
 
উমকেন?
 
তুমি খুব দুষ্টু
 
না দিলে আরো দুষ্টুমি করবো
 
তাই?
 
হুম।
 
তুমি না দিলে আমিও দেবো না।
 
আমি কি বলেছি দেবো না
 
তাহলে আগে দাওনি কেন?
 
তুমি চাওনিতাই।
 
ইস, সব আমাকেই চাইতে হবে নাকি?
 
উঁ হূআর চাইতে হবে নাএসো।
 
দুজনে হারিয়ে গেছে দুজনার ভেতরেওরা ছাড়া আর কেই নেই কোথাওনেই কোনো দুঃখ, নেই কোনো অভিমানদুজনে দুজনকে আদরে আদরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সময়ের কথা না ভেবেবুক ভরা ভালোলাগা নিয়ে ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের বুকে চেপে ধরে একজন ভাবছেঈশ্বর, আমি চাই না আমার স্মৃতি ফিরে পেতেআর এক জন ভাবছেজানি না এই সুখ আমার কপালে সইবে কিনা।
 
গ্যাংটক থেকে ফিরে এসে আর সময় বেশি ছিল না হাতে। একমাত্র নিজের দু বোনকে ছাড়া আর কাউকে জানায়নি মৌ এর সাথে ওর যা কথা হয়েছে, রুপসা তো খুব খুশীই, পুবালীও কম খুশী হয়নি ভাই এর কাছ থেকে শোনার পর। রুপসার আসার ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারেনি। ওর চাকরীটা হয়ে গেছে। এই মূহুর্তে ছুটি পাবে না। পুবালী বলে দিয়েছে অরিত্র চলে যাবার পর ও মৌকে নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখবে। সম্ভব হলে অরিত্র যতদিন না ফিরছে ততদিন থাকতে পারলে ভালো যদি দাদু দিদানদের আপত্তি না থাকে। কয়েকটা দিন আছে আর চলে যাবার আগে। তার ভেতরেই বিশ্বাস কাকুর সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে ফোনে। পুজোর পরেই বিশ্বাস কাকু বিধান নগর থানায় বদলি হয়ে এসে গেছে। জোড়াবাগান থানা থেকে খবর পাওয়া গেলওর বাড়ির লোকজন ফিরেছে। অরিত্রর নিজের যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু বিশ্বাস কাকু বারন করেছে, ওর যাওয়াটা ঠিক হবে না। কি ব্যাপার তো জানা নেই। অরিত্রর সুত্র ধরে মৌকে পেয়ে যাওয়াটা ওদের পক্ষে কঠিন নাও হতে পারে। আগের মতোই জ়োড়াবাগান থানার মেজ বাবুর সাথে গিয়ে কি করা যায় দেখা যাক বলে ওকে বুঝিয়েছে।
 
দুদিন পর খবর পাওয়া গেল। ওর মা মনে হচ্ছে কিছুটা মচকেছে কিন্তু ভাঙ্গেনি। খুব শক্ত ধাতের মহিলা। আইনের পথে হাঁটা যাচ্ছে না বলে বেশী কিছু আর করা যায়নিযাই হোক আবার চেষ্টা করা যাবে ভেবে ওরা ফিরে আসছিল। গলি থেকে বেরিয়ে কিছুটা আসার পর একটা ছেলে বাইকে করে এসে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে যায়, সাথে একটি মেয়ে। ছেলেটি বার বার জিজ্ঞেস করে কেন আপনারা আমার দিদির খোঁজ করছেন। বোঝাই যাচ্ছিল ওরা মৌ এর ভাই বোন কিন্তু ওদের আসল উদ্দেশ্য কি বোঝা যাচ্ছিল না বলে মুখ খোলা মুশকিল হয়ে যায়। কিছু জানতে না পেরে এরপর ওরা দুজনেই কেঁদে ফেলেজানতে চায় ওদের দিদির কোনো খবর আছে কিনা। একটু বাজিয়ে দেখে নিয়ে তারপরে না হয় বলার মতো হলে বলা যাবে ভেবে ওদের দুজন কে নিয়ে বিশ্বাস কাকু শ্যাম বাজারের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে বসেন। অনেক সময় ধরে কথা বলার পর জানা যায় ওদের দিদি হঠাৎই একদিন হারিয়ে যায় যেদিন নাকি ও বেশ অসুস্থ ছিল, বোনের সাথে শেষ দেখা হয়েছিল পড়তে যাবার আগে। ওদের মা যে দিদিকে একেবারেই ভালোবাসেনা সেটাও জানিয়েছে কিন্তু কেন দিদি নিরুদ্দেশ হয়ে গেল ওরা জানতে পারেনি। মায়ের সাথে অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছে দুজনেই কিন্তু মায়ের কাছ থেকে কিছু জানতে পারেনি বা মা কেন দিদিকে খোঁজার চেষ্টা করছে না তাও মায়ের ভয়ে তেমন ভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেনি। শুধু এইটুকু বুঝেছে যে দিদির হারিয়ে যাবার পেছনে মায়ের হাত থাকাটা খুব স্বাভাবিক। শেষে ওদের কে কথা দিতে হয়েছে যে চেষ্টা করা হবে ওদের দিদির সাথে দেখা করিয়ে দেবার কিন্তু ওরা যেন কোনো ভাবেই এই ব্যাপারটা কাউকে না বলে। এমন কি আশেপাশের কাউকে বা বন্ধু বান্ধবকে ও নয়। দুজনেই কথা দিয়েছে, ওরা রাজী। সাথে এটাও ওদের কে বলে রাখা আছে যে, ব্যাপারটা এখন গোপন ভাবে পুলিশের কাছে আছে, অতএব, ওরা যেন এদিক ওদিক কিছু না করার চেষ্টা করে, তাতে ওদের দিদিরও ক্ষতি হতে পারে আর ওদের তো হবেই।
 
কি ভাবে মৌএর সাথে ওর ভাই বোনের দেখা করানো যায় বা দেখা হলে মৌ এর রিপারকেশান কি হবে আর তাতে ওর কোনো ক্ষতি হবে কিনা মানসিকভাবে সেটা ভাবার বিষয় ছিল। অনেক চিন্তা ভাবনা করে, সবার সাথে আর ডাক্তার দাদুর সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হয়েছে বাইরে কোথাও মৌ কে নিয়ে অরিত্র যাবে। ওরা দু ভাই বোন একটু দূরে থাকবে যাতে মৌ ওদের কে দেখতে পায়। তারপরে ওর রিপারকেশান দেখে কি করা যায় সেটা ভাবা যাবে।
 
সেইমতো, শনিবার অফিস না গিয়ে মৌকে সাথে করে অরিত্র সাউথ সিটিতে এসেছে। ওকে বলা হয়েছে বাইরে যাবার আগে আরো কিছু জামাকাপড় কেনার আছে। ঘুরে আসার পর আর কোথাও যাওয়া হয়নি বা তার থেকেও ও অরিত্র কে আর তেমন ভাবে কাছে পায়নি বলে আজ অনেকটা সময় ওর সাথে একা একা থাকতে পারবে জেনে খুব খুশী। ঠিক যেন প্রজাপতির মতো খুশীতে উড়ে বেড়াচ্ছে। দুপুর তিনটে নাগাদ ওরা আসার পর পরই মৌ চেনে না এমন এক জনের সাথে বিল্টু আর মিষ্টিকে নিয়ে আসা হয়েছে। ওদের দুজনকেই বলা আছে ওরা যেন দিদির কাছে যাবার চেষ্টা না করে কারন দিদি ওদেরকে হঠাত দেখলে কি হবে না হবে জানা নেই। ওরাও বুঝেছে অসুবিধা টা কোথায়। ওদের দু ভাই বোনকে মৌ ওর আশেপাশে অনেক আগে থেকেই দেখেছে কিন্তু কোনোরকম ভাবান্তর ওর ভেতরে দেখা যায়নি। ও ওর নিজের খুশীতেই আছে। অরিত্রর জন্য কি কি নিতে হবে, কোনটা ভালো হবে, কোনটা ওকে বেশী মানাবেওই সব নিয়েই আছে। অনেকবার ওদের দুজনকে আশেপাশে দেখেও যখন ও চিনতে পারেনি, তখন ওদের ভাই বোন কে বুঝিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, পরে আবার দেখা করিয়ে দেওয়া হবে বলে। ওরা কিছুতেই মন থেকে মেনে না নিতে পারলেও ওদের দিদির ভালোর কথা ভেবে মেনে নিয়েছে এই ভেবে যেযে দিদিকে আর কোনোদিন দেখতে পাবে এই আশা যেখানে ছিল না সেখানে দিদিকে ভালো আছে, খুশী আছেদেখতে পেয়েছেএটাই এই মুহুর্তের জন্য যথেষ্ট।
 
দেখতে দেখতে যাবার দিন এসে গেল, পরের দিন ও বেরিয়ে যাবে সকালে। আগের দিন রাত্রে অনেক রাত অব্দি সবার সাথে যতটা সম্ভব সময় কাটিয়ে শুতে গেছে। একেবারেই ভালো লাগছে না, মাত্র দুমাসের জন্য হলেও মনে হচ্ছে কতদিনের জন্য একা একা থাকতে হবে। এতদিন দাদু দিদানরা ছিল, এখন আবার আরো একজন আছে যাকে দেখতে না পেলে কিছুই ভালো লাগে না। কি করে ওদের কে ছেড়ে থাকবে জানে না। চুপ চাপ শুয়ে ছিল, ঘুম আসছে না। কিছু একটা ভাবছিল অন্যমনস্ক হয়ে। মনে হল শুক্লাদি ডাকছে, এমনিতে কোনোদিন ওর ঘরের দরজা বন্ধ করে শোয়নি, আজ ও খোলা ছিল। শুক্লাদির ডাকে উঠে আলোটা জ্বালিয়ে দেখল শুক্লাদির পাশে মৌ মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেরই মুখে কান্নার আভাস। শুক্লাদি ওকে ঊঠতে দেখে বললদাদুভাই, আমি পারছিনাতুই দেখ এ মেয়েকে বোঝাতে পারিস কিনা। নিজে তো কাঁদছেই, আমাকেও কাঁদাচ্ছে।
 
শুক্লাদি নিজের ঘরে ফিরে গেছে অনেক আগে। ওরা দুজনে পাশাপাশি বসে আছে, দুজন দুজনের হাত ধরে, কেউ কোনো কথা বলেনি। কে কাকে বোঝাবে আর কি বোঝাবে সেটাই তো জানা নেই কারুরই। মৌ এর ডাকে ওর দিকে ফিরে তাকালো অরিত্র। আস্তে করে বললতুমি ঘুমোও, সকালে উঠতে হবে তো। আমি আসি?
 
ওর, ওইআমি আসি? শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না, এত সময় বা এতদিন যা করেনি তাই আজ ও করে বসলওকে কোলে তুলে নিয়ে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে ফিরে গিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর বুকে মুখ ঘষতে শুরু করল। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। মৌ ওকে বুকে চেপে ধরে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে চাইছিল ওর আদর করা যেন আজ শেষ না হয়। কে, কি ভাববে আজ জানার নেই, বোঝার নেই,মন চাইছে আজ ওরা এক সাথে থাকুক। কত সময় কেটে গেছে কেউ জানেনা। আস্তে আস্তে ওরা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়ে এসেছেকিন্তু মন চাইছে না ছেড়ে যেতে। কিন্তু যেতে তো হবেই এক সময় না এক সময়, তাই নিজেদের কে বুঝিয়েছেমৌ দুহাতে ওর মুখটা ধরে আছেদুজনের চোখে পলক পড়ছেনাআস্তে আস্তে ওদের ঠোঁট মিলে গেছে। দুজন দুজন কে চুমু দিয়েছে একের পর এক। মন যে ভরে নাএর কি শেষ আছেজানি, শেষ নেইতবুও যে মেনে নিতে হবে এই বিচ্ছেদহাসি মুখে একজন অন্যজন কে বলেছেআসি? আর এক জন ওকে দেখতে দেখতে ভুলে গিয়েছিল কিছু তো ওকে উত্তর দিতে হবে। আবারআসি? শূনে বললইচ্ছে তো করছে নাতবুওচলোতোমাকে দিয়ে আসি।
 
শুক্লাদিকে ঘুম থেকে তুলে বলে আসতে হয়েছিলএই নাওতোমাদের আদরের মেয়েকেদেখো ঠান্ডা হয়েছে কিনা। মিষ্টি মেয়েটা শুক্লাদির বুকে মুখ গুঁজে আদুরে গলায় বলেছেতোমরা আমাকে নিজের মতো করে কিছুই করতে দাও না। কি হয়েছে, আমি না হয় একটু কেঁদেছি।
 
রাত তিনটে বাজে, সকাল সাড়ে ন টায় বেরতে হবে, কিছুটা হলেও তো ঘুমের দরকার। হোক না,আজ এই ভাবে দেখা হওয়াটা বা কাছে পাওয়াটা যে বড় দরকার ছিল, ওইটুকু পেলেও যেখুব দরকার ছিল ওটা পাওয়া। না হলে যেমনে ভীষন একটা কষ্ট থেকে যেত প্রিয়জন কে কাছে না পাওয়ার জন্য। ওদের তো বেশী কিছু চাই নাশুধু মন প্রান দিয়ে দুজন দুজনকে চায় ভালোবেসে যেতে, যে ভালোবাসায় নেই কামনার আগুন, নেই কোনো স্বার্থআছে শূধু ভালোবাসার মাধুর্য, যা কেউ চেষ্টা করলেও নিয়ে নিতে পারবে না। দুজনেই জানে না কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুক ভরা ভালোবাসার ভালোলাগা নিয়ে।
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
মৌ কথা কও by Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:21 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:22 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:23 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:24 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:25 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:27 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:29 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:30 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:31 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:32 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:40 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:42 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:43 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:44 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:46 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)