Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#6
ও যে মৌ এর কথা বলছে বুঝতে অসুবিধা হোলো নাযা ভাবছে ভাবুকএখন আর ওর ভুল ভাঙ্গিয়ে লাভ নেইবড় বাবু কতটা কি ওকে বলেছে জানেনাযদি দাদুদের সামনে আবার কিছু বলে বসে এই ভয়ে ও পবন কে বললআপমেরা ঘরবালো কো কুছ মত বাতানাঠিক হ্যায়?
 
হাঁ সাববড়া সাব ও ভি বাতায়া।সমঝমে নেহি আতা হ্যায়ভাবীজী ইতনি পেয়ারী হ্যায়উনকি নুকসান কৌন কিঁউ করনা চাহাতা হ্যায়
 
ওহি তো বাত হ্যায়
 
সাবঅউর এক বাত সমঝ মে নেহি আতা হ্যায়ভাবীজী ইতনা খুশ রহতী হ্যায়লেকিন কভি বাত কিঁউ নেহি করতি।
 
অরিত্র একটু চুপ করে থেকে বললও বাত নেহি কর সকতীমতলবকরতি থিলেকিন আভি
 
পবন যেন বিশ্বাস করতে পারছিল নাকেয়া বোল রহে হ্যায় সাবমেরেকো বিসওয়াস নেহি হো রাহা হ্যায়পাতা নেহিআচ্ছা আদমীকো ভগওয়ান কিঁউ ইতনা দুখ দেতি হ্যায়আপ এক কাম কিজিয়ে না সাবভাবীজী কে লিয়ে মহাকাল মন্দীরমে পুজা দিজিয়েভাবীজী ঠিক হো জায়েগি
 
ঠিক হ্যায়কাল জায়েঙ্গে।
 
পবন খুব খুশী হয়ে বললহাঁসাবহামভি পুজা দেঙ্গে। আপ দেখ লিজিয়েভাবীজী ঠিক হো জায়েগীফির সে বাতে করনে লাগেগী। ভাবীজীকা আওয়াজ জরুর বহুত মিঠা হোগী।
 
উপরে গিয়েও পবন আরো একবার পুজো দেবার কথা তুললো দিদানের কাছেওকে দেখে মনে হচ্ছিলযেন ওর নিজের কারুর জন্য কিছুকরতে চাইছে। বিকেলে দুরে কোথাও না গিয়ে সবাই মিলে মলে গিয়ে বিকেলটা কাটিয়ে ফিরে আসার সময় দিদান আবার কিছু কেনাকাটা করাতে, ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে গেছেসবাই মিলে গরম কফি খেতে খেতে গল্প হচ্ছিলদাদুর ছোটোবেলায় ভুত দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে। কম্বলের নিচে মৌ দিদানের গায়ে সেঁটে গিয়ে চুপ করে গল্প শুনছেওদিকে শুক্লাদিও গুটিসুটি মেরে চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছে দিদানের আর এক পাশে। গরমের শেষবর্ষা সবে আসবে আসবে করছে ইকলেজ থেকে ফিরে রায়েদের পোড়ো বাগান বাড়ীর পাশের মাঠে ফুটবল খেলতে খেলতে খেয়াল নেই কখন সন্ধে হয়ে এসেছেঝম ঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতেই দৌড়ে গিয়ে বাগান বাড়ীর লোহার গেট টপকে সবাই মিলে ভেতরে ঢুকে পড়েছি। দিনের বেলা অনেকবার আম জাম কাঁঠাল খেতে ঢুকেছি কিন্তু সেই প্রথম সন্ধের পর ঢোকাগাড়ী বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে আছিবৃষ্টি থামলেই বেরোবোচারদিকের বড়বড় গাছের জন্য জায়গাটা বেশ অন্ধকার মতো হয়ে আছেআমাদের পাড়ার হাবু ছিল একটু ভিতু টাইপেরচারদিক তাকাতে তাকাতে আমার গায়ে সেঁটে গেছে দেখে জিজ্ঞেস করলামকি হল আবারসরে দাঁড়া না। হাবু আমার গায়ে আরো সেঁটে গিয়ে বললবিশু চলপালাইদাদুর কাছে শুনেছি এখানে নাকি ভুত আছে। ধুসতুই একটা ভিতুর ডিমআসুক না ভুতএতজন আছিকি করবে? বলা শেষ হতে না হতেইপেছনে রায়বাড়ির বড় কাঠের দরজায় যেন কিসের একটা আওয়াজ হলক্যাঁচর ক্যাঁচ। সাথে সাথে গাডী বারান্দার ছাদে দুম করে কিছু একটা ভারী কিছু পড়ার আওয়াজএতক্ষন ঠিক ছিলএমনিতেই হাবুর কথা শুনে মুখে যতই বলি না কেন একটু যে ভয় লাগছিল না তা নয়এক সাথে দুটো অদ্ভুত আওয়াজ পেয়ে বুকের ভেতরে ভয় এসে গেলচারদিক আলো হয়ে উঠে কড়কড় করে খুব কাছে একটা বাজ পড়লওই আলোতে পেছনের দিকে তাকিয়ে হাড় হিম হয়ে গেলকি একটা বিশাল জন্তুর মতো দাঁড়িয়ে আছেএই পর্যন্ত বলে দাদু একটু থেমেছেআরহটাত লোডশেডিং হয়ে গেলে ঘরের পরিবেশটা যেন আরো ভুতুড়ে হয়ে গেলকোনো আওয়াজ নেইসবাই চুপএকটু পরে হোটেলের জেনারেটার চালালে আলো ফিরে এলমৌকে দেখা যাচ্ছেনাকম্বলের নিচে ঢুকে গিয়ে দিদানকে জড়িয়ে ধরে আছেশুক্লাদি দিদানের আর এক দিকে আরো জড়সড় হয়ে বসেদাদু হো হো করে হেসে ফেলে বললশুনেই এই অবস্থাআর আমার মতো অবস্থায় পড়লে কি হত কে জানেদাদুর কথা শেষ হতেইআবার আলো চলে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর ফিরে এলআলো যাওয়া আর আসার মাঝে দরজায় টক টক করে আওয়াজ হল দুবারদাদুর হাসি শুনে মৌ চোখের নীচ পর্যন্ত মাথাটা বের করেছিল সবেযেই ঘর অন্ধকার হওয়ার পরেই দরজায় আওয়াজ হয়েছে সাথে সাথে আবার কম্বলের তলায় ঢুকে গেল। ওদের অবস্থা দেখে অরিত্রর হাসি পেয়ে গেলকোনো রকমে হাসি চেপে দরজাটা খুলে দিতেএক মুখ হাসি নিয়ে পবন ঘরে ঢুকে ওদের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বললসাবকেয়া হুয়া? লাগতা হ্যায়সব ডর গ্যয়ে হ্যায়
 
দাদু মুখটা গম্ভীর করে বললহাঁভুত আয়া থাআভি আভি চলে গ্যায়ে।
 
পবন চোখ বড় বড় করে বললসাচমুচ ভুত আয়া থা?
 
অরিত্র আর থাকতে না পেরে হেসে ফেলে বললমাথা খারাপ হ্যায় কেয়া? ভুত কাঁহাসে আয়েগা?
 
আপ জানতে নেহি সাবভুত হ্যায়হামভি দেখা।
 
আচ্ছা ঠিক হ্যায়দেখা তো দেখাআভি ব্যায়ঠোগরম কফি অউর নমকীন হ্যায়
 
সাব ভাবীজীকী হাত পে এ ধাগা বাঁধ দিজিয়েম্যায় খুদ নাহাকে পুজা দিয়া...সব কুছ ঠিক হো জায়েগা
 
দুপুর বেলা ঠিক ছিলও একাই ছিলকিন্তু এখন সবার সামনে ভাবীজী বললেকান লাল হয়ে উঠলকি বলবে বুঝতে না পেরে বললদিদানপরিয়ে দাও না।
 
নেহিনেহিসাবআপ খুদ
 
অরিত্রর মুখের কাঁচুমাচু অবস্থা দেখে দিদান বললপরিয়ে দে নাকি হয়েছে
 
মৌ কম্বলের নিচ থেকে মুখ বের করে বোঝার চেষ্টা করছিল কি হচ্ছেদিদান ওকে ছোট্ট একটা আদুরে ধাক্কা দিয়ে বললএই মেয়েকি তখন থেকে কাঠবেড়ালীর মতো মুখ বের করে দেখছিসওঠ
 
অরিত্র মৌ এর হাতে ধাগা বাঁধতে বাঁধতে এক বার চোখ তুলে তাকালোওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেদু চোখে অদ্ভুত এক ভালো লাগার ছোঁয়াশুধু দিদান নয়দাদু আর শুক্লাদিও ওর অবস্থা টা বুঝে ওদের দিকে না তাকিয়ে পবনের সাথে কথা বলছে দেখে চোখ পাকিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করলসবার সামনে ওইভাবে আমাকে না দেখলেই নয়?
 
সারা মুখে দুষ্টুমির হাসি ভরিয়ে দিয়ে যেন জবাব দিতে চাইলোবেশ করেছিআরো করবোকেন তুমি আমাকে সব সময় দুরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা কর।
 
রাতে খেয়ে রুমে ঢুকতেই ফোনটা বেজে উঠল, ছোড়দি ফোন করেছে দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলেপুবালী জিজ্ঞেস করলকি রে ভাইরুপসার ফোন ধরছিস না কেন? তিন বার ফোন করেছে তোকে।
 
আমি ছিলাম না রে, খেতে গিয়েছিলামএখুনি করছিএখোনো রেগে আছে নাকি রে?
 
না রেও রাগ করে থাকার মেয়ে নাকি
 
ছোড়দিতুই একটু ধররুপসাকে লাইনে নিচ্ছিখুব এম্ব্যারাসাড হয়েছি আজবুঝলি।
 
কি হোলো আবার
 
একটু ধররুপসাকে ধরিতারপর বলছি
 
দু বোনকে লাইনে নিয়ে পবনের ভাবীজী বলা আর পূজো দেবার ব্যাপারটা বলতেই রুপসা প্রায় লাফিয়ে উঠলদেখলি তোআমি বললেই তোর যত প্রবলেমআর সবাই কি বলছে এখন? তোদের ওই পবন দু দিনেই বুঝে গেছেআর তুই কিছু বুঝতে পারছিস নাবলএবার
 
হুমবুঝলামতুই এবার বলআমার উপরে আর রেগে নেই তো?
 
ধুসতোর উপর রেগে থাকলে এতবার ফোন করি নাকি? একটা মাত্র দাদাভাইরাগ করে থেকে কি করবো রে? কি রে ছোড়দিতাই তো?
 
পুবালী হেসে ফেলে বললতাছাড়া আবার কি
 
পরের দিন মহাকাল মন্দীরে সবাই মিলে গিয়ে পূজো দেওয়ার পর আর হোটেলে না ফিরে দিনের বাকিটা এদিক ওদিক ঘুরে আসতে আসতে প্রায় সন্ধে হয়ে গেল। আগের দিন শুক্লাদি আর মৌ ভুতের গল্প শুনে খুব ভয় পেয়েছিল বলে আজ ওরা চারজনে বসে লুডো খেলছে। অরিত্র পবন কে সাথে নিয়ে বাজারের দিকে গেল কিছু ঘর সাজানোর জিনিষ কিনতেবন্ধুবান্ধব, অফিস কলিগসবাই কে কিছু না কিছু দিতে হয়। ফিরে এসে কিছুক্ষন গল্প গুজব করে খেয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে সাড়ে নটা বাজলোঠান্ডাও মোটামুটি ভালোই পড়েছেসারাদিন বাইরে ঘুরে সবাই একটু ক্লান্তও ছিল। পরের দিন সকালে আর বেরোনো গেল না,দিদান আর শুক্লাদি দুজনেরই গায়ে অল্প জ্বর এসেছে। বোস দাদুকে ফোন করলেকি ওষুধ খাওয়াবে বলে দিয়ে বললএক কাজ কর একটু করে ব্র্যান্ডি খাইয়ে দেবিকেলের ভেতরে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।পবন দুবার উপরে এসে ডাক্তার দেখাতে হবে কিনা খোঁজ নিয়ে গেছে। দিদানরা বেরোতে পারবে না বলে দাদু বলে দিয়েছে বেরোবে নামৌ দিদানের পাশে বসে টিভি দেখছেকেউ বেরোচ্ছে না বলে ওরও বেরোবার কোনো ইচ্ছে ছিল না। অরিত্র কিছু কাজ না পেয়ে নিজের রুমে গিয়ে টিভিতে গান শুনছিলচ্যনেল ভি তে। দরজাটা খোলাই ছিলসাড়ে দশটা নাগাদ দাদু এসে বললচুপচাপ বসে থেকে কি করবিমৌ কে নিয়ে কাছাকাছি কোথাও গিয়ে ঘুরে আয় না
 
কোথায় যাবো? দিদান দের জ্বর।
 
সামান্য জ্বরও নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেইআমি তো আছিইতোরা ঘুরে আয়। মৌ কে বলেছিতুই গেলে ও যেতে রাজী আছে।
 
 
 
পবন হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আরো কয়েক জনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল, ওরা দুজনে বেরোতেই দৌড়ে এসে বললসাবকাঁহা যানা হ্যায়?
 
চলোনজদিক থোড়া ঘুমকে আতে হ্যায়।
 
কিছুটা যাবার পর রাস্তার একদিকে চায়ের বাগান আর একদিকে পাহাড় এক জায়গায় রাস্তার বাঁকে একটা ছোটো ঝরনার মতোঅনেকটা উপর থেকে সরু জলের ধারা নেমে আসছেমৌ খুব মন দিয়ে জায়গাটা দেখছে দেখে অরিত্র গাড়ী দাঁড় করালোদুজনে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলখুব সুন্দর জায়গাটারাস্তার উল্টো দিকের ঢালে চায়ের ছোটো ছোটো গাছহাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবেআর এদিকে ঝরনা। পবন গাড়ী থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে এসে বললসাব ফোটো লিজিয়ে না
 
মৌকে ঝরনার দিকে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন পোজে কয়েকটা ফটো তোলার পর পবন নিজেই এগিয়ে এসে বললসাবআপ ভাবীজী কী পাশ যাইয়েআপ দোনো কা সাথ সাথ মে ফোটো বহুত আচ্ছা আয়েগা
 
নিকন ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরাশুধু শাটার টিপলেই হবে নাপবন তুলতে পারবে কি পারবে না ভেবে মৌকে উলটো দিকে দাঁড় করিয়ে সব কিছু সেট করে নিয়ে পবন কে দেখিয়ে দিল কি করতে হবেপবন ক্যামেরাটা নিয়ে দাঁড়ালে অরিত্র রাস্তা পেরিয়ে মৌ এর পাশে গিয়ে ইশারা করলো শাটার টিপতেওর দাঁড়ানো পবনের পছন্দ হল নাহাত নাড়িয়ে ইশারা করছিল ওদের দুজনকে আরো কাছাকাছি আসতে। আরো একটু কাছাকাছি এলেও পবন ইসারা করছিলআরো কাছাকাছি। কি বিপদে পড়া গেছে ভেবে মৌ এর দিকে তাকালোনির্বিকার মুখে চা বাগানের দিকে তাকিয়ে আছেভাবখানা যেন এইঠিক হয়েছেআমি এত চেয়েছিতবু কাছে আসোনিএখন বোঝোকি করবে। ধ্যাত তেরি কিজড়িয়ে ধরে দাঁড়াইভেবেওর একেবারে পাশে এসে এক হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালে পবন হাত তুলে ইশারা করলএবার ঠিক আছে। পবন বোধহয় ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় নিচ্ছিল শাটার টিপতে কিন্তু কিছু করার নেইমৌ এর এত কাছে কোনোদিন আসেনিভীষন ভালো লাগছিলওকে এত কাছে পেয়েওর শরীরের মেয়েলী গন্ধে মন মাতাল হয়ে যেতে চাইছিল। পবন হাত তুলে জানালো হয়ে গেছেতার পরেই বললসাব অউর একআপলোগ ইধার আইয়েম্যায় উস তরফসে খিচেঙ্গে।
 
মৌকে সাথে করে রাস্তা পেরিয়ে চা গাছের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ফিরে গেল ক্যামেরাটা সেট করতেওদিকে গাছের ছায়া থাকায় আলো কম ছিলএদিকে অনেকটাই ঝকঝকে আলো আছেআগের মতো তুললে হবে নামৌ একটা চা গাছ ছুঁয়েহাসি মুখে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়েক্যামেরার লেন্স দিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ক্লোজ আপে নিয়ে এসে দেখছিলকি সুন্দর সারল্য মাখানো মুখকোথাও কোনো মালিন্য নেইক্যামেরাটা সেট করে পবনের হাতে দিয়ে রাস্তা পেরোতে গেলএতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল যে খেয়াল করেনি যে ও একটা রাস্তা পেরোতে যাচ্ছে। হটাত একটা ভীষন কর্কশ আওয়াজ কানে এলসাথে সাথে কেউ যেন ওকে এক ঝটকায় টেনে ধরল। কয়েক সেকেন্ড মাথাটা পুরো যেন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলসম্বিত ফিরে এলে কি হতে যাচ্ছিল ভেবে সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলরাস্তার মাঝখানে একটা টাটা সুমো দাঁড়িয়ে আছেডাইভার গালাগালি দিতে যাচ্ছিলপবনকে দেখে গালাগালি না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করলকোথাও লেগেছে কিনা।
 
কিছু হয়নিখুব ভুল হয়ে গেছেএকেবারে খেয়াল করিনি বলার পর মনে পড়লওদিকে মৌ একা দাঁড়িয়ে আছেভয় পেয়ে যায় নি তো? ওর আবার টেনশান হলে চলবে নাভেবেতাড়াতাড়ি গাড়ীটার পেছন দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে ঘাবড়ে গেলমৌ চা গাছটার পাশে হাঁটু মুড়ে মুখ নিচু করে বসে আছে সারা শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছেআরো কাছে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ওকে ডাকতে গিয়ে ওর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেয়ে অবাক হয়ে গেল।এর আগে একবার কাঁদতে দেখেছে কিন্তু গলায় তো কোনো আওয়াজ ছিল না। আর কিছু ভাবার সময় ছিলনাতাড়াতাড়ি ওর কাঁধে দু হাত রেখে ডাকলোএইমৌএই তো আমিকিছু হয়নি আমারওঠো
 
নিজের কানকেই বোধ হয় বিশ্বাস করতে পারছিল না ওআস্তে আস্তে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখেকান্না যেন আরো বেড়ে গেলঅরিত্র দু হাতে ধরে তোলার চেষ্টা করলে নিজেই উঠে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকলোকান্না কিছুতেই থামছে না দেখেঅরিত্র আবার বললএইআমি ঠিক আছিদেখোআমার কিছু হয়নি
 
বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে কান্না ভেজা গলায় বললআমার চাই না ফটোতুমি কেন ওদিকে একা গেলে?
 
নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না অরিত্রমৌ কথা বলছেস্বপ্ন দেখছে না তো? ওর মাথা নিজের বুকে আরো নিবীড় ভাবে চেপে ধরে মুখ নামিয়ে বললতোমাকে একা রেখে আমি আর কোথাও যাবো না
 
আর কোথাও যাওয়ার কোনো প্রশ্ন ছিল নাসবাই কে জানাবার জন্য মনটা ভীষন ছটপট করছিলনিজের ফোনটা আনতে ভুলে গিয়েছিলপবনের ফোন থেকে যে দাদুকে ফোন করবে তার উপায় নেইদাদুর নাম্বারটা মোবাইলে সেভ করা থাকে বলে মনে থাকে না পবন সাবধানে গাড়ী চালাতে চালাতে বকবক করে যাচ্ছেও যে বলেছিল পূজো দিলেই কাজ হবে। মৌ ওর পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে কোলের উপরে অরিত্রর হাতটা ধরে চুপ করে চোখ বুজে বসে আছে পরম নিশ্চিন্তে
 
হোটেলের সামনে পৌঁছোতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেমে মৌ এর হাত ধরে প্রায় দৌড়ে দাদুর রুমে গিয়ে পৌঁছোলে সবাই ওদেরকে ওইভাবে আসতে দেখে বুঝতে পারছিল না কি হয়েছেকোনো রকমে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে পারলমৌ
 
আর কিছু বলতে পারছে না দেখে দাদু ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলকি হয়েছেএত হাঁপাচ্ছিস কেন
 
অরিত্র একটু দম নিয়ে বলতে পারলকথা বলেছে।
 
কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না ওর কথাদিদান ততক্ষনে উঠে এসেছেমৌ দিদান কে জড়িয়ে ধরলে দিদান ওর মুখটা তুলে ধরে বললএই মৌসত্যি?
 
মৌ অস্ফুট স্বরে বলল দিদান
 
শুক্লাদি আর দাদুও ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলকেউই বিশ্বাস করতে পারছিল নাদিদান নিজের চোখের জল আটকাতে পারলো নাঝরঝর করে কেঁদে ফেলে ওকে কিভাবে আদর করবে যেন বুঝতে পারছিল না। দিদানের চোখের জল আস্তে আস্তে যেন বাকিদের চোখেও জল এনে দিল
 
পবন প্রায় লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকে ওদের অবস্থা দেখে থমকে দাঁড়ালোহাতে বেশ বড় একটা মিষ্টির প্যকেটসবার চোখে জল দেখে ওর চোখেও জল এসে গেছেচোখের জল নিজেই মুছে নিয়ে একটা মিষ্টি মৌ এর মুখে দিয়েবললআজ ম্যায় বহুত খুশ হঁমেরা বহেন ঠিক হো গ্যায়ি। দিদান ওকে ছেড়ে দিয়ে বললযানিজের হাতে সবাই কে খাইয়ে দে। সবার আগে পবনকে খাইয়ে তারপর সবাই কে এক এক করে খাইয়ে অরিত্রর কাছে এলেঅরিত্র মুখটা গম্ভীর করে বললআমার দুটো চাই।
 
তখোনো মুখের কান্না কান্না ভাবটা যায়নিতার ভেতরেই মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বললকেন?
 
বা রেআমিই তো তোমার কথা প্রথম শুনেছিতাই না?
উমমএখন পাবে নাপরে।
 
পবন এখুনি ঘুরে আসছি বলে বেরিয়ে গেছেকোন মন্দীরে নাকি মানত করে রেখেছিল পূজো দেবে বলেদাদু, দিদান আর শুক্লাদি মৌকে কাছ ছাড়া করতে চাইছিল নাযেন আজই ওর সাথে সব কথা বলা শেষ করতে হবে, নিজেদের যে শরীর ভালো নেই যেন ভুলেই গেছে। অরিত্র ওর রুমে গিয়ে এক এক করে সবাইকে ওর কথা বলা শুরু করার ব্যাপারটা জানাচ্ছিল। বোস দাদু শুনেই বললমনে হচ্ছে যা ভেবেছিলামতাইবিরাট একটা শক পেয়ে যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তেমনি আবার একটা শক পেয়ে ঠিক হয়ে গেছে। যাক গেআরো একটা চিন্তা থেকেই গেলস্মৃতি ফিরবে কিনা আর যদি ফেরে কতটা বা কিভাবে ফিরবেভালো বা খারাপ দুটোই হতে পারেএর মাঝে আমি অনেকের সাথে আলোচনা করেছি কিন্তু কেউ সেভাবে আশার আলো দেখাতে পারেনিআজকাল অনেকরকম চিকিতসা হচ্ছে কিন্তু ভালো হবেই কেউ বলতে পারছে নাভালো করতে গিয়ে যদি আরো খারাপ হয়ে যায়সেটাই চিন্তা। কেউ কেউ বলছে ঠিক কি কি ঘটেছিল জানতে পারলে একটা চেষ্টা করে দেখা যেত।
 
অরিত্র একটু চুপ করে থেকে বললকি জানি কি হবেদেখা যাক। এখন যা হয়েছেসেটাই বা কম কি
 
বিশ্বাস কাকুকে ফোনে পাওয়া গেল নানেটওয়ার্কের বাইরে আছেপরে আবার চেষ্টা করবে ভেবে রুপসাকে ফোন করলএকসাথে পুবালীকে পেলে ভালো হত কিন্তু এখন পাওয়া যাবে না, ওর অফিসে একটা মিটিং আছে বলেছিল। রুপসা শুনে যেন বিশ্বাস করতে পারছিল নাদাদাভাই, প্লিজ একবার আমার সাথে কথা বলিয়ে দেউঃআমার ইচ্ছে করছে এখুনি চলে যাই রে
 
দাঁড়াদিদানদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। আর শোনতুই কাউকে বলিস নাআমি সবাই কে নিজে জানাবোনা হলেখারাপ দেখাবেবুঝলি
 
হ্যাঁবুঝলামতুই আগে ফোনটা দে না বাবা
 
মৌকে ডেকে নিয়ে এসে ফোনটা হাতে দিলে জিজ্ঞেস করলকে?
 
অরিত্র হেসে বললদেখোকে আছে
 
মৌ হ্যালো বলতেইরপসাবললএইমৌআমি কে বলোতো?
 
মৌ একবার অরিত্রর দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে বললউমমছোড়দি
 
ইসছোড়দির নাম তো পুবালী।
 
উঁ হুঁপুবালী দিদি তো তোমার ছোড়দিআর আমার মেজ দি। তুমিআমার ছোড়দিরুপসা দিদি।
 
কি করে বুঝলে?
 
বা রেবলবো কেন?
 
জানো তোতোমার কথা খুব মিষ্টিএকেবারে তোমার মতো।
 
ধ্যাততুমি খালি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছো। তোমার গলাও তো কত মিষ্টি।
 
ধুসআমার গলাহাঁসের মতোসব সময় নাকি প্যাঁক প্যাঁক করে কথা বলি
 
মৌ হেসে ফেলে বললকে বলেছেতোমার গলা হাঁসের মতো।
 
কে আবার বলবেবলার তো একজনই আছে
 
কেল না।
 
উমমতোমার কাছে কেউ নেই তো?
 
উঁ হুঁএখানে খালি তোমার দাদাভাই ছাড়া আর কেউ নেই
 
ওই দাদাভাই টাই তো বলেআমার সাথে কথা বললে নাকি কান ঝালাপালা হয়ে যায়পাগল পাগল লাগে।
 
অরিত্রর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নিয়ে হেসে ফেলে বললতাই?
 
হ্যাঁ গোতাই বলেআচ্ছাশোনো নাকি করে হোলো বলোতোআমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
 
কি জানিতোমার দাদাভাই জানে হয়তো।
 
যাক গেবাদ দাওতুমি কথা বলতে পারছোএটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড়পরে দাদাভাই এর থেকে জেনে নেবো।
 
ছোড়দিতুমি কবে আসছো?
 
ইচ্ছে তো করছেআজই চলে আসিসামনের সোমবার আমার একটা ইন্টারভিউ আছেহয়ে গেলেই চলে আসবো।
 
খুব ভালো হবেতোমার সাথে অনেক গল্প করবো।
 
ইসআমার সাথে কেন গল্প করবেআর একজন তো পাশেই আছে।
 
ধ্যাততুমি না খালি পেছনে লাগো।
 
ইসআমি পেছনে লাগি? তোমার ইচ্ছে করে না নাকি? ও হ্যাঁওটার কিছু হতোমাকে যেটা বলেছিলাম
 
কি গো?
 
ওই যে দাদাভাইকে দিয়ে বলাতে
 
তুমি এসো নাতারপর
 
 
 
দুপুরের পর থেকে আবার ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠান্ডায় কারুরই শুতে ইচ্ছে ছিল নাদাদুদের ঘরে ওরা সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর অরিত্র ওদিকে নিজের ঘরে এক এক করে সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছে। যারা খুব কাছের তাদেরকে আবার উঠে গিয়ে মৌ এর সাথে কথা বলিয়ে দিতে হচ্ছেএই করতে করতে বিকেল হয়ে গেল তবুও বৃষ্টি থামার নাম নেই। বৃষ্টির জন্য বোধহয় ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে দেখে কম্বল মুড়ি দিয়ে কি করা যায় ভাবছিল, শুক্লাদি এসে বললোদাদু ডাকছে। দাদু সোফায় পা তুলে গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর ওদিকে মৌ যথারীতি দিদানের সাথে কম্বলের তলায়। আগের দিনের মতো শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। শুক্লাদিও ফিরে এসে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ল।
 
কি ব্যাপারদাদুআজকেও কি ভুতের গল্প হচ্ছে নাকি?
 
না রেযা সব ভীতুভুতের গল্প নয়আজ তোর দিদানের ছোটোবেলার গল্প হচ্ছিল। কলেজ যেতে গিয়ে নাকি রামছাগলের তাড়া খেয়ে পুকুরে পড়ে গিয়েছিলআরো কত কি
 
যাই বলো দাদুতোমাদের ছোটোবেলায় খুব মজার মজার ঘটনা আছে
 
তা অবশ্য ছিলতোরা তো অনেক কিছুই দেখিস নিআস্তে আস্তে সব কিছু কেমন যেন পালটে যাচ্ছে।
 
তা তো যাবেইতোমরা কিছু খাবে এখন? দুপুরে তো ভালো করে খাওয়াই হোলো নাপবন কেও ডাকি একবারও বেচারা এই ঠান্ডায় বাইরে বসে আছে।
Like Reply


Messages In This Thread
মৌ কথা কও by Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:21 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:22 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:23 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:24 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:25 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:27 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:29 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:30 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:31 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:32 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:40 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:42 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:43 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:44 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:46 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)