25-02-2019, 12:23 PM
তুমি দেখে দাও না…আমি আবার কি করবো গিয়ে…
শুক্লাদি হেসে ফেলে বলল…দিয়েছিলাম…কোনোটাই পছন্দ নয়…তুই গিয়ে দেখ।
ঠিক আছে চলো।
ওর ঘরে গিয়ে দেখা গেল যতজামাকাপড় ছিল সব বিছানায় ছড়ানো…এক পাশে মুখ ভার করে বসে আছে। অরিত্র কে দেখতে পেয়েই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল… যেন বোঝাতে চাইলো… তুমি এসে গেছো? কি পরবো দেখে দাও না…
সব গুলোই খুব সুন্দর…বাছাবাছির তেমন কিছু নেই দেখে দু একটা দেখে নিয়ে একটা জমকালো দেখে কিছু একটা তুলে হাতে দিলে খুব খুশী…অরিত্র নিজেও জানে না ড্রেসটার কি নাম…সাউথ সিটি মলে গিয়ে ভালো লেগেছিল বলে মৌ আর দু বোনের জন্য একই জিনিষ নিয়েছিল…আজকাল মেয়েদের কতরকম নতুন নতুন ডিজাইনের ড্রেসআসছে যে নাম মনে রাখা মুশকিল…তার উপরে এতদিন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকারই পড়েনি… মৌ একবারের জন্যও দেখলো না ওকে কেমন লাগবে…হাসি মুখে বোঝালো…এটাই ঠিক আছে।
শুক্লাদি পাশ থেকে হেসে ফেলে বলল… কি রে মৌ…একটু আগেই তো আমিও দিয়েছিলাম… তখন তো মাথা নেড়ে এমন করে না বললি যে…মনে হচ্ছিল ওটার থেকে খারাপ আর কিছু হয় না।
লাজুক একটা মিষ্টি হাসিতে বোঝালো… তোমার দেওয়া আর ওর দেওয়া কি এক? ও যা দেবে সেটাই সব থেকে ভালো।
শুক্লাদি বুঝতে পেরে ওকেজড়িয়ে ধরে বলল…বুঝেছি…যা…তাড়াতাড়ি পরে নে… আর কখন বেরোবি।
নবমী অব্দি কিভাবে কেটে গেল বোঝা গেল না…পূজো আসছে ভাবতে কত ভালো লাগে…কিন্তু কি করে যে চারটে দিন কেটে যায় কে জানে।আজ বিজয়া দশমী…পাড়ার অনেকেই বাইরে কোথাও বেরোবে বলে বিসর্জন একটু তাড়াতাড়ি সেরে নেওয়া হয়। সন্ধের মুখে দিদানের সাথে মৌ সিন্দুর খেলা দেখতে গেছে, অরিত্র শরীর টাভালো ছিল না বলে বাড়ী থেকে বেরোয় নি…ড্রয়িং রুমে দাদুর সাথে বসে টিভিতে পুজো পরিক্রমা দেখছিল, আটটা নাগাদ ওরা ফিরলো…দিদানের মতো মৌ এর ও সারা মুখে সিন্দুর মাখানো। দাদু দিদান আর শুক্লাদিকে বিজ়য়ার প্রনাম করে শরীর টা ভালো লাগছে না…একটু শুয়ে নি বলে ও উপরে গিয়ে নিজের ঘরে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর কপালে কারুর হাতের ছোঁয়া পেয়ে তাকিয়ে দেখে মৌ, ওর দিকে তাকিয়ে আছে…চোখে মুখে কিছুটা চিন্তার ছাপ…যেন বলতে চাইছে…খুব শরীর খারাপ লাগছে?
ওর হাতটা ধরে নিজের গালে আলতো ভাবে চেপে ধরে বুকের ভেতরটা যেন অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে উঠল…ওর টুকটুকে ফর্সা মুখে লাল সিন্দুরের দাগ…ওকে যেন আর মোহময়ী করে তুলেছে… খুব ইচ্ছে করছিল… বুকে টেনে নিয়ে জ়ড়িয়ে ধরে আদর করে বলতে…তোমাকে একান্ত ভাবে নিজের করে নিতে চাইছি…কিন্তু পারছিনা…তুমি কি বুঝতে পারছো? না বলা কথা গুলো নিজের ভেতরে চেপে রেখে মুখে হাসি এনে বলল…তেমন কিছু হয় নি…রাতে ভালো করে ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে।
মৌ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কি বুঝলো কে জানে…ইশারা করে বোঝালো ও বিজয়ার প্রনাম করতে চায়।
এই দেখো…আমাকে আবার কেন?
আবার ইশারা করে বোঝালো…ওকে প্রনাম করতে দিতেই হবে।
মৌ ওর পা ছুঁয়ে প্রনাম করে উঠে দাঁড়ালে ওর কাঁধে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…প্রনাম তো করলে…কিন্তু কি বলে তোমাকে আশীর্বাদ করি বলতো। মৌ চোখ বুজে থেকে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে যেন বোঝাতে চাইলো…আমার যে তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাই না…আমি কি চাই তা কি তুমি কোনোদিনও বুঝেও বুঝবে না?
পরের দিনটা শুরু হল বাকি আর পাঁচটা বিজয়া দশমীর পরের দিন হিসেবে। ফোন আর এসএমএসে বিজ়য়া দশমীর শুভেচ্ছা আদান প্রদান চলছিল সকাল থেকেই। যারা বাড়ীতে আসার তারা আর একটু পর থেকেই আসতে শুরু করবে। অরিত্রর শরীর মোটামুটি ভালোই। দশটা নাগাদ নারায়নদা নাতনী প্রিয়া কে সাথে নিয়ে প্রতি বছরের মতো একটা মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে হাজির। প্রিয়া ওর দাদুর মুখে মৌ এর ব্যাপারে শুনেছিল কিন্তু এই প্রথম নিজের চোখে দেখলো। মৌ কে দেখার পর থেকেই প্রিয়া চিন্তা করছিল…কোথাও যেন ওকে দেখেছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। হঠাত মনে হল…কলেজে দেখেনি তো? সপ্তাহে একদিন ও অনেক সকালে টিউশান পড়তে যায় কলেজের এক স্যারের কাছে। কলেজ থেকে খুব বেশী দুরে নয় বলে টিউশান থেকে বেরিয়ে যখন কলেজে আসে তখনও মর্নিং সেকশানের ক্লাস শেষ হতে কিছুটা বাকি থাকে বলে কলেজের সামনে অপেক্ষা করতে হয়। মনে হয় মর্নিং সেকশানের ছুটির পর ওকে দেখেছে কিন্তু ঠিক কিনা বুঝতে পারছে না। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। বাড়ী ফিরে দাদুকে বলতেই দাদু ওকে একটু বকাবকি করল…কেন তুই ওখানেই বলিস নি…জানিস অরিত্র দাদাভাইরা কত চেষ্টা করেছে মৌ দিদি কে জানার জন্য। সাথে সাথেই আবার নারায়নদা ফিরে এল প্রিয়া কে সাথে নিয়ে। মৌ নিচে না থাকায় ওদের সুবিধা হল ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে, মোটামুটি প্রিয়ার কাছ থেকে যেটুকু জানা গেল তাতে বিশেষ কিছু বোঝা না গেলেও একটা আশার আলো দেখা গেল। হয়তো কলেজে গিয়ে খোঁজ নিলে কিছু জানা যেতে পারে কিন্তু কলেজ খুলতে তো সেই লক্ষী পূজোর পর, এই কটা দিন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। দাদু এক ফাঁকে বিশ্বাস কাকুকে ফোন করে মোটামুটিভাবে বুঝিয়ে দিল। যে কেউ গেলে তো আর কলেজ কতৃপক্ষ কোনো কথা বলবে না, পুলিশকে দিয়েই খোঁজ নিতে হবে। আর একটা রাস্তা আছে, কলেজ ইউনিয়ান থেকে খোঁজ পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সে ও তো কলেজ খোলার আগে সম্ভব নয়। বিশ্বাস কাকু ছুটি নিয়ে বাড়ী এসেছে দেখে মৌ এর একটা ফোটো নিয়ে অরিত্র এক ফাঁকে দিয়ে এল। মনের ভেতরে ভীষন তোলপাড় হচ্ছিল, এবারে হয়তো কিছু একটা জানা যাবে। রুপসা আর পুবালীকে ফোন করে জানাতে ওরা তো প্রায় লাফিয়েই উঠল, দুজনেই জানে মৌ এর পরিচয় না জানায় অরিত্র চাইলেও এগোতে পারছে না।
প্রতি বছরই বেশ কয়েকদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া ওদের অনেক বছর ধরে চলছে, চাকরী পাবার আগে দাদুই নিয়ে যেত আর এখন যেহেতু ও নিজে খরচ করতে পারে তাই দাদুকে খরচ করতে দেয় না।এবারেও যাবার সব কিছু ঠিক করা আছে। লক্ষী পুজোর পরদিন বেরিয়ে দার্জিলিং আর গ্যাংটক হয়ে ফিরবে, আগেও দুবার গেছে কিন্তু সব জায়গা গুলো এখোনো দেখা হয়ে ওঠেনি। দিদানের প্লেন চড়তে খুব ভয় থাকায় ট্রেনেই যাওয়া আসা করতে হবে না হলে বাগডোগরা পর্যন্ত প্লেনে যাওয়া আসা করা যেত। মৌ এর ব্যাপারে খোঁজ নেবার জন্য নিজ়ে কোলকাতায় থাকলে ভালো হ’ত কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই, বিশ্বাস কাকুর সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে। বেড়াতে যাবার আগে কয়েকটা দিন অফিস করতে একেবারেই ভালো লাগছিল না, আশা নিরাশার দোটানায় মনের ভেতরে ভীষন একটা অস্থিরতা…কি হবে…যদি কিছু না জানা যায়। বাড়ীতে ফিরে নিজের মনের অবস্থাও চেপে রাখতে হচ্ছে…মৌ কে কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। ডাক্তার বার বার সাবধান করে দিয়েছিল…কোনোভাবেই ও যেন কোনো মানসিক চাপের মধ্যে না থাকে…তাতে আরো খারাপ হলেও হতে পারে। এই রকম একটা অবস্থার মধ্যে বেরোনোর জন্য গোছগাছ চলছিল, বাইরে যাওয়া তো নয় যেন দক্ষযজ্ঞ, শুধু তো আর জামাকাপড়নিয়ে বেরিয়ে পড়লে হবে না, দাদুদের প্রেসক্রিপশান, ওষুধ, হটব্যাগ, তার সাথে একটা জিনিষতো চাই ই চাই দাদুর, টি পট নিতেই হবে, দাদুর আবার দার্জিলিং ফ্লেভার ছাড়া চলে না। যদিও দিদান আর শুক্লাদি এসব ব্যাপারে ভুল করেনা তবুও অরিত্র নিজে একবার দেখে নেয়। মৌ বেড়াতে যাওয়া হবে বলে ভীষন খুশী, দিদান আর শুক্লাদির সাথে সব সময় থেকে অনেকটাই সাহায্য করছে গোছগাছ করতে।
মোটামুটি ভালো ভাবেই ওরা দার্জিলিং পৌঁছে গেছে।রাতের ট্রেন জার্নি আর পরের দিন পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ী করে এসে সবাই বেশ ক্লান্ত বলে প্রথম দিন আর কোথাও না বেরিয়ে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন থেকে শুরু করা হবে ঠিক হল। এমনিতেও তাড়াহুড়োর কিছু নেই, ধীরে সুস্থে যাতে ঘোরা যায় তার জন্য হাতে এক দিন বেশি রেখেই হোটেল বুক করা আছে। সন্ধের দিকে ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল, সবাই ঘুমোচ্ছে দেখে অরিত্র একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পাহাড়ী রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে এসে দেখল তখোনো কেউ ওঠেনি। ঠান্ডাও বেশ জমিয়ে পড়েছে দেখে হোটেলের বারে গিয়ে এক পেগ হুইস্কি নিয়ে বসার পরই বিশ্বাস কাকুর ফোন এল। বিস্বাস কাকু নিজেই গিয়েছিলেন কলেজে,পুলিশ বলে পরিচয় দেওয়াতে কাজও হয়েছে। প্রিন্সিপাল ছবি দেখে চিনতে না পারলেও দুজন অফিস স্টাফ মোটামুটি একটা আভাস দিয়েছেন যে মেয়েটি ওই কলেজেরই ছাত্রী ছিল, খুব সম্ভবত গত বছরই বিএ অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু কাগজপত্র না দেখে বলা সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। অফিসের কাগজপত্র খুঁজে নাম ঠিকানা বের করে দেখার জন্য আগামীকাল আবার যেতে অনুরোধ করেছেন উনারা। বুকের ভেতরে একটা আশার আলো নিয়ে ওদের দু বোনকে কন কলে নিয়ে জানালো কতটা কি হয়েছে। ওদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে পেগটা শেষ করে উঠবে ভাবছিল এমন সময় রিশেপশানের দিকে চোখ পড়ল, মৌ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে যেন খুঁজছে, ওকেই খুঁজছে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি উঠে যেতেই ওকে দেখতে পেয়ে সারা মুখে যেন খুশী উছলে উঠল আর তার সাথে দু চোখে বকুনি দেবার ইচ্ছে…কোথায় ছিলে তুমি…কখন থেকে খুঁজছি তোমাকে। ওর হাত ধরে ফিরে এসে বসতে বললে…এদিক ওদিক তাকিয়ে দু চোখে অবাক জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকালো…তুমি এখানে কি করছো…তুমি আবার এই সব খাও নাকি?
অরিত্র ওর চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে বলল…আগে বোসো…বলছি।
মৌ অনিচ্ছা সত্বেও বসার পর গায়ের শালটা একটু ঠিক করে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো…দু চোখে সেই একই জিজ্ঞাসা নিয়ে।
অরিত্র ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল…আমি সব সময় খাই না…অফিসের পার্টি থাকলে একটু আধটু খেতেই হয়…না হলে খারাপ দেখায়…আর…এমনিতে আমার প্রেসার কম বলে হয়তো… একটা কি বড় জোর দুটো পেগ খেলেই…বেশ ঘুম ঘুম ভাব এসে যায় … তার বেশী খেলে কষ্ট হয় বলে আর খাই না…দাদুরা জানে…
আস্তে আস্তে ওর মুখ থেকে অবাক জিজ্ঞাসা কেটে গিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার ভাব ফিরে এলে…গ্লাসটা দেখিয়ে ইশারা করে বোঝালো…এটাই শেষ?
অরিত্র হাসি মুখে জবাব দিল…হুম…এটাই প্রথম…আর এটাই শেষ…বুকের ভেতরে আরো একটা না বলা কথা ঝঙ্কার দিয়ে যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো…ঠিক তোমারই মতো…তুমিই প্রথম…তুমিই শেষ…আমার জীবনে। ইচ্ছে তো হয় বলতে কিন্তু এখনই পারবোনা…ভাবতে ভাবতে বলল…তুমি একটা জুস নাও…আমি ততক্ষনে আমারটা শেষ করে ফেলি।
মাথা নাড়িয়ে জানালো…আচ্ছা।
ওয়েটারকে ডেকে জুস দিতে বলে ওর গায়ের শালটার দিকে তাকিয়ে খুব চেনা চেনা লাগলো, মায়ের বিয়ের আগের খুব প্রিয় একটা দামী কাশ্মীরী হাতের কাজ করা টকটকে লাল শাল, দিদান খুব যত্ন করে এত বছর রেখেছে। নিজের একমাত্র মেয়ের প্রিয় শালটা এতদিন স্মৃতি হিসেবে রাখার পরেও আজ দিদান কি ভেবে ওকে দিয়েছে বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না কিন্তু বুকের ভেতরে সেই কষ্টটা ফিরে আসতে চাইলে জোর করে আটকে রেখে বলল…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মৌ ওর মুগ্ধ চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটু যেন লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিল…ওরও বুকের ভেতরে একটা ব্যাথা মুচড়ে উঠে বলতে চাইলো…দিদান আমাকে সব বলেছে…এটা তোমার মায়ের খুব প্রিয় ছিল…তুমি নাকি মাঝে মাঝে তোমার বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমোতে…বিস্বাস কর…আমি প্রথমে নিতে চাইনি…বুঝতে পারি দিদান আমাকে কি চোখে দেখতে চায়…না বলতে পারিনি…তাই নিয়েছি…জানি না…নিজের কাছে রাখতে পারবো কিনা…তুমি যদি সেই অধিকার আমায় না দাও…কি করে রাখবো আমার কাছে? কেন জানিনা…তোমাকে ঠিক বুঝতে পারিনা…তুমি কি সত্যিই আমাকে চাও না? বলতে চাইলেও তো সব সময় সব কিছু বলা যায় না…আরো অনেক না বলা কথার মতো এটাকেও বুকে আটকে রেখে লাজুক হাসি মুখে নিয়ে ওর দিকে মুখ তুলে তাকালো…ঠিক যেন বলতে চাইছে…তাই? আমাকে খুব সুন্দর লাগছে?
অরিত্র দু চোখের মুগ্ধতা দিয়ে ওকে স্পর্শ করতে করতে বলল…সত্যিই…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মৌ ওর হাতটা ধরে আলতোভাবে চাপ দিয়ে যেন বোঝাতে চাইলো… তোমার চোখ দিয়েই আমি নিজেকে দেখতে চাই সারা জীবন…
পরের দিন সকালে আকাশে আর মেঘ নেই, ভোর রাতে উঠে টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখে দিন শুরু হয়েছে। সত্যিই আজ ওদের কপাল ভালো ছিল…এর আগের বার আকাশে এত মেঘ ছিল যে সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। ঝকঝকে পরিস্কার আকাশ, পাহাড়ী নরম রোদ মাতাল হাওয়ার সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে গা ছুঁয়ে যেন আদর করে যেতে চাইছে। বাতাসিয়া লুপ থেকে চারদিকটা ভীষন ভালো লাগে দেখতে…এমনিতে তাড়াহুড়ো নেই তার উপর দিদান আর শুক্লাদি সেই কখন থেকে সোয়েটার দেখে যাচ্ছে দেখে অরিত্র এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল…দাদুর সাথে মৌ গেছে গাড়ীর দিকে…দাদু সকালের ওষুধটা খেতে ভুলে গিয়েছিল আজ। এগারোটা বেজে গেছে দেখে অরিত্র বিস্বাস কাকুকে ফোন করল কিছু খবর আছে কিনা জানার জন্য। বিশ্বাস কাকু ফোনটা ধরে বলল…অনেক দিন বাঁচবি রে…তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম…বল…তোরা কেমন ঘুরছিস? বিশ্বাস কাকুর গলা শুনে মনে হল আজ কিছু ভালো খবর আছে। নিজেই একটা প্রশ্ন করলেও উত্তরের অপেক্ষা না করে কাকু বলল…শোন…অপারেশন মৌ সাকসেসফুল…আজ যাতে আর ঘোরাতে না পারে ভেবে সকাল বেলাতেই চলে গিয়েছিলাম। নাম ঠিকানা সব পাওয়া গেছে। তারপর জোড়াবাগান থানার মেজোবাবুকে পাকড়াও করে ঠিকানা খুঁজে চলে গিয়েছিলাম। ঠিকানাও পাওয়া গেছে কিন্তু বাড়ীতে কাউকে পাওয়া যায়নি।আশেপাশে জিজ্ঞেস করে জানলাম…কোথাও বেড়াতে গেছে…দিন দশেক পরে ফিরবে।
বুকের ভেতরে যতটা আশা জেগেছিল ততটাই নিরাশা ফিরে এল। একই রকম বা অনেকটা মিল আছে চেহারাও মুখের এমন কেউ তো হতে পারে ভেবে বলল…ঠিক জায়গাতে পৌছনো গেছে কিনা তো বোঝা গেল না।
কাকু হয়তো জানতো ও কি বলতে পারে…তাই…আস্বস্ত করে বলল…শোন…এত বছর পুলিশে চাকরী করে কি কিছুই শিখিনি রে…বাজিয়ে দেখে নিয়েছি…পাশের বেশ কয়েকটা বাড়ীর লোকজনের সাথে কথা বলেছি। নর্থ কোলকাতা তো জানিস কি রকম…সবাই সবাই কে চেনে। অনেক বছর ধরে পাশাপাশি থাকলে যা হয়।
কিছু ডিটেলস পেলে?
হ্যাঁ রে পেয়েছি…কিছু নয়…অনেকটাই…ভালো নাম…মৌমিতা গাঙ্গুলী…ডাক নাম…মৌ…আমি তো ডাক নামটা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম…তোর দেওয়া নামের সাথে কি করে যে মিলে গেল…যাক গে… গত বছর বি এ অনার্স পাশ করেছে…রেজাল্ট ভালো…স্বভাব চরিত্রও ভালো…কোনো খারাপ কিছু কেউ দেখেনি…তবে বেশ কিছুদিন ধরে দেখতে না পেয়ে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলে ওর মা নাকি বলেছে বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটিতে এম এ পড়ছে…হোস্টেলে থাকে… বাবা মারা গেছে বছর দুয়েক আগে একটা দুর্ঘটনায়…নিজের মা অনেক আগেই ছোটো বেলায় মারা গেছে…সাডেন হার্ট ফেলিওর…বাবার সেকেন্ড ম্যারেজ এর দিক থেকে এক ছেলে আর এক মেয়ে…ছেলেটা বড়…ভালো নাম আকাশ, ডাক নাম বিল্টু…ক্লাস টেনে পড়ছে…মেয়ের ভালো নাম সম্পূর্না, ডাক নাম মিষ্টি… এখন এইটে পড়ছে…বাবার ট্রান্সপোর্টের ব্যাবসা এখন মা দেখে…টাকা পয়সা মোটামুটি ভালোই আছে…অন্তত…আশে পাশের লোকজনের তাই ধারনা।
তাহলে…কি এমন হতে পারে…যার জন্য হয়তো বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল…বুঝতে পারছি না।
হুম…ঠিকই ধরেছিস…নিশ্চয় এমন কিছু আছে যা আশে পাশের লোকজন জানে না…সেটাই আমাকে খুঁজে বের করতে হবে…কিন্তু এখন আরঅপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই…বাড়ীর লোকজন ফিরুক…তারপর দেখছি কি করা যায়…ভেতরের খবর বের করতে হলে একটু বেগ পেতে হবে মনে হচ্ছে। মা আছে কিন্তু নিজের নয়, দু দুটো ভাই বোন…বাবা নেই…সম্পত্তির অধিকার থেকে হটানোর একটা গন্ধ পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। যাক গে…তোরা ভালোভাবে ঘুরে আয়…দাদুদের কে জানাস…আমি আর আলাদা করে ফোন করছি না…বুঝলি?
হ্যাঁ ঠিক আছে…কাকু তোমাকে কি বলে যে thanx জানাবো…
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কাকু বলল…শোন…আমাকে তোর আর ওইসব জানিয়ে নিজেকে ছোটো করিস না…তোর দাদু দিদান আমাদের জন্য যা করেছে তা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। এতদিন পর তোদের জন্য কিছু একটা করতে পেরে মনে হচ্ছে কিছুটা হলেও ঋন মুক্ত হতে পারবো। আর শোন…ভালো কথা…মেয়েটাকে একা একা একদম ছাড়বি না…বলা যায় না…নিশ্চয় খারাপ কিছু উদ্দেশ্য আছে…গুন্ডা লাগিয়ে কিছু একটা করতে পিছপা হবে না…না হলে মেয়েটা নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার পর পুলিশের কাছে কেন যায়নি… টাকাপয়সা খুব খারাপ জিনিস…বুঝলি…নিজের বাপ ছেলেকেও খুন করতে পিছপা হয় না…আর এ তো…নিজের মা নয়। পুলিশের চাকরী করতে গিয়ে যে কত কিছুর সামনা করতে হয় সে আমি হাড়ে হাড়ে জানি।
বুকের ভেতরে একটা ঠান্ডাস্রোত বয়ে গেল…তবুও নিজেকে ঠিক রাখার কিছুটা চেষ্টা করে বলল…ঠিক আছে কাকু…এমনিতে ও বাইরে একা কোথাও যায় না…গেলেও আমরা কেউ না কেউ সাথে থাকি।
ঠিক আছে…এখন রাখ…বেশি চিন্তা করিস না…আমি বরং দার্জিলিং থানায় একবার ফোন করে দিচ্ছি…তোদের উপর যেন একটু নজর রাখে।ওখান থেকে গ্যাংটক যাবার আগে একবার জানিয়ে দিস…ওখানেও বলে রাখবো। আর শোন…এত কিছু দাদুদেরকে বলিস না…বুড়ো বয়সে চিন্তা করতে গিয়ে আবার কিছু না হয়ে যায়।
এতদিন বুকের ভেতরে যে চিন্তাটা ছিল সেটা কাকুর কাছ থেকে খবর পাবার পর অনেকটাই ঠিক হয়ে গেলেও…নতুন এক চিন্তা বুকের ভেতরটা তোলপাড় করতে শুরু করে দিয়েছে। হঠাত মনে পড়ল…ও দাদুর সাথে গাড়ীর দিকে গেছে…এখোনো ফেরেনি…তাড়াতাড়ি দিদানরা কোথায় আছে দেখে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোতে গিয়ে বুকে প্রান ফিরে এল…মৌ*…দাদুর হাত ধরে উপরের দিকে আসছে…দাদু কিছু একটা বললে সারা মুখে লাজুক হাসি ছড়িয়ে দাদুর হাত ছেড়ে দিয়ে যেন বলতে চাইছে…যাও…তোমার সাথে আড়ি…
দাদু দাঁড়িয়ে পড়ে আবার কিছু একটা বললে…ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ঘাড় নেড়ে যেন বলতে চাইছে…হ্যাঁ…
এত সুন্দর একটা নিস্পাপ মেয়ের কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে বিশ্বাস করা খুব কঠিন ভাবতে ভাবতে আশে পাশে ভালো করে দেখার চেষ্টা করল…কেউ সেভাবে ওর দিকে নজর রাখছে কিনা। নাঃ… কিছু বিভিন্ন বয়সের মানুষ যারা সুন্দরী মেয়ে দেখলে দু চোখ দিয়ে গিলতে চায়…সেই রকম কয়েক জন ছাড়া সে রকম কিছু চোখে পড়ল না। বাকিরা নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত। এত বড় একটা খবর দাদুদের কে না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিল না কিন্তু ওর সামনে তো বলা যাবে না দেখে ইচ্ছে করেই মৌকে দিদানদের কাছে দিয়ে এসে দাদুকে মোটামুটি যতটা বলা যায় বলে ওদের দু বোন কে ফোন করল…
রুপসা চুপচাপ শোনার পর জিজ্ঞেস করল…তো…দাদাভাই…এবারে কি?
এবারে কি মানে?
ধুস…তুই না…একটা যাচ্ছেতাই…তোর একটা প্রশ্নের তো উত্তর পেয়ে গেছিস…
ওর সাথে এখন কথা বাড়িয়ে লাভ নেই দেখে বলল…আমি এখন ওসব নিয়ে কিছু ভাবছি না…কাকু আগে বাকি খবর গুলো নিক…
হুম…তবে তাই হোক…আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি দাদাভাই…তুই যদি আর কাউকে বিয়ে করিস…দেখে নিস কি করি…তোর সাথে আর কোনোদিন কথাই বলবো না।
বোনটা সত্যিই পাগল…কিছু বুঝতে চায়না ভেবে বলল…আচ্ছা ঠিক আছে…চল…বিয়ে যদি করতেই হয় ওকেই করবো…আর না হলে কাউকেই নয়…তাহলে হবে তো?
কি আর করবো বল…তুই তো আর আমি নই…এই ছোড়দি…তুই আছিস লাইনে? কিছু বল না…
পুবালী কিছু না বলে চুপচাপ ওদের কথা শুনছিল…রুপসার কথা শুনে বলল…ভাই ঠিকই বলেছে…এখনই সব কিছু ভেবে নেওয়াটা ঠিক হবে না…
ওর কথা শেষ হতে না হতেই রুপসা বলে উঠল…ঠিক আছে…ঠিক আছে…চল…তোরা সব গোমড়ামুখো হুতুম প্যাঁচার দল…সব সময় এটা কি হবে…ওটা কি হবে…এই নিয়েই আছিস…আমি আর কিছু বলবো না …যা…আমার বয়ে গেছে…যেন ওর সাথে বিয়ে হলে আমার কিছু লাভ আছে…একটা মাত্র দাদাভাই…ভালোবাসি…তাই বলি…না হলে আমার কি আসে যায়। এই…ছোড়দি…রাখছি এখন…পরে ফোন করিস।
রুপসা অভিমান করে ফোনটা কেটে দিলে পুবালী বলল…ভাই…মন খারাপ করিস না…মাথা গরম হয়ে গেছে…তোকে ফোন করতে হবে না…ওই দেখবি নিজেই ফোন করবে…আমি তো চিনি ওকে…দাদাভাই বলতে পাগল…নিজেকেও বোধহয় এত ভালোবাসে না।
জানি…আচ্ছা…রাখি রে এখন…রাতে ফোন করবো।
পুবালির লাইনটা কাটতেই সাথে সাথে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলে ধরবে কি ধরবে না ঠিক করতে পারছিল না…কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর কি মনে করে ধরলে ওদিক থেকে জিজ্ঞেস করল…আমি কি অরিত্র সেন এর সাথে কথা বলতে পারি?
আমিই অরিত্র…বলুন।
আমি রঞ্জন দাশগুপ্ত… দার্জিলিং থানা থেকে বলছি… মিঃ বিশ্বাস আপনার ব্যাপারে এখুনি ফোন করেছিলেন।
ও আচ্ছা…হ্যাঁ…বলুন…আমার সাথে একটু আগেই ওনার কথা হয়েছে।
মিঃ বিশ্বাস…সব কিছু বলেছেন…আমরা আছি…চিন্তা করবেন না…আপনাদের হোটেলের নাম, রুম নাম্বার আর গাড়ীর নাম্বারটা দিন…আমি প্লেন ড্রেসে একজন কে আর্মস দিয়ে পোস্টিং করে দিচ্ছি…খুব কাজের ছেলে…কিছু মনে হলেই সাথে সাথে আমার এই নাম্বারে ফোন করবেন…
গাড়ীর নাম্বারটা শুনেই বললেন দুধ সাদা টয়োটা তো? ড্রাইভার কে আছে? পবন বাহাদুর? বেঁটে গোলগাল চেহারা…ডান গালে একটা ছোটো কাটা দাগ আছে?
হ্যাঁ… বলাতে বললেন…আরো ভালো হল…ছেলেটার সাথে আমাদের ভালো যোগাযোগ আছে…ওকেও একবার ফোন করে নিচ্ছি…আমার অর্ধেক কাজ ওকে দিয়েই হয়ে যাবে…একাই পাঁচটা লোকের মহড়া নেবার ক্ষমতা আছে ওর।
এত কিছু জানলেন কি করে জিজ্ঞেস করাতে বললেন…আরে মশাই…আমরা পুলিশের লোক…সবাই কে জানতে হয়…কখন কাকে কি কাজে লাগে কে জানে…হো হো করে হেসে উঠে বললেন…আপনারা তো ভাবেন পুলিশ মানেই কিছু করে না…অপদার্থ…ঘুষ খায়…
তা অবশ্য ঠিক…খবরের কাগজ আর টিভিতে যা দেখি…অবশ্য মাঝে মাঝে পুলিশের মানবিক দিকটাও খবরে আসে…
যাক গে…আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন…আমার আবার একটু বেরোতে হবে… চা বাগানে একটা হাফ মার্ডার কেস হয়েছে…দারু গিলে মেয়ে নিয়ে মারামারি…আর ভাল্লাগে না…সারাদিন এইসব কেস ঘেঁটে ঘেঁটে… নিজে যে ভদ্রলোকের ছেলে ভুলেই গেছি…
ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে দিদানদের ডাকতে গিয়ে খেয়াল হল…এই যাঃ…ওনার পরিচয়টা তো জানা হল না…কি ভাবলো কে জানে…ঠিক আছে পরে একবার ফোন করে কথা বলে নেওয়া যাবে ভেবে এগিয়ে যেতে গিয়ে দেখলো…দাদু ওদের কে নিয়ে আসছে।সবার হাতেই একটা করে বড় প্যাকেট…আবার এক গাদা সোয়েটার কিনেছে নিশ্চয়…কি করবে কে জানে…বললেও শোনে না। নিচে নেমে গাড়ীর কাছে গিয়ে পৌঁছোলে পবন তাড়াতাড়ি এসে গাড়ীর দরজা খুলে দিলে এক এক করে সবাই উঠে পড়লে জিজ্ঞেস করল…
সাব…আভি কাঁহা যানা হ্যায়…
দাদু হোটেলের দিকে ফিরতে বলল…বেলা হয়ে গেছে…স্নান খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরোনো যাবে। হোটেলের সামনে পৌঁছোনোর পর পবন কিছুতেই সোয়েটারের প্যাকেট গুলো কাউকে নিতে দিল না…ও পৌঁছে দেবে। ছেলেটা সত্যিই খুব ভালো…প্রথম থেকেই খুব খাতির যত্ন করছে। অরিত্র সবাই চলে যাবার পর কি কি নিতে হবে দেখে নিয়ে এগোতে গেলে পবন বলল…
সাব…থোড়া রুকিয়ে…আপকে সাথ বাত হ্যায়…
অরিত্র দাঁড়িয়ে গিয়ে ওর দিকে তাকালে…পবন প্যাকেট গুলো আবার গাড়ীতে রেখে বলল…সাব…থানা সে বড়া সাবজী কা ফোন আয়া থা…আপলোগ উনকা মেহমান হ্যায়…হামকো পাতা নেহি থা…বড়া সাবজী ভাবীজী কা বারে মে মেরেকো বাতায়া…আপ চিন্তা মত কিজিয়ে…ম্যায় যব তক জিন্দা হুঁ…কিসিকা দম নেহি হ্যায় ভাবীজী কো ছুঁনে কা…আপলোগ ইতনা আচ্ছা আদমী হ্যায়…আপলোগোকে লিয়ে কুছ করনে কা মওকা মিলনা ভি বড়ী বাত হ্যায়…কিতনা আদমী আতা হ্যায়…সব হাম জ্যায়সা ছোটা আদমী কো কিতনা বুরা নজরসে দেখতে হ্যায় লেকিন আপলোগ কিতনা পেয়ার হামকো দে রহে হ্যায়…আপনা ঘরকা আদমী য্যায়সা…হাম কভি…আপ লোগোকো নেহি ভুলেঙ্গে…
শুক্লাদি হেসে ফেলে বলল…দিয়েছিলাম…কোনোটাই পছন্দ নয়…তুই গিয়ে দেখ।
ঠিক আছে চলো।
ওর ঘরে গিয়ে দেখা গেল যতজামাকাপড় ছিল সব বিছানায় ছড়ানো…এক পাশে মুখ ভার করে বসে আছে। অরিত্র কে দেখতে পেয়েই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল… যেন বোঝাতে চাইলো… তুমি এসে গেছো? কি পরবো দেখে দাও না…
সব গুলোই খুব সুন্দর…বাছাবাছির তেমন কিছু নেই দেখে দু একটা দেখে নিয়ে একটা জমকালো দেখে কিছু একটা তুলে হাতে দিলে খুব খুশী…অরিত্র নিজেও জানে না ড্রেসটার কি নাম…সাউথ সিটি মলে গিয়ে ভালো লেগেছিল বলে মৌ আর দু বোনের জন্য একই জিনিষ নিয়েছিল…আজকাল মেয়েদের কতরকম নতুন নতুন ডিজাইনের ড্রেসআসছে যে নাম মনে রাখা মুশকিল…তার উপরে এতদিন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকারই পড়েনি… মৌ একবারের জন্যও দেখলো না ওকে কেমন লাগবে…হাসি মুখে বোঝালো…এটাই ঠিক আছে।
শুক্লাদি পাশ থেকে হেসে ফেলে বলল… কি রে মৌ…একটু আগেই তো আমিও দিয়েছিলাম… তখন তো মাথা নেড়ে এমন করে না বললি যে…মনে হচ্ছিল ওটার থেকে খারাপ আর কিছু হয় না।
লাজুক একটা মিষ্টি হাসিতে বোঝালো… তোমার দেওয়া আর ওর দেওয়া কি এক? ও যা দেবে সেটাই সব থেকে ভালো।
শুক্লাদি বুঝতে পেরে ওকেজড়িয়ে ধরে বলল…বুঝেছি…যা…তাড়াতাড়ি পরে নে… আর কখন বেরোবি।
নবমী অব্দি কিভাবে কেটে গেল বোঝা গেল না…পূজো আসছে ভাবতে কত ভালো লাগে…কিন্তু কি করে যে চারটে দিন কেটে যায় কে জানে।আজ বিজয়া দশমী…পাড়ার অনেকেই বাইরে কোথাও বেরোবে বলে বিসর্জন একটু তাড়াতাড়ি সেরে নেওয়া হয়। সন্ধের মুখে দিদানের সাথে মৌ সিন্দুর খেলা দেখতে গেছে, অরিত্র শরীর টাভালো ছিল না বলে বাড়ী থেকে বেরোয় নি…ড্রয়িং রুমে দাদুর সাথে বসে টিভিতে পুজো পরিক্রমা দেখছিল, আটটা নাগাদ ওরা ফিরলো…দিদানের মতো মৌ এর ও সারা মুখে সিন্দুর মাখানো। দাদু দিদান আর শুক্লাদিকে বিজ়য়ার প্রনাম করে শরীর টা ভালো লাগছে না…একটু শুয়ে নি বলে ও উপরে গিয়ে নিজের ঘরে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর কপালে কারুর হাতের ছোঁয়া পেয়ে তাকিয়ে দেখে মৌ, ওর দিকে তাকিয়ে আছে…চোখে মুখে কিছুটা চিন্তার ছাপ…যেন বলতে চাইছে…খুব শরীর খারাপ লাগছে?
ওর হাতটা ধরে নিজের গালে আলতো ভাবে চেপে ধরে বুকের ভেতরটা যেন অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে উঠল…ওর টুকটুকে ফর্সা মুখে লাল সিন্দুরের দাগ…ওকে যেন আর মোহময়ী করে তুলেছে… খুব ইচ্ছে করছিল… বুকে টেনে নিয়ে জ়ড়িয়ে ধরে আদর করে বলতে…তোমাকে একান্ত ভাবে নিজের করে নিতে চাইছি…কিন্তু পারছিনা…তুমি কি বুঝতে পারছো? না বলা কথা গুলো নিজের ভেতরে চেপে রেখে মুখে হাসি এনে বলল…তেমন কিছু হয় নি…রাতে ভালো করে ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে।
মৌ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কি বুঝলো কে জানে…ইশারা করে বোঝালো ও বিজয়ার প্রনাম করতে চায়।
এই দেখো…আমাকে আবার কেন?
আবার ইশারা করে বোঝালো…ওকে প্রনাম করতে দিতেই হবে।
মৌ ওর পা ছুঁয়ে প্রনাম করে উঠে দাঁড়ালে ওর কাঁধে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…প্রনাম তো করলে…কিন্তু কি বলে তোমাকে আশীর্বাদ করি বলতো। মৌ চোখ বুজে থেকে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে যেন বোঝাতে চাইলো…আমার যে তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাই না…আমি কি চাই তা কি তুমি কোনোদিনও বুঝেও বুঝবে না?
পরের দিনটা শুরু হল বাকি আর পাঁচটা বিজয়া দশমীর পরের দিন হিসেবে। ফোন আর এসএমএসে বিজ়য়া দশমীর শুভেচ্ছা আদান প্রদান চলছিল সকাল থেকেই। যারা বাড়ীতে আসার তারা আর একটু পর থেকেই আসতে শুরু করবে। অরিত্রর শরীর মোটামুটি ভালোই। দশটা নাগাদ নারায়নদা নাতনী প্রিয়া কে সাথে নিয়ে প্রতি বছরের মতো একটা মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে হাজির। প্রিয়া ওর দাদুর মুখে মৌ এর ব্যাপারে শুনেছিল কিন্তু এই প্রথম নিজের চোখে দেখলো। মৌ কে দেখার পর থেকেই প্রিয়া চিন্তা করছিল…কোথাও যেন ওকে দেখেছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। হঠাত মনে হল…কলেজে দেখেনি তো? সপ্তাহে একদিন ও অনেক সকালে টিউশান পড়তে যায় কলেজের এক স্যারের কাছে। কলেজ থেকে খুব বেশী দুরে নয় বলে টিউশান থেকে বেরিয়ে যখন কলেজে আসে তখনও মর্নিং সেকশানের ক্লাস শেষ হতে কিছুটা বাকি থাকে বলে কলেজের সামনে অপেক্ষা করতে হয়। মনে হয় মর্নিং সেকশানের ছুটির পর ওকে দেখেছে কিন্তু ঠিক কিনা বুঝতে পারছে না। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। বাড়ী ফিরে দাদুকে বলতেই দাদু ওকে একটু বকাবকি করল…কেন তুই ওখানেই বলিস নি…জানিস অরিত্র দাদাভাইরা কত চেষ্টা করেছে মৌ দিদি কে জানার জন্য। সাথে সাথেই আবার নারায়নদা ফিরে এল প্রিয়া কে সাথে নিয়ে। মৌ নিচে না থাকায় ওদের সুবিধা হল ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে, মোটামুটি প্রিয়ার কাছ থেকে যেটুকু জানা গেল তাতে বিশেষ কিছু বোঝা না গেলেও একটা আশার আলো দেখা গেল। হয়তো কলেজে গিয়ে খোঁজ নিলে কিছু জানা যেতে পারে কিন্তু কলেজ খুলতে তো সেই লক্ষী পূজোর পর, এই কটা দিন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। দাদু এক ফাঁকে বিশ্বাস কাকুকে ফোন করে মোটামুটিভাবে বুঝিয়ে দিল। যে কেউ গেলে তো আর কলেজ কতৃপক্ষ কোনো কথা বলবে না, পুলিশকে দিয়েই খোঁজ নিতে হবে। আর একটা রাস্তা আছে, কলেজ ইউনিয়ান থেকে খোঁজ পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সে ও তো কলেজ খোলার আগে সম্ভব নয়। বিশ্বাস কাকু ছুটি নিয়ে বাড়ী এসেছে দেখে মৌ এর একটা ফোটো নিয়ে অরিত্র এক ফাঁকে দিয়ে এল। মনের ভেতরে ভীষন তোলপাড় হচ্ছিল, এবারে হয়তো কিছু একটা জানা যাবে। রুপসা আর পুবালীকে ফোন করে জানাতে ওরা তো প্রায় লাফিয়েই উঠল, দুজনেই জানে মৌ এর পরিচয় না জানায় অরিত্র চাইলেও এগোতে পারছে না।
প্রতি বছরই বেশ কয়েকদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া ওদের অনেক বছর ধরে চলছে, চাকরী পাবার আগে দাদুই নিয়ে যেত আর এখন যেহেতু ও নিজে খরচ করতে পারে তাই দাদুকে খরচ করতে দেয় না।এবারেও যাবার সব কিছু ঠিক করা আছে। লক্ষী পুজোর পরদিন বেরিয়ে দার্জিলিং আর গ্যাংটক হয়ে ফিরবে, আগেও দুবার গেছে কিন্তু সব জায়গা গুলো এখোনো দেখা হয়ে ওঠেনি। দিদানের প্লেন চড়তে খুব ভয় থাকায় ট্রেনেই যাওয়া আসা করতে হবে না হলে বাগডোগরা পর্যন্ত প্লেনে যাওয়া আসা করা যেত। মৌ এর ব্যাপারে খোঁজ নেবার জন্য নিজ়ে কোলকাতায় থাকলে ভালো হ’ত কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই, বিশ্বাস কাকুর সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে। বেড়াতে যাবার আগে কয়েকটা দিন অফিস করতে একেবারেই ভালো লাগছিল না, আশা নিরাশার দোটানায় মনের ভেতরে ভীষন একটা অস্থিরতা…কি হবে…যদি কিছু না জানা যায়। বাড়ীতে ফিরে নিজের মনের অবস্থাও চেপে রাখতে হচ্ছে…মৌ কে কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। ডাক্তার বার বার সাবধান করে দিয়েছিল…কোনোভাবেই ও যেন কোনো মানসিক চাপের মধ্যে না থাকে…তাতে আরো খারাপ হলেও হতে পারে। এই রকম একটা অবস্থার মধ্যে বেরোনোর জন্য গোছগাছ চলছিল, বাইরে যাওয়া তো নয় যেন দক্ষযজ্ঞ, শুধু তো আর জামাকাপড়নিয়ে বেরিয়ে পড়লে হবে না, দাদুদের প্রেসক্রিপশান, ওষুধ, হটব্যাগ, তার সাথে একটা জিনিষতো চাই ই চাই দাদুর, টি পট নিতেই হবে, দাদুর আবার দার্জিলিং ফ্লেভার ছাড়া চলে না। যদিও দিদান আর শুক্লাদি এসব ব্যাপারে ভুল করেনা তবুও অরিত্র নিজে একবার দেখে নেয়। মৌ বেড়াতে যাওয়া হবে বলে ভীষন খুশী, দিদান আর শুক্লাদির সাথে সব সময় থেকে অনেকটাই সাহায্য করছে গোছগাছ করতে।
মোটামুটি ভালো ভাবেই ওরা দার্জিলিং পৌঁছে গেছে।রাতের ট্রেন জার্নি আর পরের দিন পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ী করে এসে সবাই বেশ ক্লান্ত বলে প্রথম দিন আর কোথাও না বেরিয়ে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন থেকে শুরু করা হবে ঠিক হল। এমনিতেও তাড়াহুড়োর কিছু নেই, ধীরে সুস্থে যাতে ঘোরা যায় তার জন্য হাতে এক দিন বেশি রেখেই হোটেল বুক করা আছে। সন্ধের দিকে ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল, সবাই ঘুমোচ্ছে দেখে অরিত্র একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পাহাড়ী রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে এসে দেখল তখোনো কেউ ওঠেনি। ঠান্ডাও বেশ জমিয়ে পড়েছে দেখে হোটেলের বারে গিয়ে এক পেগ হুইস্কি নিয়ে বসার পরই বিশ্বাস কাকুর ফোন এল। বিস্বাস কাকু নিজেই গিয়েছিলেন কলেজে,পুলিশ বলে পরিচয় দেওয়াতে কাজও হয়েছে। প্রিন্সিপাল ছবি দেখে চিনতে না পারলেও দুজন অফিস স্টাফ মোটামুটি একটা আভাস দিয়েছেন যে মেয়েটি ওই কলেজেরই ছাত্রী ছিল, খুব সম্ভবত গত বছরই বিএ অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু কাগজপত্র না দেখে বলা সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। অফিসের কাগজপত্র খুঁজে নাম ঠিকানা বের করে দেখার জন্য আগামীকাল আবার যেতে অনুরোধ করেছেন উনারা। বুকের ভেতরে একটা আশার আলো নিয়ে ওদের দু বোনকে কন কলে নিয়ে জানালো কতটা কি হয়েছে। ওদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে পেগটা শেষ করে উঠবে ভাবছিল এমন সময় রিশেপশানের দিকে চোখ পড়ল, মৌ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে যেন খুঁজছে, ওকেই খুঁজছে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি উঠে যেতেই ওকে দেখতে পেয়ে সারা মুখে যেন খুশী উছলে উঠল আর তার সাথে দু চোখে বকুনি দেবার ইচ্ছে…কোথায় ছিলে তুমি…কখন থেকে খুঁজছি তোমাকে। ওর হাত ধরে ফিরে এসে বসতে বললে…এদিক ওদিক তাকিয়ে দু চোখে অবাক জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকালো…তুমি এখানে কি করছো…তুমি আবার এই সব খাও নাকি?
অরিত্র ওর চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে বলল…আগে বোসো…বলছি।
মৌ অনিচ্ছা সত্বেও বসার পর গায়ের শালটা একটু ঠিক করে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো…দু চোখে সেই একই জিজ্ঞাসা নিয়ে।
অরিত্র ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল…আমি সব সময় খাই না…অফিসের পার্টি থাকলে একটু আধটু খেতেই হয়…না হলে খারাপ দেখায়…আর…এমনিতে আমার প্রেসার কম বলে হয়তো… একটা কি বড় জোর দুটো পেগ খেলেই…বেশ ঘুম ঘুম ভাব এসে যায় … তার বেশী খেলে কষ্ট হয় বলে আর খাই না…দাদুরা জানে…
আস্তে আস্তে ওর মুখ থেকে অবাক জিজ্ঞাসা কেটে গিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার ভাব ফিরে এলে…গ্লাসটা দেখিয়ে ইশারা করে বোঝালো…এটাই শেষ?
অরিত্র হাসি মুখে জবাব দিল…হুম…এটাই প্রথম…আর এটাই শেষ…বুকের ভেতরে আরো একটা না বলা কথা ঝঙ্কার দিয়ে যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো…ঠিক তোমারই মতো…তুমিই প্রথম…তুমিই শেষ…আমার জীবনে। ইচ্ছে তো হয় বলতে কিন্তু এখনই পারবোনা…ভাবতে ভাবতে বলল…তুমি একটা জুস নাও…আমি ততক্ষনে আমারটা শেষ করে ফেলি।
মাথা নাড়িয়ে জানালো…আচ্ছা।
ওয়েটারকে ডেকে জুস দিতে বলে ওর গায়ের শালটার দিকে তাকিয়ে খুব চেনা চেনা লাগলো, মায়ের বিয়ের আগের খুব প্রিয় একটা দামী কাশ্মীরী হাতের কাজ করা টকটকে লাল শাল, দিদান খুব যত্ন করে এত বছর রেখেছে। নিজের একমাত্র মেয়ের প্রিয় শালটা এতদিন স্মৃতি হিসেবে রাখার পরেও আজ দিদান কি ভেবে ওকে দিয়েছে বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না কিন্তু বুকের ভেতরে সেই কষ্টটা ফিরে আসতে চাইলে জোর করে আটকে রেখে বলল…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মৌ ওর মুগ্ধ চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটু যেন লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিল…ওরও বুকের ভেতরে একটা ব্যাথা মুচড়ে উঠে বলতে চাইলো…দিদান আমাকে সব বলেছে…এটা তোমার মায়ের খুব প্রিয় ছিল…তুমি নাকি মাঝে মাঝে তোমার বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমোতে…বিস্বাস কর…আমি প্রথমে নিতে চাইনি…বুঝতে পারি দিদান আমাকে কি চোখে দেখতে চায়…না বলতে পারিনি…তাই নিয়েছি…জানি না…নিজের কাছে রাখতে পারবো কিনা…তুমি যদি সেই অধিকার আমায় না দাও…কি করে রাখবো আমার কাছে? কেন জানিনা…তোমাকে ঠিক বুঝতে পারিনা…তুমি কি সত্যিই আমাকে চাও না? বলতে চাইলেও তো সব সময় সব কিছু বলা যায় না…আরো অনেক না বলা কথার মতো এটাকেও বুকে আটকে রেখে লাজুক হাসি মুখে নিয়ে ওর দিকে মুখ তুলে তাকালো…ঠিক যেন বলতে চাইছে…তাই? আমাকে খুব সুন্দর লাগছে?
অরিত্র দু চোখের মুগ্ধতা দিয়ে ওকে স্পর্শ করতে করতে বলল…সত্যিই…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মৌ ওর হাতটা ধরে আলতোভাবে চাপ দিয়ে যেন বোঝাতে চাইলো… তোমার চোখ দিয়েই আমি নিজেকে দেখতে চাই সারা জীবন…
পরের দিন সকালে আকাশে আর মেঘ নেই, ভোর রাতে উঠে টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখে দিন শুরু হয়েছে। সত্যিই আজ ওদের কপাল ভালো ছিল…এর আগের বার আকাশে এত মেঘ ছিল যে সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। ঝকঝকে পরিস্কার আকাশ, পাহাড়ী নরম রোদ মাতাল হাওয়ার সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে গা ছুঁয়ে যেন আদর করে যেতে চাইছে। বাতাসিয়া লুপ থেকে চারদিকটা ভীষন ভালো লাগে দেখতে…এমনিতে তাড়াহুড়ো নেই তার উপর দিদান আর শুক্লাদি সেই কখন থেকে সোয়েটার দেখে যাচ্ছে দেখে অরিত্র এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল…দাদুর সাথে মৌ গেছে গাড়ীর দিকে…দাদু সকালের ওষুধটা খেতে ভুলে গিয়েছিল আজ। এগারোটা বেজে গেছে দেখে অরিত্র বিস্বাস কাকুকে ফোন করল কিছু খবর আছে কিনা জানার জন্য। বিশ্বাস কাকু ফোনটা ধরে বলল…অনেক দিন বাঁচবি রে…তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম…বল…তোরা কেমন ঘুরছিস? বিশ্বাস কাকুর গলা শুনে মনে হল আজ কিছু ভালো খবর আছে। নিজেই একটা প্রশ্ন করলেও উত্তরের অপেক্ষা না করে কাকু বলল…শোন…অপারেশন মৌ সাকসেসফুল…আজ যাতে আর ঘোরাতে না পারে ভেবে সকাল বেলাতেই চলে গিয়েছিলাম। নাম ঠিকানা সব পাওয়া গেছে। তারপর জোড়াবাগান থানার মেজোবাবুকে পাকড়াও করে ঠিকানা খুঁজে চলে গিয়েছিলাম। ঠিকানাও পাওয়া গেছে কিন্তু বাড়ীতে কাউকে পাওয়া যায়নি।আশেপাশে জিজ্ঞেস করে জানলাম…কোথাও বেড়াতে গেছে…দিন দশেক পরে ফিরবে।
বুকের ভেতরে যতটা আশা জেগেছিল ততটাই নিরাশা ফিরে এল। একই রকম বা অনেকটা মিল আছে চেহারাও মুখের এমন কেউ তো হতে পারে ভেবে বলল…ঠিক জায়গাতে পৌছনো গেছে কিনা তো বোঝা গেল না।
কাকু হয়তো জানতো ও কি বলতে পারে…তাই…আস্বস্ত করে বলল…শোন…এত বছর পুলিশে চাকরী করে কি কিছুই শিখিনি রে…বাজিয়ে দেখে নিয়েছি…পাশের বেশ কয়েকটা বাড়ীর লোকজনের সাথে কথা বলেছি। নর্থ কোলকাতা তো জানিস কি রকম…সবাই সবাই কে চেনে। অনেক বছর ধরে পাশাপাশি থাকলে যা হয়।
কিছু ডিটেলস পেলে?
হ্যাঁ রে পেয়েছি…কিছু নয়…অনেকটাই…ভালো নাম…মৌমিতা গাঙ্গুলী…ডাক নাম…মৌ…আমি তো ডাক নামটা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম…তোর দেওয়া নামের সাথে কি করে যে মিলে গেল…যাক গে… গত বছর বি এ অনার্স পাশ করেছে…রেজাল্ট ভালো…স্বভাব চরিত্রও ভালো…কোনো খারাপ কিছু কেউ দেখেনি…তবে বেশ কিছুদিন ধরে দেখতে না পেয়ে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলে ওর মা নাকি বলেছে বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটিতে এম এ পড়ছে…হোস্টেলে থাকে… বাবা মারা গেছে বছর দুয়েক আগে একটা দুর্ঘটনায়…নিজের মা অনেক আগেই ছোটো বেলায় মারা গেছে…সাডেন হার্ট ফেলিওর…বাবার সেকেন্ড ম্যারেজ এর দিক থেকে এক ছেলে আর এক মেয়ে…ছেলেটা বড়…ভালো নাম আকাশ, ডাক নাম বিল্টু…ক্লাস টেনে পড়ছে…মেয়ের ভালো নাম সম্পূর্না, ডাক নাম মিষ্টি… এখন এইটে পড়ছে…বাবার ট্রান্সপোর্টের ব্যাবসা এখন মা দেখে…টাকা পয়সা মোটামুটি ভালোই আছে…অন্তত…আশে পাশের লোকজনের তাই ধারনা।
তাহলে…কি এমন হতে পারে…যার জন্য হয়তো বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল…বুঝতে পারছি না।
হুম…ঠিকই ধরেছিস…নিশ্চয় এমন কিছু আছে যা আশে পাশের লোকজন জানে না…সেটাই আমাকে খুঁজে বের করতে হবে…কিন্তু এখন আরঅপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই…বাড়ীর লোকজন ফিরুক…তারপর দেখছি কি করা যায়…ভেতরের খবর বের করতে হলে একটু বেগ পেতে হবে মনে হচ্ছে। মা আছে কিন্তু নিজের নয়, দু দুটো ভাই বোন…বাবা নেই…সম্পত্তির অধিকার থেকে হটানোর একটা গন্ধ পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। যাক গে…তোরা ভালোভাবে ঘুরে আয়…দাদুদের কে জানাস…আমি আর আলাদা করে ফোন করছি না…বুঝলি?
হ্যাঁ ঠিক আছে…কাকু তোমাকে কি বলে যে thanx জানাবো…
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কাকু বলল…শোন…আমাকে তোর আর ওইসব জানিয়ে নিজেকে ছোটো করিস না…তোর দাদু দিদান আমাদের জন্য যা করেছে তা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। এতদিন পর তোদের জন্য কিছু একটা করতে পেরে মনে হচ্ছে কিছুটা হলেও ঋন মুক্ত হতে পারবো। আর শোন…ভালো কথা…মেয়েটাকে একা একা একদম ছাড়বি না…বলা যায় না…নিশ্চয় খারাপ কিছু উদ্দেশ্য আছে…গুন্ডা লাগিয়ে কিছু একটা করতে পিছপা হবে না…না হলে মেয়েটা নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার পর পুলিশের কাছে কেন যায়নি… টাকাপয়সা খুব খারাপ জিনিস…বুঝলি…নিজের বাপ ছেলেকেও খুন করতে পিছপা হয় না…আর এ তো…নিজের মা নয়। পুলিশের চাকরী করতে গিয়ে যে কত কিছুর সামনা করতে হয় সে আমি হাড়ে হাড়ে জানি।
বুকের ভেতরে একটা ঠান্ডাস্রোত বয়ে গেল…তবুও নিজেকে ঠিক রাখার কিছুটা চেষ্টা করে বলল…ঠিক আছে কাকু…এমনিতে ও বাইরে একা কোথাও যায় না…গেলেও আমরা কেউ না কেউ সাথে থাকি।
ঠিক আছে…এখন রাখ…বেশি চিন্তা করিস না…আমি বরং দার্জিলিং থানায় একবার ফোন করে দিচ্ছি…তোদের উপর যেন একটু নজর রাখে।ওখান থেকে গ্যাংটক যাবার আগে একবার জানিয়ে দিস…ওখানেও বলে রাখবো। আর শোন…এত কিছু দাদুদেরকে বলিস না…বুড়ো বয়সে চিন্তা করতে গিয়ে আবার কিছু না হয়ে যায়।
এতদিন বুকের ভেতরে যে চিন্তাটা ছিল সেটা কাকুর কাছ থেকে খবর পাবার পর অনেকটাই ঠিক হয়ে গেলেও…নতুন এক চিন্তা বুকের ভেতরটা তোলপাড় করতে শুরু করে দিয়েছে। হঠাত মনে পড়ল…ও দাদুর সাথে গাড়ীর দিকে গেছে…এখোনো ফেরেনি…তাড়াতাড়ি দিদানরা কোথায় আছে দেখে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোতে গিয়ে বুকে প্রান ফিরে এল…মৌ*…দাদুর হাত ধরে উপরের দিকে আসছে…দাদু কিছু একটা বললে সারা মুখে লাজুক হাসি ছড়িয়ে দাদুর হাত ছেড়ে দিয়ে যেন বলতে চাইছে…যাও…তোমার সাথে আড়ি…
দাদু দাঁড়িয়ে পড়ে আবার কিছু একটা বললে…ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ঘাড় নেড়ে যেন বলতে চাইছে…হ্যাঁ…
এত সুন্দর একটা নিস্পাপ মেয়ের কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে বিশ্বাস করা খুব কঠিন ভাবতে ভাবতে আশে পাশে ভালো করে দেখার চেষ্টা করল…কেউ সেভাবে ওর দিকে নজর রাখছে কিনা। নাঃ… কিছু বিভিন্ন বয়সের মানুষ যারা সুন্দরী মেয়ে দেখলে দু চোখ দিয়ে গিলতে চায়…সেই রকম কয়েক জন ছাড়া সে রকম কিছু চোখে পড়ল না। বাকিরা নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত। এত বড় একটা খবর দাদুদের কে না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিল না কিন্তু ওর সামনে তো বলা যাবে না দেখে ইচ্ছে করেই মৌকে দিদানদের কাছে দিয়ে এসে দাদুকে মোটামুটি যতটা বলা যায় বলে ওদের দু বোন কে ফোন করল…
রুপসা চুপচাপ শোনার পর জিজ্ঞেস করল…তো…দাদাভাই…এবারে কি?
এবারে কি মানে?
ধুস…তুই না…একটা যাচ্ছেতাই…তোর একটা প্রশ্নের তো উত্তর পেয়ে গেছিস…
ওর সাথে এখন কথা বাড়িয়ে লাভ নেই দেখে বলল…আমি এখন ওসব নিয়ে কিছু ভাবছি না…কাকু আগে বাকি খবর গুলো নিক…
হুম…তবে তাই হোক…আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি দাদাভাই…তুই যদি আর কাউকে বিয়ে করিস…দেখে নিস কি করি…তোর সাথে আর কোনোদিন কথাই বলবো না।
বোনটা সত্যিই পাগল…কিছু বুঝতে চায়না ভেবে বলল…আচ্ছা ঠিক আছে…চল…বিয়ে যদি করতেই হয় ওকেই করবো…আর না হলে কাউকেই নয়…তাহলে হবে তো?
কি আর করবো বল…তুই তো আর আমি নই…এই ছোড়দি…তুই আছিস লাইনে? কিছু বল না…
পুবালী কিছু না বলে চুপচাপ ওদের কথা শুনছিল…রুপসার কথা শুনে বলল…ভাই ঠিকই বলেছে…এখনই সব কিছু ভেবে নেওয়াটা ঠিক হবে না…
ওর কথা শেষ হতে না হতেই রুপসা বলে উঠল…ঠিক আছে…ঠিক আছে…চল…তোরা সব গোমড়ামুখো হুতুম প্যাঁচার দল…সব সময় এটা কি হবে…ওটা কি হবে…এই নিয়েই আছিস…আমি আর কিছু বলবো না …যা…আমার বয়ে গেছে…যেন ওর সাথে বিয়ে হলে আমার কিছু লাভ আছে…একটা মাত্র দাদাভাই…ভালোবাসি…তাই বলি…না হলে আমার কি আসে যায়। এই…ছোড়দি…রাখছি এখন…পরে ফোন করিস।
রুপসা অভিমান করে ফোনটা কেটে দিলে পুবালী বলল…ভাই…মন খারাপ করিস না…মাথা গরম হয়ে গেছে…তোকে ফোন করতে হবে না…ওই দেখবি নিজেই ফোন করবে…আমি তো চিনি ওকে…দাদাভাই বলতে পাগল…নিজেকেও বোধহয় এত ভালোবাসে না।
জানি…আচ্ছা…রাখি রে এখন…রাতে ফোন করবো।
পুবালির লাইনটা কাটতেই সাথে সাথে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলে ধরবে কি ধরবে না ঠিক করতে পারছিল না…কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর কি মনে করে ধরলে ওদিক থেকে জিজ্ঞেস করল…আমি কি অরিত্র সেন এর সাথে কথা বলতে পারি?
আমিই অরিত্র…বলুন।
আমি রঞ্জন দাশগুপ্ত… দার্জিলিং থানা থেকে বলছি… মিঃ বিশ্বাস আপনার ব্যাপারে এখুনি ফোন করেছিলেন।
ও আচ্ছা…হ্যাঁ…বলুন…আমার সাথে একটু আগেই ওনার কথা হয়েছে।
মিঃ বিশ্বাস…সব কিছু বলেছেন…আমরা আছি…চিন্তা করবেন না…আপনাদের হোটেলের নাম, রুম নাম্বার আর গাড়ীর নাম্বারটা দিন…আমি প্লেন ড্রেসে একজন কে আর্মস দিয়ে পোস্টিং করে দিচ্ছি…খুব কাজের ছেলে…কিছু মনে হলেই সাথে সাথে আমার এই নাম্বারে ফোন করবেন…
গাড়ীর নাম্বারটা শুনেই বললেন দুধ সাদা টয়োটা তো? ড্রাইভার কে আছে? পবন বাহাদুর? বেঁটে গোলগাল চেহারা…ডান গালে একটা ছোটো কাটা দাগ আছে?
হ্যাঁ… বলাতে বললেন…আরো ভালো হল…ছেলেটার সাথে আমাদের ভালো যোগাযোগ আছে…ওকেও একবার ফোন করে নিচ্ছি…আমার অর্ধেক কাজ ওকে দিয়েই হয়ে যাবে…একাই পাঁচটা লোকের মহড়া নেবার ক্ষমতা আছে ওর।
এত কিছু জানলেন কি করে জিজ্ঞেস করাতে বললেন…আরে মশাই…আমরা পুলিশের লোক…সবাই কে জানতে হয়…কখন কাকে কি কাজে লাগে কে জানে…হো হো করে হেসে উঠে বললেন…আপনারা তো ভাবেন পুলিশ মানেই কিছু করে না…অপদার্থ…ঘুষ খায়…
তা অবশ্য ঠিক…খবরের কাগজ আর টিভিতে যা দেখি…অবশ্য মাঝে মাঝে পুলিশের মানবিক দিকটাও খবরে আসে…
যাক গে…আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন…আমার আবার একটু বেরোতে হবে… চা বাগানে একটা হাফ মার্ডার কেস হয়েছে…দারু গিলে মেয়ে নিয়ে মারামারি…আর ভাল্লাগে না…সারাদিন এইসব কেস ঘেঁটে ঘেঁটে… নিজে যে ভদ্রলোকের ছেলে ভুলেই গেছি…
ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে দিদানদের ডাকতে গিয়ে খেয়াল হল…এই যাঃ…ওনার পরিচয়টা তো জানা হল না…কি ভাবলো কে জানে…ঠিক আছে পরে একবার ফোন করে কথা বলে নেওয়া যাবে ভেবে এগিয়ে যেতে গিয়ে দেখলো…দাদু ওদের কে নিয়ে আসছে।সবার হাতেই একটা করে বড় প্যাকেট…আবার এক গাদা সোয়েটার কিনেছে নিশ্চয়…কি করবে কে জানে…বললেও শোনে না। নিচে নেমে গাড়ীর কাছে গিয়ে পৌঁছোলে পবন তাড়াতাড়ি এসে গাড়ীর দরজা খুলে দিলে এক এক করে সবাই উঠে পড়লে জিজ্ঞেস করল…
সাব…আভি কাঁহা যানা হ্যায়…
দাদু হোটেলের দিকে ফিরতে বলল…বেলা হয়ে গেছে…স্নান খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরোনো যাবে। হোটেলের সামনে পৌঁছোনোর পর পবন কিছুতেই সোয়েটারের প্যাকেট গুলো কাউকে নিতে দিল না…ও পৌঁছে দেবে। ছেলেটা সত্যিই খুব ভালো…প্রথম থেকেই খুব খাতির যত্ন করছে। অরিত্র সবাই চলে যাবার পর কি কি নিতে হবে দেখে নিয়ে এগোতে গেলে পবন বলল…
সাব…থোড়া রুকিয়ে…আপকে সাথ বাত হ্যায়…
অরিত্র দাঁড়িয়ে গিয়ে ওর দিকে তাকালে…পবন প্যাকেট গুলো আবার গাড়ীতে রেখে বলল…সাব…থানা সে বড়া সাবজী কা ফোন আয়া থা…আপলোগ উনকা মেহমান হ্যায়…হামকো পাতা নেহি থা…বড়া সাবজী ভাবীজী কা বারে মে মেরেকো বাতায়া…আপ চিন্তা মত কিজিয়ে…ম্যায় যব তক জিন্দা হুঁ…কিসিকা দম নেহি হ্যায় ভাবীজী কো ছুঁনে কা…আপলোগ ইতনা আচ্ছা আদমী হ্যায়…আপলোগোকে লিয়ে কুছ করনে কা মওকা মিলনা ভি বড়ী বাত হ্যায়…কিতনা আদমী আতা হ্যায়…সব হাম জ্যায়সা ছোটা আদমী কো কিতনা বুরা নজরসে দেখতে হ্যায় লেকিন আপলোগ কিতনা পেয়ার হামকো দে রহে হ্যায়…আপনা ঘরকা আদমী য্যায়সা…হাম কভি…আপ লোগোকো নেহি ভুলেঙ্গে…