Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#4
রুপসা মৌ এর হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে বিছানায় রেখে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বললদাদাভাই আমার প্রথম প্রেম বলে পেছনে লাগছিলামজানো তো কি রেগে গিয়েছিল
 
মৌ মুখ টিপে হাসতে হাসতে অরিত্রর দিকে তাকিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করলতুমি সত্যি ই বুদ্ধুরামকিচ্ছু বোঝো না
 
 
 
দেখতে দেখতে রুপসার ফেরার দিন চলে এলো। আজ বিকেলের ফ্লাইটে ফিরে যাবে। সকাল থেকেই মৌ ওকে কাছ ছাড়া করতে চাইছিল না, মুখে একটুও হাসি নেই।দু চোখে ভীষন কষ্ট পাওয়ার আভাস। রুপসা ওকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছেআবার আসবে বলেকিন্তু কিছুতেই ওর মুখে হাসি ফেরাতে পারছে না।মাঝে দুবার রুপসাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটিও করেছে।বেরোবার কিছুক্ষন আগে চোখে মুখে জল দিয়ে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাতে ওর বিষন্নতা বিন্দুমাত্র কমেনি। দিদান ওর অবস্থা দেখে অরিত্রকে বললতুই বরং ওকে সাথে নিয়ে যানা হলে তোরা বেরিয়ে যাবার পর আরো কান্নাকাটি করবে।
 
এয়ারপোর্ট যাবার সময় সারাক্ষন ও রুপসা কে জড়িয়ে ধরে বসেছিলরুপসা ওর সাথে গল্প করে যেতে যেতে এখন অনেক টা স্বাভাবিকহয়ে এসেছে। রুপসা বোর্ডিং পাস নিয়ে সিকিউরিটি চেকের আগে ফিরে এসে শেষবারের জন্য দেখা করে চলে গেল। শেষ বারে আর না কেঁদে হাসি মুখে রুপসা কে বিদায় জানিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর অরিত্রর দিকে তাকা্লোযেন বলতে চাইছেচলোএবার ফিরে যাই।
 
রুপসা ফিরে যাবার পর আবার আগের মতো একটা একটা করে দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে পূজো এগিয়ে আসছিল, অরিত্রর ব্যাস্ততা আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে, অফিসের কাজের মাঝে মাঝে পূজোর ব্যাপারেও সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছিল। এর মাঝে জেঠিমা একদিন ফোন করে বললসামনের রবিবার বিকেলে ছেলের বাড়ী থেকে দেখতে আসবে, অরিত্র এলে খুব ভালো হয়। সেই মতো রবিবার সকালে বাজার থেকে ঘুরেএসে ভবানীপুরের বাড়ীতে আসতে হয়েছে। জেঠু জেঠিমা সবকিছু হয়তো সামলাতে পারবে না ভেবে আগের দিনই বলে দিয়েছিল ও দুপুরের মধ্যে এসে যাবে। দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে পুবালী কে নিয়ে বেরোতে হল বিউটি পার্লারে যাবার জন্য, পুবালীকে বেশ চুপচাপ দেখে জিজ্ঞেস করলকি রে ছোড়দিএত চুপচাপ কেনটেনশান হচ্ছে?
 
টেনশান তো একটু হবেইকেমন হবে কে জানে।
 
তা ঠিক।
 
রুপসা আজ সকালে ফোন করেছিলওর সেই এক কথাকিছুদিন মেলামেশা করে দেখতে বলছে।
 
ঠিকই তো বলছেআজকাল সবাই তাই করে।
 
ধুসআমার কেমন যেন লাগছেকি করে বলবো বুঝতে পারছি না।
 
অরিত্রর হেসে ফেলে বললছোড়দিতুই সেই একই রকম থেকে গেলিএতে আবার লজ্জা পাওয়ার কি আছে। ঠিক আছেচলআমিই বলে দেবো।
 
না রে ভাইওর বাড়ীর লোকজন যদি আবার খারাপ কিছু ভেবে বসে।
 
কিচ্ছু খারাপ ভাববে নাআর ভাবলেই বা কিসারা জীবনের ব্যাপারকিছুটা তো দেখে শুনে নেওয়া দরকারতুই এত চিন্তা করিসনা তোআমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
 
ওর কথা শুনে পুবালী কিছুটা স্বস্তির নিস্বাস ফেলে বললদেখকি করতে পারিসপ্রথম দু এক দিন কিন্তু তুই সাথে থাকবিআমি একা একা দেখা করতে পারবো না।
 
তুই কি রে ছোড়দিআমাকে আবার থাকতে হবে কেন?
 
আমার ইচ্ছেতাই থাকবি। তুইতো জানিসআমি রুপসার মতো এতো স্মার্ট নই।
 
মোটামুটি ভালোয় ভালোয় মেয়ে দেখার ব্যাপার টা মিটে গেছে। দু তরফেরই অন্যদেরকে প্রাথমিক ভাবে পছন্দহয়েছে। কিছুদিন ওরা দেখা সাক্ষাত করার পর সব কিছু ঠিক থাকলে বাকি ব্যাপার গুলো নিয়ে এগোতে কারুরই আপত্তি হয়নি। সেই মতো পরের সপ্তাহে অরিত্র অফিস থেকে বিকেলে বেরিয়ে পুবালীকে নিয়ে মনি স্কয়ারে এসেছিল। ওখানে শুভ্রদীপ মানে যার সাথে বিয়ের কথা চলছে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারপরে আরো একদিন পুবালীর সাথে যেতে হয়েছিল, তারপর থেকে ওরা নিজেরাই নিজেদের মতো দেখা করে নিত। এর মাঝে একদিন বড় জেঠু আর জেঠিমা বম্বে থেকে এসেছে, রুপসাও সাথে ছিল। উদ্দেশ্য সবাই মিলে শুভ্রদীপের বাড়ী ঘুরে আসা। অরিত্রকে ও যেতে হয়েছিল ওদের সাথে। রুপসা এর আগে শুভ্রদীপের ফোটো দেখেছিল, এই প্রথম মুখোমুখি দেখা। বাড়ী ফেরার পর পুবালী কে জড়িয়ে ধরে ওর খুশীর যেন অন্ত নেই, বিয়েটা যেন পুবালীর সাথে নয়, ওর সাথে হবে। ছোড়দিদারুন হবে রেকি হ্যান্ডসামআগে বলিসনি তোকি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেমাসীমা মেশোমশায় ও কি ভালোছোড়দিতুই হ্যাঁ বলে দেবলে পুবালীর মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল।
 
পরের দিন রুপসা একাই চলে এসেছিল অরিত্র দের বাড়ী,জেঠিমার ও আসার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পুবালীর বিয়ের ব্যাপারে এখন আর কোনো বাধা না থাকায় ওরা থাকতে থাকতেই বাকি ব্যাপার গুলো সেরে ফেলতে হবে বলে আসতে পারেনি। রুপসার কোলকাতা এলে নিজের বাড়ীতে থাকার চেয়ে অনেক বেশী ভালো লাগে দাদাভাইদের ওখানে, কি সুন্দর খোলামেলা গাছ গাছালী তে ভরা নির্জন জায়গা, তার সাথে পাশেই নদীবিকেলে ছাদে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে কি করে সময় কেটে যায় বোঝাই যায় না। এখন আবার মৌ এর সাথে এত নিবিড় একটা মিষ্টি সম্পর্ক হয়ে গেছে যে ওকে কাছে না পেলে যেন ভালো লাগে না। ওদিকে বিয়ের দিন ঠিক করতে গিয়ে একটু আটকে গেল, ডিসেম্বর মাসে অরিত্র থাকছে নাওর ফিরতে ফিরতে জানুয়ারীর শেষ হয়ে যাবে আর ওর যাবার আগেও সম্ভব নয়, তাই একটু ঠান্ডা থাকতে থাকতে ফেব্রুয়ারীতেই একটা দিন ঠিক করা হয়েছে ছেলের বাড়ীর সাথে কথা বলে। প্রথমে শুভ্রদীপের বাবা একটু গররাজী ছিলেন কিন্ত অরিত্র বাড়ীর এক মাত্র ছেলে আর ও না থাকলে খুব খারাপ দেখাবে বলে রাজী হয়ে গেছেন। রুপসা দিন তিনেক থেকে মৌকে সাথে নিয়ে ফিরে গিয়েছিল পুবালীকে কিছুটা সময় দেবার জন্য। পুবালীও চাইছিল রুপসা থাকতে থাকতে কিছু কেনা কাটা সেরে ফেলতে। অফিস, পাড়ার পূজো আর তার সাথে পুবালীর বিয়ে, সব কিছু সামলাতে গিয়ে অরিত্র বেশ চাপের মধ্যে, তার উপরেআবার এখোনো পূজোর কেনাকাটা কিছু করে উঠতে পারেনি। এক জায়গায় গেলে যে সব কিছু কেনা যাবে সেটা ও সম্ভব নয়, দাদু, দিদান আর শুক্লাদির জন্য এক রকম, জেঠু জ়েঠিমাদের জন্য আর একরকমবড়দি, জামাইবাবু, বড়দির ছেলে পাপাই, ছোড়দি, রুপসা, সাথে মৌতাদের জন্য আবার যার যেটা লাগবে কিনতে হবে, ভেবে ঠিক করতে পারছিল না কবে কি করে উঠতে পারবে। বাধ্য হয়ে আবার দিন তিনেকের ছুটি নিয়ে এক এক করে সব কেনাকাটা করে ফেলল দুই বোন আর মৌকে সাথে নিয়ে। মৌ কিছু নিতে চাইছিল নাএই তো সেদিন এত কিছু কেনা হয়েছে বলে। রুপসা আর পুবালী দুজনে মিলে ওকে বুঝিয়ে রাজী করাতে তবে কিনতে দিয়েছে। এবারে আর নারায়ন দা আর ওর বাড়ীর বাকিদের জন্য নিজে কিছু কিনে উঠতে পারেনি বলে একদিন রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে নারায়ন দার হাতেকিছু টাকা জোর করে দিয়ে এসেছে।
 
জেঠুরা বম্বে ফিরে যাবার পরে আরো দিন সাতেক পরে রুপসা ফিরে গেছে, তার আগে ওরা দুই বোন মৌকে নিয়ে এসে একদিন থেকে ফিরে গিয়েছিল, শুধু মৌকে দিতে আসা নয় সাথে সবার জন্য পূজোর জামাকাপড় দেওয়ার ব্যাপারটাও ছিল। পুজোর আর মাত্র দিন দশেক বাকি আছে, এখন আর সেই চাপ নেইমোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে দেখেঅরিত্র পাড়ার পূজোর দিকে একটু বেশি নজর দিতে পারছে। বিশেষ করে সপ্তমীর সন্ধেবেলা বাচ্চাদের যে নাটক টা হওয়ার কথা আছে সেটা ওরই মাথার থেকে বের করা, এতদিন নিজে বেশী সময় দিতে পারছিল না বলে ওর এক বন্ধু, শুভ ওর হয়ে রিহার্সালের দেখভাল করছিল। শনিবার তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে শেষ রিহার্সাল হয়ে যাবার পর মোটামুটি নিশ্চিন্ত বাচ্চাগুলো ডোবাবে না। খুশী হয়ে সবাইকে একটা করে ক্যাডবেরী দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে আরো কিছুক্ষন ক্লাবে আড্ডা দিয়ে বাড়ী ফিরছিল, ফোনটা বেজ়ে উঠলরিং টোন টা তু কাঁহাএ বাতাওর বস ত্রিদিব বাসুর ফোনইচ্ছে করেই এই রিং টোন টা সেট করে রেখেছিল যাতে সবার থেকে আলাদা করা যায়। কিছু নিশ্চয় সমস্যা হয়েছে না হলে শনিবার এই সময়ে ফোন করার কথা নয় ভেবে ফোন টা রিসিভ করলআজকে রাতের মধ্যে একটা প্রেজেন্টেশান তৈরী করে দিতেই হবে, সোমবার ফরেন কাস্টমার মিট আছে। এটা তো নেহার করার কথা বলাতে বললনেহা আজ হাসব্যান্ডের সাথে ঝামেলা করে দিল্লী চলে গেছে মায়ের কাছে, অরিত্র না করে দিলেই নয়। সেই মতো খেয়ে উঠে এগারোটা নাগাদ বসল কাজটা করতে, সেন্ট্রাল সার্ভার থেকে কিছু ডেটা নিয়ে প্রোজেক্টটা বানাতে হবে কিন্তু ব্রডব্যান্ড ভীষন স্লো চলছে। কিছু করার নেইআস্তে আস্তে কাজ এগোচ্ছে। রাত প্রায় দুটো বাজে, মাঝে একবার নিচে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে এসে এক মনে কাজ করছিলকাজটা মোটামুটি অনেকটাই হয়ে এসেছে, আরো ঘন্টা খানেক হয়তো লাগতে পারে। কাঁধে কারুর হাতের ছোঁয়ামুখ তুলে তাকালোমৌ ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দু চোখে বকুনি দেবার ইচ্ছেরাত জেগে এত কাজ করারকি দরকারযাওঘুমোও।
 
এই আর একটু বাকি আছেবলাতে খালি কফির কাপটা তুলে নিয়ে ফিরে গেল। একটু পরেই আবার ফিরে এলোএক কাপ কফি নিয়ে। কি করে বুঝলো যে আমার আর একবার পেলে ভালো হত ভাবতে ভাবতে হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলকি করে বুঝলে?
 
ওর মুখের মিষ্টি হাসি হয়তো বোঝালোতুমি কি চাও যদি না বুঝতে পারি তাহলে তোমাকে নিজের করে নেবো কি করে।
 
কফির কাপটা টেবিলে রেখে ওর পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছিল ও কি করছে। অরিত্র ওর দিকে তাকিয়ে বললশুতে যাবে না?
 
মাথা নেড়ে জানালোনা।
 
আমার তো আরো একটু সময় লাগবেতুমি জেগে থাকবে আমার জন্য?
 
হাসি মুখে ঘাড় কাত করে বোঝালোকোনো অসুবিধা নেইতোমার জন্য আমি সব করতে পারি।
 
এক নাগাড়ে কাজ করতে করতে কিছুটা হলেও একঘেয়েমি এসে গিয়েছিলভীষন ভালো লাগছিল ওকে কাছে পেয়েমন চাইছে ও পাশে থাকুককিন্তু ও এত কাছে থাকলে কাজে মন দিতে পারবে না তাছাড়া শুক্লাদি ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওকে দেখতে না পেয়ে যদি এখানে চলে আসেযদি কিছু ভাবেযদিও ওরা এমন কিছু করেনি যেটা চোখে লাগার মতোচিন্তা করে হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে বললতুমি এত কাছে থাকলে যে আমি কাজ করতে পারবো না।
 
মুখটা একটু গোমড়া করে সোফার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বোঝালোও ওখানে বসতে চায়।
 
আচ্ছাবোসোবলাতেখুশী হয়ে সোফাতে গিয়ে বসল।
 
অরিত্র কাজ করতে করতে একবার পেছন ফিরে ওর দিকে তাকালোমৌ চুপচাপ বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছেওকে তাকাতে দেখেমাথা নেড়ে বোঝালোআমার দিকে তাকাতে হবে নাতুমি তোমার কাজ কর।
 
আরো কিছুক্ষন কেটে গেছে,তিনটে বেজে দশ। কাজটা শেষ, অনেক বড় হয়ে গেছে প্রেজেন্টেশানটামেলে পাঠানো যাবে না দেখে সার্ভারে আপলোড করতে দিয়ে চেয়ার টা ঘুরিয়ে ওর দিকে মুখ করে বসে দেখছিল মৌ কি করছে।অরিত্র যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে খেয়াল করে নিএক মনে এক বার অরিত্র কি করছে আর তার পরেই ও অরিত্র কে কি বলছেঅভিনয় করে যাচ্ছে। দেখে যা বোঝা গেলঅরিত্র দুহাতে ল্যাপটপের কি বোর্ডে টাইপ করছেতার পরেই মৌ অরিত্রকে বকুনি দিয়ে বলছেযাওআর কাজ করতে হবে নাঅরিত্র মৌ কে বলছেআর একটুমৌ মাথা নেড়ে বলছেনাআর নয়অনেক রাত হয়েছেশুতে যাও। মৌ শুতে যেতে বলাতে অরিত্র কিছু বলতে যাচ্ছিলমুখ তুলে তাকিয়ে অরিত্র ওকে দেখছে বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে গিয়ে মুখ নামিয়ে নিয়ে বসে থাকলোভাবছিল হয়তোইসকতক্ষন ধরে দেখছে কে জানে। অরিত্র পেছন ঘুরে আপলোড হয়ে গেছে দেখে, ল্যাপটপ শাট ডাউন করতে দিয়ে উঠে গেল ওর সামনেতখোনো মুখ নিচু করে বসে আছেসারা মুখে লাজুক হাসি।
 
ভীষন ভালো লাগছিল দেখতে ওর ওই লজ্জা পাওয়াওর কাঁধে হাত রেখে আস্তে করে ডাকলোএই
 
আস্তে আস্তে মুখ তুলে তাকালোমুখে এখোনো সেই লাজুক হাসিদু চোখে জিজ্ঞাসাবলোকি বলবে।
 
ঘুম পাচ্ছে না?
 
উঁহু
 
হুমতাহলে আমি বসি এখানে?
 
না
 
বারেতুমি এখানে থাকলে আমি কি করে শুতে যাই?
 
আর কোনো কিছু বোঝাবার চেষ্টা না করে চুপ করে কিছুক্ষন একভাবে তাকিয়ে থাকলো চোখে চোখ রেখেকিছু হয়তো বোঝাতে চাইলোকিন্তু বোঝা গেল নাআলতো ভাবে একবার ওর হাত টা ধরে উঠে দাঁড়ালোচোখের ভাষায় বোঝাতে চাইলোআমি এবারে আসি?
 
ওর নীরব প্রশ্নের উত্তরটা নীরবেই দিলে একটু জোরে হাতে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলেএকবার মনে হলওকে আটকায়নাঃ থাকঅনেক রাত হয়েছেআরওকে কেনই বা আটকাবোআমি কি পারছিও যা চায় তা দিতে।ইচ্ছে টা মনের ভেতরেই রেখে দিয়ে হাসি মুখে বললকাল সকালে কিন্তু এক সাথে চা খাবো
 
দেখতে দেখতে পূজো শুরু হয়ে গেল, সপ্তমী থেকে ছুটি শুরুচারটে দিন পাড়ার পুজো, কালচারাল প্রোগ্রাম আর একদিন রাতে কোলকাতায় গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে সারা রাত প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো আর একদিন দাদু দিদান দের নিয়ে বেরোনো ছিল গত দু তিন বছরের ছক কিন্তু এবারে হয়তো কিছুটা অন্য রকম কিছু ভাবতে হবে। মৌকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে বেরোনো যাবে না আবার বন্ধুদের সাথে না বেরোলে ওরা আবার পেছনে লাগবে। একবার ভাবলো দাদুদের কে নিয়ে যেদিন বেরোবে সেদিন তো মৌ এর ও ঘোরা হয়ে যাবে তাহলে আর আলাদা করে বেরোনোর দরকার থাকবে না কিন্তু তার পরেই মনে হল একবার ওর সাথে কথা বলে নেবার দরকার আছে না হলে মন খারাপ করতে পারে। দিদান হয়তো বুঝতে পেরেছিল ওর সমস্যাটা তাই নিজের থেকেই সপ্তমীর দিন দুপুরে খেতে বসে কথাটা তুললো
 
আমরা আর এ বছর বাইরে কোথাও যাবো না ভাবছিবাড়ীর সামনেই তো পূজো হচ্ছেএখানেই কাটিয়ে দেবো।
 
অরিত্র খাওয়া থামিয়ে দিদানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলপ্রতি বছরই তো এখানে পূজো হয় আর আমরা বেরোইএবারে আবার আলাদা কিছু আছে নাকি?
 
দিদান হেসে বললমৌকে নিয়ে বেরোতে হবে তোনাকিমেয়েটা পূজোর সময়েও বাড়ীতে বসে কাটাবে।আমাদের না হয় বয়স হচ্ছেওর তো বাইরে বেরোতে ইচ্ছে হয়।
 
দাদু আর শুক্লাদিও দেখা গেল দিদানের সাথে একমতমনে হয় ওরা আগেই নিজেদের ভেতরে আলোচনা করে রেখেছিল। মৌ মাথা নেড়ে বোঝালো ও রাজী নয়। অরিত্র কিছুক্ষন ভেবে বললএকদিন তো আমি একাই বেরোইসেদিন ওকে নিয়ে বেরোনো যাবে।
 
দিদান শুনে বললএকটা দিনই তো বন্ধুদের সাথে বেরোসওদের সাথে না বেরোলে আবার খারাপ ভাববে না তো?
 
দেখি কি করা যায়
 
অরিত্র খাওয়ার পর একটু গড়িয়ে নিয়ে মৌ এর সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখলো ও ঘরে নেইহয়তো ছাদে গেছেফিরে আসবে ভেবে অপেক্ষা করছিলঘরটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখেদেখলেও ভালো লাগে। কিছুক্ষন পর কি মনে করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মৌ দুহাতে কিছু শুকনো জামাকাপড় বুকে চেপে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু চোখে জিজ্ঞাসাকিছু বলবে?
 
অরিত্র ওর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললকি হলবসতে বলবে না নাকি?
 
দুষ্টুমি ভরা হাসি মুখে নিয়ে মাথা নেড়ে উত্তর দিলনাঃ
 
হুমতাহলে যাইভেবেছিলাম তোমার সাথে গল্প করবো।
 
একটু অবাক হবার ভান করে যেন জিজ্ঞেস করলতাই?
 
হুমতাই
 
সারা মুখে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে এসে বিছানার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বোঝালোবোসো।
 
অরিত্র ওর বিছানায় বসে ওকেও ইশারা করে বসতে বললে জামাকাপড় গুলো রেখে উল্টোদিকে বসে ওর দিকে তাকালোযেন বলতে চাইছেবলোকি বলবে।
 
ভাবছিএবারে আর বন্ধুদের সাথে বেরোবো না।তোমাকে নিয়ে একদিন বেরোবো।
 
মাথা নেড়ে জানালোসেটা ঠিক হবে না।
 
কেনতুমি যাবে না ঠাকুর দেখতে?
 
হ্যাঁ।
 
কি করে হবেএকদিন দাদুদেরকে নিয়ে বেরোবোএকদিন বন্ধুদের সাথে বেরোবোতোমাকে নিয়ে তাহলে আলাদা করে কি করে বেরোবো?
 
ঠোঁট উল্টে বোঝালোসে আমি কি জানিতুমি ভাবো কি করবে।
 
ওর দুষ্টূমি ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে অরিত্র ভাবছিলকি করা যায়ওকে নিয়ে কাছাকাছি ঘুরে এসে তারপর একটু দেরীতে বন্ধুদের সাথে বেরোনো ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই বলাতে মাথা নেড়ে জানালোচলবে।
 
বিকেল থেকে অরিত্রর টেনশান শুরু হয়ে গেলবাচ্চাগুলো কি করবে কে জানেযদিও শেষ দিনের রির্হাশাল দেখে তো মনে হয়েছিল ভালোই করবেতবুওবড়রা হলে না হয় হোতোবাচ্চাদের নিয়ে কিছু করা সত্যিই টেনশানের। সাড়ে ছটায় নাটক শুরু হওয়ার কথাচারটের মধ্যে সবাইকে আসতে বলা ছিলবিকেলের চা খেয়েই দৌড়ল ক্লাবের দিকে। নাঃঠিকই আছেবাচ্চারা সবাই এসে গেছেমেকআপ চলছেএক এক করে সবার পিঠ চাপড়ে উতসাহ দিয়ে স্টেজের অবস্থা কি দেখতে গেল। যদিও চিন্তা করার কোনো কারন ছিল নাগত পাঁচ বছর ধরে একই লোক কাজ করছেএতদিনে খুব ভালো বুঝে গেছে কি চাই। পাড়ার বাচ্চাদের নাটকমা বাবা রা তো আসবেই, বাড়ীতে অন্য কেউ থাকলে তারাও আসে। মোটামুটি ছটার মধ্যে স্টেজের সামনের চেয়ারগুলো দখল হয়ে গেছে। ঠিক সাড়ে ছ টাতেই শুরু হল নাটক, তার আগে কালচারাল প্রোগ্রামের সেক্রেটারী হিসেবে শুভকে ছোট করে একটা বক্তব্য রাখতে হয়েছেআজ থেকে তিন দিনের প্রোগ্রাম নিয়ে।নাটকের প্রথম দৃশ্য ঠিকঠাক মতো হয়ে গেলে বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করলমোটামুটি নয়বেশ ভালোই অভিনয় করেছে সবাই। বাকিটা নিশ্চয় ভালোই করবে মনে হচ্ছেভেবে স্টেজের পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ল। একটু একটু করে নাটক এগোচ্ছেদর্শকদের অভিব্যাক্তি বলছে খুব ভালো হচ্ছে।ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো যে এত সুন্দর অভিনয় করতে পারবে কেউই বোধ হয় ভাবতে পারেনি। পৌনেআটটায় নাটকের শেষ দৃশ্যের পর হাত দর্শকদের হাততালি যেন শেষ হতে চায় নাশেষ পর্যন্ত নাটকের সব বাচ্চাদের স্টেজে নিয়ে এসে পুজো কমিটির সেক্রেটারী, সুধন্য বাবু নিজের বক্তব্য শুরু করলেনএত সুন্দর একটি নাটক দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য আমাদের এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষক অরুনাভ স্যরের নাতি অরিত্র ও আমার ভাইপো শুভর কাছে এবং যে সমস্ত ছোটোছোটো ছেলে মেয়েরা অংশ গ্রহন করেছে তাদের সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেই বারন করেছিলাম এত ছোটো বাচ্চাদের কে নিয়ে নাটক না করার জন্যআমি যে ভুল ছিলাম সেটা ওরা সবাই প্রমান করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ইচ্ছে থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব।আপনারা সবাই নাটক টি দেখে নিশ্চয় বুঝেছেনসত্যিকারের ইচ্ছে থাকায় কি ভাবে একটি সহায়সম্বলহীন ছেলে কিভাবে নিজের চেস্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছে, শুধু তাই নয় ভালো রেজাল্টও করেছে। আমি আশা করবোআমাদের এলাকার ছেলেমেয়েরা যাদের সব কিছুই আছেতারা নাটকটি দেখে উদুব্ধ হবে। আমি অরিত্র ও শুভ কে অনুরোধ করছিদুজনেই যদি এখানে এসে আমাদের সবার অভিনন্দন গ্রহন করে। অরিত্র আর শুভ স্টেজের পাশে দাঁড়িয়েছিলঅরিত্র বরাবরই কিছুটা মুখচোরাপেছনে থেকে সব কিছু করবে কিন্তু সামনে আসতে পারেনাশুভ আবার ঠিক বিপরীতজেঠুর কাছ থেকে মাইক্রোফোন টা নিয়ে বলতে শুরু করলআপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমাদের উতসাহ দেবারজন্য। আমার মতে অরিত্রর পাওনাটাই বেশিআমি শুধু ওকে কিছুটা সাহায্য করেছি মাত্র। আপনারা যে নাটকটি দেখলেন তা কোনো কল্পনা নয়সত্যি ঘটনার উপরে লেখাঅরিত্র আর আমি বছর দুয়েক আগে বীরভুম বেড়াতে গিয়েছিলামওখানে আমরা এক চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে দোকানের ছেলেটির সাথে কথা বলে জানতে পারিওর বাবা প্রায় দু বছর নিরুদ্দেশবাড়ীতে দুটো ছোট ছোটো ভাইবোন,দাদু, ঠাকুমাসাহায্য করার কেউ নেইছেলেটি ওর মায়ের সাথে মিলে ছোট্ট চায়ের দোকান চালিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটির ইচ্ছা দেখে আমরা দুজনে কিছু সাহায্য করা শুরুকরিছেলেটি এই বছর মাধ্যমিক পাশ করেছে ৯০% মার্ক্স পেয়ে যা কি না যে সমস্ত ছেলে মেয়ে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পায় তারাও সহজ়ে করতে পারে না। ছেলেটির পড়াশোনা যাতে আর বাধা নাপায় তার জন্য আমরা আমাদের ক্লাবের তরফ থেকে ওর পড়াশোনার সমস্ত ভার নিয়েছি এবং সাথে সাথে এই বছর থেকে যাতে আরো এই রকম মেধাবী দরিদ্র ছেলে মেয়েদের সাহায্য করা যায় তার জন্য আলাদা একটা ফান্ড আমরা তৈরী করেছি। আশাকরি আপনাদের সবার সাহায্য আমরা পাবো।
 
 
 
বাইরে যাবার প্রোগ্রামটা একটু পালটে নিয়েমৌ কে নিয়ে সপ্তমীর রাতেই বেরোবে ঠিক করে নিয়ে শুভকে বাকি সময়টা দেখে নিতে বললে শুভ এক কথায় রাজী হয়ে গেল। মৌ এর ব্যাপার টা মোটামুটি ওর জানা ছিল। মজা করে বললকি গুরুশুধু প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা নাকিআরো কিছু আছে?
 
কি আবার থাকবে? তুই ও যেমনকিছু করার ইচ্ছে থাকলে বাইরে যাবো কেন
 
কে জানে বাবাতুই কেমন করে নিজেকে সামলে রাখিসআমি হলে তো কবেইআর কিছু না হোক
 
অরিত্র হেসে ফেলে বললথাক আর এগোস নাএই জন্যই তো তোর সাথে আমার এত বন্ধুত্বএকেবারে উলটো বলেই বোধ হয় এত টান
 
তা যা বলেছিসআচ্ছাযাযেতে হবে যখন দেরী করিস নাআমি এদিকটা সামলে দিচ্ছিচিন্তা করিস না।
 
তুই কবে বেরোচ্ছিস?
 
দাঁড়াআমার প্রানেশ্বরী এখোনো নাকি বাড়ীতে ম্যানেজ করে উঠতে পারেন নি
 
সে কি রেসেদিন যে বললি বাড়িতে জানিয়ে দেবে
 
আরে বললেই কি আর বলা যায় নাকি? ওর বাবা কে তো চিনিসবাঘের বাচ্চাবলতে গিয়েও ব্যাক গিয়ার দিয়ে দিয়েছে
 
তুই কাকুকে দিয়ে বলাচ্ছিস না কেন? বাড়ীতে বলিসনি নাকি?
 
মা কে একটা আভাস দিয়ে রেখেছিদেখি তাই করতে হবেআর ভালো লাগছে এই ভাবে লুকোচুরি খেলতে
 
ঠিক আছে চলকাল সকালে তোদের বাড়ী যাচ্ছিচিন্তা করিস নাকাকীমা কে দিয়ে কাকুকে ঠিক ম্যানেজ করে নেবোআসি রে
 
দিদানরা কিছুক্ষন আগেই নাটক দেখে ফিরে এসেছেনাটক চলাকালীন ওখানেই দিদান কে বলে দিয়েছিল আজকেই মৌ কে নিয়ে বেরোবে। মৌ একাই বেরোবে বলে তৈরী হচ্ছেআজ তো আর রুপসা নেই যে সাজিয়ে দেবেশুক্লাদি কিছুক্ষন পর অরিত্র কে ডেকে বললগিয়ে দেখচুপ করে বসে আছেকি পরবে ঠিক করতে পারছে না।
Like Reply


Messages In This Thread
মৌ কথা কও by Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:20 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:21 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:22 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:23 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:24 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:25 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:26 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:27 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:29 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:30 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:31 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:32 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:40 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:42 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:43 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:44 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:46 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:50 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM
RE: মৌ কথা কও Raunak_3 - by pcirma - 25-02-2019, 12:56 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)