06-06-2020, 04:47 PM
পর্ব-২৬
-----------------------------------
বন্দনার পেছন পেছন দৌড়ে নিচে নামে স্যামন্তক, কিন্তু ওর বনা একবারের জন্যে পেছনে না তাকিয়ে ওর চোখের সামনে ট্যাক্সি চেপে চলে যায়। কিছু বলার অবকাশ দেয় না। ক্ষুধ, বিধ্বস্ত স্যামন্তক সন্ধ্যে বেলার ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটের আলো কেমন যেন বিষাক্ত মনে হয়, মনে হয় যেন ওকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে কোথায় পৌঁছায় ঠিক করে উঠতে পারেনা। চোখ তুলে দেখে যে পার্ক সার্কাস মোড়ে চলে এসেছে। একবার ভাবে দিদিকে ফোন করবে, একবার ভাবে করে কি বলবে।
চুপ চাপ বসে টিভি দেখছিল পুবালী, কিছুক্ষণ আগে সিতাভ্রকে ফোন করেছিল, ঠিক আছে। কাল বাদে পরশু দিল্লীর উদেশ্যে রওনা, আবার নিজের জীবনে ফিরে যাওয়া। এই কদিন বেশ ভালো কাটল। এমন সময়ে ফোনে রিং হয়, ফোন তুলে দেখে ভাইয়ের নাম্বার “কি হল?”
“তুই কাল কখন আসবি?”
“কেন তুই তো আমাকে সকালে নিতে আসছিস, তারপরে বিকেল বেলা বেড়িয়ে যাবো?” গলাটা কেমন আলাদা শুনাচ্ছে যেন, কি করে ভুলে গেল যে ওকে নিতে আসতে হবে “কি হয়েছে রে তোর? আজ তো তুই বন্দনার সাথে দেখা করতে যাবি তাই না?”
“হ্যাঁ।” শুধু এইটুকু উত্তর দিল স্যামন্তক, কি বলবে?
“ঝগড়া করেছিস?”
“না।”
“তোর কি হয়েছে?”
“আমি আজ রাতে বাড়িতে সব বলে দেব, আমার আর বন্দনার সম্পর্কের ব্যাপারে।”
অবাক হয়ে যায় পুবালী “না, তুই পাপা কে ভালো মতন জানিস। সব একদম ভেস্তে যাবে? তোর হয়েছে টাকি?”
সব কথা দিদিকে জানায় স্যামন্তক, বন্দনা বলেছে যে ওর নাকি কোন ক্ষমতা নেই কারুর সামনে দাঁড়ানোর, সব সময়ে নাকি দিদি দিদি করে।
হেসে ফেলে পুবালী “ব্যাস এই টুকু কথা। আমি কাল বাড়ি যাই তারপরে দেখছি।”
“কাল এলেও আমি বলব যা বলার।”
“বন্দনার কথাতে এত চোটে আছিস কেন? আমি কথা বলছি ওর সাথে, আর তুই বাড়িতে কিছু বলবি না, কাকু পাপাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে আর তোর দিল্লী যাওয়া বন্দ করে দেবে, সেটা কি ভালো হবে? আমি জানি পাপা এত সহজে মেনে নেবে না। অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হবে রে সামু।”
“আমার সাথে কথা বলা বন্দ করে দিয়েছে, আমার দেওয়া আংটি খুলে নিয়েছে। আমি কি করব?”
অবস্থা সঙ্গিন “ওকে, আমি কথা বলছি বন্দনার সাথে।”
নিজের ঘরে ঢুকে বন্দনা, আংটিটা গলার চেনে ঝুলিয়ে দেয়। বিশ্বাস একটাই, একদিন তো পড়াবে কিন্তু কবে আসবে সেইদিন সেটা জানা নেই বন্দনার। কান্নায় ভেঙে পরে বন্দনা, বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে “হাঁ ভগবান।” ফোনের রিং বেজে ওঠে।
হ্যালোর আওয়াজ শুনে পুবালী বুঝতে পারে যে বন্দনা কাঁদছিল “কিরে কাঁদছিস কেন?”
ধরা গলায় বলে বন্দনা “কি বলব তোকে?”
“কি হয়েছে?” অবস্থা বেশ সঙ্গিন।
পুবালীর গলা শুনে একটু আহত হয় বন্দনা, তাহলে স্যামন্তক সেই দিদির আঁচলের আশ্রয় নিয়েছে। চোখ মুছে বলে “তোর ভাইয়ের তো কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই। শুধু প্রেম করতে জানে, কি করে সেটা ফলপ্রসূ করবে সেটা জানেনা।”
“সব ঠিক হয়ে যাবে, বন্দনা, আমি বলছি।”
“তুই বললি ব্যাস হয়ে গেল?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা “এমন ছেলেকে ভালবেসেচি আমি যার নিজের কোন শক্তি নেই কিছু করার।”
“তুই ভুল বুঝচিস, দেখ আমার বাবা কে বাড়ির সবাই ভয় পায়। পাপার সামনে কথা বলা একটু সাবধানে বলতে হয়।” গলা একটু খানির জন্য ধরে আসে পুবালীর “তুই জানিস না অনেক কথা। দিদি অনেক বড় আমাদের চেয়ে, আর দিদির কথা অনেক চলে বাড়িতে। বোন সব থেকে ছোটো, তাই সবার আদুরের। আমরা দুজনে মাঝখানে, ঠিক মন্দিরের ঘন্টার মতন, সব কিছুর মাঝে আমি আর সামু পিষে থাকি। আমি তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম সেই ছোটো বেলা থেকে যে, কোনদিন ওকে ছেড়ে যাবনা।”
“স্যামন্তক এটা জানত, তাহলে আমার সাথে প্রেম করতে কেন গেছিল? আমাকে কেন সেদিন তোর বাড়িতে চুমু খেতে গেছিল? আমি এমনি চলে আসতাম, কিছু বলতাম না। ওকি চিরকাল তোর আঁচলের তলায় থাকবে?”
পুবালী বন্দনার কথা শুনে রেগে যায় “তুই কি বলতে চাস যে আমার সামু মেরুদন্ডহীন ছেলে? জানিস, সিতাভ্র ওকে চাকরি দিতে চেয়েছিল ওর কোম্পানিতে, ও করতে চায়নি। পাপা বলেছিল যে ডিভিসি তে ঢুকিয়ে দেবে যাতে সবার কাছে থাকে সেটাও করতে চায়নি। নিজের ক্ষমতায় নিজে কাজ খুঁজবে বলে একা একা পুনে, দিল্লী গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে। তারপরে তুই আমার ভাইকে বলবি যে মেরুদণ্ডহীন ছেলে?”
বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় বন্দনা, দৃঢ় স্বরে উত্তর দেয় পুবালীকে “আমি কিছু জানিনা পুবালী, আমি শুধু ওর মুখ থেকে শুনতে চাই যে ও আমাকে সবার সামনে মাথা উঁচু করে নিয়ে যেতে এসেছে, ব্যাস। যেদিন আমাকে এসে বলবে ঐ কথা, সেদিন আমাকে আংটি পড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি যেতে রাজী, শুধু একবার ওকে বলতে দে। আমি ওর উত্তরের জন্য ওয়েট করব।”
জানেনা ভবিষ্যৎ কি, তবুও বুকের মাঝে একটা ক্ষীণ আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে গলার চেনে ঝোলা আংটিটার দিকে।
চলবে......
-----------------------------------
বন্দনার পেছন পেছন দৌড়ে নিচে নামে স্যামন্তক, কিন্তু ওর বনা একবারের জন্যে পেছনে না তাকিয়ে ওর চোখের সামনে ট্যাক্সি চেপে চলে যায়। কিছু বলার অবকাশ দেয় না। ক্ষুধ, বিধ্বস্ত স্যামন্তক সন্ধ্যে বেলার ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটের আলো কেমন যেন বিষাক্ত মনে হয়, মনে হয় যেন ওকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে কোথায় পৌঁছায় ঠিক করে উঠতে পারেনা। চোখ তুলে দেখে যে পার্ক সার্কাস মোড়ে চলে এসেছে। একবার ভাবে দিদিকে ফোন করবে, একবার ভাবে করে কি বলবে।
চুপ চাপ বসে টিভি দেখছিল পুবালী, কিছুক্ষণ আগে সিতাভ্রকে ফোন করেছিল, ঠিক আছে। কাল বাদে পরশু দিল্লীর উদেশ্যে রওনা, আবার নিজের জীবনে ফিরে যাওয়া। এই কদিন বেশ ভালো কাটল। এমন সময়ে ফোনে রিং হয়, ফোন তুলে দেখে ভাইয়ের নাম্বার “কি হল?”
“তুই কাল কখন আসবি?”
“কেন তুই তো আমাকে সকালে নিতে আসছিস, তারপরে বিকেল বেলা বেড়িয়ে যাবো?” গলাটা কেমন আলাদা শুনাচ্ছে যেন, কি করে ভুলে গেল যে ওকে নিতে আসতে হবে “কি হয়েছে রে তোর? আজ তো তুই বন্দনার সাথে দেখা করতে যাবি তাই না?”
“হ্যাঁ।” শুধু এইটুকু উত্তর দিল স্যামন্তক, কি বলবে?
“ঝগড়া করেছিস?”
“না।”
“তোর কি হয়েছে?”
“আমি আজ রাতে বাড়িতে সব বলে দেব, আমার আর বন্দনার সম্পর্কের ব্যাপারে।”
অবাক হয়ে যায় পুবালী “না, তুই পাপা কে ভালো মতন জানিস। সব একদম ভেস্তে যাবে? তোর হয়েছে টাকি?”
সব কথা দিদিকে জানায় স্যামন্তক, বন্দনা বলেছে যে ওর নাকি কোন ক্ষমতা নেই কারুর সামনে দাঁড়ানোর, সব সময়ে নাকি দিদি দিদি করে।
হেসে ফেলে পুবালী “ব্যাস এই টুকু কথা। আমি কাল বাড়ি যাই তারপরে দেখছি।”
“কাল এলেও আমি বলব যা বলার।”
“বন্দনার কথাতে এত চোটে আছিস কেন? আমি কথা বলছি ওর সাথে, আর তুই বাড়িতে কিছু বলবি না, কাকু পাপাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে আর তোর দিল্লী যাওয়া বন্দ করে দেবে, সেটা কি ভালো হবে? আমি জানি পাপা এত সহজে মেনে নেবে না। অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হবে রে সামু।”
“আমার সাথে কথা বলা বন্দ করে দিয়েছে, আমার দেওয়া আংটি খুলে নিয়েছে। আমি কি করব?”
অবস্থা সঙ্গিন “ওকে, আমি কথা বলছি বন্দনার সাথে।”
নিজের ঘরে ঢুকে বন্দনা, আংটিটা গলার চেনে ঝুলিয়ে দেয়। বিশ্বাস একটাই, একদিন তো পড়াবে কিন্তু কবে আসবে সেইদিন সেটা জানা নেই বন্দনার। কান্নায় ভেঙে পরে বন্দনা, বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে “হাঁ ভগবান।” ফোনের রিং বেজে ওঠে।
হ্যালোর আওয়াজ শুনে পুবালী বুঝতে পারে যে বন্দনা কাঁদছিল “কিরে কাঁদছিস কেন?”
ধরা গলায় বলে বন্দনা “কি বলব তোকে?”
“কি হয়েছে?” অবস্থা বেশ সঙ্গিন।
পুবালীর গলা শুনে একটু আহত হয় বন্দনা, তাহলে স্যামন্তক সেই দিদির আঁচলের আশ্রয় নিয়েছে। চোখ মুছে বলে “তোর ভাইয়ের তো কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই। শুধু প্রেম করতে জানে, কি করে সেটা ফলপ্রসূ করবে সেটা জানেনা।”
“সব ঠিক হয়ে যাবে, বন্দনা, আমি বলছি।”
“তুই বললি ব্যাস হয়ে গেল?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা “এমন ছেলেকে ভালবেসেচি আমি যার নিজের কোন শক্তি নেই কিছু করার।”
“তুই ভুল বুঝচিস, দেখ আমার বাবা কে বাড়ির সবাই ভয় পায়। পাপার সামনে কথা বলা একটু সাবধানে বলতে হয়।” গলা একটু খানির জন্য ধরে আসে পুবালীর “তুই জানিস না অনেক কথা। দিদি অনেক বড় আমাদের চেয়ে, আর দিদির কথা অনেক চলে বাড়িতে। বোন সব থেকে ছোটো, তাই সবার আদুরের। আমরা দুজনে মাঝখানে, ঠিক মন্দিরের ঘন্টার মতন, সব কিছুর মাঝে আমি আর সামু পিষে থাকি। আমি তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম সেই ছোটো বেলা থেকে যে, কোনদিন ওকে ছেড়ে যাবনা।”
“স্যামন্তক এটা জানত, তাহলে আমার সাথে প্রেম করতে কেন গেছিল? আমাকে কেন সেদিন তোর বাড়িতে চুমু খেতে গেছিল? আমি এমনি চলে আসতাম, কিছু বলতাম না। ওকি চিরকাল তোর আঁচলের তলায় থাকবে?”
পুবালী বন্দনার কথা শুনে রেগে যায় “তুই কি বলতে চাস যে আমার সামু মেরুদন্ডহীন ছেলে? জানিস, সিতাভ্র ওকে চাকরি দিতে চেয়েছিল ওর কোম্পানিতে, ও করতে চায়নি। পাপা বলেছিল যে ডিভিসি তে ঢুকিয়ে দেবে যাতে সবার কাছে থাকে সেটাও করতে চায়নি। নিজের ক্ষমতায় নিজে কাজ খুঁজবে বলে একা একা পুনে, দিল্লী গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে। তারপরে তুই আমার ভাইকে বলবি যে মেরুদণ্ডহীন ছেলে?”
বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় বন্দনা, দৃঢ় স্বরে উত্তর দেয় পুবালীকে “আমি কিছু জানিনা পুবালী, আমি শুধু ওর মুখ থেকে শুনতে চাই যে ও আমাকে সবার সামনে মাথা উঁচু করে নিয়ে যেতে এসেছে, ব্যাস। যেদিন আমাকে এসে বলবে ঐ কথা, সেদিন আমাকে আংটি পড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি যেতে রাজী, শুধু একবার ওকে বলতে দে। আমি ওর উত্তরের জন্য ওয়েট করব।”
জানেনা ভবিষ্যৎ কি, তবুও বুকের মাঝে একটা ক্ষীণ আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে গলার চেনে ঝোলা আংটিটার দিকে।
চলবে......


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)