04-06-2020, 03:01 PM
[বিয়াল্লিশ]
যত সময় যাচ্ছে লোক বাড়ছে।মুন্না বসে বসে ঘামছে।শালী ছাদ থেকে মনে হয় ঝাপ দিয়েছে।উপর থেকে ভীড়ের মধ্যে গুরুকে দেখেছে।বাইকটা ওদের নজরে পড়েনি।ভীড়ের জন্য চিন্তা ছিলনা কিন্তু গুরুর সামনে পড়লে জান শেষ।বোকাচোদা আশিসের জন্য এই অবস্থা।ছাদে ঘুরে ঘুরে দেখছে মুন্না কিভাবে এখন থেকে পালানো যায়।শিবুকে কিছু বলার দরকার নেই তাহলে দুজনেই ফাসবো।ছাদে দাড়ীয়ে পেচ্ছাপ করে।
একটা কথা বাবুলের মনে ঝিলিক দিল।বস বলছে এই মেয়েটা সেই কল্পনা নয় তাহলে মুন্না তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি তো?মুন্নাকে পেলেই সব ফয়শলা হবে।কিন্তু মুন্নাকে এখন কোথায় পাওয়া যেতে পারে?
বাবাকে ধরে ধরে নিয়ে রিক্সায় তুলল আল্পনা।বাবা খুব ঘামছে।মুকুন্দবাবু মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, মা তুমি আমাকে কিছু লুকাচ্ছো নাতো?
বাবা থানায় গেলে সব বোঝা যাবে।আমি কেনো লুকাবো?
রাস্তায় বাতিস্তম্বে আলো জ্বলে উঠেছে।সবাই যে যার মত পথ চলছে।তারা কেউ জানেও না এই রিক্সার আরোহীর মনে কি ঝড় বইছে।মুকুন্দবাবু বললেন,ভাই রিক্সা একটু তাড়াতাড়ি চালাবে?
মুকুন্দবাবুর পকেটে ফোন বাজে।আল্পনা বলল,বাবা ফোন ধরো।
মুকুন্দবাবু পকেট হতে ফোন বের করে মেয়েকে দিয়ে বলল,তুই কথা বল।থানায় যাচ্ছি কাউকে বলার দরকার নেই।আল্পনা ফোন কানে লাগাতে শুনতে পেল “বাবা।” আলপনা দ্রুত বলল, আপিনি কে বলছেন?...দিদি তুই কোথায়?এই রিক্সা ঘোরাও।
কে ফোন করেছে?মুকুন্দবাবু জিজ্ঞেস করল।
বাবা বাড়ী থেকে দিদি ফোন করেছে?
কল্পনা?কোথায় ছিল সারাদিন?
বাবা কি হচ্ছে রাস্তার মধ্যে?
ভীড়ের দিকে তাকিয়ে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দড়িয়ে চিন্তা করছে বাবুয়া।ভীড়ের লোকেরা আড় চোখে দেখছে তাকে।মুন্না ছাদে দাঁড়িয়ে ঘামছে।একবার বাইকে চেপে বসতে পারলে হবে।কাউকে বলার দরকার নেইও।মুন্না চুপি চুপি পাইপ বেয়ে ছাদ থেকে নেমে বাইকে স্টার্ট করতে ভজা চেচিয়ে উঠল,গুরু মুন্না-আঃ।
বাবুয়া দ্রুত বাইক স্টার্ট করে বলল,দেখতো বাড়ীতে আর কে আছে?
ঋষি পিছনে উঠে বসতে মুন্নার বাইকের পিছনে ধাওয়া করল।ভীড় তাকিয়ে দেখল সামনে মুন্না অনেকটা পিছনে বাবুয়ার বাইক।ভজা অস্থির হয়ে উঠল।কেতো গেছে তো গেছে।একটা ভ্যান আনতে কোথায় গেল?ভীড় বাড়ীর ভিতর ঢুকে তন্ন তন্ন করে খুজতে লাগল।
ভ্যান এবং পুলিশ ভ্যান একসঙ্গে পৌছালো।দ্রুত কল্পনার দেহ ভ্যানে তুলে হাসপাতালে রওনা করিয়ে দিল।বাড়ীর ভিতর থেকে শিবু আর আশিসকে মারতে মারতে বের করে এনেছে মানুষ।ভজা আর কেতো বাইক নিয়ে সরে পড়েছে।পুলিশ আশিস আর শিবুকে আহত অবস্থায় জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে ভ্যানে তুলে নিল।
দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ল পুলিশ আশিসকে গ্রেপ্তার করেছে।কল্পনা সুইসাইড করেছে।রকে এসেও পৌছায় সেই খবর।রেজাল্টের আলোচনা চলছিল।তমালের অনার্স কেটে গেছে তাছাড়া সবাই পাস করেছে।ঋষি ফার্স্টক্লাস পেয়েছে সে খবরও কিভাবে পৌছে গেছে।কিন্তু ঋষি কোথায়?কল্পনার সুইসাইডের খবরে সবাই মুষড়ে পড়ল।আশিস গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে কারো খারাপ লাগে না।কল্পনার বাড়ীতে এতক্ষণে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়ে থাকবে।কল্পনার মৃত্যুর জন্য আশিস দায়ী সে ব্যাপারে সবাই একমত।বঙ্কার এসে খবর দিল শুনেছিস আশিসদার কথা?
বাসি খবর কেউ কোনো কথা বলে না।বঙ্কা বলল,আশিসদার যে এত অধঃপতন ভাবতেই পারিনি।শেষ পর্যন্ত কলের মিস্ত্রির মেয়েকে?
সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকায় বঙ্কা আবার নতুন কি খবর নিয়ে এল?
কলের মিস্ত্রি বীরেন লাইন ধারে থাকে চিনিস না?বঙ্কা জিজ্ঞেস করল।বঙ্কা বলতে থাকে,মেয়েটা পাস করে কলেজে পড়তো।বাবা-মা লেখাপড়া জানে না তাদের মেয়ে বিএ পড়ছে।
শুভ জিজ্ঞেস করল,এখন সেকথা আসছে কেন?
বঙ্কা বলল,তোরা শুনিস নি বীরেন মিস্ত্রীর মেয়ে কল্পনা সুইসাইড করেছে?
বীরেনমিস্ত্রির মেয়ে কল্পনা?মিহির জিজ্ঞেস করল।
তাহলে আশিসের সঙ্গে যার ছিল–?
বঙ্কা হাসল বলল,প্রেম হেভি জমেছে।সিনেমা হলে দেখলাম সন্দীপ না কি যেন তার সঙ্গে সিনেমা দেখতে গেছে।হলে অন্ধকারে কি কিছু করবে না ভেবেছিস?
সঞ্জনাকে নিয়ে হলে তুই কিছু করতিস নাকি?শুভ জিজ্ঞেস করল।
শুভ আমাকে মুখ খোলাস না।বিধানপার্কের ব্যাপার ভুলে গেলি?আশিসদা না থাকলে সেদিন–।
আশিস বাল করেছে।যা করার করেছে ঋষি।শুভ বলল,আচ্ছা ঋষিটা কোথায় গেল বলতো?
বঙ্কা বলল,কলেজে দেখা হয়েছিল আমার সঙ্গে।আমার তাড়া ছিল তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।
তাড়া মানে সঞ্জনা?নির্মল বলল।
বঙ্কা বলল,আমার ওসব লুকোছাপা নেই।ফোন ডাকলো চলে গেলাম।
এবার ঋষিটার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে।শুভ বলল।
বঙ্কা বলল,তা হলেই হয়েছে ঋষি করবে প্রেম?তমালের দিকে তাকিয়ে বলল,কিরে আশিসদার জন্য মন খারাপ?
আশিসদা আমার কে?ফালতু কথা বলবি নাতো।যেমন কর্ম তেমন ফল।তমাল বলল।
রাগ করছিস কেন?একটু ইয়ার্কি করতে পারব না?
তমাল বলল,তোরা বাবুয়াকে যত খারাপ ভাবিস ও কিন্তু অত খারাপ নয়।
ছাড়তো মস্তানের আবার ভাল খারাপ।
এতদিন বলিনি আজ বলছি আমি আশিসদার সঙ্গে বাবুয়ার কাছে গেছিলাম। গিয়ে দেখলি বাবুয়া ভাল।
দেখলাম না শুনলাম।আশিসদার কথা শুনে বাবুয়া কিছুক্ষন ভেবে বলল,দিল চাইছে না।
আমারও খুব খারাপ লাগল।আশিসদাকে বোঝালাম কিন্তু শুনলে তো।সেদিন বুঝলে আজ এই অবস্থা হতনা।বুলু আমাকে বলতো আশিসদার সঙ্গে না মিশতে।
বুলুর খবর কি?
তমাল হেসে বলল,ও অনার্স নিয়ে পাস করেছে।
তোকে কিছু বলেনি?
কি বলবে?বলছিল ডিস্ট্যান্সে মাস্টার্স করতে।
নির্মল উঠে দাড়াতে শুভ জিজ্ঞেস করল,কিরে চললি?
আশিসদা ধরা পড়েছে পুলিশের থার্ড ডিগ্রি পড়লে কার কার নাম বলবে কে জানে।
বঙ্কা বলল,ঠিকই আজ আর রাত করবো না।আমিও আসি।
একে একে সবাই চলে গেল।
শান্তিদার বাড়ী পর্যন্ত এসে মুন্নার বাইক দেখতে পায়না।কোথায় অদৃশ্য হল বাবুয়া বাইক থামিয়ে ভাবছে কোনদিকে যাবে?আশাপাশের দোকান থেকে সবাই লক্ষ্য করে বাবুয়াকে। কেউ কেউ দোকানের ঝাপ বন্ধ করতে লাগল।একটা ছেলে বাবুয়ার কাছ ঘেষে যাবার সময় ফিসফিসিয়ে বলে গেল শান্তিদার বাড়ীতে ঢুকেছে।বাবুয়া চমকে তাকিয়ে দেখল ছেলেটি হনহন করে চলে যাচ্ছে।মুহূর্তে রাস্তাঘাট সুনসান।বাবুয়া গিয়ে শান্তিবাবুর দরজায় ঘা মারে দরজা খুলুন।
আশপাশের দোকান ঝপাঝপ বন্ধ হতে থাকে। কিছুক্ষন পর শান্তিবাবু দরজা খুলল।শান্তিবাবু যেন কিছুই জানেনা এমন ভাব করে জিজ্ঞেস করল,এতদিন পর আমার কাছে কি মনে কোরে?
আপনার কাছে আসিনি।মুন্নাকে বের করে দিন?
এটা কি মুন্নার বাড়ি?শান্তিবাবু বলল।
ঋষি বলল,জানেন মুন্না কি করেছে?এদের কেন এত প্রশ্রয় দেন বলুন তো?
এই ছোকরা তুমি আমাকে চেনো?
না চিনলেও এখন চিনছি।ঋষি বলল।
বস তুমি কথা বোলোনা।এরা তোমার মর্যাদা দিতে পারবে না।শান্তিদা ফালতু ঝামেলায় জড়াবেন না মুন্নাকে বের করে দিন।
বাবুয়া বেশ ডায়লগ শিখেছে।এই শালা বসটা কে?সেদিনও দোকানদারদের সঙ্গে এসেছিল।গলার সুর নরম করে শান্তিবাবু বললেন,শোনো ভাই বস এই বাবুয়া একসময় আমার খুব প্রিয় পাত্র ছিল।
এখন পাতা ঝরে গেছে।আপনি মুন্নাকে বের করে দিন।
তুই বিশ্বাস কর এখানে মুন্না-ফুন্না কেউ নেই।শান্তিবাবু শেষ চেষ্টা করল।
ঋষি দেখল পিছনের দরজার আড়াল থেকে মুন্না উকি দিচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল ঐতো মুন্না।বাবুয়া দ্রুত রিভলবার বের করে মুন্নাকে নিশানা করে।ঋষি বাবুয়ার হাত চেপে ধরে বলল,না বাবুয়া না।গুলির শব্দ হল শান্তিবাবু আর্তনাদ করে পিঠ চেপে বসে পড়ল। মুন্না সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।বাবুয়া মেঝতে পড়ে থাকা শান্তিবাবুর দিকে ঝুকে “শান্তিদা-শান্তিদা” বলে ডাকতে থাকে।রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে।বাবুয়া দেখল মায়াবৌদি কখন নীচে এসে করুণচোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন।
বাবুয়া বলল,বিশ্বাস করুন বৌদি আমি কিছু করিনি।
মায়া ভট্টাচার্য বিড়বিড় করে বললেন,বেদের মৃত্যু সাপের বিষে।তারপর ফোন তুলে এ্যাম্বুলেন্সে খবর দিলেন।এখানে থাকা ঠিক হবেনা বুঝতে পেরে বাবুয়া বলল,বস উঠে পড়ো।মুহূর্তে এলাকা অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিল।পথে দেখা হল ভজার সঙ্গে বাবুয়া বলল,গাড়ী ঘোরা।এ্যাবসকণ্ড।
কেতো কিছু না বুঝলেও দ্রুত বাইক ঘুরিয়ে মুহূর্তে মিলিয়ে গেল।এ্যাম্বুলেন্স এসে শান্তিবাবুকে নিয়ে নার্সিং হোমের দিকে রওনা হল।কেউ কেউ খিন কিলের কথা বললেও দেরী হয়ে যাবে ভেবে স্থানীয় নার্সিং হোমেই ভর্তি করা হল।মায়া ভট্টাচার্য সঙ্গে যান নি।দলের ছেলেরাই গেছে।লোকের মুখে মুখে ফিরতে লাগল দুটী নাম–বাবুয়া আর বস।
কল্পনার মৃত্যু গুরুত্ব হারিয়ে চাপা পড়ে গেল।চায়ের দোকান রিক্সাস্ট্যাণ্ড অটোস্ট্যাণ্ড রকের আড্ডা সর্বত্র একই আলোচনা শান্তি ভট্টাচার্য।বাবুয়াকে চিনলেও সবার মনে প্রশ্ন এই শালা বসটা কে?
হোস্টেল সুপার ঊষশীকে খবর দিল,তোমার ফোন।ঊষশী দ্রুত গিয়ে ফোন ধরল।মায়ের মুখে সব শুনে শুধু বলল,ওহ গড।এ্যাম কামিং।
বাবুয়া বাইকে চালাতে চালাতে বলল,বস আমার জন্য তোমাকেও ঝামেলায় পড়তে হল।
ঋষির মনে পড়ল অশুভ শক্তির প্রভাব।ঋষি বলল,বোকার মত কথা বোলনা কারো জন্য নয় মানুষ নিজেই নিজের পথে চলে।
লেবু বাগানে গিয়ে বাইক ভিতরে ঢুকিয়ে রাখল।কনক অবাক হয়ে দেখে তাহলে কি লাল রাতে থাকবে? সঙ্গে বসকে নিয়ে এসেছে ধন্দ্ব লাগে।বাবুয়া ঢুকে বলল,রাতে খাবো ব্যবস্থা কর।একটা গামছা দে।
কনক গামছা এগিয়ে দিল।রাতে বস খাবে শুনে ভাল লাগল।বাবুয়া চলে যেতে ঋষি চৌকিতে বসল।হেসে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন?
কনক মৃদু হেসে বলল,আপনে এসেছেন ভাল লাগছে।বস আপনাকে কেমন আউলানো লাগতেছে?
ঋষি হেসে বলল,আমার জীবনটাই আউলানো।
কনক একটা শাড়ি বের করে দিয়ে বলল,এইটা পরে স্নান কোরে নেন।ভাল লাগবে।
শাড়ি হাতে নিয়ে ঋষি হা-করে কনকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কনক লজ্জা পায় জিজ্ঞেস করল,কি দেখতেছেন?
ঋষি বলল,কোহিনূর আপনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা মাকে দেখছি।
সারা শরীরে শিহরণ খেলে যায়।গলার কাছে উদ্গত আবেগ শ্বাস্রুদ্ধ করে।বাবুয়া স্নান করে গাঁ মুছতে মুছতে বলল,বস তুমি না ধরলে মুন্না ওইখানে খালাস হয়ে যেতো।
সেই জন্যই ধরেছিলাম।তাহলে কি হতো ভেবেছো?
বস মেয়েটার জন্য খুব আফশোস হচ্ছে।
ঋষি স্নান করতে গেল।কনকের চোখে জল দেখে বাবুয়া জিজ্ঞেস করল,বস কিছু বলেছে?
চোখের জল মুছে হেসে বলল,কি বলবে?
তাহলে চোখে জল কেন?
বস কাউরে কাদায় না।বসের জন্য কান্না আসে।
শালা তুইও ফিলমি ডায়লগ ঝাড়ছিস বেগম?তারপর চৌকিতে আরাম করে বসে বলল, খেতে খেতে আজ তোকে একটা ফিলমের গল্প শোনাবো।
যত সময় যাচ্ছে লোক বাড়ছে।মুন্না বসে বসে ঘামছে।শালী ছাদ থেকে মনে হয় ঝাপ দিয়েছে।উপর থেকে ভীড়ের মধ্যে গুরুকে দেখেছে।বাইকটা ওদের নজরে পড়েনি।ভীড়ের জন্য চিন্তা ছিলনা কিন্তু গুরুর সামনে পড়লে জান শেষ।বোকাচোদা আশিসের জন্য এই অবস্থা।ছাদে ঘুরে ঘুরে দেখছে মুন্না কিভাবে এখন থেকে পালানো যায়।শিবুকে কিছু বলার দরকার নেই তাহলে দুজনেই ফাসবো।ছাদে দাড়ীয়ে পেচ্ছাপ করে।
একটা কথা বাবুলের মনে ঝিলিক দিল।বস বলছে এই মেয়েটা সেই কল্পনা নয় তাহলে মুন্না তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি তো?মুন্নাকে পেলেই সব ফয়শলা হবে।কিন্তু মুন্নাকে এখন কোথায় পাওয়া যেতে পারে?
বাবাকে ধরে ধরে নিয়ে রিক্সায় তুলল আল্পনা।বাবা খুব ঘামছে।মুকুন্দবাবু মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, মা তুমি আমাকে কিছু লুকাচ্ছো নাতো?
বাবা থানায় গেলে সব বোঝা যাবে।আমি কেনো লুকাবো?
রাস্তায় বাতিস্তম্বে আলো জ্বলে উঠেছে।সবাই যে যার মত পথ চলছে।তারা কেউ জানেও না এই রিক্সার আরোহীর মনে কি ঝড় বইছে।মুকুন্দবাবু বললেন,ভাই রিক্সা একটু তাড়াতাড়ি চালাবে?
মুকুন্দবাবুর পকেটে ফোন বাজে।আল্পনা বলল,বাবা ফোন ধরো।
মুকুন্দবাবু পকেট হতে ফোন বের করে মেয়েকে দিয়ে বলল,তুই কথা বল।থানায় যাচ্ছি কাউকে বলার দরকার নেই।আল্পনা ফোন কানে লাগাতে শুনতে পেল “বাবা।” আলপনা দ্রুত বলল, আপিনি কে বলছেন?...দিদি তুই কোথায়?এই রিক্সা ঘোরাও।
কে ফোন করেছে?মুকুন্দবাবু জিজ্ঞেস করল।
বাবা বাড়ী থেকে দিদি ফোন করেছে?
কল্পনা?কোথায় ছিল সারাদিন?
বাবা কি হচ্ছে রাস্তার মধ্যে?
ভীড়ের দিকে তাকিয়ে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দড়িয়ে চিন্তা করছে বাবুয়া।ভীড়ের লোকেরা আড় চোখে দেখছে তাকে।মুন্না ছাদে দাঁড়িয়ে ঘামছে।একবার বাইকে চেপে বসতে পারলে হবে।কাউকে বলার দরকার নেইও।মুন্না চুপি চুপি পাইপ বেয়ে ছাদ থেকে নেমে বাইকে স্টার্ট করতে ভজা চেচিয়ে উঠল,গুরু মুন্না-আঃ।
বাবুয়া দ্রুত বাইক স্টার্ট করে বলল,দেখতো বাড়ীতে আর কে আছে?
ঋষি পিছনে উঠে বসতে মুন্নার বাইকের পিছনে ধাওয়া করল।ভীড় তাকিয়ে দেখল সামনে মুন্না অনেকটা পিছনে বাবুয়ার বাইক।ভজা অস্থির হয়ে উঠল।কেতো গেছে তো গেছে।একটা ভ্যান আনতে কোথায় গেল?ভীড় বাড়ীর ভিতর ঢুকে তন্ন তন্ন করে খুজতে লাগল।
ভ্যান এবং পুলিশ ভ্যান একসঙ্গে পৌছালো।দ্রুত কল্পনার দেহ ভ্যানে তুলে হাসপাতালে রওনা করিয়ে দিল।বাড়ীর ভিতর থেকে শিবু আর আশিসকে মারতে মারতে বের করে এনেছে মানুষ।ভজা আর কেতো বাইক নিয়ে সরে পড়েছে।পুলিশ আশিস আর শিবুকে আহত অবস্থায় জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে ভ্যানে তুলে নিল।
দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ল পুলিশ আশিসকে গ্রেপ্তার করেছে।কল্পনা সুইসাইড করেছে।রকে এসেও পৌছায় সেই খবর।রেজাল্টের আলোচনা চলছিল।তমালের অনার্স কেটে গেছে তাছাড়া সবাই পাস করেছে।ঋষি ফার্স্টক্লাস পেয়েছে সে খবরও কিভাবে পৌছে গেছে।কিন্তু ঋষি কোথায়?কল্পনার সুইসাইডের খবরে সবাই মুষড়ে পড়ল।আশিস গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে কারো খারাপ লাগে না।কল্পনার বাড়ীতে এতক্ষণে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়ে থাকবে।কল্পনার মৃত্যুর জন্য আশিস দায়ী সে ব্যাপারে সবাই একমত।বঙ্কার এসে খবর দিল শুনেছিস আশিসদার কথা?
বাসি খবর কেউ কোনো কথা বলে না।বঙ্কা বলল,আশিসদার যে এত অধঃপতন ভাবতেই পারিনি।শেষ পর্যন্ত কলের মিস্ত্রির মেয়েকে?
সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকায় বঙ্কা আবার নতুন কি খবর নিয়ে এল?
কলের মিস্ত্রি বীরেন লাইন ধারে থাকে চিনিস না?বঙ্কা জিজ্ঞেস করল।বঙ্কা বলতে থাকে,মেয়েটা পাস করে কলেজে পড়তো।বাবা-মা লেখাপড়া জানে না তাদের মেয়ে বিএ পড়ছে।
শুভ জিজ্ঞেস করল,এখন সেকথা আসছে কেন?
বঙ্কা বলল,তোরা শুনিস নি বীরেন মিস্ত্রীর মেয়ে কল্পনা সুইসাইড করেছে?
বীরেনমিস্ত্রির মেয়ে কল্পনা?মিহির জিজ্ঞেস করল।
তাহলে আশিসের সঙ্গে যার ছিল–?
বঙ্কা হাসল বলল,প্রেম হেভি জমেছে।সিনেমা হলে দেখলাম সন্দীপ না কি যেন তার সঙ্গে সিনেমা দেখতে গেছে।হলে অন্ধকারে কি কিছু করবে না ভেবেছিস?
সঞ্জনাকে নিয়ে হলে তুই কিছু করতিস নাকি?শুভ জিজ্ঞেস করল।
শুভ আমাকে মুখ খোলাস না।বিধানপার্কের ব্যাপার ভুলে গেলি?আশিসদা না থাকলে সেদিন–।
আশিস বাল করেছে।যা করার করেছে ঋষি।শুভ বলল,আচ্ছা ঋষিটা কোথায় গেল বলতো?
বঙ্কা বলল,কলেজে দেখা হয়েছিল আমার সঙ্গে।আমার তাড়া ছিল তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।
তাড়া মানে সঞ্জনা?নির্মল বলল।
বঙ্কা বলল,আমার ওসব লুকোছাপা নেই।ফোন ডাকলো চলে গেলাম।
এবার ঋষিটার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে।শুভ বলল।
বঙ্কা বলল,তা হলেই হয়েছে ঋষি করবে প্রেম?তমালের দিকে তাকিয়ে বলল,কিরে আশিসদার জন্য মন খারাপ?
আশিসদা আমার কে?ফালতু কথা বলবি নাতো।যেমন কর্ম তেমন ফল।তমাল বলল।
রাগ করছিস কেন?একটু ইয়ার্কি করতে পারব না?
তমাল বলল,তোরা বাবুয়াকে যত খারাপ ভাবিস ও কিন্তু অত খারাপ নয়।
ছাড়তো মস্তানের আবার ভাল খারাপ।
এতদিন বলিনি আজ বলছি আমি আশিসদার সঙ্গে বাবুয়ার কাছে গেছিলাম। গিয়ে দেখলি বাবুয়া ভাল।
দেখলাম না শুনলাম।আশিসদার কথা শুনে বাবুয়া কিছুক্ষন ভেবে বলল,দিল চাইছে না।
আমারও খুব খারাপ লাগল।আশিসদাকে বোঝালাম কিন্তু শুনলে তো।সেদিন বুঝলে আজ এই অবস্থা হতনা।বুলু আমাকে বলতো আশিসদার সঙ্গে না মিশতে।
বুলুর খবর কি?
তমাল হেসে বলল,ও অনার্স নিয়ে পাস করেছে।
তোকে কিছু বলেনি?
কি বলবে?বলছিল ডিস্ট্যান্সে মাস্টার্স করতে।
নির্মল উঠে দাড়াতে শুভ জিজ্ঞেস করল,কিরে চললি?
আশিসদা ধরা পড়েছে পুলিশের থার্ড ডিগ্রি পড়লে কার কার নাম বলবে কে জানে।
বঙ্কা বলল,ঠিকই আজ আর রাত করবো না।আমিও আসি।
একে একে সবাই চলে গেল।
শান্তিদার বাড়ী পর্যন্ত এসে মুন্নার বাইক দেখতে পায়না।কোথায় অদৃশ্য হল বাবুয়া বাইক থামিয়ে ভাবছে কোনদিকে যাবে?আশাপাশের দোকান থেকে সবাই লক্ষ্য করে বাবুয়াকে। কেউ কেউ দোকানের ঝাপ বন্ধ করতে লাগল।একটা ছেলে বাবুয়ার কাছ ঘেষে যাবার সময় ফিসফিসিয়ে বলে গেল শান্তিদার বাড়ীতে ঢুকেছে।বাবুয়া চমকে তাকিয়ে দেখল ছেলেটি হনহন করে চলে যাচ্ছে।মুহূর্তে রাস্তাঘাট সুনসান।বাবুয়া গিয়ে শান্তিবাবুর দরজায় ঘা মারে দরজা খুলুন।
আশপাশের দোকান ঝপাঝপ বন্ধ হতে থাকে। কিছুক্ষন পর শান্তিবাবু দরজা খুলল।শান্তিবাবু যেন কিছুই জানেনা এমন ভাব করে জিজ্ঞেস করল,এতদিন পর আমার কাছে কি মনে কোরে?
আপনার কাছে আসিনি।মুন্নাকে বের করে দিন?
এটা কি মুন্নার বাড়ি?শান্তিবাবু বলল।
ঋষি বলল,জানেন মুন্না কি করেছে?এদের কেন এত প্রশ্রয় দেন বলুন তো?
এই ছোকরা তুমি আমাকে চেনো?
না চিনলেও এখন চিনছি।ঋষি বলল।
বস তুমি কথা বোলোনা।এরা তোমার মর্যাদা দিতে পারবে না।শান্তিদা ফালতু ঝামেলায় জড়াবেন না মুন্নাকে বের করে দিন।
বাবুয়া বেশ ডায়লগ শিখেছে।এই শালা বসটা কে?সেদিনও দোকানদারদের সঙ্গে এসেছিল।গলার সুর নরম করে শান্তিবাবু বললেন,শোনো ভাই বস এই বাবুয়া একসময় আমার খুব প্রিয় পাত্র ছিল।
এখন পাতা ঝরে গেছে।আপনি মুন্নাকে বের করে দিন।
তুই বিশ্বাস কর এখানে মুন্না-ফুন্না কেউ নেই।শান্তিবাবু শেষ চেষ্টা করল।
ঋষি দেখল পিছনের দরজার আড়াল থেকে মুন্না উকি দিচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল ঐতো মুন্না।বাবুয়া দ্রুত রিভলবার বের করে মুন্নাকে নিশানা করে।ঋষি বাবুয়ার হাত চেপে ধরে বলল,না বাবুয়া না।গুলির শব্দ হল শান্তিবাবু আর্তনাদ করে পিঠ চেপে বসে পড়ল। মুন্না সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।বাবুয়া মেঝতে পড়ে থাকা শান্তিবাবুর দিকে ঝুকে “শান্তিদা-শান্তিদা” বলে ডাকতে থাকে।রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে।বাবুয়া দেখল মায়াবৌদি কখন নীচে এসে করুণচোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন।
বাবুয়া বলল,বিশ্বাস করুন বৌদি আমি কিছু করিনি।
মায়া ভট্টাচার্য বিড়বিড় করে বললেন,বেদের মৃত্যু সাপের বিষে।তারপর ফোন তুলে এ্যাম্বুলেন্সে খবর দিলেন।এখানে থাকা ঠিক হবেনা বুঝতে পেরে বাবুয়া বলল,বস উঠে পড়ো।মুহূর্তে এলাকা অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিল।পথে দেখা হল ভজার সঙ্গে বাবুয়া বলল,গাড়ী ঘোরা।এ্যাবসকণ্ড।
কেতো কিছু না বুঝলেও দ্রুত বাইক ঘুরিয়ে মুহূর্তে মিলিয়ে গেল।এ্যাম্বুলেন্স এসে শান্তিবাবুকে নিয়ে নার্সিং হোমের দিকে রওনা হল।কেউ কেউ খিন কিলের কথা বললেও দেরী হয়ে যাবে ভেবে স্থানীয় নার্সিং হোমেই ভর্তি করা হল।মায়া ভট্টাচার্য সঙ্গে যান নি।দলের ছেলেরাই গেছে।লোকের মুখে মুখে ফিরতে লাগল দুটী নাম–বাবুয়া আর বস।
কল্পনার মৃত্যু গুরুত্ব হারিয়ে চাপা পড়ে গেল।চায়ের দোকান রিক্সাস্ট্যাণ্ড অটোস্ট্যাণ্ড রকের আড্ডা সর্বত্র একই আলোচনা শান্তি ভট্টাচার্য।বাবুয়াকে চিনলেও সবার মনে প্রশ্ন এই শালা বসটা কে?
হোস্টেল সুপার ঊষশীকে খবর দিল,তোমার ফোন।ঊষশী দ্রুত গিয়ে ফোন ধরল।মায়ের মুখে সব শুনে শুধু বলল,ওহ গড।এ্যাম কামিং।
বাবুয়া বাইকে চালাতে চালাতে বলল,বস আমার জন্য তোমাকেও ঝামেলায় পড়তে হল।
ঋষির মনে পড়ল অশুভ শক্তির প্রভাব।ঋষি বলল,বোকার মত কথা বোলনা কারো জন্য নয় মানুষ নিজেই নিজের পথে চলে।
লেবু বাগানে গিয়ে বাইক ভিতরে ঢুকিয়ে রাখল।কনক অবাক হয়ে দেখে তাহলে কি লাল রাতে থাকবে? সঙ্গে বসকে নিয়ে এসেছে ধন্দ্ব লাগে।বাবুয়া ঢুকে বলল,রাতে খাবো ব্যবস্থা কর।একটা গামছা দে।
কনক গামছা এগিয়ে দিল।রাতে বস খাবে শুনে ভাল লাগল।বাবুয়া চলে যেতে ঋষি চৌকিতে বসল।হেসে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন?
কনক মৃদু হেসে বলল,আপনে এসেছেন ভাল লাগছে।বস আপনাকে কেমন আউলানো লাগতেছে?
ঋষি হেসে বলল,আমার জীবনটাই আউলানো।
কনক একটা শাড়ি বের করে দিয়ে বলল,এইটা পরে স্নান কোরে নেন।ভাল লাগবে।
শাড়ি হাতে নিয়ে ঋষি হা-করে কনকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কনক লজ্জা পায় জিজ্ঞেস করল,কি দেখতেছেন?
ঋষি বলল,কোহিনূর আপনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা মাকে দেখছি।
সারা শরীরে শিহরণ খেলে যায়।গলার কাছে উদ্গত আবেগ শ্বাস্রুদ্ধ করে।বাবুয়া স্নান করে গাঁ মুছতে মুছতে বলল,বস তুমি না ধরলে মুন্না ওইখানে খালাস হয়ে যেতো।
সেই জন্যই ধরেছিলাম।তাহলে কি হতো ভেবেছো?
বস মেয়েটার জন্য খুব আফশোস হচ্ছে।
ঋষি স্নান করতে গেল।কনকের চোখে জল দেখে বাবুয়া জিজ্ঞেস করল,বস কিছু বলেছে?
চোখের জল মুছে হেসে বলল,কি বলবে?
তাহলে চোখে জল কেন?
বস কাউরে কাদায় না।বসের জন্য কান্না আসে।
শালা তুইও ফিলমি ডায়লগ ঝাড়ছিস বেগম?তারপর চৌকিতে আরাম করে বসে বলল, খেতে খেতে আজ তোকে একটা ফিলমের গল্প শোনাবো।