Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak
#23
মিনু বলল, ‘আমার তো অনেক বদনাম আছে। বিয়ে করলেই কি বদনাম সব ধুয়ে যাবে? ওসব বিয়ে ফিয়েতে আমার বিশ্বাস নেই। ফটর ফটর করে কটা অজানা সংস্কৃত মন্ত্র পড়লেই কি সব হয়ে যায় নাকি? দাউ দাউ আগুনে হাত রাখলেই কী আর সতী হওয়া যায়? আমাদের এই মেয়েদের শরীরটাকে নিয়ে সব থেকে বড় জ্বালা, মনের অরণ্যে সবসময় জ্বলছে দাউ দাউ আগুন। তোরা যতই বলিস না কেন, মেয়েরা লজ্জ্বাবতী লতা। আমি তো বিশ্বাস করি না। বিধাতা আমাদের ওভাবেই তৈরী করেছে। বিশ্বে এমন কোন পুরুষ আছে কি যে আমাকে সেন্ট পার্সেন্ট খুশি করতে পারবে? আমার মনে হয়, কেউ বোধহয় এমনটা সুখী হয় না। সুখী সুখী মুখ করে বসে থাকে সব। এসব দের ন্যাকামি আমি পছন্দ করি না।
 
ভাবছিলাম, আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে ওকে হয়তো বলে বসত, জিও বেটি হাজার সাল। তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক। তুই শালি ঠিক কথা জেনেছিস তো। সত্যি এই পৃথিবীতে এমন কোনো আখাম্বা দন্ড নেই যা মেয়েদের একশো ভাগ সুখি করতে পারে। তবুও তো তার মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে হয়। এক দন্ড থেকে আর এক দন্ডে নিরন্তর পরিভ্রমণ করতে হয়। দেখতে হয় কে সব থেকে বেশি আনন্দ দিতে পারে।
 
মিনুকে দেখে আমার ওই মূহূর্তে তাই মনে হল। এ মেয়ে বিয়ে থা সত্যি আর করবে না। শুধু শুধু ঘনঘন বয় ফ্রেন্ড চেঞ্জ করবে।
 
ভাগ্যিস আমার কপালটা এরকম নয়। আমাকে নিয়ে বিদিশা ছেনাল খেলা খেলবে না কোনদিন। কিছুদিন খেলাটা চলল, তারপর এঁটো পাতার মতো তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল ডাস্ট বিনে। পরে দেখছি, কুকুরের কাড়াকাড়ি।
 
জীবন নাটকের পরবর্তী অধ্যায় যে শুরু হচ্ছে তার একটু পরেই, তখনো জানি না। মিনু একেবারে হাত পা ছড়িয়ে আমার সাথে বসার ঘরে সোফায় বসে কথা বলছে। ঠিক তখুনি শুনলাম, দরজায় কলিংবেলের শব্দ। চমকে উঠলাম। এই সময় কে এল?
 
দরজা খুললাম, দেখি বিদিশা দাঁড়িয়ে।
 
আমার হাট বিটটা একটু বেড়ে গেল। ওর মুখটা দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ যেন ভূত দেখার মতন দেখছি। বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি যে বললে বড় আসবে না? হঠাৎই চলে এলে? আমাকে তো জানালে না?’
 
চিরকালের যারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়, জন্মজন্মান্তরেও যারা পরষ্পরকে ভালবাসে। ভগবান কখনো কখনো তাদের মধ্যে বাধার প্রাচীর তৈরী করে দেন। সেই মূহূর্তে বাঁধার প্রাচীরটি কে? সেটা অবশ্য বুঝতে অসুবিধে নেই। কিন্তু আমি চাইলেও, বিদিশা যেন সেটা মন থেকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারল না। ঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, ‘মিনু এসেছে, তোমার কাছে, এটাতো তুমি আমাকে আগে বলো নি?’
 
মিনু ততক্ষনে বিদিশাকে দেখে ফেলেছে। ওকে বলল, ‘এই তো বিদিশা। এতক্ষণ তোমার কথাই হচ্ছিল। অনেক দিন বাঁচবে তুমি। এসো এসো ভেতরে এসো। কতদিন তোমায় দেখি না।
 
বিদিশার প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে। মুখ তুলতে পারছে না। আমি ব্যাপারটা সহজ করে দেবার জন্য বললাম, ‘আসলে মিনু, রীনার জন্যই আমার কাছে এসেছে। রীনা খুব ঝেমেলা পাকাচ্ছে বাড়ীতে। গানটান সব বন্ধ করে দিয়েছে। ওকে আমি যতক্ষণ না বোঝাচ্ছি, মিনু বলছে কোন কাজ হবে না। রীনাকে বোঝানোর জন্য আমাকে একবার অন্তত যেতেই হবে।
 
বিদিশা মুখ তুলে একবার আমার মুখের দিকে তাকালো। বুঝতেই পারলাম, কথাটা মনে ধরে নি ওর। যেন মিনুকে আমার ফ্ল্যাটে দেখে হঠাৎই ছন্দোপতন ঘটে গেছে। মনের মধ্যে জমে উঠছে অনিশ্চয়তার ইঞ্চি ইঞ্চি ধুলো। অথচ ওকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। মিনু আর কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসেনি। এসেছে শুধু রীনার জন্যই। বিদিশা হয়তো যেটা ভাবছে, সেটা ভুল।
 
ঠিক সেই মূহূর্তে মিনু হয়ে গেল বিদিশার কাছে বিভীষিকার মতন। হঠাৎ আমাকে বলে বসল, আমি তাহলে যাই? তুমি মিনুর সঙ্গে গল্প করছ, জানলে আসতাম না।
 
মিনু খুব চালাক। সঙ্গে সঙ্গে ও উঠে পড়ল। বিদিশাকে বলল, ‘না, না, একি? তুমি যাবে কেন? এই তো এবার আমিই যাব। টাইম হয়ে গেছে। দেব তাহলে আমি আসি। টা টা বাই। তুই কিন্তু রীনার কথাটা মনে রাখিস। ভুলে যাস না।
 
মিনুকে বিদায় দিয়ে আমি এবার বিদিশার মন ঠিক করতে পড়ে গেলাম। ওকে বললাম, ‘কি হয়েছে? মিনুকে দেখে খারাপ ভাবছ? আরে বাবা, আমি তো ওকে ডাকিনি। ও নিজেই এসেছে। হঠাৎ করে দরজা খুলে দেখি মিনু দাঁড়িয়ে। কি করব বল? ঘরে এসে বলল, রীনার জন্য আমাকে একবার নাকি যেতে হবে।
 
বিদিশা বলল, এখন কি মনে হচ্ছে জানো? এই পৃথিবীতে আমি বুঝি আর সুখী নই।
 
আমি বললাম, ‘কেন এ কথা বলছ বিদিশা?
 
বিদিশা বলল, ‘সুখ নামের একটা সুখপাখীকে হৃদপিন্ডের মধ্য বন্দী করতে চাইছিলাম। সেই পাখিনী ভীষন চালাক। হঠাৎই খাঁচা খুলে ফুড়ুত করে উড়ে যেতে চাইছে নীল আকাশে।
 
ভীষন খারাপ লাগল ওর কথা শুনে। বললাম, ‘কেন আমাকে অবিশ্বাস করছ বিদিশা? আমি তো সত্যি কথাই বলছি।
 
বিদিশা বলল, ‘তোমাকে বলেছিলাম না। ওকে বেশী প্রশ্রয় দিও না। সাতঘাটে জল খাওয়া একটা মেয়ে। ওকে তুমি বিশ্বাস করো?’
 
আমি বললাম, ‘আমিও করি না বিশ্বাস। বলছি তো। ও নিজে থেকেই আমার কাছে এসেছে।
 
বিদিশা বলল, ‘তাহলে কথা দাও, ওর বাড়ীতে কোনদিন যাবে না। ও ডাকলেও যাবে না।
 
বিদিশাকে বললাম, কথা দিলাম।
 
বিদিশা বলল, ‘আমার মাথায় হাত রেখে বলো, সত্যি।
 
আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, সত্যি, সত্যি, সত্যি। এই তিন সত্যি করলাম তোমার কাছে।
 
হঠাৎ পুরোনো কথা চিন্তা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দাটায় এলাম। জানি মা ঘুমিয়ে পড়েছে। খাবারটা টেবিলে রাখা রয়েছে। আমাকে খেয়ে নিতে হবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদটা সরে গেছে। কোথা থেকে একরাশ মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়েছে। অসময়ের কুচকুচে কালো মেঘ। এ মেঘকে যে আমি এসময় দেখবো আশাই করিনি। বেচারী চাঁদ হবো হবো সন্ধে থেকেই দুহাতে দু মুঠো জোৎস্না ছড়িয়ে ছিল চারপাশে। চাঁদ বোধহয় অকালেই ঝরে পড়ল। মাঝরাতেই ঢলে পড়েছে চাঁদ। তাহলে কি আমার জীবনটাও তাই?-
 
মনে পড়ছিল, বিদিশাকে একদিন অনেক রাত অবধি একা পেয়ে একটা গান গেয়েছিলাম, ‘এখনি বিদায়, বোলো না। এখনো আকাশে চাঁদ জেগে আছে। কোন কথা তো এখনো হল না। এখনি বিদায় বোলো না।
 
বিদিশা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল। আর যখন ফিরেই এল। সেই চাঁদটাকে কিন্তু আমি আর দেখতে পাচ্ছি না।
[+] 3 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 12:35 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)