Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak
#22
বিদিশা বলল, ‘বাহ্ আমাকেও তো বলে বেরোতে হবে। রবিবারে বাড়ী থেকে বেরুচ্ছি। বাড়ীতে বললেই তো বুঝে যাবে। মা বাবা তো জেনেই গেছে, তোমার বাড়ীতে যাবার জন্য আমি সবসময় পা বাড়িয়ে রয়েছি।
 
বিদিশাকে বললাম, ‘শোন বিদিশা। আমি তোমার সাথে ছাড়া আর কারুর সাথে তো প্রেম করিনা। ফুলশয্যার রাতে স্বামী যেটা তার স্ত্রীর সাথে করে, সেটা যদি এই ফাঁকা বাড়ীতে হয়ে যায় মন্দ কি? সুযোগকে কখনো পায়ে ফেলতে নেই। একা একা বাড়ীতে বসে তোমার স্বপ্ন দেখবো, অথচ তুমি আসবে না এটা কি কখনো হয়? কখন আসবে বলো। মা কিন্তু ঠিক এক ঘন্টা পরেই বেরুবে।
 
বিদিশা ফোনেই বলল, ‘তুমি কি করবে আমাকে? বিয়ের আগেই ফুলশয্যা সেরে নেবে? দাঁড়াও মাসীমাকে আমি বলছি।
 
ওকে বললাম, ‘দেখো সৌগত বিয়েটা সেরে নিচ্ছে। তোমার আমার বিয়েটাও হয়তো হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে। বিয়ের আগে ফুলশয্যার প্র্যাকটিশটা করে নিতে অসুবিধে কি? মা তো সেই সুযোগই আমাদের করে দিয়ে যাচ্ছেন।
 
একটু যেন ঘাবড়ে গেল বিদিশা। আমাকে বলল, এই না। তারপরে কি থেকে কি হয়ে যাবে। মরি আর কি?ওসব সখটক তোমার পূরণ হবে না বাপু। বলোতো এমনি আমি যেতে পারি।
 
আমি বললাম, ‘আচ্ছা বিদিশা? তুমি আসবে, আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে। তোমার শরীর আমাকে ছুঁয়ে যাবে, আমার হৃদয়কে চঞ্চল করে তুলবে। সেই আশা নিয়েই তো আমি তোমাকে ডাকছি। তোমার কি মনে হয় না প্রেম মানেই একটা নিবিড় মূহূর্ত? যেখানে প্রেমের সাথে থাকবে একটু চুমোচুমি। নারীর সাহচর্য এক মধুর অনুভূতি। এর থেকে আমাকে কেন বঞ্চিত করছ বিদিশা? তুমি কি চাওনা মাঝে মধ্যে এই সখগুলো আমি পূরণ করি। মাঝে মধ্যে গোপণ খেলাটা খেললে অসুবিধা কি বিদিশা? তুমি এখুনি চলে এস। দেরী কোরো না।
 
বিদিশা একপ্রকার নাই বলে দিল আমাকে। আমাকে বলল, ‘তোমার গোপণ খেলা আমি বার করছি। আজ তুমি জব্দ। বেশ হয়েছে। আজ বাড়ীতে একা থাকো। আমি আর যাচ্ছি না।
 
একটু হতাশই হলাম। ভাবলাম, ঠিক আছে বিদিশা যদি না আসে, ঘুরতে ঘুরতে বিকেলবেলা ওর বাড়ীতেই চলে যাব। সময়টা কিছুটা হলেও অন্তত কাটবে। বিদিশা না থাকলে, কিছুই আমার ভাল লাগে না।
 
মা একটু আগেই বড়মামার বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। ঘড়িতে তখন বাজে সকাল এগারোটা। সারাটা দিন বাড়ীতে বসে কি করব তাই ভাবছি। হঠাৎই দরজায় কলিংবেল। ছুটে গেলাম। ভাবলাম, বিদিশাই এসেছে বোধহয়। আমাকে চমকে দেবার জন্যই না বলেছে তখন ফোনে। আমার সাথে মজা করতে বিদিশাও খুব ভাল পারে।
 
দরজা খুললাম। দেখি বিদিশা নয়। সামনে মিনু দাঁড়িয়ে। এক গাল হেসে আমাকে বলছে। চমকে গেছিস না? আসলে তোদের বাড়ীর খুব কাছেই একটা দরকারে আমি এসেছিলাম। ভাবলাম, একটু ঢুঁ মেরে যাই। আজ তো রবিবার। তুই নিশ্চই বাড়ী থাকবি। তা আমাকে ভেতরে আসতে বলবি না? নাকি দরজা থেকেই বিদায় করে দিবি।
 
মিনু হাসছে। আর আমি ভাবছি, এ আবার অসময়ে কেন এল? কি মুশকিল, বিদিশাও যদি আবার এখন এসে পড়ে?কি হবে তাহলে?
 
মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়েই ওকে ঘরে ঢোকালাম। আমার মন বলছিল, হঠাৎ মিনুর আগমনটা উদ্দেশ্যপ্রনোদীত। মাঝে মাঝে এত ন্যাকামি করে মিনু, বিরক্তিতে গা জ্বলে যায়। ওর এই গায়ে ঢলানি স্বভাবটা আমি জানি, যতদিন কলেজে পড়েছি, মিনু আমার পিছু ছাড়েনি। এতদিন পরে গায়ে পড়ে এসে আবার মাঝে মধ্যেই আমার বাড়ীতে এসে হানা দিচ্ছে, এটা একধরণের ফন্দী ছাড়া আর কিছুই নয়। আগের দিন ও বাড়ীতে গিয়ে, পুনরায় ওর বোনকে গান শেখানোর জন্য ভীষন কাকুতি মিনতি করছিল মিনু। আমি একপ্রকার না ই করে দিয়েছি। রীনা একটু দূঃখ পেয়েছে, কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি জানি, যতক্ষণ আমি রীনাকে গান শেখাব,মিনু এসে সামনে বসে থাকবে। হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে। চোখের পাতা পড়বে না। ওর ওই দৃষ্টিতে আমার ভীষন অস্বস্তি হবে। মনোসংযোগে চীড় ধরবে। বলা যায় না রেগেমেগে ওকে কিছু বলেও দিতে পারি। মিনু অবশ্য এসবে অভ্যস্ত। আমার কাছে না শুনেও সেই একপ্রকার আমার পায়ের উপরেই সে পরে আছে।
 
মনে পড়ে কলেজে যেদিন মিনুকে প্রথম দেখেছিলাম, ও একটা কালো রঙের শাড়ী পড়ে এসেছিল। বগল কাটা ব্লাউজ। শাড়ীতে যতনা ওকে আকর্ষনীয়া লাগছিল, তার থেকেও বেশি ঠিকরে পড়ছিল ওর নির্লজ্জ্বতা। মিনু বেশ ব্যাটাছেলেগুলোকে ধরে ধরে জবাই করতে পারে। কেন জানি না আমাকেও ও অত চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই সফল হয়ে দেখাতে পারল না। মিনুর বেশ আফশোসও হয়েছিল। বিদিশার জন্যই ওকে এই হারটা স্বীকার করতে হয়েছিল, তাতে অবশ্য ওর কোন দূঃখ নেই। রীনাকে গান শেখাতে রাজী হয়ে যাওয়াটা মিনুর কাছে একপ্রকার মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতন। ঠিক দুদিন আগেই ও আমাকে এসে বলল, দেব, ‘আমার সন্মন্ধে অনেকে বাজে বাজে কথা সবাই বলছে, আমি কিন্তু এতটা নির্লজ্জ্ব নই। নিজের স্বার্থকে আমি কখনই বড় করে দেখিনা। তুই ভাবিস, আমি খুব খারাপ। তাই আমার বাড়ীতে তোর যেতে ইচ্ছে হয় না, তাইতো? আজ থেকে তোকে আমি কথা দিলাম। বিদিশা যেমনটি আছে, ঠিক তেমনটিই তোর থাকবে। আমি তোদের মাঝে আর মাথা গলাবো না।
 
তাও মনটা ভীষন খুচখুচ করছিল। শেষে মেষে এই সৌগতই আমাকে ভরসা দিল। বলা যায় ওর কথাতেই শেষপর্যন্ত আমি রীনাকে গান শেখাতে রাজী হয়ে গেলাম।
 
সেই প্রথমদিন থেকে সপ্তাহে একদিন করে আমি মিনুর বাড়ীতে আমি যেতাম। একঘন্টা রীনাকে গান শেখাতাম। মিনু সামনে এসে বসে থাকতো। আমার গান শুনতো। কিন্তু আমার প্রতি ওর দূর্বলতার কথা কখনো আর বলেনি। কলেজের শেষ কটাদিন, আমার সাথে দেখা হলে শুধু কথা বলত। কিন্তু ওর হাবভাবে, ওর আচরণে সেরকম কিছু আমার চোখে পড়ত না।
 
কলেজ ছাড়ার দুমাস বাদে আমি যখন মিনুর বাড়ী যাওয়া বন্ধ করে দিলাম, তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। বিদিশার আপত্তি ছিল, সে কথা আমি আগেই বলেছি। একদিন বিদিশা এল কলেজে মুখ ভার করে। আমার সাথে সেভাবে ভাল করে কোন কথা বলছে না। ভেতরে ভেতরে যেন কোন চাপা রাগ, রাগটা ঠিক আমাকে দেখাতেও পারছে না। অথচ আমি ধরেই নিয়েছি, ওর মনের মধ্যে আমাকে নিয়ে কিছু একটা শঙ্কা রয়েছে।
 
একটু জোর করতেই বিদিশা বলল, ‘তুমি প্রনব বলে কাউকে চেনো?’
 
আমি বললাম, ‘প্রনব বলে সেরকম তো আমি কাউকে চিনি না। সে কি আমাদের কলেজে পড়ে?’
 
বিদিশা বলল, ‘সেভাবে ওকে কোনদিন কলেজে আমিও দেখিনি। কালকে হঠাৎই তোমার সন্মন্ধে আমাকে উল্টোপাল্টা কথা বলল, আমার মনটাকে খারাপ করার চেষ্টা করছিল ছেলেটা। কে ও?’
 
ওকে বললাম, মুখ না দেখলে কি করে বুঝব? আর আমার সন্মন্ধে খারাপ কথা বলবেই বা কেন সে তোমাকে? কি করেছি আমি? কারুর ক্ষতি করেছি?
 
বিদিশা বলল, প্রথমেই সে আমাকে বলল, দেব তো গেল ফসকে। এবারে কি করবে তুমি?
 
আমি বিদিশাকে বললাম, মানে?
 
বিদিশা বলল, আমার ইচ্ছে করছিল ছেলেটার মুখের ওপরে একটা চড় কসাতে। সবকটা দাঁত বার করে আমার মুখের সামনে এমন বিশ্রীভাবে টোনটিটকিরি কাটছিল ছেলেটা। ভীষন রাগ হচ্ছিল। আমি ওর কোন কথা শুনতে চাই না। তাও জোর করে আমাকে বলল, ‘দেব তোমাকে নিয়েও খেলছে, আবার মিনুকে নিয়েও খেলতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত মিনুরই জয় হবে তুমি দেখে নিও। দেব শীগগীরই তোমাকে টা টা আর বাই বাই করে দেবে। সেদিনটা আসতে আর খুব বেশী বাকী নেই।
 
আমি বিদিশার কথায় ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কে এই প্রনব বলে ছেলেটা? বিদিশাকে এই কথাটা বলার কারণই বা কি? মাথামুন্ডু কিছু ভেবে পেলাম না। শুভেন্দুকে ডাকলাম। শুভেন্দু এল। বলল, ‘আমি খবর নিয়ে দেখছি। কে এই প্রনব? দরকার পড়লে মিনুকেও জিজ্ঞাসা করছি। রহস্যটা খুঁজে বার করছি।
 
সত্যি কথা বলতে কি, কলেজে আমার শত্রু সেরকম কেউ ছিল না। এখন বিদিশার প্রতি যদি কারুর দূর্বলতা থেকে থাকে, তাহলে সেটা অন্য কথা। আমি যেন বিদিশার কষ্টটা বুঝে ওকে আর সেদিন কিছু বললাম না। মনে হল, মিনুকে নিয়ে বিদিশার দ্বিধা এখনো কাটেনি। মিনু যখন কথা দিয়েছে, আমার প্রতি ওর দূর্বলতাটা আর নেই। তখন প্রনব বলে এই ছেলেটাই বা কেন বিদিশার কান ভাঙাতে যাবে। তাহলে কি মিনুই এই খেলাটা খেলেছে?
 
পরের দিন মিনু এল কলেজে। প্রথমেই এসে বলল, ‘প্রনব বলে আমি কাউকে চিনি না। আর এ কলেজের যে ছেলে নয়, তাকে এত গুরুত্ব দেওয়া কেন?’
 
আমাকে বলল, ‘বিদিশাকে এই পরের কথায় কান না দেওয়াটা বলে, একটু তুই বন্ধ কর। সবকিছুতেই তোকে আর আমাকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি, আমারও বাপু সহ্য হয় না।
 
মিনুর সঙ্গে তারপর থেকে বেশ কয়েকদিন কথা বলা আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। রীনাকেও গান শেখানো বন্ধ করে দিয়েছি। হঠাৎই একদিন আমার পায়ে ধরে আবার সাধা শুরু করে দিল মিনু। আমাকে বলল, যেটা সত্যি নয়, সেটা নিয়ে শুধু শুধু তুই পড়ে আছিস। খামোকা রীনাকেও তুই গান শেখাতে যাওয়া বন্ধ করে দিলি। আচ্ছা আমার কি দোষ বল তো? তুই যেন আমাকেই দোষী সাব্যাস্ত করতে চাইছিস। আমি কি প্রনব বলে ছেলেটাকে বিদিশার কাছে পাঠিয়েছি?
 
সেদিন বিদিশাকেও অনেক বুঝিয়েছিল শুভেন্দু। এসব কথার কান দেওয়ার কোন দরকার নেই। দেব কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ, নিজে খুব ভালো বোঝে। যেদিন বুঝবে, মিনুর বাড়ীতে ও নিজে থেকেই যাওয়া বন্ধ করে দেবে। তুই কেন এসব কথায় কান দিয়ে মন খারাপ করছিস? কেন দেবের প্রতি কি তোর ষোলো আনা বিশ্বাস নেই?’
 
এতদিন বাদে সেই মিনুই আবার আমার বাড়ীতে আসা আরম্ভ করেছে। আমি না পারছিলাম ওকে দোড়গোড়া থেকে বিদায় করতে, না পারছিলাম মুখের ওপরে সরাসরি কিছু কটু কথা বলে দিতে। ঘরে ঢুকে প্রথমেই আমার ভুল ধারণাটা ভেঙে দিল মিনু। আমাকে বলল, ‘আমি কিন্তু তোকে আমার বাড়ী যাওয়ার কথা আর বলব না। একবার তুই আমাকে না করে দিয়েছিস। রীনাকেও না বলে দিয়েছিস, সুতরাং গান শেখানোর প্রসঙ্গ আর নয়।
 
আমি বললাম, ‘তাহলে তুই হঠাৎ?’
 
মিনু বলল, ‘কেন তোর কাছে কি এমনি আসতে নেই?’
 
আমি বললাম, তাও কারণ তো কিছু একটা থাকবেই। সাত সকালে এসে হাজির হয়েছিস। তোর আসার কারণটা কি, খুলে বল।
 
মিনু বলল, ‘আমার কেন জানি না দেব, তোকে আমার মনের কথাটা বলতে খুব ইচ্ছে করে। এই ধর তোকে যদি আমি বলি, দেব তোকে আমার সেই আগের মতন পেতে খুব ইচ্ছে করে। তুই রেগে যাবি। আমি জানি তোর কানের লতিটাও তখন লাল হয়ে যাবে। প্রেমকে আঁকড়ে ধরে রাখার মতন আমার তো বিদিশার মতন রূপ নেই। যে তোকে বলব, বড় আশা করে এসেছি গো, কাছে ডেকে লও। আমি আসলে খুব ভুল করেছিলাম। মানুষতো পদে পদে ভুল করে। ধরে নে তোর প্রতি আমার দূর্বলতাটা একপ্রকার ভুল।
 
মিনুকে বললাম, ‘ছাড় না ওসব পুরোনো কথা। কি জন্যে এসেছিস তুই বল।
 
মিনু বলল, ‘আমি না ঠিক তোর মতই আর একজনের প্রেমে পড়ে গেছি। আজ তোকে সেকথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে।
 
আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মিনুকে বললাম, ‘শুনে খুশী হলাম। তা সেই ভাগ্যবান ব্যক্তিটি কে?’
 
মিনু বলল, ‘ছেলেটির চাউনির মধ্যে কী একটা অদ্ভূত আকর্ষন আছে জানিস তো। কিছু কিছু ছেলেদের চোখ থেকে এমন দুটি ঝরে পড়ে। মনে হয়, তারা যেন হৃদয়ের সবটুকু দেখতে পাচ্ছে। কথার মধ্যেও এক অদ্ভূত কুহক মায়া আছে। মনে হয় ও বুঝি এক জাদুকর। কেমন করে মেয়েদের মন চুরি করতে হয়, সে বিদ্যা ও শিখেছে সযত্নে।
 
আমি বললাম, ‘এতদিন ধরে যে মিনুর প্রেমে সবাই পাগল। সেই মিনু কিনা কারুর প্রেমে পড়েছে। ব্যাপারটা তো ইন্টারেস্টিং। তা বিয়েটা কবে করছিস? আর ছেলেটিই বা কে?’
 
মিনু বলল, ‘বিয়ের দিনখনটা আমি তার উপরই ছেড়ে দিয়েছি। ওখানে আমার কোন তাড়াহূড়ো নেই। শুধু ছেলেটাকে একটা মেয়ে বড় জ্বালাচ্ছে। সে আমারই মতন তাকে ভালবাসে। এখন আমার প্রেমিক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কাকে ছেড়ে সে কার কাছে যাবে? আমার কাছে না তার কাছে?’
 
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিনুর মুখটা তখন বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মনে মনে বললাম, এ আবার কি কথা?কাকে না কাকে পছন্দ করে বসে আছে, তাকে আবার অন্য একটি মেয়েও ভালবাসে। তারমানে আবারো সেই নিরীহ কোন ছেলেকে নিয়ে টানাটানি, মিনুর চক্করে পড়ে একটা ভালো ছেলের মাথানষ্ট। নিরীহ ছেলেটা জীবনটা নষ্ট হল, আর কি?
 
ওকে বললাম, ‘তোর মতলবটা কি বলতো? এতো আমার সাথে বিলকুল মিলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। কার কথা বলছিস তুই?’
 
মিনু একগাল হেসে বলল, ‘কারো কথা বলছি নারে বাবা। ওফ, তোকে কিছু বলতে যাওয়াই মুশকিল। সবসময় কিছু একটা ধরে বসে থাকিস তুই। আমি তো এমনি বলছি।
 
ভীষন বিরক্তি হচ্ছিল আমার। মনে হল, যতক্ষণ আমার ঘর থেকে ও বিদায় না হচ্ছে রেহাই নেই। কি করে যে ভাগাবো, সেটাও বুঝতে পারছি না। ও আমাকে বলল, এই দেব, চা খাওয়াবি?
 
আমি বললাম, ‘মা তো ঘরে নেই। তাহলে বস, আমি চা করে নিয়ে আসছি।
 
কি বলতে কি বলে বসলাম, মিনুর দেখলাম, মুখটা বেশ খুশী খুশী হয়ে উঠল। মার ঘরে না থাকাটা ওর কাছে যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতন। উঠে আমারই পেছন পেছন চলে এল মিনু। আমাকে বলল, ‘তুই একা কেন চা করবি? চল আমিও তোকে সাহায্য করছি।
 
আমার রান্নাঘরে যেখানে স্টোভটা রাখা রয়েছে, মিনু আমার পিছন পিছন ঠিক ওখানটাই এসে দাঁড়ালো। অস্বস্তি হচ্ছে আমার। একে মা ঘরে নেই। মিনু জ্ঞানহারা হয়ে হঠাৎ যদি কিছু করে বসে আমার আফশোসের শেষ থাকবে না। বেয়ারাপনা শুরু করলে আর এক কেলেঙ্কারী। সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে মিনুর কোন জুড়ি নেই।
 
হঠাৎই পেছনে দাঁড়িয়ে মিনু বলল, ‘রীনার খুব মন খারাপ। তুই ওকে হ্যাঁ বলে আসিস নি। ও আর গান গাইবে না বলছে। রেওয়াজও বন্ধ করে দিয়েছে। বলছে, দেবদা যতক্ষণ না আমাকে আবার গান শেখাতে না আসছে, আমি আর হারমোনিয়াম ধরব না। এবার থেকে গান গাওয়া আমি ছেড়ে দিলাম।
 
আমি বললাম, ‘দেখ, গান তো সেভাবে আমি কাউকেই শেখাই না। তুই জোর করেছিলিস, তাই রীনাকে গান শেখাতে আমি রাজী হয়েছিলাম। ওকে একটু বোঝানোর চেষ্টা কর। মাষ্টারের কি অভাব আছে? বেস টা তো ভালভাবে তৈরী হয়ে গেছে। তাছাড়া রীনার গলায় সুর আছে। গলাও মিষ্টি। আর আমি তো একজনের কাছে ওকে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়াই বা বন্ধ করে দিল কেন? থাকলে এতদিনে তো ভাল তৈরী হয়ে যেত।
 
মিনু বলল, ‘আমি অনেক বুঝিয়েছি। কিছুতেই আমার কথা শুনছে না। তাই তো তোর কাছে ছুটে এলাম।
 
মিনুকে এবার মুখের ওপর না ই বলে দিতে হল আমাকে। ওকে বললাম, আমাকে মাফ কর মিনু। আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমার মাথার উপরে এখন অনেক দায়িত্ব। তাছাড়া সময়েরও খুব অভাব। কথা দিয়েও যখন কথা রাখতে পারব না। তখন শুধু শুধু আস্বাস দিয়ে কোন লাভ নেই। আমি পারব না। কিছুতেই পারব না।
 
হঠাৎই মিনু আমার হাতটা ধরল। ওর এই হাত ধরার মানেটা আমার কাছে পরিষ্কার হল তখনই, যখন মিনু বলল, তোকে একবার রিকোয়েস্ট করব। তুই একবার অন্তত আমার বাড়ী আয়। রীনাকে তুই ই বোঝা। আমার দ্বারা ওটা সম্ভব নয়।
 
আমি মিনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু বরাতে যে আমার দূঃখ আছে। তখনো জানতাম না। কথায় বলে পৃথিবীর সব থেকে সুখী লোকও যেকোন মূহূর্তে দূঃখী বনে যেতে পারে। হঠাৎই বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়ে যাবার মতন মিনুকে বলে বসলাম, ‘কবে যেতে হবে বল? আমি গিয়ে বোঝাবো রীনাকে। আশাকরি ও নিশ্চই আমার কথা ফেলবে না।
 
মিনুর সঙ্গে আমার ব্যবধানটা যতটাই বেড়েছিল, ঠিক ততটাই আবার কমে গেল সেই মূহূর্তে। ওর ওই আমন্ত্রণের মধ্যে যে একটা রহস্য আছে, তখনো আমি নিশ্চিত নই। ধরেই নিলাম মিনু সত্যি কথাটা বলছে। অন্তত রীনার কথা ভেবে মিনুর বাড়ীতে আমার যাওয়া দরকার।
 
মিনুকে চা করে খাওয়ালাম। একগাল হেসে মিনু বলল, ‘তোর ভারী ভয় শুধু আমাকে নিয়ে। এতই তুই বিদিশাকে ভালবাসিস, অন্যকোন মেয়েছেলের সংস্পর্ষেও আসতে চাস না। আরে আমরা তো ভাল বন্ধু হতে পারি না কি? মিনু নয় তোর ভালবাসার পাত্রী হতে পারল না। কিন্তু বন্ধু হতে চাইলেও তুই কি না করবি আমাকে? কেন বিদিশার কি ছেলেবন্ধু একেবারেই নেই?’
 
মিনুকে বললাম, ‘আগে হয়তো ছিল। কিন্ত আমার সঙ্গে প্রেম শুরু করার পর থেকে, যতদূর জানি, বিদিশার কোন ছেলেবন্ধু নেই।
 
হো হো করে হেসে উঠল মিনু। আমাকে বলল, তোর সাথে শুক্লারও তো খুব ভাল দোস্তী ছিল। তা বিদিশা সেখানে কোন আপত্তি করেনি?
 
আমি বললাম, ‘শুক্লা নিজেই তো পরে সৌগতর সাথে প্রেম করেছে। আপত্তি থাকবে কেন? তাছাড়া শুক্লার সঙ্গে সেভাবে তো আমি কোনদিন মিশিনি। বিদিশা প্রথম প্রথম সেটা দেখে একটু অস্বস্তিতে ভুগলেও, পরে খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া শুক্লা, বিদিশা দুজনেই ওরা খুব ভাল বন্ধু। খামোকা বিদিশা রাগ করতে যাবে কেন?
 
মিনু বলল, ‘এই আমিই কারুর ভাল বন্ধু হতে পারলাম না। তাই না? সবার দুচোখের বিষ হয়ে গেছি। আমার যেন কারুর কাছে মুখ দেখানোর আর জো নেই।
 
মিনুকে বললাম, ‘এসব মন খারাপের কথা ছাড়। এবার তুই বল, তুই নিজে বিয়েটা কবে করছিস?’
 
একটা হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে মিনু যেন আমার মুখের দিকে তাকালো। আমাকে বলল, ‘আমি ভাবছি, এ জীবনে বিয়ে থা আর করব না।
 
আমি বললাম, কেন রে?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 12:33 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)