04-06-2020, 12:20 PM
৮a
বাড়ীতে ফিরলাম, মা’কে বিদিশার কথা সেভাবে আর কিছু বলা হল না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমটা আসছে না। সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো আমার মনকে এখনও নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ছিল, বিদিশার সাথে আমার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মূহূর্তের কথা। একদিন-
সেদিন তখন ঠিক সন্ধ্যে হবো হবো করছে। জায়গাটা কলকাতার ডালহৌসীপাড়ায় কার্জন পার্ক। বিদিশার কোলে মাখা রেখে আমি শুয়ে আছি। বিদিশা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো। আমি ভাবছি, চুমু পাবার আর চুমু খাবার এত সুন্দর জায়গা, তাও বিদিশা ইতস্তত করছে কেন? আমি যেন বিদিশার কাছ থেকে চুমু পাওয়ারই প্রতীক্ষায়।
বিদিশা বললো,-‘এই তুমি কি করছো বলোতো? তথন থেকে এসে অবধি মুখে কোনো কথা নেই, খালি আমার হাতের আদর খেয়ে যাচ্ছো?’
বিদিশাকে বললাম-‘না, না, এখন কি কথা বলার সময় নাকি? দেখছো না কেমন আরাম বোধ করছি। তুমি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছো, আঙুল চালিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছো, আমার তো মনে হচ্ছে, এইভাবেই যেনো তোমার কোলে আমি শুয়ে থাকি।’
-‘বাঃ বাঃ, শুয়ে খালি আদরই খেয়ে যাবেন উনি ? কটা বাজে খেয়াল আছে তোমার? দেখো ঘড়ি দেখো, বাড়ী যেতে হবে না বুঝি?
- ‘আচ্ছা বিদিশা, কদিন ধরেই দেখছি, তুমি সেভাবে আমাকে চুমুটুমু খাচ্ছো না। ব্যাপারটা কি বলোতো?’
- ‘এই তুমি কিন্তু এখন আর চুমু খেতে বলবে না আমাকে। এই জায়গাটা সেরকম ভালো নয়। দূরে বসা ঐ লোকগুলোকে দেখছো? কেমন ঘুরঘুর করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। যেনো মেয়েছেলে কোনোদিন দেখেনি এভাবে।’
- ‘আরে দূর, এটা হলো কার্জন পার্ক। এখানে সবাই প্রেম করতে আসে। প্রেমিক প্রেমিকার গালে চুমু খায়, ঠোঁটে চুমু খায়। প্রেমিকাও প্রতিদান দেয়। আসলে তোমাকে দেখতে একটু বেশী সুন্দর কিনা? তাই ওরা তোমার দিকে তাকাচ্ছে।’
-’তুমি বাড়ী যাবে না দেব?’
- ‘যেতে তো ইচ্ছে করছে না বিদিশা, মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে সারারাত শুধু ঘুরি। এখান থেকে তোমাকে নিয়ে চলে যাই ইডেন গার্ডেন্স, তারপরে ময়দান। এইভাবে আদর খেতে খেতে যদি সারাটা রাত কাটিয়ে দিই, তারপরে ভোর বেলা, তুমি আর আমি বাড়ী ফিরলাম, কেমন হবে?’
- ‘খুব ভালো হবে। কাল থেকে কলেজে বাবা আমার আসা বন্ধ করে দেবে। তুমি তো তাই ই চাইছো, তাই না?’
- ‘আমি চাইছি এখন একটা দমদার কিস। কিন্তু তুমি তো রাজী হোচ্ছো না।’
-’কিভাবে চুমু খেতে হয় ওটা আমি জানি না তো, ওগুলো তো তুমি পারো। ‘
-’তাই বুঝি? তাহলে মাথাটা নিচু করো, আমি একটা চুমু খেয়ে দেখাই তোমাকে। এমন চুমু খাবো, তোমার দেহ ভেদ করে একেবারে শিরার ভেতরে গিয়ে প্রবেশ করবে। এমনকি তোমার অস্থিমজ্জায় গিয়ে সেটা নাড়া দেবে।’
-‘এই না। এখানে নয়। কেউ দেখে ফেলবে না? কি অসভ্য তুমি।’
-’যা বাব্বা চুমু খেতে চাইলেই কেউ অসভ্য হয়ে যায় নাকি? ওটা তো প্রেমিক প্রেমিকার সহজাত প্রবৃত্তি। ভালোবাসা যদি প্রগাঢ হয়, তখনই তো চুমু। তুমি আমাকে চুমু খাবে, আমি তোমাকে চুমু খাবো। তখনই তো ভালোবাসা আরো নিবিড় হবে।’
বিদিশা হঠাই প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিলো, আমাকে বললো-’এই জানো সৌগতটা কি অসভ্য। শুক্লাকে কি বলেছে-’
- ‘কি বলেছে সৌগত?’
- ‘শুক্লা কালকে আমাকে বললো, ওকে নিয়ে নাকি দুদিন আগে বোটানিকাল গার্ডেনে ঘুরতে গিয়েছিল সৌগত।গাছতলায় শুক্লাকে পেয়ে ওর সারা শরীরটায় চুমু খেয়েছে।’
- ‘ভালোই তো করেছে। আমি হলেও তাই করতাম। সৌগত ঠিক কাজ করেছে।’
- ‘আর ও যে নামকরণ গুলো দিয়েছে, তুমি হলে কি দিতে?’
আমি একটু অবাক হলাম, বিদিশাকে বললাম- ‘নামকরণ? কিসের নামকরণ?’
বিদিশা বললো, ‘শুক্লা ওকে নাকি বলেছে বোটানিকাল গার্ডেন্সে গিয়ে ওকে জড়িয়ে সৌগত নাকি এমন চুমু খাওয়া শুরু করেছিল, শুক্লার খুব সেক্স উঠে যায়, আমাকে বললো, জানিস বিদিশা, সৌগত এমনভাবে আমার বুকে চুমু খেতে শুরু করেছে, দেখি আমার জামার বোতামও খুলে ফেলেছে বেশ কয়েকটা। চুমু খেতে খেতে আমাকে বললো, শুক্লা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তাই তোমার শিহরণ জাগানো এই শরীরটায় প্রতিটায় জায়গায় আমি একটা করে চুমুর স্পর্ষ দেবো, আর সেই সাথে আমার মত করে আমি এই এই জায়গাগুলোর একটা একটা করে নামকরণ দেবো।’
বিদিশাকে বললাম, সৌগত নামকরণ করবে- ‘তাই? ব্যাপারটা কিরকম?’
বিদিশার কোল থেকে মাথা তুলে আমি তখন উঠে বসেছি, সৌগতর দেওয়া ওই নামগুলো শোনার জন্য উসখুস করছি।
বিদিশা বললো, ‘কি অসভ্য। শুক্লার বুক কিছুটা বেরিয়ে পড়েছিলো বলে ওখানে চুমু খেয়ে, ওকে বলেছে, এটা হলো, উঁকি-মারা-মহাশয়, স্তনদুটোর মাঝখানে মুখ গুঁজে বলেছে, এটা হলো আমার বেড়াবার জায়গা। আর চুমু খেয়ে শুক্লাকে প্রায় পাগল করে সবশেষে ওকে বলেছে, যেদিন তুমি আমাকে যাবার পথটা (যোনী) দেখিয়ে দেবে, সেদিন তোমাকে আমি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেবো।
বিদিশার মুখ থেকে, শুক্লাকে দেওয়া সৌগতর ওই নামকরণ গুলো শুনে আমি হাসতে লাগলাম। বিদিশা বললো-তুমি হাসছো?
- ‘হ্যাঁ, আমিও ভাবছি, ওরকম কিছু নামকরণ দেওয়া যায় নাকি?’
- ‘আর নামকরণ করতে হবে না মহাশয়। চলো এবার বাড়ী চলো।’
- ‘আচ্ছা বিদিশা তুমি কি এমন একটা চুমু আমাকে খেতে পারো না? যেটা এখনো অবধি কোনো প্রেমিকা তার প্রেমিককে খায় নি। চুমুর মধ্যে বেশ উৎকৃ্ষ্টতা মেশানো থাকবে, অনেকক্ষণ ধরে সেই চুমুর রেশ থাকবে, মিষ্টতা থাকবে, সোহাগ থাকবে, আর আমি যতক্ষণ না তোমাকে না করছি, তুমি চুমু খেতেই থাকবে।’
- ‘বুঝেছি, বুঝেছি, এবার তোমাকে আমায় ফেলেই এখান থেকে চলে যেতে হবে। ঠিক আছে তুমি এখন ঘাসের ওপর শুয়ে থাকো। আমি যাচ্ছি।’
- ‘এই বিদিশা, যেও না দাঁড়াও। আমি আসছি।’
আরেকটা দিনের ঘটনাও মনে পড়ছিলো। বিদিশার সাথে আমার প্রেম শুরু হওয়ার পরপরই একদিন কলেজের ক্যান্টিনে শুক্লা আর আমি পাশাপাশি বসে। সেদিন বিদিশা কলেজে আসেনি। শুনেছি, শরীরটা নাকি কাল থেকে ওর খুব খারাপ হয়েছে। সকালে ফোন করে আমাকে বলেছে, আমি যেতে পারছি না আজকে। তুমি মন খারাপ কোরো না।
শুক্লা চা খাচ্ছিলো, আর বারবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো। ওর চোখে মুখে একটা কৌতূহল। অনেক্ষণ বাদে, আমার মনের ভাবটাকে বোঝবার জন্য একটা প্রশ্ন করে বসলো।-
- ‘দেব একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, মনে কিছু করবি না বল?’
- ‘কি কথা বল? মনে কেন করবো?’
- ‘না, আগে তুই আমাকে কথা দে, মনে কিছু করবি না, তাহলেই বলবো।’
মনে হল, শুক্লার মনের ভেতরে আমাকে নিয়ে যেন একটা চিন্তা রয়েছে, হঠাৎই কোনো প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে ওর মনে। প্রশ্নটা যে বিদিশাকে নিয়ে সেটা জানতে পারলাম, ও বলার পর।
- ‘দেব, তুই বিদিশা ছাড়া, আগে কখনো কারুর সাথে প্রেম করেছিস? এই কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে, আর কোনো মেয়ের সাথে ভাব ভালোবাসা হয় নি তোর?’
- ‘নারে শুক্লা। সেভাবে দেখতে গেলে, বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম প্রেম। এর আগে সেরকম কোনো সুযোগই হয় নি বলতে পারিস।’
- ‘তুই তো বিদিশাকে খুব ভালোবাসিস, জানি বিদিশাও তোকে খুব ভালোবাসে। যদি তোদের এই ভালোবাসার তারটা কোনোদিন ছিঁড়ে যায়, কষ্ট পাবি না?’
- ‘আমি এসব কথা চিন্তাই করতে পারি না শুক্লা, এসব কখনও হবে না।’
- ‘না ধর, এমনও তো হতে পারে, বিদিশার বাড়ী থেকে ওর বাবা মা দুজনেই বেঁকে বসলো। তোকে তারা জামাই হিসেবে গ্রহন করতে রাজী হল না। তখন?’
- ‘জানি না, সেটা কোনোদিন হবে কি না। তবে ওর বাড়ী থেকে আপত্তি করবে বলে মনে হয় না আমার। আর বিদিশাও ওর বাবা মার কথা শুনবে না। ও কথা দিয়েছে আমাকে। বিদিশাকে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।’
- ‘দেব, তুই না বড্ড সরল, তুই একটু বেশী রোমান্টিক। আমার তো মনে হয়, বিদিশা যতটা না তোকে ভালোবাসে, তুই তার থেকেও বেশী ওকে ভালোবাসিস।’
- ‘হতে পারে, আমি তো কোনদিন, ভালোবাসাটাকে খেলনা বলে ভাবিনি। আমার কাছে ভালোবাসা ঠুনকো নয়। ভালোবাসা কখনও অভিনয় দিয়ে হয় না।’
- ‘জানিস আমার এক পিসতুতো দিদি আছে, রাঙাদি বলে। আমাকে বলতো, জীবনে প্রথম ভালোবাসা নাকি বড়ই মধুর। কাঁঠালের আঠার মত। লাগলে পড়ে ছাড়তেই চায় না। কিন্তু আসতে আসতে ভালোবাসাটা যথন ফিকে হয়ে যায়, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়, তখন সেভাবে কাউকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না। মানুষের জীবনে দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছু নেই, প্রথম ভালোবাসার মধ্যে যে গভীরতা আর আবেগ থাকে, দ্বিতীয় প্রেমে সেই আবেগটাই নাকি আসে না। যদি বিদিশা আর তোর প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকে, নতুন করে তুই কাউকে ভালোবাসতে পারবি? সেই আবেগের টান, ব্যাকুলতা তুই দেখাতে পারবি?’
শুক্লাকে বললাম- ‘কেন? একথা বলছিস কেন? আমাকে নিয়ে তোর বুঝি কোনো চিন্তা হয়?’
- ‘তোকে নিয়ে আমার বড় ভয় হয় দেব। তোর মধ্যে এতো গুন আছে, এতো কোয়ালিটি আছে, অথচ মনে হয় কোনোদিন যদি আঘাতে জর্জরিত হয়ে তোর এই গুনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন তুই কি করবি? কাউকে ভালোবেসে তো আর জীবনকে নষ্ট করে দেওয়া যায় না।’
- ‘তুই বড্ড চিন্তা করিস আমাকে নিয়ে। আগে থেকে এতো নেগেটিভ চিন্তা করে নাকি রে বোকা। জীবনের সব কিছুই ভালো হয়। খারাপ বলে এই পৃথিবীতে কিছু নেই। ‘
- ‘আমি তোর কথা একটু বেশী চিন্তা করি বলেই তুই আমাকে খারাপ ভাবছিস তাই না?’
- ‘কেন? কোনোদিন দেখেছিস, আমি তোকে কখনও খারাপ বলেছি?’
- ‘আসলে এই কথাগুলো মনে এল, তোকে বললাম, কেন জানিস তো? তুই আমার খুব ভালো বন্ধু। আমি জানি, দেবের কখনও খারাপ হতে পারে না। ও যখন কারুর খারাপ চায় না। ভগবান ওর ক্ষতি করতে পারে না। তবে যদি দেখি, তুই কখনো কষ্ট পাচ্ছিস, আঘাত পাচ্ছিস, তাহলে তোর জন্য আমিও খুব কষ্ট পাবো, এটা জেনে রাখিস।
শুক্লাকে বললাম, প্রথম প্রথম আমিও ভাবতাম, প্রেম টেম আবার কি? ওতো কিছু সময় নষ্ট। জীবনে প্রেম ভালোবাসার কোনো দাম নেই। কেরিয়ার গড়াটাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু বিদিশা আমার ধারণাটাকে পুরো ভেঙে দিল। জানিস তো শুক্লা। কি মেয়ে ও। ওর সাথে যে প্রেম করে, সে বুঝতে পারে। এবার তুই ও একটা প্রেম কর আমার মতন।
শুক্লা বললো-ওসব প্রেম টেম আমার ধাতে সইবে না বাবা। কলেজে সবাই আমার বন্ধু। যেমন তুই বন্ধু, শুভেন্দু, রনি বন্ধু। সবাই আমার বন্ধু।
-আর সৌগত?
-ওর ব্যাপারটা তো আমি ভেবেই উঠতে পারছি না। যাকে আমি বন্ধু হিসেবেই ভাবছি, সে আমাকে তার প্রেমিকা হিসেবে ভাবছে। মনের মিল না হলে কি প্রেম করবো বল দেখি?
আমি বললাম,-আরে একদিনে কি মন মেলে নাকি? প্রেম শুরু কর। আসতে আসতে দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
শুক্লা বললো-আচ্ছা দেব, বিদিশা যে সবসময় আমাকে তোর সাথে কথা বলতে দেখে, ও কিছু বলে না তোকে? কিছু মাইন্ড করে না?
-কেন? মাইন্ড করবে কেন? বিদিশা তো জানে, তুই আমার শুধু বন্ধু। ওর মনে সেরকম কোনো সন্দেহ বা আশঙ্কা নেই।
-এই দেব। আমি একদিন বিদিশার সাথে একটু মজা করবো? তুই যদি কিছু মনে না করিস।
-কি?
-বিদিশাকে বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম করো, জানো দেব আমার কথা ছাড়া, একপাও নড়চড় হয় না। ওকে যদি আমি বলি তোমার সাথে প্রেম চালিয়ে যেতে, তবেই ও তোমার সাথে দেখা করবে, কথা বলবে, নচেৎ নয়। দেব আমার কথায় ওঠে বসে।
শুক্লাকে বললাম-তুই বলে দেখতে পারিস। তবে মনে হয় বিদিশা তোর কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ ও বুঝেই যাবে, তুই ওর সাথে ইয়ার্কী মারছিস।
-ঠিকই বলেছিস তুই। ও বুঝে যাবে। আমাকে মনে হয় অন্যকিছু বলতে হবে।
-কি বলবি?
-বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম শুরু করেছো, জানো দেব আমার সাথেও প্রেম করে।
-ভাগ, কি যাতা বলছিস।
-ভয় পেয়ে গেলি? আরে আমি তো ইয়ার্কী মারছি।
কলেজে মিনুর সাথে যেদিন আমার প্রথম চোখাচুখি। ক্যান্টিনে একবার ওর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, মিনুর দৃষ্টিটা কিরকম বাজে। মিনু আমার প্রতি আকর্ষিত। আমার ফর্সা চেহারা, টিকোলো নাক, গমগমে কন্ঠস্বর মিনুকে তখন এক অমোঘ আকর্ষনের ডাক দিয়েছে।
শুভেন্দু এসে একদিন বললো, এই মিনুটা কি রে? জানে তুই বিদিশার সাথে প্রেম করিস, তাও তোর পেছনে পড়ে আছে। সৌগতকে ধরেছে, তোকে নাকি ওর বোনকে গান শেখাতে হবে। এই অন্যায় আবদারের কোনো মানে হয়? আর সৌগতটাই বা কিরকম? শুধু শুধু মিনুর কথা শুনে তোরও মাথা খারাপ করছে।
-আমি জানি, সৌগত সব আমাকে বলেছে।
-আমার তো মিনুকে একটা সস্তা মেয়েছেলে বলেই মনে হয়। কলেজে ঢ্যাড়া পিটিয়ে বেড়াচ্ছে। তোর নামে কিসব বলে বেড়াচ্ছে।
-কি বলেছে মিনু?
- ‘তোর গান নাকি ওর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তুই হলি গানের জাদুকর। গান গেয়ে মেয়েদের মন চুরি করার বিদ্যা যে তুই জানিস, আর কেউ জানে না। মিনু তোর জন্য পাগল। সে এখন খাওয়াদাওয়া ভুলে গেছে, সব ভুলে গেছে। সে এখন উন্মাদিনী। শোন দেব, আমার তো মনে হয়, মিনু হল, শয়তানি লোভী মাকড়শা। সহজে নিস্তার দেবে না তোকে। ওর সাথে কথা বলে, তুই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দে। তোর জীবনে বিদিশা ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই। কাউকেই তুই সে জায়গায় বসাতে পারবি না।’
পরের দিন মিনুকে ডাকলাম, ক্যান্টিনে। বললাম, কি ব্যাপার মিনু? কিসব শুনছি?
মিনু যেন কিছুই জানে না, আকাশ থেকে পড়ার মতন ভাব করলো, আমাকে বললো, কি শুনেছিস? কলেজে মিনু রোজই খবরে। আমাকে নিয়ে রোজই কিছু না কিছু কথা হয়। নতুন কি শুনেছিস সেটা শুনি।
বাড়ীতে ফিরলাম, মা’কে বিদিশার কথা সেভাবে আর কিছু বলা হল না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমটা আসছে না। সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো আমার মনকে এখনও নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ছিল, বিদিশার সাথে আমার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মূহূর্তের কথা। একদিন-
সেদিন তখন ঠিক সন্ধ্যে হবো হবো করছে। জায়গাটা কলকাতার ডালহৌসীপাড়ায় কার্জন পার্ক। বিদিশার কোলে মাখা রেখে আমি শুয়ে আছি। বিদিশা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো। আমি ভাবছি, চুমু পাবার আর চুমু খাবার এত সুন্দর জায়গা, তাও বিদিশা ইতস্তত করছে কেন? আমি যেন বিদিশার কাছ থেকে চুমু পাওয়ারই প্রতীক্ষায়।
বিদিশা বললো,-‘এই তুমি কি করছো বলোতো? তথন থেকে এসে অবধি মুখে কোনো কথা নেই, খালি আমার হাতের আদর খেয়ে যাচ্ছো?’
বিদিশাকে বললাম-‘না, না, এখন কি কথা বলার সময় নাকি? দেখছো না কেমন আরাম বোধ করছি। তুমি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছো, আঙুল চালিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছো, আমার তো মনে হচ্ছে, এইভাবেই যেনো তোমার কোলে আমি শুয়ে থাকি।’
-‘বাঃ বাঃ, শুয়ে খালি আদরই খেয়ে যাবেন উনি ? কটা বাজে খেয়াল আছে তোমার? দেখো ঘড়ি দেখো, বাড়ী যেতে হবে না বুঝি?
- ‘আচ্ছা বিদিশা, কদিন ধরেই দেখছি, তুমি সেভাবে আমাকে চুমুটুমু খাচ্ছো না। ব্যাপারটা কি বলোতো?’
- ‘এই তুমি কিন্তু এখন আর চুমু খেতে বলবে না আমাকে। এই জায়গাটা সেরকম ভালো নয়। দূরে বসা ঐ লোকগুলোকে দেখছো? কেমন ঘুরঘুর করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। যেনো মেয়েছেলে কোনোদিন দেখেনি এভাবে।’
- ‘আরে দূর, এটা হলো কার্জন পার্ক। এখানে সবাই প্রেম করতে আসে। প্রেমিক প্রেমিকার গালে চুমু খায়, ঠোঁটে চুমু খায়। প্রেমিকাও প্রতিদান দেয়। আসলে তোমাকে দেখতে একটু বেশী সুন্দর কিনা? তাই ওরা তোমার দিকে তাকাচ্ছে।’
-’তুমি বাড়ী যাবে না দেব?’
- ‘যেতে তো ইচ্ছে করছে না বিদিশা, মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে সারারাত শুধু ঘুরি। এখান থেকে তোমাকে নিয়ে চলে যাই ইডেন গার্ডেন্স, তারপরে ময়দান। এইভাবে আদর খেতে খেতে যদি সারাটা রাত কাটিয়ে দিই, তারপরে ভোর বেলা, তুমি আর আমি বাড়ী ফিরলাম, কেমন হবে?’
- ‘খুব ভালো হবে। কাল থেকে কলেজে বাবা আমার আসা বন্ধ করে দেবে। তুমি তো তাই ই চাইছো, তাই না?’
- ‘আমি চাইছি এখন একটা দমদার কিস। কিন্তু তুমি তো রাজী হোচ্ছো না।’
-’কিভাবে চুমু খেতে হয় ওটা আমি জানি না তো, ওগুলো তো তুমি পারো। ‘
-’তাই বুঝি? তাহলে মাথাটা নিচু করো, আমি একটা চুমু খেয়ে দেখাই তোমাকে। এমন চুমু খাবো, তোমার দেহ ভেদ করে একেবারে শিরার ভেতরে গিয়ে প্রবেশ করবে। এমনকি তোমার অস্থিমজ্জায় গিয়ে সেটা নাড়া দেবে।’
-‘এই না। এখানে নয়। কেউ দেখে ফেলবে না? কি অসভ্য তুমি।’
-’যা বাব্বা চুমু খেতে চাইলেই কেউ অসভ্য হয়ে যায় নাকি? ওটা তো প্রেমিক প্রেমিকার সহজাত প্রবৃত্তি। ভালোবাসা যদি প্রগাঢ হয়, তখনই তো চুমু। তুমি আমাকে চুমু খাবে, আমি তোমাকে চুমু খাবো। তখনই তো ভালোবাসা আরো নিবিড় হবে।’
বিদিশা হঠাই প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিলো, আমাকে বললো-’এই জানো সৌগতটা কি অসভ্য। শুক্লাকে কি বলেছে-’
- ‘কি বলেছে সৌগত?’
- ‘শুক্লা কালকে আমাকে বললো, ওকে নিয়ে নাকি দুদিন আগে বোটানিকাল গার্ডেনে ঘুরতে গিয়েছিল সৌগত।গাছতলায় শুক্লাকে পেয়ে ওর সারা শরীরটায় চুমু খেয়েছে।’
- ‘ভালোই তো করেছে। আমি হলেও তাই করতাম। সৌগত ঠিক কাজ করেছে।’
- ‘আর ও যে নামকরণ গুলো দিয়েছে, তুমি হলে কি দিতে?’
আমি একটু অবাক হলাম, বিদিশাকে বললাম- ‘নামকরণ? কিসের নামকরণ?’
বিদিশা বললো, ‘শুক্লা ওকে নাকি বলেছে বোটানিকাল গার্ডেন্সে গিয়ে ওকে জড়িয়ে সৌগত নাকি এমন চুমু খাওয়া শুরু করেছিল, শুক্লার খুব সেক্স উঠে যায়, আমাকে বললো, জানিস বিদিশা, সৌগত এমনভাবে আমার বুকে চুমু খেতে শুরু করেছে, দেখি আমার জামার বোতামও খুলে ফেলেছে বেশ কয়েকটা। চুমু খেতে খেতে আমাকে বললো, শুক্লা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তাই তোমার শিহরণ জাগানো এই শরীরটায় প্রতিটায় জায়গায় আমি একটা করে চুমুর স্পর্ষ দেবো, আর সেই সাথে আমার মত করে আমি এই এই জায়গাগুলোর একটা একটা করে নামকরণ দেবো।’
বিদিশাকে বললাম, সৌগত নামকরণ করবে- ‘তাই? ব্যাপারটা কিরকম?’
বিদিশার কোল থেকে মাথা তুলে আমি তখন উঠে বসেছি, সৌগতর দেওয়া ওই নামগুলো শোনার জন্য উসখুস করছি।
বিদিশা বললো, ‘কি অসভ্য। শুক্লার বুক কিছুটা বেরিয়ে পড়েছিলো বলে ওখানে চুমু খেয়ে, ওকে বলেছে, এটা হলো, উঁকি-মারা-মহাশয়, স্তনদুটোর মাঝখানে মুখ গুঁজে বলেছে, এটা হলো আমার বেড়াবার জায়গা। আর চুমু খেয়ে শুক্লাকে প্রায় পাগল করে সবশেষে ওকে বলেছে, যেদিন তুমি আমাকে যাবার পথটা (যোনী) দেখিয়ে দেবে, সেদিন তোমাকে আমি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেবো।
বিদিশার মুখ থেকে, শুক্লাকে দেওয়া সৌগতর ওই নামকরণ গুলো শুনে আমি হাসতে লাগলাম। বিদিশা বললো-তুমি হাসছো?
- ‘হ্যাঁ, আমিও ভাবছি, ওরকম কিছু নামকরণ দেওয়া যায় নাকি?’
- ‘আর নামকরণ করতে হবে না মহাশয়। চলো এবার বাড়ী চলো।’
- ‘আচ্ছা বিদিশা তুমি কি এমন একটা চুমু আমাকে খেতে পারো না? যেটা এখনো অবধি কোনো প্রেমিকা তার প্রেমিককে খায় নি। চুমুর মধ্যে বেশ উৎকৃ্ষ্টতা মেশানো থাকবে, অনেকক্ষণ ধরে সেই চুমুর রেশ থাকবে, মিষ্টতা থাকবে, সোহাগ থাকবে, আর আমি যতক্ষণ না তোমাকে না করছি, তুমি চুমু খেতেই থাকবে।’
- ‘বুঝেছি, বুঝেছি, এবার তোমাকে আমায় ফেলেই এখান থেকে চলে যেতে হবে। ঠিক আছে তুমি এখন ঘাসের ওপর শুয়ে থাকো। আমি যাচ্ছি।’
- ‘এই বিদিশা, যেও না দাঁড়াও। আমি আসছি।’
আরেকটা দিনের ঘটনাও মনে পড়ছিলো। বিদিশার সাথে আমার প্রেম শুরু হওয়ার পরপরই একদিন কলেজের ক্যান্টিনে শুক্লা আর আমি পাশাপাশি বসে। সেদিন বিদিশা কলেজে আসেনি। শুনেছি, শরীরটা নাকি কাল থেকে ওর খুব খারাপ হয়েছে। সকালে ফোন করে আমাকে বলেছে, আমি যেতে পারছি না আজকে। তুমি মন খারাপ কোরো না।
শুক্লা চা খাচ্ছিলো, আর বারবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো। ওর চোখে মুখে একটা কৌতূহল। অনেক্ষণ বাদে, আমার মনের ভাবটাকে বোঝবার জন্য একটা প্রশ্ন করে বসলো।-
- ‘দেব একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, মনে কিছু করবি না বল?’
- ‘কি কথা বল? মনে কেন করবো?’
- ‘না, আগে তুই আমাকে কথা দে, মনে কিছু করবি না, তাহলেই বলবো।’
মনে হল, শুক্লার মনের ভেতরে আমাকে নিয়ে যেন একটা চিন্তা রয়েছে, হঠাৎই কোনো প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে ওর মনে। প্রশ্নটা যে বিদিশাকে নিয়ে সেটা জানতে পারলাম, ও বলার পর।
- ‘দেব, তুই বিদিশা ছাড়া, আগে কখনো কারুর সাথে প্রেম করেছিস? এই কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে, আর কোনো মেয়ের সাথে ভাব ভালোবাসা হয় নি তোর?’
- ‘নারে শুক্লা। সেভাবে দেখতে গেলে, বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম প্রেম। এর আগে সেরকম কোনো সুযোগই হয় নি বলতে পারিস।’
- ‘তুই তো বিদিশাকে খুব ভালোবাসিস, জানি বিদিশাও তোকে খুব ভালোবাসে। যদি তোদের এই ভালোবাসার তারটা কোনোদিন ছিঁড়ে যায়, কষ্ট পাবি না?’
- ‘আমি এসব কথা চিন্তাই করতে পারি না শুক্লা, এসব কখনও হবে না।’
- ‘না ধর, এমনও তো হতে পারে, বিদিশার বাড়ী থেকে ওর বাবা মা দুজনেই বেঁকে বসলো। তোকে তারা জামাই হিসেবে গ্রহন করতে রাজী হল না। তখন?’
- ‘জানি না, সেটা কোনোদিন হবে কি না। তবে ওর বাড়ী থেকে আপত্তি করবে বলে মনে হয় না আমার। আর বিদিশাও ওর বাবা মার কথা শুনবে না। ও কথা দিয়েছে আমাকে। বিদিশাকে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।’
- ‘দেব, তুই না বড্ড সরল, তুই একটু বেশী রোমান্টিক। আমার তো মনে হয়, বিদিশা যতটা না তোকে ভালোবাসে, তুই তার থেকেও বেশী ওকে ভালোবাসিস।’
- ‘হতে পারে, আমি তো কোনদিন, ভালোবাসাটাকে খেলনা বলে ভাবিনি। আমার কাছে ভালোবাসা ঠুনকো নয়। ভালোবাসা কখনও অভিনয় দিয়ে হয় না।’
- ‘জানিস আমার এক পিসতুতো দিদি আছে, রাঙাদি বলে। আমাকে বলতো, জীবনে প্রথম ভালোবাসা নাকি বড়ই মধুর। কাঁঠালের আঠার মত। লাগলে পড়ে ছাড়তেই চায় না। কিন্তু আসতে আসতে ভালোবাসাটা যথন ফিকে হয়ে যায়, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়, তখন সেভাবে কাউকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না। মানুষের জীবনে দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছু নেই, প্রথম ভালোবাসার মধ্যে যে গভীরতা আর আবেগ থাকে, দ্বিতীয় প্রেমে সেই আবেগটাই নাকি আসে না। যদি বিদিশা আর তোর প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকে, নতুন করে তুই কাউকে ভালোবাসতে পারবি? সেই আবেগের টান, ব্যাকুলতা তুই দেখাতে পারবি?’
শুক্লাকে বললাম- ‘কেন? একথা বলছিস কেন? আমাকে নিয়ে তোর বুঝি কোনো চিন্তা হয়?’
- ‘তোকে নিয়ে আমার বড় ভয় হয় দেব। তোর মধ্যে এতো গুন আছে, এতো কোয়ালিটি আছে, অথচ মনে হয় কোনোদিন যদি আঘাতে জর্জরিত হয়ে তোর এই গুনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন তুই কি করবি? কাউকে ভালোবেসে তো আর জীবনকে নষ্ট করে দেওয়া যায় না।’
- ‘তুই বড্ড চিন্তা করিস আমাকে নিয়ে। আগে থেকে এতো নেগেটিভ চিন্তা করে নাকি রে বোকা। জীবনের সব কিছুই ভালো হয়। খারাপ বলে এই পৃথিবীতে কিছু নেই। ‘
- ‘আমি তোর কথা একটু বেশী চিন্তা করি বলেই তুই আমাকে খারাপ ভাবছিস তাই না?’
- ‘কেন? কোনোদিন দেখেছিস, আমি তোকে কখনও খারাপ বলেছি?’
- ‘আসলে এই কথাগুলো মনে এল, তোকে বললাম, কেন জানিস তো? তুই আমার খুব ভালো বন্ধু। আমি জানি, দেবের কখনও খারাপ হতে পারে না। ও যখন কারুর খারাপ চায় না। ভগবান ওর ক্ষতি করতে পারে না। তবে যদি দেখি, তুই কখনো কষ্ট পাচ্ছিস, আঘাত পাচ্ছিস, তাহলে তোর জন্য আমিও খুব কষ্ট পাবো, এটা জেনে রাখিস।
শুক্লাকে বললাম, প্রথম প্রথম আমিও ভাবতাম, প্রেম টেম আবার কি? ওতো কিছু সময় নষ্ট। জীবনে প্রেম ভালোবাসার কোনো দাম নেই। কেরিয়ার গড়াটাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু বিদিশা আমার ধারণাটাকে পুরো ভেঙে দিল। জানিস তো শুক্লা। কি মেয়ে ও। ওর সাথে যে প্রেম করে, সে বুঝতে পারে। এবার তুই ও একটা প্রেম কর আমার মতন।
শুক্লা বললো-ওসব প্রেম টেম আমার ধাতে সইবে না বাবা। কলেজে সবাই আমার বন্ধু। যেমন তুই বন্ধু, শুভেন্দু, রনি বন্ধু। সবাই আমার বন্ধু।
-আর সৌগত?
-ওর ব্যাপারটা তো আমি ভেবেই উঠতে পারছি না। যাকে আমি বন্ধু হিসেবেই ভাবছি, সে আমাকে তার প্রেমিকা হিসেবে ভাবছে। মনের মিল না হলে কি প্রেম করবো বল দেখি?
আমি বললাম,-আরে একদিনে কি মন মেলে নাকি? প্রেম শুরু কর। আসতে আসতে দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
শুক্লা বললো-আচ্ছা দেব, বিদিশা যে সবসময় আমাকে তোর সাথে কথা বলতে দেখে, ও কিছু বলে না তোকে? কিছু মাইন্ড করে না?
-কেন? মাইন্ড করবে কেন? বিদিশা তো জানে, তুই আমার শুধু বন্ধু। ওর মনে সেরকম কোনো সন্দেহ বা আশঙ্কা নেই।
-এই দেব। আমি একদিন বিদিশার সাথে একটু মজা করবো? তুই যদি কিছু মনে না করিস।
-কি?
-বিদিশাকে বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম করো, জানো দেব আমার কথা ছাড়া, একপাও নড়চড় হয় না। ওকে যদি আমি বলি তোমার সাথে প্রেম চালিয়ে যেতে, তবেই ও তোমার সাথে দেখা করবে, কথা বলবে, নচেৎ নয়। দেব আমার কথায় ওঠে বসে।
শুক্লাকে বললাম-তুই বলে দেখতে পারিস। তবে মনে হয় বিদিশা তোর কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ ও বুঝেই যাবে, তুই ওর সাথে ইয়ার্কী মারছিস।
-ঠিকই বলেছিস তুই। ও বুঝে যাবে। আমাকে মনে হয় অন্যকিছু বলতে হবে।
-কি বলবি?
-বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম শুরু করেছো, জানো দেব আমার সাথেও প্রেম করে।
-ভাগ, কি যাতা বলছিস।
-ভয় পেয়ে গেলি? আরে আমি তো ইয়ার্কী মারছি।
কলেজে মিনুর সাথে যেদিন আমার প্রথম চোখাচুখি। ক্যান্টিনে একবার ওর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, মিনুর দৃষ্টিটা কিরকম বাজে। মিনু আমার প্রতি আকর্ষিত। আমার ফর্সা চেহারা, টিকোলো নাক, গমগমে কন্ঠস্বর মিনুকে তখন এক অমোঘ আকর্ষনের ডাক দিয়েছে।
শুভেন্দু এসে একদিন বললো, এই মিনুটা কি রে? জানে তুই বিদিশার সাথে প্রেম করিস, তাও তোর পেছনে পড়ে আছে। সৌগতকে ধরেছে, তোকে নাকি ওর বোনকে গান শেখাতে হবে। এই অন্যায় আবদারের কোনো মানে হয়? আর সৌগতটাই বা কিরকম? শুধু শুধু মিনুর কথা শুনে তোরও মাথা খারাপ করছে।
-আমি জানি, সৌগত সব আমাকে বলেছে।
-আমার তো মিনুকে একটা সস্তা মেয়েছেলে বলেই মনে হয়। কলেজে ঢ্যাড়া পিটিয়ে বেড়াচ্ছে। তোর নামে কিসব বলে বেড়াচ্ছে।
-কি বলেছে মিনু?
- ‘তোর গান নাকি ওর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তুই হলি গানের জাদুকর। গান গেয়ে মেয়েদের মন চুরি করার বিদ্যা যে তুই জানিস, আর কেউ জানে না। মিনু তোর জন্য পাগল। সে এখন খাওয়াদাওয়া ভুলে গেছে, সব ভুলে গেছে। সে এখন উন্মাদিনী। শোন দেব, আমার তো মনে হয়, মিনু হল, শয়তানি লোভী মাকড়শা। সহজে নিস্তার দেবে না তোকে। ওর সাথে কথা বলে, তুই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দে। তোর জীবনে বিদিশা ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই। কাউকেই তুই সে জায়গায় বসাতে পারবি না।’
পরের দিন মিনুকে ডাকলাম, ক্যান্টিনে। বললাম, কি ব্যাপার মিনু? কিসব শুনছি?
মিনু যেন কিছুই জানে না, আকাশ থেকে পড়ার মতন ভাব করলো, আমাকে বললো, কি শুনেছিস? কলেজে মিনু রোজই খবরে। আমাকে নিয়ে রোজই কিছু না কিছু কথা হয়। নতুন কি শুনেছিস সেটা শুনি।