Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak
#15
দেখলাম, কষ্ট করেও ও একটু হাসবার চেষ্টা করছে, কিন্তু ভেতরে যেনো এখনো একটা চাঁপা অস্বস্তি রয়ে গেছে, মনের ভেতরে কোনো একটা বিষয় ভীষন তোলপাড় করছে বিদিশাকে। আমাকে খুলে বলতে চাইছে হয়তো, কিন্তু সবার সামনে ঠিক বলতে পারছে না।
 
আমি ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে এসে সোফায় বসালাম। মাধুরী বললো, ‘হ্যাঁ বসোতো বসো। কি এত দূঃখ তোমার? আমরা তো সবাই আছি।
 
শুভেন্দু বললো, ‘এই বিদিশা, তুই যে কেঁদে কেটে ভাসালি, তাহলে আমাদের আসরটার এখন কি হবে?’
 
বিদিশা মুখ নিচু করে বললো, ‘ও যেমন গাইছিলো, গাক না। আমি কি বারণ করেছি?’
 
রনি বললো, ‘তুই এক কাজ কর, বাড়ীতে তুইও ফোন করে বলে দে, আজ আর বাড়ী ফিরছিস না। তারপরে দেবের সাথে তোকে ওর বাড়ী পাঠিয়ে দিচ্ছি। সারারাত দেব তোকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকবে, তুই কেঁদে কেটে ভাসাবি, আর দেব তোকে সান্তনা দেবে।
 
মাধুরী ধমক লাগালো রনিকে। - সব সময় এতো ফাজলামী মেরো না তো। সিরিয়াস ব্যাপারের সময়েও তোমরা এতো ইয়ার্কী মারো না, ভালো লাগে না।
 
শুভেন্দু বললো, ‘সত্যি বিদিশা, কোনো সিরিয়াস ব্যাপার আছে নাকি? আমাদের সামনে খুলে বলতে তোর কি কোনো অসুবিধে আছে? দেবের কাছে যদি শেয়ার করতে পারিস, তাহলে আমাদের কাছেও তো পারিস। আমরাতো সবাই তোর বন্ধু। ঠিক কিনা? তোর কোনো বিপদ হলে আমরা যেমন তোকে হেল্প করতে পারি। তেমনি তোকে সেই বিপদ থেকে বাঁচাতেও পারি। বল কি হয়েছে বল?’
 
কিছুক্ষণ মাথাটা নিচু করে বিদিশা এবার পাথরের মত বসে রইলো। শুভেন্দুকে বললো, ‘না আজ থাক। এমন সুন্দর মুডটা তোদের নষ্ট করতে আমি চাই না। সুযোগ হলে, পরে নিশ্চই বলবো।
 
শুভেন্দু বললো, ‘তাহলে, দেব কে তুই বিয়েটা কবে করছিস বল? প্রেম, ছাড়াছাড়ি, মান অভিমান ওসব অনেক হয়েছে, এখন আর অপেক্ষা করা যাবে না। দিনখন সব পাকা করে ফেলতে হবে।
 
রনি বললো, ‘হ্যাঁ লোক খাওয়ানোর সব ব্যাপাটাতো আমিই দায়িত্ব নিচ্ছিই। শুধু বিয়ে আর বৌভাত মিলিয়ে মোট কজন লোক হবে, আমাকে শুধু বলে দিতে হবে। বাকীটা রনির বাঁয়া হাত কা খেল।
 
আমি দেখলাম বিদিশার মুখে হাসিটা এসেও দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। ঠিকভাবে যেনো প্রাণখুলে হাসতেও পারছে না মেয়েটা। পুরোনো কোনো জমাট বাঁধা দূঃখ ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্রবল একটা অস্বস্তিতে রয়েছে বিদিশা, যেটা প্রকাশ করতে পারছে না সহজে।
 
আমি বিদিশাকে যতটা কাছ থেকে দেখেছি, ওর সাথে মিশেছি, ওর চোখের ভাষা আমি পড়তে জানি। জীবনে একবারই ও আমার কাছে কিছু লুকিয়েছিল। সেটা ছিল বিদিশার জীবনের প্রথম প্রেম। কিন্তু সে প্রেমকে প্রেম বলা যায় না। ভালোবাসাটা একতরফা ছিলো বলে সেভাবে দানা বেধে ওঠেনি। তাও বিদিশা তো আমার কাছে লুকোয় নি। স্বীকার করেছে পরে, সত্যিটা সামনে তুলে ধরেছে। দুদিনের প্রেমকে সেদিন না বললেও বিদিশার কিছু যায় আসতো না।
কিন্তু আজ যখন এতদিন বাদে, আবার কোনো সত্যিকে চাঁপা দিতে চাইছে না বিদিশা। মনের কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। কি এমন সেই সত্যি? যেটা বিদিশাকে হঠাৎই পাথর করে দিলো?
 
শুভেন্দু বললো, ‘এই শোন, এবার মনে হচ্ছে আমাকেই কিছু করতে হবে। বলে হারমোনিয়ামটা কাছে নিয়ে হেঁড়ে গলায় ভ্যা ভ্যা করতে লাগলো। বিদিশা ওই দেখে এবার হেসে ফেললো। রনি বললো, ‘হ্যাঁ, এইবারে ঠিক হয়েছে। মুড ঠিক হয়ে গেছে। নাও দেব চলে এসো, এবারে তোমাকে কিছু হিন্দী গান গাইতে হবে।
 
ঘড়ির কাঁটা কখনো থেমে থাকে না। শুভেন্দু আর রনির ফরমাইশ অনুযায়ী একটার পর একটা গান গাইতে গাইতে, আমিও তখন ঘড়ির দিকে তাকাতেও ভুলে গেছি। ওরা দুজনে মাল খেযে নেশায় পুরো চুর। আমার গানের তালে তালে মাঝে মাঝে নিজেরা দুলে দুলে উঠছে। মাধুরী হাসছে, আমিও হাসছি। বিদিশাও একটু আধতু হাসবার চেষ্টা করছে মাঝে মাঝে।
 
ঠিক সাড়ে এগারোটার পর মাধুরী জোর করেই আমার গান থামালো। শুভেন্দু আর রনিকে বললো, ‘তোমরা কি করছো বলোতো? দেবদা আর বিদিশাকে কি বাড়ী যেতে হবে না? নাও এবার শেষ করো। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।
 
বিদিশা আর আমি পাশাপাশি বসে ডিনার সারলাম। শুভেন্দু বললো, ‘এরপরে তাহলে আমরা কবে আবার মিট করছি? মিটটা কোথায় হবে? দেবের বাড়ীতে না বিদিশার বাড়ীতে?’
 
রনি বললো, ‘এই শোন, তোরা কিন্তু আবার আমাদের ভুলে যাস না। কলেজ হলে তবু তোদের একটু চোখে চোখে রাখা যেতো। এখানে তো সেটা হবে না। আমাদের ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না।
 
শুভেন্দু বললো, ‘দেব, বিদিশা দুজনের ওপরই আমার সে ভরসা আছে। ওরা দুজনেই আমার কথা রেখে আজ এখানে এসেছে। আমি দারুন খুশী।
 
বাড়ী থেকে বেরুবার সময় শুভেন্দু আমার হাতটা ধরলো। ওর খুব নেশা হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছি, তাও বন্ধু প্রীতি খুব বেশী বলে আমাকে একবার জড়িয়ে ধরলো। আবেগ মতন হয়ে বললো, ‘কি দেব? তোর হাসিটা ফেরালাম তো? এরপরে কিন্তু তুই আমাকে চিরকাল মনে রাখবি। রাখবি কিনা বল?’
 
আমিও শুভেন্দুকে জড়িয়ে ধরলাম। বিদিশা তখন মাধুরীর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে পাশে। শুভেন্দু কানে কানে আমাকে বললো, ‘ট্যাক্সিতে যেতে যেতে বিদিশার সাথে কথা বলেনিস। আমাদের বলে নি তো কি হয়েছে? তোকে ঠিকই ও বলবে।
 
আমি বুঝলাম, শুভেন্দুও খুব চিন্তায় আছে ওই ব্যাপারটা নিয়ে। তবে আমাকে আবার আস্বস্তও করলো শুভেন্দু। বললো, ‘সেরকম কিছু হবে না হয়তো। আসলে তোর এতগুলো বছর শুধু শুধু নষ্ট করালো বিদিশা। ওইজন্যই মনে হয় দূঃখ আছে মনে।
 
ঠিক বড় রাস্তার মোড়টা আসতেই আমি একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম। শুভেন্দু আমাকে ওর গাড়ীটা দিতে চেয়েছিলো আমি নিইনি। অনেকদিন গাড়ী চালাই না, সেভাবে অভ্যেস নেই। তাছাড়া গাড়ী নিলে হ্যাপাও অনেক। বাড়ীতে যেহেতু গ্যারাজ নেই, ওই গাড়ী আমি সারারাত বাড়ীর সামনে দাঁড় করিয়েও রাখতে পারবো না।
 
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে বিদিশা সেভাবে কথা বলছিলো না। মনে হল, এই গাড়ীতে যেতে যেতে, ওর মুখ দিয়ে কিছু কথা যদি বলাতে না পারি, তাহলে আমারও মন ঠিক শান্ত হচ্ছে না।
 
গাড়ীর মধ্যে বিদিশার একটা হাত ধরলাম, ওকে বললাম, ‘তুমি তখন কাঁদছিলে কেন তা তো আমাকে বললে না?’
 
বিদিশা আমার মুখের দিকে তাকালো। বললো, ‘দেব, তুমি তো একবারও আমাকে জিজ্ঞাসা করলে না? এই বিদিশা এতদিন কোথায় ছিল? কিভাবে ছিল? আর কেনই বা সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে তোমার কাছেই ফিরে এলো?
 
-কি হবে ওসব জেনে? কি লাভ তাতে? তুমি ফিরে এসেছো, এটাই তো অনেক বড় আমার কাছে।
 
-তুমি কত অদ্ভূত? কত সহজভাবে সবকিছু মেনে নিতে পারো। বিশ্বাসকে কত সহজ ভাবে জয় করতে পারো তুমি।
 
বিদিশাকে বললাম, ‘পৃথিবীতে তো আমি আর একা নই। এরকম কত লোকের জীবনেই তো কিছু না কিছু ঘটেছে। This is a Part of a Life. সবার জীবনে সবকিছু সহজভাবে আসে না। ভালো জিনিষ পেতে গেলে তারজন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়। জীবনে অনেক দাম দিতে হয়।
 
বিদিশা বললো, ‘আমি তোমার মত তো এত সরল নই। ভালোবাসার দাম দিতে পারিনি, তোমাকে বিশ্বাস করতে পারিনি, আমি একটা স্বার্থপর ছাড়া কিছু নই।
 
আমি বললাম, ‘কি হয়েছে তোমার? এত মন খারাপ কেন? সেই থেকে মুখ ভার। কেঁদে কেটে আমাদেরকেও অস্বস্তিতে ফেলে দিলে। যদি ভেতরের কথাটা খুলে না বলো, তাহলে তো জানতেও পারবো না।
 
ট্যাক্সির মধ্যে যেন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ। গাড়ীতে পেছনের সীটে আমি আর বিদিশা, দুটি প্রানী। মুখে কোনো কথা নেই, যেন বিরাজ করছে এক গভীর নিঃস্তব্ধতা। আমি ভাবছি, বিদিশা হয়তো কিছু একটা বলবে, তাতে মনে হবে, ওকে ফিরে পেয়েও শেষ পর্যন্ত আর পাওয়া হল না আমার। ও যেমনই দূরে চলে গিয়েছিল আমার জীবন থেকে, ঠিক তেমনি আবার দূরে চলে যাবে। বিদিশাকে হয়তো এ জীবনে পাওয়া আর আমার হবে না।
 
আমাকে অবাক করে বিদিশা বললো, ‘আমাকে অন্তত দু তিন দিন সময় দাও দেব। আমি তোমার দিব্যি খেয়ে বলছি, শুধু শুধু তোমাকে আমি আর ঠকাতে চাই না।
 
ল্যান্সডাউনে ওর বাড়ীর সামনে বিদিশাকে ড্রপ করে দেবার সময় ওর মুখ যেন তখন আরোই করুন। একটা আফশোস, গাড়ী থেকে নামার সময় জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও খেতে পারলাম না বিদিশাকে। শুধু অল্প একটু হাত নেড়ে বিদিশা চলে গেলো। মনে হলো, যাও বা কিছু একটা পেলাম, তাও যেন সেটা কাছে এসেও আবার দূরে চলে গেলো।
 
ট্যাক্সিতে একা একা বাড়ী ফিরছি আর ভাবছি, ভালোলাগা মূহূর্তগুলো, ভালোলাগা দিনগুলো, মানুষের জীবন থেকে কেন যে দূরে চলে যায়। কিছুই আমরা ধরতে পারি না। কিছুই আমরা রাখতে পারি না। স্বাদ বুঝতে না বুঝতেই জীবনের সব আনন্দ অদৃশ্য হয়ে যায়।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 12:17 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)