04-06-2020, 12:07 PM
যখন ওর বাসায় ঢুকলাম, তখন দেখলাম ওর ছোট বোনটা নেই। মিনু একা রয়েছে ঘরে। ওর চোখ দুটো কেমন ঘোলা ঘোলা। ঘরের মধ্যে শাড়ী ছেড়ে নাইটি পড়ে রয়েছে। মুখ চোখ দেখেই মনে হল, যেন শয়তান ভর করেছে ওকে।
শুরুটা করলো ভালোভাবে। আমাকে বললো, ‘সৌগতর বিয়েতে খুব আনন্দ হল। তাই না রে?’
-তুই তো যাসনি। গেলে আনন্দটা বুঝতে পারতিস।
-আমাকে তো সৌগত বলেনি। তোদের বলেছে আমি বাদ।
-তোকে কেন বলেনি, সেটা তো বলতে পারবো না। তবে আনন্দ তো খুব হয়েছে।
-এই দেব, তুই গান গেয়েছিস?
-গেয়েছি অনেক। ওরা ছাড়ছিল না তাই।
-বিদিশা গেছিল কাল?
-হ্যাঁ গেছিল। তাতে তোর কি?
-তুই দিন রাত শুধু বিদিশার কথাই চিন্তা করিস। তাই না?
-কেন ডেকেছিস, সেটাই বল। বিদিশার কথা বলতে ডেকেছিস আমাকে?
-ওফ বড্ড বিদিশা আর বিদিশা করিস তুই।
-কেন, বিদিশাকে বুঝি তোর হিংসে হয়? সহ্য হয় না, তাই না?
-আমার তো মনে হয়, বিদিশা তোর সাথে ঢং করে। ভালোবাসার আবার ও বোঝেটা কি?
-মিনু, তুই এসব কথা বলার জন্য আমাকে বাড়ীতে ডেকেছিস?
-ও তুই রাগ করলি? অত রাগটাক করে না মেরী জান।
-মিনু তুই কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস।
-আচ্ছা দেব, তুই কেন আমাকে এত অবজ্ঞা করিস বলতো? কেন, তোর প্রেমে পড়েছি, এটাই আমার দোষ?
- না তুই ছাড় আমাকে। যেতে দে এখান থেকে।
-যেতে দেবো বলে তো ডাকিনি তোকে। তোর সাথে একটু প্রেমের খেলা খেলবো। মদ না খেয়েই আজকে মাতালিনী হয়ে গেছি।
-তুই মদ খাসনি?
-সত্যি খাই নি। বিশ্বাস কর।
-তুই দিনকে রাত করতে পারিস। নয়কে ছয় করতে পারিস। মিনু তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।
মিনু এবার একটু খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। আমাকে বললো, -শুধু শুধু আমার ওপরে রাগিস তুই। আমার জীবনের বড় স্বপ্ন তো তুই। আজ বাদে কাল তোরই হাতে হাত রেখে সপ্তবনী প্রহর পার হবো। তুই হবি আমার জীবনের জ্যাকপটের সবচেয়ে দামী ঘোড়া।
-মিনু তুই মদ খেয়েছিস। ইস কি নোংরা তুই। ছাড় আমাকে ছাড়।
-কেন রে দেব? আমাকে কি তোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বেশ্য মাগী বলে মনে হয়?
-মিনু আই সে স্টপ নাও। লিভ মি।
-উঃ গোঁসা দেখো ছেলের? বিদিশা কে পেয়ে যেন বড় অহঙ্কার তোর। কেন আমাকেও একটু ভালোবাসতে চেষ্টা কর। ‘দেব’ প্লীজ।
-মিনু তুই কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু করেছিস।
মনে হচ্ছিল মিনুর গালে একটা চড় মেরে দিই। তখনো মারতে পারিনি। আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে মিনু। মুখটাকে আমার মুখের কাছে নিয়ে এসে মাকালীর মত জিভ বার করে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গী করতে লাগলো।
-আমার জিভটা জ্বলে যাচ্ছে দেব। দেখ একটু আগে লঙ্কা খেয়ে ফেলেছি। প্লীজ্ আমার জিভে তুই জিভ টা ঠেকা। আমাকে একটু আদর কর। বিচ্ছিরি আর বুনো আদর। শুয়োর যেমন শুয়োরের পেছনে পেছন ঠেকিয়ে আদর করে। ঠিক সেইভাবে তুই পারবি তো! আমার বুকের ভেতরে আগুন জ্বলছে, মাইরি দেব, তুই একটা ল্যাদল্যাদে পুতুল হয়ে যা। আমি তোকে ছিঁড়বো, চাটবো, চুষবো। আমি তোকে পায়ের নীচে ফেলে রাখবো পাপোশ করে। আমি তোকে মাথায় বসাবো। তুই হবি আমার গলার হার। তুই হবি আমার অন্তবাস। হবি তো?
-তুই এসব খারাপ খারাপ কথা বলার জন্য আমাকে বাড়ীতে ডেকেছিস?
-ওফঃ। পারি না দেব। তুই যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না। সবই জানিস। অথচ বিদিশার জন্য সব রেখে দিয়েছিস। বিদিশার কি দেখে মজেছিস তুই? বল না রে দেব? যেভাবে ও তোর ঘাড়ে চেপে বসেছে, যেন কচি লেবুর সাথে প্রথম বৃষ্টির মেলামেশা। ও যেন তোর এই ঠোঁটদুটো থেকে মধু চুরি করে নিয়েছে। হ্যাঁ রে দেব? তুই কি অসভ্য মাইরী। তুই কি পুরুষ বেশ্যা নাকি? বিদিশাকে এতসব দিলি কেন? আমার জন্য তো কিছু রাখতে পারতিস।
মিনুর কথা শুনেই বুঝতে পারছিলাম ও আমি আসার আগেই মদ খেয়েছে অনেকটা । অসংলগ্ন কথা বলছে, কথা জড়িয়ে আসছে। পেটের ভেতরে যেন ধাকতিনাকতি ধাকতিনাকতি শুরু হয়েছে। উল্টে আমাকেই বলে বসল। ‘এ আমার কি হল দেব? কথাগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে কেন? তুই আমাকে গুন করেছিস? বল না দেব, তুই কি করেছিস আমার?
আমার মুখটা তখন এত কঠিন হয়ে গেছে, আগে কোনদিন হয় নি।
মিনু বললো, ‘ওহ্ তুই কি কিউট রে? দেখি তোর বুক দেখি। তোর বগল দেখি।’
বলে আমার জামার বোতাম গুলো সব খুলতে লাগলো পট পট করে। মিনু প্রচন্ড আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। আমি ওর সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করবো না ঠেলে দূরে সরিয়ে দেবো বুঝতে পারছি না।
মিনু বললো, ‘দেব তুই কিন্তু স্টেডী থাকবি। আমি তোকে সিডিউস করছি বলে ঘাবড়ে যাস না। তাড়াহূড়োতে তুই আবাব বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করিস না। তাহলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবো। তুই তো জানিস, মেয়েদের সেক্স আসতে আসতে ওঠে। একটা বিন্দুতে পৌঁছে যাবার পর অনেক্ষণ স্ট্রে করে। তোদের মতো দুম ধড়াস কেলাস হয়ে যায় না।’
মিনু আমার জামাটা প্রায় খুলে ফেলেছে। বুকে একটা চুমু খেয়ে বললো, দেব, তুই মাইরি দারুন সেক্সী। আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে। তোর পেছনে এতদিন শুধু ঘুরঘুর করেছি, আমি কিনা সত্যি- দেব আজ তুই আমার সাথে বিট্রে করিস না প্লীজ।’
মিনু আমার মুখের মধ্যে জিভটা ঢুকিয়ে দিল জোর করে। আমাকে বললো, ‘দেখ, আমি কেমন মুখরোচক চানাচুর। আমাকে খেতে তোর দারুন লাগবে।’
ঠিক ঐ মূহূর্তে মিনুকে আমার একটা বেশ্যা বলে মনে হচ্ছিল। গালে একটা চড় মারতে গেলাম। মিনু চড়টা খেলো না। তার আগেই ওর কলিং বেলটা বেজে উঠলো। মিনু আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিজেই দরজা খুলতে লাগলো। দরজা খুলতে গিয়ে আবার একটু টলেও গেল। দরজার সামনে বিদিশা দাঁড়িয়ে। আমি হতবাক। স্তম্ভিত হয়েগেছি বিদিশাকে দেখে। বুঝতে পারছি না ও কি করে এখানে এলো?
মিনু বিদিশাকে দেখে বলে উঠল। ‘কি চাই এখানে? ভাগো ভাগো। এটা তোমার জায়গা নয়। আমার দেবের ওপরে গোয়েন্দাগীরি? সারাটা দিন চিপটে বসে আছিস ওর সাথে। এখানেও রেহাই নেই?’
বিদিশার চোখ মুখ দিয়ে তীব্র ঘেন্না ছড়িয়ে পড়ছে। আমি বুঝতে পারছি না, বিদিশা আমার খোঁজে এখানে কি করে চলে এলো?
ভেতরে ঢুকলো না বিদিশা। আমাকেও কিছু বলার সুযোগ দিলো না। মিনুকে বললো, ‘বড্ড ভুল হয়ে গেছে আমার। ভুল জায়গায় এসে পড়েছিলাম। সরি। আমি চলে যাচ্ছি।’
পেছন থেকে বিদিশাকে ডাকছি,’ বিদিশা যেও না। প্লীজ, প্লীজ। আমার কথা শোনো।’
মিনু তখন আমার জামাটা শক্ত করে ধরে রেখেছে, যাতে ছুটে আমি বিদিশার কাছে যেতে না পারি।
কখনো ভাবিনি, একটা ছোট্ট অঘটনই জীবনে বিষাদ ডেকে আনতে পারে। বিদিশা আমাকে ভুল বুঝলো। আমি তো কোনো নোংরামো করিনি মিনুর সাথে। মিনু শেষ চালটা দিয়ে হাসিল করতে চেয়েছিল আমায়। যখন দেখলো ও আর পারলো না। আশা ছেড়ে দিল। অথচ বিদিশা ভুল বুঝে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল।
বাড়ি ফিরে বিদিশাকে অনেক ফোন করার চেষ্টা করেছি সেদিন। বিদিশা ফোন ধরেনি। ল্যান্ডফোনের রিসিভার তুলে রেখে দিয়েছিল। আমার মনে হল শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস নিতেই পারলাম না। পকেট থেকে রুমাল বার করে চোখের ওপর চেপে ধরলাম। নিরুদ্ধ অশ্রু বাঁধ ভেঙে ঝরে পড়তে চাইছে। রুমাল দিয়ে সেটাকে আটকাতে চাইছি। একটা দূঃসহ বেদনার ভারে হৃদয়টা যেন গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। মনে হল, বিদিশা তো আমার কাছে এখন নেই। থাকলে হয়তো বলতো কেঁদো না, তাহলে আমি কষ্ট পাবো।
আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমি আমার কান্নাটাকে রোধ করতে পারলাম না। চোখ থেকে রুমালটা সরিয়ে নিলাম। ধীরে ধীরে আমার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নেমে এলো। এক একটা করে ফো’টা ঝরে পড়তে লাগলো।
প্রচন্ড একটা ব্রেক কষে ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমার যেন হোশ ফিরলো। কোথায় যেন এতক্ষণ হারিয়ে গিয়েছিলাম এতক্ষণ, সেই অভিশপ্ত দিনটাতে। এমন জোরে ব্রেক কষেছে গাড়ীটা। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ট্যাক্সি ওয়ালা বললো, দেখেছেন, কিভাবে এরা গাড়ী চালায়? আর একটু হলে গাড়ীর তলায় যাচ্ছিল আর কি? আমরা নিজেরাও দুজনে মরতাম সাথে এও।
দেখলাম এক মটর সাইকেল আরোহী খুব জোরে বাইক চালিয়ে একেবারের ট্যাক্সির সামনে চলে এসেছে। ট্যাক্সি ওয়ালা পাশকাটাতে গেলে পাশের লাইটপোষ্টটায় ধাক্কা মারতো। সামনের কাঁচটা গুঁড়িয়ে যেতো। তারপরে কি হত আমি জানি না। ট্যাক্সিওয়ালাকে খুব ভালো বলতে হবে। সময় মত ব্রেক কষে ছেলেটার প্রাণটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে আমারও। নইলে অকালে চলে যেতো প্রাণটা।
শুভেন্দুর বাড়ীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, ‘দাদা আপনি আমার খুব উপকার করলেন আজকে। বেঁচে না থাকার মতই বেঁচেছিলাম এতদিন ধরে। যার সাথে দেখা হবে বলে যাচ্ছি। তারজন্যই বাঁচাটা আমার নিতান্তই দরকার ছিলো।’
শুভেন্দুদের বাড়ীর সামনের রাস্তাটা বেশ সরু। ওখানে ট্যাক্সি ঢোকে না। এর আগে যেকবারই ট্যাক্সি চড়ে আমি এসেছি, গলির মুখটায় ট্যাক্সিটা আমাকে ছেড়ে দিতে হত। কিছুটা হেঁটে এগিয়ে গেলে তারপরেই শুভেন্দুদের বিশাল বাড়ী। পিকনিক গার্ডেনে শুভেন্দুরা খুব বড়লোক। নতুন লোক এলে বাড়ী খুঁজে নিতে তার অসুবিধে হবে না। শুভেন্দুদের নাম বললেই সবাই ওই বাড়ী দেখিয়ে দেবে।
দুর থেকে ওদের বাড়ীর একতলার বারান্দাটা দেখা যায়। বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে দূর থেকেই সেটা চোখে পড়ে। রাস্তাটায় ঢুকেই আমার মনে হল, শুভেন্দুর বোন মাধুরী দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। দূর থেকে ও আমাকে দেখছে।
মাধুরীর স্বভাবটা খুব মিষ্টি। একে তো বড়লোকের একমাত্র মেয়ে। শুভেন্দুরা চারভাই। আর ওদের এই একটিই মাত্র আদরের বোন মাধুরী। খুব প্রানখোলা স্বভাবের মেয়ে মাধুরীর সাথে আমারও গল্প করতে খুব ভালো লাগতো। কলেজে পড়ার সময় শুভেন্দুদের বাড়ীতে যতবারই এসেছি, মাধুরীর সঙ্গেও একটা দাদা বোনের মত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। মাধুরী, রনির সঙ্গে তখন থেকেই প্রেম করতো, কিন্তু শুভেন্দুর সাথে যেহেতু আমার একটা আলাদা খাতির ছিল, আমি এলে মাধুরী জমিয়ে আড্ডা দিত আমার সঙ্গে। ওর ডাক নাম ছিল ছুড়ী। ওকেও আমি ছুড়ী বলে ডাকতাম।
বয়সে শুভেন্দুর থেকে দু’বছরের ছোটো মাধুরী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশুনা করেনি। রনির সঙ্গে কয়েকবছর পরেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। মাধুরী আর রনির সুন্দর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে ‘দেবমাল্য’।
ওর বাচ্চা হবার পর শুভেন্দু আমাকে বললো, এই ‘দেব’ নামটা আমার খুব পছন্দ। তোকেও যার জন্য আমার খুব পছন্দ। মাধুরীর যেহেতু তোকে খুব ভালো লাগে, আমাকে বললো, ‘ছোড়দা, আমার ছেলের নাম, আমি দেব দিয়ে রাখবো। দেবদার মতন। পরে রনিও রাজী হয়ে গেল। তাই ওর নাম রাখা হলো, ‘দেবমাল্য।’
দূর থেকে মাধুরী আমাকে দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই যে দেবদা, ছোট্টবোনটাকে ভুলে গেছো বুঝি? ওফ কতদিন তোমায় দেখি না। সেই দুবছর আগে একবার তুমি এসেছিলে। আবার এতদিন পর।’
শুভেন্দুর বাড়ীর গেটের সামনে যেতেই মাধুরী হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলো। ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘ও আমার ছুড়ী রে। দাদাটার কথা বুঝি এতদিন বাদে মনে পড়লো?’
মাধুরী বললো, ‘তুমি না কেমন জানি হয়ে গেছো দেবদা। আগে কত আসতে আমাদের বাড়ীতে। এখানে আড্ডা হতো। গান বাজনা হতো। মজা হতো। তা না, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে, তোমরা সব নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে। আর আমাকেও তুমি ভুলে গেলে।
মাধুরীকে বললাম, ‘তোকে আমি ভুলিনিরে ছুড়ী। শুভেন্দু যতবারই ফোন করেছে, তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছি। রনিকে জিজ্ঞাসা করে দেখিস, ওকেও জিজ্ঞাসা করেছি তোর কথা। তোদের যখন ছেলে হল, শুভেন্দু আমাকে বললো, মাধুরী ওর ছেলের নাম রেখেছে দেবমাল্য। দেব নামটা ওর খুব পছন্দ। তোকে তো আমাদের বাড়ীর সবাই খুব পছন্দ করতো, তাই না? মাধুরীও বললো, আমি দেব নামটাই রাখবো। রনিও রাজী হয়ে গেল। তাই-
মাধুরী বললো, তুমি খুশি হয়েছো, ‘আমার ছেলের নাম দেবমাল্য রেখেছি বলে?’
আমি বললাম, বারে? খুশি হবো না? আমি তো তখনই খুশি হয়েছি। খুব খুশি হয়েছি।
মাধুরী বললো, ‘তোমার প্রতি আমার কিন্তু একটা ক্ষোভ আছে দেবদা। আমি খুব রেগে আছি তোমার ওপরে।’
ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘কেন রে ছুড়ী? রাগ কেন?’
মাধুরী বললো, ‘তুমি তখন আমার ছেলেকে দেখতে আসো নি কেন? জানো তোমায় কত এসপেক্ট করেছিলাম। তুমি এলে না। আর আমিও ছোড়দাকে বললাম, কি রে ছোড়দা? দেবদা তো এলো না? তুই কি কিছু জানাসনি নাকি দেবদাকে? ছোড়দা বললো, সব বলেছি। দেব এখন কাজবাজ নিয়ে ব্যস্ত। ওর এখন তোর ছেলেকে দেখতে আসার টাইম নেই।’
মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু এই কথা বলেছে তোকে? দাঁড়া ওকে আসতে দে। তারপর ওর মজা দেখাচ্ছি। মিথ্যে কথা বলা বের করছি।
মাধুরী মুখটা একটু করুন মত করে, ছেলেমানুষির মত করছিল। বার বার ঘাড় নেড়ে বলতে লাগল, ‘না, না, বলো, তুমি আসোনি কেন?’
মাধুরীকে বললাম, ‘দূর বোকা। আমি তখন ছিলাম না কি কলকাতায়? কোম্পানীর কাজে আমি তখন হায়দ্রাবাদে। একমাস মত ওখানে ছিলাম। কলকাতায় ফিরেই চলে গেলাম, সিঙ্গাপুরে। কোম্পানীর তরফ থেকে ট্রিপ। ফিরে এসেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। একমাস মত বিছানায় শয্যাশায়ী। কাজকর্ম সব ডকে। এমন একটা রোগ বাঁধিয়ে ফেলেছি, ডাক্তার বললো, সাবধানে থাকুন। বাইরের খাবার একদম খাবেন না। আর মিষ্টি খাওয়া তো একদম বন্ধ।’
মাধুরী বললো, ‘কি যেন রোগটা হয়েছিল তোমার?’
আমি বললাম, ‘আলসার কোলাইটিস।’
মাধুরী শুনে বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছি। ও তো খুব কঠিন রোগ। ভীষন কষ্ট দেয়। পেটে ব্যাথা করে। রক্ত পড়ে। আমাশার মতন।’
মাধুরীকে বললাম, ‘হ্যাঁ, তারপর থেকেই মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধ। মিল্ক প্রোডাক্ট থেকেই না কি রোগটা হয়।’
মাধুরী বললো,তুমি তো আগে খুব মিষ্টি খেতে ভালবাসতে দেবদা। সব বন্ধ হয়ে গেল। তাই না?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
মাধুরী বললো, ‘এ তোমার ভারী অন্যায় দেবদা। মাসীমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছো। বিয়ে থা তো এবার করো। আর কতদিন একা একা থাকবে? তোমাকে দেখার জন্যও তো কাউকে দরকার?
তরপর নিজেই বললো, অবশ্য এখনকার মেয়েদের মধ্যে ভালো মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। মেয়েরা এখন স্বামীদের কেউ দেখে না।
ওকে বললাম, ‘কেন? তুই মেয়ে দেখেছিস আমার জন্য?’
মাধুরী হেসে ফেললো, আমাকে বললো, ‘আমি যদি মেয়ে দেখি। সে মেয়ে তোমার পছন্দ হবে? সবাই তো আর বিদিশার মত সুন্দরী নয়।’
এই বিদিশা নামটা আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িত। শুধু আমি কেন? অনেকেই ওকে ভুলতে পারেনি। মাধুরীর মুখ দিয়ে বিদিশা নামটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেমন ছটফটানি শুরু হয়ে গেল। ওকে বললাম, ‘হ্যাঁ রে ছুড়ী, তুই কি কিছু জানিস?আমাকে সত্যি করে বলতো?
মাধুরী বললো, ‘কি জানবো? কি বলবো?
ওকে বললাম, ‘আজ এখানে নাকি কারুর আসার কথা আছে। কোনো একটা মেয়ে। শুভেন্দু আর রনি তো সেই কথাটাই বলেছে আমাকে।’
মাধুরী শুনে এমন ভাব করলো, যেন ও কিছুই জানে না। আমাকে বললো, ‘কই সেরকম তো আমি কিছু শুনিনি।’
আমি অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম, তাহলে কি শুভেন্দু আর রনি, মাধুরীকেও ব্যাপারটা বলেনি? না ও সব জানে, রনি আর শুভেন্দুর মত মাধুরীও আমাকে গোপণ করছে।
মাধুরীকে বললাম, ‘কই তোর কত্তা কোথায়? ওকে ডাক দেখি একবার। দেখি জিজ্ঞাসা করে।’
মাধুরী বললো, ‘সে তো একটু আগেই বেরুলো তোমার জন্য।’
রনি আমার জন্য কোথায় গেছে? একটু অবাকই হলাম, ওকে বললাম, ‘কেন রে? আমার জন্য তোর কত্তা বেরিয়েছে? কোথায় গেছে?’
মাধুরী বললো, ‘গেছে হয়তো কিছু কিনতে টিনতে। দুপুর বেলা তো এক পেট ভাত খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিল। তুমি ফোনটা করলে। অমনি বাবু তড়াক করে জেগে উঠলেন। আমাকে বললো, তুমি বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকো। ‘দেব’ আসছে। আমি ততক্ষণ দোকানটা থেকে চট করে ঘুরে আসছি।
বুঝে নিলাম, রনি কোথায় গেছে। মাল খাওয়ার নেশাটা রনির প্রচুর। তারপরেই আবার ভাবলাম, বিদিশা যদি সত্যি আসে, ওর সামনে এসব খাওয়াটা কি ঠিক হবে?
মাধুরী ভেতরে গিয়ে ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এলো। আমার সামনে আসতেই খেয়াল হল। ইস তাড়াহুড়োতে ওর জন্য কিছু কিনে আনা হয় নি। পকেট থেকে টাকা বার করতে যাচ্ছিলাম। মাধুরী বললো, ‘তুমি ওর মাথায় হাতটা রেখে আশীর্ব্বাদ করোতো। তাহলেই হবে। টাকা হাতে পেলে এক্ষুনি ওটাকে ছিঁড়ে দেবে। যা দুষ্টু।’
বাচ্চাটাকে দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছিলাম। ও ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে দেখছিল, কিন্তু কিছুতেই আসছিল না। মাধুরী ওকে বললো, ‘এটা কে বলোতো? এটা হলো তোমার কাকু।’ যাও কাকু ডাকছে যাও।’
আমি দুহাত বাড়িয়ে মাধুরীকে বললাম, ‘কাকু কি রে? বল, আমি ওর মামা হই। মাধুরী বললো, হ্যাঁ এটা হলো তোমার দেব মামা। যাও মামার কাছে যাও।’
বাচ্চাটা এবার আমার কাছে চলে এলো। মাধুরী ওকে বললো, ‘মামা কিন্তু খুব ভালো গান জানে। তুমি মামার কাছে গান শিখবে?
বাচ্চাটা ঘাড় নাড়লো। দাঁত বার করে হেসে বললো, হাঁ।
মাধুরী বললো, দেবদা, তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি। ততক্ষনে রনিও এসে পড়বে।
আমি মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু কখন আসবে? আমাকে তো বললো, আধ ঘন্টার মধ্যে ঢুকছে।
মাধুরী বললো, ‘ছোড়দা যদি তোমাকে আধঘন্টা বলে থাকে, তাহলে ধরে নাও ওটা একঘন্টা। ওর সব কিছুতেই লেট। আজও অবধি কোনদিন টাইম মত কিছু করেনি। তারপর হেসে বললো, দেখছো না বিয়েটাও করছে না এখনো। এখনো নাকি ওর বিয়ে করার টাইম হয় নি।’
আমি বললাম, শুভেন্দু তো বলেছে, ‘বিয়ে আর করবে না এ জীবনে।’
শুরুটা করলো ভালোভাবে। আমাকে বললো, ‘সৌগতর বিয়েতে খুব আনন্দ হল। তাই না রে?’
-তুই তো যাসনি। গেলে আনন্দটা বুঝতে পারতিস।
-আমাকে তো সৌগত বলেনি। তোদের বলেছে আমি বাদ।
-তোকে কেন বলেনি, সেটা তো বলতে পারবো না। তবে আনন্দ তো খুব হয়েছে।
-এই দেব, তুই গান গেয়েছিস?
-গেয়েছি অনেক। ওরা ছাড়ছিল না তাই।
-বিদিশা গেছিল কাল?
-হ্যাঁ গেছিল। তাতে তোর কি?
-তুই দিন রাত শুধু বিদিশার কথাই চিন্তা করিস। তাই না?
-কেন ডেকেছিস, সেটাই বল। বিদিশার কথা বলতে ডেকেছিস আমাকে?
-ওফ বড্ড বিদিশা আর বিদিশা করিস তুই।
-কেন, বিদিশাকে বুঝি তোর হিংসে হয়? সহ্য হয় না, তাই না?
-আমার তো মনে হয়, বিদিশা তোর সাথে ঢং করে। ভালোবাসার আবার ও বোঝেটা কি?
-মিনু, তুই এসব কথা বলার জন্য আমাকে বাড়ীতে ডেকেছিস?
-ও তুই রাগ করলি? অত রাগটাক করে না মেরী জান।
-মিনু তুই কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস।
-আচ্ছা দেব, তুই কেন আমাকে এত অবজ্ঞা করিস বলতো? কেন, তোর প্রেমে পড়েছি, এটাই আমার দোষ?
- না তুই ছাড় আমাকে। যেতে দে এখান থেকে।
-যেতে দেবো বলে তো ডাকিনি তোকে। তোর সাথে একটু প্রেমের খেলা খেলবো। মদ না খেয়েই আজকে মাতালিনী হয়ে গেছি।
-তুই মদ খাসনি?
-সত্যি খাই নি। বিশ্বাস কর।
-তুই দিনকে রাত করতে পারিস। নয়কে ছয় করতে পারিস। মিনু তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।
মিনু এবার একটু খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। আমাকে বললো, -শুধু শুধু আমার ওপরে রাগিস তুই। আমার জীবনের বড় স্বপ্ন তো তুই। আজ বাদে কাল তোরই হাতে হাত রেখে সপ্তবনী প্রহর পার হবো। তুই হবি আমার জীবনের জ্যাকপটের সবচেয়ে দামী ঘোড়া।
-মিনু তুই মদ খেয়েছিস। ইস কি নোংরা তুই। ছাড় আমাকে ছাড়।
-কেন রে দেব? আমাকে কি তোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বেশ্য মাগী বলে মনে হয়?
-মিনু আই সে স্টপ নাও। লিভ মি।
-উঃ গোঁসা দেখো ছেলের? বিদিশা কে পেয়ে যেন বড় অহঙ্কার তোর। কেন আমাকেও একটু ভালোবাসতে চেষ্টা কর। ‘দেব’ প্লীজ।
-মিনু তুই কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু করেছিস।
মনে হচ্ছিল মিনুর গালে একটা চড় মেরে দিই। তখনো মারতে পারিনি। আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে মিনু। মুখটাকে আমার মুখের কাছে নিয়ে এসে মাকালীর মত জিভ বার করে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গী করতে লাগলো।
-আমার জিভটা জ্বলে যাচ্ছে দেব। দেখ একটু আগে লঙ্কা খেয়ে ফেলেছি। প্লীজ্ আমার জিভে তুই জিভ টা ঠেকা। আমাকে একটু আদর কর। বিচ্ছিরি আর বুনো আদর। শুয়োর যেমন শুয়োরের পেছনে পেছন ঠেকিয়ে আদর করে। ঠিক সেইভাবে তুই পারবি তো! আমার বুকের ভেতরে আগুন জ্বলছে, মাইরি দেব, তুই একটা ল্যাদল্যাদে পুতুল হয়ে যা। আমি তোকে ছিঁড়বো, চাটবো, চুষবো। আমি তোকে পায়ের নীচে ফেলে রাখবো পাপোশ করে। আমি তোকে মাথায় বসাবো। তুই হবি আমার গলার হার। তুই হবি আমার অন্তবাস। হবি তো?
-তুই এসব খারাপ খারাপ কথা বলার জন্য আমাকে বাড়ীতে ডেকেছিস?
-ওফঃ। পারি না দেব। তুই যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না। সবই জানিস। অথচ বিদিশার জন্য সব রেখে দিয়েছিস। বিদিশার কি দেখে মজেছিস তুই? বল না রে দেব? যেভাবে ও তোর ঘাড়ে চেপে বসেছে, যেন কচি লেবুর সাথে প্রথম বৃষ্টির মেলামেশা। ও যেন তোর এই ঠোঁটদুটো থেকে মধু চুরি করে নিয়েছে। হ্যাঁ রে দেব? তুই কি অসভ্য মাইরী। তুই কি পুরুষ বেশ্যা নাকি? বিদিশাকে এতসব দিলি কেন? আমার জন্য তো কিছু রাখতে পারতিস।
মিনুর কথা শুনেই বুঝতে পারছিলাম ও আমি আসার আগেই মদ খেয়েছে অনেকটা । অসংলগ্ন কথা বলছে, কথা জড়িয়ে আসছে। পেটের ভেতরে যেন ধাকতিনাকতি ধাকতিনাকতি শুরু হয়েছে। উল্টে আমাকেই বলে বসল। ‘এ আমার কি হল দেব? কথাগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে কেন? তুই আমাকে গুন করেছিস? বল না দেব, তুই কি করেছিস আমার?
আমার মুখটা তখন এত কঠিন হয়ে গেছে, আগে কোনদিন হয় নি।
মিনু বললো, ‘ওহ্ তুই কি কিউট রে? দেখি তোর বুক দেখি। তোর বগল দেখি।’
বলে আমার জামার বোতাম গুলো সব খুলতে লাগলো পট পট করে। মিনু প্রচন্ড আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। আমি ওর সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করবো না ঠেলে দূরে সরিয়ে দেবো বুঝতে পারছি না।
মিনু বললো, ‘দেব তুই কিন্তু স্টেডী থাকবি। আমি তোকে সিডিউস করছি বলে ঘাবড়ে যাস না। তাড়াহূড়োতে তুই আবাব বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করিস না। তাহলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবো। তুই তো জানিস, মেয়েদের সেক্স আসতে আসতে ওঠে। একটা বিন্দুতে পৌঁছে যাবার পর অনেক্ষণ স্ট্রে করে। তোদের মতো দুম ধড়াস কেলাস হয়ে যায় না।’
মিনু আমার জামাটা প্রায় খুলে ফেলেছে। বুকে একটা চুমু খেয়ে বললো, দেব, তুই মাইরি দারুন সেক্সী। আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে। তোর পেছনে এতদিন শুধু ঘুরঘুর করেছি, আমি কিনা সত্যি- দেব আজ তুই আমার সাথে বিট্রে করিস না প্লীজ।’
মিনু আমার মুখের মধ্যে জিভটা ঢুকিয়ে দিল জোর করে। আমাকে বললো, ‘দেখ, আমি কেমন মুখরোচক চানাচুর। আমাকে খেতে তোর দারুন লাগবে।’
ঠিক ঐ মূহূর্তে মিনুকে আমার একটা বেশ্যা বলে মনে হচ্ছিল। গালে একটা চড় মারতে গেলাম। মিনু চড়টা খেলো না। তার আগেই ওর কলিং বেলটা বেজে উঠলো। মিনু আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিজেই দরজা খুলতে লাগলো। দরজা খুলতে গিয়ে আবার একটু টলেও গেল। দরজার সামনে বিদিশা দাঁড়িয়ে। আমি হতবাক। স্তম্ভিত হয়েগেছি বিদিশাকে দেখে। বুঝতে পারছি না ও কি করে এখানে এলো?
মিনু বিদিশাকে দেখে বলে উঠল। ‘কি চাই এখানে? ভাগো ভাগো। এটা তোমার জায়গা নয়। আমার দেবের ওপরে গোয়েন্দাগীরি? সারাটা দিন চিপটে বসে আছিস ওর সাথে। এখানেও রেহাই নেই?’
বিদিশার চোখ মুখ দিয়ে তীব্র ঘেন্না ছড়িয়ে পড়ছে। আমি বুঝতে পারছি না, বিদিশা আমার খোঁজে এখানে কি করে চলে এলো?
ভেতরে ঢুকলো না বিদিশা। আমাকেও কিছু বলার সুযোগ দিলো না। মিনুকে বললো, ‘বড্ড ভুল হয়ে গেছে আমার। ভুল জায়গায় এসে পড়েছিলাম। সরি। আমি চলে যাচ্ছি।’
পেছন থেকে বিদিশাকে ডাকছি,’ বিদিশা যেও না। প্লীজ, প্লীজ। আমার কথা শোনো।’
মিনু তখন আমার জামাটা শক্ত করে ধরে রেখেছে, যাতে ছুটে আমি বিদিশার কাছে যেতে না পারি।
কখনো ভাবিনি, একটা ছোট্ট অঘটনই জীবনে বিষাদ ডেকে আনতে পারে। বিদিশা আমাকে ভুল বুঝলো। আমি তো কোনো নোংরামো করিনি মিনুর সাথে। মিনু শেষ চালটা দিয়ে হাসিল করতে চেয়েছিল আমায়। যখন দেখলো ও আর পারলো না। আশা ছেড়ে দিল। অথচ বিদিশা ভুল বুঝে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল।
বাড়ি ফিরে বিদিশাকে অনেক ফোন করার চেষ্টা করেছি সেদিন। বিদিশা ফোন ধরেনি। ল্যান্ডফোনের রিসিভার তুলে রেখে দিয়েছিল। আমার মনে হল শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস নিতেই পারলাম না। পকেট থেকে রুমাল বার করে চোখের ওপর চেপে ধরলাম। নিরুদ্ধ অশ্রু বাঁধ ভেঙে ঝরে পড়তে চাইছে। রুমাল দিয়ে সেটাকে আটকাতে চাইছি। একটা দূঃসহ বেদনার ভারে হৃদয়টা যেন গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। মনে হল, বিদিশা তো আমার কাছে এখন নেই। থাকলে হয়তো বলতো কেঁদো না, তাহলে আমি কষ্ট পাবো।
আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমি আমার কান্নাটাকে রোধ করতে পারলাম না। চোখ থেকে রুমালটা সরিয়ে নিলাম। ধীরে ধীরে আমার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নেমে এলো। এক একটা করে ফো’টা ঝরে পড়তে লাগলো।
প্রচন্ড একটা ব্রেক কষে ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমার যেন হোশ ফিরলো। কোথায় যেন এতক্ষণ হারিয়ে গিয়েছিলাম এতক্ষণ, সেই অভিশপ্ত দিনটাতে। এমন জোরে ব্রেক কষেছে গাড়ীটা। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ট্যাক্সি ওয়ালা বললো, দেখেছেন, কিভাবে এরা গাড়ী চালায়? আর একটু হলে গাড়ীর তলায় যাচ্ছিল আর কি? আমরা নিজেরাও দুজনে মরতাম সাথে এও।
দেখলাম এক মটর সাইকেল আরোহী খুব জোরে বাইক চালিয়ে একেবারের ট্যাক্সির সামনে চলে এসেছে। ট্যাক্সি ওয়ালা পাশকাটাতে গেলে পাশের লাইটপোষ্টটায় ধাক্কা মারতো। সামনের কাঁচটা গুঁড়িয়ে যেতো। তারপরে কি হত আমি জানি না। ট্যাক্সিওয়ালাকে খুব ভালো বলতে হবে। সময় মত ব্রেক কষে ছেলেটার প্রাণটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে আমারও। নইলে অকালে চলে যেতো প্রাণটা।
শুভেন্দুর বাড়ীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, ‘দাদা আপনি আমার খুব উপকার করলেন আজকে। বেঁচে না থাকার মতই বেঁচেছিলাম এতদিন ধরে। যার সাথে দেখা হবে বলে যাচ্ছি। তারজন্যই বাঁচাটা আমার নিতান্তই দরকার ছিলো।’
শুভেন্দুদের বাড়ীর সামনের রাস্তাটা বেশ সরু। ওখানে ট্যাক্সি ঢোকে না। এর আগে যেকবারই ট্যাক্সি চড়ে আমি এসেছি, গলির মুখটায় ট্যাক্সিটা আমাকে ছেড়ে দিতে হত। কিছুটা হেঁটে এগিয়ে গেলে তারপরেই শুভেন্দুদের বিশাল বাড়ী। পিকনিক গার্ডেনে শুভেন্দুরা খুব বড়লোক। নতুন লোক এলে বাড়ী খুঁজে নিতে তার অসুবিধে হবে না। শুভেন্দুদের নাম বললেই সবাই ওই বাড়ী দেখিয়ে দেবে।
দুর থেকে ওদের বাড়ীর একতলার বারান্দাটা দেখা যায়। বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে দূর থেকেই সেটা চোখে পড়ে। রাস্তাটায় ঢুকেই আমার মনে হল, শুভেন্দুর বোন মাধুরী দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। দূর থেকে ও আমাকে দেখছে।
মাধুরীর স্বভাবটা খুব মিষ্টি। একে তো বড়লোকের একমাত্র মেয়ে। শুভেন্দুরা চারভাই। আর ওদের এই একটিই মাত্র আদরের বোন মাধুরী। খুব প্রানখোলা স্বভাবের মেয়ে মাধুরীর সাথে আমারও গল্প করতে খুব ভালো লাগতো। কলেজে পড়ার সময় শুভেন্দুদের বাড়ীতে যতবারই এসেছি, মাধুরীর সঙ্গেও একটা দাদা বোনের মত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। মাধুরী, রনির সঙ্গে তখন থেকেই প্রেম করতো, কিন্তু শুভেন্দুর সাথে যেহেতু আমার একটা আলাদা খাতির ছিল, আমি এলে মাধুরী জমিয়ে আড্ডা দিত আমার সঙ্গে। ওর ডাক নাম ছিল ছুড়ী। ওকেও আমি ছুড়ী বলে ডাকতাম।
বয়সে শুভেন্দুর থেকে দু’বছরের ছোটো মাধুরী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশুনা করেনি। রনির সঙ্গে কয়েকবছর পরেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। মাধুরী আর রনির সুন্দর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে ‘দেবমাল্য’।
ওর বাচ্চা হবার পর শুভেন্দু আমাকে বললো, এই ‘দেব’ নামটা আমার খুব পছন্দ। তোকেও যার জন্য আমার খুব পছন্দ। মাধুরীর যেহেতু তোকে খুব ভালো লাগে, আমাকে বললো, ‘ছোড়দা, আমার ছেলের নাম, আমি দেব দিয়ে রাখবো। দেবদার মতন। পরে রনিও রাজী হয়ে গেল। তাই ওর নাম রাখা হলো, ‘দেবমাল্য।’
দূর থেকে মাধুরী আমাকে দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই যে দেবদা, ছোট্টবোনটাকে ভুলে গেছো বুঝি? ওফ কতদিন তোমায় দেখি না। সেই দুবছর আগে একবার তুমি এসেছিলে। আবার এতদিন পর।’
শুভেন্দুর বাড়ীর গেটের সামনে যেতেই মাধুরী হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলো। ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘ও আমার ছুড়ী রে। দাদাটার কথা বুঝি এতদিন বাদে মনে পড়লো?’
মাধুরী বললো, ‘তুমি না কেমন জানি হয়ে গেছো দেবদা। আগে কত আসতে আমাদের বাড়ীতে। এখানে আড্ডা হতো। গান বাজনা হতো। মজা হতো। তা না, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে, তোমরা সব নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে। আর আমাকেও তুমি ভুলে গেলে।
মাধুরীকে বললাম, ‘তোকে আমি ভুলিনিরে ছুড়ী। শুভেন্দু যতবারই ফোন করেছে, তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছি। রনিকে জিজ্ঞাসা করে দেখিস, ওকেও জিজ্ঞাসা করেছি তোর কথা। তোদের যখন ছেলে হল, শুভেন্দু আমাকে বললো, মাধুরী ওর ছেলের নাম রেখেছে দেবমাল্য। দেব নামটা ওর খুব পছন্দ। তোকে তো আমাদের বাড়ীর সবাই খুব পছন্দ করতো, তাই না? মাধুরীও বললো, আমি দেব নামটাই রাখবো। রনিও রাজী হয়ে গেল। তাই-
মাধুরী বললো, তুমি খুশি হয়েছো, ‘আমার ছেলের নাম দেবমাল্য রেখেছি বলে?’
আমি বললাম, বারে? খুশি হবো না? আমি তো তখনই খুশি হয়েছি। খুব খুশি হয়েছি।
মাধুরী বললো, ‘তোমার প্রতি আমার কিন্তু একটা ক্ষোভ আছে দেবদা। আমি খুব রেগে আছি তোমার ওপরে।’
ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘কেন রে ছুড়ী? রাগ কেন?’
মাধুরী বললো, ‘তুমি তখন আমার ছেলেকে দেখতে আসো নি কেন? জানো তোমায় কত এসপেক্ট করেছিলাম। তুমি এলে না। আর আমিও ছোড়দাকে বললাম, কি রে ছোড়দা? দেবদা তো এলো না? তুই কি কিছু জানাসনি নাকি দেবদাকে? ছোড়দা বললো, সব বলেছি। দেব এখন কাজবাজ নিয়ে ব্যস্ত। ওর এখন তোর ছেলেকে দেখতে আসার টাইম নেই।’
মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু এই কথা বলেছে তোকে? দাঁড়া ওকে আসতে দে। তারপর ওর মজা দেখাচ্ছি। মিথ্যে কথা বলা বের করছি।
মাধুরী মুখটা একটু করুন মত করে, ছেলেমানুষির মত করছিল। বার বার ঘাড় নেড়ে বলতে লাগল, ‘না, না, বলো, তুমি আসোনি কেন?’
মাধুরীকে বললাম, ‘দূর বোকা। আমি তখন ছিলাম না কি কলকাতায়? কোম্পানীর কাজে আমি তখন হায়দ্রাবাদে। একমাস মত ওখানে ছিলাম। কলকাতায় ফিরেই চলে গেলাম, সিঙ্গাপুরে। কোম্পানীর তরফ থেকে ট্রিপ। ফিরে এসেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। একমাস মত বিছানায় শয্যাশায়ী। কাজকর্ম সব ডকে। এমন একটা রোগ বাঁধিয়ে ফেলেছি, ডাক্তার বললো, সাবধানে থাকুন। বাইরের খাবার একদম খাবেন না। আর মিষ্টি খাওয়া তো একদম বন্ধ।’
মাধুরী বললো, ‘কি যেন রোগটা হয়েছিল তোমার?’
আমি বললাম, ‘আলসার কোলাইটিস।’
মাধুরী শুনে বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছি। ও তো খুব কঠিন রোগ। ভীষন কষ্ট দেয়। পেটে ব্যাথা করে। রক্ত পড়ে। আমাশার মতন।’
মাধুরীকে বললাম, ‘হ্যাঁ, তারপর থেকেই মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধ। মিল্ক প্রোডাক্ট থেকেই না কি রোগটা হয়।’
মাধুরী বললো,তুমি তো আগে খুব মিষ্টি খেতে ভালবাসতে দেবদা। সব বন্ধ হয়ে গেল। তাই না?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
মাধুরী বললো, ‘এ তোমার ভারী অন্যায় দেবদা। মাসীমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছো। বিয়ে থা তো এবার করো। আর কতদিন একা একা থাকবে? তোমাকে দেখার জন্যও তো কাউকে দরকার?
তরপর নিজেই বললো, অবশ্য এখনকার মেয়েদের মধ্যে ভালো মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। মেয়েরা এখন স্বামীদের কেউ দেখে না।
ওকে বললাম, ‘কেন? তুই মেয়ে দেখেছিস আমার জন্য?’
মাধুরী হেসে ফেললো, আমাকে বললো, ‘আমি যদি মেয়ে দেখি। সে মেয়ে তোমার পছন্দ হবে? সবাই তো আর বিদিশার মত সুন্দরী নয়।’
এই বিদিশা নামটা আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িত। শুধু আমি কেন? অনেকেই ওকে ভুলতে পারেনি। মাধুরীর মুখ দিয়ে বিদিশা নামটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেমন ছটফটানি শুরু হয়ে গেল। ওকে বললাম, ‘হ্যাঁ রে ছুড়ী, তুই কি কিছু জানিস?আমাকে সত্যি করে বলতো?
মাধুরী বললো, ‘কি জানবো? কি বলবো?
ওকে বললাম, ‘আজ এখানে নাকি কারুর আসার কথা আছে। কোনো একটা মেয়ে। শুভেন্দু আর রনি তো সেই কথাটাই বলেছে আমাকে।’
মাধুরী শুনে এমন ভাব করলো, যেন ও কিছুই জানে না। আমাকে বললো, ‘কই সেরকম তো আমি কিছু শুনিনি।’
আমি অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম, তাহলে কি শুভেন্দু আর রনি, মাধুরীকেও ব্যাপারটা বলেনি? না ও সব জানে, রনি আর শুভেন্দুর মত মাধুরীও আমাকে গোপণ করছে।
মাধুরীকে বললাম, ‘কই তোর কত্তা কোথায়? ওকে ডাক দেখি একবার। দেখি জিজ্ঞাসা করে।’
মাধুরী বললো, ‘সে তো একটু আগেই বেরুলো তোমার জন্য।’
রনি আমার জন্য কোথায় গেছে? একটু অবাকই হলাম, ওকে বললাম, ‘কেন রে? আমার জন্য তোর কত্তা বেরিয়েছে? কোথায় গেছে?’
মাধুরী বললো, ‘গেছে হয়তো কিছু কিনতে টিনতে। দুপুর বেলা তো এক পেট ভাত খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিল। তুমি ফোনটা করলে। অমনি বাবু তড়াক করে জেগে উঠলেন। আমাকে বললো, তুমি বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকো। ‘দেব’ আসছে। আমি ততক্ষণ দোকানটা থেকে চট করে ঘুরে আসছি।
বুঝে নিলাম, রনি কোথায় গেছে। মাল খাওয়ার নেশাটা রনির প্রচুর। তারপরেই আবার ভাবলাম, বিদিশা যদি সত্যি আসে, ওর সামনে এসব খাওয়াটা কি ঠিক হবে?
মাধুরী ভেতরে গিয়ে ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এলো। আমার সামনে আসতেই খেয়াল হল। ইস তাড়াহুড়োতে ওর জন্য কিছু কিনে আনা হয় নি। পকেট থেকে টাকা বার করতে যাচ্ছিলাম। মাধুরী বললো, ‘তুমি ওর মাথায় হাতটা রেখে আশীর্ব্বাদ করোতো। তাহলেই হবে। টাকা হাতে পেলে এক্ষুনি ওটাকে ছিঁড়ে দেবে। যা দুষ্টু।’
বাচ্চাটাকে দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছিলাম। ও ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে দেখছিল, কিন্তু কিছুতেই আসছিল না। মাধুরী ওকে বললো, ‘এটা কে বলোতো? এটা হলো তোমার কাকু।’ যাও কাকু ডাকছে যাও।’
আমি দুহাত বাড়িয়ে মাধুরীকে বললাম, ‘কাকু কি রে? বল, আমি ওর মামা হই। মাধুরী বললো, হ্যাঁ এটা হলো তোমার দেব মামা। যাও মামার কাছে যাও।’
বাচ্চাটা এবার আমার কাছে চলে এলো। মাধুরী ওকে বললো, ‘মামা কিন্তু খুব ভালো গান জানে। তুমি মামার কাছে গান শিখবে?
বাচ্চাটা ঘাড় নাড়লো। দাঁত বার করে হেসে বললো, হাঁ।
মাধুরী বললো, দেবদা, তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি। ততক্ষনে রনিও এসে পড়বে।
আমি মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু কখন আসবে? আমাকে তো বললো, আধ ঘন্টার মধ্যে ঢুকছে।
মাধুরী বললো, ‘ছোড়দা যদি তোমাকে আধঘন্টা বলে থাকে, তাহলে ধরে নাও ওটা একঘন্টা। ওর সব কিছুতেই লেট। আজও অবধি কোনদিন টাইম মত কিছু করেনি। তারপর হেসে বললো, দেখছো না বিয়েটাও করছে না এখনো। এখনো নাকি ওর বিয়ে করার টাইম হয় নি।’
আমি বললাম, শুভেন্দু তো বলেছে, ‘বিয়ে আর করবে না এ জীবনে।’