Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak
#8

 
কথায় বলে প্রেম ভালোবাসা থেকে নাকি একধরণের শক্তির জন্ম নেয়। জীবনের বাঁচার রসদ খুঁজে পাওয়া যায়। অদ্ভূত এক হতাশায় জীবনটা কেটে গিয়েছিল বেশ কয়েকটা বছর। ভাবলাম, বিদিশার ফিরে আসাটা কি কোনো কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে? আমি যেন একটা অবলম্বনের পথ খোঁজারই চেষ্টা করছিলাম। অথচ শুক্লাই এসে আমাকে কেমন দ্বিধায় ফেলে দিল। মন থেকে শুক্লার না চাওয়াটা একটু অবাকই করলো আমাকে। এতদিন পরে চিঠিটাও খুঁজে খুঁজে ঠিক নিয়ে এসেছে আমার কাছে। ও কি বলতে চাইলো ঠিক স্পষ্ট হল না।
 
মনে পড়ছিল, কলেজে যেকটা দিন আমাদের কেটেছে, শুক্লাকে কোনদিন বিদিশার প্রতি এত বিদ্বেশ করতে দেখিনি। ও কোনদিন বিদিশাকে দেখে হিংসেও করতো না। আমি বিদিশার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছি। শুক্লাকে কোনদিন অখুশি হতে দেখিনি। যখন প্রেমটা আমাদের ক্রমেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখনো শুক্লা স্বাভাবিক। কোনদিন প্রেম ভালোবাসার কথা ও আমাকে বলেনি। আর শুক্লাকেও সেচোখে আমি কোনদিন দেখিনি।
 
শুক্লা বলতো, ‘দেবহচ্ছে এমন একটা ছেলে, যার সাথে যে মেয়ে প্রেম করবে, সেই ধন্য হয়ে যাবে। আমি করিনি তো কি আছে। দেব আমার খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু বিদিশা করেছে। সেই দিক দিয়ে বিদিশাকে আমি খুব লাকি বলেই মনে করবো। সুন্দরী হলেই শুধু হয় না। ভালো ছেলেদের মন পাওয়ার জন্যও মেয়েদের অনেক তপস্যা করতে হয়। বিদিশা করেছে, তাই ও দেবকে পেয়েছে। আমি চাই দেব আর বিদিশা জীবনে আরো সুখী হোক। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে ওরা একে অপরকে পাওয়ার আনন্দটা আরো উপভোগ করুক।
 
নিজেও যখন সৌগতর সঙ্গে প্রেম করা শুরু করলো, তখন আমাকে বললো, ‘তুই ই আমাকে পথ দেখালি দেব। তোকে দেখেই শিখলাম পৃথিবীতে প্রেম জিনিষটা কত সুন্দর। মধুর প্রেমের সত্যিই কোনো বিকল্প হয় না।
 
সৌগত আর শুক্লা আমাকে আর বিদিশাকে খুব নকল করতো। বিদিশা আমাকে ভ্যালেনটাইন্স ডে তে কার্ড দিচ্ছে, সাথে ডায়েরী আর পেন। আর সুন্দর কারুকার্য করা একটা রুমাল। শুক্লা তাই দেখে বললো, ‘আমিও সৌগতকে তাহলে এগুলো দিই? শুধু কার্ড কেন দেবো? সাথে ডায়েরী, পেন আর রুমালটাও তো দেওয়া দরকার।
 
কলেজস্ট্রীটে গিয়ে সব কিনে নিয়ে এসেছে। আমাকে এনে দেখাচ্ছে, আর বলছে, ‘দেখ, বিদিশার মত কিনেছি সব। ভালো হয়েছে?’
 
প্রথম প্রথম আমি আর বিদিশা মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতাম। বেশ কয়েকটা নতুন সিনেমাও দেখে ফেলেছি দুজনে। শুক্লা আবদার করে বসলো, ‘এবার থেকে তোরা একা যাবি না। গেলে আমরা চারজনে মিলে যাবো।
 
মাঝে মাঝে শুভেন্দুও এসে জুড়ে বসতো আমাদের সাথে। আমাকে আর শুক্লাকে বলতো, ‘এই শোন, তোদের দুজনের এই যে প্রেমটা হচ্ছে না। এসবই আমার বদলৌতে। সেদিন যদি বিদিশাকে আমি চিঠিটা না দিতাম না, তাহলে দেব কোথায় আর বিদিশা কোথায়? আর শোনো, পারুল রানী, তুমি তোমার প্রেমিকের যা অবস্থা করেছিলে, দেবদাস হতে হতে বেঁচে গেছে ব্যাচারা সৌগত। ভাগ্যিস তোর মনটা ঘোরাতে পেরেছিলাম সেদিন। নইলে?
 
শুভেন্দুর আমাদের সাথে ভিক্টোরিয়াতে গিয়ে যে কি অবস্থা হয়েছিল, সেকথা তো আগেই বলেছি। ও কখনো বোর ফিল করত না। আমরা চারজনে আপন মনে যখন নিজেদের মধ্যে ভাব, ভালোবাসার কথা বলছি, শুভেন্দু তখন আপনমনে বাদাম চিবোতো। আর মুখে বলতো, ‘তোরা প্রেম কর। আমার ভাই বাদামই ঠিক আছে।
 
শুক্লা চলে যাবার পরে শুভেন্দুর সেই বিদিশাকে দেওয়া চিঠিটা হাতে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে দেখছিলাম, আর পুরোনো কথাগুলো আবার মনে পড়ে যাচ্ছিল।
 
মা, ঘরে ঢুকে বললো, ‘তোর মনে হচ্ছে কাজে বেরোনোর আজ বারোটা বেজে গেল। কোনো তাড়া নেই, সেই সকাল থেকে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লি। তারপরে এখন আবার বসে বসে কি ভাবতে শুরু করেছিস?’
 
আমি বিদিশার কথাই ভাবছিলাম, মাকে সেভাবে বলতে পারলাম না। শুধু বললাম, ‘মা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে খুব দোটনায় থাকতে হচ্ছে। ভাবছি, কি সিদ্ধান্ত নেবো?’
 
মা বললো, ‘কি সিদ্ধান্ত?’
 
- ‘সেটা তোমাকে এখনি বলা যাবে না। আমি পরে বলবো।
 
মা বললো, ‘তুই তো সব কথা আমাকে সেভাবে বলিস না। নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখিস। যদি মনে করিস বলবি না। তাহলে বলিস না। আমি আর কি বলবো?’
 
মাকে বললাম, ‘তোমাকে আজ অবধি কোনোকিছু কি আমি লুকিয়েছি? তুমি তো সবই আমার পুরোনো কথাগুলো জানো। আমার অতীতে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, সেগুলোই মাঝে মাঝে বসে আমি ভাবি। কলেজের দিনগুলোর কথা এতদিন বাদে মনে পড়ে যাচ্ছিল। তাই সকালে লিখছিলাম। তারপরে শুক্লাও এলো। এতদিন বাদে আমার বাড়ীতে প্রথম এসেছে, ওর সাথে কথা বলে ভালো লাগল। পুরোনো স্মৃতিগুলো মনকে নাড়া দিচ্ছে এই আর কি।
 
মা বললো, ‘শুক্লা তোকে কিছু বলেছে?’
 
অবাক হলাম। বললাম, ‘না কই কিছু বলেনি তো। কি বলবে?’
 
মা বললো, ‘আমি শুনেছি আড়াল থেকে। ও বিদিশার কথা বলছিল। বিদিশা নাকি ফিরে এসেছে কলকাতায়। ওর স্বামীকে ছেড়ে।
 
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, মাও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দেখছে জবাবে আমি কি বলি?
 
মাকে বললাম, ‘কেন তুমি শুনে খুশি হও নি? বিদিশা ফিরে এসেছে।
 
একটা চাপা দূঃখ। ঠিক আমারই মতন। মাকে বরাবরই দেখে এসেছি, আমার জন্য আফশোস করতে। মা আমার এমনই। যখন আমি দূখী তো মা দূখী। আবার আমি সুখি তো মাও সুখী। যেভাবে ছেলের মুখে হাসি ফুটলে মায়েরও মুখে হাসি ফোটে, ঠিক সেভাবেই মা, আমাকে বললো, আমি তোর মুখে হাসিটা দেখে ফেলেছি। এতদিন বাদে তুই খুশী হয়েছিস। আমি কি খুশী না হয়ে থাকতে পারি?
 
আমি মাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, ‘খুশি হয়েছি মা, খুব খুশি হয়েছি। বিদিশা ফিরে এসেছে, আমার থেকে বড় খুশী বোধহয় পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
 
শুক্লার কথাটা মন থেকে মুছে ফেললাম। মনে মনে বললাম, যে মেয়েটিকে আমি এত ভালোবাসতাম, যার কথা আমি সবসময় ধ্যান করতাম, তাকে যদি এতদিন বাদে আবার দেখতে পাই, চোখ তো ফেরাতে পারবো না। বিদিশা যদি আমার খোঁজ করে, আমি নিশ্চই ওর কাছে যাবো।
 
মনে মনে বললাম, ভাগ্যিস, এই গল্পটার নাম, একটি ভালোবাসার মৃত্যু দিইনি। তাহলে বিদিশার ফিরে আসাটা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়তো।
 
বিকেল হতেই শুভেন্দুর বাড়ী যাব বলে তৈরী হয়ে নিলাম। অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি, ‘আজ আর অফিসে যাচ্ছি না। কিছু কাজ পড়ে গেছে। সুতরাং কালকে আবার আসছি যথারীতি।
 
শুভেন্দু বলেছে, সাতটার মধ্যে ওর ওখানে যেতে। আমি যখন বাড়ী থেকে বেরোলাম, তখন ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা বেজে দশ মিনিট। বাড়ী থেকে বেরিয়ে হন হন করে হাঁটতে হাঁটতে, বড় রাস্তার মোড় অবধি গেলাম। মনে হল, এই যাঃ। কিছু একটা আমি ফেলে এসেছি। খেয়াল হল, বিদিশাকে দেওয়া শুভেন্দুর ওই চিঠিটা বাড়ীতে ফেলে এসেছি। শুক্লা যেটা বাড়ী বয়ে এসে আমাকে দিয়ে গেল। শুভেন্দুকে দেখালে বেশ ভালো হত। বিদিশার কথা আমিও শুভেন্দুকে আগে থেকে বলতে পারতাম।
 
চিঠিটা তাড়াহূড়োতে আর পকেটে ঢোকানো হয় নি। খেয়াল হলো বসার ঘরের টেবিলের ওপরেই রেখে এসেছি। মার চোখে পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু ঐ চিরকূট দেখে মা আর কিছুই বুঝবে না। ওতে হিজিবিজি ছাড়া আর কিছু নেই।
 
কাঁকুড়গাছি মোড় থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম। ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, পিকনিক গার্ডেন যাবো। ট্যাক্সিওয়ালা বললো, বাইপাস ধরবো? আমি বললাম, যেদিক দিয়ে খুশি চলুন। আমার পিকনিক গার্ডেন পৌঁছোলেই হল।
 
ট্যাক্সিওয়ালা ফুলবাগান পেরিয়ে বাইপাশই ধরলো। বুঝলাম রুবী হসপিটাল থেকে তারমানে ডানদিকে টার্ণ নিতে হবে। আমি তাহলে ঠিক ছটার আগেই শুভেন্দুদের বাড়ীতে পৌঁছে যাবো।
 
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে ভাবছি, শুভেন্দুতো বলেছে সারপ্রাইজের কথা। রনিও ওখানে থাকবে। তারমানে রনিও ব্যাপারটা জানে। অথচ শুক্লা বললো, শুভেন্দুর সাথে এ ব্যাপারে নাকি কোনো কথা হয় নি। বিদিশাকে শুক্লাই দেখেছে, কাল গড়িয়াহাটের মোড়ে। শুভেন্দু যে সারপ্রাইজের কথা বলছে, এটা তাহলে কোন সারপ্রাইজ?
 
কিছুতেই মাথায় কিছু এলো না। কত চিন্তা করলাম। ভাবলাম, বিদিশাকে কি তাহলে শুভেন্দুও দেখেছে শুক্লার মত? কিন্তু আমাকে ও বললো না কেন? অন্তত বিদিশার ব্যাপার হলে শুভেন্দু আমাকে লুকোবে না। এই কবছরে অনেক যন্ত্রণায় মরেছি। অনেক কষ্ট পেয়েছি। শুভেন্দু প্রথম প্রথম সান্তনা দিয়েছে আমাকে। পরে বলেছে, ছেড়ে দে বিদিশাকে। মনে কর, বিদিশা বলে তোর জীবনে কেউ কোনদিন ছিল না। আবার নতুন করে জীবনটাকে শুরু কর। সেই বিদিশাই যখন ফিরে এলো। শুভেন্দুর তো বলা উচিৎ ছিল।
 
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে শুভেন্দুকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলাম। এক চান্সেই ওকে পেয়ে গেলাম। শুভেন্দুকে বললাম, ‘আমি কিন্তু তোর ওখানে যাবো বলে রওনা দিয়ে দিয়েছি। ঠিক ছটার মধ্যেই আসছি।
 
শুভেন্দু হাসলো। বললো, ‘রনি থাকবে বাড়ীতে। আমি সাড়ে ছটার মধ্যে কাজ সেরে ঢুকবো। আর যে সারপ্রাইজটার কথা তোকে বলেছি, তার জন্য আরো আধঘন্টা তোকে অপেক্ষা করতে হবে।
 
মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। ওকে বললাম, ‘হেঁয়ালিটা রাখ না। কি সারপ্রাইজ দিবি, সেটা আগে থেকে বল না?’
শুভেন্দু বললো, ‘সারপ্রাইজ ইজ অলওয়েজ সারপ্রাইজ। আগে থেকে বললে, ওটা আর সারপ্রাইজ থাকে না। তুমি এসো। ধীরে ধীরে সব রহস্য উন্মোচন হবে। একটু অপেক্ষা কর বৎস।
 
শুক্লার সকালে আমার বাড়ীতে আসার ব্যাপারটা চেপে গিয়েই ওকে বললাম, ‘তুই কিন্তু যে সারপ্রাইজের কথা আমাকে বলছিস। ওটা আমি আগে থেকেই জানি। আমার জানা হয়ে গেছে, আজ সকালে।
 
শুভেন্দু বললো, কি জেনেছিস? আমাকে বল দেখি।
 
আমি বললাম, না থাক। বলবো না।
 
শুভেন্দু বললো, ‘বলবি না যখন তুইও চেপে থাক। দেখা যাক তোর জানার সাথে আমার সারপ্রাইজ মেলে কিনা
 
ফোনটা রাখতে রাখতেই আবার বললো, ‘তোর মুখে আমি অনেকদিন হাসি দেখিনি। আজ তোর মুখে আমি হাসি ফোটাবো।
 
আমি বুঝে গেলাম, তারমানে বিদিশার কথাই শুভেন্দু আমাকে বলতে চাইছে।
 
ট্যাক্সির কাঁচ দিয়ে কতগুলো ছেলে মেয়েকে হাত ধরাধরি করে ঘুরতে ফিরতে দেখছি। আর ভাবছি বয়সটা আমার দশবছর কমে গেছে। কি জানি হয়তো বিদিশারই জন্য।
 
রনির কথা ভেবে, রনিকেও একটা ফোন লাগালাম। রনি বললো, ‘কিরে দেব? তুই আসছিস তো?’
 
একটু আগেই শুভেন্দুর সাথে ফোনে কথা হয়েছে রনিকে সেটা বললাম। রনি বললো, ‘তোর জন্য আমি আর শুভেন্দু একটা পাত্রী ঠিক করেছি। তুই এলে, সেই মেয়েটিকে তোকে দেখাবো। শুভেন্দু যে সারপ্রাইজটার কথা বলেছে, ওটা সেই সারপ্রাইজ।
 
আমি বললাম, ‘পাত্রীটি কে?’
 
রনি বললো, ‘ধরে নাও খুব সুন্দরী। তবে এখন একটু বয়স হয়েছে। তবে সৌন্দর্য তার কমে নি। তোমার সাথে ভালো মানিয়েও যাবে, কোনো চিন্তা নেই। এবার একটু ধৈর্য নিয়ে তুমিও এসো। আর হ্যাঁ আজকে কিন্তু খুব সহজে তোমায় ছাড়ছি না। অনেক গান শোনাতে হবে, সেই রাত অবধি। যিনি আসবেন, তিনিও তোমার গান শুনবেন।
 
তারপর আবার হেসে রনি বললো, ওফ দেব, কতদিন তোর গান শুনি না। সেই কবে শুনেছিলাম লাস্ট। মনেই নেই। তারপর মনে হয় একযুগ হয়ে গেছে।
 
মোবাইলটা কানে ধরে নিজের ভেতরের আনন্দটা ওকে প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু রনি বললো, আজ তুই মুকেশের ওই গানটা আবার গাইবি। যেটা খুব গাইতিস আগে। বলে নিজেই গাইতে লাগলো -সুহানি চাঁদনী রাতে। হামে শো নেহী দেতে। তুমহারী প্যায়ার কী বাতে, হামে শো নেহী দেতে।
 
আমি ওর রকম দেখে হাসতে লাগলাম।
 
রনি ফোনটা ছাড়ার পরেই ধরে নিলাম, এ মেয়ে বিদিশা না হয়ে কিছুতেই যায় না। ও যা বলছে, তাতে আর রহস্যের কিছু নেই। শুক্লার মত শুভেন্দুও হয়তো দেখে ফেলেছে বিদিশাকে। রাস্তায় দেখতে পেয়ে ওকে ইনভাইট করেছে বাড়ীতে। আজ সেখানে আমিও যাচ্ছি। সামনা সামনি আজ আমরা আবার দুজনে মুখোমুখি।
 
বিদিশাকে আমি ভালোবাসতাম। সেই ভালোবাসার মধ্যে কোনো খুঁত ছিল না। জানি, ভালোবাসার মধ্যে যদি সততা থাকে, সে ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। সেদিন বিদিশা আমাকে ভুল বুঝেছিল, তাই আমার জীবন থেকে ও হারিয়ে গিয়েছিলো। বিদিশার যখন ভুলটা ভাঙলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। কিন্তু আমার এই স্বচ্ছ ভালোবাসাই ওকে আবার ফিরিয়ে আনলো আমার কাছে। এই পৃথিবীতে দেবকে ছেড়ে বিদিশা আর যাবে কোথায়?
 
আমার মনে আছে, কলেজে বিদিশার সাথে যখন প্রেম শুরু করলাম, তখন রনি কত পেছনে লেগেছে আমাদের। বিদিশার সাথে ফাজলামী আর খুনসুটি তো করতোই এছাড়া আমাকেও কখনো কখনো ছাড়তো না। একদিন খুব গুরু গম্ভীর ভাবে আমাকে বললো, ‘দেব, একটা কথা খুব সিরিয়াসলি ভাবে তোকে জিজ্ঞাসা করছি। এখনো অবধি বিদিশাকে তুই কটা চুমু খেয়েছিস? গালে, কপাল আর ঠোঁট মিলিয়ে কটা?’
তারপর আবার নিজেই হেসে বললো, ‘গুনে দেখিস নি, তাই না বল?’
 
রনিকে কোনদিন কাব্যিক হতে দেখিনি, আমাকে বলেছিল,‘প্রেম যখন হৃদয়ে আসে, তখন পুরুষ বা রমনী কি চায় জানিস? সে নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়। বাঁচিয়ে রাখতে চায়, লালন করতে চায় তার প্রেমকে। সবার উপরে থাকে সমর্পনের ইচ্ছে।একেবারে পি সি সরকারের ম্যাজিকের মতন। এক ঝলক চাহনি, একটু ঠোঁটের কাঁপন, মাথাটা হেলিয়ে রাখা, হাতের আঙুলের নড়াচড়া। এর প্রত্যেকটিই প্রেমকে জাগিয়ে তুলতে পারে। ঠিক ম্যাজিকের মতন। কিন্তু খুব সাধারণ ম্যাজিক।
 
রনির কথা ভাবছিলাম আর বিদিশার মুখটাকে চিন্তা করছিলাম, ট্যাক্সিতে যেতে যেতে হঠাৎই আমার মনে হল, বিদিশার মুখটা যেন আমার মুখের খুব কাছে। সেই আগে যেরমকম গরম নিঃশ্বাস ফেলতো আমার ঠোঁটের ওপরে। প্রথমবার চুমু খেতে গিয়ে ওর ঠোঁটটা একটু কেঁপে গিয়েছিল। কিন্তু আমি যখন ওর ঠোঁটে প্রেমের চিহ্ন এঁকে দিলাম, ও জড়িয়ে ধরলো আমাকে। প্রজাপতির মত বিদিশার আঙুলগুলো আমার পিঠে তখন খেলা করছে। বিদিশার ঠোঁটের ওপর আমার ঠোঁট। বিদিশার পায়ের ওপর আমার পায়ের উষ্ণ চাপ। দ্রুত নিঃশ্বাস একসাথে মিশে যাচ্ছে। আঙুল গুলো দিয়ে বিদিশা আমার পুরো শরীরটাকে এমন ভাবে খেলাচ্ছে, যেন শরীরের প্রতিটি কোনকে জানার জন্য ও কত অধীর। জড়িয়ে ধরে বিদিশাকে আমি বলছি, ‘বিদিশা, ভালোবাসাটাকে আমি অমর করে রাখতে চাই। তুমি আমাকে কোনদিন ভুলে যাবে না তো? বিদিশার মুখ দিয়ে শুধু গোঙানির মত শব্দ। দুটো ঠোঁট তখন ভালোবাসার আলিঙ্গনে আবদ্ধ। আমাকে জড়িয়ে ধরে বিদিশা বলছে, ‘না গো না। আমি কি তোমাকে ভুলে যেতে কখনো পারি?’
 
ভালোবাসার বেশী সুখ নাকি কপালে কখনো সয় না। মূহূর্তগুলো সব ঝাপসা হয়ে যায়। এই বুঝি শুরু হল। আর কদিন পরেই সব শেষ। মনে হল, বিদিশার মুখটাকে আমি দেখছিলাম এতক্ষণ। তারপরেই ওর মুখটা কেমন ঝাপসা ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল আসতে আসতে। আমার মুখের কাছে বিদিশার মুখটা আর নেই, হঠাৎ দেখছি ওখানে মিনুর মুখটা চলে এসেছে। বিদিশার ঠোঁটদুটোও নেই। ওখানে মিনুর ঠোঁট দুটো চলে এসেছে।
 
মূহূর্তে মুখটা কেমন পাথরের মত হয়ে গেল আমার। মনে পড়ল, মিনুর বাড়ীতে সেদিন কি ঘটেছিল।
 
সেদিন ছিল শনিবার। বাবা বলতেন, শনিবার দিনটা আমার কাছে নাকি শুভ নয়। শনি যদি ঘাড়ে চেপে বসে, তাহলে তো আরো মুশকিল। সেদিন মিনু হয়েছিল আমার শনি। তখন ঠিক সন্ধে সাতটা। মিনু আমাকে বাড়ীতে ডাকলো। আগের দিন সৌগতর বিয়েতে গিয়েছিলাম। সারারাত সৌগতর বাসরে জেগেছি। অনেক রাত অবধি হৈহুল্লোর আর গানবাজনা হয়েছে। শরীরটা এমনি খারাপ। মিনুকে বললাম, ‘আজ ছেড়ে দে মিনু, আজ আমার বাড়ী থেকে বেরোনোর একদম ইচ্ছে নেই।
 
মিনু শুনলো না। বললো, ‘তোকে কি এমনি এমনি আমি বাড়ীতে ডাকছি? কারন তো একটা আছে। তুই আয়। আমি দশমিনিটের মধ্যে তোকে ছেড়ে দেবো।
 
জানতাম না সেদিন বিদিশাও আমার বাড়ীতে এসে হাজির হবে। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছি, মিনুর বাড়ী যাবো বলে। তার ঠিক একঘন্টা পরেই বিদিশাও আমার বাড়ীতে এসে হাজির। আমাকে দেখতে পাইনি। মাবলে দিয়েছে আমি মিনুর বাড়ী গেছি। বিদিশাও আর অপেক্ষা করেনি।
 
বিদিশার ভীষন রাগ ছিল মিনুর ওপর। কলেজে কোনদিন দাঁড়িয়ে কথা পর্যন্ত বলেনি মিনুর সঙ্গে। মিনুর বাড়ীতে আমি যাই, সেটা ওর বোনকে গান শেখানোর জন্য হলেও বিদিশার একেবারেই পছন্দ হতো না। সৌগতর বিয়ের দিন এই নিয়ে একটু মুখ ভার করেছিল বিদিশা। আমি ওর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছি। বিদিশা বললো, ‘আমি তো বলেছি মেয়েটা ভালো নয়। তুমি তাও শুধু শুধু। কি পাও তুমি ওখানে গিয়ে?’
 
বিদিশাকে কথা দিয়েছিলাম, আর মিনুর বাড়ীতে যাবো না। কিন্তু সেদিন নিয়তি আমাকে ডেকে নিয়ে গেল মিনুর কাছে।
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 12:05 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)