Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak
#3

 
এটা ঠিক, আজকাল যেভাবে প্রেম ভালোবাসা হয়, আমাদের সময় প্রেমটা এরকম ছিল না। তখন প্রেমটা দানা বাঁধতে একটু সময় নিত। একটু বোঝাপড়ার জন্য সময় লাগত। বিদিশা আমাকে চিঠিতে দুলাইন লিখেছিল, ‘‘আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমিও কি তাই?’’
 
মেয়েটাকে যতবারই দেখেছি আমার মন্দ লাগেনি। রূপ আছে, গুনও আছে নিশ্চই। কিন্তু ওকে পাবার জন্য আমার মধ্যে তখনও ব্যাকুলতাটা আসেনি। সেইভাবে ছটফটানিটাও অনুভব করিনি। মনে হয়েছিল এতই কি সহজ? ও বলল, আমাকে মেনে নিতে হবে? সত্যি ভালবাসে কিনা একবার যাচাই করে নেওয়া তো দরকার।
 
শুভেন্দু বলল, ‘দেবতুই না দিনকে দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিস। আরে ও তোকে প্রেম নিবেদন করল। ওর ভালোবাসাটাকে অ্যাকসেপ্ট কর। কলেজে সবাই তোকে নিয়ে মাতামাতি করে বলে, তুই একটু দেমাকী হয়েছিস। দেখতো মেয়েটা কেমন সরল, সুন্দর। পুরুষেরা চিরদিন এমন নারীকেই ভালবেসে এসেছে যার স্নিগ্ধ কোমলতা ব্যাটাছেলেদের শান্তি দিতে পারে। বিদিশার মত মেয়ে আর একটা খুঁজে পাবি তুই?
 
ঠিক ঐ মূহূর্তে কোন চিন্তা আমার মাথায় এল না। ভাবলাম,শুভেন্দু যা বলছে, তার ঠিক কতটা সত্যি? সুন্দরী নারী বিদিশা। আমার মধ্যে কি এমন ও দেখল, যে আমাকে ওর ভালো লেগে গেল।
 
শিয়ালদহর কাফেটোরিয়াতে পরের দিন আমরা সবাই বসে আছি। ঠিক ঐ সময়ে বিদিশাও ওখানে এসে উপস্থিত। শুভেন্দু, রনি, সৌগত আর আমি চারজনেই আমরা বিদিশার মুখের দিকে তাকালাম। ওরা তিনজনে বিদিশাকে দেখে খুব খুশি হল। কিন্তু আমি ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।
 
শুভেন্দু বলল, কি রে দেব? তুই কি ওকে খেলাচ্ছিস?
 
আমি কোন জবাব দিচ্ছি না।
 
রনি কিছু জানে না, এমন ভাবে শুভেন্দুকে বলল, কি হয়েছে রে শুভ? দেব কাকে খেলাচ্ছে?
 
শুভেন্দু বলল, ঐ যে মেয়েটাকে দেখছিস, দেবের খোঁজে এখানে পর্যন্ত চলে এসেছে। দেব ওকে খেলাচ্ছে।
 
আমি রেগে গেলাম। বললাম, কি যাতা বলছিস? আমি কাউকে খেলাচ্ছি না।
 
রনি বলল, কি হয়েছে ব্যাপারটা? আমাকে খুলে বল দেখি।
 
শুভেন্দু, বিদিশার চিঠি দেবার ব্যাপারটা ওকে সব খুলে বলল। তাই শুনে রনি বলল, ওরে দেব। এই ছিল তোর মনে? ঠিক আছে তুই যদি ওর সাথে লাইন মারতে না চাস, তাহলে বল, আমিই লাইন মারা শুরু করছি।
 
বিদিশাকে আমাদের মাঝে রনিই ডেকে বসালো। ততক্ষণে শুক্লাও ওখানে এসে উপস্থিত। বিদিশা আমারই উল্টোদিকের চেয়ারটায় এসে বসেছে। ও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে। আমি মুখ নিচু করে বসে আছি। রনি বলল, এই যে বিদিশা, আমাদের এই বন্ধু মাননীয় শ্রী দেব মহাশয় কে দেখছো তো। ইনি খুব লাজুক প্রকৃতির। ইনি যখন গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন, তখন ইনার মুখ দিয়ে মধু ঝরে পড়ে। কিন্তু প্রেম নিবেদনে ইনি একটু কাঁচা। ইনার গলা দিয়ে তখন আওয়াজ বেরোয় না। কন্ঠস্বর রোধ হয়ে থাকে। জিভে আড়ষ্ঠতা এসে যায়। তুমি একে বাদ দিয়ে বাকী তিনজনের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয় কিনা দেখোতো? দেব মনে হচ্ছে ঠিক খেলতে চাইছে না তোমার সঙ্গে।
 
ইচ্ছে হচ্ছিল রনির পাছায় ক্যাঁত করে একটা লাথি মারি। ও বিদিশার সামনে আমাকে জেনেবুঝেই বেইজ্জ্বত করছে, সেটাও বুঝতে পারছি। কোন কথা না বলে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বিদিশার হাতটা ধরলাম। ওকে বললাম, এসো তো তুমি আমার সঙ্গে। এসব ফালতু ছেলেদের সাথে মুখ লাগিয়ে কোন লাভ নেই। চলো আমরা বরং আলাদা কোথাও গিয়ে বসি।
 
বিদিশার হাত ধরে ওকে আমি ক্যাফেটরিয়া থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছি। পেছনে একবার তাকিয়ে দেখলাম, রনি হাসছে। ওকে দেখে বাকীরাও হাসছে। রনি হাসতে হাসতে বলল, এই তো গুরু জেগেছে। কেয়া বাত কেয়া বাত। এই না হলে দেব।
 
শুভেন্দু হাসতে হাসতে বলল, যাঃ এই বিদিশা এলো। আর অমনি তুই আমাদের ভুলে গেলি? তুই কি স্বার্থপর রে। দেব যাস না আমাদের ছেড়ে। তাকা, একবার তাকা। প্লীজ প্লীজ।
 
আমরা বাইরে বেরিয়ে এসেছি। ওদের হাসির আওয়াজটা তখনও ভেতর থেকে আসছিল। বিদিশা একটু দূরে গিয়ে বলল, তোমার চিঠিটা আজকেই পেয়েছি। শুভেন্দু আমার হাতে তোমার চিঠিটা দিয়ে বলল, দেব তোমাকে চিঠি দিয়েছে আর কাফেটরিয়াতে আসতে বলেছে। এই নাও দেবের চিঠি।
 
আমি বললাম, কই দেখি। চিঠি? কই আমি তো চিঠি লিখিনি তোমাকে।
 
বিদিশা একটা কাগজ দিল আমার হাতে। বলল, যাঃ তা হয় নাকি? তুমিই তো লিখেছ। নইলে কে আবার লিখবে?
 
খুলে দেখলাম। তাতে আমারই নামকরে বিদিশাকে চিঠিটা লেখা হয়েছে,
 
বিদিশা,
আমি তোমার চিঠি পড়লাম। জানি না, তোমার ভালবাসাকে আমি কিভাবে গ্রহন করব? আমার মত অতিসাধারন একটা ছেলেকে তুমি ভালবেসে ফেলেছ। মুখ ফুটে আমিও এতদিন বলতে পারিনি। আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি বিদিশা। এ জীবনে কেন, জনমে জনমে আমি তোমাকে চাই। আমার ভালোবাসা তুমিও কি গ্রহন করবে? তাহলে আজকে কাফেটরীয়াতে অবশ্যই এসো। আমি ওখানে তোমার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করব। ইতি তোমার দেব।
 
চিঠিটা পড়ার পর আমি আর বিদিশাকে কিছু বলিনি। ওকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম কলেজ স্কোয়ারে। দুজনে নিরিবিলিতে বসে অনেক্ষণ কথা বলেছিলাম। ফিরে এসেছিলাম সন্ধে হবার পর। তারপর পরপর দুদিন শুভেন্দু কলেজে আর আসেনি। যেদিন এসেছিল, ওকে খুব তাড়া করেছিলাম। কলেজ গেট থেকে একেবারে বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত। আমার তাড়া খেয়ে কান ধরে শেষ পর্যন্ত হাসতে হাসতে শুভেন্দু বলেছিল। মাফ করে দে বস। এটা তো করতেই হত। নইলে তোদের প্রেম পর্বটা যে শুরু হতে হতেও বাকী থেকে যেত। বিদিশারও আফশোস থাকত না। আর আমাদের তো নয়ই।
 
আসলে ওরা সবাই এটা জানত। শুভেন্দু সবাইকে বলে রেখেছিল। এমনকি শুক্লাকেও। সেদিন কাফেটরিয়াতে ওরা কেউ বুঝতে দেয়নি আমাকে। এমনকি রনিও নয়। আজ মনে পড়ে সেসব কথা। আর ভাবি বন্ধুত্বটা আমাদের এমনই ছিল।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 11:53 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)