Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak
#1
আজ থেকে প্রায় দুবছর আগে এক্সবীতে আমার প্রথম লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। সিরিজা উপন্যাস লেখা শুরু করে অগুন্তি পাঠকদের ভালোবাসা আমি পেয়েছি। তারপরেও অনেক গল্প উপন্যাস আমি লিখেছি। সিরিজার পরে দ্বিতীয় উপন্যাসের একক থ্রেড হিসেবে এই উপন্যাসটি আজ থেকে আমি লেখা শুরু করলাম। জীবনের কিছু পুরোন স্মৃতি, টুকরো কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমার এই উপন্যাস জীবন যেরকম। কাহিনীতে বর্ণিত, কিছু চরিত্র বাস্তব, তবে সবটুকু সত্যি নয়। গল্পের প্রয়োজনে কিছু কাল্পনিক চরিত্রও রাখা হয়েছে। যারা আমার লেখা পড়তে ভালবাসেন, আশাকরি জীবন যেরকম আপনাদের ভালো লাগবে। এই গল্পে ফ্যানটাসীর প্রয়োগ অবশ্যই আছে, তবে তা সবটুকুই কাহিনীর প্রয়োজনে। জীবনের গল্প। তাই একটু অন্যরকম ভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। যারা মৌলিক গল্প পছন্দ করেন, তাদেরও এই উপন্যাস নিরাশ করবে না। আশাকরি আগের মতই আপনাদের ভালোবাসা পাব। আমি চেষ্টা করব, প্রতি নিয়ত সম্ভব হলে প্রতিদিনই এই উপন্যাসের আপডেট দেবার। তবে কর্মব্যাস্ততার দরুন যদি কোনদিন আপডেট দিতে সক্ষম না হই। পাঠকরা আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ইতি আপনাদের লেখক। 
 
জীবন যে রকম
 
এক
 
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মত খবরের কাগজটা তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম। মা বলল, ‘আজ তো খবরের কাগজ দেবে না রে খোকা। কাল যে ছুটী ছিল তোর খেয়াল নেই?’ সত্যি তাই। কাল যে ছুটী ছিল একেবারেই ভুলে গেছি। ২৬শে জানুয়ারী, প্রজাতন্ত্র দিবস। সর্বভারতীয় ছুটী। আগামীকাল এই প্রত্রিকার কোন সংষ্করণ প্রকাশিত হবে না। হেড লাইনটা দেখেছি, কিন্তু একেবারেই মনে নেই।
 
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটা পড়ি। রোজ একবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাগজ পড়ার অভ্যাসটা আমার চিরদিনের। রাজনীতি থেকে খেলাধূলা। কোথায় কি ঘটেছে, সব যেন একবার ভাল করে চোখ বুলোনো চাই। কাগজ পড়ে তারপর স্নানে ঢুকি। অফিসে যাওয়ার তাড়া থাকে বলে, লেখালেখিগুলো সকালের দিকে একদমই হয় না। তরকারীর সাথে দুটো রুটি। মুখে কিছু দিয়েই অফিসের জন্য তারপরে আমাকে বেরোতে হয়।
 
ভাবছিলাম, স্নানটা তাহলে সেরে নেব কিনা? আজ একবার শুভেন্দুর বাড়ী যেতে হবে। কি জানি, এতদিন পরে আমাকে কেন ডেকেছে শুভেন্দু? অফিস থেকে বেরিয়ে পিকনিক গার্ডেনে যেতে একঘন্টা সময় লাগবে। শুভেন্দু বলেছে ‘‘ঠিক সাতটার মধ্যে আসবি। তোর জন্য অনেক সারপ্রাইজ আছে।’’
 
পুরোন দিনের স্মৃতিগুলো এখনও যখন মনে পড়ে, ভালো লাগে। সেদিনের সেই উচ্ছ্বল, আনন্দমুখর জীবন, আর আজকের কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে যেন কত ফারাক। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো। মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে সেই চেনা পরিচিত মুখগুলো। শুভেন্দু, শুক্লা, সৌগত, মিনু আর রনি। আর সাথে বিদিশা তো আছেই।
 
জানি না ওরা এখন সব কোথায়। বিদিশা বিয়ে করে মুম্বাই চলে গিয়েছিল। ওর স্বামী ওখানে ভালো কোম্পানীতে চাকরি করে। সৌগতও বিয়ে করল। বউটা ভারী মিষ্টি। মুখটা একেবারে প্রতিমার মত। বিয়েতে আমাদের সবাইকে নেমতন্ন করেছিল। সবাই আমরা গিয়েছিলাম। বৌভাতে যাইনি কেবল বিদিশা। সেদিন ওকে খুব মিস করেছিলাম। শেষবারের মতন দেখতে চেয়েছিলাম। সে সুযোগ আর হয় নি। বিদিশা সৌগতকে কথা দিয়েছিল, বৌভাতে আসবে, তাও আসেনি। হয়তো আমারই জন্য। বুকের মধ্যে চাপা এক দূঃখ নিয়ে গুমড়ে গুমড়ে অনেকদিন মরেছি বিদিশার জন্য। ভেবেছিলাম, শেষবারের মতন ওকে একবার দেখব। বিদিশাকে উইশ করব। ওকে বলব, ‘‘বিদিশা, তোমার বিবাহিত জীবন সুখময় হোক। দেবকে চটকরে ভুলে যেতে তোমারও হয়তো কষ্ট হবে জানি। কিন্তু কি করবে? এটাই তো জীবন। আমিও তোমার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আর বাঁচতে চাই না। যা হয়েছে এটাকেই ভাগ্যের পরিহাস বলে আমি মেনে নেবো। তুমিও তাই মেনে নাও।’’
 
সেদিন শুভেন্দু আমাকে বলেছিল, ‘‘সত্যি দেব, তোর জন্য আমার দূঃখ হয়। মিনুটা যে কি করল। সবকিছু জেনেও ও তোর ক্ষতিটা করল। বিদিশা তোকে ভুল বুঝল। যখন সত্যিটা জানতে পারল। তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।’’
ভালবাসার খেসারত দিতে দিতে একদিন ভালবাসাটাই এভাবে মিথ্যে হয়ে যায়। জানি বিদিশা আমাকে হয়তো ক্ষমা করে দেবে। কিন্তু ওকে কি আমি সত্যি ভুলে যেতে পারব? কখনই নয়। আমি তো প্রেম কি তাই জানতাম না জীবনে। বিদিশাই শিখিয়েছিল হাতে হাত ধরে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কখনও কলকাতার রাজপথে, কখনও ভিক্টোরিয়ায়, কখনও ইডেন গার্ডেন এ কিংবা গঙ্গার পাড়ে, দুজনের ভালোবাসার একে অপরকে পাওয়ার আনন্দ এক অনুভূতি। যেন এক আচ্ছন্ন করা তীব্র সুখ। সেদিন বিদিশা আমাকে বলেছিল, ‘‘আমাকে ছাড়া দেবতুমি কোনদিন সুখী হতে পারবে না জানি। আর আমিও তোমার সঙ্গ ছাড়া কোনদিন সুখে থাকতে পারবো না। জেনে রেখো বিদিশা যদি দেবকে কোনদিন কাছে না পায়, তাহলে বিদিশা মরে যাবে।’’
 
বিদিশার সেদিনের সেই কথাগুলো আজও আমার মনে আছে। দুনিয়াটা এরকমই। কেউ কারুর জন্য মরে না। অথচ সবাই নাকি মরতে চায়। এই আমি কেমন দিব্যি বেঁচে আছি। বিদিশাও হয়তো তাই। মরার কথা তুলে ভালবাসাটাকে সেদিন হয়তো আরো শক্ত মজবুত করতে চেয়েছিল বিদিশা। কিন্তু ও আর আমি, কেউ আমরা ভালবাসাটাকে ধরে রাখতে পারিনি। সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিদিশার মনটাকে ছাড়খাড় করে দিয়েছিল। ভেবেছিল, আমি বুঝি ওর প্রতি আর আসক্ত নই। কলেজে আমাদেরই সহপাঠিনী মিনুতখন আমার প্রেমে মত্ত। বিদিশার কাছ থেকে মিনু আমাকে ছিনিয়ে নিতে চায়। যে কোন মূল্যে মিনু হাসিল করতে চায় আমাকে। সেদিনের সেই বর্ষামুখর কালো রাত। মিনু নির্লজ্জ্বের মতন একটা কান্ড করে বসল। আর তা দেখে বিদিশাও হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকে। হারিয়ে গেল প্রেম। পড়ে রইল কিছু টুকরো স্মৃতি। জীবনের সেই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যদি অধ্যায়কারে লিখতে বসি, তাহলে একটা বড় উপন্যাস তো হবেই। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভাবছি, তাহলে শুরু করি আজ থেকে। দেখাই যাক না শেষপর্যন্ত কি হয়।
 
মা বলল, কি রে খোকা? জল গরম করবি না? নাকি এই ঠান্ডা জলেই চান করবি? সর্দি লেগে যাবে যে। সকালবেলা গানের রেওয়াজে অসুবিধে হবে।
 
ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন একঘন্টা গানের রেওয়াজ করি। একথাটা বলা হয় নি। ক্ল্যাসিকাল গানের চর্চাটা যেটা শুরু করেছিলাম। আজও রয়ে গেছে। বাবা বলতেন, পড়াশুনা ছাড়া, একমাত্র গানের মধ্যেই মা সরস্বতীকে পাওয়া যায়। তোর গলা এত ভালো, রেওয়াজ কোনদিন ছাড়িস না। বাবা আজ নেই, কিন্ত তাঁর কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছি। মনে পড়ে বিদিশা, কলেজে আমার গান শুনেই কেমন পাগল হয়ে গিয়েছিল আমার প্রতি। ও বলেছিল,তোমার গলা এত মিষ্টি। মনে হয় ঠিক যেন মধু ঝরে পড়ছে গলা দিয়ে।
 
শুধু বিদিশা কেন? অনেক মেয়েকেই গান শুনিয়ে তাদের মন জয় করে নিয়েছিলাম। তারা সবাই যে আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছিল তা ঠিক নয়। আসলে বিদিশা জীবনে এসে যাওয়াতে, অন্যকারুর প্রেমিক হতে আমারো ঠিক মন চায়নি। ভালবাসা আর প্রেমটা ছিল স্বচ্ছ, গাঢ়। একে অপরকে অঙ্গীকার করার মতন। একটা মেয়েকে ভালবেসে, তার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আমিও চাই নি। প্রেমের মধ্যে কোন দাগ ছিল না। আমার ভালোবাসায় কোন ছল ছিল না। প্রগাঢ় ভালবাসায় কলঙ্ক যেটা এল, সেটা শুধু মিনুর জন্য। মিনুও আমার গানের পাগল ছিল। বিদিশাকে জব্দ করার জন্যই ও এই খেলাটা খেলল।
 
কলেজের পরে মিনুর সাথে অনেকবারই দেখা হয়েছে। এই কবছরে মিনু যেন আরো অনেক পাল্টে গেছে। ওকে এখন দেখলে মনে হয়, পুরুষ ধরায় ও যেন গিনিসবুকে নাম তুলতে চলেছে। আমার পরেও কত ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করল। সঙ্গী বদলানোর তাগিদে চার চারটে বিয়েও করল। কিন্তু কারুর সাথেই সেভাবে কোনদিন একাত্ম হয়ে ঘর করতে পারল না। মিনু বলতো, আমি এখনও রাইট পার্টনারটাকে খুঁজছি। যেদিন পাবো, সেদিন আমি এই খেলাটা ছেড়ে দেবো। বছর তিনেক আগে মিনুর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল। তখন ও যে লোকটার সাথে আমায় আলাপ করিয়েছিল,সেটা ওর ফোর্থ হাজব্যান্ড। ভদ্রলোক নাকি দুবাইতে অনেকদিন ছিলেন। পয়সাওয়ালা। মিনু তাকে ফাঁসিয়েছে এবং দিব্যি ঘর করছে তার সাথে। এরপরে অবশ্য মিনুর খবর আর জানিনা।
 
শুক্লা মেয়েটা একটু অন্যস্বভাবের। সৌগতর সাথে ও কিছুদিন ভাব করল আমার আর বিদিশার মতন। তারপর সৌগত বিয়ে করল। শুক্লাও বিয়ে করে নিল আরএকজনকে। পরে শুনেছিলাম, সৌগতকে বিয়ে করা নিয়ে নাকি মত দেয়নি শুক্লার বাবা মা। অথচ ভাগ্যের এমনই পরিহাস। একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই, শুক্লার সাথে ওর স্বামীর ছাড়াছাড়ি। এখন শুনেছি, শুক্লা নাকি একা থাকে। সল্ট লেকে একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। ব্যাঙ্কে ভালো চাকরি করে বলে লোন পেতে নাকি অসুবিধে হয় নি। সৌগতর বিয়েতে শুক্লাও এসেছিল। দেখলাম পুরোনো অ্যাফেয়ারটা ভুলে গেছে ওরা দুজনেই। বিয়েবাড়ীতে শুক্লাকে পেয়ে সৌগত স্বাভাবিক। শুক্লাও তাই। যেন দেখে মনে হবে না। এই দুজনেও আমার আর বিদিশার মতন হাত ধরাধরি করে ভিক্টোরিয়াতে ভিজেছিল একদিন। সেদিন শুভেন্দু আমাদের চারজনকে দেখে হাসতে হাসতে ভিক্টোরিয়ার ভেতরটায় পুকুরটায় পড়ে গিয়ে কিছুতেই আর উঠতে পারে না। পরে জেনেছিলাম, ও জলকে ভীষন ভয় পায়, সাঁতার জানে না। আমাকে বলল, ‘‘কি করব? তোদের যা রকম দেখলাম, হাসতে হাসতে পা পিছলে পুকুরটার মধ্যে পড়ে গেলাম। জলের মধ্যে পড়ে গিয়ে দেখি, আর কিছুতেই উঠতে পারি না।’’
 
আমি আর সৌগত দুজনে শুভেন্দুর হাত ধরে ওকে টেনে তুলেছিলাম জল থেকে। আসলে বিদিশা বৃষ্টিতে মাথা বাঁচানোর জন্য ওর শালোয়ারের ওড়নাটা আমার মাথায় দিয়েছিল। ওড়নার তলায় আমি আর বিদিশা তখন একটু একে অপরকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছি। তাই দেখে সৌগত আর শুক্লাও তাই করতে লাগল। শুভেন্দু গিয়েছিল বাদাম কিনতে। ফেরার পথে ওড়নার তলায় আমাদের চারজনকে চুমোচুমি করতে দেখে ও হেসে অস্থির। প্রথমে আনন্দে কিছুটা নাচতে চেষ্টা করল। তারপর হেসে একেবারে কুতিয়ে পড়ছে। সেই সময়ই পা পিছলে একেবারে পুকুরের জলে। আমি আর সৌগত ছুটে গেলাম। বিদিশা বলল, ধরো ধরো ওকে ধরো। যা আজকে করলো। সব আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল।
 
মনে পড়ে সেই সব দিন। আজও ভাবি পুরোনো দিনগুলোতে একবার যদি ফিরে যেতে পারতাম। যদি বয়সটা কমে গিয়ে আবার সেই কলেজের দিনগুলোর মতন হৈ চৈ আর মাতামাতিতে মেতে উঠত। আনন্দ আছে, আছে হূল্লোরবাজী, ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যান্টিনে কেটে যাওয়া, কফি হাউসের বড় টেবিলটাকে দখল করে দেদারে ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের প্রানখোলা আড্ডা মারা। এছাড়া প্রতি শুক্রবার নতুন কোন ছবি রিলিজ করলে, অ্যাডভান্স টিকিট কেটে আবার দেখা চাই। হিট ছবির গানগুলো আমি ক্যান্টিনে বসে গাইতাম। মাঝে মাঝে প্রিন্সিপাল ওপর থেকে নিচে নেমে আসতেন। আমাকে বলতেন, ‘‘দেব তোমার গলা ভালো আমি জানি, তা বলে পড়াশুনাটাও তো মন দিয়ে করো। সামনে বি এস সি ফাইনাল পরীক্ষা। তুমি যে কি রেজাল্ট করবে, আমার তোমাকে নিয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে।’’
 
আমি এক চান্সে বি এস সি পাশ করেছিলাম ঠিকই। তবে কলেজ ছেড়ে দেবার পর ক্যান্টিনের ভেতরটা পুরো বদলে গিয়েছিল। সরস্বতী পূজোয় একবার করে যখন যেতাম। তখন দেখতাম ক্যান্টিনের ভেতরে কাঠের টেবিলগুলো আর নেই। ওখানে সব বাঁধানো সিমেন্টের টেবিল হয়ে গেছে। আসলে আমার গানের সাথে টেবিল বাজিয়ে এমন নাচানাচি হত, আওয়াজটা প্রিন্সিপালের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যেত। আমাকে উনি বকা দিতেন, আবার ভালও বাসতেন। কারন কলেজের প্রতিবছরের কালচারাল প্রোগ্রামটা, আমাকে বাদ দিয়ে যে হত না। ঐ প্রোগ্রামে আমি নিজে গাইতাম সবার প্রথমে। ভাড়া করা যারা আর্টিস্টরা আসত। তারা একে একে সব গেয়ে চলে যেত। কিন্তু আমাকে প্রোগ্রামের শেষেও অনেকের আবদার মেটাতে হত। কিসব ছিল সেইসব দিন। পুরোন দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বড় অদ্ভূত লাগে। ভাবি মানুষের জীবনটা অনেক স্বল্প দৈর্ঘ্যের। আনন্দটা কম, কষ্টটা বেশী হয়তো সেই জন্যই।
 
শুভেন্দু বলেছিল, ‘‘তুই বড্ড বেরসিক হয়ে গেছিস দেব। একা একা থাকিস, মাঝে মধ্যে সময় কাটাতে আমাদের কাছে তো আসতে পারিস। কি এক বিদিশাকে তুই ভালবেসে জীবনটা শুধু ওর স্মৃতিতেই কাটিয়ে দিলি। মেয়েদের মন বোঝা যে বড় শক্ত। দেখতো আমাকে, কাউকে ভাল না বেসে কেমন দিব্যি আছি আমি। ভাগ্যিস বিদিশার মত আমার জীবনে কেউ আসেনি। প্রেম যারা করে তারা সব মুর্খ হয়। পৃথিবীতে প্রেমের মত বোকামি আর কিছুতেই নেই। তুই না মানলেও আমি এটা প্রবলভাবে মানি। যারা তোর মত সারাদিন কেবল লেখালেখিতে ডুবে থাকে, তারাও দেখ, হয়তো তোরই মতন। কাউকে ভালবেসে বিফল হয়ে এখন এটাকেই জীবনের সঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়েছে। মাঝে মধ্যে একটু আড্ডাতে তাই আয়। ফুর্তীর আসর জমাই। গল্পগুজব করি। সাথে হূইস্কি কিংবা রাম অথবা ভদকা তো আছেই। তুই এলে আমার রনির দুজনেরই খুব ভালো লাগবে।’’
 
শুভেন্দুর পিকনিক গার্ডেনের বাড়ীতে বেশ কয়েকবার গেছি। আমার মত শুভেন্দুও এখনো বিয়ে করেনি। প্রতি শনি রবিবার নিয়ম করে রনিওর কাছে যায়। কলেজের সময় থেকেই রনির সাথে শুভেন্দুর একটা আলাদা খাতির ছিল। রনি বিয়ে করেছে শুভেন্দুরই বোন মাধুরীকে। ওদের এখন শালা জামাইবাবুর সম্পর্ক। আমাকে পেলে দুজনেই মিনু আর বিদিশার কথা তুলে প্রথমে একটু হাসি ঠাট্টা মশকরা করত। তারপর আর করে না। বিদিশাকে রনি একবার ঠাট্টা করে কলেজে বলেছিল, ‘‘দেবকে দেখে আমার খুব হিংসে হয়। তুই কি দেখে দেবের প্রেমে পড়লি বলতো? কেন? পাত্র হিসেবে আমি কি খারাপ ছিলাম? তোকে রাজরানী করে রাখতাম। নে এবার দেবকে বাতিল করে দে। কালীঘাটে গিয়ে দুজনে মালা দিই। আর দেবকে বলি, বিদিশা তোর সাথে প্রেম করে ভুল করেছিল, এখন পস্তাচ্ছে। তাই ওকে আমি বিয়ে করে নিলাম।’’
 
বিদিশাও কম যায় না। রনিকে বলেছিল, ‘‘শুভেন্দুর বাড়ীতে কার টানে তুই যাস, সেকী আমি আর জানি না? শুধু শুধু মেয়েটার মাথা খাচ্ছিস। আগে ওকে যে প্রতিশ্রুতি গুলো দিয়েছিস, সেগুলো পালন করার চেষ্টা কর। তারপর তোকে বলব, কেন আমি দেবের সাথে প্রেম করি। সত্যিকারের ভালোবাসা দেব রাখতে জানে। ও যদি কাউকে কথা দেয়, সেকথা ও রাখতে জানে।’’
 
রনি বলেছিল, ‘‘দেবকে নিয়ে তুই এত আদিখ্যেতা করিস কেন বলতো বিদিশা। পৃথিবীতে বুঝি দেবই একা ভালবাসতে জানে। আমরা কেউ ভালবাসতে জানি না?’’
 
বিদিশা বলেছিল, ‘‘মাধুরীকে কি তুই সত্যি ভালবাসিস?’’
 
রনি বলেছিল, হ্যাঁ।
 
বিদিশা বলেছিল, ‘‘তাহলে আবার আমার পেছনে পড়ছিস কেন? তার মানে তোর ভালবাসাটা মেকী। ওর মধ্যে কোন স্বচ্ছতা নেই। ঠিক আছে শুভেন্দুকে আমি বলছি, ও ঠিক জুতো পেটা করবে তোকে। বোনের সাথে প্রেম করা। মজা বার করে দেবে তোর।’’
 
সবই ঠাট্টার ছলনে কথাগুলো বলা। বিদিশা জানতো, রনি ইয়ার্কী মারছে, রনিও তাই। কেউ কারুর কথা গায়ে মাখেনি। শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু বোন মাধুরীকে বিয়ে করে রনি প্রতিশ্রুতি পালন করল। আর বিদিশার বলা কথাগুলো আমি রাখতে পারলাম না। জানি না হয়তো আমারই দোষে। মিনুকে বিশ্বাস করেছিলাম। মিনু সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমার রাখতে পারেনি। শুধু কয়েকটা ভুলের দোষে বিদিশা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল।
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
জীবন যে রকম -একটি উপন্যাস by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 11:51 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)