04-06-2020, 11:32 AM
দেবিকাকে জড়িয়ে ধরার পর ওর কন্ঠস্বর জড়িয়ে আসছিল। দুহাত দিয়ে আমার পিঠ খিমচে ধরে ও ভীষন তাড়াহূড়ো করতে লাগল। এক্ষুনি লিঙ্গটাকে ওর যোনিদ্বারে ঢুকিয়ে আমাকে আছড়ে পড়তে হবে। এমন ভাবে পা দুটো ছড়িয়ে আমার কোমরের ওপর তুলে দিয়ে ও চাপ দিতে লাগল, দেখলাম ওর ঠোঁটদুটো প্রায় মাছি খাওয়ার মতো কাঁপতে শুরু করেছে। আমার গলাদুটো জড়িয়ে বলল, শুরু করো না গো। অপেক্ষা করছ কেন?
আমি প্রথমে চুমু খাওয়ার জন্য মুখটা নামিয়ে আনলাম। উদগ্র কামনা, আমার থেকে দেখলাম, ওর মধ্যেই বেশী জেগে উঠেছে।
ও আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে ঘনঘন চুমু খেতে লাগলো। তারপর বলল, এখনও সুবোধ বালকের মতো অপেক্ষা করছো? ট্রেনের মধ্যে তখন অত বাহাদূরি দেখাচ্ছিলে, আর এখন কি হল তোমার? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো? ঠিক আছে, আমিও হারবো না। এই হার না মানা হারের খেলায় আমি ঠিক জয়ী হবোই শেষ পর্যন্ত তুমি দেখো-
চিৎকার করে বলে উঠল, আমি আর পারছি না দেব, আমার শরীরটা শেয়ালের খাদ্যের মত ছিঁড়ে ফালা ফালা করে দাও। ঠান্ডা করে দাও আমায়। আমি তৃপ্তি পেতে চাই এক্ষুনি, এই মূহূর্তে।
এক সম্পূর্ণ নতুন ধরনের উত্তেজনা। আমি আগে কখনও অনুভব করিনি। এ উত্তেজনা শুধু শরীরের দিক থেকে নয়, মনের এবং আত্মার দিক থেকেও। লিঙ্গটা ওর যোনিদ্বারে ঢোকানোর পরে আমি এক অদ্ভূত সুখানুভূতি অনুভব করলাম, দেহমনে। যেন অষ্টমাশ্চর্যের স্বাদ। ভেবেছিলাম, আসতে আসতে ওকে পাকিয়ে নেব। কিন্তু দেহের নৈবেদ্য সাজিয়ে ও নিজেকেই তুলে দিল আমার হাতে পাকা ফলের মতো।
অভ্যন্তরে লিঙ্গটা খেলাতে শুরু করেছি। আসতে আসতে ওর পাপড়ির শেষ পর্যন্ত প্রবিষ্ট হলাম। উদ্দাম হয়ে দেবিকা আমাকে সঙ্গম সুখের স্বাদ দিতে শুরু করেছে। চরম সুখ যে কি হতে পারে অনুভব করছিলাম। চোখমুখ দেবিকার উদগ্র সঙ্গমোত্তর রাগ মোচনের জন্য বিস্ফোরিত হয়ে উঠেছে। উত্তাপ যেন গলে গলে পড়ার অপেক্ষায়। কোমরটা দুহাতে জড়িয়ে ওকে একটা জোরে ধাক্কা দিলাম। দেবিকা অধীর আনন্দে বলে উঠলো, আঃ।
উঃ এ যেন স্বর্গসুখ। ভয়ঙ্কর কঠিন হয়ে গেছে আমার লিঙ্গটা। আমারও উত্তাপ সব গলে গলে পড়তে লাগল দেবিকার মধ্যে। ও তবু আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে জোরে আঘাত প্রত্যাশা করতে লাগল। মুখে বলল, আরো বেশি করে ধাক্কা দাও দেব, নইলে আমি কিন্তু তোমাকে কামড়ে, ক্ষতবিক্ষত করে তুলবো।
মনে হল, ঈশ্বর যেন কত মহান। এত সুখ এত তৃপ্তি দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। এতটা আমিও আশা করিনি। মনে মনে বললাম, আমার এই প্রেমিকাটিকে আমার কাছে পাঠিয়ে তুমি আমার জীবনকে যেভাবে ধন্য করে দিলে ভগবান, আমি চিরকাল ঋণী থাকবো তোমার কাছে।
প্রচন্ড উত্তেজনায় দেবিকা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে একনাগাড়ে। যৌবনের সব উত্তাপ ঝরিয়ে দিচ্ছে আমার লিঙ্গরাজের ওপরে। আমিও দ্রুত গতিতে ওকে আঘাত করতে করতে শরীরের সব শক্তি ক্ষয় করে ফেলছি।
ঠোঁটে পাগলের মত চুমু খেতে খেতে দেবিকা বলল, এভাবে কোন মেয়েকে ভোগ করেছো কোনদিন?
অস্ফুট স্বরে ওকে বললাম, না দেবিকা না, কখনও করিনি।
চুম্বনটা ঠোঁট থেকে আমার সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো ও। বলল, আমাকে সত্যি ভালবাসবে তো দেব? বলো, আমাকে কোনদিন কষ্ট দেবে না?
আমি বললাম, না দেবিকা না। কোনোদিন না। তোমাকে কষ্ট দেবার আগে আমি মরে যাব, সেও ভাল। যা কষ্ট তুমি পেয়েছো, আর কোনদিনই তোমার সেই পুরোনো দূঃখকে আমি মনে করাবো না দেবিকা। দেখে নিও। এই দেব, কেমন আদরে, যত্নে, ভালবেসে রাখবে তোমাকে।
যৌনতার মধ্যে ভালবাসার আবেগ গুলোও বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল দুজনের মুখ থেকে। ওর মধ্যেই দেবিকা যেন পুরো শরীরটা সমর্পণ করে দিয়ে আমাকে বারে বারে শপথ করাচ্ছিল। কোমরটা নিজে থেকেই অল্প একটু উপরে তুলে দিল, তারপর আবার ধাক্কা দিতে বললো। যন্ত্রচালিত মেশিনের মতো লিঙ্গটা খুব গভীরে চালান করতে করতে আমিও উত্তেজনায় একটু কঁকিয়ে উঠলাম। মনে হলো এমন সুখকে চিরকাল ধরে রাখতে হলে ওর মতো মেয়েকে আমার কিছুতেই হারানো চলবে না। দেবিকাকে আমি ভালবাসব। ওর সব দূঃখ কষ্ট আমি ভুলিয়ে দেবো।
চরম অনুভূতি। অনুভূতির গভীরতা বোঝাবার ভাষা আমার নেই। দেবিকা আর আমার শরীরে শুধুই তীব্র কামোত্তেজনা। দেহে দেহে সংযোগ ঘটছে, দুটি পাপড়ির ফাঁকে লিঙ্গ ক্রমাগত প্রবেশ করে চলেছে। পিচ্ছিল যোনিপথ দিয়ে লিঙ্গ চলাচল করতে করতে আমার মনে হচ্ছিল, আমি যেন অনন্তকাল ধরে ওর মধ্যে বিদ্ধ হয়ে থাকি। যে মেয়েটা কাঙালের মতো এতক্ষণ যৌনসুখ ভিক্ষা করছিল আমার কাছে। সেই এখন চরম সুখপ্রাপ্তির আবেশে আচ্ছন্ন। আমি ওকে উপভোগ করছি আর ভাবছি, আজ থেকে পুরোনো প্রেমিক বলে দেবিকার জীবনে কেউ নেই। ওগুলো অতীত। এই দেবই আজ থেকে ওর সাথে সহবাস করবে, ভালবাসা আর আদর দিয়ে রানী করে রাখবে এই সুন্দরীকে।
সুখের সর্বোচ্চ শিখরে দেবিকাকে পৌঁছে দিয়ে আমি ওর নরম মৃত্তিকায় এবার কামনার জারকরস উদগীরণ করে দিলাম। বীর্য তখন বৃষ্টিপাতের মতই ঝড়ে পড়ছে আর দুজনেরই অভ্যন্তরে সুখের লাভা গলে গলে পড়ছে। বীর্যপাতের একটু পরে দেবিকা বললো, বড্ডা তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না দেব? নিজের কামনাকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে, আমিই তোমাকে জোড় করলাম, আর তুমিও আমার ভেতরেই সব ঢেলে দিলে।
আমাকে জড়িয়ে ধরে তারপরেও ও শুয়ে রইলো অনেক্ষণ। বললাম, তাতে কি হয়েছে দেবিকা? আসল সুখকে তো দুজনে উপভোগ করলাম, এরপরে তোমার জীবনে পুরোনো কোনো স্মৃতি আর কোনোদিনই তোমাকে কষ্ট দেবে না। তুমি শুধু আমার কথা চিন্তা করবে, আর আমিও দিবারাত্রি তাই করবো।
উঠে বসে একটু আপেক্ষের সুরে দেবিকা আমাকে বলল, ওতো তাই করেছিল আমার সঙ্গে। কিন্তু-
আমি বললাম, কে সে?
টালীগঞ্জের সেই পুরোনো প্রেমিকের কথা আবার তুলে দেবিকা বললো, অসাবধানতা বশত ওর সাথে বারবার যৌনকামনা মেটাকে গিয়ে গিয়ে, হঠাৎ একদিন অনুভব করলাম, আমি বোধহয় মা হতে চলেছি। পেটের ভেতরে থেকে একটা শিশু বড় হতে চাইছে। একদিন সে বেরিয়ে এসে পৃথিবীর আলো দেখবে। যখন ডাক্তারকে দেখালাম, ডাক্তারও একই কথা বললো। আমি নাকি প্রেগনেন্ট।
একটু অবাক হয়ে দেবিকাকে বললাম, তারপর?
দেবিকা বললো, ডাক্তার আমাকে দেখার পর, ছুটে গেলাম ওর কাছে। ওকে বললাম, এই কান্ডটা তুমি করেছো। প্রেমিকাকে অন্তঃসত্বা করে দিয়েছ, এবার তো আমাকে তোমায় বিয়ে করতেই হবে। নইলে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যাব আমি? আমার এখন কেউ নেই। একমাত্র তুমি ছাড়া।
দেবিকাকে বললাম, দেবিকা, তুমি অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েছিলে? তারপর? তোমার বাচ্চাটার কি হল?
আবার সেই হতাশ মুখ। চোখমুখে দূঃখ কষ্টটা আর নেই, তবুও বলল, আমার সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তার সন্মন্ধে আর কি বা তোমায় বলবো? ও আমাকে কিছুই বুঝতে দিল না। বলল, তুমি তো আমার কাছেই আছো দেবিকা, তোমার আবার চিন্তা কিসের? ভুল বশত এমনটা হয়েছে। এতো হতেই পারে। তোমার আমার দুজনেরই যখন ভুল, তখন বাচ্চাটাকে জন্ম দেওয়াটাও তো আমাদের কর্তব্য। তবে বিয়েটা এখনই নয়। এরজন্য তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বাবা মায়ের অনুমতি নেওয়াটা দরকার।
আমি বললাম, তারপর?
দেবিকা বলল, এতদিন ওর সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করেছি, অন্তরঙ্গ হয়েছি। বিয়ে মানে সামাজিক একটা স্বীকৃতি, সেটাই যখন শুনলাম, পেতে দেরী হবে। আমি একটু অধৈর্য হয়ে পড়লাম। মনে হলো, এ আমার কেমন প্রেমিক? যে স্ত্রী হিসেবে আমাকে গ্রহন করতে চায় না। মনে হলো ও বুঝি ছল করছে আমার সঙ্গে। খেলতে চাইছে আমার জীবনটা নিয়ে। বাড়ীর লোককেও আমার ব্যাপারটা এখনও জানাতে চাইছে না। দিন কেটে যাচ্ছে, রাত কেটে যাচ্ছে। বাচ্চাটাও পেটের মধ্যে বড় হচ্ছে। অথচ বিয়ের কথা তুললেই ও যেন কেমন নির্লিপ্ত।
একদিন আমি খুব রেগে গেলাম। শুনেছিলাম, ওর বাবা মা নাকি আসানসোলে থাকে। ছেলে একবারও আমার কথা তাদেরকে বলেনি। আমি বললাম, তুমি তোমার বাবা মাকে খবর দিচ্ছো না কেন? তাদেরকে জানাও। খবর দাও। একবার অন্তত তারা এসে দেখে যাক এই মেয়েটিকে। কেমন নিঃস্বার্থ ভাবে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে তোমার কাছে পরে রয়েছে? তুমি যখন চাও না ওনারা সত্যি কথাটা জানুক, তাহলে বিয়ের কথাটা সেরে নিতেই বা তোমার আপত্তিটা কোথায়?
আমাকে নিয়ে লিভ টুগেদার করছে আমার প্রেমিক। আমাকে সে বিয়ে করেনি। অথচ আমি অন্তঃসত্বা। নিজের বাবা মাকেও আমার কথা জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। রাগ দেখে আমার মন ভোলানোর চেষ্টা করতে লাগল ও। আমাকে বলল, ব্যস্ত হয়ো না ডারলিং। বাবা মাকে খবর দিয়েছি, ওনারা সাতদিন পরেই এখানে আসবে। তারপরই তোমাকে বিয়ে করবো আমি। সাতপাকে বাঁধা পড়ব বলে আমিও তো অপেক্ষা করে আছি বিয়ের জন্য। তুমি কি আমার ছটফটানি দেখেও সেটা বুঝতে পারছো না?
শয়তান লোকটাকে সেদিনও দেখে বুঝতে পারিনি, ওর মধ্যে কি অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে। পারলে আমার এতবড় ক্ষতি আজ হতো না।
দেবিকাকে বললাম, তারপরে কি তোমাদের বিয়ে হয় নি? ও কথা রাখে নি?
দেবিকা আফশোস করে বললো, মা বলেছিল, শাখাঁ সিদুঁর পড়বি যখন নিজের মুখটা আয়নায় একবার দেখবি। মেয়েদের সত্যিকারের রূপ। সাধ ছিল বধূ বেশে নিজেকে দেখবার। সে সাধ আর পূর্ণ হলো কই?
এক এক করে পুরোনো সব কথা ও বলে দিলেও, দেবিকার বাচ্চাটার কথা ভীষন জানতে ইচ্ছে করছিল। ওকে বললাম, কিন্তু তোমার বাচ্চাটার কি হলো দেবিকা? শেষ পর্যন্ত ওকে কি জন্ম দিলে? পৃথিবীর আলো যাকে দেখাতে চাইছিলে, সে নিশ্চই তোমার কাছেই এখন। কিন্তু কোথায় সে? এখানে এসে তো তাকে একবারও দেখলাম না।
ওর চোখের কোনে দেখলাম আবারও জল চিকচিক করছে। বাচ্চাটার কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। মনের ভেতরে জমানো দূঃখটা যেন এখনো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। একটা ফুলের মতো মুখ। অথচ এই ফুলটাকেই ছিঁড়ে তছনছ করে কে যেন বিষাদে ভরিয়ে দিয়েছে ওকে।
আমার কথার জবাব দিচ্ছিলো না দেবিকা। ওকে বললাম, কি হলো দেবিকা? বাচ্চাটার কথা তুমি এখনো বললে না? কি হয়েছে বলো? শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটা কি পৃথিবীর আলো দেখলো? কি হলো তার? বলো বলো-
দেবিকার চোখদুটো দিয়ে একনাগাড়ে জল পড়তে দেখে মায়া হচ্ছিল। সুন্দরী এক যুবতী আমার সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজের পুরোনো দূঃখ গুলোকে স্মরণ করছে। কিন্তু এবার যেন একেবারেই স্তব্ধ ও। মুখে কোনো কথা নেই। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে আমার দিকে।
অনেক্ষণ চুপ করে থেকে আমাকে ও বলল, বাচ্চাটাকে আমি বাঁচাতে পারিনি দেব। ও আমার পেটের মধ্যেই- আর ও আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে-
মনে হলো আমিই বা ক ফোটা চোখের জল ওর জন্য ফেলতে পেরেছি, যে ওকে ভালবাসবো? দেবিকার চোখে জল দেখে আমারও তখন চোখটা একটু চিকচিক করতে লাগলো। আমার বুকের মধ্যে মুখ রেখে ও বলল, এখনও ভাবি, মরে গেলেও বোধহয় শান্তি পাবো না কোনোদিন। একজনকে ভালবেসে শেষ পর্যন্ত কি পেলাম? আমার জীবনটাকে এভাবে ছাড়খাড় করে দিল ও। দেখবে ওরও ভাল হবে না কোনদিন। জীবনে কোনদিন সুখী হতে পারবে না ঐ শয়তান লোকটা।
বুকের মধ্যে দেবিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছি। কপালে চুমু খেয়ে বললাম, আবার তুমি মরার কথা চিন্তা করছো? কেন তাহলে আমাকে এখানে নিয়ে এলে তুমি? মরতেই যদি চাও।
দেবিকা, আমার দেবিকা। তোমাকে ছাড়া আমিও বাঁচার কথা চিন্তা করতে পারি না আজ থেকে। তুমি আমি দুজনেই বাঁচবো। নতুন করে বাঁচতে শেখাবো তোমাকে। আর যেদিন মরবো, সেদিন দুজনে একসাথেই মরবো।
দেবিকা মুখটা একটু তুলে বললো, সত্যি বলছো? আমি মরলে তুমিও মরবে?
বললাম, সত্যিই তো বলছি। তোমাকে অত সহজে আমি আর মরতে দেবো না দেবিকা। আর যদি তোমাকে বাঁচাতেই না পারি। তাহলে জেনে রেখো, এই দেবও তোমার জন্য প্রাণটা দিয়ে দিতে রাজী থাকবে। আমার এই জীবনটা আজ থেকে শুধু তোমার জন্য, তুমি ছাড়া আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই।
পোশাকটা গায়ে আবার যথারীতি চড়িয়ে নিয়ে দেবিকা বলল, চলো তাহলে তোমাকে একটু এগিয়ে দিই। বাড়ী ফিরবে যখন, এখন ধর্মতলা থেকে প্রচুর মেট্রো ট্রেন আছে। স্টেশন অবধি তোমাকে একটু পৌঁছে দিয়ে, তারপর না হয় আমি আবার ফিরে আসবো এখানে।
ওর সঙ্গ আমার ত্যাগ করতে ইচ্ছ করছিল না একেবারেই। দেবিকাকে বললাম, কাল সকালে তাহলে আমাদের দেখা হচ্ছে আবার। তোমাকে কি টালীগঞ্জে পাবো? তুমি আসবে আবার?
দেবিকা বললো, নিশ্চই আসবো। রোজ তো যেতে পারি না এখন। তবে তোমার জন্য নিশ্চই আমি যাবো।
আমি জামা প্যান্ট পরে নিয়ে ওর সাথে আবার হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে আসলাম। পায়ে হেঁটে ধর্মতলায়। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। এর মধ্যেই হাত ধরাধরি করে হাঁটছে কত কিশোর কিশোরী আর যুবক যুবতী।
কিন্তু এই ভীড়ে লোকে কেমন আলাদা রকম চোখে দেখছে আমাকে। দেবিকার মতো সুন্দরী যুবতীকে পাশে নিয়ে হাঁটছি, হয়তো সেই জন্যই। ওকে জড়িয়ে ধরছি, রাস্তার মধ্যেই আদর করছি। ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছি। আর আমার আচরণ দেখে বিস্মিত হয়ে যাচ্ছে সবাই। খুব কাছ থেকে কিছু লোক, আমাকে ওরকম করতে দেখে হাসতে হাসতে চলে গেলো। ভাবছি, যে যা ভাবছে, ভাবুক, আজ আমার এতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
দেবিকা বলল, চলো তোমার সাথে নিচে একেবারে পাতাল অবধি যাই। তোমাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে, আমি আবার উঠে আসবো উপরে।
সিঁড়ি দিয়ে পাতালের মধ্যে ঢুকে, আমি টিকিটের লাইনে দাঁড়ালাম। দেবিকাকে বললাম, তোমার জন্যও একটা টিকিট কাটি। নইলে তো মেশিন আটকে দেবে। টিকিট ছাড়া ঢোকা যে অসম্ভব। তবু দেবিকা বললো, কাটছো কাটো। কিন্তু আমার এখন টিকিট না হলেও চলে।
ওর কথা শুনে একটু অবাক হলাম। তবুও টিকিট কাটলাম। দেবিকা অপেক্ষা করছে একটু পেছনে। কিন্তু কাউন্টার ছেড়ে বেরুবার পরেই লক্ষ্য করলাম, ও ওখানে আর দাঁড়িয়ে নেই। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে দেবিকা নেই। নিমেষের মধ্যে ভ্যানিস হয়ে গেছে, চোখের সামনে থেকে।
অবাক হলাম, এই তো ছিল কাছে। আবার তাহলে কোথায় গেল?
সন্ধেবেলা অফিস ফেরত নিত্যযাত্রীদের তাড়াহূড়োতে হূড়োহূড়ি। কিন্তু এর মধ্যেই দেবিকা আমার চোখের সামনে থেকে উধাও। মনটা ভীষন ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। দেবিকা কোথায় হারিয়ে গেলো, ওকে খোঁজার জন্য আমি ছটফট করে এদিক ওদিক তখন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছি।
দেবিকাকে হঠাৎই লক্ষ্য করলাম ও হনহন করে এগিয়ে যাচ্ছে। একজন লম্বা ফর্সা পুরুষ টিকিট হাতে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মেশিনটার দিকে। ট্রেন ধরবে বলে অন্যকয়েকজন যাত্রীদের মতো সেও পা বাড়িয়েছে ঐ গেটের দিকে, আর দেবিকাও ঠিক যাচ্ছে ওর পেছনে পেছনে।
আমি চিৎকার করে উঠলাম, দেবিকা, কোথায় যাচ্ছো তুমি? দেবিকা আমার কথার কোনো জবাব দিল না।
অদ্ভূত ব্যাপার। লোকটা টিকিটটা মেশিনে ঢুকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু দেবিকা ওর পেছনে পেছনে প্রবেশ করলো টিকিট ছাড়াই।
ট্রেন আসছে একটা দমদম থেকে। লোকটা তাড়াহূড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ট্রেনটা ধরবে বলে। দেবিকাও খুব দ্রুত পা চালিয়ে নামছে লোকটাকে পিছু পিছু ধাওয়া করে।
আমি অবাক হলাম। টিকিট মেশিনে ঢুকিয়ে আমিও দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলাম। দেবিকা তখন তরতর করে নীচে নেমে অনেকটা এগিয়ে গেছে সামনে। দূর থেকে দেখলাম দমদম থেকে টালীগঞ্জ যাবার ট্রেনটা তখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে সামনে। লোকটা প্ল্যাটফর্মের খুব ধারে চলে গেছে। দেবিকাও ঠিক ওর পেছনে। ট্রেন আরো সামনে আসা মাত্রই, পেছন থেকে আচমকাই লোকটাকে ঠেলা মারলো দেবিকা। লম্বা লোকটার শরীরটা ট্রেনের চাকার সামনে পরে গেলো। সেই সাথে দেবিকাও ঝাঁপ দিলো সামনে। মনে হলো ট্রেনের তলায় কাটা পরে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল দুজনের দেহটা।
ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে একটু দূরে। ড্রাইভার ব্রেক কষেও মনে হয় বাঁচাতে পারেনি ওদের দুজনকে। আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে দিয়েছে অনেকে। এগিয়ে দেখছে অনেকে, কি হলো শেষ পর্যন্ত ওদের দুজনের। আমি স্তম্ভিত। মর্মান্তিক একটা দৃশ্য দেখলাম চোখের সামনে। ভাবতেই পারছি না, দেবিকা এমন কাজটা করলো কি করে ।
প্রতিশোধের আগুনটা জ্বলতে দেখেছিলাম দেবিকার শরীরে। ও বলেছিল, যদি কোনোদিন ওর পুরোনো প্রেমিককে ও দেখতে পায়, তাহলে শোধ তুলবে। উশুল করে নেবে নিজের অপূরনীয় ক্ষতিটাকে। কিন্তু তা বলে কি এইভাবে? একজনকে হত্যা করে, নিজেকেও আত্মাহুতির বলি দিয়ে? কেন দেবিকা এভাবে শেষ করে দিল জীবনটাকে? আমি তো ওকে নিয়ে নতুন স্বপ্নই গড়তে চেয়েছিলাম। নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার আগে দেবিকা একবারও কি আমার কথা চিন্তা করলো না।
ভাবছি, আর শরীরটা তখন থরথর করে কাঁপছে আমার। শুনেছি, মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে নাকি প্রাণ হানির ঘটনা আকছার ঘটে। কিন্তু আজ যা চোখের সামনে দেখলাম, কেউ হয়তো জীবনে কল্পনাও করতে পারবে না।
আর একটু আগে থেকে যদি তৎপর হতাম, দুটো প্রাণকেই হয়তো আমি বাঁচাতে পারতাম।
কর্তা ব্যক্তিরা এরপর সব একে একে এলেন। লাইন থেকে দেহদুটো তোলার তোড়জোড় চলছে। একজন তারমধ্যে বললেন, দুমাস আগে একটি অল্পবয়সী মেয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল লাইনে। আজ আবার একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ঘটলো। তবে এবার মনে হয় কোনো একজন পুরুষের প্রানহানি ঘটেছে। সবাই তো তাই বলছে। সিসিটিভি ক্যামেরাতেও তাই ধরা পরেছে।
আমি খুব কাছেই ছিলাম, বললাম, না না কি বলছেন, আমি দেখেছি, দুজনকে। একটি লোক আর তার পেছনে ছিল একটি মেয়ে। মেয়েটি পেছন থেকে ধাক্কা মেরেছে লোকটাকে। তারপর নিজেও প্রাণ দিয়েছে।
ওরা বললো, আপনি কাকে দেখেছেন? আমাদের ক্যামেরাতে তো সেরকম কোনো মেয়ের ছবি ধরা পরেনি। যে লোকটা পড়ে গেল ট্রেন আসার আগের মূহূর্তে। ওর পেছনে তো কোন মেয়ে ছিল না।
আমি অবাক হলাম। কি বলছে এরা? আমি দেবিকাকে দেখলাম। ও এতক্ষণ আমার সাথে ছিল। আমি ওর সাথে যৌনসঙ্গম করলাম। আমাকে ও দূঃখের কাহিনী শোনালো। তারপরই এই ঘটনা। অথচ এরা বলছে কোনো মেয়ে ঝাঁপ দেয় নি? এর মানেটা তাহলে কি?
একজন তারমধ্যে একটু আমার সাথে আলাদা করে কথা বলার জন্য এগিয়ে এলেন। বললেন, কি ব্যাপারটা কি বলুন তো? আপনি সঠিক কি দেখেছেন?
ওনাকে সমস্ত ঘটনাটাই খুলে বললাম। উনি হেসে বললেন, আপনি সুস্থ আছেন তো? কি যা তা বলছেন। একটি মেয়ে পেছন থেকে লোকটিকে ধাক্কা মেরেছে। আপনি বলছেন দেখেছেন। অথচ আর কেউ দেখেনি। এও কি হতে পারে নাকি?
আমি চেঁচিয়ে বললাম, কেন আমার কথা আপনারা বিশ্বাস করছেন না? আমি সত্যি দেখেছি। মেয়েটির সাথে টালীগঞ্জ থেকে একসাথে ট্রেনে করে আমি এসেছি। মেয়েটি আমার সাথে এতক্ষণ ছিল। আমি ওর বাড়ী গেছি। ওর সাথে কথা বলেছি। ওর সাথে প্রেম ভালবাসা করেছি। শরীরে শরীর বিনিময় করেছি। একসাথে জীবন কাটাবো বলে চিরপ্রতিজ্ঞা করেছি। মেয়েটি ওর দূঃখের কাহিনী শুনিয়ে আমাকে ওর পুরোনো প্রেমিকের কথা বলেছে। যে ওর সাথে প্রতারনা করেছে, ওর জীবনটাকে নষ্ট করেছে। তাকেই ও ধাক্কা মেরেছে পেছন থেকে। আমি সচক্ষে দেখেছি।
আশে পাশের লোকজন ভীড় করে ফেলেছে আমার কথা শোনবার জন্য। কেউ মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কেউ বা করছে হাসাহাসি। ভাবছে কি পাগলের প্রলাপই একনাগাড়ে করে যাচ্ছে লোকটা।
আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আর ভাবছি দুটো দেহ যখন একসাথে ট্রেন লাইন থেকে তোলা হবে, তখনই বোধহয় ভুলটা এদের ভাঙবে।
লোকটির ছিন্ন ভিন্ন দেহটাকে কাপড়ে মুড়ে যখন ট্রেন লাইন থেকে তোলা হলো, তখন সত্যি আমার কথা মিথ্যে প্রমানিত হয়ে গেল। ওর দেহের সাথে আর কোনো মৃতদেহ তখন ছিল না। কোনো মেয়ের দেহ পাওয়া যায় নি। দেবিকার শরীরটাকে খুঁজে পায়নি উদ্ধারকারী দল।
দেবিকা আমাকে কথায় কথায় বলেছিল, ও আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে- তখন কথাটা ধরতে পারিনি। দেবিকা বলেছিল আমি মরেও শান্তি পাবো না। এই দুটো কথার মধ্যেই ও বোঝাতে চেয়েছিল, যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছো তুমি, সে আর ইহজগতে বেঁচে নেই। এই পাতালেই মৃত্যু ঘটেছে তার।
পুরোনো রেকর্ড বলছে, দুমাস আগে একটি সুন্দরী মেয়ের মৃত্যু হয় বালীগঞ্জ স্টেশনে। কিন্তু সেটি আত্মহত্যা না কি হত্যা? সে রহস্য ভেদ করতে পারেননি কেউ । কিন্তু পেরেছি আমি। দেবিকার আত্মাটা শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছিল এতদিন,এ স্টেশন থেকে ও স্টেশনে। ওর আত্মার সাথে যৌনসংসর্গ করেছি আমি। ভাবতেও গায়ে কেমন কাঁটা দিচ্ছে। দেবিকা প্রতিশোধ নিয়েছে। আর ওর আত্মারও মুক্তি ঘটেছে চিরতরে।
সমাপ্ত
আমি প্রথমে চুমু খাওয়ার জন্য মুখটা নামিয়ে আনলাম। উদগ্র কামনা, আমার থেকে দেখলাম, ওর মধ্যেই বেশী জেগে উঠেছে।
ও আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে ঘনঘন চুমু খেতে লাগলো। তারপর বলল, এখনও সুবোধ বালকের মতো অপেক্ষা করছো? ট্রেনের মধ্যে তখন অত বাহাদূরি দেখাচ্ছিলে, আর এখন কি হল তোমার? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো? ঠিক আছে, আমিও হারবো না। এই হার না মানা হারের খেলায় আমি ঠিক জয়ী হবোই শেষ পর্যন্ত তুমি দেখো-
চিৎকার করে বলে উঠল, আমি আর পারছি না দেব, আমার শরীরটা শেয়ালের খাদ্যের মত ছিঁড়ে ফালা ফালা করে দাও। ঠান্ডা করে দাও আমায়। আমি তৃপ্তি পেতে চাই এক্ষুনি, এই মূহূর্তে।
এক সম্পূর্ণ নতুন ধরনের উত্তেজনা। আমি আগে কখনও অনুভব করিনি। এ উত্তেজনা শুধু শরীরের দিক থেকে নয়, মনের এবং আত্মার দিক থেকেও। লিঙ্গটা ওর যোনিদ্বারে ঢোকানোর পরে আমি এক অদ্ভূত সুখানুভূতি অনুভব করলাম, দেহমনে। যেন অষ্টমাশ্চর্যের স্বাদ। ভেবেছিলাম, আসতে আসতে ওকে পাকিয়ে নেব। কিন্তু দেহের নৈবেদ্য সাজিয়ে ও নিজেকেই তুলে দিল আমার হাতে পাকা ফলের মতো।
অভ্যন্তরে লিঙ্গটা খেলাতে শুরু করেছি। আসতে আসতে ওর পাপড়ির শেষ পর্যন্ত প্রবিষ্ট হলাম। উদ্দাম হয়ে দেবিকা আমাকে সঙ্গম সুখের স্বাদ দিতে শুরু করেছে। চরম সুখ যে কি হতে পারে অনুভব করছিলাম। চোখমুখ দেবিকার উদগ্র সঙ্গমোত্তর রাগ মোচনের জন্য বিস্ফোরিত হয়ে উঠেছে। উত্তাপ যেন গলে গলে পড়ার অপেক্ষায়। কোমরটা দুহাতে জড়িয়ে ওকে একটা জোরে ধাক্কা দিলাম। দেবিকা অধীর আনন্দে বলে উঠলো, আঃ।
উঃ এ যেন স্বর্গসুখ। ভয়ঙ্কর কঠিন হয়ে গেছে আমার লিঙ্গটা। আমারও উত্তাপ সব গলে গলে পড়তে লাগল দেবিকার মধ্যে। ও তবু আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে জোরে আঘাত প্রত্যাশা করতে লাগল। মুখে বলল, আরো বেশি করে ধাক্কা দাও দেব, নইলে আমি কিন্তু তোমাকে কামড়ে, ক্ষতবিক্ষত করে তুলবো।
মনে হল, ঈশ্বর যেন কত মহান। এত সুখ এত তৃপ্তি দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। এতটা আমিও আশা করিনি। মনে মনে বললাম, আমার এই প্রেমিকাটিকে আমার কাছে পাঠিয়ে তুমি আমার জীবনকে যেভাবে ধন্য করে দিলে ভগবান, আমি চিরকাল ঋণী থাকবো তোমার কাছে।
প্রচন্ড উত্তেজনায় দেবিকা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে একনাগাড়ে। যৌবনের সব উত্তাপ ঝরিয়ে দিচ্ছে আমার লিঙ্গরাজের ওপরে। আমিও দ্রুত গতিতে ওকে আঘাত করতে করতে শরীরের সব শক্তি ক্ষয় করে ফেলছি।
ঠোঁটে পাগলের মত চুমু খেতে খেতে দেবিকা বলল, এভাবে কোন মেয়েকে ভোগ করেছো কোনদিন?
অস্ফুট স্বরে ওকে বললাম, না দেবিকা না, কখনও করিনি।
চুম্বনটা ঠোঁট থেকে আমার সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো ও। বলল, আমাকে সত্যি ভালবাসবে তো দেব? বলো, আমাকে কোনদিন কষ্ট দেবে না?
আমি বললাম, না দেবিকা না। কোনোদিন না। তোমাকে কষ্ট দেবার আগে আমি মরে যাব, সেও ভাল। যা কষ্ট তুমি পেয়েছো, আর কোনদিনই তোমার সেই পুরোনো দূঃখকে আমি মনে করাবো না দেবিকা। দেখে নিও। এই দেব, কেমন আদরে, যত্নে, ভালবেসে রাখবে তোমাকে।
যৌনতার মধ্যে ভালবাসার আবেগ গুলোও বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল দুজনের মুখ থেকে। ওর মধ্যেই দেবিকা যেন পুরো শরীরটা সমর্পণ করে দিয়ে আমাকে বারে বারে শপথ করাচ্ছিল। কোমরটা নিজে থেকেই অল্প একটু উপরে তুলে দিল, তারপর আবার ধাক্কা দিতে বললো। যন্ত্রচালিত মেশিনের মতো লিঙ্গটা খুব গভীরে চালান করতে করতে আমিও উত্তেজনায় একটু কঁকিয়ে উঠলাম। মনে হলো এমন সুখকে চিরকাল ধরে রাখতে হলে ওর মতো মেয়েকে আমার কিছুতেই হারানো চলবে না। দেবিকাকে আমি ভালবাসব। ওর সব দূঃখ কষ্ট আমি ভুলিয়ে দেবো।
চরম অনুভূতি। অনুভূতির গভীরতা বোঝাবার ভাষা আমার নেই। দেবিকা আর আমার শরীরে শুধুই তীব্র কামোত্তেজনা। দেহে দেহে সংযোগ ঘটছে, দুটি পাপড়ির ফাঁকে লিঙ্গ ক্রমাগত প্রবেশ করে চলেছে। পিচ্ছিল যোনিপথ দিয়ে লিঙ্গ চলাচল করতে করতে আমার মনে হচ্ছিল, আমি যেন অনন্তকাল ধরে ওর মধ্যে বিদ্ধ হয়ে থাকি। যে মেয়েটা কাঙালের মতো এতক্ষণ যৌনসুখ ভিক্ষা করছিল আমার কাছে। সেই এখন চরম সুখপ্রাপ্তির আবেশে আচ্ছন্ন। আমি ওকে উপভোগ করছি আর ভাবছি, আজ থেকে পুরোনো প্রেমিক বলে দেবিকার জীবনে কেউ নেই। ওগুলো অতীত। এই দেবই আজ থেকে ওর সাথে সহবাস করবে, ভালবাসা আর আদর দিয়ে রানী করে রাখবে এই সুন্দরীকে।
সুখের সর্বোচ্চ শিখরে দেবিকাকে পৌঁছে দিয়ে আমি ওর নরম মৃত্তিকায় এবার কামনার জারকরস উদগীরণ করে দিলাম। বীর্য তখন বৃষ্টিপাতের মতই ঝড়ে পড়ছে আর দুজনেরই অভ্যন্তরে সুখের লাভা গলে গলে পড়ছে। বীর্যপাতের একটু পরে দেবিকা বললো, বড্ডা তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না দেব? নিজের কামনাকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে, আমিই তোমাকে জোড় করলাম, আর তুমিও আমার ভেতরেই সব ঢেলে দিলে।
আমাকে জড়িয়ে ধরে তারপরেও ও শুয়ে রইলো অনেক্ষণ। বললাম, তাতে কি হয়েছে দেবিকা? আসল সুখকে তো দুজনে উপভোগ করলাম, এরপরে তোমার জীবনে পুরোনো কোনো স্মৃতি আর কোনোদিনই তোমাকে কষ্ট দেবে না। তুমি শুধু আমার কথা চিন্তা করবে, আর আমিও দিবারাত্রি তাই করবো।
উঠে বসে একটু আপেক্ষের সুরে দেবিকা আমাকে বলল, ওতো তাই করেছিল আমার সঙ্গে। কিন্তু-
আমি বললাম, কে সে?
টালীগঞ্জের সেই পুরোনো প্রেমিকের কথা আবার তুলে দেবিকা বললো, অসাবধানতা বশত ওর সাথে বারবার যৌনকামনা মেটাকে গিয়ে গিয়ে, হঠাৎ একদিন অনুভব করলাম, আমি বোধহয় মা হতে চলেছি। পেটের ভেতরে থেকে একটা শিশু বড় হতে চাইছে। একদিন সে বেরিয়ে এসে পৃথিবীর আলো দেখবে। যখন ডাক্তারকে দেখালাম, ডাক্তারও একই কথা বললো। আমি নাকি প্রেগনেন্ট।
একটু অবাক হয়ে দেবিকাকে বললাম, তারপর?
দেবিকা বললো, ডাক্তার আমাকে দেখার পর, ছুটে গেলাম ওর কাছে। ওকে বললাম, এই কান্ডটা তুমি করেছো। প্রেমিকাকে অন্তঃসত্বা করে দিয়েছ, এবার তো আমাকে তোমায় বিয়ে করতেই হবে। নইলে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যাব আমি? আমার এখন কেউ নেই। একমাত্র তুমি ছাড়া।
দেবিকাকে বললাম, দেবিকা, তুমি অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েছিলে? তারপর? তোমার বাচ্চাটার কি হল?
আবার সেই হতাশ মুখ। চোখমুখে দূঃখ কষ্টটা আর নেই, তবুও বলল, আমার সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তার সন্মন্ধে আর কি বা তোমায় বলবো? ও আমাকে কিছুই বুঝতে দিল না। বলল, তুমি তো আমার কাছেই আছো দেবিকা, তোমার আবার চিন্তা কিসের? ভুল বশত এমনটা হয়েছে। এতো হতেই পারে। তোমার আমার দুজনেরই যখন ভুল, তখন বাচ্চাটাকে জন্ম দেওয়াটাও তো আমাদের কর্তব্য। তবে বিয়েটা এখনই নয়। এরজন্য তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বাবা মায়ের অনুমতি নেওয়াটা দরকার।
আমি বললাম, তারপর?
দেবিকা বলল, এতদিন ওর সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করেছি, অন্তরঙ্গ হয়েছি। বিয়ে মানে সামাজিক একটা স্বীকৃতি, সেটাই যখন শুনলাম, পেতে দেরী হবে। আমি একটু অধৈর্য হয়ে পড়লাম। মনে হলো, এ আমার কেমন প্রেমিক? যে স্ত্রী হিসেবে আমাকে গ্রহন করতে চায় না। মনে হলো ও বুঝি ছল করছে আমার সঙ্গে। খেলতে চাইছে আমার জীবনটা নিয়ে। বাড়ীর লোককেও আমার ব্যাপারটা এখনও জানাতে চাইছে না। দিন কেটে যাচ্ছে, রাত কেটে যাচ্ছে। বাচ্চাটাও পেটের মধ্যে বড় হচ্ছে। অথচ বিয়ের কথা তুললেই ও যেন কেমন নির্লিপ্ত।
একদিন আমি খুব রেগে গেলাম। শুনেছিলাম, ওর বাবা মা নাকি আসানসোলে থাকে। ছেলে একবারও আমার কথা তাদেরকে বলেনি। আমি বললাম, তুমি তোমার বাবা মাকে খবর দিচ্ছো না কেন? তাদেরকে জানাও। খবর দাও। একবার অন্তত তারা এসে দেখে যাক এই মেয়েটিকে। কেমন নিঃস্বার্থ ভাবে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে তোমার কাছে পরে রয়েছে? তুমি যখন চাও না ওনারা সত্যি কথাটা জানুক, তাহলে বিয়ের কথাটা সেরে নিতেই বা তোমার আপত্তিটা কোথায়?
আমাকে নিয়ে লিভ টুগেদার করছে আমার প্রেমিক। আমাকে সে বিয়ে করেনি। অথচ আমি অন্তঃসত্বা। নিজের বাবা মাকেও আমার কথা জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। রাগ দেখে আমার মন ভোলানোর চেষ্টা করতে লাগল ও। আমাকে বলল, ব্যস্ত হয়ো না ডারলিং। বাবা মাকে খবর দিয়েছি, ওনারা সাতদিন পরেই এখানে আসবে। তারপরই তোমাকে বিয়ে করবো আমি। সাতপাকে বাঁধা পড়ব বলে আমিও তো অপেক্ষা করে আছি বিয়ের জন্য। তুমি কি আমার ছটফটানি দেখেও সেটা বুঝতে পারছো না?
শয়তান লোকটাকে সেদিনও দেখে বুঝতে পারিনি, ওর মধ্যে কি অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে। পারলে আমার এতবড় ক্ষতি আজ হতো না।
দেবিকাকে বললাম, তারপরে কি তোমাদের বিয়ে হয় নি? ও কথা রাখে নি?
দেবিকা আফশোস করে বললো, মা বলেছিল, শাখাঁ সিদুঁর পড়বি যখন নিজের মুখটা আয়নায় একবার দেখবি। মেয়েদের সত্যিকারের রূপ। সাধ ছিল বধূ বেশে নিজেকে দেখবার। সে সাধ আর পূর্ণ হলো কই?
এক এক করে পুরোনো সব কথা ও বলে দিলেও, দেবিকার বাচ্চাটার কথা ভীষন জানতে ইচ্ছে করছিল। ওকে বললাম, কিন্তু তোমার বাচ্চাটার কি হলো দেবিকা? শেষ পর্যন্ত ওকে কি জন্ম দিলে? পৃথিবীর আলো যাকে দেখাতে চাইছিলে, সে নিশ্চই তোমার কাছেই এখন। কিন্তু কোথায় সে? এখানে এসে তো তাকে একবারও দেখলাম না।
ওর চোখের কোনে দেখলাম আবারও জল চিকচিক করছে। বাচ্চাটার কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। মনের ভেতরে জমানো দূঃখটা যেন এখনো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। একটা ফুলের মতো মুখ। অথচ এই ফুলটাকেই ছিঁড়ে তছনছ করে কে যেন বিষাদে ভরিয়ে দিয়েছে ওকে।
আমার কথার জবাব দিচ্ছিলো না দেবিকা। ওকে বললাম, কি হলো দেবিকা? বাচ্চাটার কথা তুমি এখনো বললে না? কি হয়েছে বলো? শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটা কি পৃথিবীর আলো দেখলো? কি হলো তার? বলো বলো-
দেবিকার চোখদুটো দিয়ে একনাগাড়ে জল পড়তে দেখে মায়া হচ্ছিল। সুন্দরী এক যুবতী আমার সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজের পুরোনো দূঃখ গুলোকে স্মরণ করছে। কিন্তু এবার যেন একেবারেই স্তব্ধ ও। মুখে কোনো কথা নেই। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে আমার দিকে।
অনেক্ষণ চুপ করে থেকে আমাকে ও বলল, বাচ্চাটাকে আমি বাঁচাতে পারিনি দেব। ও আমার পেটের মধ্যেই- আর ও আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে-
মনে হলো আমিই বা ক ফোটা চোখের জল ওর জন্য ফেলতে পেরেছি, যে ওকে ভালবাসবো? দেবিকার চোখে জল দেখে আমারও তখন চোখটা একটু চিকচিক করতে লাগলো। আমার বুকের মধ্যে মুখ রেখে ও বলল, এখনও ভাবি, মরে গেলেও বোধহয় শান্তি পাবো না কোনোদিন। একজনকে ভালবেসে শেষ পর্যন্ত কি পেলাম? আমার জীবনটাকে এভাবে ছাড়খাড় করে দিল ও। দেখবে ওরও ভাল হবে না কোনদিন। জীবনে কোনদিন সুখী হতে পারবে না ঐ শয়তান লোকটা।
বুকের মধ্যে দেবিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছি। কপালে চুমু খেয়ে বললাম, আবার তুমি মরার কথা চিন্তা করছো? কেন তাহলে আমাকে এখানে নিয়ে এলে তুমি? মরতেই যদি চাও।
দেবিকা, আমার দেবিকা। তোমাকে ছাড়া আমিও বাঁচার কথা চিন্তা করতে পারি না আজ থেকে। তুমি আমি দুজনেই বাঁচবো। নতুন করে বাঁচতে শেখাবো তোমাকে। আর যেদিন মরবো, সেদিন দুজনে একসাথেই মরবো।
দেবিকা মুখটা একটু তুলে বললো, সত্যি বলছো? আমি মরলে তুমিও মরবে?
বললাম, সত্যিই তো বলছি। তোমাকে অত সহজে আমি আর মরতে দেবো না দেবিকা। আর যদি তোমাকে বাঁচাতেই না পারি। তাহলে জেনে রেখো, এই দেবও তোমার জন্য প্রাণটা দিয়ে দিতে রাজী থাকবে। আমার এই জীবনটা আজ থেকে শুধু তোমার জন্য, তুমি ছাড়া আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই।
পোশাকটা গায়ে আবার যথারীতি চড়িয়ে নিয়ে দেবিকা বলল, চলো তাহলে তোমাকে একটু এগিয়ে দিই। বাড়ী ফিরবে যখন, এখন ধর্মতলা থেকে প্রচুর মেট্রো ট্রেন আছে। স্টেশন অবধি তোমাকে একটু পৌঁছে দিয়ে, তারপর না হয় আমি আবার ফিরে আসবো এখানে।
ওর সঙ্গ আমার ত্যাগ করতে ইচ্ছ করছিল না একেবারেই। দেবিকাকে বললাম, কাল সকালে তাহলে আমাদের দেখা হচ্ছে আবার। তোমাকে কি টালীগঞ্জে পাবো? তুমি আসবে আবার?
দেবিকা বললো, নিশ্চই আসবো। রোজ তো যেতে পারি না এখন। তবে তোমার জন্য নিশ্চই আমি যাবো।
আমি জামা প্যান্ট পরে নিয়ে ওর সাথে আবার হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে আসলাম। পায়ে হেঁটে ধর্মতলায়। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। এর মধ্যেই হাত ধরাধরি করে হাঁটছে কত কিশোর কিশোরী আর যুবক যুবতী।
কিন্তু এই ভীড়ে লোকে কেমন আলাদা রকম চোখে দেখছে আমাকে। দেবিকার মতো সুন্দরী যুবতীকে পাশে নিয়ে হাঁটছি, হয়তো সেই জন্যই। ওকে জড়িয়ে ধরছি, রাস্তার মধ্যেই আদর করছি। ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছি। আর আমার আচরণ দেখে বিস্মিত হয়ে যাচ্ছে সবাই। খুব কাছ থেকে কিছু লোক, আমাকে ওরকম করতে দেখে হাসতে হাসতে চলে গেলো। ভাবছি, যে যা ভাবছে, ভাবুক, আজ আমার এতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
দেবিকা বলল, চলো তোমার সাথে নিচে একেবারে পাতাল অবধি যাই। তোমাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে, আমি আবার উঠে আসবো উপরে।
সিঁড়ি দিয়ে পাতালের মধ্যে ঢুকে, আমি টিকিটের লাইনে দাঁড়ালাম। দেবিকাকে বললাম, তোমার জন্যও একটা টিকিট কাটি। নইলে তো মেশিন আটকে দেবে। টিকিট ছাড়া ঢোকা যে অসম্ভব। তবু দেবিকা বললো, কাটছো কাটো। কিন্তু আমার এখন টিকিট না হলেও চলে।
ওর কথা শুনে একটু অবাক হলাম। তবুও টিকিট কাটলাম। দেবিকা অপেক্ষা করছে একটু পেছনে। কিন্তু কাউন্টার ছেড়ে বেরুবার পরেই লক্ষ্য করলাম, ও ওখানে আর দাঁড়িয়ে নেই। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে দেবিকা নেই। নিমেষের মধ্যে ভ্যানিস হয়ে গেছে, চোখের সামনে থেকে।
অবাক হলাম, এই তো ছিল কাছে। আবার তাহলে কোথায় গেল?
সন্ধেবেলা অফিস ফেরত নিত্যযাত্রীদের তাড়াহূড়োতে হূড়োহূড়ি। কিন্তু এর মধ্যেই দেবিকা আমার চোখের সামনে থেকে উধাও। মনটা ভীষন ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। দেবিকা কোথায় হারিয়ে গেলো, ওকে খোঁজার জন্য আমি ছটফট করে এদিক ওদিক তখন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছি।
দেবিকাকে হঠাৎই লক্ষ্য করলাম ও হনহন করে এগিয়ে যাচ্ছে। একজন লম্বা ফর্সা পুরুষ টিকিট হাতে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মেশিনটার দিকে। ট্রেন ধরবে বলে অন্যকয়েকজন যাত্রীদের মতো সেও পা বাড়িয়েছে ঐ গেটের দিকে, আর দেবিকাও ঠিক যাচ্ছে ওর পেছনে পেছনে।
আমি চিৎকার করে উঠলাম, দেবিকা, কোথায় যাচ্ছো তুমি? দেবিকা আমার কথার কোনো জবাব দিল না।
অদ্ভূত ব্যাপার। লোকটা টিকিটটা মেশিনে ঢুকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু দেবিকা ওর পেছনে পেছনে প্রবেশ করলো টিকিট ছাড়াই।
ট্রেন আসছে একটা দমদম থেকে। লোকটা তাড়াহূড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ট্রেনটা ধরবে বলে। দেবিকাও খুব দ্রুত পা চালিয়ে নামছে লোকটাকে পিছু পিছু ধাওয়া করে।
আমি অবাক হলাম। টিকিট মেশিনে ঢুকিয়ে আমিও দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলাম। দেবিকা তখন তরতর করে নীচে নেমে অনেকটা এগিয়ে গেছে সামনে। দূর থেকে দেখলাম দমদম থেকে টালীগঞ্জ যাবার ট্রেনটা তখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে সামনে। লোকটা প্ল্যাটফর্মের খুব ধারে চলে গেছে। দেবিকাও ঠিক ওর পেছনে। ট্রেন আরো সামনে আসা মাত্রই, পেছন থেকে আচমকাই লোকটাকে ঠেলা মারলো দেবিকা। লম্বা লোকটার শরীরটা ট্রেনের চাকার সামনে পরে গেলো। সেই সাথে দেবিকাও ঝাঁপ দিলো সামনে। মনে হলো ট্রেনের তলায় কাটা পরে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল দুজনের দেহটা।
ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে একটু দূরে। ড্রাইভার ব্রেক কষেও মনে হয় বাঁচাতে পারেনি ওদের দুজনকে। আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে দিয়েছে অনেকে। এগিয়ে দেখছে অনেকে, কি হলো শেষ পর্যন্ত ওদের দুজনের। আমি স্তম্ভিত। মর্মান্তিক একটা দৃশ্য দেখলাম চোখের সামনে। ভাবতেই পারছি না, দেবিকা এমন কাজটা করলো কি করে ।
প্রতিশোধের আগুনটা জ্বলতে দেখেছিলাম দেবিকার শরীরে। ও বলেছিল, যদি কোনোদিন ওর পুরোনো প্রেমিককে ও দেখতে পায়, তাহলে শোধ তুলবে। উশুল করে নেবে নিজের অপূরনীয় ক্ষতিটাকে। কিন্তু তা বলে কি এইভাবে? একজনকে হত্যা করে, নিজেকেও আত্মাহুতির বলি দিয়ে? কেন দেবিকা এভাবে শেষ করে দিল জীবনটাকে? আমি তো ওকে নিয়ে নতুন স্বপ্নই গড়তে চেয়েছিলাম। নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার আগে দেবিকা একবারও কি আমার কথা চিন্তা করলো না।
ভাবছি, আর শরীরটা তখন থরথর করে কাঁপছে আমার। শুনেছি, মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে নাকি প্রাণ হানির ঘটনা আকছার ঘটে। কিন্তু আজ যা চোখের সামনে দেখলাম, কেউ হয়তো জীবনে কল্পনাও করতে পারবে না।
আর একটু আগে থেকে যদি তৎপর হতাম, দুটো প্রাণকেই হয়তো আমি বাঁচাতে পারতাম।
কর্তা ব্যক্তিরা এরপর সব একে একে এলেন। লাইন থেকে দেহদুটো তোলার তোড়জোড় চলছে। একজন তারমধ্যে বললেন, দুমাস আগে একটি অল্পবয়সী মেয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল লাইনে। আজ আবার একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ঘটলো। তবে এবার মনে হয় কোনো একজন পুরুষের প্রানহানি ঘটেছে। সবাই তো তাই বলছে। সিসিটিভি ক্যামেরাতেও তাই ধরা পরেছে।
আমি খুব কাছেই ছিলাম, বললাম, না না কি বলছেন, আমি দেখেছি, দুজনকে। একটি লোক আর তার পেছনে ছিল একটি মেয়ে। মেয়েটি পেছন থেকে ধাক্কা মেরেছে লোকটাকে। তারপর নিজেও প্রাণ দিয়েছে।
ওরা বললো, আপনি কাকে দেখেছেন? আমাদের ক্যামেরাতে তো সেরকম কোনো মেয়ের ছবি ধরা পরেনি। যে লোকটা পড়ে গেল ট্রেন আসার আগের মূহূর্তে। ওর পেছনে তো কোন মেয়ে ছিল না।
আমি অবাক হলাম। কি বলছে এরা? আমি দেবিকাকে দেখলাম। ও এতক্ষণ আমার সাথে ছিল। আমি ওর সাথে যৌনসঙ্গম করলাম। আমাকে ও দূঃখের কাহিনী শোনালো। তারপরই এই ঘটনা। অথচ এরা বলছে কোনো মেয়ে ঝাঁপ দেয় নি? এর মানেটা তাহলে কি?
একজন তারমধ্যে একটু আমার সাথে আলাদা করে কথা বলার জন্য এগিয়ে এলেন। বললেন, কি ব্যাপারটা কি বলুন তো? আপনি সঠিক কি দেখেছেন?
ওনাকে সমস্ত ঘটনাটাই খুলে বললাম। উনি হেসে বললেন, আপনি সুস্থ আছেন তো? কি যা তা বলছেন। একটি মেয়ে পেছন থেকে লোকটিকে ধাক্কা মেরেছে। আপনি বলছেন দেখেছেন। অথচ আর কেউ দেখেনি। এও কি হতে পারে নাকি?
আমি চেঁচিয়ে বললাম, কেন আমার কথা আপনারা বিশ্বাস করছেন না? আমি সত্যি দেখেছি। মেয়েটির সাথে টালীগঞ্জ থেকে একসাথে ট্রেনে করে আমি এসেছি। মেয়েটি আমার সাথে এতক্ষণ ছিল। আমি ওর বাড়ী গেছি। ওর সাথে কথা বলেছি। ওর সাথে প্রেম ভালবাসা করেছি। শরীরে শরীর বিনিময় করেছি। একসাথে জীবন কাটাবো বলে চিরপ্রতিজ্ঞা করেছি। মেয়েটি ওর দূঃখের কাহিনী শুনিয়ে আমাকে ওর পুরোনো প্রেমিকের কথা বলেছে। যে ওর সাথে প্রতারনা করেছে, ওর জীবনটাকে নষ্ট করেছে। তাকেই ও ধাক্কা মেরেছে পেছন থেকে। আমি সচক্ষে দেখেছি।
আশে পাশের লোকজন ভীড় করে ফেলেছে আমার কথা শোনবার জন্য। কেউ মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কেউ বা করছে হাসাহাসি। ভাবছে কি পাগলের প্রলাপই একনাগাড়ে করে যাচ্ছে লোকটা।
আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আর ভাবছি দুটো দেহ যখন একসাথে ট্রেন লাইন থেকে তোলা হবে, তখনই বোধহয় ভুলটা এদের ভাঙবে।
লোকটির ছিন্ন ভিন্ন দেহটাকে কাপড়ে মুড়ে যখন ট্রেন লাইন থেকে তোলা হলো, তখন সত্যি আমার কথা মিথ্যে প্রমানিত হয়ে গেল। ওর দেহের সাথে আর কোনো মৃতদেহ তখন ছিল না। কোনো মেয়ের দেহ পাওয়া যায় নি। দেবিকার শরীরটাকে খুঁজে পায়নি উদ্ধারকারী দল।
দেবিকা আমাকে কথায় কথায় বলেছিল, ও আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে- তখন কথাটা ধরতে পারিনি। দেবিকা বলেছিল আমি মরেও শান্তি পাবো না। এই দুটো কথার মধ্যেই ও বোঝাতে চেয়েছিল, যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছো তুমি, সে আর ইহজগতে বেঁচে নেই। এই পাতালেই মৃত্যু ঘটেছে তার।
পুরোনো রেকর্ড বলছে, দুমাস আগে একটি সুন্দরী মেয়ের মৃত্যু হয় বালীগঞ্জ স্টেশনে। কিন্তু সেটি আত্মহত্যা না কি হত্যা? সে রহস্য ভেদ করতে পারেননি কেউ । কিন্তু পেরেছি আমি। দেবিকার আত্মাটা শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছিল এতদিন,এ স্টেশন থেকে ও স্টেশনে। ওর আত্মার সাথে যৌনসংসর্গ করেছি আমি। ভাবতেও গায়ে কেমন কাঁটা দিচ্ছে। দেবিকা প্রতিশোধ নিয়েছে। আর ওর আত্মারও মুক্তি ঘটেছে চিরতরে।
সমাপ্ত