Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.14 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery মেয়েমানুষের কেপ্ট by lekhak
#10
আঠারো
 
সকালবেলা অশোক এল গাড়ী নিয়ে। ম্যাম গাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছেন এক কথায়। সুমন ওকে ঠিকানাটা লিখে দিল। কিভাবে যেতে হবে, সেটাও বলে দিল। বলল, মা আর বোনকে নিয়ে আসবেন। আমার সব বলা আছে। শুধু গিয়ে আমাকে একটা ফোন করবেন। তাহলেই হবে। আর এই নিন আমার ফোন নাম্বার।
 
সুমন অশোকেরও মোবাইল নম্বরটা নিল। লোকটাকে বলল, যেতে লাগবে চারঘন্টা। আর আসতেও তাই। আমি এখন অফিসে যাচ্ছি, শাস্বতীর সঙ্গে। ফেরার পথে এখানেই মা, বোনকে আনবেন। আমি হয়তো সেই সময় বাড়ীতেই থাকব। আর শাস্বতীও তখন থাকবে।
 
অশোক ঘাড় নাড়ল। শাস্বতী সেজে গুজে তখন রেডী। সুমনও আকাশি রঙের একটা শার্ট পড়েছে, সাথে নেভী ব্লু রঙের প্যান্ট। শাস্বতী ওকে বলল, নতুন জীবন, নতুন চাকরী। বাঃ তোমাকে এই পোষাকে আজ দারুন লাগছে।
 
দুজনে গাড়ীতে চড়ে এবার বেরিয়ে পড়ল। যাবার পথেই অশোক ড্রপ করে দিল ওদের অফিসে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ তে তিনতলাতে সাজানো গোছানো বেশ সুন্দর শাস্বতীদের অফিস। কোম্পানীটা যার, তিনি থাকেন চেন্নাইতে। এখানে একটা শাখা অফিস খুলেছেন। ব্রাঞ্চ এর হেড হলেন স্নেহা ম্যাডাম। উনি এখানকার সবকিছু দেখাশোনা করেন।
 
শাস্বতী অফিসে ঢুকে সবার সাথে সুমনের আলাপ করিয়ে দিল। সুমন বুঝল শাস্বতীর প্রেমিক বলেই সবাই কেমন আলাদা নজরে দেখছে ওকে।
 
কর্মচারী রামগোপাল শাস্বতীকে বলল, ম্যাডাম তো এসে গেছেন। আপনাদের বলেছেন, বাইরে একটু অপেক্ষা করতে। উনি সময় মত ডেকে নেবেন।
 
শাস্বতী সুমনকে বলল, তুমি তাহলে একটু অপেক্ষা করো। আমি ম্যামকে একবার দেখাটা দিয়ে আসছি। বলি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
 
সুমন হাসি মুখে শাস্বতীর কথাটা মেনে নিল। ওকে বসিয়ে রেখে শাস্বতী, ম্যামের ঘরে গেল। ভিজিটর রা যেখানে অপেক্ষা করে সুমন সেখানেই বসে অপেক্ষা করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর শাস্বতী এলো। হাসি হাসি মুখ। সুমনকে বলল, তোমার চাকরী তো একেবারে পাকা। ম্যাম তো অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার অলরেডী রেডী করে বসে আছেন, শুধু নামটাই বসাবেন, এটাই যা অপেক্ষা। আমাকে বললেন, ওকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও। আমি একটু একা কথা বলব।
 
সুমন একটু বিচলিত হল। শাস্বতী বলল, তুমি ঘাবড়াচ্ছো কেন? উনি যেন তোমাকে খেয়ে ফেলবেন?
 
সুমন বলল, তা ঠিক নয়, তুমি থাকবে না পাশে, আমি একা যাব?
 
শাস্বতী বলল, দূর বোকা। ইন্টারভিউ আবার এরকম হয় নাকি? উনি তো তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করবেন। আমাকে বলেছেন, কোনো ভয় নেই। ওকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও। আমি দু একটা কথা শুধু বলে ওকে ছেড়ে দেবো।
 
সুমন চুপচাপ হয়ে রয়েছে দেখে শাস্বতী বলল,পুরোনো জীবন,পুরোন ঘটনা কিছুই বলবে না ম্যামকে।
 
শুধু বলবে, একটা ব্যাবসা করতাম। ব্যবসাটা নেই। চাকরীর বড় প্রয়োজন, তাই এসেছি আপনার কাছে।
 
শাস্বতী সুমনকে হাত ধরে নিয়ে এল ম্যাডামের ঘরের সামনে। চেম্বারের ভেজানো দরজাটা আলতো করে ঠেলা মারতেই ওটা খুলে গেল। সুমন দেখল ভেতরে এক মহিলা বসে আছেন। কিন্তু তার মুখটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। ঘরে যেন কোন আলো নেই, আবঝা অন্ধকারের মতন। কে যেন ঘরের বাতিটা নিভিয়ে দিয়েছে ও আসার আগেই, ম্যাডামের মুখ তাই অস্পষ্ট। উনি আবার চেয়ারটাও ঘুরিয়ে নিয়েছেন পেছন দিকে। শরীরটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু ম্যাডামের মুখটাকে কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না।
 
পেছনে শাস্বতীও নেই। সুমনকে ভেতরে ঢুকিয়ে ও এখন বাইরে। মহিলা বললেন, কি হল সুমন?দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বসো। আমি তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।
 
মহিলা সুমনকে বসতে বললেন। কিন্তু গলাটা শুনে সুমনের মনে হল, উনি একটু ভারী ভারী করে কথা বলছেন। এই কন্ঠস্বর যেন ওর অতি চেনাপরিচিত। কোথায় যেন শুনেছে। অথচ গলা ভারী করে উনি সুমনকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছেন।
 
-তোমার চাকরীর হঠাৎ কি প্রয়োজন? একটু খোলসা করে বলবে কি?
 
সুমন দেখল মহিলা তখনও পেছন দিকে মুখ করে রয়েছেন। কিছুতেই সুমনের দিকে মুখটা ঘোরাচ্ছেন না। দেখে মনে হবে যেন ওকে তাচ্ছিল্য করছেন। আর শাস্বতীর মন রাখার জন্যই উনি সুমনকে ঘরে ডেকেছেন।
 
-না মানে শাস্বতী কিছু বলে নি আপনাকে?
 
-শাস্বতী কি বলবে? আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই।
 
-আমি একটা ব্যাবসা করতাম। ব্যাবসাটা নষ্ট হয়ে গেছে তাই-
 
-সুমন, তুমি ব্যাবসা করতে? এও কি আমায় বিশ্বাস করতে হবে। ব্যাবসা না অন্যকিছু?
 
-কেন? একথা বলছেন কেন?
 
-শাস্বতীকে তুমি বোকা বানিয়েছ, না শাস্বতী তোমার ব্যাপারটা পুরো জানে?
 
-কিসের কি বোকা বানিয়েছি? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
 
-তোমার হয়ে যে আমার কাছে সুপারিশ করল, এত করে সাধাসাধি করল, তাকে তুমি বোকা বানালে,এই সহজ কথাটা তুমি বুঝতে পারছ না?
 
একেবারে মালকিন্ ঢঙে কথা বলছেন মহিলা। কিন্তু শুরুতেই এত অবিশ্বাস কেন? তাহলে সুমনের পাস্ট লাইফ সন্মন্ধে উনি কি কিছু জানেন?
 
সুমন একটু গম্ভীর হয়ে বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
 
মহিলা এবার বললেন, আচ্ছা সুমন ধরো তোমার চাকরীটা পাকা। আমার জন্য তাহলে তুমি কি করতে পারবে?
 
সুমন বুঝলো, এই মহিলাও তার মানে ঐ ক্যাটাগরীর। যা সন্দেহ করেছিল, তাই হয়েছে। মহিলাকে বলল, আমাকে কি করতে হবে?
 
স্নেহা ম্যাডাম এবার বললেন, আজ তুমি এত গম্ভীর কেন? শুনেছি তুমি নাকি খুব রোমান্টিক, আদর্শ প্রেমিক। মেয়েরা তোমাকে দেখলে পাগল হয়ে যায়, তাহলে আজ কেন এত গম্ভীর? আমার কাছে এসেছ বলে?
 
সুমন বলল, কে বলেছে আপনাকে? শাস্বতী?
 
মহিলা বললেন, ধরো তাই। আমার যেমন একটু রোমান্টিক ছেলে বেশী পছন্দ। পুরুষের মিষ্টি মিষ্টি কথা, ভালোবাসার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য মেয়েরা যেমন অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকে। তোমার কাছ থেকে আমিও যদি পেতে চাই, তুমি কেমন ভাবে নেবে ব্যাপারটাকে?
 
এই প্রথম সুমনের চোখ মুখে যেন একটা বিরক্তির ভাব ফুটে উঠল। মনে মনে বলল,এও কি আমাকে পাল্টে যেতে দেবে না? অফিসের মালকিন হয়ে এমন কথা বলছে? মহিলার হঠাৎই শরীরে এত রসকস কেন?
 
স্নেহা ম্যাডাম বললেন, তোমার কাজটা আমার কাছে কিরকম হবে বলোতো? এক নারীর হারেমে, তুমি হলে আমার বন্ডেড লেবার। তোমাকে চাকরী আমি কি দেবো? তুমিই চাকরীটা গ্রহন করে ধন্য করবে আমাকে।
 
সুমনের চোখ মুখ এবার ভীষন লাল হয়ে উঠল। শাস্বতীর ওপর রাগ হচ্ছিল। তাহলে কি ও বিশ্বাসঘাতকতা করল। এই মহিলাটির দালাল হয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে আমার সঙ্গে। এতবড় ছল? এতবড় প্রতারনা?
 
সুমন চেয়ার ছেড়ে উঠতেই যাচ্ছিল, মহিলা বললেন, আরে রাগ কেন করছ ডারলিং? আমি তো তোমার ভাল করতেই চাইছি।
 
-আপনি আমাকে ডেকে এনে এসব আজে বাজে কথা বলছেন?
 
-আজেবাজে কথা? কি বলছ তুমি সুমন? চাকরীর জন্য তুমি এসেছ, খুব ভাল কথা। কিন্তু সত্যি করে বলতো? চাকরীর কি তোমার নিতান্তই দরকার? যার কিনা এত মারাত্মক গুণ, একটি বিদ্যায় তুমি এত পারদর্শী। একেবারে টপ ক্লাস। যে কোন মেয়েকে-সে যদি ফ্রিজিড মেয়েও হয়- একরাতের মধ্যে তাকে পাগল করে দিতে পারো। দ্য বেস্ট অব্ অল। বহূরকমের খেলা জানে, যেন জন্মগত ক্ষমতা, নইলে এ বয়সে অভিজ্ঞ এবং এক্সপার্ট হওয়া চারটিখানি ব্যাপার নয়। তার দরকার চাকরী, আমি তো ঠিক কথাই বলছি। শাস্বতী ছাড়া এর আগে কজন মেয়ের সাথে শুয়েছ?
 
সুমন এবার চেয়ার ছেড়ে সত্যিই উঠে পড়ল। বিরক্তি নিয়ে বলল, না আমাকে এবার যেতে হবে। আমি মনে হয় ভুল জায়গায় এসে পড়েছি। শাস্বতী যদি আমার সন্মন্ধে আপনাকে কিছু বলে থাকে, তাহলে সেটা শাস্বতীর দোষ। আমার নয়। এমন জানলে আমি এখানে আসতাম না।
 
মহিলা এবার মুখটা ঘোরালেন। সুমনকে বললেন, আরে দাঁড়াও, দাঁড়াও। তোমার দুরাতের বেডপার্টনারকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে?
 
সুমন অন্ধকারেই মুখটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করতে লাগল। চেঁচিয়ে বলল, কে আপনি?
 
মহিলা এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন, সুমনকে বললেন, ডলি কে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে মাই সুইট হার্ট? আমি যে তোমার ডলি। এতক্ষণ কথা বলেও ধরতে পারলে না?
 
সুমন অবাক হয়ে বলল, ডলি? তুমি?
 
ডলি যেদিকটায় বসেছিল, টেবিলের নিচেই ছিল সুইচটা। অন করে আলোটা জ্বেলে ঘরটাকে আলোময় করল। ভূত দেখার মতন ডলিকে দেখে সুমন বুঝল, ওর জীবনে বুঝি নতুন করে আবার অন্ধকার নেমে এলো।
 
-কেন তুমি আমাকে কাল মিথ্যা কথা বললে সুমন? এই ডলির কথা তোমার একবারও মনে পড়ল না? শুধু শাস্বতীকে নিয়েই দুটোদিন কাটিয়ে দিলে। আর আমাকে বললে, তোমার শরীর খারাপ, জ্বর? কিসের জন্য? জানো ঐ মেয়েটা আমার এখানে চাকরী করে। তুমি যদি আমাকে কাজের কথা তখনই বলতে, আমিই তো তোমাকে কাজ পাইয়ে দিতাম? কি দেখলে তুমি ওর মধ্যে, যা আমার মধ্যে নেই?
 
সুমন হকচকিয়ে গেছে। বুঝতে পারছে না ডলি কি করে স্নেহা ম্যাডাম হতে পারে? এই অফিসে ও শাস্বতীর বস। অথচ সুমন, শাস্বতী কেউ সেটা বুঝতে পারেনি?
 
সুমন আমতা আমতা করে বলল, কিন্তু ডলি,তুমি এখানে? আমি তো-
 
-ভাবতে পারো নি তাই তো? ভেবেছিলে বোকা বানাবে আমায়? আমার চোখকে ফাঁকি দেবে? মেয়েটাকে বিয়ে করে ওকে নিয়ে ঘর করবে। আমারই সামনে ওকে নিয়ে ঘুরবে। আবার এখানেই চাকরী করবে। সবই হবে আমারই দয়ায়। অথচ আমি যেটা চাইবো, সেটা তুমি আমাকে দেবে না। কেন, কেন, কেন?
 
হাত পা যেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সুমন দেখল ডলি এবার এগিয়ে এসেছে ওর দিকে। ওর গলাটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। ওর ঠোঁটে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছে। যেন সুমনকে এভাবে পাওয়াটা বিধাতার চমৎকার ওর কাছে। খুশী মনে সুমনকে বলছে, তুমি কিছু চিন্তা কোরো না ডারলিং। চাকরী তোমার পাকা। শাস্বতীর সঙ্গেও যা বোঝাপড়ার আমি করে নেব। তুমি শুধু আমারই ছিলে, আমারই আছো, আর আমারই থাকবে। উম্ ম্ ম্। বলেই চকাস করে একটা চুমু খেয়ে বসল সুমনের ঠোঁটে।
 
সুমন বলতেই যাচ্ছিল, কিন্তু তুমি কি করে স্নেহাম্যাম হলে। আমি তো এই নামটা জানতাম না। ডলিই শুনেছি।
 
দেখলো, ডলির ঠোঁট ওর ঠোঁটের ওপর প্রবল ভাবে চেপে বসেছে। চুক্ চুক করে বিকট ঠোঁট চোষার মতন শব্দ করে ডলি বলল, আরে এটা তো আমার ভাল নাম। স্নেহা মুখার্জ্জী। আর ডলি হল আমার ডাক নাম। তোমার কাছে আমি ডলি হিসেবেই থাকবো। স্নেহা নয়। ওঃ সুমন। কিস মি। অ্যান্ড অ্যাকসেপ্ট মাই লাভ।
 
তীব্র একটা ঘেন্না চেপে বসেছে। ডলি ওরফে স্নেহাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছিল সুমন। ও কিছুতেই সুমনকে ছাড়বে না। ঠোঁটটাকে এমন ভাবে আঁকড়ে ধরেছে, যেন কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেবে। ঠিক গৌরী যেভাবে সুমনকে বলেছিল, সেভাবেই ওকে বলল, সুমন,শাস্বতীও তোমার জীবনে থাক। আর আমাকেও তুমি রেখে দাও। ফিফটি ফিফটি। শতকরা পঞ্চাশ ভাগ তুমি ওকে সুখী করবে, আর বাকীটা আমাকে।
 
সুমন বলল, তুমি সরে যাও। বড্ড নোংরা তুমি।
 
বলেই ডলিকে একটা ধাক্কা মারল সুমন। ডলি ঠেলা খেয়ে বলল, কি? আমি নোংরা? মেয়েমানুষের কেপ্টগিরি করো, আবার আমাকে বলছ নোংরা?
 
সুমন দেখল ডলির চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। রাগে যেন থরথর করে কাঁপছে। আর ঠিক তার একটু আগেই শাস্বতী না বলে ঢুকেছে ডলির চেম্বারে। ঘন চুম্বনের নির্লজ্জ্ব দৃশ্য দেখে শাস্বতী কেমন পাথরের মতন হয়ে গেছে।
 
মাথাটা নিচু করে শাস্বতী ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সুমন ছুটে শাস্বতীকে ধরার চেষ্টা করল। শাস্বতী ওর ডাকে সারা না দিয়ে চট করে ঢুকে গেল লিফ্টে। সুমন বলল, শাস্বতী যেও না। শোনো আমার কথা-
 
লিফ্টে শাস্বতীকে নিচে নেমে যেতে দেখে তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল সুমন। গ্রাউন্ড ফ্লোরেও শাস্বতী আর নেই। চোখের নিমেষে উধাও হয়ে গেছে এই বিল্ডিংটা ছেড়ে। এদিক ওদিক কোথাও নেই। না রাস্তার মোড়ে, না ফুটপাতে।
 
একটা ট্যাক্সি নিল সুমন। হয়তো শাস্বতী বাড়ীর দিকে রওনা দিয়েছে। বৌবাজারে নিজের বাড়ীতে এসে সুমন দেখল শাস্বতীর ঘরে তালা দেওয়া। ও এখনো ফেরেনি অফিস থেকে।
 
যেন ছাই কাঠে বলি হওয়ার মতন দগ্ধ শরীরটা নিয়ে সুমন উঠে এল দ্বোতলায়। পকেট থেকে চাবি বার করে, নিজের ঘরের দরজাটা খুললো। ফিল্টার থেকে জল গড়িয়ে একগ্লাস জল খেলো। বিধ্বস্ত শরীরটা নিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ল। মাথার মধ্যে একরাশ দুশ্চিন্তা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কি ভেবেছিল শাস্বতী, আর কি হল।
 
জীবনটা কেন এরকম? ব্যাথা যন্ত্রনাগুলো বারবার শুধু ঘুরে ফিরে আসে। এর থেকে কি মুক্তি নেই? যা চেয়েছি আমি, তা কেন পাই না জীবনে? আর যা পাই। তা যে আমি সত্যি চাই না। এক দিশাহারার মতন জীবন কাটাতে কাটাতে ভেবেছিলাম এবার বুঝি জীবনে স্থিতিশীলতা আসবে। প্রেমের বাসাটাকে যখনই গড়তে চাই, তখনই ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। কেন এই বারে বারে ঘুরে আসে জীবন? তাহলে কি আমার জীবনে প্রেম নেই। জীবনের যা দেখা স্বপ্ন সবই ভুল?
 
টিভির রিমোর্টটা হাতে নিয়ে টিভিটা অন করল সুমন। দেখলো পুরোনো দিনের একটা বাংলা ছায়াছবি হচ্ছে একটা চ্যানেলে। আর ওর অতি পরিচিত সেই গানটা হচ্ছে।
 
ভুল সবি ভুল, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সবি ভুল
এই শ্রাবনে মোর ফাগুন যদি দেয় দেখা সে ভুল।
প্রশ্ন করি নিজের কাছে কে আমি?
কোথায় ছিলাম, কোথায় যাব এই আমি।
মেঘের ফাঁকে একটু চাঁদের ঐ রেখা, সে ভুল। ভুল সবি ভুল।
চলে গেলে ডাকবে না তো কেউ পিছু, স্মৃতি আমার থাকবে না তো আর কিছু।
যদি ভাবি এই আমি আর নই একা, সে ভুল। ভুল সবি ভুল।
 
সুমনের চোখ ফেটে জল আসতে লাগল। মনে হল, এভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না। তার চেয়ে জীবনটাকে শেষ করে দিতে পারলেই ভালো।
 
তড়িঘড়ি ও বিছানা থেকে উঠে এবার চিন্তা করতে লাগল, কি করা যায়? মরতে হলে কিভাবে মরবে? যা করার এখনই করতে হবে। আর একটুও বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
 
হঠাৎই মায়ের মুখটা মনে পড়ে গেল, কেয়ার মুখটা মনে পড়ল। সুমনের ভেতরটা হূ হূ করে উঠল। না না, এভাবে ওদেরকে কষ্ট দিয়ে আমি মরতে পারব না। আমাকে বাঁচতেই হবে। মা বোনকে আমাকে দেখতেই হবে। দরকার হলে আমি ঐ জীবিকাতেই ফিরে যাব আবার। প্রেম যখন আমার জীবনে নেই। তখন ভালোবাসার মোহে থেকে কোন লাভ নেই। কেউ আমাকে ভালবাসতে দেবে না। সব স্বার্থপর। সব স্বার্থপর।
 
ঠিক সেই মূহূর্তেই সুমনের মোবাইলে ফোনটা এল। সুমন দেখল ওকে অশোক ফোন করেছে। ফোনটা ধরতেই ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। অশোক বলল, এই নিন সুমন বাবু। আপনি মায়ের সাথে কথা বলুন।
 
সুমনের মা ফোনটা ধরে সুমনকে বললেন, কি রে সুমন? আমরা যাচ্ছি তাহলে। তুই আছিস তো?
 
সুমন ভারী গলায় বলল, হ্যাঁ মা। এসো তোমরা। আমি অপেক্ষা করছি।
 
মায়ের মন যেন চট করে ধরে নিতে পারে। সুমনকে বললেন, কিরে তুই ঠিক আছিস তো সুমন?
 
সুমন বলল, হ্যাঁ মা, আমি ঠিক আছি।
 
ফোনটা রেখে আবার ওর চোখে একটু জল চলে এল।
 
তখন সন্ধ্যে সাতটা। সুমন অপেক্ষা করছে, মা আর কেয়ার জন্য। গাড়ীটা এসে বাড়ীর সামনে দাঁড়ালো। সুমন ছুট্টে গেল নীচে। গাড়ী থেকে নামছে মা, আর কেয়া। সুমন দেখল মায়ের মন খুব খুশি খুশি। গাড়ী থেকে নেমেই সুমনকে বললেন, কি রে যে মেয়েটার সাথে ভাব করছিস, ওকে আমাকে দেখাবি না? কোথায় সে?
 
সুমন বলল, তুমি এসো তো ওপরে। আমি সব বলছি।
 
মাকে দুহাতে তুলে নিয়ে সুমন চলে এল দ্বোতলায়। কেয়াও উঠে এল পিছু পিছু। অশোক ততক্ষণে বিদায় জানিয়ে চলে গেছে। সুমনের মাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। মা বললেন, কোথায় সে? ওকে আনবি না?
 
হঠাৎই সুমন দেখল, শাস্বতী দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে। মাকে বলছে, এই তো মা আমি এসেছি। আমি শাস্বতী।
 
অবাক হয়ে সুমন তাকিয়ে আছে, শাস্বতীর দিকে। সুমনের মাকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল শাস্বতী। মা ওর কপালে চুমু খেলেন। তারপর কেয়াকেও জড়িয়ে ধরে আদর করল শাস্বতী। সুমনের মুখে কোন কথা নেই। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ছলছল করে। শাস্বতীকে বলল, শাস্বতী, তুমি চলে গেলে? কোথায়?
 
শাস্বতী বলল, যাই নি কোথাও। দুঘন্টা পরে অফিসে ফিরে রেজিনেশন লেটারটা দিয়ে এসেছি। ওখানে চাকরীটা করার আমার আর ইচ্ছা নেই।
  
সমাপ্ত
[+] 3 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মেয়েমানুষের কেপ্ট by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 11:27 AM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)