Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.14 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery মেয়েমানুষের কেপ্ট by lekhak
#6
বারো
 
সেদিন যদি সুমনকে গৌরী কব্জা করতে না পারতো, বিকৃত কামনায় জর্জরিত, যৌন কাতর বিবাহিত মহিলাটির ফাঁদে পা দিয়ে সুমন যদি আগুন নিয়ে না খেলতো। টাকার নেশায় ওকে হয়তো এ পথে নামতে হত না। অর্থের ঝমঝমানি যে কোন সুমধুর সম্পর্ককে ঢেকে দেয় কালো রুমালে। কোথায় হারিয়ে গেল সুন্দরীর প্রতি মোহ, ভালবাসা। আজ শুধু ও এক পেশাদার শরীর সন্ধানি। এক মৌচাক থেকে অন্য মৌচাকে যাকে উড়ে বেড়াতে হয় ফুরফুরে ভ্রমরের মত। সুমনের এই পেশায় ভালবাসার কোন আবেগ নেই। অনুভূতি গুলো কবেই হারিয়ে গেছে মাঝ আকাশে।
 
শাশ্বতী বলল, মেয়েটা তোমাকে ফাঁদে ফেলেছিল, সুন্দরীর সাথেও তোমার ভালবাসার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল। তারপরে তুমি কি রাগে দূঃখে এই পেশায় চলে এলে? পেছনে আর কি কারন ছিল?
 
শাশ্বতীর কথা শুনে সুমন হাসছিল। বলল, আমার জীবনের কাহিনী শুনতে গেলে, তোমাকে অনেক রাত কাটাতে হবে আমার সঙ্গে। এক রাতে সব কাহিনী বলে দেওয়া সম্ভব নয়।
 
সুমনের ঠোঁটে চুমু খেল শাস্বতী। বলল, এখন তো সকাল হতে অনেক বাকী। আর আমি তো সারাজীবনটাই তোমার সাথে কাটাবো বলে ঠিক করেছি। তোমার জীবনের কাহিনী, তুমি আমাকে বলবে, এতে আর অসুবিধে কি? তোমার কথা শুনতে শুনতে কখন যে আমার চোখে ঘুম এসে গেল, আমি বুঝতে পারিনি।
 
সুমন বলল, আজ না হয় থাক। যদি তোমার ইচ্ছে হয়, পরে কোনদিন শোনাবো আমার বাকী জীবনের কাহিনী।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ও বাবা এখন তো তিনটে বাজে। অনেক রাত্রি। ঘুমিয়ে নাও। বাকীটা না হয় কাল সকালে বলবো।
 
শাস্বতী ঘুমোতে চাইছিল না। সুমনকে জোর করছিল। সুমন বললো, আমি এক পুরুষ গণিকা। আমার জীবনের কাহিনী শুনতে এত আগ্রহ তোমার? কি কারনে? এসব শুনলে তোমার ভালবাসা যে কমে যাবে আমার প্রতি। একটা পুরুষমানুষ কেপ্ট এর সাথে ঘর বাঁধতে চাইছ,ভেবে দেখো, পরে যদি তোমার মত পরিবর্তন হয়, আমি কিন্তু আফশোস করবো না। জীবনে দূঃখ অনেক পেয়েছি, নতুন করে দূঃখ আর পেতে চাই না।
 
শাস্বতী বলল, তুমি কি ভাবছ? তোমার শরীরটার জন্য আমিও ভালবাসার খেলা খেলছি তোমার সঙ্গে? অতীতের দূঃখ কষ্ট সবাব জীবনেই তো কিছু না কিছু থাকে। মন খুলে তুমি আমাকে সব বললে, তুমিও হাল্কা হবে। আমিও তোমাকে বলতে পারবো না, ‘সুমন জীবনের ওই ঘটনাটা তুমি তো আমাকে কোনদিন বলো নি?’
 
সুমন ভাবছিল, পেশাদার গণিকা হয়ে অজস্র মহিলার সাথে ও কাটিয়েছে রাত। কখনো কোন মধ্যবয়সিনী, কখনো উদ্ভিন্ন যৌবনা, আবার কখনো সদ্য স্বামী হারা। সকলের সাথেই ওর ভাব ভালবাসা হয়েছে। কিন্তু সেটা শুধুই শরীর সন্মন্ধীয়। এই কবছরে পেশাদারী জীবনে সুমন প্রত্যক্ষ করেছে অনেক রমনীর চোখ থেকে ঝরে যাওয়া মরা বকুলের মত কামনাকে। আবার অনেকের বুকের মাঝে তুষের আগুনের মত নিশিদিন জ্বলতে থাকা কামনা বাসনার আগুন শিখাকে। কিন্তু এই মেয়েটা যেন অন্যরকম। শাস্বতীর মধ্যে সুন্দরীর কিছুটা হলেও ছায়া দেখতে পাচ্ছে ও। পেশাদার হয়েও সুন্দরীকে জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি সুমন। শাস্বতীর ভালবাসা সোহাগ মেশানো কথাগুলো ওকে অবাক করছে, ভাবছে সত্যিই কি আবার সু্ন্দরীর জায়গাটা নিতে পারবে মেয়েটা? না এও ফায়দা নিয়ে চিরকালের মত সরে যাবে জীবন থেকে।
 
সুমন বলল, পুরোনো কথা ভেবে নিজের মনকে কষ্ট দিতে আমারো ভাল লাগে না। তুমি জোর করলে তাই বললাম, এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে গৌরী আর সুন্দরীর কথাই চিন্তা করছিলাম।
 
শাস্বতী বললো, তারপর কি হল?
 
সুমন বললো, গৌরী আমাকে বিকাশদার নাম করে ডেকেছিল, শরবতের সঙ্গে উত্তেজক ওষুধ মিশিয়ে আমাকে দিয়ে অপকর্ম গুলো করালো। উন্মাদ কামুকের মত উলঙ্গ হয়ে আমিও গৌরীর সাথে যৌনসঙ্গমে রত হলাম। সঙ্গম শেষে ঝলকে ঝলকে তেজদীপ্ত বীর্যধারায় প্লাবিত হল গৌরীর যোনীপ্রদেশ। সারারাত ওর বুকে মুখ রেখে কতক্ষণ শুয়েছিলাম জানি না, যখন ঘুম ভাঙলো, উঠে দেখি গৌরী মিচকি মিচকি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে।
উন্মাদের মত ওর লোভী শরীরটা লেহন করেছি। আগ্রাসী যুবকের মত আমি গৌরীকে ভোগ করেছি, অথচ সকালবেলা দুহাতে মুখ ঢেকে শুধু অস্ফুট আর্তনাদ করে বলছি, এই পাপটা তুমি আমাকে দিয়ে করালে কেন? কি প্রয়োজন ছিল? তুমি জানো আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি? যা অপকর্ম করলাম, নিজের মনকে কি কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো আমি?
 
গৌরী বললো, ভালো তো আমিও বাসি তোমাকে। বিবাহিত বলে কি কাউকে ভালবাসতে নেই? তুমি ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না সুমন। চলো আমরা এই গ্রাম থেকে অন্যকোথাও চলে যাই।
 
সাত সকালেই ও আবার জড়িয়ে ধরলো আমাকে।
 
এক ঝটকায় ওকে দূরে ঠেলা দিয়ে বললাম, সরে যাও। আমাকে ছোবে না তুমি নীচ। খুব নীচ। মা ঠিকই বলেছিল। বিকাশদার বৌ টা খারাপ। তুই জেনে বুঝে ও পথ মারাস না। আমাকে বাড়ীতে মিথ্যে বলে ডেকে এনে তুমি যা করিয়েছ এর কোন ক্ষমা নেই।
 
শাস্বতী শুনে বললো, তারপর?
 
সুমন বললো, গৌরী এবার গিরিগিটির মত রঙ বদলাতে শুরু করলো। আমাকে বললো, আমি খারাপ তো, তোমার ঐ সুন্দরীর কাছে যাও না? আমিও বলে দেব ঐ মেয়েটাকে। রাত দুপুরে তুমি আমার ঘরে এসে বিকাশদার অনুপস্থিতিতে কি করেছ আমার সঙ্গে। সুন্দরীও বুঝে যাবে, তার এই প্রেমিকটি কত সাধুপুরুষ। রাত বিরেতে যে বিবাহিত মহিলার ঘরে চলে আসে, সে বুঝি খুব ভালো?
 
সুমন বললো, আমি গৌরীর গালে রেগে একটা চড় কসাতে যাচ্ছিলাম। ও তখনই চেঁচিয়ে উঠে আমাকে শাসিয়ে বললো, আমি কিন্তু ডেকে লোক জড়ো করবো এখানে। বলবো আমাকে একা পেয়ে তুমি আমার ইজ্জত নিতে এসেছিলে এ বাড়ীতে।
 
নাগিন মেয়েছেলে, ওর পক্ষ্যে সবই সম্ভব। কথা না বাড়িয়ে আমি জামাকাপড় পরে নিলাম। তক্ষুনি ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলাম, গৌরী ঠিক তখনই আবার আমার পায়ে ওপর পড়ল। আমার পা দুটো জড়িয়ে বললো, না না তুমি এভাবে যেও না। দোষ আমার। আমি ভুল স্বীকার করছি। আমাকে তুমি যা খুশি বলো, আমাকে মারো ধরো, গালাগালি দাও, কুলটা বলো, আমি শুধু একটা কথাই বলবো, ‘তোমাকে আমি ভালবাসি সুমন। তুমি যদি এভাবে আমাকে ঘৃণার চোখে দেখো, আমি কিন্তু আত্মহত্যা করে মরবো।
 
শাস্বতী বললো, গৌরী তো একেবারে সাংঘাতিক।
 
সুমন বললো, নারী যখন কামনায় কাউকে হাসিল করতে চায়, তখন সে পুরুষের থেকেও সাংঘাতিক। গৌরীর মধ্যে যে জেদটা আমি দেখেছি, আজ অবধি কোন নারীর মধ্যে এমনটা দেখিনি। বীভৎস কামনা। আমি যদি না বলে দিই, কিছু একটা কান্ড করে বসবে মেয়েটা।
 
শাস্বতী বললো, তুমি কি বললে?
 
সুমন বললো, আমি আর কি বলবো? তার আগেই ও দেখি একেবারে তৈরী হয়ে রয়েছে। রান্নাঘর থেকে একটা ধারালো ছুরী এনে বুকের কাছে ধরে বললো, আমাকে ঠুকরে তুমি যদি চলে যাও। এক্ষুনি ছুরীটা বুকে বসিয়ে শেষ করে দেবো নিজেকে।
 
অসহায় আমি, গৌরীর অমন কান্ডকারখানা দেখে চোখে জল এসে যাচ্ছিল। ওকে বললাম, এটা ঠিক নয়। তুমি বিকাশদার বৌ। বিকাশদা জানতে পারলে আমায় আস্ত রাখবে না। আমি বিকাশদার চোখে খারাপ হয়ে যাব। এ কখনই সম্ভব নয়। তাছাড়া আমার এখন একটা কাজের খুব দরকার। আমাকে কাজের জন্য কলকাতায় যেতে হবে। বাড়ীতে মা বোনকে তাহলে কে দেখবে? বাবা মাথার ওপরে এতদিন ছিলেন। এখন নেই। তোমার এসব লোভ লালসা মেটাতে আমি পারবো না।
 
গৌরী আবার বললো, কাজ তো দুমুঠো অন্ন আর টাকা রোজগারের জন্য। তোমার টাকার যোগান যদি আমি দিই, তাহলে তো তোমার অসুবিধে হবে না? আমিই তোমাকে টাকা দেবো, কত চাই? কলকাতায় যাওয়া কি তোমার একান্তই দরকার?
 
শাস্বতী বলল, ও কি তোমায় টাকা দিয়ে কিনে নিতে চাইল?
 
সুমন বললো, অনেকটা তাই। আমি রাজী হলাম না। বললাম, না না এটা ঠিক নয়, আমি সুন্দরী বলে একটা মেয়েকে ভালবাসি। তার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমি তোমার এখানে আসতে পারবো না।
 
শাস্বতী বললো, তারপর?
 
সুমন বললো, গৌরী সব শুনে বললো, তাতে কি হয়েছে? তোমার জীবনে সুন্দরীও থাক আর এই গৌরীও থাক। মাঝে মধ্যে বিকাশদা যখন থাকবে না, তুমি চলে আসবে। সুন্দরীকে তুমি নয় শতকরা আশি ভাগ দিও।আমাকে তোমার ভালবাসা থেকে মাত্র কুড়ি ভাগ দিলেই আমি খুশি হবো।
 
অবাক হয়ে সুমনের কথা শুনছিল শাস্বতী। সুমন বললো, নারীরা ভীষন সার্থপর হয়। নিজের দিকটা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। মনে হল, সেই মূহূর্তে গৌরীকে না বলে দিলে ওর হাত থেকে নিস্তার নেই। কোনরকমে ওর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ওকে বললাম, ঠিক আছে এখন তো যেতে দাও। সারারাত তোমার এখানে পড়ে আছি। বাড়ীতে মা কিন্তু জানে তোমার কাছেই এসেছি। এখন সকাল। এরপরে খোঁজার জন্য লোক পাঠালে কিন্তু তুমি আমি দুজনেই বিপদে পড়ব।
 
গৌরী আমার হাতে দুহাজার টাকা দিল। বললো, বিকাশদা দুতিনদিন এখন ফিরবে না। শাশুড়ী মাও ফিরবে সেই তিনদিন পর। আমি যদি এই কটা দিন ওর কাছে এসে ওর সঙ্গ দিই ওর ভাল লাগবে।
 
আমি টাকাটা নিতে চাইছিলাম না। ও প্রায় জোর করেই দিল আমাকে। টাকা নেওয়া মানেই গৌরীর কথা মতন চলা। ও ডাকলেই যেতে হবে আমাকে, আবদার মেটাতে হবে। আমি যেন সফল শরীর সঙ্গম অন্তে উপহার হিসেবেই পেলাম টাকাটা। গৌরী সেদিন মনে মনে হয়তো হেসেছিল। এখন থেকে আর জাল কেটে পালাতে পারবে না তুমি। যখনই ইচ্ছে হবে, ম্যাজ ম্যাজ করবে শরীরটা। মাথাটা একটু ভার ভার লাগবে। তখনই পাঠাবো আমি আমন্ত্রণ। যেখানেই থাকো, আমার ডাকে ছুটে আসতে হবে তোমাকে।
 
শাশ্বতী বললো, কিন্তু তুমি তো টাকাটা নিয়ে পরেও প্রত্যাখান করতে পারতে গৌরীকে। যদি না যেতে ও কি জোর করত তোমায়? গৌরীকে এড়িয়ে চললে, সুন্দরী হয়তো তোমার জীবন থেকে সরে যেতে পারতো না।
 
সুমন বললো, আমার এই সুন্দর শরীরটাকে বিকিনির হাটে পশরা করে মেলে ধরা, কখনো বালীগঞ্জ পার্ক রোডের কোন সাজানো প্রাসাদ বাড়ি,কখনো ফ্রি-স্কুল স্ট্রীটের এক চিলতে ফ্ল্যাট, কখনো প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রীটের কোন অন্ধকার বিবর, ডাক আসে যখনই মধ্যরাতে মাতাল হওয়ার মত সাড়া দিতে হয় সুমনকে। কেন জানো?
 
শাস্বতী বললো কেন?
 
সেদিনের গৌরীর সাথে ঐ ঘটনার দিন পনেরো পরেই সুন্দরীর সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
 
শাস্বতী বললো কিভাবে? সুন্দরী জানলো কি করে?
 
একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে সুমন বললো, বিশ্বাসঘাতকতার করুন কাহিনী। নারী যে এত শয়তান হতে পারে আমার ধারনা ছিল না।
 
শাস্বতী অবাক হয়ে বললো, গৌরী?
 
সুমন বললো, হ্যাঁ গৌরী। শরীরের মধ্যে শেষ না হওয়া এক যৌনতার আগুন আঁচ। এক রাতে আমাকে একটু একান্তে পেয়ে কি সন্তুষ্ট থাকবে গৌরী? কিভাবে কেন জানি না ও সুন্দরীর কানে কথাটা তুলে দিয়েছিল।
 
শাস্বতী বললো, সেদিনই?
 
সুমন বললো, না সেদিন নয়। ও দেখতে চেয়েছিল, আমি ওর ডাকে আবার আসি কিনা? সুন্দরীর কানে কথাটা তুলে দিয়ে ভয় দেখানোর ব্যাপারটা তো আছেই। আমি না যেতে চাইলে ও হূমকি দিত। বলতো, তুমি যে সুন্দরীর সাথে দেখা করো, কথা বলো, আমি কি বাঁধা দিই তোমাকে? তাহলে আমি ডাকলে তুমি আসতে চাও না কেন?
 
আমি তারপরেও ওর ডাকে বেশ কয়েকবার গেছি। বিকেলে সুন্দরীর সাথে দেখা করতাম, আর রাতে বিকাশদার অনুপস্থিতিতে আমি গৌরীর কাছে চলে যেতাম। ঘরে টাকা নেই, কাজ পাচ্ছি না। যখনই যাই গৌরী আমার হাতে টাকা গুঁজে দেয়। কখনো কোন ছেলের হাত দিয়েও আমার কাছে টাকা পাঠায়। যৌনকাতরা গৌরীকে পরিতৃপ্তা করে আমি কিছু টাকা পাচ্ছি, কিন্তু জীবনের অলিখিত সর্বনাশের সূচনা তখন আমার হয়ে গেছে। আমি ক্রমশ জীবনটাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। তখনো জানি না, এই গৌরী আর সুন্দরী দুজনের কেউই যখন আমার জীবনে থাকবে না, তখন কত রমনী আসবে, শাটল ককের মত এক রমনীর শরীর থেকে অন্য রমনীর শরীরে আমাকে উড়ে বেড়াতে হবে।
 
শাস্বতী দেখলো সুমনের চোখে জল। সুমনকে বললো, তুমি কাঁদছো?
 
সুমন বললো, আমি এখন কাঁদি না। আগে খুব কাঁদতাম। চোখের জলগুলো সব কেঁদে কেঁদে আমার শুকিয়ে গেছে। ভালোবাসা নেই, পৃথিবী থেকে যখন হারিয়ে গেছে তখন দূঃখ করে কেঁদে কেটে আর কি হবে? ও তোমার দেখার ভুল।হয়তো চোখে কিছু পড়েছে, তাই কোন থেকে একটু জল বেরিয়ে এসেছে।
 
তেরো
 
সকাল হয়েছে, শাস্বতী বললো, আমি আজ কাজে বেরোবো না। তোমার সাথে বসে গল্প করবো। তুমি রাজী আছো তো?
 
সুমন বললো, সব কথা আমার কাছ থেকে জেনে নিলে, এবার আমাকে তোমার মনে ধরবে তো?
 
শাস্বতী হাসছিল। বললো, এ পেশায় আসার পর থেকে তোমার তো অনেক ক্লায়েন্ট। নাম গুলো যদি শুনতে শুরু করি, সারাদিন লেগে যাবে, এক একটা কাহিনী শুনতে। আমি ওসব শুনতে চাই না, শুধু জানতে চাই, গৌরীই কি তোমার জীবনকে এমন বদলে দিল? বিকাশদার কাছে ধরা পরার পরে তুমি কি করলে? তুমি গ্রাম ছেড়ে চলে এলে কলকাতায়?
 
কথা বলতে বলতেই শাস্বতী দেখল, সুমনের মোবাইলটা বাজছে। এত সকালে কোন রমনীর ফোন? নিশ্চই কোনো ক্লায়েন্টের। সাতসকালেও সুমনের রেহাই নেই।
 
সুমন একটু ইতস্তত করছিল। দূরভাষ যন্ত্র বাজতে শুরু করা মানেই, এই বুঝি ডাক এল আবার। ফোনটা ধরছে না দেখে শাস্বতী বললো, ধরো না ধরো। ইতস্তত করছ কেন? ধরে ওকে না বলে দাও।
 
সুমন শাস্বতীর কথা মতন ফোনটা ধরলো। ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল যার গলা সে হল ডলি। সুমনের নতুন ক্লায়েন্ট।
 
সুমন ফোনটা ধরার সাথে সাথেই শাস্বতী কিছুটা এগিয়ে এল ওর দিকে। সুমনের কানের কাছে কানটা নিয়ে গিয়ে শুনতে লাগল মহিলা কি বলছে।
 
ডলি বললো, কি ব্যাপার সুমন? কাল থেকে ফোন করছি। খালি তোমার ফোন এনগেইজড্। বলেছি না ঐসব মেয়েগুলোর প্রতি তোমার দূর্বলতা ছাড়ো। আমি যখন তোমাকে মনে প্রানে চেয়েছি, দরকার কি তোমার ঐসব ফালতু মেয়েদের সাথে কথা বলে?
 
শাস্বতী শুনছে।
 
সুমন বললো, কই লাইন তো এনগেজ ছিল না। আমি তো কাল তোমার ওখান থেকে ফিরে আসার পরে, আর কারুর সাথে কথা বলিনি।
 
ডলি বললো, বলা তো যায় না, যা ডিমান্ড তোমার। এখন হয়তো আবার আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে সার্ভিস দিচ্ছো। পাশে কেউ নেইতো তোমার?
 
সুমন একবার তাকালো শাস্বতীর দিকে। তারপর ডলিকে বললো, না কেউ নেই। কি হয়েছে বলো?
 
ডলি বললো, কি হবে আবার? আমি আমার ডিয়ারকে ফোন করছি। জানো না তোমার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত কিছু ভালো লাগে না আমার।
 
সুমন বললো, এই তো কথা বলছো। বলো এবার কি করতে পারি তোমার জন্য?
 
শাস্বতী অবাক চোখে সুমনের কথাগুলো শুনছে, আর কান খাড়া করে ডলির কথাগুলোও শোনার চেষ্টা করছে।
 
সুমনকে মেয়েটা বললো, ইউ আর মাই সুইট নটি গাই সুমন, আই লাভ ইউ ভেরী মাচ।
 
লাভ কথাটা মেয়েগুলোর মুখ থেকে শুনে শুনে পচে গেছে সুমনের। মহিলা ক্লায়েন্টদের অবৈধ অনৈতিক যৌনসঙ্গমে সাড়া দেওয়ার জন্য ওগুলো এক রকম মেকী ডাক। সব মেয়েরাই সুমনকে আই লাভ ইউ বলে। আসলে ভালবাসাটা কিছু নয়, দেহসুখটাই আসল কথা।
 
মেয়েটা বললো, কি করছ ডারলিং? আজকে চলে এসো তাহলে। তুমি তো জানো, তোমাকে ছাড়া আমি কত নিঃসঙ্গ।
 
সুমন একবার তাকালো শাস্বতীর দিকে, তারপর ডলি কে বললো, আজ আমি কোথাও বেরোবো না ভাবছি।
 
-কেন ডারলিং?
 
-শরীরটা ভীষন খারাপ। কাল থেকে জ্বর জ্বর। রাস্তায় বেরোলে আরো কাবু হয়ে পড়ব।
 
ডলি যেন নাছোড়বান্দা, সুমনকে বললো, আমি তাহলে আসব তোমার কাছে? তোমার জ্বর ছাড়াতে তাহলে আসছি তোমার কাছে।
 
সুমন সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে ওঠার মতন করে বললো, না না এখানে নয়। এ বাড়ীতে আমি কাউকে আনতে চাই না। এখানে এলে পাড়ার ছেলেগুলো বুঝে যায়। ওরা সন্দেহ করে। তুমি এলে অসুবিধে হবে।
 
ডলি বললো, কাল তো ভাল ছিল শরীরটা। কি করে খারাপ হল? আমি কাছে না থাকলেই বুঝি তোমার এসব হয়। তুমি আসবে না, ভাল লাগবে না। কি করে সারাদিন কাটাবো বলোতো আমি? ডলির জন্য একটুকু কষ্ট কি করতে পারবে না তুমি? এখন না হয়, বিকেলে এসো। একটু রেষ্ট নিয়ে। আমি বরং অপেক্ষা করবো।
 
শাস্বতী কান লাগিয়ে মোবাইলে ডলির কথাগুলো শুনে ভাবছে, এবার সুমন কি বলে?
 
ডলিকে পুরোপুরি নিরাশ করে সুমন বললো, আজ বাদ দাও ডলি। আজ আমার কিছুই আর ভালো লাগছে না।
 
ফোনটা ছেড়ে দেওয়ার আগে ডলি বললো, ঠিক আছে, ছেড়েদিলাম। কিন্তু আমি ঠিক বিকেলে তোমায় ফোন করবো। তোমার খবর নেবো। বলা তো যায় না, আমার কাছে না এসে তুমি যদি আবার অন্য কারুর-
 
সুমন শাস্বতীকে বললো, দেখলে তো? তুমি ছাড়া আরো কত মেয়ে আমাকে চায়। এও তোমার মত নিঃসঙ্গ। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একা বাস করছে বালীগঞ্জের ফ্ল্যাটে। ডলি খুব সুন্দরী। অসম্ভব রূপসী বললেও সবকথা বলা যায় না ওর সম্পর্কে। যে রূপ সবাই দেখে ডিসেম্বরের কোন ঘন কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যায়, টেলিভিশনের পর্দায় মিস ইন্ডিয়া ফেমিনা কনটেস্টে, সব রূপই লেগে আছে ডলির শরীরের সবখানে। ও যখন ডাকে, আমাকে সারা দিতেই হয়। টাকার বিনিময়ে শরীর বেচি আমি, সেলফোনের সুইচ অফ করে রাখতে পারি না।জানিনা কখন আসবে বিচিত্র এই সব আমন্ত্রণ।
 
শাস্বতী বললো, কোথায় সেই গৌরী, আর কোথায় বা সুন্দরী? গ্রামের সুপুরুষ ছেলেটাকে এখন চেনা দায়। তোমার কখনো মনে হয় না, এক নারী খারাপ বলে, সব নারী কখনো খারাপ হয় না। মেয়েরা পুরুষকে কামনা করে বলে কি মেয়েরাই খারাপ? পুরুষেরও তো কামনা বাসনা আছে। কত মেয়ে আছে, তারাও কোন পুরুষের রক্ষিতা। পয়সার জন্য কত মেয়ে ভাড়া খাটে। বস্তাপচা গলিগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েগুলো, পুরুষ খদ্দেরের আশায়। ওরাও তো কামপাগল লোকগুলোর ক্ষিধে মেটায়। জীবনে সুখ ওরাও হয়তো পায়নি, তাই আজ এমন জীবিকা বেছে নিয়েছে।
 
সুমন বললো, সুখ তো আমিও পাইনি। কিন্তু তা বলে আমি কিন্তু স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিই নি।
 
শাস্বতী বললো, কিরকম?
 
সুমন বললো, বিকাশদার কাছে আমি ধরা পড়ে গেলাম। লোকটা ভীষন ভাবে মারতে মারতে প্রায় আধমরা করে দিয়েছিল আমাকে। আমাকে শাঁসালো। বললো, তোর মাকে খবর দিচ্ছি, তোর বোনও জানুক। তুই কতবড়ো জানোয়ার। আমি নেই আর তলে তলে এসে এসব করছিস। সারা গ্রামে ন্যাংটো করে ঘোরাবো তোকে।
 
শাস্বতী বললো তারপর?
 
সুমন বললো, বিকাশদা পরে বুঝতে পেরেছিল, এমন কিছু করলে, নিজের ইজ্জ্বতটাও যে থাকবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত। সারা গ্রামে আমার তো বদনাম হবেই, এছাড়া গৌরীকে নিয়েও ছিছি করবে সবাই। সবাই পরেরটা না বুঝলেও, নিজেরটা তো বোঝে তাই না?
 
শাস্বতী বললো, ও তোমাকে ছেড়ে দিল?
 
সুমন বললো, ছাড়লো, তবে ঐ শর্ত রেখে। আমাকে গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হবে। দুদিন আমাকে সময় দিল। বললো, যা করার তুই এর মধ্যেই করবি। আমি কোন কথা তোর শুনতে চাই না।
 
আমি রাজী হলাম। হাতে মাত্র দুদিন সময়। জানি না মা বোনকে ফেলে কিভাবে গ্রাম ছেড়ে আসব। এদিকে না আসলে আবার বিকাশদা রেহাই দেবে না আমাকে। মাকে বাড়ী ফিরে এসে বললাম, মা আমি কলকাতায় একটা কাজ পেয়েছি। দুদিন বাদেই যাব। তোমাকে আর বোনকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি করবো? যেতে তো হবেই। এই কাজটা না করলে, সহজে আর কাজ জুটবে না মা।
 
মা বললো, কে তোকে কাজ দিল বিকাশ দা?
 
আমি হতভাগ্যের মতন বললাম হ্যাঁ। বিকাশদাই কাজটা দিয়েছে, দুদিন পরেই আমাকে কলকাতায় যেতে হবে।
 
শাস্বতী অবাক চোখে সব শুনছে, সুমনকে বললো, সুন্দরীকে গৌরী কি আগেই বলে দিয়েছিল? ওর কানভারীটা কিভাবে করলো?
 
সুমন বললো, গৌরী যখন আমাকে ডাকতো, আমি সহজে যেতে চাইতাম না। সুন্দরীকে সঙ্গ দিতাম। ওর সহ্য হতো না। একদিন হঠাৎই সুন্দরী আমায় যা নয় তাই বললো। গৌরীর সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক আছে, সে কথাও বললো। বললো, তুমি খুব নিচ। আমি এমন জানলে কিছুতেই তোমাকে ভালবাসতাম না।
 
আমি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও কিছুতেই বুঝতে চায়নি আমার কথা। সুন্দরীকে আমি অনেক বলেছিলাম, আমি গৌরীর কাছে যাই, তুমি কি করে জানলে? ও তো একবার কি দুবার মাত্র গেছিলাম। ও আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিল। বিকাশদার বৌ, বিকাশদা আমাকে চাকরি দেবে বলেছে, তাই।
 
সুন্দরী আমার বানানো কথাগুলো বিশ্বাস করে নি। আসল সত্যিটা ওর কাছে তখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। গৌরীই নিজে থেকে বদ বুদ্ধি খাটিয়ে ওর মনটাকে বিষিয়ে দিয়েছে। আমি তখনো জানি না। সুন্দরী যখন আমার সাথে দেখা বন্ধ করে দিল, তখন আমি যেন অসহায়। ভাবছি ভালোবাসার বদলে আমি কি পেলাম? তাহলে কি গৌরীর ভালবাসাটাই খাঁটি। যে এত বড় ঝুঁকি নিয়ে আমার সাথে দেহ ভালবাসা খেলছে, আমি তার ডাকে যাব? না সুন্দরীর মায়ায় পড়ে থাকবো?
 
শাস্বতী বললো, তুমি কখন জানতে পারলে?
 
সুমন বললো, সুন্দরী ওভাবে আমার মুখের ওপর বলে দেওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। দুদিন মন খারাপ করে বাড়ীতে বসেছিলাম। তারপর গৌরীই আমাকে আবার ডাকলো। ও দেখতে চেয়েছিল, আমি এবার পুরোপুরি ওর দিকে মন বসাতে পেরেছি কিনা? সুন্দরী জীবন থেকে চলে গেল। আর আমি যেন পাপে বিদ্ধ হয়ে আরো অতলে তলিয়ে যেতে লাগলাম।
 
এরপরেও কয়েকবার ওর কাছে গেলাম, তারপর বিকাশদার কাছে ধরা পড়ে গেলাম। যেদিন গ্রাম ছেড়ে চলে আসছি, সেদিন সুন্দরীর সাথে অনেক চেষ্টা করেও দেখা করতে পারিনি। ও বাবা মায়ের সাথে কোথায় গেছে, শুনলাম বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমাকে আমার বাকী মেয়ে বন্ধুগুলো বলেছিল, সুন্দরী খুব দূঃখ করেছে আমাদের কাছে। তুই ওই বিকাশদার বৌটার সাথে পিরীত করেছিস? খারাপ বউটার জন্য সুন্দরীকে এত কষ্ট দিলি কেন তুই? ওকে তো গৌরীই সব নিজে মুখে বলেছে। পুকুরপাড়ে দেখা হয়েছিল, বলেছে সুমনের সাথে প্রেম করো তুমি? ও তো আমার সাথেও করে।
 
সুমনের জীবন কাহিনী শুনতে শুনতে, শাস্বতী যেন অতি উৎসাহী। হা করে কথাগুলো গিলছিল, সুমন তারপরই বললো, আমি কিন্তু কলকাতায় আসার আগে, প্রথমে চলে গিয়েছিলাম পাটনায়।
 
শাস্বতী বললো, পাটনায়?
 
সুমন বললো, হ্যাঁ। তাও দুদিনের জন্য। সন্ধেবেলা গান্ধী ময়দানে পা রেখে আমি কিছু যুবককে দেখে অবাক হয়েছিলাম। পাজামা পাঞ্জাবী পরা, ঠোঁটে লিপস্টিক, চোখে সুরমা, ঘন ঘন পান খাচ্ছে আর পিক ফেলছে-হাতে বাঁকা রঙীন রুমাল। মনে হল ওরাই যেন এ যুগের আশ্চর্য শরীর যুবক। আমি ওদের কাছ থেকেই ধার করলাম বুদ্ধিটা। সাহস জোগালাম। একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন দিলাম দৈনিক সংবাদ পত্রে। আপনি কি নিঃসঙ্গ নারী? মনের কথা খুলে বলতে চান? তাহলে চিঠি লিখুন এই ঠিকানায়। তলায় বক্স নম্বর। প্রথম সপ্তাহেই অভাবিত সাড়া মিলেছিল এই আমন্ত্রণ পত্রে। নয় নয় করে গোটা কুড়ি চিঠি এসে জমা হয়েছিল। তাদের থেকে বাছাই করে আমি যখন ফোন করি আমার মহিলা ক্লায়েন্টদের। এক একটা কন্ঠস্বর শুনে বিমোহিত আমি, সেই শুরু হল এই পথে আমার অভিযানের পথ চলা। মহিলাদের কামুক জীবনের শেষ না হওয়া উৎসব। গ্রাম্য যুবক সুমনের এক রমরমে ব্যাবসা। অনেক টাকা চাই অনেক। যে টাকার জন্য সুমন হন্যে হয়ে ঘুরেছে অনেকের দোরে দোরে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মেয়েমানুষের কেপ্ট by lekhak - by pcirma - 04-06-2020, 11:21 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)