31-05-2020, 03:32 PM
[চব্বিশ]
শ্বশুরের মৃত্যুর পর রাজেন দত্ত জানতে পারে কাঠবাগান কারখানা বাড়ী সব মেয়ের নামে লিখে দিয়ে গেছেন।তিনি আগে যেমন ছিলেন এখনও তেমনি নামে মাত্র ম্যানেজার।কিমির অনুমতি ছাড়া কারখানা থেকে একটা কাঠের টুকরো বের করার উপায় নেই।মোমো বিয়েতে রাজি নয় অথচ মা বিয়ে দেবেই।সঙ্গে পছন্দ করা ছেলে পাঠিয়েছে।ছেলেটাকে দেখে করুণা হয়।বিয়ে যদি হয়ও তারই মত অবস্থা হবে।বর্মী মেয়েরা ভীষণ ডমিনেটিং টাইপ এবং পরিশ্রমী অবশ্য মোমোকে পুরোপুরি বর্মী বলা যায়না।দীর্ঘকাল বাঙালী পরিবেশে থেকে একটু অন্যরকম।রবি ঠাকুরের গান খুব পছন্দ।গুনগুন করে গায়ও নিজে।মেয়েটা তাকে ভালবাসে মায়ের মত দুরছাই করেনা এই একটা সান্ত্বনা।এখন চিন্তা সানকে মোমো পছন্দ করবে কিনা?মোমোর চেহারা এবং এই বয়সে যা নামডাক করেছে সবার ঈর্ষার কারণ। আজ সানের আসার কথা।
দিব্যেন্দু খেয়ে দেয়ে পোশাক পরছে। কঙ্কাও কলেজে যাবার জন্য প্রস্তুত বেরোতে যাবে দিব্যেন্দু বলল,ভাবছি আজ কাকিনাড়া যাবো।
ফিরতে রাত হবে?
আজ ফিরবো না।কাল ওখান থেকে ব্যাঙ্কে চলে যাবো কাল সন্ধ্যেবেলা ফিরবো।
কাকিনাড়া যাবে না অন্য কোথাও যাবে তা নিয়ে কঙ্কা এখন আর বিচলিত হয়না।কঙ্কা বলল,ঠিক আছে আমি বেরোচ্ছি।
আঁখি মুখার্জি বিবাহিত না হলে ঋষির অতটা চিন্তা ছিলনা।কেমন ছেলেমানুষী আচরণ। যতটা জেনেছে অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে ছিলেন বিত্তশালী ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হবার পর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।অলস সময়ের অবসরে মানুষের মনে অদ্ভুত ভাবনা বাসা বাধে।নিজেকে মনে হয় নিঃসঙ্গ।ব্যভিচারিতা তখন মনে হয় আধুনিকতা।
বাবুয়া বলছিল বস একটু সাবধানে চলাফেরা করবে।ঋষি বলেছিল,কেন মুন্নার ভয়ে?ব্যাটাকে তুলে এমন আছাড় দেব হাড়্গোড় আস্ত থাকবেনা।ভজা শুনে হেসে কুটিকুটি।
বাবুয়া ধমক দিয়েছিল ক্যালানের মত হাসবি নাতো?ওর কাছে মেশিন থাকে।
ভজা বলল,কেন মেশিন আমাদের নেই?
নিজের অজান্তে ঋষি ক্রমশ ওদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।তারজন্য কোন আক্ষেপ নেই।ওদের মন অনেক খোলামেলা। তথকথিত ভদ্রলোকদের অপকর্মের দায় ওদের বইতে হয়।ওরা অনেক স্পষ্ট অকপট কোনো ধোয়াশায় আচ্ছন্ন নয় ওদের জীবন। বাইরে ভিতরে যেন ফটো কপি হুবহু এক।
টুকুনকে কলেজে নিয়ে যাবার আগে বড়দি ঋষির ঘরে এসে বলল,আজ তোর পড়ানো নেই তো?
না। টুকুনকে কলেজে দিয়ে আসতে হবে?
টুকুনকে আমি দিয়ে আসছি।তুই একবার বিদিশার ওখানে যেতে পারবি?
ছোড়দির ওখানে মানে হালিশহর? দরকার হলে যাবোনা কেন?
ঠিক আছে তুই রেডি হয়ে থাক।আমি টুকুনকে দিয়ে আসছি।ওকে এখন কিছু বলার দরকার নেই।মণীষা চলে গেল।
ওকে মানে জামাইবাবুকে কিছু বলতে মানা করে গেল।বড়দি আর জামাইবাবুর সম্পর্কটা অদ্ভুত লাগে।দুজনকে কখনো ঝগড়া করতে দেখেনি তবু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে উষ্ণতা থাকে আচরণে নজরে পড়েনি কখনো।কঙ্কার সঙ্গে তাহলে আজ দেখা হবে না।একটা চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করে হঠাৎ ছোড়দির বাড়ি যেতে বলছে কেন?
সান এসে গিয়েছে।কোট প্যাণ্ট টাই একেবারে সাহেবী পোশাক বেটে খাটো চেহারা।মেয়ে দেখেই আজ রাতের ফ্লাইটে মায়নামার ফিরে যাবে।রাজেনবাবু বিব্রত মোমো সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে এখনও ফেরার নাম নেই।হেসে বললেন,চিনে আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
কলকাত্তা আমি আগেও এসেছই তবে এদিকটা এই প্রথম এলাম।ড.এমাকে দেখলাম সবাই চেনে কোনো অসুবিধে হয়নি।
রাজেনবাবু ম্যানেজারকে ডেকে পাঠাল।তলব পেয়ে দ্রুত হাজির ত্রিদিবেশ মাইতি।নার্সিং হোমের সমস্ত খবর মাইতিবাবুর নখ দর্পণে।বাইরে রাজনীতিক দলগূলোর সঙ্গেও তার দহরম মহরম।রাজেনবাবু আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,মোমো কোথায় গেছে কিছু বলে গেছে?
হ্যা একটা কল এ্যাটেণ্ড করতে গেছে ফিরতে একটু দেরী হবে।ড এমা যেমন বলে গিয়েছিলেন সে কথাই বললেন।
দেরী হবে? সব্বোনাশ মোমো জানে আজ সানের আসার কথা।ওকি ভুলে গেছে?ফোন সুইচ অফ।ওকে এখন কি বলে বসিয়ে রাখবে?মাইতিবাবুকে বলল,একজন রেস্পেকটেড গেস্ট এসেছে মায়নামার থেকে,ওর যত্ন আত্তি করুন।আমি একটু ঘুরে আসছি।
কিছু ভাববেন না স্যার ওর জন্য ওর দেশী ডিশের ব্যবস্থা করছি।মাইতিবাবু আশ্বস্থ করলেন।
রাজেনবাবু বেরিয়ে যাবার পর ত্রিদিবেশ মাইতি ম্যাডামকে ফোন করল।এই নম্বর মাইতিবাবু ছাড়া কেউ জানে না।রিং হচ্ছে– হ্যালো ম্যাডাম?
দেবেশবাবু?আপনাকে এখনই ফোন করছিলাম।
বড়বাবু খুব রেগে আছেন।
ঠিক আছে শুনুন।আমি এখন বারাসাত থেকে বলছি একমহিলা পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙ্গে গেছে।ড.ঝায়ের অপারেশন লিস্টে এর নামটাও ইনক্লুড করবেন।ঠিক আছে?
হ্যা ম্যাডাম।
আর একটা ডেলিভারি কেস আছে পেশেণ্টের অবস্থা ভাল নয়। লোক্যাল নার্সিং হোমে আমিই অপারেশন করছি।ফ্র্যাকচার কেসের জন্য এ্যাম্বুলেন্স পাঠান পেশেণ্টকে নিয়ে যাবে।টাকা পয়সার কথা বলে নেবেন।
ম্যাডাম বড়বাবু–।
ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না।ভিজিটিং আউয়ারসের আগে আমি পৌছে যাবো।আর কিছু?
ওকে ম্যাম আমি সব ম্যানেজ করছি।
থ্যাঙ্ক ইউ।
ত্রিদিবেশ বাবু ফোন রেখে মনে মনে কাজগুলো সাজিয়ে নিলেন।বড়বাবুর রাগ কোনো ব্যাপার নয় ম্যাডামের কথায় বোঝা গেল।বড়বাবু আজ এলেন কাল চলে যাবেন কিন্তু ম্যাডামের সঙ্গে তার প্রতিদিনের সম্পর্ক। অর্থোপেডিক ড.ঝাকে ম্যাডামের কথা জানিয়ে রাখা ভাল।আপাতত এ্যাম্বুলেন্স পাঠানোটাই জরুরী।
ঋষি স্নান করে রেডী।বড়দি এসে খেতে দিল।ঋষির মনে কৌতুহল ছোড়দির কাছে কেন যেতে বলছে?কিন্তু বড়দিকে প্রশ্ন করতে সাহস হয়না।সব সময় এমন গম্ভীর থাকে বলেই বড়দিকে বেশি বয়স্ক মনে হয়।অনেকদিন ছোড়দির সঙ্গে দেখা হয়নি।কিশোর বেলার খেলার সাথী ছিল ছোড়দি।গোপালনগরের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।কেমন ডানপিটে ছিল এখন একেবারে অন্যরকম।
খেতে দিতে দিতে মনীষা নিজেই বলতে থাকে,কতদিন বিদিশাকে দেখিনি।বেশি রোজগার না করলেও সুদেব মানুষটা ভাল।
সুদেব জামাইবাবুর নাম।ঋষি বুঝতে পারছে না হঠাৎ কেন বড়দি যেতে বলছে?মনীষা বলতে থাকে এবার একটা মেয়ে হলেই ভাল হয়।
বড়দি কার কথা বলছো?
বিদিশার সন্তান হবে।তুই আমার নাম করে ওকে এই টাকাটা দিবি।
কবে হবে?
অত জানিনা এইমাসেই হবে শুনেছি।অত কথার দরকার কি তুই টাকাটা দিয়ে চলে আসবি।
ঋষি বুঝতে পারে এই ব্যাপার।এক সময় গেলেই হয়।কিইনা কি ব্যাপার ভেবে ঋষি তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেরোবার জন্য রেডি হয়েছে।ছোড়দির এক ছেলে আছে সেজন্যই বড়দি বলছিল এবার যেন মেয়ে হয়।বড়দি টুকুনকে আনতে বেরিয়ে গেল।যাবার আগে বলল,চাবি পাশের বাড়ী রেখে যাবি।
ঋষি গুনে দেখল তিন হাজার টাকা।এতটাকা বড়দি কোথায় পেল?জামা প্যাণ্ট পরে পকেটে টাকাগুলো যত্ন করে রেখে ঋষি বেরিয়ে পড়ল।রাস্তায় বঙ্কার সঙ্গে দেখা জিজ্ঞেস করল কোথায় চললি?
হালি শহর,ছোড়দির বাড়ী।
শালা রেজাল্টটা না বেরনো পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।বঙ্কা বিরক্তি নিয়ে বলল।
সঞ্জনা কিছু বলেছে?
ধুস আমার ব্যাপারে ভাবার সময় কোথা।ও আছে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
বঙ্কা চলে গেল।ঋষি ভাবে দমদম হেটে গেলে মিনিট পনেরোর পথ।রিক্সায় পাঁচ টাকা নেবে।ফালতু খরচের দরকার কি?হাটতে শুরু করে।সকাল কলেজের মেয়েরা বাসায় ফিরছে।এই বয়স পেরিয়ে এসেছে ঋষি।সে অবশ্য গ্রামের কলেজে পড়তো।ইছামতী নদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে।গামছা দিয়ে কুচো চিংড়ি ধরতো।ইজের প্যাণ্ট খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতো সারা গ্রাম।ছোড়দিকে খুশি করার জন্য জঙ্গলে ঢূকে গাছে চড়ে কদবেল পেড়ে আনতো।
আচমকা পাশে একটা অটো এসে থামল।কিছু বোঝার আগেই দেখল কঙ্কা নামল অটো হতে।অটোর ভাড়া মিটিয়ে জিজ্ঞেস করে,এদিকে কোথায় চললি?
তুমি এখানে নামলে?
তোকে দেখে নামলাম।
ঋষী ভাবল সারাদিন পড়ে আছে একটু পরে গেলেই চলবে।ঋষি আবার কঙ্কার পিছন পিছন উল্টোদিকে হাটা শুরু করল।যেতে যেতে ঋষির সব কথা শুনলো কঙ্কা।চট করে মনে পড়ল দিব্যেন্দু রাতে ফিরবে না।কঙ্কা বলল,ছোড়দির বাড়ী আজ যাবার দরকার নেই,কাল যাবি।
ঋষির আপত্তি নেই কিন্তু বড়দিকে কি বলবে?
কিছুই বলতে হবে না।তুই গার্লফ্রেণ্ডের কাছে থাকবি আমিই তোকে কলেজ থেকে ফিরে খাইয়ে ঠিক সময়ে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবো। বড়দিকে বলবি ছোড়দি জোর করল তাই রাতে থেকে গেছিলি।
ঋষির খারাপ লাগে না কিন্তু বড়দির কাছে মিথ্যে বলতে হবে ভেবে মনটা খুত খুত করে।আবার রাতে গার্ল ফ্রেণ্ডের সঙ্গে থাকবে ভেবে রোমাঞ্চিত হয়। ইতিমধ্যে ফ্লাটে ঢুকে কঙ্কা নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলেছে।কঙ্কার রূপমোহ তাকে আচ্ছন্ন করে।কঙ্কা ঋষিকে উলঙ্গ করে দিল।কঙ্কাকে জড়িয়ে ধরে ঋষী চুমু খেতে কঙ্কা জিভটা ঠেলে দিল ঋষির মুখের ভিতর।কঙ্কার পাছার গোলক খামচে ধরল ঋষি।কঙ্কা উম-উম করতে করতে জিভটা ঋষির মুখে চালনা করতে থাকে।ঋষির হাত টেনে স্তনে ধরিয়ে দিল।
একসময় ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল কঙ্কা,তুই বোস আমি স্নানটা সেরে নিই।
রাজেনবাবু ফিরে এসে দেখলেন,গুম হয়ে বসে আছে সান।কি বলবে রাজেনবাবু কিছু মাথায় আসছে না।খুব আশা নিয়ে সকাল সকাল সাজগোজ করে বেরিয়ে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবেনি।অপরাধী মুখ করে জিজ্ঞেস করল,খাওয়া হয়েছে?
আর ইউ জোকিং?ঘরে এসি চলছে তাও কপালে ঘাম জমেছে।
একটা জরুরী কলে বেরোতে হল,ডাক্তারদের এই সমস্যা।
আঙ্কেল আয় এ্যাম আলসো এ ডকটর।
আসার সময় হয়ে গেল–।
আর ইউ সিয়োর? রাজেনবাবু মাথা নীচু করে।আই হ্যাভ টু গো নাউ কাণ্ট মিস মাই ফ্লাইট।
সান প্লীজ?
এ্যাম সরি আঙ্কেল।সান ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে গেল।
রাজেনবাবু পিছন পিছন গিয়ে ডাকল,ম্যানেজারবাবু?ওর যাবার একটা গাড়ী–।
নো থ্যাঙ্কস।একটা চলন্ত ট্যাক্সিকে হাত দেখিয়ে থামালো।
একটা এ্যাম্বুলেন্স ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার বাবু এসে বলল,বাইশনম্বরে নিয়ে ড.ঝা-র আণ্ডারে ভর্তি করে নিও।এখন ড.সরকারকে এ্যাটেণ্ড করতে বলো।বছর পঞ্চাশের উপর বয়স মহিলার স্ট্রেচারে করে নামিয়ে লিফটে তুলে দিল।মাইতিবাবু জিজ্ঞেস করল,রোগীর বাড়ীর লোক কে আছে?
একটি ছেলে এগিয়ে এসে বলল,স্যার কিছু করুন ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে।
উপরে ডাক্তার আছে কোন চিন্তা নেই। মাইতিবাবু তাকে বলল,যান ঐ কাউণ্টারে গিয়ে কথা বলুন।টাকা পয়সা এনেছেন?
ছেলেটি কাউণ্টারের দিকে এগিয়ে গেল।
শ্বশুরের মৃত্যুর পর রাজেন দত্ত জানতে পারে কাঠবাগান কারখানা বাড়ী সব মেয়ের নামে লিখে দিয়ে গেছেন।তিনি আগে যেমন ছিলেন এখনও তেমনি নামে মাত্র ম্যানেজার।কিমির অনুমতি ছাড়া কারখানা থেকে একটা কাঠের টুকরো বের করার উপায় নেই।মোমো বিয়েতে রাজি নয় অথচ মা বিয়ে দেবেই।সঙ্গে পছন্দ করা ছেলে পাঠিয়েছে।ছেলেটাকে দেখে করুণা হয়।বিয়ে যদি হয়ও তারই মত অবস্থা হবে।বর্মী মেয়েরা ভীষণ ডমিনেটিং টাইপ এবং পরিশ্রমী অবশ্য মোমোকে পুরোপুরি বর্মী বলা যায়না।দীর্ঘকাল বাঙালী পরিবেশে থেকে একটু অন্যরকম।রবি ঠাকুরের গান খুব পছন্দ।গুনগুন করে গায়ও নিজে।মেয়েটা তাকে ভালবাসে মায়ের মত দুরছাই করেনা এই একটা সান্ত্বনা।এখন চিন্তা সানকে মোমো পছন্দ করবে কিনা?মোমোর চেহারা এবং এই বয়সে যা নামডাক করেছে সবার ঈর্ষার কারণ। আজ সানের আসার কথা।
দিব্যেন্দু খেয়ে দেয়ে পোশাক পরছে। কঙ্কাও কলেজে যাবার জন্য প্রস্তুত বেরোতে যাবে দিব্যেন্দু বলল,ভাবছি আজ কাকিনাড়া যাবো।
ফিরতে রাত হবে?
আজ ফিরবো না।কাল ওখান থেকে ব্যাঙ্কে চলে যাবো কাল সন্ধ্যেবেলা ফিরবো।
কাকিনাড়া যাবে না অন্য কোথাও যাবে তা নিয়ে কঙ্কা এখন আর বিচলিত হয়না।কঙ্কা বলল,ঠিক আছে আমি বেরোচ্ছি।
আঁখি মুখার্জি বিবাহিত না হলে ঋষির অতটা চিন্তা ছিলনা।কেমন ছেলেমানুষী আচরণ। যতটা জেনেছে অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে ছিলেন বিত্তশালী ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হবার পর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।অলস সময়ের অবসরে মানুষের মনে অদ্ভুত ভাবনা বাসা বাধে।নিজেকে মনে হয় নিঃসঙ্গ।ব্যভিচারিতা তখন মনে হয় আধুনিকতা।
বাবুয়া বলছিল বস একটু সাবধানে চলাফেরা করবে।ঋষি বলেছিল,কেন মুন্নার ভয়ে?ব্যাটাকে তুলে এমন আছাড় দেব হাড়্গোড় আস্ত থাকবেনা।ভজা শুনে হেসে কুটিকুটি।
বাবুয়া ধমক দিয়েছিল ক্যালানের মত হাসবি নাতো?ওর কাছে মেশিন থাকে।
ভজা বলল,কেন মেশিন আমাদের নেই?
নিজের অজান্তে ঋষি ক্রমশ ওদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।তারজন্য কোন আক্ষেপ নেই।ওদের মন অনেক খোলামেলা। তথকথিত ভদ্রলোকদের অপকর্মের দায় ওদের বইতে হয়।ওরা অনেক স্পষ্ট অকপট কোনো ধোয়াশায় আচ্ছন্ন নয় ওদের জীবন। বাইরে ভিতরে যেন ফটো কপি হুবহু এক।
টুকুনকে কলেজে নিয়ে যাবার আগে বড়দি ঋষির ঘরে এসে বলল,আজ তোর পড়ানো নেই তো?
না। টুকুনকে কলেজে দিয়ে আসতে হবে?
টুকুনকে আমি দিয়ে আসছি।তুই একবার বিদিশার ওখানে যেতে পারবি?
ছোড়দির ওখানে মানে হালিশহর? দরকার হলে যাবোনা কেন?
ঠিক আছে তুই রেডি হয়ে থাক।আমি টুকুনকে দিয়ে আসছি।ওকে এখন কিছু বলার দরকার নেই।মণীষা চলে গেল।
ওকে মানে জামাইবাবুকে কিছু বলতে মানা করে গেল।বড়দি আর জামাইবাবুর সম্পর্কটা অদ্ভুত লাগে।দুজনকে কখনো ঝগড়া করতে দেখেনি তবু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে উষ্ণতা থাকে আচরণে নজরে পড়েনি কখনো।কঙ্কার সঙ্গে তাহলে আজ দেখা হবে না।একটা চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করে হঠাৎ ছোড়দির বাড়ি যেতে বলছে কেন?
সান এসে গিয়েছে।কোট প্যাণ্ট টাই একেবারে সাহেবী পোশাক বেটে খাটো চেহারা।মেয়ে দেখেই আজ রাতের ফ্লাইটে মায়নামার ফিরে যাবে।রাজেনবাবু বিব্রত মোমো সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে এখনও ফেরার নাম নেই।হেসে বললেন,চিনে আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
কলকাত্তা আমি আগেও এসেছই তবে এদিকটা এই প্রথম এলাম।ড.এমাকে দেখলাম সবাই চেনে কোনো অসুবিধে হয়নি।
রাজেনবাবু ম্যানেজারকে ডেকে পাঠাল।তলব পেয়ে দ্রুত হাজির ত্রিদিবেশ মাইতি।নার্সিং হোমের সমস্ত খবর মাইতিবাবুর নখ দর্পণে।বাইরে রাজনীতিক দলগূলোর সঙ্গেও তার দহরম মহরম।রাজেনবাবু আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,মোমো কোথায় গেছে কিছু বলে গেছে?
হ্যা একটা কল এ্যাটেণ্ড করতে গেছে ফিরতে একটু দেরী হবে।ড এমা যেমন বলে গিয়েছিলেন সে কথাই বললেন।
দেরী হবে? সব্বোনাশ মোমো জানে আজ সানের আসার কথা।ওকি ভুলে গেছে?ফোন সুইচ অফ।ওকে এখন কি বলে বসিয়ে রাখবে?মাইতিবাবুকে বলল,একজন রেস্পেকটেড গেস্ট এসেছে মায়নামার থেকে,ওর যত্ন আত্তি করুন।আমি একটু ঘুরে আসছি।
কিছু ভাববেন না স্যার ওর জন্য ওর দেশী ডিশের ব্যবস্থা করছি।মাইতিবাবু আশ্বস্থ করলেন।
রাজেনবাবু বেরিয়ে যাবার পর ত্রিদিবেশ মাইতি ম্যাডামকে ফোন করল।এই নম্বর মাইতিবাবু ছাড়া কেউ জানে না।রিং হচ্ছে– হ্যালো ম্যাডাম?
দেবেশবাবু?আপনাকে এখনই ফোন করছিলাম।
বড়বাবু খুব রেগে আছেন।
ঠিক আছে শুনুন।আমি এখন বারাসাত থেকে বলছি একমহিলা পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙ্গে গেছে।ড.ঝায়ের অপারেশন লিস্টে এর নামটাও ইনক্লুড করবেন।ঠিক আছে?
হ্যা ম্যাডাম।
আর একটা ডেলিভারি কেস আছে পেশেণ্টের অবস্থা ভাল নয়। লোক্যাল নার্সিং হোমে আমিই অপারেশন করছি।ফ্র্যাকচার কেসের জন্য এ্যাম্বুলেন্স পাঠান পেশেণ্টকে নিয়ে যাবে।টাকা পয়সার কথা বলে নেবেন।
ম্যাডাম বড়বাবু–।
ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না।ভিজিটিং আউয়ারসের আগে আমি পৌছে যাবো।আর কিছু?
ওকে ম্যাম আমি সব ম্যানেজ করছি।
থ্যাঙ্ক ইউ।
ত্রিদিবেশ বাবু ফোন রেখে মনে মনে কাজগুলো সাজিয়ে নিলেন।বড়বাবুর রাগ কোনো ব্যাপার নয় ম্যাডামের কথায় বোঝা গেল।বড়বাবু আজ এলেন কাল চলে যাবেন কিন্তু ম্যাডামের সঙ্গে তার প্রতিদিনের সম্পর্ক। অর্থোপেডিক ড.ঝাকে ম্যাডামের কথা জানিয়ে রাখা ভাল।আপাতত এ্যাম্বুলেন্স পাঠানোটাই জরুরী।
ঋষি স্নান করে রেডী।বড়দি এসে খেতে দিল।ঋষির মনে কৌতুহল ছোড়দির কাছে কেন যেতে বলছে?কিন্তু বড়দিকে প্রশ্ন করতে সাহস হয়না।সব সময় এমন গম্ভীর থাকে বলেই বড়দিকে বেশি বয়স্ক মনে হয়।অনেকদিন ছোড়দির সঙ্গে দেখা হয়নি।কিশোর বেলার খেলার সাথী ছিল ছোড়দি।গোপালনগরের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।কেমন ডানপিটে ছিল এখন একেবারে অন্যরকম।
খেতে দিতে দিতে মনীষা নিজেই বলতে থাকে,কতদিন বিদিশাকে দেখিনি।বেশি রোজগার না করলেও সুদেব মানুষটা ভাল।
সুদেব জামাইবাবুর নাম।ঋষি বুঝতে পারছে না হঠাৎ কেন বড়দি যেতে বলছে?মনীষা বলতে থাকে এবার একটা মেয়ে হলেই ভাল হয়।
বড়দি কার কথা বলছো?
বিদিশার সন্তান হবে।তুই আমার নাম করে ওকে এই টাকাটা দিবি।
কবে হবে?
অত জানিনা এইমাসেই হবে শুনেছি।অত কথার দরকার কি তুই টাকাটা দিয়ে চলে আসবি।
ঋষি বুঝতে পারে এই ব্যাপার।এক সময় গেলেই হয়।কিইনা কি ব্যাপার ভেবে ঋষি তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেরোবার জন্য রেডি হয়েছে।ছোড়দির এক ছেলে আছে সেজন্যই বড়দি বলছিল এবার যেন মেয়ে হয়।বড়দি টুকুনকে আনতে বেরিয়ে গেল।যাবার আগে বলল,চাবি পাশের বাড়ী রেখে যাবি।
ঋষি গুনে দেখল তিন হাজার টাকা।এতটাকা বড়দি কোথায় পেল?জামা প্যাণ্ট পরে পকেটে টাকাগুলো যত্ন করে রেখে ঋষি বেরিয়ে পড়ল।রাস্তায় বঙ্কার সঙ্গে দেখা জিজ্ঞেস করল কোথায় চললি?
হালি শহর,ছোড়দির বাড়ী।
শালা রেজাল্টটা না বেরনো পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।বঙ্কা বিরক্তি নিয়ে বলল।
সঞ্জনা কিছু বলেছে?
ধুস আমার ব্যাপারে ভাবার সময় কোথা।ও আছে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
বঙ্কা চলে গেল।ঋষি ভাবে দমদম হেটে গেলে মিনিট পনেরোর পথ।রিক্সায় পাঁচ টাকা নেবে।ফালতু খরচের দরকার কি?হাটতে শুরু করে।সকাল কলেজের মেয়েরা বাসায় ফিরছে।এই বয়স পেরিয়ে এসেছে ঋষি।সে অবশ্য গ্রামের কলেজে পড়তো।ইছামতী নদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে।গামছা দিয়ে কুচো চিংড়ি ধরতো।ইজের প্যাণ্ট খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতো সারা গ্রাম।ছোড়দিকে খুশি করার জন্য জঙ্গলে ঢূকে গাছে চড়ে কদবেল পেড়ে আনতো।
আচমকা পাশে একটা অটো এসে থামল।কিছু বোঝার আগেই দেখল কঙ্কা নামল অটো হতে।অটোর ভাড়া মিটিয়ে জিজ্ঞেস করে,এদিকে কোথায় চললি?
তুমি এখানে নামলে?
তোকে দেখে নামলাম।
ঋষী ভাবল সারাদিন পড়ে আছে একটু পরে গেলেই চলবে।ঋষি আবার কঙ্কার পিছন পিছন উল্টোদিকে হাটা শুরু করল।যেতে যেতে ঋষির সব কথা শুনলো কঙ্কা।চট করে মনে পড়ল দিব্যেন্দু রাতে ফিরবে না।কঙ্কা বলল,ছোড়দির বাড়ী আজ যাবার দরকার নেই,কাল যাবি।
ঋষির আপত্তি নেই কিন্তু বড়দিকে কি বলবে?
কিছুই বলতে হবে না।তুই গার্লফ্রেণ্ডের কাছে থাকবি আমিই তোকে কলেজ থেকে ফিরে খাইয়ে ঠিক সময়ে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবো। বড়দিকে বলবি ছোড়দি জোর করল তাই রাতে থেকে গেছিলি।
ঋষির খারাপ লাগে না কিন্তু বড়দির কাছে মিথ্যে বলতে হবে ভেবে মনটা খুত খুত করে।আবার রাতে গার্ল ফ্রেণ্ডের সঙ্গে থাকবে ভেবে রোমাঞ্চিত হয়। ইতিমধ্যে ফ্লাটে ঢুকে কঙ্কা নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলেছে।কঙ্কার রূপমোহ তাকে আচ্ছন্ন করে।কঙ্কা ঋষিকে উলঙ্গ করে দিল।কঙ্কাকে জড়িয়ে ধরে ঋষী চুমু খেতে কঙ্কা জিভটা ঠেলে দিল ঋষির মুখের ভিতর।কঙ্কার পাছার গোলক খামচে ধরল ঋষি।কঙ্কা উম-উম করতে করতে জিভটা ঋষির মুখে চালনা করতে থাকে।ঋষির হাত টেনে স্তনে ধরিয়ে দিল।
একসময় ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল কঙ্কা,তুই বোস আমি স্নানটা সেরে নিই।
রাজেনবাবু ফিরে এসে দেখলেন,গুম হয়ে বসে আছে সান।কি বলবে রাজেনবাবু কিছু মাথায় আসছে না।খুব আশা নিয়ে সকাল সকাল সাজগোজ করে বেরিয়ে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবেনি।অপরাধী মুখ করে জিজ্ঞেস করল,খাওয়া হয়েছে?
আর ইউ জোকিং?ঘরে এসি চলছে তাও কপালে ঘাম জমেছে।
একটা জরুরী কলে বেরোতে হল,ডাক্তারদের এই সমস্যা।
আঙ্কেল আয় এ্যাম আলসো এ ডকটর।
আসার সময় হয়ে গেল–।
আর ইউ সিয়োর? রাজেনবাবু মাথা নীচু করে।আই হ্যাভ টু গো নাউ কাণ্ট মিস মাই ফ্লাইট।
সান প্লীজ?
এ্যাম সরি আঙ্কেল।সান ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে গেল।
রাজেনবাবু পিছন পিছন গিয়ে ডাকল,ম্যানেজারবাবু?ওর যাবার একটা গাড়ী–।
নো থ্যাঙ্কস।একটা চলন্ত ট্যাক্সিকে হাত দেখিয়ে থামালো।
একটা এ্যাম্বুলেন্স ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার বাবু এসে বলল,বাইশনম্বরে নিয়ে ড.ঝা-র আণ্ডারে ভর্তি করে নিও।এখন ড.সরকারকে এ্যাটেণ্ড করতে বলো।বছর পঞ্চাশের উপর বয়স মহিলার স্ট্রেচারে করে নামিয়ে লিফটে তুলে দিল।মাইতিবাবু জিজ্ঞেস করল,রোগীর বাড়ীর লোক কে আছে?
একটি ছেলে এগিয়ে এসে বলল,স্যার কিছু করুন ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে।
উপরে ডাক্তার আছে কোন চিন্তা নেই। মাইতিবাবু তাকে বলল,যান ঐ কাউণ্টারে গিয়ে কথা বলুন।টাকা পয়সা এনেছেন?
ছেলেটি কাউণ্টারের দিকে এগিয়ে গেল।