Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব
#4
[৩]

ঘুম ভাঙ্গলেও মটকা মেরে পড়ে আছে রত্নাকর। মা মনে হচ্ছে কার সঙ্গে কথা বলছে? দাদা এসেছে নাকি? দাদা কি একা নাকি বৌদিও এসেছে? বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল রত্নাকর। মায়ের ঘরের কাছে যেতে স্পষ্ট কানে এল মায়ের গলা, শোন দিবু আমি বেচে থাকতে এ বাড়ী আমি ছাড়বো না। রতিকে নিয়ে কোথায় দাড়াবো একবার ভেবেছিস? রত্নাকর থমকে দাড়ায়, এখন ঢোকা ঠিক হবেনা। নিজের ঘরে ফিরে এল। দাদা তা হলে এই মতলবে এসেছে? বাড়ীটা প্রোমোটারের হাতে তুলে দিতে চায়। মা বলছিল, যতদিন বেচে থাকবে, যখন মা থাকবে না রত্নাকর কি করবে তখন? অসহায় বোধ করে। কে তাকে দাদার হাত থেকে বাচাবে? খুশিদির কথা মনে পড়ল। সব বলতে হবে খুশীদিকে। খুশিদির খুব সাহস, কাউকে ভয় পায়না। খুশিদির ড্যাড পুলিশের উচ্চপদে আছে। রত্নাকর আশ্বস্থ বোধ করে। মা চা নিয়ে ঢুকে বলল, তোর দাদা এসেছে। চা খেয়ে আয়।

এতক্ষনে ঘুম ভাঙ্গল? কি করছিস এখন? দিবাকর শাসনের ভঙ্গীতে বলল।
বিএ পড়ছি।
এবার কিছু একটা কর। কতকাল মা তোকে দেখবে?
রত্নাকর কিছু বলেনা। বাবা না থাকলে সংসারের বড় ছেলে দায়িত্ব নেয়। উমাদা ওর দাদা-বৌদির সংসারে আছে। স্বার্থপরের মত পালিয়ে গেলে এখন বড় বড় কথা। মা না থাকলে পথে পথে ভিক্ষে করবে তবু তোমার কাছে হাত পাততে যাবো না। মুখ ফুটে এসব কথা বলেনা রত্নাকর।
মা আমি একটু বেরোচ্ছি। রত্নাকর বেরিয়ে পড়ল।
দূর থেকে দেখল পারমিতা বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে। পিকনিকের পর প্রথম দেখা। ওর তখন মাসিক হয়েছিল, রতিকে দেখলে লজ্জা পাবে ভেবে মাথা নীচু করে হাটতে থাকে। ওদের বাড়ীর কাছে আসতে পারমিতার গলা পেল, এই যে লেখক কি ভাবছিস, আশপাশ কিছু দেখতে পাচ্ছিস না?
চোখ তুলে দেখল মুচকি হাসছে পারমিতা। রতি বলল, তুই এখানে দাঁড়িয়ে?
কোচিং যাবো বলে বেরিয়েছি, তোকে দেখলাম তাই।
আমাকে দেখলে কোচিং যাওয়া যায়না?
আচ্ছা সবাই তোকে বুদধু বলে কেন? পারমিতার ঠোটে হাসি।
আমি বোকা তাই।
আমি কি তোকে তাই বলেছি?
মানুষ যা ভাবে সব কথা কি মুখে বলে?
তুই যা ভাবিস না বললে অন্যে বুঝবে কি করে?
কি ব্যাপার বলতো? আমি কি লোক ডেকে ডেকে বলব, এইযে শুনুন আমি এই-এই ভাবছি?
খিল খিল করে হেসে উঠল পারমিতা। মানুষ হাসলে রত্নাকরের দেখতে খুব ভাল লাগে। বিশেষ করে মেয়েরা।
আচ্ছা বলতো রোজিকে তোর কেমন মনে হয়?
মন্দ কি, ভালই মনে হয়।
সবাই তোর কাছে ভাল। কতটুকু জানিস ওকে?
রত্নাকর বিরক্ত হয়। গম্ভীরভাবে বলল, পারু তোর কি কোনো কাজ নেই? অন্যকে নিয়ে ভাবার এত সময় পাস কোথায়?
অন্যকে নিয়ে ভাবতে বয়ে গেছে। চোখে পড়েছে তাই বলেছি।
কি চোখে পড়েছে?
সাধে কি তোকে বুদ্ধু বলে? পিকনিকের দিন কত কাণ্ড হয়েছে জানিস?
মিলিটারি আণ্টির কথা বলছিস?
পুকুরের ধারে বাগানে বেড়াচ্ছিলাম, দেখলাম শুভ আর রোজি বাগানে ঢুকেনা বাবা বলব না। রোজিকে কথা দিয়েছি।
আমি শুনতে চাইনা। তোমার কোচিং এসে গেছে তুমি যাও।
পারমিতা চলে যেতে রত্নাকর ভাবে, ওদের কোচিং থেকে যে সাজেশন দেবে পারুর কাছে চাইবে কিনা? রোজি আর শুভ কি করেছে? দেবীকা আণ্টী সারাক্ষণ মেয়েকে চোখে চোখে রেখেছিল তার মধ্যেই এতকাণ্ড? প্রেমের জোয়ার কি বাধ দিয়ে আটকানো যায়? ফোন বাজছে, পকেট থেকে বের করে কানে লাগিয়ে বলল, হ্যালো?
ওহ তুমি? সত্যি বলছি আমি বুঝতে পারিনি। .না সেভ করা ছিলনা...এখন কেমন আছো? একদিনে কমে বলছিনা....পিকনিক টিকনিক গেল....যাবো...সেভ করে রাখছি....এ্যা জনা? আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি....না তাড়া নেই আচ্ছা বলো.... যোগাক্লাসে যাইনা ছেড়ে দিয়েছি... এখন বাড়িতেই করি...হ্যা যাবো।
উফ কতক্ষন ধরে কথা বলে শেষ হতেই চায় না। নম্বরটা জনা নামে সেভ করে রাখল। আণ্টি ভালই বলেছে কেউ দেখলে উল্টপাল্টা ভাবতে পারে। একজন ফিজিও দিয়ে ম্যাসাজ করাতে পারে, টাকার অভাব নেই। খুব কঞ্জূষ রঞ্জা আণ্টি। মেয়েদের গায়ে হাত দিলে ঘাম বেরোয়, মুখের উপর না বলতে পারেনা রত্নাকর। বিশেষকরে মেয়েদের মুখের উপর না বললে মুখটা এমন হয়ে যায় দেখলে কষ্ট হয়।
নীরেনদার ওখানে কেন যায়না সেকথা কি বলা যায় আণ্টিকে? খুশিদি বলছিল নীরেনদা সমকামী। রেখাবৌদি নীরেনদাকে নিয়ে খুশি নয়। রেখা বৌদি নীরেনদার স্ত্রী, দু-চোক্ষে দেখতে পারেনা স্বামীকে। বাইরে থেকে মানুষকে যেভাবে দেখা যায় তাছাড়াও প্রত্যেক মানুষের একটা গভীর গোপন জগত আছে তার খবর সবাই রাখেনা। নীরেনদা হাবুদার সম্পর্ক কজনই বা জানে।
নীরেনদার ঘাড় অবধি কুচকানো চুল। বুক বেশ উচু, কথা বলে হাত নেড়ে মেয়েলি ঢঙ্গে। ক্লাসের সবাই তাই নিয়ে আড়ালে হাসাহাসি করে। যোগাসনের ক্লাস ছাড়া বেশ কয়েক জায়গায় ম্যাশেজ করতে যায়। নীরেনদার বিয়ে করা উচিত হয়নি। রেখাবৌদির জন্য দুঃখ হয়। রত্নাকর ভাবে নীরেনদাকে নিয়ে একটা গল্প লিখবে।
রমানাথ অফিস বেরিয়ে গেল। উমানাথ ভাইপোকে আনতে কলেজে গেছে। মনীষা এতক্ষনে নিঃশ্বাস ফেলে। ছেলে ফিরলে তাকে স্নান করিয়ে খাইয়ে তবে শান্তি। ঠাকুর-পোকে কথাটা বলব-বলব করেও বলা হয়নি পাছে ভুল বোঝে। চারটি প্রাণীর সুখের সংসার। কোনো আচড় পড়ুক মনীষা চায়না।
ছেলেকে খাইয়ে দেওর বৌদি খেতে বসেছে। উমানাথ মুখ বুজে খেতে থাকে। রান্না ভালমন্দ তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। যা পায় তৃপ্তি করে খায়। মনীষা বলল, আচ্ছা ঠাকুর-পো সারাদিন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ালে চলবে?
উমানাথ মুখ তুলে তাকায় জিজ্ঞেস করে, দাদা কিছু বলেছে?
দাদা বলবে কেন? আমিই বলছি।
উমানাথ স্বস্তির শ্বাস ফেলে আবার খেতে থাকে। মনীষা বলল, আমি বললে পাত্তা দেবার দরকার নেই?
আচ্ছা বলো।
নিজের কথা একটু ভাববে না? তুমি কি বিয়ে থা কিছু করবে না? সারাজীবন দাদার সংসারে ফাই-ফরমাস খাটবে?
তুমি কি কোনো মেয়ের সন্ধান পেয়েছো?
বেকার ছেলেকে বিয়ে করবে কার এত দায় পড়েছে?
উমানাথের মা নেই, অবাক হয়ে বৌদিকে দেখে। একেবারে মায়ের মত কথা বলছে। উমানাথ বলল, বৌদি একটা কথা জিজ্ঞেস করব, রাগ করবেনা?
রাগের কথা হলে রাগ করব।
এই যে তোমার সংসারে একজন অকম্মা দেওর বসে বসে খায় তোমার খুব খারাপ লাগে তাইনা?
ঠিক আছে আর কখনো যদি তোমায় কিছু বলি।
উমানাথ উঠে পড়ে বলল, এইতো রাগ করলে?
রাগ করব না? তুমি একথা কেন বললে?
অন্যায় হয়ে গেছে, লক্ষী বৌদি এবারের মত মাপ করে দাও। কথা দিচ্ছি আমি এবার চাকরির চেষ্টা করব।
মনীষার ঠোটের কোলে হাসির ঝিলিক, তুমি ওর ভাই, আমি তোমাকে ঠাকুর-পো বলি বটে কিন্তু তোমাকে নিজের ভাইয়ের মত মনে করি।
ফেরার পথে আবার পারমিতার সঙ্গে দেখা। সামনা সামনি হতে জিজ্ঞেস করে, কোচিং শেষ হল?
আবার তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। পারমিতা হেসে বলল।
চরণ রেখা যায়না দেখা চলে গেলে অনেক দূরে..।
পারমিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, মানে?
একটা কবিতার লাইন। একদিন কে কোথায় চলে যাবো, শেষ হবে দেখাদেখির পালা।
পারমিতা উদাস কণ্ঠে বলে, তোমাকে জানতে পারলাম না, তুমি অন্য রকম।
আগে নিজেকে জানো।
তুমি কি বলছো, নিজেকে জানিনা আমি?
তোমার নাম পারমিতা। এর অর্থ কি জানো?
পারমিতা একটু ইতস্তত করে বলল, একজন বিদুষীর নাম।
পারমিতা মানে পরিপুর্ণতা। সম্পুর্ণরূপে জানাপ্রজ্ঞা পারমিতা।
তুমি খুব পড়াশুনা করো। আচ্ছা সারাদিন টো-টো করে ঘুরে বেড়াও পড়ো কখন?
শুধু বই পড়েই কি শেখা যায়?
পারমিতার মনে দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে, জিজ্ঞেস করে, একটা কথা জিজ্ঞেস করব? রাগ করবি নাতো?
রত্নাকর দাঁড়িয়ে পড়ে ঘুরে তাকায়। পারমিতা জিজ্ঞেস করে, তুই কি সোমাকে ভালবাসিস?
আচমকা সোমলতার কথা জিজ্ঞেস করবে রত্নাকর ভাবেনি। অনেকেই ওকে জড়িয়ে তাকে নিয়ে কথা বলে। রত্নাকর কখনো ভাবেনি ড.ব্যানার্জির মেয়ের সঙ্গে প্রেম প্রণয়ের কথা।
কিরে কি ভাবছিস? যা ভাবছিস তা বলবি কিনা?
রত্নাকর হাসল তারপর বলল, জানি না।
তার মানে? ভালবাসিস কিনা জানিস না?
মানুষ নিজেকে সম্পুর্ণভাবে জানেনা। কিছু পৃষ্ঠা আছে দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা। কখনো তার অর্থোদ্ধার হয় আবার কখনো তা অজানাই থেকে যায়।
তোর কথা কিছুই বুঝলাম না।
রত্নাকর ভাল করে লক্ষ্য করে পারমিতাকে। বুকের উপর বই চেপে ধরা। বুকের থেকে ক্রমশ সরু হয়ে আবার পাছার দিকে ক্রমশ উত্তাল। মেয়েদের পাছায় একটা সৌন্দর্য আছে।
তুই কাউকে ভালবাসিস না? রত্নাকর জিজ্ঞেস করে।
পারমিতার মুখে লাল ছোপ পড়ে বলে, জানিনা।
তোর বাড়ি এসে গেছে।
পারমিতা মাথা নীচু করে একটু এগিয়ে গেটের কাছে গিয়ে পিছন ফিরে মুচকি হেসে ঢুকে গেল।
রত্নাকর এগিয়ে চলে। পারমিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। চরণ রেখা যায়না দেখা চলে গেলে অনেক দূরে, লাইনটা কানে অনুরণিত হয়। বিধবা মাকে নিয়ে একা থাকে বেচারি। কেমন মায়া হয় রতিটার জন্য।
রত্নাকর বাড়িতে ঢুকতেই মা বলল, কোথায় থাকিস, কিছু বলে যাসনা।
দাদা চলে গেছে? রত্নাকর জিজ্ঞেস করে।
তুই বেরোবার সঙ্গে সঙ্গেই চলে গেছে। তোর কি একটা এসেছে, টেবিলের উপর রেখেছি।
রত্নাকর ঘরে ঢুকে জামা কাপড় বদলে টেবিলের উপর দেখল ব্রাউন খামে মোড়া মোটামত কি যেন। হাতে তুলে বুঝতে পারে বই। খাম ছিড়ে বইটা বের করতেই একটা কাগজ পড়ল, তুলে দেখল লেখা, প্রিয় বন্ধু আপনার প্রেরিত গল্পটি এই সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। সঙ্গে বইয়ের এককপি পাঠানো হল।
বইটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখতে দেখতে মনে পড়ল খুশিদির কথা। খুশিদি বলছিল বাংলা পড়তে শিখছে। জেনিকে পড়াতে যাবার কথা। আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হলেও অসময়ের বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব - by stallionblack7 - 24-02-2019, 02:11 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)