28-05-2020, 01:56 PM
(This post was last modified: 22-06-2020, 11:23 AM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
[নয়]
মনীষার ঘুম ভেঙ্গে গেল মাঝরাতে। উঠে বসে স্বামীকে দেখল হুশ নেই। দুই উরুর ফাকে নেতিয়ে পড়ে আছে সুনীলের ঐটা।পাশে ঘুমন্ত মেয়েকে একবার দেখে লুঙ্গি টেনে নামিয়ে দিলেন। বিছানা থেকে নীচে নেমে বাথরুমে গেলেন। বাথরুম সেরে ফেরার সময় দেখলেন, বৈঠকখানায় লাইট জ্বলছে।ঋষি সোফায় বসে পড়ছে, নিপাট বিছানা।দরজায় বড়দিকে দেখে অপরাধী মুখে হাসে। মনীষা বললেন, কটা বাজে দেখেছিস?অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা দিবি কি করে?এখন শুয়ে পড়। মনীষা চলে গেলেন নিজের ঘরে।বই খাতা গুছিয়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল ঋষি। কাল ছুটি মনে মনে হিসেব করে সারাদিন কি করবে?এই কদিন টুকুনকে পড়াতে না হলে ভাল হতো।কিন্তু সেকথা বলা যাবে না। খাওয়া দাওয়া সেরে একবার চট করে কঙ্কাবৌদির সঙ্গে দেখা করে আসবে। পরিস্কার বলে দেবে পরীক্ষার আগে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এইসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতেই পারেনা।
কঙ্কাবতী বুঝতে পারেনা দিব্যেন্দুর সঙ্গে সম্পর্ক কিভাবে চালিয়ে যাবে?ওর পাশে শুতেও ঘেন্না করছে। কাল সকালে যদি ক্ষমা চায় কি করবে?এর আগেও কয়েকবার বলেছে ভুল হয়ে গেছে স্যরি। এক জায়গায় তো থামতে হবে। কঙ্কাবতীর নিশ্চিত দিব্যেন্দু কাকিনাড়া যায়নি। কিন্তু কোথায় যেতে পারে? আন্দাজ করতে পারেনা।
রীণাকে নিয়ে বাবুলাল শান্তি ভট্টাচার্যের বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করতে শান্তিবাবু বিরক্ত হয়ে এক ধমক দিলেন বাবুলালকে।এখানে নিয়ে এসেছিস কেন?
রীণা এগিয়ে আসতে শান্তিবাবু বললেন, তোমাকে বলিনি বাড়ীতে আসবে না?
বাবুলাল বুঝতে পারেনা তার কি ভুল হয়েছে?বাবুলালের কাছে এসে শান্তিবাবু ফিসফিস করে বললেন, ও যেখানে যেতে চায় একটু পৌছে দে। সকালে দেখা করিস।
শান্তিবাবু ভিতরে চলে যেতে বাবুলাল বলল,কোথায় যাবেন আপনি?যত শালা ছেড়া ঝামেলা।
আমাকে পুর্ব সিথি পৌছে দেবেন?রীণা কাতর গলায় বলল।
বাবুলালের ইঙ্গিতে বাইকের পিছনে চেপে বসে বিড়বিড় করে বলল,শালা কিভাবে তোমায় সাইজ করি দেখো।
কিছু বললেন?
না আপনাকে না।
তাহলে কাকে সাইজ করবেন?
এত ফালতু বকছেন কেন।চুপ করে বসুন।
রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে ভটভটিয়ে বাইক ছুটে চলল।রীণা জড়িয়ে ধরে বাবুলালকে। কাধ ঝাকি দিয়ে বাবুলাল বলল, সোজা হয়ে বসুন।
ঘুম ভেঙ্গে গেল, সকালের নরম রোদ জানলা দিয়ে কঙ্কার মুখে এসে পড়েছে।চোখ মেলে বুঝতে পারে সোফায় শায়িত। মনে পড়ল কাল রাতের কথা। উঠে বসে কয়েকমুহূর্ত কি ভাবল তারপর বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে শোবার ঘরে উকি দিয়ে দেখল দিব্যেন্দু চোখ বুজে পড়ে আছে। রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপায়।ঘুম ভাঙ্গলেও দিব্যেন্দু শুয়ে শুয়ে কাল রাতের কথা ভাবে। মনে হচ্ছে রীণা তাকে সব কথা বলেনি। দোষ শুধু ওর স্বামীর মনে হয়না রীণারও নিশ্চয়ই কিছু দোষ ছিল।কি বিচ্ছিরি কথা বলছিল। বালিশের পাশে মোবাইলটা নজরে পড়ে।কললিস্ট ঘেটে দেখে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল রীণা।কঙ্কাও একবার ফোন করেছিল। একটা আননোন নম্বর দেখে মনে করার চেষ্টা করে এটা কার নম্বর? কাল তাহলে আর কে ফোন করেছিল? রীণার কি দুটো মোবাইল?খুব বাচা বেচে গেছে কাল। শেষে কি হল রীণার সঙ্গে দেখা হলে জানা যাবে। রীণার কথা মনে হতে অস্বস্তি বোধ করে। নিশ্চয়ই খুব গালমন্দ করবে। যাহোক কিছু বানিয়ে বলা যাবে।
টুকুনকে নিয়ে পড়াতে বসেছে ঋষী। টুকুন একটানা পড়তে পারে না,খালি প্রশ্ন।ঋষি তাগাদা দিল কি হল থামলে কেন?
মামু বাপি ভাল না।
ছিঃ ওকী কথা?বাপি গুরুজন। ঋষী বকা দিল।
মামণি গুরুজন না?টুকুন পালটা প্রশ্ন করল।
সবাই গুরুজন।
তাহলে মামণিকে বকে কেন?
কি উত্তর দেবে ঋষি বুঝতে পারেনা। জামাইবাবু কি বড়দিকে কিছু বলেছে?
মনীষা চা নিয়ে ঢূকলেন। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে টুকুনকে বললেন,মামণি তোমার মামুর পরীক্ষা। এ-কদিন তুমি আমার কাছে পড়বে।
ঋষি আপত্তি করল, তাতে কি হয়েছে আমার অসুবিধে হবে না।
তুই বেশি কথা বলবি না। মনীষা ধমক দিলেন।
ঠিক হয়েছে ঠিক হয়েছে। টুকুন হেসে হাততালি দিল।
টুকুনকে নিয়ে মনীষা চলে গেলেন। ঋষি মনে মনে ভাবে ভালই হল। পরমুহূর্তে মনে হল চাপ বেড়ে গেল রেজাল্ট খারাপ হলে কোণো অজুহাত চলবে না। অনার্সটা পেরিয়ে গেলে অন্য সাবজেক্টগুলোর জন্য চিন্তা নেই। বড়দি নিজের পায়ে দাড়াবার কথা বলছে অর্থাৎ চাকরি করার কথা। ঋষির ইচ্ছে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার কিন্তু কে তাকে পড়াবে? কঙ্কাবৌদি বলেছে অসুবিধে হলে বলবি। বলেছে এই যথেষ্ট,বৌদি কেন টাকা দেবে?দিবুদাই বা রাজি হবে কেন?ওহো আজ সোমবার কঙ্কাবৌদির সঙ্গে দেখা করার কথা। কোথাও যেতে বললে সাফ বলে দেবে পরীক্ষার আগে সম্ভব নয়। পরীক্ষার পর যা বলবে রাজি আছে।
চাকরি হতে অবসর নিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষের সময় কাটতে চায়না।একমেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে।দায়দায়িত্ব কিছু নেই বললে চলে।বিছানায় আধশোয়া হয়ে কাগজ পড়ছেন।বুচির মা ঘর মুছচে মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকে দেখেন।কখন একটু কাপড় সরে যায় কিম্বা দু-পায়ের ফাক দিয়ে এক ঝলক দেখা যায় কিনা তার অধীর প্রতিক্ষায় কাগজ পড়ায় মন দিতে পারছে না।রান্নাঘর হতে কাকলি ডাকলেন,এই চা-টা নিয়ে যাবে?
শেফালি দেখোতো তোমার কাকি কি বলছে?
বুচির মা ঘর মোছার ভিজে ন্যাকড়া মেঝেতে রেখে রান্নাঘরের দিকে গেল।
কিরে তোর ঘর মোছা হয়েছে?
কাকু বলল আপনে ডাকতিছেন?
তুই যা তাড়াতাড়ি কর।আমার অফিস যাবার আগে কাজ শেষ করবি।কাকলি বললেন।
চায়ের কাপ নিয়ে কেষ্টবাবুকে চা দিয়ে বললেন,একটু নড়ে বসতে পারো না।
তুমি আবার চা আনতে গেলে কেন শেফালিকে দিলেই হতো।
থামো।যত আদিখ্যেতা–শেফালী?
কি আশ্চর্য শেফালিকে শেফালী বললে দোষের কি হয়েছে?
শেফালী-ই-ই।দরদ ঝরে পড়ছে।তুই হা-করে কি শুনছিস?তাড়াতাড়ি ঘর মুছে ফেল।
কাকলি রান্না ঘরে চলে গেলেন।বুচির মা মুচকি হেসে ঘর মুছতে লাগল।
কাকিমার কথায় তুমি কিছু মনে কোরনা।কেষ্টোবাবু বললেন।
কাজের নোক অত মনে করলি চলে।শেফালী বলল।
বেলা বাড়তে থাকে। কাগজে চোখ বুলিয়ে দিব্যেন্দু স্নানে গেল। রান্না শেষ হয়ে এসেছে। কঙ্কাবতী কেমন উদাসীন। বাবার কথা মনে পড়ল। ঘণ্টাখানেকের পথ ইচ্ছে তো হয় যেতে কিন্তু গেলেই নানা প্রশ্ন কেমন আছিস ও কেমন আছে?কি বলবে ভাল আছে,সুখে আছে?দিব্যেন্দু বাথরুম হতে বেরিয়েছে।কঙ্কা ভাত বেড়ে টেবিলের উপর রেখে এল। দিব্যেন্দু রেডি হয়ে টেবিলে গিয়ে বসল।ব্যাঙ্কে যাক না যাক বেরোতে হবে। না হলে এখানে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে কেন যাবেনা? মুখ বুজে খাওয়া শেষ করে। বেরোবার আগে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বলল,আমি বেরোচ্ছি।
দিব্যেন্দু বেরিয়ে যেতে কঙ্কাবতী দরজা বন্ধ করে দিল। যতক্ষন ঘরে ছিল অস্বস্তি বোধ করছিল। এবার খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম। বাথরুমে ঢুকে সাবান ঘষে স্নান করে। সারা শরীরে কেমন এক গ্লানি জড়িয়ে আছে যেন। কাল কলেজ আছে বন্দনাদির সঙ্গে দেখা হবে। অনেক কথা জমে আছে কাউকে বলতে পারলে কিছুটা হালকা হওয়া যেতো। স্নান সেরে ভাত নিয়ে বসল।যত ভাবছে এসব নিয়ে ভাববে না,ঘুরে ফিরে ঐ চিন্তাটা আসছে। অন্যদিন বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে আজ আর বই নয় ঘুমাবে।গাঢ় ঘুম হলে কিছু মনে পড়বে না।
বুচির মার কাজ শেষ।কাকলি বললেন,দেখ বুচি হিসি করেছে।
বুচি হিসি কোরে তার মধ্যে বসে আছে।শেফালী মেয়েকে কোলে নিয়ে জায়গাটা ভালো করে মুছে দিয়ে বলল,কাকি আসতেছি?
কাকলি দ্রুত স্নান সেরে খেতে বসল।একাই খায় ওকে বললে বলবে,এতদিন অফিস ছিল।নাকে মুখে গুজে অফিস যেতাম।এখন ধীরে সুস্থে আরাম কোরে খাবো।
কাকলি বেরোবার আগে বলল,সব ঢাকা দেওয়া আছে।আমি আসি?
জামাইবাবু বেরিয়ে গেছে টুকুন ঘুমোচ্ছে ঋষি খেয়ে দেয়ে বই নিয়ে বসছে।বড়দি শোবার উদ্যোগ করছে। ঋষির ঘরে উকি দিল। বড়দি বলল, সারাক্ষন বই নিয়ে থাকলে হবে একটু পায়চারি করে আয়, মনটা সতেজ হবে। কথাটা খারাপ লাগেনা পায়জামার উপর একটা জামা গলিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
রাস্তায় এসে খেয়াল হয়, এমা কঙ্কাবৌদি দেখা করতে বলেছিল। এখন যাওয়া কি ঠিক হবে?ভাবতে ভাবতে কঙ্কাবৌদির বাড়ীর কাছে এসে উপর দিকে তাকাল। ব্যালকনিতে কেউ নেই, একটা কাপড় মেলে দিয়েছে।
সবে চোখ বুজেছে অমনি কলিং বেল বেজে উঠল। কঙ্কাবতী চোখ মেলে তাকায়।উরুর উপর উঠে যাওয়া নাইটি টেনে নামিয়ে খাট থেকে নামল। দরজার কাছে গিয়ে বলল,কে?
কোনো সাড়া নেই। একবার ভাবল দরজা খুলবে কিনা?দরজা খুলে দেখল কেউ নেই। সিড়ি দিয়ে কে যেন নেমে যাচ্ছে। কঙ্কাবতী এগিয়ে গিয়ে ডাকল, কে-এ?
ঋষি উপর দিকে তাকাতে কঙ্কাবতী বলল, কিরে চলে যাচ্ছিস?
ঋষি উপরে উঠে বলল, ভাবলাম তুমি ঘুমোচ্ছো।
আয় ভিতরে আয়। এতক্ষণে সময় হল?
শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে খাটে বসতে বলে কঙ্কাবতী চলে গেল। ঋষি এসেছে ভালই হল।
ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে। ফ্রিজ খুলে কোল্ড ড্রিঙ্কস বের করে দুটো গেলাসে ঢালল।রোদের মধ্যে এসেছে ভাল লাগবে। ঋষির হাতে একটা গেলাস দিয়ে কঙ্কাবতী খাটে হেলান দিয়ে বসল।
তুমি ঘুমোচ্ছিলে?
সে তোকে ভাবতে হবেনা। তোর যখন ইচ্ছে হবে আসবি। আমি না ডাকলে তুই চলেই যেতিস?তুই কিই রে?আবার গুণ্ডাদের সঙ্গে মারামারি করিস?
বৌদি কার কথা বলছে?অবাক হয়ে বলল, আমি মারামারি করেছি?
বাবুলাল না কে তার সঙ্গে মারামারি করিস নি?কেন ওদের সঙ্গে লাগতে যাস?
সুমিকে ধাক্কা দিয়েছিল ছাড়িয়ে দিয়েছি। মারামারি করিনি।
সুমি?তার সঙ্গে তোর কি সম্পর্ক?
শুভর গার্ল ফ্রেণ্ড।
কঙ্কা মুখ টিপে হাসে।এইজন্য ছেলেটাকে ভাল লাগে।কেমন সহজ ভাবে বলল,গার্লফ্রেণ্ড।
তোর বন্ধুদের সবার গার্লফ্রেণ্ড আছে তাই না?
ঋষি মাথা নীচু করে লাজুক হাসে। কঙ্কাবতীর মজা লাগে। মনে পড়ল ওর বিশাল ঐটার কথা। কঙ্কাবতী জিজ্ঞেস করে,তোর কোনো গার্লফ্রেণ্ড নেই?
আমি কোথায় পাবো?
ওরা যেভাবে পেয়েছে।তোর কলেজে কোন মেয়ে নেই? এত সুন্দর চেহারা তোর।
পর্ণার কথা মনে পড়ল।কিন্তু সেকথা বৌদিকে বোলে না।লাজুক গলায় ঋষি বলল,জানো বৌদি মেয়েদের সঙ্গে ঠিকমত কথা বলতে পারিনা।
কেন মেয়েরা আলাদা কি?
ঋষি নখ খুটতে থাকে। কি বলবে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারেনা। কঙ্কাবতী বলল,মেয়্যেরা তোকে আকর্ষণ করেনা, নাকি তুই মেয়েদের পছন্দ করিস না?
না না তা নয়–মানে–মেয়েদের মধ্যে একটা চৌম্বক শক্তি আছে।
কঙ্কাবতীর নতুন লাগে কথাটা। মেয়েদের নিয়ে ওর নিজস্ব ভাবনা আছে।কঙ্কাবতী বলল, আমার দিকে তাকা, ভাল করে দ্যাখ-।
ঋষী সরাসরি তাকালো, কি সুন্দর ফিগার বৌদির। উন্নত বক্ষ ঢাল খেয়ে ক্রমশ সরু হয়ে এসেছে। কোমর থেকে বাক নিয়ে সৃষ্টি করেছে রহস্য।কঙ্কাবতী জিজ্ঞেস করল,আমার কোথায় চৌম্বক শক্তি?
ধুস তুমি আমার কথা বুঝতে পারোনি। আমি বলেছি একটা চৌম্বকীয় আকর্ষণ–।
তা হলে তোকে কেউ টানলো না কেন?
চট করে মনে পড়ে গেল শব্দটা।ভেবেছিল বৌদিকে জিজ্ঞেস করবে। ঋষি বলল,আমি পরভৃত, আমার ভয় হয়। আচ্ছা বৌদি পরভৃত মানে কি?
কঙ্কাবতী খিলখিল করে হেসে উঠল। ঋষির বুক কাপে।বৌদি হাসলে মনে হয় সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। কঙ্কাবতী হাসি থামিয়ে বলল, তুই বললি আবার তুই মানে জিজ্ঞেস করছিস?
আসলে একজন জিজ্ঞেস করছিল,বিয়ের পর মেয়েরা পরভৃতা কি না?
কে জিজ্ঞেস করছিল?
আমার এক ছাত্রী শবরী।
কঙ্কাবতী জানে কোকিলকে বলে পরভৃত। কাকের বাসায় কোকিলের বাচ্চা পালিত হয়।
উড়তে শিখে পালিয়ে যায় পালিতা মাকে ফেলে। কিন্তু সেতো পরভৃতা নয়। এই ফ্লাট তার নিজের নিজের উপার্জনে খায়। দিব্যেন্দু তার মাইনের বেশিটাই কাকিনাড়া পাঠিয়ে দেয়। ঋষী বৌদিকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করল, বৌদি তোমার মন খারাপ?
কঙ্কাবতী চোখ তুলে গভীরভাবে ঋষিকে দেখল। মৃদু হেসে বলল, আমাকে তোর গার্লফ্রেণ্ড করবি?
ঋষি লজ্জা পেয়ে বলল, ধ্যাৎ।
আমাকে তোর পছন্দ নয়?
তোমাকে আমার দারুণ লাগে। কিন্তু তুমি বিবাহিত মানে একজনের বউ।
বউ হলে কি বন্ধু হতে পারিনা?কঙ্কাবতীর গলায় আকুতি।
ঋষির খুব মায়া হয় বলল, ঠিক আছে তুমি আমার গার্লফ্রেণ্ড, হলতো?
কঙ্কাবতীর সব এলোমেলো হয়ে যায় বলে,যেন নতুন করে ঋষিকে দেখছে।সুন্দর পুরুষালি চেহারা শিশুর মত সরল মন।জিজ্ঞেস করে, সবার মত আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবি তো?
ঋষির মনে পড়ল বৌদিকে সাফ জানিয়ে দেবার কথা। এই সুযোগে বলল,শোনো পরীক্ষার পর তুমি যা বলবে করব কিন্তু পরীক্ষার আগে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
আমি তোর গার্লফ্রেণ্ড তোর ক্ষতি হোক তেমন বলব কেন?আচ্ছা তোর বন্ধুরা গার্ল ফ্রেণ্ডদের সঙ্গে কি কথা বলে?
বারে আমি কি করে বলবো?
ওরা এসে বলেনা?
ঋষি ফিক করে হাসল। সেসব কথা বৌদিকে বলা যাবেনা। কঙ্কাবতীর নজর এড়ায় না বলল, এই শোন গার্লফ্রেণ্ডদের কাছে সব কথা খুলে বলতে হয়। একটু বোস চা করে আনি।
কঙ্কাবতী চা করতে গেল। বৌদি যদি বিবাহিত না হত তাহলে দারুণ গার্লফ্রেণ্ড হত।সবাই কি গার্লফ্রেণ্ডকে বিয়ে করে?বৌদিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজের মনে হাসে।
দেখ ত কেমন হয়েছে?তাড়াতাড়ি করে আনলাম।
তাড়াতাড়ির কি আছে?আমি তো বসে আছি।
বয়ফ্রেণ্ডদের বেশিক্ষন বসিয়ে রাখা যায়?
ঋষির শরীরের মধ্যে রক্তে ঢেউ খেলে যায়। বৌদি মজা করছে বুঝলেও এসব কথা শুনলে কেমন লাগে।
চা শেষ করে উঠে পড়ল। কঙ্কাবতী দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।ঋষি ঘুরে দাঁড়িয়ে আসি বলতে যাবে আচমকা দু-হাতে জড়িয়ে ধরল কঙ্কাবতী।
সজোরে বুকে চেপে ধরে।সারা শরীরে শিহরণ অনুভব করে।ঋষি কিং কর্তব্য বিমূঢ় বৌদির শরীরের গন্ধে মাথা ঝিম ঝিম করে।
কঙ্কা বতি জিজ্ঞেস করল,চৌম্বক আকর্ষন বুঝতে পারলি?
হু-উ-উম।
যেন কি মনে পড়ে গেল কঙ্কাবতী বলল, দাড়া এক মিনিট। কঙ্কাবতী ভিতরে চলে গেল। ঋষির মনে হচ্ছিল সারা জীবন যদি এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতো, কোনো আপত্তি করত না।কঙ্কা এসে একটা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা রাখ। রিচার্জ করে নিবি।
বড়দি যদি দেখে?
লুকিয়ে রাখবি। আমি মিস কল দিলে তুই নিরাপদ জায়গায় চলে যাবি। তারপর কল করব।
বৌদি আমি একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরব?
ধর জিজ্ঞেস করার কি আছে?বৌদি বলবি না,গার্ল ফ্রেণ্ডকে কেউ বৌদি বলে। কঙ্কাবতী দুহাত তুলে দাড়াল।
ঋষি বগলের তলা দিয়ে হাত ঢূকিয়ে বুকে মাথা গুজে জড়িয়ে ধরল।কঙ্কাবতীর বুক ভিজে যায়। মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল, কাদছিস কেন?
ঋষি হেসে বলল, চোখে জল এসে গেল, কাদছি না।
মনীষার ঘুম ভেঙ্গে গেল মাঝরাতে। উঠে বসে স্বামীকে দেখল হুশ নেই। দুই উরুর ফাকে নেতিয়ে পড়ে আছে সুনীলের ঐটা।পাশে ঘুমন্ত মেয়েকে একবার দেখে লুঙ্গি টেনে নামিয়ে দিলেন। বিছানা থেকে নীচে নেমে বাথরুমে গেলেন। বাথরুম সেরে ফেরার সময় দেখলেন, বৈঠকখানায় লাইট জ্বলছে।ঋষি সোফায় বসে পড়ছে, নিপাট বিছানা।দরজায় বড়দিকে দেখে অপরাধী মুখে হাসে। মনীষা বললেন, কটা বাজে দেখেছিস?অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা দিবি কি করে?এখন শুয়ে পড়। মনীষা চলে গেলেন নিজের ঘরে।বই খাতা গুছিয়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল ঋষি। কাল ছুটি মনে মনে হিসেব করে সারাদিন কি করবে?এই কদিন টুকুনকে পড়াতে না হলে ভাল হতো।কিন্তু সেকথা বলা যাবে না। খাওয়া দাওয়া সেরে একবার চট করে কঙ্কাবৌদির সঙ্গে দেখা করে আসবে। পরিস্কার বলে দেবে পরীক্ষার আগে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এইসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতেই পারেনা।
কঙ্কাবতী বুঝতে পারেনা দিব্যেন্দুর সঙ্গে সম্পর্ক কিভাবে চালিয়ে যাবে?ওর পাশে শুতেও ঘেন্না করছে। কাল সকালে যদি ক্ষমা চায় কি করবে?এর আগেও কয়েকবার বলেছে ভুল হয়ে গেছে স্যরি। এক জায়গায় তো থামতে হবে। কঙ্কাবতীর নিশ্চিত দিব্যেন্দু কাকিনাড়া যায়নি। কিন্তু কোথায় যেতে পারে? আন্দাজ করতে পারেনা।
রীণাকে নিয়ে বাবুলাল শান্তি ভট্টাচার্যের বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করতে শান্তিবাবু বিরক্ত হয়ে এক ধমক দিলেন বাবুলালকে।এখানে নিয়ে এসেছিস কেন?
রীণা এগিয়ে আসতে শান্তিবাবু বললেন, তোমাকে বলিনি বাড়ীতে আসবে না?
বাবুলাল বুঝতে পারেনা তার কি ভুল হয়েছে?বাবুলালের কাছে এসে শান্তিবাবু ফিসফিস করে বললেন, ও যেখানে যেতে চায় একটু পৌছে দে। সকালে দেখা করিস।
শান্তিবাবু ভিতরে চলে যেতে বাবুলাল বলল,কোথায় যাবেন আপনি?যত শালা ছেড়া ঝামেলা।
আমাকে পুর্ব সিথি পৌছে দেবেন?রীণা কাতর গলায় বলল।
বাবুলালের ইঙ্গিতে বাইকের পিছনে চেপে বসে বিড়বিড় করে বলল,শালা কিভাবে তোমায় সাইজ করি দেখো।
কিছু বললেন?
না আপনাকে না।
তাহলে কাকে সাইজ করবেন?
এত ফালতু বকছেন কেন।চুপ করে বসুন।
রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে ভটভটিয়ে বাইক ছুটে চলল।রীণা জড়িয়ে ধরে বাবুলালকে। কাধ ঝাকি দিয়ে বাবুলাল বলল, সোজা হয়ে বসুন।
ঘুম ভেঙ্গে গেল, সকালের নরম রোদ জানলা দিয়ে কঙ্কার মুখে এসে পড়েছে।চোখ মেলে বুঝতে পারে সোফায় শায়িত। মনে পড়ল কাল রাতের কথা। উঠে বসে কয়েকমুহূর্ত কি ভাবল তারপর বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে শোবার ঘরে উকি দিয়ে দেখল দিব্যেন্দু চোখ বুজে পড়ে আছে। রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপায়।ঘুম ভাঙ্গলেও দিব্যেন্দু শুয়ে শুয়ে কাল রাতের কথা ভাবে। মনে হচ্ছে রীণা তাকে সব কথা বলেনি। দোষ শুধু ওর স্বামীর মনে হয়না রীণারও নিশ্চয়ই কিছু দোষ ছিল।কি বিচ্ছিরি কথা বলছিল। বালিশের পাশে মোবাইলটা নজরে পড়ে।কললিস্ট ঘেটে দেখে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল রীণা।কঙ্কাও একবার ফোন করেছিল। একটা আননোন নম্বর দেখে মনে করার চেষ্টা করে এটা কার নম্বর? কাল তাহলে আর কে ফোন করেছিল? রীণার কি দুটো মোবাইল?খুব বাচা বেচে গেছে কাল। শেষে কি হল রীণার সঙ্গে দেখা হলে জানা যাবে। রীণার কথা মনে হতে অস্বস্তি বোধ করে। নিশ্চয়ই খুব গালমন্দ করবে। যাহোক কিছু বানিয়ে বলা যাবে।
টুকুনকে নিয়ে পড়াতে বসেছে ঋষী। টুকুন একটানা পড়তে পারে না,খালি প্রশ্ন।ঋষি তাগাদা দিল কি হল থামলে কেন?
মামু বাপি ভাল না।
ছিঃ ওকী কথা?বাপি গুরুজন। ঋষী বকা দিল।
মামণি গুরুজন না?টুকুন পালটা প্রশ্ন করল।
সবাই গুরুজন।
তাহলে মামণিকে বকে কেন?
কি উত্তর দেবে ঋষি বুঝতে পারেনা। জামাইবাবু কি বড়দিকে কিছু বলেছে?
মনীষা চা নিয়ে ঢূকলেন। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে টুকুনকে বললেন,মামণি তোমার মামুর পরীক্ষা। এ-কদিন তুমি আমার কাছে পড়বে।
ঋষি আপত্তি করল, তাতে কি হয়েছে আমার অসুবিধে হবে না।
তুই বেশি কথা বলবি না। মনীষা ধমক দিলেন।
ঠিক হয়েছে ঠিক হয়েছে। টুকুন হেসে হাততালি দিল।
টুকুনকে নিয়ে মনীষা চলে গেলেন। ঋষি মনে মনে ভাবে ভালই হল। পরমুহূর্তে মনে হল চাপ বেড়ে গেল রেজাল্ট খারাপ হলে কোণো অজুহাত চলবে না। অনার্সটা পেরিয়ে গেলে অন্য সাবজেক্টগুলোর জন্য চিন্তা নেই। বড়দি নিজের পায়ে দাড়াবার কথা বলছে অর্থাৎ চাকরি করার কথা। ঋষির ইচ্ছে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার কিন্তু কে তাকে পড়াবে? কঙ্কাবৌদি বলেছে অসুবিধে হলে বলবি। বলেছে এই যথেষ্ট,বৌদি কেন টাকা দেবে?দিবুদাই বা রাজি হবে কেন?ওহো আজ সোমবার কঙ্কাবৌদির সঙ্গে দেখা করার কথা। কোথাও যেতে বললে সাফ বলে দেবে পরীক্ষার আগে সম্ভব নয়। পরীক্ষার পর যা বলবে রাজি আছে।
চাকরি হতে অবসর নিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষের সময় কাটতে চায়না।একমেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে।দায়দায়িত্ব কিছু নেই বললে চলে।বিছানায় আধশোয়া হয়ে কাগজ পড়ছেন।বুচির মা ঘর মুছচে মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকে দেখেন।কখন একটু কাপড় সরে যায় কিম্বা দু-পায়ের ফাক দিয়ে এক ঝলক দেখা যায় কিনা তার অধীর প্রতিক্ষায় কাগজ পড়ায় মন দিতে পারছে না।রান্নাঘর হতে কাকলি ডাকলেন,এই চা-টা নিয়ে যাবে?
শেফালি দেখোতো তোমার কাকি কি বলছে?
বুচির মা ঘর মোছার ভিজে ন্যাকড়া মেঝেতে রেখে রান্নাঘরের দিকে গেল।
কিরে তোর ঘর মোছা হয়েছে?
কাকু বলল আপনে ডাকতিছেন?
তুই যা তাড়াতাড়ি কর।আমার অফিস যাবার আগে কাজ শেষ করবি।কাকলি বললেন।
চায়ের কাপ নিয়ে কেষ্টবাবুকে চা দিয়ে বললেন,একটু নড়ে বসতে পারো না।
তুমি আবার চা আনতে গেলে কেন শেফালিকে দিলেই হতো।
থামো।যত আদিখ্যেতা–শেফালী?
কি আশ্চর্য শেফালিকে শেফালী বললে দোষের কি হয়েছে?
শেফালী-ই-ই।দরদ ঝরে পড়ছে।তুই হা-করে কি শুনছিস?তাড়াতাড়ি ঘর মুছে ফেল।
কাকলি রান্না ঘরে চলে গেলেন।বুচির মা মুচকি হেসে ঘর মুছতে লাগল।
কাকিমার কথায় তুমি কিছু মনে কোরনা।কেষ্টোবাবু বললেন।
কাজের নোক অত মনে করলি চলে।শেফালী বলল।
বেলা বাড়তে থাকে। কাগজে চোখ বুলিয়ে দিব্যেন্দু স্নানে গেল। রান্না শেষ হয়ে এসেছে। কঙ্কাবতী কেমন উদাসীন। বাবার কথা মনে পড়ল। ঘণ্টাখানেকের পথ ইচ্ছে তো হয় যেতে কিন্তু গেলেই নানা প্রশ্ন কেমন আছিস ও কেমন আছে?কি বলবে ভাল আছে,সুখে আছে?দিব্যেন্দু বাথরুম হতে বেরিয়েছে।কঙ্কা ভাত বেড়ে টেবিলের উপর রেখে এল। দিব্যেন্দু রেডি হয়ে টেবিলে গিয়ে বসল।ব্যাঙ্কে যাক না যাক বেরোতে হবে। না হলে এখানে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে কেন যাবেনা? মুখ বুজে খাওয়া শেষ করে। বেরোবার আগে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বলল,আমি বেরোচ্ছি।
দিব্যেন্দু বেরিয়ে যেতে কঙ্কাবতী দরজা বন্ধ করে দিল। যতক্ষন ঘরে ছিল অস্বস্তি বোধ করছিল। এবার খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম। বাথরুমে ঢুকে সাবান ঘষে স্নান করে। সারা শরীরে কেমন এক গ্লানি জড়িয়ে আছে যেন। কাল কলেজ আছে বন্দনাদির সঙ্গে দেখা হবে। অনেক কথা জমে আছে কাউকে বলতে পারলে কিছুটা হালকা হওয়া যেতো। স্নান সেরে ভাত নিয়ে বসল।যত ভাবছে এসব নিয়ে ভাববে না,ঘুরে ফিরে ঐ চিন্তাটা আসছে। অন্যদিন বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে আজ আর বই নয় ঘুমাবে।গাঢ় ঘুম হলে কিছু মনে পড়বে না।
বুচির মার কাজ শেষ।কাকলি বললেন,দেখ বুচি হিসি করেছে।
বুচি হিসি কোরে তার মধ্যে বসে আছে।শেফালী মেয়েকে কোলে নিয়ে জায়গাটা ভালো করে মুছে দিয়ে বলল,কাকি আসতেছি?
কাকলি দ্রুত স্নান সেরে খেতে বসল।একাই খায় ওকে বললে বলবে,এতদিন অফিস ছিল।নাকে মুখে গুজে অফিস যেতাম।এখন ধীরে সুস্থে আরাম কোরে খাবো।
কাকলি বেরোবার আগে বলল,সব ঢাকা দেওয়া আছে।আমি আসি?
জামাইবাবু বেরিয়ে গেছে টুকুন ঘুমোচ্ছে ঋষি খেয়ে দেয়ে বই নিয়ে বসছে।বড়দি শোবার উদ্যোগ করছে। ঋষির ঘরে উকি দিল। বড়দি বলল, সারাক্ষন বই নিয়ে থাকলে হবে একটু পায়চারি করে আয়, মনটা সতেজ হবে। কথাটা খারাপ লাগেনা পায়জামার উপর একটা জামা গলিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
রাস্তায় এসে খেয়াল হয়, এমা কঙ্কাবৌদি দেখা করতে বলেছিল। এখন যাওয়া কি ঠিক হবে?ভাবতে ভাবতে কঙ্কাবৌদির বাড়ীর কাছে এসে উপর দিকে তাকাল। ব্যালকনিতে কেউ নেই, একটা কাপড় মেলে দিয়েছে।
সবে চোখ বুজেছে অমনি কলিং বেল বেজে উঠল। কঙ্কাবতী চোখ মেলে তাকায়।উরুর উপর উঠে যাওয়া নাইটি টেনে নামিয়ে খাট থেকে নামল। দরজার কাছে গিয়ে বলল,কে?
কোনো সাড়া নেই। একবার ভাবল দরজা খুলবে কিনা?দরজা খুলে দেখল কেউ নেই। সিড়ি দিয়ে কে যেন নেমে যাচ্ছে। কঙ্কাবতী এগিয়ে গিয়ে ডাকল, কে-এ?
ঋষি উপর দিকে তাকাতে কঙ্কাবতী বলল, কিরে চলে যাচ্ছিস?
ঋষি উপরে উঠে বলল, ভাবলাম তুমি ঘুমোচ্ছো।
আয় ভিতরে আয়। এতক্ষণে সময় হল?
শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে খাটে বসতে বলে কঙ্কাবতী চলে গেল। ঋষি এসেছে ভালই হল।
ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে। ফ্রিজ খুলে কোল্ড ড্রিঙ্কস বের করে দুটো গেলাসে ঢালল।রোদের মধ্যে এসেছে ভাল লাগবে। ঋষির হাতে একটা গেলাস দিয়ে কঙ্কাবতী খাটে হেলান দিয়ে বসল।
তুমি ঘুমোচ্ছিলে?
সে তোকে ভাবতে হবেনা। তোর যখন ইচ্ছে হবে আসবি। আমি না ডাকলে তুই চলেই যেতিস?তুই কিই রে?আবার গুণ্ডাদের সঙ্গে মারামারি করিস?
বৌদি কার কথা বলছে?অবাক হয়ে বলল, আমি মারামারি করেছি?
বাবুলাল না কে তার সঙ্গে মারামারি করিস নি?কেন ওদের সঙ্গে লাগতে যাস?
সুমিকে ধাক্কা দিয়েছিল ছাড়িয়ে দিয়েছি। মারামারি করিনি।
সুমি?তার সঙ্গে তোর কি সম্পর্ক?
শুভর গার্ল ফ্রেণ্ড।
কঙ্কা মুখ টিপে হাসে।এইজন্য ছেলেটাকে ভাল লাগে।কেমন সহজ ভাবে বলল,গার্লফ্রেণ্ড।
তোর বন্ধুদের সবার গার্লফ্রেণ্ড আছে তাই না?
ঋষি মাথা নীচু করে লাজুক হাসে। কঙ্কাবতীর মজা লাগে। মনে পড়ল ওর বিশাল ঐটার কথা। কঙ্কাবতী জিজ্ঞেস করে,তোর কোনো গার্লফ্রেণ্ড নেই?
আমি কোথায় পাবো?
ওরা যেভাবে পেয়েছে।তোর কলেজে কোন মেয়ে নেই? এত সুন্দর চেহারা তোর।
পর্ণার কথা মনে পড়ল।কিন্তু সেকথা বৌদিকে বোলে না।লাজুক গলায় ঋষি বলল,জানো বৌদি মেয়েদের সঙ্গে ঠিকমত কথা বলতে পারিনা।
কেন মেয়েরা আলাদা কি?
ঋষি নখ খুটতে থাকে। কি বলবে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারেনা। কঙ্কাবতী বলল,মেয়্যেরা তোকে আকর্ষণ করেনা, নাকি তুই মেয়েদের পছন্দ করিস না?
না না তা নয়–মানে–মেয়েদের মধ্যে একটা চৌম্বক শক্তি আছে।
কঙ্কাবতীর নতুন লাগে কথাটা। মেয়েদের নিয়ে ওর নিজস্ব ভাবনা আছে।কঙ্কাবতী বলল, আমার দিকে তাকা, ভাল করে দ্যাখ-।
ঋষী সরাসরি তাকালো, কি সুন্দর ফিগার বৌদির। উন্নত বক্ষ ঢাল খেয়ে ক্রমশ সরু হয়ে এসেছে। কোমর থেকে বাক নিয়ে সৃষ্টি করেছে রহস্য।কঙ্কাবতী জিজ্ঞেস করল,আমার কোথায় চৌম্বক শক্তি?
ধুস তুমি আমার কথা বুঝতে পারোনি। আমি বলেছি একটা চৌম্বকীয় আকর্ষণ–।
তা হলে তোকে কেউ টানলো না কেন?
চট করে মনে পড়ে গেল শব্দটা।ভেবেছিল বৌদিকে জিজ্ঞেস করবে। ঋষি বলল,আমি পরভৃত, আমার ভয় হয়। আচ্ছা বৌদি পরভৃত মানে কি?
কঙ্কাবতী খিলখিল করে হেসে উঠল। ঋষির বুক কাপে।বৌদি হাসলে মনে হয় সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। কঙ্কাবতী হাসি থামিয়ে বলল, তুই বললি আবার তুই মানে জিজ্ঞেস করছিস?
আসলে একজন জিজ্ঞেস করছিল,বিয়ের পর মেয়েরা পরভৃতা কি না?
কে জিজ্ঞেস করছিল?
আমার এক ছাত্রী শবরী।
কঙ্কাবতী জানে কোকিলকে বলে পরভৃত। কাকের বাসায় কোকিলের বাচ্চা পালিত হয়।
উড়তে শিখে পালিয়ে যায় পালিতা মাকে ফেলে। কিন্তু সেতো পরভৃতা নয়। এই ফ্লাট তার নিজের নিজের উপার্জনে খায়। দিব্যেন্দু তার মাইনের বেশিটাই কাকিনাড়া পাঠিয়ে দেয়। ঋষী বৌদিকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করল, বৌদি তোমার মন খারাপ?
কঙ্কাবতী চোখ তুলে গভীরভাবে ঋষিকে দেখল। মৃদু হেসে বলল, আমাকে তোর গার্লফ্রেণ্ড করবি?
ঋষি লজ্জা পেয়ে বলল, ধ্যাৎ।
আমাকে তোর পছন্দ নয়?
তোমাকে আমার দারুণ লাগে। কিন্তু তুমি বিবাহিত মানে একজনের বউ।
বউ হলে কি বন্ধু হতে পারিনা?কঙ্কাবতীর গলায় আকুতি।
ঋষির খুব মায়া হয় বলল, ঠিক আছে তুমি আমার গার্লফ্রেণ্ড, হলতো?
কঙ্কাবতীর সব এলোমেলো হয়ে যায় বলে,যেন নতুন করে ঋষিকে দেখছে।সুন্দর পুরুষালি চেহারা শিশুর মত সরল মন।জিজ্ঞেস করে, সবার মত আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবি তো?
ঋষির মনে পড়ল বৌদিকে সাফ জানিয়ে দেবার কথা। এই সুযোগে বলল,শোনো পরীক্ষার পর তুমি যা বলবে করব কিন্তু পরীক্ষার আগে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
আমি তোর গার্লফ্রেণ্ড তোর ক্ষতি হোক তেমন বলব কেন?আচ্ছা তোর বন্ধুরা গার্ল ফ্রেণ্ডদের সঙ্গে কি কথা বলে?
বারে আমি কি করে বলবো?
ওরা এসে বলেনা?
ঋষি ফিক করে হাসল। সেসব কথা বৌদিকে বলা যাবেনা। কঙ্কাবতীর নজর এড়ায় না বলল, এই শোন গার্লফ্রেণ্ডদের কাছে সব কথা খুলে বলতে হয়। একটু বোস চা করে আনি।
কঙ্কাবতী চা করতে গেল। বৌদি যদি বিবাহিত না হত তাহলে দারুণ গার্লফ্রেণ্ড হত।সবাই কি গার্লফ্রেণ্ডকে বিয়ে করে?বৌদিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজের মনে হাসে।
দেখ ত কেমন হয়েছে?তাড়াতাড়ি করে আনলাম।
তাড়াতাড়ির কি আছে?আমি তো বসে আছি।
বয়ফ্রেণ্ডদের বেশিক্ষন বসিয়ে রাখা যায়?
ঋষির শরীরের মধ্যে রক্তে ঢেউ খেলে যায়। বৌদি মজা করছে বুঝলেও এসব কথা শুনলে কেমন লাগে।
চা শেষ করে উঠে পড়ল। কঙ্কাবতী দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।ঋষি ঘুরে দাঁড়িয়ে আসি বলতে যাবে আচমকা দু-হাতে জড়িয়ে ধরল কঙ্কাবতী।
সজোরে বুকে চেপে ধরে।সারা শরীরে শিহরণ অনুভব করে।ঋষি কিং কর্তব্য বিমূঢ় বৌদির শরীরের গন্ধে মাথা ঝিম ঝিম করে।
কঙ্কা বতি জিজ্ঞেস করল,চৌম্বক আকর্ষন বুঝতে পারলি?
হু-উ-উম।
যেন কি মনে পড়ে গেল কঙ্কাবতী বলল, দাড়া এক মিনিট। কঙ্কাবতী ভিতরে চলে গেল। ঋষির মনে হচ্ছিল সারা জীবন যদি এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতো, কোনো আপত্তি করত না।কঙ্কা এসে একটা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা রাখ। রিচার্জ করে নিবি।
বড়দি যদি দেখে?
লুকিয়ে রাখবি। আমি মিস কল দিলে তুই নিরাপদ জায়গায় চলে যাবি। তারপর কল করব।
বৌদি আমি একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরব?
ধর জিজ্ঞেস করার কি আছে?বৌদি বলবি না,গার্ল ফ্রেণ্ডকে কেউ বৌদি বলে। কঙ্কাবতী দুহাত তুলে দাড়াল।
ঋষি বগলের তলা দিয়ে হাত ঢূকিয়ে বুকে মাথা গুজে জড়িয়ে ধরল।কঙ্কাবতীর বুক ভিজে যায়। মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল, কাদছিস কেন?
ঋষি হেসে বলল, চোখে জল এসে গেল, কাদছি না।