27-05-2020, 11:18 AM
(This post was last modified: 27-05-2020, 11:59 AM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।১৩।।
কমল বলেছিল ধুপের গন্ধের মত খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক।আজ তার অনেক খ্যাতি খ্যাতির বিড়ম্বনাও কম নয়।ইচ্ছে মত রাস্তায় বেরোতে পারে না শপিং করতে পারে না।বাসে ট্রামে যাতায়াত ভাবতেই পারে না। আজ বাবা নেই মাও নেই।তারা কিছুই দেখে যেতে পারলনা।অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে।কমল লিখেছিল কুঞ্জ উকিল আগ্রহ আছে কিন্তু শারীরিক সামর্থ্য নেই।লালের শারীরিক সামর্থ্য এবং আগ্রহ কোনোটাই নেই।কুঞ্জ উকিল চেটে চুষে তবু কিছুটা পারলেও লাল একেবারে বোধ বুদ্ধিহীন জড় পদার্থ।
এখন সে একা নটরাজ ছাড়া তার কেউ রইল না।লালজী সারাক্ষন বউকে আকড়ে থাকতে চায় কেন কে জানে।নন্দ কিশোর তাকে সামলায়। অবস্থা বদলাতে বেশি সময় লাগলো না। শুরু হল ‘তপোভঙ্গ’-এর তালিম।
শিবপ্রসাদ দেবজয়ীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সাক্ষাতকারের জন্য সময় চেয়েছে,সবাইকে নিরাশ হতে হয়েছে। কেটে যায় মাসের পর মাস। অদ্ভুত নেশায় মেতে আছে দেবজয়ী। যে করেই হোক ‘তপোভঙ্গ’ আয়ত্ত করতে হবে,তার কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ।দু-চোখে তার উর্বশী মেনকা হবার স্বপ্ন,নাচ দিয়ে অসাধ্য-সাধন করতে চায়।এরমধ্যে একদিন জলপাইগুড়ি হতে ফোন এল।
–হিরালাল স্যরের কাছে মাসীমার কথা শুনলাম চোখে জল এসে গেছিল।জয়ী কেমন আছিস তুই?
–ভাল আছি,তুই?
–ঐ একরকম। নতুন বাড়িতে উঠে গেছি।বিয়ে করেছিস খবর পেয়েছি।
–হ্যা ওই আর কি–?
–তোকে অনেকদিন দেখিনি।একদিন যাবো ভাবছি–কবে যাবো বল?
–দ্যাখ কমল,এখন আমি একটু ব্যস্ত একটা বিশেষ কারণে–।
–ও আচ্ছা।স্যরি রাখি তবে?
–না না।কথা বল না।
–তোকে বলেছিলাম কলকাতায় বোনের বিয়ে হয়েছে।তোর খুব নাম ও বলছিল–।
–ও!
–তোকে টিভিতে দেখি,কত নাম এখন তোর।কতবড় পরিবারে তোর বিয়ে হয়েছে।ভাবি ফোন করবো।কিন্তু তুই যদি বিরক্ত হোস।
–ওমা বিরক্ত হব কেন?
–তোর আগের বর দেখিনি।হি-হি-হি!এবারেরটাও কি দেখাবি না?
–দেখাব।বাড়ির সব কেমন আছে?
–আছে একরকম।কি করে তোর বর? নাচে?
–ওই আর কি। সারা বাড়ী নেচে কুদে বেড়ায়।অজয়-বিজয় কেমন আছে? বড়দির খবর কি?
–ভাল আছে,অজুর এখনো মনে আছে তার মাসীর কথা–ঠাম-মার কথা।নিজেকে সামলাতে একটু থামে কমল,তারপর বলে,নি-মাই দিব্যি আছে।ভেবেছিলাম পশুপতিবাবুর মৃত্যুর পর বদলাবে।হি-হি-হি! একদিন টিভিতে তোর অনুষ্ঠান দেখে ভোরবেলা বাড়িতে এসে হাজির।আমাকে জড়িয়ে ধরে হাসছেন কাঁদছেন আর বলছেন ….আমি জানতাম সাধনা ব্যর্থ হবার নয়…ওর মধ্যে আমি আগুন দেখেছিলাম।হি-হি-হি!তুমি যে বলেছিলে বিয়ে করে গিন্নি-বান্নি হয়ে গেছে।নাচ এখন ভোগে।ছিঃ বন্ধুর সম্বন্ধে এমন কেউ বলে?
এমন রাগ হল বলে দিলাম,একটাকে ছেড়ে আর একটাকে বিয়ে করেছে।উড়ে না মেড়ো কে জানে।হি-হি-হি!
বুড়ি চোখ কুচকে বলল,শিল্পিদের ওতে দোষ নেই।শিল্পিরা খুব মুডি হয়।শিল্পের জন্য সব করতে পারে। হ্যা শালা যত দোষ আমাদের? কিরে কিছু বলছিস না যে?
–আমি শুনছি তুই বল।
–রাগ করলি নাতো?
–না না রাগের কি আছে।
–জানিস একদিন রাস্তায় দেখলাম মৃন্ময়কে।বউ পালাবার পর কেমন পাগল-পাগল চেহারা।আমি পাত্তা দিইনি।অজু প্রায়ই জয়ী মাসীর কথা বলে।বড়দিরও তোকে দেখার খুব ইচ্ছে।
–যাব একদিন।
–তাহলে আমার বাড়িতে উঠবি।তোর এখন কত নাম।হি-হি-হি! জেলার লোকেরা টেরিয়ে যাবে।সামনের মাসে কলকাতায় বোনের ওখানে যেতে পারি।অনেকদিন ধরে বলছে।
কমলকলি খানিক নীরব থেকে প্রত্যাশা করে জয়ী হয়তো বলবে ‘আমার এখানে আসিস’ কিন্তু পরিবর্তে শুনতে পেল,এখন রাখি রে! কাজ আছে।
কমলের চোখে জল এসে যায়।অপমানিত বোধ করে! এত কিসের অহঙ্কার। হায়! একদিন দুই বন্ধু গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।দারিদ্র্যদেখে মাসীমার হাতে দু-হাজার টাকা দিয়ে এসেছিল,এসব কথা কি কেউ বিশ্বাসকরবে? জলপাইগুড়িথেকে চলে আসার সময় দুই বন্ধু চেন বদল করেছিল, আজ সে কথা গল্প বলে মনে হবে।গলায় হাত দিয়ে চেনটা স্পর্শ করে।হোক ইমিটেশন তবু এর আলাদা মুল্য ছিল তার কাছে। কলকাতায় গিয়ে ফেরৎ দিয়ে আসবে।নিজের প্রতি অবহেলা না করলে সেও কি কিছু করতে পারতো না? বড় মানুষের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়া তারই ভুল হয়েছে।
–কে মা? জয়ীমাসি? অজয় ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে।
--কে জয়ীমাসী?কমল মুখিয়ে ওঠে।
অজয়ের মুখটা কালো হয়ে যায় অভিমানে।কমল বুঝতে পেরে ছেলের গাল টিপে বলল,না বাবা,মাসী নয় অনেকদিন আগের চেনা একজন।
আজ অমৃত যোগঃ রাত্রি ২টা ১৭মি গতে সুচনা।বাবুজি তিথি নক্ষত্র দেখে সময় নির্দিষ্ট করে দিলেন।আজ যাচাই হবে কষ্ঠিপাথরে ‘তপোভঙ্গ।’ পনেরো বছর আগেকার কথা মাতা জাহ্নবি এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সফল হতে পারেন নি।বহু চেষ্টা করেও ধ্যান ভঙ্গ করতে সক্ষম হন নি। মাতাজির সে আক্ষেপ ক্ষতের মত দগ দগ করছে মনে আজও।পৌঢ়ত্বে পৌছে এখন অসম্ভব। সকাল-সকাল স্নান সেরে নিয়েছে দেবজয়ী।শিবপ্রসাদ এবং জয়ী দুজনেরই উপবাস।স্বাভাবিকভাবে চঞ্চল দেবজয়ীর মন।কামকলার উপর নানা শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ করে সেগুলো মনে মনে আওড়ায়। বাবুজি বলেছেন,চঞ্চলতা সাধনার অন্তরায় সেজন্য মনস্থির করতে ধ্যানে বসেছে জয়ী। বিকেলবেলা লালজির বাদাম-পেস্তার সরবৎ খাওয়ার সময়।লালজিকে দেখাশুনা করে নন্দকিশোর।কদিন আগে কমল ফোন করে লালকে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।শো-পিসই বটে আলমারিতে সাজিয়ে রেখে দেও। কথাটা ভেবে মনে মনে হাসে দেবজয়ী।
কমল বলেছিল ধুপের গন্ধের মত খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক।আজ তার অনেক খ্যাতি খ্যাতির বিড়ম্বনাও কম নয়।ইচ্ছে মত রাস্তায় বেরোতে পারে না শপিং করতে পারে না।বাসে ট্রামে যাতায়াত ভাবতেই পারে না। আজ বাবা নেই মাও নেই।তারা কিছুই দেখে যেতে পারলনা।অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে।কমল লিখেছিল কুঞ্জ উকিল আগ্রহ আছে কিন্তু শারীরিক সামর্থ্য নেই।লালের শারীরিক সামর্থ্য এবং আগ্রহ কোনোটাই নেই।কুঞ্জ উকিল চেটে চুষে তবু কিছুটা পারলেও লাল একেবারে বোধ বুদ্ধিহীন জড় পদার্থ।
এখন সে একা নটরাজ ছাড়া তার কেউ রইল না।লালজী সারাক্ষন বউকে আকড়ে থাকতে চায় কেন কে জানে।নন্দ কিশোর তাকে সামলায়। অবস্থা বদলাতে বেশি সময় লাগলো না। শুরু হল ‘তপোভঙ্গ’-এর তালিম।
শিবপ্রসাদ দেবজয়ীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সাক্ষাতকারের জন্য সময় চেয়েছে,সবাইকে নিরাশ হতে হয়েছে। কেটে যায় মাসের পর মাস। অদ্ভুত নেশায় মেতে আছে দেবজয়ী। যে করেই হোক ‘তপোভঙ্গ’ আয়ত্ত করতে হবে,তার কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ।দু-চোখে তার উর্বশী মেনকা হবার স্বপ্ন,নাচ দিয়ে অসাধ্য-সাধন করতে চায়।এরমধ্যে একদিন জলপাইগুড়ি হতে ফোন এল।
–হিরালাল স্যরের কাছে মাসীমার কথা শুনলাম চোখে জল এসে গেছিল।জয়ী কেমন আছিস তুই?
–ভাল আছি,তুই?
–ঐ একরকম। নতুন বাড়িতে উঠে গেছি।বিয়ে করেছিস খবর পেয়েছি।
–হ্যা ওই আর কি–?
–তোকে অনেকদিন দেখিনি।একদিন যাবো ভাবছি–কবে যাবো বল?
–দ্যাখ কমল,এখন আমি একটু ব্যস্ত একটা বিশেষ কারণে–।
–ও আচ্ছা।স্যরি রাখি তবে?
–না না।কথা বল না।
–তোকে বলেছিলাম কলকাতায় বোনের বিয়ে হয়েছে।তোর খুব নাম ও বলছিল–।
–ও!
–তোকে টিভিতে দেখি,কত নাম এখন তোর।কতবড় পরিবারে তোর বিয়ে হয়েছে।ভাবি ফোন করবো।কিন্তু তুই যদি বিরক্ত হোস।
–ওমা বিরক্ত হব কেন?
–তোর আগের বর দেখিনি।হি-হি-হি!এবারেরটাও কি দেখাবি না?
–দেখাব।বাড়ির সব কেমন আছে?
–আছে একরকম।কি করে তোর বর? নাচে?
–ওই আর কি। সারা বাড়ী নেচে কুদে বেড়ায়।অজয়-বিজয় কেমন আছে? বড়দির খবর কি?
–ভাল আছে,অজুর এখনো মনে আছে তার মাসীর কথা–ঠাম-মার কথা।নিজেকে সামলাতে একটু থামে কমল,তারপর বলে,নি-মাই দিব্যি আছে।ভেবেছিলাম পশুপতিবাবুর মৃত্যুর পর বদলাবে।হি-হি-হি! একদিন টিভিতে তোর অনুষ্ঠান দেখে ভোরবেলা বাড়িতে এসে হাজির।আমাকে জড়িয়ে ধরে হাসছেন কাঁদছেন আর বলছেন ….আমি জানতাম সাধনা ব্যর্থ হবার নয়…ওর মধ্যে আমি আগুন দেখেছিলাম।হি-হি-হি!তুমি যে বলেছিলে বিয়ে করে গিন্নি-বান্নি হয়ে গেছে।নাচ এখন ভোগে।ছিঃ বন্ধুর সম্বন্ধে এমন কেউ বলে?
এমন রাগ হল বলে দিলাম,একটাকে ছেড়ে আর একটাকে বিয়ে করেছে।উড়ে না মেড়ো কে জানে।হি-হি-হি!
বুড়ি চোখ কুচকে বলল,শিল্পিদের ওতে দোষ নেই।শিল্পিরা খুব মুডি হয়।শিল্পের জন্য সব করতে পারে। হ্যা শালা যত দোষ আমাদের? কিরে কিছু বলছিস না যে?
–আমি শুনছি তুই বল।
–রাগ করলি নাতো?
–না না রাগের কি আছে।
–জানিস একদিন রাস্তায় দেখলাম মৃন্ময়কে।বউ পালাবার পর কেমন পাগল-পাগল চেহারা।আমি পাত্তা দিইনি।অজু প্রায়ই জয়ী মাসীর কথা বলে।বড়দিরও তোকে দেখার খুব ইচ্ছে।
–যাব একদিন।
–তাহলে আমার বাড়িতে উঠবি।তোর এখন কত নাম।হি-হি-হি! জেলার লোকেরা টেরিয়ে যাবে।সামনের মাসে কলকাতায় বোনের ওখানে যেতে পারি।অনেকদিন ধরে বলছে।
কমলকলি খানিক নীরব থেকে প্রত্যাশা করে জয়ী হয়তো বলবে ‘আমার এখানে আসিস’ কিন্তু পরিবর্তে শুনতে পেল,এখন রাখি রে! কাজ আছে।
কমলের চোখে জল এসে যায়।অপমানিত বোধ করে! এত কিসের অহঙ্কার। হায়! একদিন দুই বন্ধু গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।দারিদ্র্যদেখে মাসীমার হাতে দু-হাজার টাকা দিয়ে এসেছিল,এসব কথা কি কেউ বিশ্বাসকরবে? জলপাইগুড়িথেকে চলে আসার সময় দুই বন্ধু চেন বদল করেছিল, আজ সে কথা গল্প বলে মনে হবে।গলায় হাত দিয়ে চেনটা স্পর্শ করে।হোক ইমিটেশন তবু এর আলাদা মুল্য ছিল তার কাছে। কলকাতায় গিয়ে ফেরৎ দিয়ে আসবে।নিজের প্রতি অবহেলা না করলে সেও কি কিছু করতে পারতো না? বড় মানুষের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়া তারই ভুল হয়েছে।
–কে মা? জয়ীমাসি? অজয় ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে।
--কে জয়ীমাসী?কমল মুখিয়ে ওঠে।
অজয়ের মুখটা কালো হয়ে যায় অভিমানে।কমল বুঝতে পেরে ছেলের গাল টিপে বলল,না বাবা,মাসী নয় অনেকদিন আগের চেনা একজন।
আজ অমৃত যোগঃ রাত্রি ২টা ১৭মি গতে সুচনা।বাবুজি তিথি নক্ষত্র দেখে সময় নির্দিষ্ট করে দিলেন।আজ যাচাই হবে কষ্ঠিপাথরে ‘তপোভঙ্গ।’ পনেরো বছর আগেকার কথা মাতা জাহ্নবি এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সফল হতে পারেন নি।বহু চেষ্টা করেও ধ্যান ভঙ্গ করতে সক্ষম হন নি। মাতাজির সে আক্ষেপ ক্ষতের মত দগ দগ করছে মনে আজও।পৌঢ়ত্বে পৌছে এখন অসম্ভব। সকাল-সকাল স্নান সেরে নিয়েছে দেবজয়ী।শিবপ্রসাদ এবং জয়ী দুজনেরই উপবাস।স্বাভাবিকভাবে চঞ্চল দেবজয়ীর মন।কামকলার উপর নানা শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ করে সেগুলো মনে মনে আওড়ায়। বাবুজি বলেছেন,চঞ্চলতা সাধনার অন্তরায় সেজন্য মনস্থির করতে ধ্যানে বসেছে জয়ী। বিকেলবেলা লালজির বাদাম-পেস্তার সরবৎ খাওয়ার সময়।লালজিকে দেখাশুনা করে নন্দকিশোর।কদিন আগে কমল ফোন করে লালকে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।শো-পিসই বটে আলমারিতে সাজিয়ে রেখে দেও। কথাটা ভেবে মনে মনে হাসে দেবজয়ী।