25-05-2020, 11:26 AM
।।আট।।
অবশেষে দেবজয়ী ফিরে এল খিদিরপুরে। বিনা পণে বিয়ে হয়েছিল বিনা শর্তেই হল বিচ্ছেদ।না ফুলের মালা না অশ্রুজল একেবারে অনাড়ম্বর বিদায়।পথে অপেক্ষা করছিল হেনা,এগিয়ে এসে বলল,বৌদি একটা অটোগ্রাফ দেবে বন্ধুদের দেখাবো তোমার সঙ্গে রোজ কথা বলি ওরা বিশ্বাস করতেই চায় না।
জয়ী ব্যাগ থেকে একটা ছবি বের করে পিছনে 'আমার স্নেহের হেনা' লিখে স্বাক্ষর করে হেসে হেনাকে দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসল।
জয়ী যাতে দুঃখ না-পায় চোখের জল সংবরন করে মা বুকে জড়িয়ে ধরল মেয়েকে।আর্থিক হাল শোচনীয় শরীর দুর্বল আড়ালে চোখের জল ফেললেও হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে অভাবকে চাপা দিয়ে রাখল মা।সন্ধ্যেবেলা দেখা করল গুরুজির সঙ্গে,উষ্ণ আলিঙ্গন শেষে জিজ্ঞেস করলেন,ওরা তোমাকে অনুমতি দিল?
–গুরুজি আমি সব ত্যাগ করে এসেছি।
জয়ীকে দেখে লালপ্রসাদ ল্যল-ল্যল করে টলতে টলতে ছুটে এল পিছনে একটি লোক লালজি-লালজি বলতে বলতে এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল।গুরুজি লোকটিকে ধমক দিলেন,নন্দকিশোর!কি হচ্ছে কি?
নন্দকিশোর লাল প্রসাদকে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল। গুরুজী দেবজয়ীকে জিজ্ঞেস করেন,আর কোন উপায় ছিল না? গুরুজির কপালে চিন্তার ভাঁজ।
–আমি অনেক চেষ্টা করেছি গুরুজি কিন্তু….।
–নটরাজের মর্জি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিবপ্রসাদ বলেন,এক বছর দিবারাত্র অভ্যাস করো।সক্ষম সন্তান নেই আমার আজীবনের শিক্ষা তোমাকেই সব দিয়ে যাবো যতটুকু জানি। বহু সময় নষ্ট হল একবছরে তার শোধ তুলবো।
গুরুজিকে প্রণাম করে বাড়ী ফিরে এল জয়ী। দেবজয়ী সব গ্লানি ভুলে নতুন করে উজ্জ্বীবিত হয়। সব ভুলে চলতে লাগল সাধনা,মা সেলাই করে।একজন তবলচি ঠিক করে দিয়েছেন গুরুজি।তা-তা-তেরে-কেটে-তা-তা-তা-ধাই।গুরুজি আবার বিদেশ সফরে বেরোচ্ছেন টিম নিয়ে, ইউরোপ ট্যুরের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।ক্ষিধে পায় না দেবজয়ীর,মা জোর করে না খাওয়ালে খাবার কথা আসেই না মনে।একনিষ্ঠতার বেড়া পেরিয়ে অভাব কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না দেবজয়ীয়কে। কেমন করে সম্ভব তা কেবল বলতে পারবে যারা সিদ্ধি লাভ করেছে সাধনায়।
গেজেল স্বামীর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এল কমলকলি। মানিকতলায় কে ননদ থাকে তার ওখানে উঠেছে।একদিন ঠিকানা খুজে এল খিদিরপুর পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। অনেকদিন পর পুরানো বন্ধুকে দেখে খুশি হয় জয়ী।দুই বন্ধু বসল সামনা-সামনি।কমল বলে,ফোন করেছিলাম,একটি মেয়ে সব বলল–হেমা না কি নাম–?
–হেনা।ওর বোন।খুব ভাল মেয়েটি।
–কষ্ট হচ্ছে না? চোখ কুচকে জয়ীকে দেখে।
নখ খুটতে খুটতে শুকনো হেসে বলে জয়ী,কিসের কষ্ট?
–এই যে ছেড়ে এলি?
–ধরলামই বা কোথায় তো ছাড়ার কথা আসছে কেন? ছাড় ওসব কথা।কমলের পাশে দাঁড়ানো ছেলেকে দেখে বলে,বেশ মিষ্টি হয়েছে দেখতে তোর ছেলে।এর মধ্যে এত বড় হয়ে গেল!
–এর মধ্যে কিরে গাজিপুরে ঢুকিয়েছে এটাকে।হি-হি-হি! কমদিন হল?
–কেমন আছে ওর বাবা এখন?
–আর বলিস না।বললে শুনবে না গাজা খেয়ে লিভারের বারোটা বাজিয়েছে। আর কেউ এল?
–আর কেউ মানে?
–দ্যাখ জয়ী আমি তোর বন্ধু–কিচ্ছু লুকোবি না।আরে শরীরের ক্ষিধে বলে একটা জিনিস আছে নাকি?
–সামনের মাসে ইউরোপ যাচ্ছি,প্রচণ্ড চাপ।ঐসব নিয়ে ভাবার সময় পাই না।তোর শ্বশুরমশাই কেমন আছেন?
–কুঞ্জ উকিল? বহুৎ সেয়ানা মাল।বলেছিল সম্পত্তি আমাকে লিখে দেবে,এখন আর উচ্চবাচ্য করছে না।কেবল বলে 'দেখছি-দেখবো' বুড়োর আর সময় হয় না।বুঝতে পারছি ঢপ দিয়েছে। শান্তিতে বাথরুম করতে পারি না উকিঝুকি দেয়। সবপুরুষ মানুষই এক কি বুড়ো আর কি ছোড়া–। হি-হি-হি! নিজের বউ ছেলের বউ বাছবিচার করবি না? খগেন আর ওর কাছে আসে না।এখন স্বাধীনভাবে নিজেই কেস করছে।
–খগেন কে?
–তোর কিছু মনে থাকেনা।বলেছিলাম না আমার শেষতম প্রেমিক।আমি সম্পত্তি ভাগের মামলা করবো,খগেন আমার হয়ে লড়বে কথা দিয়েছে।ও বলেছে বুড়োর নাড়ি-নক্ষত্র জানে।
–কিন্তু উনি কুঞ্জবাবুর জুনিয়ার ছিলেন–কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে না?
–তাতে কি আমিও ওকে কম দিয়েছি?
–তুই দিয়েছিস?
কমল একটু থামে তারপর বলে, তোরা বাইরে থেকে আমাকে যতটা কঠিন দেখিস ভিতরে কিন্তু ততটাই নরম।তিস্তার পাড়ে রিসর্টে মাঝে মাঝে দুপুর বেলা কি বলবো তুই আমার বন্ধু তোকে লুকোবার কিছু নেই, এমন কাকতি-মিনতি করছিল তুই যদি তখন ওর মুখটা দেখতিস–মুখের উপর না বলতে পারিনি। মিথ্যে বলবো না ও কিন্তু খুব যত্ন করে করে, কিভাবে সুখ দিতে হয় জানে। তোর তপনের মত জংলি না।
দেবজয়ী কোমলপ্রান বন্ধুকে অবাক হয়ে দেখে।কমলকলি আপন মনে বলে,এরপর ছেলে বড় হয়ে যাবে তার আগেই যতদিন পারি সুখ নিয়ে নিই–হি-হি-হি!
গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে,ছেলেকে বলে,বাবু যাও ঠাম-মার সঙ্গে খেলা করো।ছেলে চলে যেতে ফিসফিস করে বলে,এখনও পেটে একটা ঘুমোচ্ছে।
–এই অবস্থায় তুই দৌড়াদৌড়ি করছিস?
–কি করবো? সব ঝক্কি তো মায়েদেরই পোয়াতে হবে বাপ তো ভরে দিয়ে খালাস।
–সুভাষ জানে?
–আমিই জানিনা এটা কার? কে কখন ভরেছে? একটা কথা বলি জয়ী তুই আবার বিয়ে কর।
–আমি ভালই আছি।নাচই আমার দেবতা বন্ধু স্বামী সন্তান সংসার–সব।
মা চা নিয়ে ঢোকে।কমল উঠে মাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলে,মাসীমা কেমন আছেন?
–আর আমার থাকা।
–ঠাম-মা আরেকটা বিস্কুট দাও।বাবু বলে।
–দিচ্ছি সোনা।মা বলে।
–আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছে তাই না? ভীষণ দুষ্টু হয়েছে–বাবু বিস্কুট খাবি না গাঁজা খাবি? কমল জিজ্ঞেস করে।
–দাও আমাকে এটটা গাজা দাও।বাবু বলে।
–হি-হি-হি! এইতো বাপ কি বেটা! হি-হি-হি!
–আমি দিচ্ছি সোনা।মা বাবুকে কোলে নিয়ে চলে যায়।
–ছিঃ কমল তুই কিরে–একটা নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে—।
–নিষ্পাপ! গর্জে ওঠে কমল।জয়ী কথা শেষ করতে পারে না। বলতে পারিস আমি কি পাপ করেছিলাম?কেন আমাকে এই বেবুশ্যের জীবন বয়ে বেড়াতে হবে?
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না কমল ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে। জয়ী বন্ধুর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,এইতো ভগবানের পরীক্ষা–।
–পরীক্ষায় আমি ডাহা ফেল করে গেছিরে জয়ী–আমি হেরে গেছি–একেবারে গো-হারান হেরেছি রে—।
একটু পরেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে কমল,সিনেমার নায়িকার মত কেমন কাঁদলাম নারে? হি-হি-হি!হাসি থামিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,একটা কথা বলবো জয়ী তুই রাগ করবি নাতো?
–রাগ করবো কেন? কি কথা?
–আমি তোর বন্ধু কিছু মনে করিস না–মাসীমাকে দু-হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। তুই একটা শাড়ি মাসীমাকে–।
জয়ী কি একটা বলতে যায় কমল বলে,প্লিজ জয়ী মাসীমা আমার মায়ের মত এটুকু অন্তত—।
মাথা নীচু করে বসে থাকে দেবজয়ী।জীবন দুর্জ্ঞেয় রহস্য কতটুকু তার আমরা জানতে পারি।
–আজ উঠিরে? ঈশ্বর তোর সাধ পুরণ করুক। দেবজয়ীর নাম ধুপের গন্ধের মত ছড়িয়ে পড়ুক দেশে-বিদেশে এই কামনা করি।উত্তর বাংলার একপ্রান্তে বসে তার এই নগন্য বন্ধুর জীবনের ব্যর্থতায় সেটাই হবে কিছুটা প্রলেপ।
তার বন্ধু কমলকলিকে মনে হয় পারদের মত কখনো খুব তুচ্ছ আবার কখনো খুব উচ্চ।সত্যিই তার শুভাকাঙ্খী।
অবশেষে দেবজয়ী ফিরে এল খিদিরপুরে। বিনা পণে বিয়ে হয়েছিল বিনা শর্তেই হল বিচ্ছেদ।না ফুলের মালা না অশ্রুজল একেবারে অনাড়ম্বর বিদায়।পথে অপেক্ষা করছিল হেনা,এগিয়ে এসে বলল,বৌদি একটা অটোগ্রাফ দেবে বন্ধুদের দেখাবো তোমার সঙ্গে রোজ কথা বলি ওরা বিশ্বাস করতেই চায় না।
জয়ী ব্যাগ থেকে একটা ছবি বের করে পিছনে 'আমার স্নেহের হেনা' লিখে স্বাক্ষর করে হেসে হেনাকে দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসল।
জয়ী যাতে দুঃখ না-পায় চোখের জল সংবরন করে মা বুকে জড়িয়ে ধরল মেয়েকে।আর্থিক হাল শোচনীয় শরীর দুর্বল আড়ালে চোখের জল ফেললেও হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে অভাবকে চাপা দিয়ে রাখল মা।সন্ধ্যেবেলা দেখা করল গুরুজির সঙ্গে,উষ্ণ আলিঙ্গন শেষে জিজ্ঞেস করলেন,ওরা তোমাকে অনুমতি দিল?
–গুরুজি আমি সব ত্যাগ করে এসেছি।
জয়ীকে দেখে লালপ্রসাদ ল্যল-ল্যল করে টলতে টলতে ছুটে এল পিছনে একটি লোক লালজি-লালজি বলতে বলতে এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল।গুরুজি লোকটিকে ধমক দিলেন,নন্দকিশোর!কি হচ্ছে কি?
নন্দকিশোর লাল প্রসাদকে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল। গুরুজী দেবজয়ীকে জিজ্ঞেস করেন,আর কোন উপায় ছিল না? গুরুজির কপালে চিন্তার ভাঁজ।
–আমি অনেক চেষ্টা করেছি গুরুজি কিন্তু….।
–নটরাজের মর্জি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিবপ্রসাদ বলেন,এক বছর দিবারাত্র অভ্যাস করো।সক্ষম সন্তান নেই আমার আজীবনের শিক্ষা তোমাকেই সব দিয়ে যাবো যতটুকু জানি। বহু সময় নষ্ট হল একবছরে তার শোধ তুলবো।
গুরুজিকে প্রণাম করে বাড়ী ফিরে এল জয়ী। দেবজয়ী সব গ্লানি ভুলে নতুন করে উজ্জ্বীবিত হয়। সব ভুলে চলতে লাগল সাধনা,মা সেলাই করে।একজন তবলচি ঠিক করে দিয়েছেন গুরুজি।তা-তা-তেরে-কেটে-তা-তা-তা-ধাই।গুরুজি আবার বিদেশ সফরে বেরোচ্ছেন টিম নিয়ে, ইউরোপ ট্যুরের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।ক্ষিধে পায় না দেবজয়ীর,মা জোর করে না খাওয়ালে খাবার কথা আসেই না মনে।একনিষ্ঠতার বেড়া পেরিয়ে অভাব কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না দেবজয়ীয়কে। কেমন করে সম্ভব তা কেবল বলতে পারবে যারা সিদ্ধি লাভ করেছে সাধনায়।
গেজেল স্বামীর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এল কমলকলি। মানিকতলায় কে ননদ থাকে তার ওখানে উঠেছে।একদিন ঠিকানা খুজে এল খিদিরপুর পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। অনেকদিন পর পুরানো বন্ধুকে দেখে খুশি হয় জয়ী।দুই বন্ধু বসল সামনা-সামনি।কমল বলে,ফোন করেছিলাম,একটি মেয়ে সব বলল–হেমা না কি নাম–?
–হেনা।ওর বোন।খুব ভাল মেয়েটি।
–কষ্ট হচ্ছে না? চোখ কুচকে জয়ীকে দেখে।
নখ খুটতে খুটতে শুকনো হেসে বলে জয়ী,কিসের কষ্ট?
–এই যে ছেড়ে এলি?
–ধরলামই বা কোথায় তো ছাড়ার কথা আসছে কেন? ছাড় ওসব কথা।কমলের পাশে দাঁড়ানো ছেলেকে দেখে বলে,বেশ মিষ্টি হয়েছে দেখতে তোর ছেলে।এর মধ্যে এত বড় হয়ে গেল!
–এর মধ্যে কিরে গাজিপুরে ঢুকিয়েছে এটাকে।হি-হি-হি! কমদিন হল?
–কেমন আছে ওর বাবা এখন?
–আর বলিস না।বললে শুনবে না গাজা খেয়ে লিভারের বারোটা বাজিয়েছে। আর কেউ এল?
–আর কেউ মানে?
–দ্যাখ জয়ী আমি তোর বন্ধু–কিচ্ছু লুকোবি না।আরে শরীরের ক্ষিধে বলে একটা জিনিস আছে নাকি?
–সামনের মাসে ইউরোপ যাচ্ছি,প্রচণ্ড চাপ।ঐসব নিয়ে ভাবার সময় পাই না।তোর শ্বশুরমশাই কেমন আছেন?
–কুঞ্জ উকিল? বহুৎ সেয়ানা মাল।বলেছিল সম্পত্তি আমাকে লিখে দেবে,এখন আর উচ্চবাচ্য করছে না।কেবল বলে 'দেখছি-দেখবো' বুড়োর আর সময় হয় না।বুঝতে পারছি ঢপ দিয়েছে। শান্তিতে বাথরুম করতে পারি না উকিঝুকি দেয়। সবপুরুষ মানুষই এক কি বুড়ো আর কি ছোড়া–। হি-হি-হি! নিজের বউ ছেলের বউ বাছবিচার করবি না? খগেন আর ওর কাছে আসে না।এখন স্বাধীনভাবে নিজেই কেস করছে।
–খগেন কে?
–তোর কিছু মনে থাকেনা।বলেছিলাম না আমার শেষতম প্রেমিক।আমি সম্পত্তি ভাগের মামলা করবো,খগেন আমার হয়ে লড়বে কথা দিয়েছে।ও বলেছে বুড়োর নাড়ি-নক্ষত্র জানে।
–কিন্তু উনি কুঞ্জবাবুর জুনিয়ার ছিলেন–কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে না?
–তাতে কি আমিও ওকে কম দিয়েছি?
–তুই দিয়েছিস?
কমল একটু থামে তারপর বলে, তোরা বাইরে থেকে আমাকে যতটা কঠিন দেখিস ভিতরে কিন্তু ততটাই নরম।তিস্তার পাড়ে রিসর্টে মাঝে মাঝে দুপুর বেলা কি বলবো তুই আমার বন্ধু তোকে লুকোবার কিছু নেই, এমন কাকতি-মিনতি করছিল তুই যদি তখন ওর মুখটা দেখতিস–মুখের উপর না বলতে পারিনি। মিথ্যে বলবো না ও কিন্তু খুব যত্ন করে করে, কিভাবে সুখ দিতে হয় জানে। তোর তপনের মত জংলি না।
দেবজয়ী কোমলপ্রান বন্ধুকে অবাক হয়ে দেখে।কমলকলি আপন মনে বলে,এরপর ছেলে বড় হয়ে যাবে তার আগেই যতদিন পারি সুখ নিয়ে নিই–হি-হি-হি!
গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে,ছেলেকে বলে,বাবু যাও ঠাম-মার সঙ্গে খেলা করো।ছেলে চলে যেতে ফিসফিস করে বলে,এখনও পেটে একটা ঘুমোচ্ছে।
–এই অবস্থায় তুই দৌড়াদৌড়ি করছিস?
–কি করবো? সব ঝক্কি তো মায়েদেরই পোয়াতে হবে বাপ তো ভরে দিয়ে খালাস।
–সুভাষ জানে?
–আমিই জানিনা এটা কার? কে কখন ভরেছে? একটা কথা বলি জয়ী তুই আবার বিয়ে কর।
–আমি ভালই আছি।নাচই আমার দেবতা বন্ধু স্বামী সন্তান সংসার–সব।
মা চা নিয়ে ঢোকে।কমল উঠে মাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলে,মাসীমা কেমন আছেন?
–আর আমার থাকা।
–ঠাম-মা আরেকটা বিস্কুট দাও।বাবু বলে।
–দিচ্ছি সোনা।মা বলে।
–আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছে তাই না? ভীষণ দুষ্টু হয়েছে–বাবু বিস্কুট খাবি না গাঁজা খাবি? কমল জিজ্ঞেস করে।
–দাও আমাকে এটটা গাজা দাও।বাবু বলে।
–হি-হি-হি! এইতো বাপ কি বেটা! হি-হি-হি!
–আমি দিচ্ছি সোনা।মা বাবুকে কোলে নিয়ে চলে যায়।
–ছিঃ কমল তুই কিরে–একটা নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে—।
–নিষ্পাপ! গর্জে ওঠে কমল।জয়ী কথা শেষ করতে পারে না। বলতে পারিস আমি কি পাপ করেছিলাম?কেন আমাকে এই বেবুশ্যের জীবন বয়ে বেড়াতে হবে?
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না কমল ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে। জয়ী বন্ধুর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,এইতো ভগবানের পরীক্ষা–।
–পরীক্ষায় আমি ডাহা ফেল করে গেছিরে জয়ী–আমি হেরে গেছি–একেবারে গো-হারান হেরেছি রে—।
একটু পরেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে কমল,সিনেমার নায়িকার মত কেমন কাঁদলাম নারে? হি-হি-হি!হাসি থামিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,একটা কথা বলবো জয়ী তুই রাগ করবি নাতো?
–রাগ করবো কেন? কি কথা?
–আমি তোর বন্ধু কিছু মনে করিস না–মাসীমাকে দু-হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। তুই একটা শাড়ি মাসীমাকে–।
জয়ী কি একটা বলতে যায় কমল বলে,প্লিজ জয়ী মাসীমা আমার মায়ের মত এটুকু অন্তত—।
মাথা নীচু করে বসে থাকে দেবজয়ী।জীবন দুর্জ্ঞেয় রহস্য কতটুকু তার আমরা জানতে পারি।
–আজ উঠিরে? ঈশ্বর তোর সাধ পুরণ করুক। দেবজয়ীর নাম ধুপের গন্ধের মত ছড়িয়ে পড়ুক দেশে-বিদেশে এই কামনা করি।উত্তর বাংলার একপ্রান্তে বসে তার এই নগন্য বন্ধুর জীবনের ব্যর্থতায় সেটাই হবে কিছুটা প্রলেপ।
তার বন্ধু কমলকলিকে মনে হয় পারদের মত কখনো খুব তুচ্ছ আবার কখনো খুব উচ্চ।সত্যিই তার শুভাকাঙ্খী।