25-05-2020, 04:57 AM
(This post was last modified: 25-05-2020, 04:59 AM by eklasayan. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সপ্তম পর্ব : আমার জন্য ওর কষ্ট
পরের দিন সকালে ঐশী ঘুম থেকে উঠলো | ওর মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে, কারণ সারারাত ভালো করে ঘুমোতে পারে নি | সৌমিত্রর কথাগুলো এখনও ঐশীর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে |
কিছুক্ষণ পরে ঐশী একটু হাসলো |
ঐশী নিজেকেই বলতে লাগলো - আমার মনে হয় সৌমিত্র কোনো কারণে আমার ওপর রেগে আছে বা কোনো কিছু হবে | কিন্তু সেটা কি হতে পারে ?? ধুর ছাতা, আমার স্মৃতি তো মনে হচ্ছে পুরো হারিয়ে ফেলেছি |
ঐশী সোফার দিকে দেখলো | সৌমিত্র ওখানে নেই |
ঐশী বিছানা থেকে নেমে বাথরুমের দিকে গেল, আর দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করতে লাগলো | স্নান করার শব্দ পাচ্ছে |
ঐশী ওর বুকে হাত রাখলো | তারপর নিজেই নিজের মনে বলতে লাগলো - থ্যাংক গড এখনও এখানেই আছে | আমি তো ভেবেছিলাম কলেজের জন্য বেরিয়ে গিয়েছে | আমার ওকে এই মুহুর্তে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে |
ঐশীর জন্য ভাগ্যক্রমে বাথরুমের দরজা খোলা ছিলো | কিছুটা নার্ভাস বোধ করতে লাগলো | শুধুমাত্র ওই জানে ওর মনের মধ্যে এখন কি চলছে, আর ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে কতটা পরিমানে রয়েছে | কিন্তু কালকের ঘটনার পর সৌমিত্র কি ভাবতে পারে সেটা ভেবে নিজের ভাবনাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিলো |
বাথরুমের সামনে প্রায় পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে রইলো | তারপর কিছুটা সাহস করেই দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো |
ঐশী একদম চুপচাপ কোনো আওয়াজ না করেই ভেতরে ঢুকলো | আমাকে যদি বোকেই থাকে তাতে কি হয়েছে ?? আমি ওর স্ত্রী, ওর জন্য, ওর কাছে যাওয়ার জন্য আমি যে কোনো যায়গায় ঢুকতে পারি | - ঐশী ভাবতে লাগলো আর নিজের মনেই হাসতে লাগলো |
আয়নায় সৌমিত্রর মাসল বডি দেখে ব্লাশ করতে লাগলো | জলের ফোঁটা ওর শরীরের ওপর পড়ায় শরীরটা গ্লো করতে লাগলো |
সৌমিত্র পেছন ফিরে আছে, তাই ঐশীর আসা বুঝতে পারে নি | আর চোখ বন্ধ করে মাথায় শ্যাম্পু করছিলো |
ঐশী ভেতরে ঢুকে একদম ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে হাতের আঙুল গুলো নার্ভাস হয়ে ঘষতে লাগলো | ঐশীও প্রায় অর্ধেক ভিজে গিয়েছে |
ঐশীর চোখ দুটো একদৃষ্টিতে সৌমিত্রর শরীরটা দেখতে লাগলো | ওর হাত দুটো ওকে ছোঁয়ার জন্য উসখুস করছে, ওর পা দুটো ওর আরও কাছে যাওয়ার জন্য অধৈর্য্য হয়ে অপেক্ষা করছে | কিন্তু ঐশী যেখানে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো |
হঠাৎ করেই সৌমিত্র পেছন ফিরলো, আর প্রায় ওর সাথে ধাক্কা খাচ্ছিলো | সাথে সাথেই ঐশী পিছোনোর চেষ্টা করলো কিন্তু স্লিপ করে গেলো | সৌমিত্র সাথে সাথেই ওর কোমরে ধরে ওকে সোজা করে দাঁড় করালো |
সৌমিত্র : তুমি ?? তুমি এখানে কি করছো ??
ঐশী : ওই আমি... মানে.....
ওর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল, যখন বুঝতে পারলো ওর সামনে সৌমিত্র পুরো নির্বস্ত্র দাঁড়িয়ে রয়েছে | ঐশী সাথে সাথেই ওর চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো |
সৌমিত্র : কি হলো ?? আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি ঐশী ?? তুমি এখন বাথরুমে কি করছো ??
ঐশী জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো | একদম পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে | ওর কথা গলাতেই আটকে গিয়েছে | ওর মাথাও ওকে নানা রকম ভাবনা দিতে লাগলো | এই মুহূর্তে ঐশী আর কোনো কিছুই বলতে পারলো না |
সৌমিত্র : তুমি এরকম স্ট্যাচুর মত এইভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?? কথা বলো |
ঐশী ওর হাতের মধ্যে থেকে সরে আসার চেষ্টা করতে লাগলো | কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পেরে ওর চোখের দিকে তাকিয়েই একদম যেন হারিয়ে গেল |
সৌমিত্র ওদের অবস্থা বুঝতে পেরে, সাথে সাথেই ওকে পেছন ফেরালো | সৌমিত্র জানে যে ঐশী কিছুই দেখে নি | এখন সৌমিত্র ঐশীর পেছন দিকে রয়েছে |
সৌমিত্র : তুমি জানো না যখন একজন বাথরুমের ভেতর থাকে তখন বাথরুমের ভেতর ঢুকতে নেই ??
ঐশী রাগে ওর দিকে ঘুরতে যাচ্ছিলো, কিন্তু সৌমিত্র ওর কাঁধটা ধরে রেখেছিলো, যার জন্য ঘুরতে পারলো না |
সৌমিত্র : ( একটু জোর গলায় ) একদম নয়, একদম পেছনে ঘুরবে না |
ঐশী : ( রেগে গিয়ে ) ওই একজন টা হলো হাজব্যান্ড সৌমিত্র | আর তার উপর আমার পুরো অধিকার আছে | আর তার....... ( ঐশী থেমে গেল )
সৌমিত্র : সেটা তখনই যদি আমরা প্রপার হাজব্যান্ড-ওয়াইফ রিলেশন শেয়ার করতাম | যেটা আমরা করিনি |
ঐশী আরও একবার একটা অজানা ব্যাথা অনুভব করলো |
ঐশী : আমরা করিনি ?? কিন্তু কেন সৌমিত্র ?? আমার কি দোষ এতে ??
সৌমিত্র : ঐশী, এটা সেই বিষয়ে আলোচনা করার জায়গা নয় |
ঐশী : না, আমার উত্তর চাই সৌমিত্র |
সৌমিত্র : সবাই যেটা চায় সেটা পায় না, আর এখন খুব ভালো হয় যদি তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও |
ঐশী : ফাইন |
এই বলে ঐশী বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে দিলো |
সৌমিত্র চোখ বন্ধ করে দেওয়ালে ঘুঁষি মারতে লাগলো | আর নিজেকে বলতে লাগলো - প্লিজ ঐশী তুমি আমার থেকে দূরে থাকো | এটা তোমার ভালোর জন্যই | কি করে আমি তোমাকে বোঝাবো ?? আমি যে পুরো অসহায় | আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি, কিন্তু এটা শুধুমাত্র তোমার সাথে যাতে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে পারি তার জন্য |
ভগবান প্লিজ আমাকে শক্তি দাও এটা করতে | আর আমি আশা করছি এটা করতে গিয়ে আমি ওকে বেশি হার্ট করবো না | ওর শরীর ঠিক নেই, ওর এখন যত্নের দরকার | কিন্তু আমি ওকে আমার কাছে আসতে দিতে পারি না | কিন্তু আমি যদি ওর প্রতি নরম থাকি তাহলে আমি শিওর ও আরও বেশি কিছু আমার কাছে চেয়ে বসবে, যেটা আমাদের দুজনের পক্ষেই সমস্যার | এই মুহূর্তে ঐশী আমার রেস্পন্সিবিলিটি, আর আমি আংকেল আর ড্যাড কাউকেই ছোটো হতে দেবো না |
ড্যাডের কথায় মনে পড়েছে, আমাকে ড্যাডের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা ড্যাড কে জানাতে হবে |
সৌমিত্র তাড়াতাড়ি স্নান করে কোমরে তোয়ালেটা জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো |
সৌমিত্র দেখলো ঐশী জানলার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছে | ঐশীকে এতটা আপসেট দেখে সৌমিত্র দাঁড়িয়েই রইলো | পুরো পরিস্থিতি টার জন্য ওর সত্যি খুব খারাপ লাগছে | ঐশী সত্যিই খুব ইনোসেন্ট, ওর মাইন্ড এখন কিছুই কাজ করছে না, ওর হাতে নেই, ওর হার্ট ওকে জোর করছে সবকিছু ভাবার জন্য, যেটা আদপেই কোনো কিছু নয় | যখন একবার বাস্তব টা জানতে পারবে তখন নিজেই নিজেকে দোষারোপ করতে থাকবে, এতদিন থেকে ওকে জানার জন্য, এখনই কল্পনা করতে পারছে তখন পরিস্থিতিটা কেমন হবে |
ওর সাথে কথা বলার জন্য এক পা এগিয়ে গিয়েও আবার পিছিয়ে এলো | সৌমিত্র ওর জামা কাপড় বের করার জন্য ওয়ারড্রবের কাছে গেল, কিন্তু সবকিছু বিছানার উপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আছে দেখে একদম শকড হয়ে গেল |
যখন সৌমিত্র আবার ওয়ারড্রব খুললো, ঐশী ঘুরে তাকালো |
ঐশী ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, কিন্তু সৌমিত্র ওর চোখের দিকে তাকাচ্ছে না | এখন যেটা করছে সেটা ওকে আরও বেশি করে হার্ট করবে, আর সেটা ওর ওই চোখে দেখার জন্য এখন একদম প্রস্তুত নয় | কোথাও না কোথাও সত্যিই ওর জন্য এখন সৌমিত্ররও কষ্ট হচ্ছে |
সৌমিত্র ঐশীর বিছানার ওপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা ড্রেস গুলো উপেক্ষা করে একটা টিশার্ট, আর কাল যে জিন্সটা পরেছিল সেটা বের করলো |
ঐশী কোনো কিছু বললো না | বিছানার কাছে এসে ওই জামাকাপড় গুলো হাতে নিয়ে হেঁটে ওয়ারড্রবের কাছে গেল |
ঐশী ওর সামনে থেকে সৌমিত্রর সরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো |
ঐশী একবার ওর চোখের দিকে তাকালো, আর সৌমিত্র তখনই ওর লাল হয়ে থাকা চোখ গুলো দেখলো | আর সেটা সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে সরে গেল |
ঐশী ওর জামাকাপড় গুলো ওয়ারড্রবের মধ্যে রেখে বন্ধ করে দিলো |
সৌমিত্র ওর রুম থেকে বেরিয়ে আসছিলো, তখনই ঐশীর আওয়াজ পেলো |
ঐশী : দাঁড়াও |
সৌমিত্র দাঁড়িয়ে গেল |
ঐশী ওর কাছে এসে ওর টিশার্ট এর কলারটা পেছন থেকে ধরলো |
সৌমিত্র ওর দিকে ঘুরলো, আর এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে দিলো |
ঐশী পুরো মুখে চোখে প্রচন্ড পরিমান কষ্ট নিয়ে সৌমিত্রর দিকে তাকিয়ে রয়েছে |
সৌমিত্র : তুমি কি করতে চেষ্টা করছো ?? ( সৌমিত্র পুরো রেগে গিয়ে বললো )
ঐশী ওর হাত দুটো বাড়ালো, আর সৌমিত্র নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলো, কিন্তু ঐশী ওর কলারটা ধরে যে প্রাইস ট্যাগটা ঝুলছিলো সেটা টেনে ধরলো | ঐশী জোর করে টানার ফলে ওই ট্যাগের ফাইবারে ঐশীর হাতটা কেটে গেল |
ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সৌমিত্রর এবার সত্যিই খারাপ লাগছে | ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে দেখলো, আর তারপর ওর চোখে মুখে কষ্টটা লক্ষ্য করলো | যতক্ষণ না পেছন ফিরে দূরে চলে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আর কিছু লক্ষ্য করেনি |
সৌমিত্র শুধু ওকে ট্যাগটা টেনে ছিঁড়তে দেখলো, আর ঐশী ট্যাগটা নিচে ফেলে দিতেই দেখলো, ওই ট্যাগের মধ্যে রক্ত লেগে আছে |
সৌমিত্র তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে ওকে নিজের দিকে ফেরালো |
সৌমিত্র : দেখি আমাকে দেখাও |
ঐশী ওর হাতটা ওর হাত থেকে এক ঝটকায় টেনে নিয়ে বললো.......
ঐশী : আমি ঠিক আছি |
সৌমিত্র পুরো রেগে গিয়ে ওর দিকে তাকালো, যেটাতে ঐশী একদম চুপ হয়ে গেল |
সৌমিত্র : কাকা !! কাকা !! তুমি তাড়াতাড়ি ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে এসো |
সৌমিত্র ঐশীকে সাবধানে বিছানার ওপর বসিয়ে খুব ভালো করে ওর রুমাল দিয়ে হাতের রক্তটা মুছে দিলো |
রামু কাকা বক্সটা বিছানার ওপর রেখে দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল |
সৌমিত্র ওর হাতটা ব্যান্ডেজ করতে লাগলো, আর ঐশী তখনও ফোঁপাতে লাগলো |
সৌমিত্র : একটা জিনিস আছে, যেটাকে কাঁচি বলে, কেউ এটাকে হাতে করে টানে না | দেখো তো তুমি কি করলে ?? এর পরের বার থেকে আমি যেন এরকম না দেখি |
ঐশী সৌমিত্রকে একদম অবাক করে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো | কাঁদতে কাঁদতে বললো.........
ঐশী : যখনই ( কাঁদতে কাঁদতে ) আমি ( কাঁদতে কাঁদতে ) তোমার জন্য ( কাঁদতে কাঁদতে ) কিছু করি ( কাঁদতে কাঁদতে ) তুমি.... তুমি আমাকে ( কাঁদতে কাঁদতে ) একটুও ( কাঁদতে কাঁদতে ) উৎসাহিত করো না |
এটা বলার সাথে সাথেই ওর ব্যান্ডেজ করা হাতটা টেনে নিয়ে সোজা নিচে নেমে চলে এলো |
সৌমিত্র : ধুর, কেন যে আমি ওর জ
প্রতি একটু কম খারাপ ব্যবহার করতে পারি না ?? আমি নিশ্চিত আমি অন্তত এইটুকু তো করতেই পারি | কিন্তু এটা ওর বোকামো | নিজেই নিজেকে কেন আঘাত করবে ??
********************************
সৌমিত্র নিচে নেমে এসে দেখলো, ঐশী ডাইনিং টেবিলে ওর জন্য প্লেট সাজাচ্ছে |
সৌমিত্র একবার ভেবে নিলো, ওহ নো, আবার ?? না না কোনো ভাবেই নয় |
ঐশী প্লেটের উপর খাবার টা জাস্ট দিয়েছে, তখনই শুনতে পেল সৌমিত্র রামু কাকাকে বলছে যে ও অলরেডি কলেজের জন্য লেট হয়ে গিয়েছে, কলেজে গিয়ে কিছু খেয়ে নেবে | ঐশী থেমে গিয়ে একবার ওর দিকে তাকালো | সৌমিত্র ওর ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল |
ঐশী চুপচাপ প্লেটে দেওয়া খাবার গুলো আবার নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিয়ে ওদের রুমে চলে গেল |