Thread Rating:
  • 4 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবন যে রকম by লেখক (collected and incomplete)
#11
মনে হল, ভালোবাসা উজাড় করে একদিন নিজেকে নিঃশ্বেস করে দিয়েছিলাম এই বিদিশারই জন্য। দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভাবতাম, আমার জীবনে বিদিশার উদয় হয়তো আর কোনদিন হবে না। ভালোবাসার কাঙালপনা করেও অজান্তেই আমি নিজের বলি দিয়েছি। নিজের খুশিকে বিসর্জন দিয়েছি। যখন এতদিন পরে আমি আবার বাঁচার একটা তাগিদ খুঁজে পাচ্ছি, তখন শুক্লা যেন ওই মিনুর মতই আমার স্বপ্নগুলোকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে চাইছে। কেন সেটা হবে কেন? আমার জীবনে অতীতেই হোক, আর বর্তমানেই হোক, বা আগামীদিনেও হোক। বিদিশা ছাড়া আমার জীবনে কোনদিন কোনো নারী ছিল না, নেই, আর কোনদিন থাকবেও না। আমার জীবনটাই যে এরকম।
শুক্লার সাথে কথা বলে ফোনটা ছেড়ে দেবার পর কেমন থম মেরে গেলো শুভেন্দু। মুখে ওর হাসিটা নেই। চোখের কোনে চিন্তার ভাঁজ। আমাকে শুধু মুখে বললো, স্ট্রেঞ্জ, ভাড়ী অদ্ভূত তো-
আমি বললাম, এত গম্ভীর হয়ে গেলি। কি হয়েছে বলবি তো? শুক্লা কিছু বলেছে তোকে?
শুভেন্দু বললো, দেখ, ‘দেব’ প্রেম আমি জীবনে করিনি। বিয়েও হয়তো করবো না। কিন্তু এই মিয়া যখন কারুর সাথে কথা বলে, বুঝে নিতে তার অসুবিধা হয় না। আমি তো আর অবুঝ বা ছেলেমানুষ নই?
শুভেন্দুকে বললাম, কি হয়েছে বলবি তো?
শুভেন্দু বললো, যে কিনা কলেজে থাকতে থাকতে একটা প্রেম করলো। তাকে বিয়ে না করে, আবার অন্য একজনকে বিয়ে করলো। তার এখনো বাসনা জেগে রয়েছে তোর প্রতি? এটা শুনেও কি তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?
শুভেন্দুর কথাটা শুনে এবার আমিও থম মেরে গেলাম। সকালে শুক্লা আমার বাড়ী এসেছিল, আমাকে ওর বাড়ীতে যেতেও ইনভাইট করে গেছে। কিন্তু তা বলে প্রেম ভালোবাসার কথা এখানে আসবে কেন? শুক্লা তো আমাকে কোনদিন ভালোবাসেনি। আমাকে তো কোনদিন এভাবে কামনা করেনি। আমাকে জয় করার কোনো স্বপ্নই সে দেখায়নি। আমি বিদিশাকে ভালোবেসেছিলাম, তার দিকেই শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ আমাকে বাড়ীতে ডাকার জন্য শুক্লার মনে এত উদ্বেগকূল। এটা কি প্রেম না দেহগত বাসনা?
নিজেকে একটু হাল্কা করার চেষ্টা করলাম। শুভেন্দুকে তাও বললাম, না না শুক্লা এরকম মেয়েই নয়। হয়তো তোর বোঝার ভুল হয়েছে, কিংবা শোনার ভুল।
রনি পাশে বসেছিল চুপ করে। এবার ফোড়ণ কেটে বললো, ‘দেব’ শেষকালে শুক্লাও তোর প্রেমে পড়লো। ব্যাচারা বিদিশার কি হবে রে?
বলেই জিভ কেটে ফেললো রনি। তারপরেই বললো, এই যাঃ। ভুল হয়ে গেছে। হাঁটে হাঁড়ি ফাঁস হয়ে গেছে। যাঃ বলে দিলাম যে।
শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘তুই না বললে, আমি তো বলতামই। এবারে দেবকে তাহলে আসল কথাটা বলি।’
বুঝতেই পারছি, শুভেন্দু এবার সারপ্রাইজের উন্মোচন করছে আমার কাছে। আমাকে বললো, শোন, দেব। শুক্লা তোকে কি বলেছে আমি জানি না। তবে গত পরশুই আমার বিদিশার সাথে দেখা হয়েছে। একটা চেনা মেয়েকে এতদিন বাদে দেখলাম, আমার তো বুঝে নিতে কখনো অসুবিধা হয় না। যে বিদিশাকে আমি দেখেছিলাম, সেই বিদিশা এখন আর নেই।
আমি শুভেন্দুর মুখের দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে, ভাবছি বলবো কিনা। বিদিশা কেমন আছে? আমার কথা কিছু জিজ্ঞাসা করছিল? ও কি আগের মতই ভালোবাসে আমাকে? তাও চুপ করে রইলাম। দেখছিলাম, শুভেন্দু নিজে থেকে কিছু বলে কিনা?
শুভেন্দু আমাকে অবাক করে বললো, শেষ খেলাটা জিততে একটু শক্তি দেখাতে পারবি না? বিদিশার জন্য এটুকু তো তোকে করতেই হবে।
বিদিশাকে পাওয়ার জন্য যদি কোনো শক্তি দেখাতে হয়, নিশ্চই আমি দেখাবো। সেই অদম্য জেদটা নিয়েই তো আজ এখানে এসেছি। তবু বললাম, কি শক্তি দেখাতে হবে বল? বিদিশাকে তো কারুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনার প্রশ্ন নেই। ও তো-
শুভেন্দু বললো, বিদিশা এখন ডিভোর্সী। তাই তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, শুক্লা তো আমাকে সেকথাই বলেছে, ওর স্বামীর সঙ্গে নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ও এখন কলকাতায় এসে রয়েছে। বাবা মায়ের কাছে থাকে। আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, শুক্লা তাই তো বললো ।
শুভেন্দু বললো, তোর জন্য আমার খুব কষ্ট লাগে, জানিস তো দেব। আমি বিদিশাকে বলেছি, কেন শুধু শুধু তুই দেবকে দোষী করলি?মিনুর সাথে দেবকি সেদিন কোনো নোংরামী করতেই গেছিল? নিজের কাছের লোকটাকে বিশ্বাস করতে পারলি না? মিনুর দোষটা তুই দেবের ঘাড়েই চাপালি? এতে কার ভালো হল? তোর না দেবের?
শুভেন্দুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোর সাথে বিদিশার কোথায় দেখা হয়েছিল?
শুভেন্দু বললো, গড়িয়াহাট মোড়ে।
খেয়াল হল, শুক্লাও তাই বলেছে। বিদিশার সঙ্গে শুক্লারও গড়িয়াহাট মোড়েই দেখা হয়েছে।
শুভেন্দু বললো, আমার ধমক খেয়ে ব্যাচারা রাস্তায় হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেদিল। ওকে বললাম, একী এভাবে কাঁদিস না। লোকে আমাকে খারাপ ভাববে। নে, এবার চোখের জল মোছ। আর আমাকে বল, তোর জন্য আমাকে কি করতে হবে?
চোখের পাতা এক করে আমি শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলাম। ওকে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, বিদিশার মুখটা দেখেই বুঝলাম, ও খুব কষ্টে আছে। সেই হাসি নেই মুখে। ঝলমলে রূপটাও যেনো কত ম্লান হয়ে গেছে। কলেজে যখন তোদের দুজনকে পাশাপাশি দেখতাম, কি মধুর আর মনোরম লাগতো। সেই বিদিশার চোখের তলায় কালির দাগের মত ছিটছিটে দাগ। মনে হচ্ছিল, বিদিশাকে কেউ খুব কষ্টে রেখেছে। ওর মুখের দিকে তাকাতেই আমার কেমন যেন লাগছিল। মনে হচ্ছিল মেয়েটা, কোনো অন্যায় অবিচার নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। কোনো নারীকে যদি কোনো পুরুষমানুষ পশুর মত আচরণ করে, তাহলে সেই নারীর নারীত্ম বলে তো কিছু আর থাকে না। ভালোবাসার জিনিষকে যত্ন করে রাখতে হয়। তুই তো বলেছিলিস আমাকে, প্রেম করতে করতে মনে নেই? তবে কেন?
আমি বললাম, বিদিশার এমন অবস্থা কে করেছে? ওর স্বামী?
শুভেন্দু বললো, করেনি শুধু। এখনো করছে। রীতিমতন টর্চার করছে ওর সঙ্গে। ওর স্বামীর কবল থেকে ওকে মুক্ত করে আনতে হবে।
আমার মনে হল, ব্যাপারটা বড়ই অদ্ভূত। সামান্য একটা ঘটনায় বিদিশা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আর ওর স্বামী ওর ওপর এতো অত্যাচার করছে, সেই বিদিশা ওর স্বামীকে ছেড়ে আসতে পারছে না? কেন? কি অসুবিধা রয়েছে?
শুভেন্দুকে বললাম, ডিভোর্স কি তাহলে হয় নি? তাহলে শুক্লা যে বললো-
শুভেন্দু বললো, শুক্লাকে বলতে গিয়েও হয়তো বলতে পারেনি বিদিশা। এই শুক্লাই তো, তোর হয়ে কত করে মিনতি করেছিল বিদিশার কাছে। তুই না জানলেও আমি তো সেটা জানি। নিজের দূঃখ কষ্টের কথা বলতে চায়নি শুক্লার কাছে। মেয়েরা আবার মেয়েদের কষ্টের কথা শুনলে অত দরদী হয় না। যতটা আমাদের মত পুরুষেরা দরদ দেখাতে পারি, মেয়েদের জন্য। তার ওপর শুক্লা যদি তোর ওপর পাগল হয়ে গিয়ে থাকে। তাহলে তো আরোই কোনো লাভ হবে না বললে। আমাকে বিদিশা প্রানখুলে যতটা বলতে পেরেছে, শুক্লাকে সেভাবে হয়তো বলতে পারেনি, মনের দূঃখটা।
প্রায় অথৈ জলে পড়ার মতন আমি বলে উঠলাম, তাহলে কি হবে?
শুভেন্দু বললো, কি হবে তাহলে বল? তুই কিছু কি করতে পারবি?
ভেবে পাচ্ছিলাম না, এমন পরিস্থিতিতে আমার কি করণীয়? শুভেন্দুকে বললাম, তাহলে ওর স্বামী এখন কোথায়?
শুভেন্দু বললো, স্বামী, স্বামীর জায়গাতেই আছে। বিদিশা তো কদিন বাপের বাড়ী থাকবে বলে এখানে এসেছে। কদিন কাটিয়েই আবার ওকে পশুটার কাছে ফেরত চলে যেতে হবে। যাবার আগে, বিদিশার জন্য আমাদের সবাকেই কিছু না কিছু করতে হবে। এখন বল, তুই কি করবি?
মনটা ভীষন বিষন্ন হয়ে গেলো। ভাবছি, সমস্যার সমাধান কি করে করা যায়? তাহলে কি? ওকে-
হঠাৎ দেখলাম, রনি মুখ টিপে টিপে হাসছে। কঠিন একটা পরিস্থিতি। অথচ ওর ওই হাসি দেখে আমার ভীষন গা জ্বালা করছিল।
শুভেন্দু রনিকে গালাগাল দিলো। বললো, এটা হাসার সময়? সিরিয়াস একটা ব্যাপার এসে দাঁড়িয়েছে। আর তুই হাসছিস?
রনি আরও হাসতে লাগলো।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুভেন্দু বললো, বিদিশা কিন্তু একটু পরেই আসছে। তোকে কিন্তু তার আগেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে।
আমি মুখ কাচুমুচু করে বললাম, কি সিদ্ধান্ত নেবো? আগে তো বিদিশাকে আসতে দে। ওর সাথে কথা বলি?
শুভেন্দু বললো, যা যা আমি তোকে বললাম, বিদিশা তোকে তাই ই বলবে। এখন তোর ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।
রনিকে দেখলাম, এরপরে হো হো করে হাসতে শুরু করেছে। মাধুরী সেইসময় ঘরে ঢুকেছে। বুঝতে পারছে না, ওর কর্তার হাসির কারণটা কি?
আমি দেখলাম, শুভেন্দুও এবার মুচকি মুচকি হাসছে। হাসিটা চেপে না রাখতে পেরে এবার একটু বেশী করেই হাসতে শুরু করলো শুভেন্দু। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুভেন্দু বললো, আসলে আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখছিলাম, তুই সত্যি বিদিশাকে আগের মতন ভালোবাসিস কিনা? তোকে একটু পট্টী মারছিলাম। ওসব টর্চার ফর্চার কিছু নয়। বিদিশা ওর স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে এখন এখানেই ওর বাবা মায়ের কাছে রয়েছে। ও দিব্যি আছে। শুধু ভালোবাসার জন্য তোকে শুধু দরকার।
অনেকদিন বাদে মুখ দিয়ে একটা কাঁচা খিস্তী বেরিয়ে গেলো আমার। শুভেন্দুকে বললাম,শালা ঢ্যামনা। এরকম ভাবে কেই ইয়ার্কী মারতে পারে? তুই কি রে শুভেন্দু।
রনি হাসছে, শুভেন্দু হাসছে, মাধুরীও হাসছে। ওদের দেখে আমিও হাসতে লাগলাম। মনে হল, সেই কলেজের আনন্দের দিনগুলোই যেন আবার ফিরে এসেছে নতুন করে।
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যাওয়াটা বিরাট একটা ভাগ্যের ব্যাপার, জানিস তো দেব। একে তো আমার ফোন নম্বর বিদিশার কাছে নেই। কলকাতায় এতদিন বাদে ও ফিরে এসেছে, পুরোনো এক কলেজ বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎই গড়িয়াহাট মোড়ে তার দেখা হয়ে যাবে, না বিদিশা ভেবেছিলো, না আমি ভেবেছিলাম।
আমি শুভেন্দুকে বললাম, বিদিশা, তোকে দেখতে পেয়েছিল? না তুই বিদিশাকে?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশা যখন তোর সাথে প্রেম করতো, তখনো আমি তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম। আর এখনো তোর সাথে আমার সেই সম্পর্কটাই রয়েছে।। আমাকে বিদিশা দেখে স্বভাবতই খুব খুশি। জানে শুভেন্দুর সাথে দেখা হওয়া মানে দেবের খবর শুভেন্দুই তাকে দিতে পারবে। একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আমি তখন কিছু জিনিষ কিনছি, হঠাৎই শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, গলাটা খুব চেনা চেনা। মনে হল এ ডাক বিদিশার না হয়ে অন্যকারুর হতেই পারে না।’
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম শুভেন্দুর কথা। ওকে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, ‘তারপর আর কি? শুরুটা করলো এইভাবে। প্রথমেই আমাকে বললো, ‘কতদিন বাদে তোকে দেখলাম রে শুভেন্দু। আমাকে দেখে চিন্তে পারছিস?
‘আমি তো ওকে দেখে একেবারেই অবাক। ভাবতেই পারিনি বিদিশাকে এতদিন বাদে দেখবো। আমার কাছে এগিয়ে এলো বিদিশা। আমাকে বললো, এই ‘দেব’ কেমন আছে জানিস? আগে যে বাড়ীটায় ওরা থাকতো, দেব কি ওখানেই এখন থাকে? না অন্য কোথাও?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার মুখে তোর নামটা শুনে আমি কেমন প্রফুল্ল মতন হয়ে গেলাম। আহা, সেই যে কত মিষ্টি মিষ্টি করে কলেজে তোকে নাম ধরে ডাকতো, একেবারে সেইরকম।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশাকে দেখে আমি সত্যি অবাক। এতবছর পরে ওর সঙ্গে দেখা, কিন্তু এখনও ওর সৌন্দর্যে একটুকুও ভাটা পড়েনি, বিদিশার যে রূপ, সেই রূপ তার অক্ষত। কি সুন্দর লাগছিল ওকে দেখতে। আমি তো কোন ছার, যে কেউ প্রেমে পড়বে ওর ওই মিষ্টি হাসিটা দেখলে। মনে হল, আমি কি ঠিক শুনছি? এতদিন বাদে ও তোর কথা জিজ্ঞাসা করছে, তোর খোঁজ খবর নিচ্ছে, বিদিশার কি লাভ এসব জেনে? তারপরেই মনে হল, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যাকে ভুলেও কেউ ভুলতে পারবে না সহজে। বিদিশা প্রথমেই আমাকে বলো, এই দেবের ফোন নম্বরটা আমাকে দিবি? ভীষন দরকার।’
শুভেন্দু বললো, ‘আমি তো আরোই অবাক ও তোর ফোন নম্বর চাইছে দেখে। বিদিশাকে বললাম, কি হবে তোর দেবের ফোন নম্বর নিয়ে? তুই তো কবেই ওকে ছেড়ে চলে গেছিস। ব্যাচারাকে ফোন করবি, আর ও আবার তোর কথা ভেবে পাগল হবে।’
মনে হল, শুভেন্দুকে বলি, ‘চাইলো যখন, তুই বিদিশাকে আমার ফোন নম্বরটা দিতে পারতিস। বিরহের জ্বালায় এতদিন মরছিলাম। ফোনটা পেলে মনে একটা শান্তি আসতো।’
শুভেন্দু নিজে থেকেই বললো, আমি জানি, বিদিশাকে তোর ফোন নম্বর না দিলে তুই আবার আমার ওপরে রেগে হম্বিতম্বি করবি। এতদিন ধরে তোকে দেখে আসছি, তোর দূঃখ কষ্টটা বোঝার মতন ক্ষমতা তো আমার হয়েছে, আমি এই ভুলটা কিছুতেই করবো না। ওকে তোর ফোন নম্বরটা দিলাম। আশ্চর্য, বিদিশা তখুনি তোকে ফোন করতে চাইছিল।
আমি শুভেন্দুকে বললাম, তাই? কই এই কথাটাতো তো তুই আমাকে আগে বলিসনি। তাহলে তো আমি আগে থেকেই সব জেনে যেতে পারতাম।
শুভেন্দু বললো, ‘এটার জন্য অবশ্য তুই আমাকে গালাগাল দিতেই পারিস। কারণ আমিই বিদিশাকে তখন বারণ করেছিলাম।’
মনে হল, শুভেন্দুকে কাঁচা গিলে খাই, ওকে বললাম, কেন? তুই ওকে বারণ করলি কেন?
শুভেন্দু বললো, ‘সব কথা বিদিশার মুখ থেকে শোনার পর, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, তোর জন্য এটা তাহলে একটা সারপ্রাইজ থাক। বিদিশা তোর কাছে আসবে, কিন্তু একটা চমক হয়ে আসবে। তুই যেন আগে থেকে কিছু জানিস না। আমি ওকে সেইভাবেই রাজী করালাম।
বিদিশাকে বললাম, ‘তোর কথা দেবকে আমি আগে থেকে কিছু জানাবো না। তুইও এখন ফোন করিস না। তুই যে ফিরে এসেছিস, এটা দেব তোকে নিজের চোখেই দেখুক।’
আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভেন্দু বললো, ‘আচ্ছা দেব, বিদিশা যদি তোর বাড়ী নিজে থেকে চলে যেতো, তোর কেমন লাগতো? হঠাৎই কলিংবেলের শব্দ শুনে তুই ই দরজাটা খুললি। দেখলি বিদিশা দাঁড়িয়ে আছে তোর সামনে। সেই হারিয়ে যাওয়া মুখ, মনকাড়া চাউনি, সেই আকূলতা। দেবকে পাওয়ার জন্য যার এত ছটফটানি। এতদিন বাদে একেবারে তোর বাড়ীর দোরগোড়ায়। তোর মনে হত না এ আমি কি দেখছি সামনে?’
শুভেন্দু এমন ভাবে কথাটা বললো, আমার মনে হল বিদিশা যেন সত্যি আসতে চেয়েছিল আমার বাড়ীতে। শুভেন্দুকে বললাম, তুই ওকে না করলি কেন?
শুভেন্দু বললো, ‘আমি না করিনি। না করবোই বা কেন? যে মেয়েটার মধ্যে একটা অনুশোচনা রয়েছে। একদিন তোকে ভুল বুঝে সে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, আবার সে ফিরে এসেছে। তোর সাথে দেখা করতে চাইছে। মনের মধ্যে একটু লজ্জ্বাও রয়েছে। কিন্তু তবু যেন তোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে তারমনে কোনো দ্বিধাবোধ নেই। এতবছর পরে বিদিশার মধ্যে যেন সেই কলেজে পড়ুয়া বিদিশাকেই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম। আমাকে নির্দ্ধিদায় ও বললো, আমি দেবের বাড়ীতে যেতে চাই, শুভেন্দু। ওর সাথে দেখা করতে চাই। তুই কি আমার মনে একটু সাহস জোগাবি শুভেন্দু? দেব আমাকে দেখলে রেগে যাবে না?’
শুভেন্দু বললো, আমি বিদিশাকে বললাম, ‘এক কাজ কর, তুই বরং আমার বাড়ীতেই চলে আয়। আমি ওখানেই দেবকে ডেকে নিচ্ছি। একসাথে সবাই মিলে আড্ডা দেবো। আবার মজা হবে, সেই কলেজের মতন। রনি আর মাধুরীকেও আসতে বলছি।’
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলাম। মাধুরী একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমাকে বললো, ‘সত্যি দেবদা। এখনো তুমি বিদিশাকে কত ভালোবাসো। তোমার মত কজনে হয়?’
রনি বললো, ‘দেব হচ্ছে, সত্যিকারের প্রেমিক। ও ব্যর্থ প্রেমিক নয়। বিদিশার কপাল ভালো, দেব ব্যাচারা বিয়ে করেনি। নইলে-‘
শুভেন্দু বললো, ‘দেব হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যতক্ষণ নিজে থেকে কেউ ভুলটা না বুঝতে পারছে, ও জোর করে কারুর ভুল ধরাতে যাবে না। এই বিদিশাকেই দেখ, যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।’
আমি বললাম, ছাড় ছাড়। আমার সন্মন্ধে আর অত ভালো কথা বলতে হবে না। বিদিশা কখন আসছে, তাই বল।
শুভেন্দু হেসে বললো, ‘দেখেছিস তো, বিদিশার কথা শুনে এবার তোর কেমন ছটফটানিটা শুরু হয়ে গেছে। আসছে আসছে অত ব্যাকূল হোস না। একটু পরেই এসে পড়বে। বিদিশাকে আমি ফোন করেছিলাম একটু আগে, ও ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে। হয়তো এসে পড়বে আর দশ মিনিটের মধ্যেই।’
মাধুরী বললো, ‘এক কাজ করলে হয় না? বিদিশা আসার আগে, আমরা বরং দেবদাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখি। ও এসে দেবদাকে খুঁজে পাবে না। আর দেবদার মত বিদিশাও একটু ছটফট করবে। মজা হবে একটু।’
শুভেন্দু বললো, ‘আইডিয়াটা মন্দ নয়। তবে দেব কি তাতে রাজী হবে? দেখ ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখ। এখনই কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেল। ব্যাচারা বিদিশাকে না দেখতে পেলে, নিজেই যে কষ্ট পাবে।’
ওরা সবাই হাসতে লাগল। শুভেন্দুকে রনি বললো, ‘আজ হচ্ছে ঐতিহাসিক দিন। দুটি প্রেমিক প্রেমিকা এতদিন পরে আবার কাছাকাছি হচ্ছে দুজনে। এই ঐতিহাসিক দিনে আমরাও আজ উপস্থিত। দেব আর বিদিশার পুনর্মিলন কি জয় হোক।’
মাধুরী বললো, ‘হ্যাঁ দেবদা। এবারে কিন্তু বড়সড় একটা পার্টী দিতে হবে তোমাকে। পার্কস্ট্রীট বা বড় কোনো রেস্টুরেন্টে দেওয়া চাই। অনেক নোট খসবে তোমার। তৈরী থেকো।’
মনে হল, দম নিঃশ্বেস হওয়া ঘড়িকে যেমন দম দিয়ে আবার শক্তির যোগান দেওয়া হয়। ঠিক তেমনি বিদিশার আগমনের খবরটাও আমার ভেতরের শক্তিটাকে যেন অনেক বর্দ্ধিত করে দিয়েছে। ঠিক যেন জীবনের মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মতন। সেই উদ্দামতা, সেই আবেগ আবার ফিরে পাচ্ছি। বিদিশা এখনো এসে পৌঁছোয়নি, কিন্তু ওর উপস্থিতি, ওর আবির্ভাব, শরীরে শরীরের স্পর্ষ আমি যেন আগে থেকেই টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, বিদিশা যেন আমার ঠিক পাশেই বসে রয়েছে, আর আমাকে বলছে, ‘কি গো তাকাবে না আমার দিকে? রাগ করেছো বুঝি। দেখো আমি তো তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি।’
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম by an unknown writer (collected and incomplete) - by Buro_Modon - 22-05-2020, 10:06 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)