Thread Rating:
  • 4 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবন যে রকম by লেখক (collected and incomplete)
#8
শুক্লার কথা শুনে মনে হল, এখনো চরম একটা আফশোস রয়েছে সৌগতর জন্য। সবাই যেন ভুলের খেসারত দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর এটাই দিয়ে যেতে হবে আজীবন ধরে।
শুক্লা বললো,ছাড়াছাড়ি মানে তো কয়েকটা সম্পর্কের কাটান ছাড়ান। এই যেমন তোর জীবনটাকে নিয়েও কাটাছেড়া করল মিনু আর বিদিশা। আমারো তাই। ওই অবাঙ্গালী মেয়েটাই আমার বিশ্বাসটাকে সেদিন ভেঙে দিলো।
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই এখনো দূঃখ পাস?’
শুক্লা বললো, ‘দূঃখ তো আমারই পাবার কথা। ভুলতো আমিই করেছি। সৌগত নয়। যে ভুল করে তারই তো দূঃখ পাওয়া উচিত। অথচ ভগবান বোধহয় তোর বেলায় উল্টোটাই করেছে।’
হেসে বললাম, ‘কেন? একথা বলছিস কেন?’
শুক্লা বললো, ‘ভুল করলো বিদিশা, আর তুই যেমন ওর জন্য শুধু শুধু দূঃখ করে মরলি। কার ভুল কে করলো? আর এখন দেখ, ও কেমন আফসোস করছে তোর প্রতি। এই ভুলের কি কোনো ক্ষমা হয়?
পৃথিবীতে বিদিশাই একমাত্র মেয়ে। যাকে কোনোদিন আমি ক্ষমা করতে পারবো না। এ কখনো হয় না। বিদিশার মনটা ফুলের মত নরম। যে ফুল অল্প আঘাতও সহ্য করতে পারে না। সেদিন হয়তো, অল্প আঘাতেই ওর মনটা ভেঙে গিয়েছিল। বিদিশা আমাকে ভুল বুঝেছিল, তাই বলে কি ওকে আমি ক্ষমা করতে পারি না? নিশ্চই পারি।
শুক্লা হঠাৎই আমার হাতের ওপর হাতটা রেখে বললো, ‘আচ্ছা ‘দেব’, আমি যদি তোকে বলি, তোকে আমি ভালোবাসি। তুই কি প্রমান চাস?
আমি বললাম, ‘আমি যদি কোনো অন্যায় কাজ করি আর এসে তোকে বলি ক্ষমা করে দে। তুই করবি।’
শুক্লা বললো, ‘আমি সেটাকে অন্যায় বলেই ভাববোই না। কারণ তোর প্রতি আমার সেরকমই বিশ্বাস আছে। বিদিশা তাহলে কেন এটা করলো না?’
শুক্লার কথাগুলো আমার কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না, ও কেন চাইছে না। কেন বলছে, বিদিশার সাথে আমার দেখা না করাই ভালো।
কিছু একটা বলতে গিয়েও শুক্লা আবার থেমে গেল। আমাকে বললো, ছাড় এসব পুরোনো কথা। তুই আসবি কিনা বল?
নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ও বাবা। কটা বাজে খেয়াল করেছিস? আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে, তোর এখানে এমনিতেই আমি লেট। এরপরে আরো বসলে আরো লেট হবে। এবার আমি উঠবো। বল না যাবি কিনা?
শুক্লাকে বললাম, তোর অফিস মানে তো ব্যাঙ্ক। কোন ব্যাঙ্কে আছিস যেন?
শুক্লা বললো, ‘পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্কে আছি। ওই চাকরিটাই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখান থেকে সোজা বালীগঞ্জ যাবো। ব্যাঙ্কে সারাদিন ডিউটি দেবো। তারপর খাটাখাটনি করে বাড়ীতে একটু বিশ্রাম।’
শুক্লাকে বললাম, ‘মেসোমশাই, মাসীমা কেমন আছেন? মানে তোর বাবা মা?’
শুক্লা বললো, ‘বাবা তো মারা গেছেই সেই কয়েক বছর আগে। মা হালে মারা গেলেন। ক্যানসার হয়েছিল।’
অবাক হয়ে শুক্লাকে বললাম, তুই তাহলে একা?
শুক্লা বললো হ্যাঁ একা। বড় নিসঙ্গ আমি।
শুক্লা এরপরে উঠি উঠি করছে। মা ঘরে এলো। শুক্লাকে বললো, চলে যাচ্ছো?
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ মাসিমা। পরে একদিন আসবো। এই আপনার ছেলেকে বলে গেলাম, আমার ফ্ল্যাটে যেতে। বাবু এখন যাবে কিনা আমাকে কথা দিতে পারছেন না। ‘
মা বললো, ‘তা যাবে খন। অসুবিধের কি আছে?’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। শুভেন্দুর কথাটা একটু আগে মাকে বলেছি। মা বোধহয় ভুলেই গেছে। শুক্লা আমাকে বললো, ‘এই বদমাইশটা। তোর ফোন নম্বরটা আমাকে দে তো। কথা বলতে বলতে আসল কাজটাই ভুলে গেছি।’
আমি শুক্লাকে আমার সেলফোন নম্বরটা দিলাম। শুক্লা সেভ করলো। আমাকে বললো, ‘তুই তাহলে আমাকে কনফার্ম করিস। এখন তো কিছু আমাকে বললি না।’
শুক্লাকে বললাম, ‘দেখছি, আমি শুভেন্দুকে ফোন করে। তোকে বিকেলে আমি ফোন করবো। বলেছিস যখন নিশ্চই যাবো। শুধু আমাকে শুভেন্দুর সাথে একটু কথা বলতে দে।’
আমাকে শুক্লা বললো, ‘তোকে নিচে যেতে হবে না কষ্ট করে। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।’
বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে ওর দিকে হাত নাড়লাম। শুক্লাও হাত নাড়লো। তারপর ওর শরীরটা আসতে আসতে গলির মুখটা থেকে মিলিয়ে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমাকে শুক্লা বিদিশার কাছে যেতে মানা করলো। আবার ওর ফ্ল্যাটেও যেতে বলে গেল। কিন্তু কেন বলে গেল? মনে কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে গেল।
কথায় বলে প্রেম ভালোবাসা থেকে নাকি একধরণের শক্তির জন্ম নেয়। জীবনের বাঁচার রসদ খুঁজে পাওয়া যায়। অদ্ভূত এক হতাশায় জীবনটা কেটে গিয়েছিল বেশ কয়েকটা বছর। ভাবলাম, বিদিশার ফিরে আসাটা কি কোনো কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে? আমি যেন একটা অবলম্বনের পথ খোঁজারই চেষ্টা করছিলাম। অথচ শুক্লাই এসে আমাকে কেমন দ্বিধায় ফেলে দিল। মন থেকে শুক্লার না চাওয়াটা একটু অবাকই করলো আমাকে। এতদিন পরে চিঠিটাও খুঁজে খুঁজে ঠিক নিয়ে এসেছে আমার কাছে। ও কি বলতে চাইলো ঠিক স্পষ্ট হল না।
মনে পড়ছিল, কলেজে যেকটা দিন আমাদের কেটেছে, শুক্লাকে কোনদিন বিদিশার প্রতি এত বিদ্বেশ করতে দেখিনি। ও কোনদিন বিদিশাকে দেখে হিংসেও করতো না। আমি বিদিশার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছি। শুক্লাকে কোনদিন অখুশি হতে দেখিনি। যখন প্রেমটা আমাদের ক্রমেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখনো শুক্লা স্বাভাবিক। কোনদিন প্রেম ভালোবাসার কথা ও আমাকে বলেনি। আর শুক্লাকেও সেচোখে আমি কোনদিন দেখিনি।
শুক্লা বলতো, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যার সাথে যে মেয়ে প্রেম করবে, সেই ধন্য হয়ে যাবে। আমি করিনি তো কি আছে। দেব আমার খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু বিদিশা করেছে। সেই দিক দিয়ে বিদিশাকে আমি খুব লাকি বলেই মনে করবো। সুন্দরী হলেই শুধু হয় না। ভালো ছেলেদের মন পাওয়ার জন্যও মেয়েদের অনেক তপস্যা করতে হয়। বিদিশা করেছে, তাই ও দেবকে পেয়েছে। আমি চাই দেব আর বিদিশা জীবনে আরো সুখী হোক। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে ওরা একে অপরকে পাওয়ার আনন্দটা আরো উপভোগ করুক।
নিজেও যখন সৌগতর সঙ্গে প্রেম করা শুরু করলো, তখন আমাকে বললো, ‘তুই ই আমাকে পথ দেখালি দেব। তোকে দেখেই শিখলাম পৃথিবীতে প্রেম জিনিষটা কত সুন্দর। মধুর প্রেমের সত্যিই কোনো বিকল্প হয় না।’
সৌগত আর শুক্লা আমাকে আর বিদিশাকে খুব নকল করতো। বিদিশা আমাকে ভ্যালেনটাইন্স ডে তে কার্ড দিচ্ছে, সাথে ডায়েরী আর পেন। আর সুন্দর কারুকার্য করা একটা রুমাল। শুক্লা তাই দেখে বললো, ‘আমিও সৌগতকে তাহলে এগুলো দিই? শুধু কার্ড কেন দেবো? সাথে ডায়েরী, পেন আর রুমালটাও তো দেওয়া দরকার।’
কলেজস্ট্রীটে গিয়ে সব কিনে নিয়ে এসেছে। আমাকে এনে দেখাচ্ছে, আর বলছে, ‘দেখ, বিদিশার মত কিনেছি সব। ভালো হয়েছে?’
প্রথম প্রথম আমি আর বিদিশা মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতাম। বেশ কয়েকটা নতুন সিনেমাও দেখে ফেলেছি দুজনে। শুক্লা আবদার করে বসলো, ‘এবার থেকে তোরা একা যাবি না। গেলে আমরা চারজনে মিলে যাবো।’
মাঝে মাঝে শুভেন্দুও এসে জুড়ে বসতো আমাদের সাথে। আমাকে আর শুক্লাকে বলতো, ‘এই শোন, তোদের দুজনের এই যে প্রেমটা হচ্ছে না। এসবই আমার বদলৌতে। সেদিন যদি বিদিশাকে আমি চিঠিটা না দিতাম না, তাহলে দেব কোথায় আর বিদিশা কোথায়? আর শোনো, পারুল রানী, তুমি তোমার প্রেমিকের যা অবস্থা করেছিলে, দেবদাস হতে হতে বেঁচে গেছে ব্যাচারা সৌগত। ভাগ্যিস তোর মনটা ঘোরাতে পেরেছিলাম সেদিন। নইলে?
শুভেন্দুর আমাদের সাথে ভিক্টোরিয়াতে গিয়ে যে কি অবস্থা হয়েছিল, সেকথা তো আগেই বলেছি। ও কখনো বোর ফিল করত না। আমরা চারজনে আপন মনে যখন নিজেদের মধ্যে ভাব, ভালোবাসার কথা বলছি, শুভেন্দু তখন আপনমনে বাদাম চিবোতো। আর মুখে বলতো, ‘তোরা প্রেম কর। আমার ভাই বাদামই ঠিক আছে।’
শুক্লা চলে যাবার পরে শুভেন্দুর সেই বিদিশাকে দেওয়া চিঠিটা হাতে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে দেখছিলাম, আর পুরোনো কথাগুলো আবার মনে পড়ে যাচ্ছিল।
মা, ঘরে ঢুকে বললো, ‘তোর মনে হচ্ছে কাজে বেরোনোর আজ বারোটা বেজে গেল। কোনো তাড়া নেই, সেই সকাল থেকে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লি। তারপরে এখন আবার বসে বসে কি ভাবতে শুরু করেছিস?’
আমি বিদিশার কথাই ভাবছিলাম, মাকে সেভাবে বলতে পারলাম না। শুধু বললাম, ‘মা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে খুব দোটনায় থাকতে হচ্ছে। ভাবছি, কি সিদ্ধান্ত নেবো?’
মা বললো, ‘কি সিদ্ধান্ত?’
– ‘সেটা তোমাকে এখনি বলা যাবে না। আমি পরে বলবো।’
মা বললো, ‘তুই তো সব কথা আমাকে সেভাবে বলিস না। নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখিস। যদি মনে করিস বলবি না। তাহলে বলিস না। আমি আর কি বলবো?’
মাকে বললাম, ‘তোমাকে আজ অবধি কোনোকিছু কি আমি লুকিয়েছি? তুমি তো সবই আমার পুরোনো কথাগুলো জানো। আমার অতীতে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, সেগুলোই মাঝে মাঝে বসে আমি ভাবি। কলেজের দিনগুলোর কথা এতদিন বাদে মনে পড়ে যাচ্ছিল। তাই সকালে লিখছিলাম। তারপরে শুক্লাও এলো। এতদিন বাদে আমার বাড়ীতে প্রথম এসেছে, ওর সাথে কথা বলে ভালো লাগল। পুরোনো স্মৃতিগুলো মনকে নাড়া দিচ্ছে এই আর কি।
মা বললো, ‘শুক্লা তোকে কিছু বলেছে?’
অবাক হলাম। বললাম, ‘না কই কিছু বলেনি তো। কি বলবে?’
মা বললো, ‘আমি শুনেছি আড়াল থেকে। ও বিদিশার কথা বলছিল। বিদিশা নাকি ফিরে এসেছে কলকাতায়। ওর স্বামীকে ছেড়ে।’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, মাও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দেখছে জবাবে আমি কি বলি?
মাকে বললাম, ‘কেন তুমি শুনে খুশি হও নি? বিদিশা ফিরে এসেছে।’
একটা চাপা দূঃখ। ঠিক আমারই মতন। মাকে বরাবরই দেখে এসেছি, আমার জন্য আফশোস করতে। মা আমার এমনই। যখন আমি দূখী তো মা দূখী। আবার আমি সুখি তো মাও সুখী। যেভাবে ছেলের মুখে হাসি ফুটলে মায়েরও মুখে হাসি ফোটে, ঠিক সেভাবেই মা, আমাকে বললো, আমি তোর মুখে হাসিটা দেখে ফেলেছি। এতদিন বাদে তুই খুশী হয়েছিস। আমি কি খুশী না হয়ে থাকতে পারি?
আমি মাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, ‘খুশি হয়েছি মা, খুব খুশি হয়েছি। বিদিশা ফিরে এসেছে, আমার থেকে বড় খুশী বোধহয় পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
শুক্লার কথাটা মন থেকে মুছে ফেললাম। মনে মনে বললাম, যে মেয়েটিকে আমি এত ভালোবাসতাম, যার কথা আমি সবসময় ধ্যান করতাম, তাকে যদি এতদিন বাদে আবার দেখতে পাই, চোখ তো ফেরাতে পারবো না। বিদিশা যদি আমার খোঁজ করে, আমি নিশ্চই ওর কাছে যাবো।
মনে মনে বললাম, ভাগ্যিস, এই গল্পটার নাম, একটি ভালোবাসার মৃত্যু দিইনি। তাহলে বিদিশার ফিরে আসাটা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়তো।
বিকেল হতেই শুভেন্দুর বাড়ী যাব বলে তৈরী হয়ে নিলাম। অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি, ‘আজ আর অফিসে যাচ্ছি না। কিছু কাজ পড়ে গেছে। সুতরাং কালকে আবার আসছি যথারীতি।’
শুভেন্দু বলেছে, সাতটার মধ্যে ওর ওখানে যেতে। আমি যখন বাড়ী থেকে বেরোলাম, তখন ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা বেজে দশ মিনিট। বাড়ী থেকে বেরিয়ে হন হন করে হাঁটতে হাঁটতে, বড় রাস্তার মোড় অবধি গেলাম। মনে হল, এই যাঃ। কিছু একটা আমি ফেলে এসেছি। খেয়াল হল, বিদিশাকে দেওয়া শুভেন্দুর ওই চিঠিটা বাড়ীতে ফেলে এসেছি। শুক্লা যেটা বাড়ী বয়ে এসে আমাকে দিয়ে গেল। শুভেন্দুকে দেখালে বেশ ভালো হত। বিদিশার কথা আমিও শুভেন্দুকে আগে থেকে বলতে পারতাম।
চিঠিটা তাড়াহূড়োতে আর পকেটে ঢোকানো হয় নি। খেয়াল হলো বসার ঘরের টেবিলের ওপরেই রেখে এসেছি। মা’র চোখে পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু ঐ চিরকূট দেখে মা আর কিছুই বুঝবে না। ওতে হিজিবিজি ছাড়া আর কিছু নেই।
কাঁকুড়গাছি মোড় থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম। ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, পিকনিক গার্ডেন যাবো। ট্যাক্সিওয়ালা বললো, বাইপাস ধরবো? আমি বললাম, যেদিক দিয়ে খুশি চলুন। আমার পিকনিক গার্ডেন পৌঁছোলেই হল।
ট্যাক্সিওয়ালা ফুলবাগান পেরিয়ে বাইপাশই ধরলো। বুঝলাম রুবী হসপিটাল থেকে তারমানে ডানদিকে টার্ণ নিতে হবে। আমি তাহলে ঠিক ছটার আগেই শুভেন্দুদের বাড়ীতে পৌঁছে যাবো।
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে ভাবছি, শুভেন্দুতো বলেছে সারপ্রাইজের কথা। রনিও ওখানে থাকবে। তারমানে রনিও ব্যাপারটা জানে। অথচ শুক্লা বললো, শুভেন্দুর সাথে এ ব্যাপারে নাকি কোনো কথা হয় নি। বিদিশাকে শুক্লাই দেখেছে, কাল গড়িয়াহাটের মোড়ে। শুভেন্দু যে সারপ্রাইজের কথা বলছে, এটা তাহলে কোন সারপ্রাইজ?
কিছুতেই মাথায় কিছু এলো না। কত চিন্তা করলাম। ভাবলাম, বিদিশাকে কি তাহলে শুভেন্দুও দেখেছে শুক্লার মত? কিন্তু আমাকে ও বললো না কেন? অন্তত বিদিশার ব্যাপার হলে শুভেন্দু আমাকে লুকোবে না। এই কবছরে অনেক যন্ত্রণায় মরেছি। অনেক কষ্ট পেয়েছি। শুভেন্দু প্রথম প্রথম সান্তনা দিয়েছে আমাকে। পরে বলেছে, ছেড়ে দে বিদিশাকে। মনে কর, বিদিশা বলে তোর জীবনে কেউ কোনদিন ছিল না। আবার নতুন করে জীবনটাকে শুরু কর। সেই বিদিশাই যখন ফিরে এলো। শুভেন্দুর তো বলা উচিৎ ছিল।
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে শুভেন্দুকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলাম। এক চান্সেই ওকে পেয়ে গেলাম। শুভেন্দুকে বললাম, ‘আমি কিন্তু তোর ওখানে যাবো বলে রওনা দিয়ে দিয়েছি। ঠিক ছটার মধ্যেই আসছি।’
শুভেন্দু হাসলো। বললো, ‘রনি থাকবে বাড়ীতে। আমি সাড়ে ছটার মধ্যে কাজ সেরে ঢুকবো। আর যে সারপ্রাইজটার কথা তোকে বলেছি, তার জন্য আরো আধঘন্টা তোকে অপেক্ষা করতে হবে।’
মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। ওকে বললাম, ‘হেঁয়ালিটা রাখ না। কি সারপ্রাইজ দিবি, সেটা আগে থেকে বল না?’
শুভেন্দু বললো, ‘সারপ্রাইজ ইজ অলওয়েজ সারপ্রাইজ। আগে থেকে বললে, ওটা আর সারপ্রাইজ থাকে না। তুমি এসো। ধীরে ধীরে সব রহস্য উন্মোচন হবে। একটু অপেক্ষা কর বৎস।’
শুক্লার সকালে আমার বাড়ীতে আসার ব্যাপারটা চেপে গিয়েই ওকে বললাম, ‘তুই কিন্তু যে সারপ্রাইজের কথা আমাকে বলছিস। ওটা আমি আগে থেকেই জানি। আমার জানা হয়ে গেছে, আজ সকালে।’
শুভেন্দু বললো, কি জেনেছিস? আমাকে বল দেখি।
আমি বললাম, না থাক। বলবো না।
শুভেন্দু বললো, ‘বলবি না যখন তুইও চেপে থাক। দেখা যাক তোর জানার সাথে আমার সারপ্রাইজ মেলে কিনা’।
ফোনটা রাখতে রাখতেই আবার বললো, ‘তোর মুখে আমি অনেকদিন হাসি দেখিনি। আজ তোর মুখে আমি হাসি ফোটাবো।’
আমি বুঝে গেলাম, তারমানে বিদিশার কথাই শুভেন্দু আমাকে বলতে চাইছে।
ট্যাক্সির কাঁচ দিয়ে কতগুলো ছেলে মেয়েকে হাত ধরাধরি করে ঘুরতে ফিরতে দেখছি। আর ভাবছি বয়সটা আমার দশবছর কমে গেছে। কি জানি হয়তো বিদিশারই জন্য।
রনির কথা ভেবে, রনিকেও একটা ফোন লাগালাম। রনি বললো, ‘কিরে দেব? তুই আসছিস তো?’
একটু আগেই শুভেন্দুর সাথে ফোনে কথা হয়েছে রনিকে সেটা বললাম। রনি বললো, ‘তোর জন্য আমি আর শুভেন্দু একটা পাত্রী ঠিক করেছি। তুই এলে, সেই মেয়েটিকে তোকে দেখাবো। শুভেন্দু যে সারপ্রাইজটার কথা বলেছে, ওটা সেই সারপ্রাইজ।’
আমি বললাম, ‘পাত্রীটি কে?’
রনি বললো, ‘ধরে নাও খুব সুন্দরী। তবে এখন একটু বয়স হয়েছে। তবে সৌন্দর্য তার কমে নি। তোমার সাথে ভালো মানিয়েও যাবে, কোনো চিন্তা নেই। এবার একটু ধৈর্য নিয়ে তুমিও এসো। আর হ্যাঁ আজকে কিন্তু খুব সহজে তোমায় ছাড়ছি না। অনেক গান শোনাতে হবে, সেই রাত অবধি। যিনি আসবেন, তিনিও তোমার গান শুনবেন।’
তারপর আবার হেসে রনি বললো, ওফ দেব, কতদিন তোর গান শুনি না। সেই কবে শুনেছিলাম লাস্ট। মনেই নেই। তারপর মনে হয় একযুগ হয়ে গেছে।
মোবাইলটা কানে ধরে নিজের ভেতরের আনন্দটা ওকে প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু রনি বললো, আজ তুই মুকেশের ওই গানটা আবার গাইবি। যেটা খুব গাইতিস আগে। বলে নিজেই গাইতে লাগলো -সুহানি চাঁদনী রাতে। হামে শো নেহী দেতে। তুমহারী প্যায়ার কী বাতে, হামে শো নেহী দেতে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবন যে রকম by an unknown writer (collected and incomplete) - by Buro_Modon - 22-05-2020, 10:02 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)