Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery নিষিদ্ধ সেতু/কামদেব
#73
।।১৭।।



আবার ট্যাক্সি ছুটে চলল।নীলকে একটু হালকা মনে হচ্ছে। এতক্ষনে শিবেন বুঝতে পারে নীলের পরিকল্পনা।শিবেন মুখটা এগিয়ে মৃদু স্বরে বলে,পাঁচজন হয়ে গেছে ফেরার সময় আরেকটা ট্যাক্সি নিতে হবে।
কথাটা হরষিত উকিল শুনতে পেয়ে বলল,আমি ওখানেই নেমে যাবো,একটু কাজ আছে।
--না না,আরেকটা ট্যাক্সি নিতেই হবে দীপুর মালপত্তর আছে,এখন ভাবছি একটা টাটা সুমো আনলে ভাল হতো।
শিবেন আড়চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,দীপুর সঙ্গে তোর এ ব্যাপারে সব কথা হয়েছে?
--দীপু? ভাবিজানের নামখান বেশ মিঠেল শুনতে লাগে।দিলু সামনে বসে বলে।
--হ্যা আমাদের কথা হয়েছে।শোন দিলু,তুই আজ ওর সামনে বেশি বকবক করবি না।এ তোর আম্মু না, বাজে কথা ও পছন্দ করে না।নীল মজা করে বলে।
--কিন্তু একখান কথা না কইলেই না।দিলু বলে।
--কি কথা?
--রেজেস্টারির পর ভাবিজানরে বেশিদিন ফেলাইয়া রাইখেন না।মচ্ছব কইরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি নিয়া আসবেন।
--তাতে তোর কি লাভ?
--আমার কথা বলি না আম্মুর কথাডা ভাবেন।বয়স হইছে তারে অখন বিশ্রাম দেওন দরকার।
--তোকে অত ভাবতে হবে না।বকবক করলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেব।
--দ্যান নামায়ে দ্যান।আমি আম্মুরে গিয়া বলবো।ফিক ফিক করে হাসে দিলু।
প্রায় ঘণ্টা খানেক পর চাদনীতে এসে গাড়ি দাড়ায়।মুসাফিরখানার সামনে কিছু লোক জমেছে।
নীল যেতে হোটেলের মেয়েটি এগিয়ে এসে বলে,আসুন স্যর।স্থানীয় থানার ওসি মি.দাস চিনতে পেরে স্যালুট করে।
--কি ব্যাপার?
--ভেরি স্যাড কেস স্যর।ঠিক বুঝতে পারছি না স্যর, দেখি ময়না তদন্তে কি বলে? কেউ বলছে ডাব্বুর লোকজনের কাজ।
ভীড় ঠেলে ওসি একটি ট্রলির কাছে নিয়ে গেল। ট্রলির উপর শায়িত কাপড়ে ঢাকা একটি দেহ।একটি ধপধপে ফর্সা হাত বেরিয়ে ঝুলছে।ধক করে ওঠে বুকের মধ্যে। কাপড় সরাতে একটা শীতল শিহরন অনুভব করে সারা শরীরে। অজান্তে অস্ফুটে মুখ হতে বেরিয়ে এল, একী দীপু!
--আপনি চেনেন স্যর?
শিবেন উকি মেরে দেখল,চোখে মুখে কোনো বিকৃতি নেই,নিবিড় প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে আছে দীপা।কানের কাছে মুখ নিয়ে দীপা বলে ডাকলে বুঝি চোখ মেলে তাকাবে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,বন্ধুর দিকে তাকাতে পারছেনা।
হোটেল ছেড়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় নীল।শিবেন তাকে অনুসরন করে।হরষিত বাবু বিস্মিত চোখে শিবেনের দিকে তাকালে শিবেন বলল,এর সঙ্গেই রেজিস্ট্রি হবার কথা ছিল।নীল নিজেকে অপরাধী মনে করে,তাকে এড়াবার জন্যই এই পথ বেছে নিল দীপা। অস্বস্তির বোঝা চেপে বসেছে।
--স্যার ডেড বডি পোস্টমর্টেমে পাঠিয়ে দিই?ওসি জিজ্ঞেস করে।
--কত সময় লাগবে?
--একটু রাত তো হবে।
--ভাইজান, আমি কিন্তু একটাও বাজে কথা বলিনি।রুদ্ধ কণ্ঠে বলে দিলু।
নীলের মনের আকাশ ধীরে ধীরে ঘন মেঘে ঢেকে যাচ্ছে।গাঢ় মেঘ ঘিরে ফেলছে তাকে।হোটেলের মেয়েটি এসে বলে,স্যর উনি এইটা আপনাকে দিতে বলেছিলেন।
একটি খাম এগিয়ে দেয় মেয়েটি।নীল হাত বাড়িয়ে খামটি নিয়ে বলে,একবার ওসিকে ডাকুন।সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে ওসি স্যালুট করে,ইয়েস স্যর।

নীল একটা কাগজে ড বোসের ঠিকানা লিখে দিয়ে বলল,বডি এখানে পাঠিয়ে দেবেন।
--আপনি পরিচিত স্যার।
--আমারে রিলেটিভ।  
--ভেরি স্যরি স্যার। আমি আর যাবোনা,এদিকে একটু কাজ আছে।হরষিত উকিল বললেন।
ট্যাক্সি ছুটে চলেছে এসপি বাংলোর দিকে।কারো মুখে কোন কথা নেই।সারাক্ষন বকবক করে যে দিলু কে যেন তার মুখে কুলুপ এটে দিয়েছে।খাম খুলতেই সুন্দর একটা গন্ধ নাকে লাগে।নীল চোখের সামনে মেলে ধরে চিঠিটা।

'তোমায় কি বলে সম্বোধন করবো এসপি সাহেব?আমার রাজা? পরান সখা?নাকি প্রানের দেবতা? ভাবার মত বেশি সময় আমার হাতে নেই।তাই শুরু করলাম সম্বোধন ব্যতিরেকে।পরশু রাতে তোমার প্রতিটি অঙ্গের স্পর্শ নিয়ে সমস্ত গ্লানি মুক্ত হলাম।যখন তুমি এ চিঠি পড়ছো আমি তখন ধরাছোয়ার বাইরে অন্য জগতে।মনে পড়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে 'নীলকান্ত কে?'লজ্জায় সে রাতে উত্তর দিতে পারিনি।এখন অকপটে বলছি, হোটেলের খাতায় তোমার মর্যাদা রক্ষায় ভুল নাম লিখিয়েছিলাম। নামটি হবে নীলকণ্ঠ সেন।আরো অনেক প্রশ্ন ছিল তোমার চোখে, পাছে আমার কষ্ট হয় তুমি উচ্চারন করোনি।কিন্তু আমাকে বলতে হবে।
আজ তোমাকে একটি মেয়ের কথা বলবো,নেহাৎ কলেজ পড়ুয়া সাধারন মেয়ে।কলেজে যাতায়াতের পথে রোজই দেখতো রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে দীঘির মত কালো উজ্জ্বল চোখ মেলে।মুখে গম্ভীরভাব এটে হাসতো মেয়েটি মনে মনে।অপেক্ষা করতো কখন ছেলেটি তাকে মুখ ফুটে কিছু বলে।দিনের পর দিন যায় অপেক্ষা সার হয় কিন্তু সেই মুক মুখে ভাষা ফোটে না।প্রচণ্ড অভিমান হয়,কিসের এত অহঙ্কার?শান্ত প্রানে ঈর্ষা জাগাতে মেয়েটি শুরু করলো নতুন বিপদজনক খেলা।বলতে পারো আগুন নিয়ে খেলা। হায়! তাতেও ধ্যান ভাঙ্গে না উপরন্তু সেই আগুনে পুড়ে দগ্ধ হল সেই মেয়েটি। অভিমান রুপান্তরিত হয় ক্রোধে।নিজেই নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে,দগ্ধ করেছে।ছেলেটি সাবধান করেছিল কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।তার এই ভালমানুষীতে মনের আগুন দীপ্ত তেজে জ্বলে ওঠে। মেয়েটি নামতে থাকে সিড়ি বেয়ে নরকের আরো গভীরে।
তুমি হয়তো ভাবছো বিয়ের কথা না বললে হতভাগিনী আরো কিছুকাল বাঁচতো।তুমি ঠিকই ধরেছো অসম্মান অপমানের ক্লেদ মাখতে মাখতে আরও কিছুকাল আমি বেচে থাকতাম। কিন্তু নীল তোমার দীপাকে পাপের পাঁক হতে তুমি মুক্তি দিয়েছো।লক্ষীটি কোনো খেদ রেখোনা। স্বামীর অভিশাপে অহল্যা শাপগ্রস্থা হয় পরে ভগবানের স্পর্শে ঘটে তার শাপমুক্তি।তুমি যখন বললে, আজও আমাকে ভালবাসো,আমার ভিতর লোভী মেয়েটা নেচে উঠেছিল আনন্দে।অনেক কষ্টে তাকে দমন করি।কেন না আমার এই দেহ অপবিত্র আমি কীটদ্রষ্ট এক কুসুম।তুমি বলো এই ফুল কি দেবতাকে অর্ঘ্য দেওয়া যায়? না,সে আমি কিছুতেই পারবো না।সতীর দেহত্যাগে শুরু হয়েছিল শিবের তাণ্ডব নৃত্য। সতীর দেহ ছিন্নভিন্ন হবার পর শান্ত হয়েছিল ভোলানাথ।আমি জানি যতদিন বেচে থাকবো চলবে তোমার পাগলামী। তাই এছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না গো।পরজন্মে দেখা হলে আর আহবানের অপেক্ষা করবো না,ঝাপ দিয়ে বুকে পড়বো। তখন তুমি আমাকে আলিঙ্গন করবে না নীল? আমি জানি দীপু তোমার কত আদরের তার কথার অন্যথা করার সাধ্য তোমার নেই।বাপি মাম্মি মিতুকে বোলো যেন আমাকে ক্ষমা করে।মিতু তোমাকে খুব ভালবাসে।প্রনাম জেনো।
তোমার একান্ত, দীপালি সেন।'

--কার চিঠি? শিবেন জিজ্ঞেস করে।
নীল চিঠিটা এগিয়ে দেয়।শিবেন চিঠিটা খানিক পড়ে ফেরৎ দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, সত্যি আমি ওকে চিনতে ভুল করেছিলাম।
--শিবেন তুই একটা কাজ করবি?নীল জিজ্ঞেস করে।
শিবেন চোখ মেলে বন্ধুর দিকে তাকায়।নীল বলল,তুই তো পাড়ায় নেমে যাবি?যাওয়ার পথে প্লীজ--।ফুপিয়ে কেদে ফেলে নীল।
--ঠিক আছে ঠিক আছে আমি ড.বোসকে জানিয়ে যাবো।ভাবছি মিতুর কথা--বেচারি বড় আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে।
--আর দীপু  এলে আমাকে খবর দিবি।
শিবেন নেমে যাবার পর গাড়ী আবার চলতে শুরু করে।
দিলু জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।ভাইজানের কষ্ট কিভাবে সে ভাগ করে নেবে ভেবে পায়না?
বাংলোর সামনে ট্যাক্সি দাড়াতে নীল নামে বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে। পা টলছে, সরমা এগিয়ে এসে ছেলেকে ধরেন।
--মা, সব শেষ হয়ে গেল।
সরমা স্তম্ভিত কিছুক্ষন পর বললেন,বউমাকে কোথায় রেখে এলি?শেষ কৃত্য করবে কে?
--ময়না তদন্তের পর দিয়ে যাবে।
সরমা মনে মনে ভাবেন,লালসাকে কখনো ভালবাসা বলে ভ্রম হতে পারে কিন্তু প্রকৃত ভালবাসা নিঃস্বার্থ বিনম্র শ্রদ্ধামণ্ডিত।

                                                        ******সমাপ্ত*******
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ সেতু/কামদেব - by kumdev - 20-05-2020, 04:08 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)