19-05-2020, 07:57 PM
।।১৫।।
বাংলোর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে ট্যাক্সি,এসপির বাংলো সবাই চেনে। ড্রাইভারের ডাকে সম্বিত ফেরে।তাকিয়ে দেখল,লাইট জ্বলছে।কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে নীল।দুজন সান্ত্রি এসে স্যালুট করে দাড়ায়।নীল হাত মাথায় ঠেকিয়ে ভিতরে চলে যায়।এতরাত হল কেউ কি ঘুমায়নি?দরজার সামনে দাড়াতে দরজা খুলে দিল দিলু।
--আচ্ছা ভাইজান তোমার আক্কেলটা কি?বাদলার দিন বলা নেই কওয়া নেই।তুমি কি ভাবো কেউ চিন্তা করার নেই?
এই ভয়টা করছিল নীল।মাকে কিছু একটা বোঝালে বোঝে কিন্তু একে কে বোঝাবে?দিলুটা মাথা খারাপ করে দেবে।কিছু বলা যাবে না তাহলে আবার মার অভিমান হবে।
--এত গুলো কথা বললাম তা একটা জবাব তো দিতে হয়?দিলু গলা চড়িয়ে ডাক দেয়,আম-মু-উ-উ।
--চুপ কর দিলু, খুব ক্লান্ত লাগছে কাল সব বলবো।
--তা না হয় বললে,কিন্তু এভাবে চললে শরীর ঠিক থাকবে ভেবেছো?
--আচ্ছা এরপর তোর কথা শুনে চলবো।
--মনে থাকে যেন।দিলু ভাত দেবার ব্যবস্থা করে।
--এ্যাই তুই কি এ বাড়ির চাকর?
নীল তাকিয়ে দেখল সরমা।বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।গোলমালে ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
--আম্মু আপনি আবার এলেন কেন?
--তুই বেশি চালাকি করবি না।সর আমি ভাত দিচ্ছি।
--আপনি কি বাড়ির দাসী নাকি?
--দাড়া তোর মস্করা করা দেখাচ্ছি।
আনোয়ার হোসেন দিলু পালিয়ে যায়।মা মুখ টিপে হাসেন।
--তোমার ভয়ে পালাল।নীল বলে।
--ও পালাবে?দেখ কোথায় আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে।
বলতে না বলতেই দাত বের করে হাজির দিলু।
--কোথায় থাকিস এত রাত অবধি?দিলু তো তোকে খুজতে বের হচ্ছিল।আমিই মানা করলাম।ক'দিন আগে একটা খুনেকে ধরেছিস রাগ থাকতে পারে,ও বলছিল।
যতক্ষন থাকবে মা বকে যাবে্ন।নীল কোন উত্তর দেয় না। মনে তখনও ভাসছে দীপুর ছবি।
সারারাত ঘুমোতে পারে না দীপা।সারা শরীরে নীলের স্পর্শ জড়িয়ে আছে।কেমন অসংকোচে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল কোন আড়ষ্টতা নেই দ্বিধা নেই। অতীত নিয়ে একটা প্রশ্নও নেই।কত কথা হল কি সুন্দর করে কথা বলে। হায় ভগবান আগে কেন মুখ ফুটে একটা শব্দ বের হলনা?
দীপার সম্পর্কে সব কথা জানা হয় নি,জানার প্রয়োজন বোধ করে না।বুঝেছে দীপু তাকে সত্যিই ভালবাসে। কথাটা পাড়তে হবে মার কাছে।এই রাতে নয় কাল সকালে রয়েসয়ে মার মনোভাবটা বুঝতে হবে।মায়ের অমতে কোন কিছু করা তার পক্ষে অসম্ভব।
কাকের ডাকে ভোর হয়।সরমা ছেলের মাথার কাছে চা নামিয়ে রেখে ছেলেকে ডাকেন।নীল ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে,কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছে।
--মা আমার কাছে একটু বসবে? মাকে বলে নীল।
--এখন? অবাক হয়ে ছেলেকে দেখে্ন সরমা। আচ্ছা,রান্নাটা নামিয়ে আসছি।
ছেলে মুখ ফুটে বলেছে তাতেই খুশি সরমা।
একজন কনেষ্টবল এসে স্যালুট করে দাঁড়ায়,স্যর ডিএম সাহেবের ফোন।নীল দ্রুত অফিস ঘরের দিকে যায়।কিছুক্ষন পর ফিরে আসতে দিলু বলে, ভাই জান,আম্মু তো গ্রীন সিগন্যাল দিল।এইবার ঝাপাইয়া পড়েন।নীল চোখ পাকাতে দিলু চলে যায়। শিবেনকে ফোন করে নীল।
--কি ব্যাপার?
--শিবু খুব জরুরী দরকার। একবার সময় নিয়ে আসতে পারবি?
--এভাবে কেন কথা বলছিস? কি হয়েছে কি?
--অনেক কথা, তুই আয় সব বলবো। এখানেই খাওয়া-দাওয়া করবি।ফোন রেখে দেয় নীল।এই সময় শিবুর মত একজনকে খুব দরকার।
শিবেনের কপালে ভাজ পড়ে নিশ্চয়ই কিছু গুরুতর ব্যাপার। বিষয়টা পারিবারিক না অফিস সংক্রান্ত? অফিসের নানা বিষয় নিয়ে নীল বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শ করে।একজন আইপিএস অফিসার তারমত একজন ব্যাঙ্ক কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে শিবেন এজন্য নিজেকে সম্মানিত বোধ করে।নীলের সব ব্যাপারে একটু খুতখুতানি থাকলেও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে অসম্ভব দৃঢ়তা।
পায়েল এসে জিজ্ঞেস করল,কার ফোন গো?তোমার বন্ধু দেবদাস?
শিবেন হাসে,বিয়ের পর ছেলেবেলার সব গল্পই বউয়ের সঙ্গে করেছে।পায়েল আড়ালে নীলকে দেবদাস বললেও নীলকে খুব সমীহ করে।পায়েল জিজ্ঞেস করে,কি বলছিল নীল ঠাকুর-পো?
--বলছিল কি দরকার আছে,যেতে।
--তাহলে আজ ব্যাঙ্ক কামাই।একটা কথা জিজ্ঞেস করব,সত্যি করে বলবে?
পায়েল আবার কি জানতে চায়? শিবেন বউয়ের দিকে তাকায়।
--মেয়েটা কি খুব সুন্দরী ছিল?
শিবেন স্বস্তির শ্বাস ফেলে,মেয়েলী কৌতূহল।তারপর মজা করে বউকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার কাছে তোমার মত সুন্দরী কাউকে দেখিনা।
পায়েল বলল,ইয়ার্কি না--তুমি আমার কথার উত্তর দাও।
শিবেন গম্ভীর হয়ে যায়।কি বলবে রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতি?হালকা সুরে বলে, কবেকার কথা সেকি মনে আছে?অবাক লাগে এরকম একটা মেয়ে কি করে এমন ভুল করলো?
--হ্যাগো তুমি কোনো ভুল করোনি তো?
শিবেন ঘুরে পায়েলকে দেখে প্রশ্নের অর্থ বুঝতে পারে,পায়েলকে জড়িয়ে ধরে পিষ্ঠ করতে করতে বলল,ভুল কি ঠিক জানিনা,আমি সুখী,কোনো আক্ষেপ নেই আমার।
--কি হচ্ছে কি কেউ এসে পড়বে--ছাড়ো
ডিএম সাহেব আবার নতুন কি খবর শোনায়,নীল দুজন দেহরক্ষী নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।যাবার আগে দিলুকে বলে গেল,শিবেন আসবে।আমি কিছুক্ষনের মধ্যে আসছি।আসলে বসতে বলবি।
--না দাঁড়িয়ে থাকতে বলবো।তুমি যেখানে যাচ্ছো যাও।দিলু উত্তর দিল।
এমনভাবে নীলু ডাকল শিবেনের পক্ষে আজ আর ব্যাঙ্কে যাওয়া হবে না।পায়েল বলছিল কি রকম বন্ধু তুমি বউ কোলে নিয়ে শুয়ে থাকো বিবেকে বাধে না?
--কি মুস্কিল মাসীমা বলছেন আমিও বলেছি শুনলে তো? দোকান থেকে পছন্দমত একটা বউ কিনে কি ওর হাতে তুলে দেবো?
খিল খিল করে হেসে ফেলে পায়েল।দোকানে সাজানো থাকে ম্যানিকুইন সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে শাড়ী ব্লাউজ পরা দেখতেই ভাল লাগে কিন্তু ওই পুতুল দিয়ে কি বউয়ের কাজ হবে? শিবেন বেরিয়ে পড়ে,বাসে এসপি বাংলো যেতে মিনিট তিরিশের পথ।যখন পৌছাল শুনলো আধঘণ্টা আগে নীল বেরিয়েছে।
মাসীমার কাছে সব কথা শুনে শিবেনের খুব ভাল লাগে।যার কোনো খোজ নেই বেচে আছে কি জানা নেই তার জন্য অহেতুক অপেক্ষা করার কোনো অর্থ হয়না।প্রায় বারোটা বাজিয়ে নীল এল।
নীলকে খুব গম্ভীর মনে হয়।শিবেন বন্ধুকে চেনে জিজ্ঞেস করে,কোথায় গেছিলি?
--সর্বত্র গোলমাল।
--কেন কি হল?
--ডিএম সাহেব ডাব্বুর কেস ফাইল মি. সহায়কে দিতে বললেন।কেসটা আমার হাত থেকে নিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য কি বুঝতে পারছিস?
--সব ব্যাপারে নিজেকে ইনভল্ভ করার দরকার কি?তোর যা করার তুই করেছিস, এবার হ্যাণ্ডওভার করতে বলছে করে দিবি।তোর এত কি দায়? শিবেন বলে।
সরমা খেতে দিলেন।খেতে খেতে শিবেন বলল,যাক তুই যে মিতুকে বিয়ে করছিস শুনে খুব ভাল লাগল।
নীলের খাওয়া থেমে যায় অবাক হয়ে বলল,তোকে কে বলল?
--আমি মাসীমার কাছে সব শুনেছি।
--উহ মা তুমি না--তোমাকে এক বলি তুমি আরেক বোঝো,মিতু আমার চেয়ে নয়-দশ বছরের ছোটো।
--তোর বাবা আমার চেয়ে কত বড় জানিস?
--আম্মু আমাদের গ্রামে একজন তার বিবি মারা গেলে যারে বিয়ে করেছে--।
--মা তুমি ওকে আমার ব্যাপারে কথা বলতে মানা করব?
--তোর ব্যাপারে কিছু তো বলেনি ওর গ্রামের একজনের কথা বলছিল।সরমা বললেন,ডাক্তারবাবুর মেয়ের কথা বলেছিলি সেজন্য ভেবেছি--।
--ডক্টর বোসের দুই মেয়ে।
--বড় মেয়ে তো থাকে না।কোথায় গেছে কেউ জানেও না।
নীলু আবার সমস্ত ঘটনা যা যা ঘটেছে বিশদে বলতে থাকে।
--তোর সঙ্গে দীপুর দেখা হয়েছে বলিস নি তো?শিবেন বলল।
সরমা চুপচাপ শুনছিলেন আর মনে পড়ছিল উকিলবাবুর বউয়ের কথা।ডাক্তারবাবুর মেয়ে বাড়ি হতে বেরিয়ে গেছে এই আলোচনা বছর চার-পাঁচ আগে তখন ঘরে ঘরে। উকিলবাবুর বউয়ের সৌজন্যে সরমাও কিছুটা জানে্ন।নীল কথা শেষ করে মায়ের মুখের দিকে তাকায় অপেক্ষায় অধীর।
--যা আমি ভাল করে জানি না সে বিষয়ে আমি কি বলব?মানুষ আশা করে তাই হতাশ হয়, হতাশা থেকে মর্মাহত ।কেউ বাস্তবকে মেনে নিয়ে নতুন করে শুরু করে আবার কেউ মেনে নিতে পারে না অভিমানে আত্মগ্লানিতে আত্মনিগ্রহ করে।সরমা একটু থামেন।
আনোয়ার হোসেনও গভীর মনোযোগ দিয়ে তার আম্মুর কথা শোনে।কথা শুনে মনে হয় তার আম্মু সহজ মানুষ না।
আবার সরমা শুরু করে্ন,তোমাকে বুঝতে হবে এতদিন পরে কেন? একি নিছক ভালবাসা নাকি বড় চাকুরিয়ার প্রলোভন? তুমি যদি সুখী হও তাতেই আমি খুশি। আমি তার কাছে অন্যকোন দাবী করতে যাব না।বিধাতা যা দিয়েছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
--আমু এইটা ন্যয্য কথা বলেছেন।জানেন আম্মু,আমিও ভাল হতে চেয়েছিলাম। যখন সেই সুযোগ পেলাম না,চোর-জোচ্চুরির পথ ধরলাম।
--চুরি করলে ঘেটি ধরে বিদায় করবো।সরমা বলেন।
--যা পারবেন না তা বলেন কেন?
--দেখবি পারি কিনা?সরমা ফুসে ওঠে্ন।
--ঘেটি ধরতে পারবেন কিন্তু বেটারে বিদায় করতে পারবেন না।
পেটে না ধরলেও এই ছেলেটা সরমার কাছে নীলুর চেয়ে কম নয়।প্রথম যখন এল মনে একটু খুতখুতানি ছিল না বললে মিথ্যে বলা হবে।অজ্ঞাতসারে কখন যে হৃদয়ে পাকা আসন করে নিয়েছে বুঝতেই পারেন নি।মানুষের সম্পর্কগুলো বড় অদ্ভুত। পরিবেশ গম্ভীর হয়ে ওঠে।
শিবেন বলল,মাসীমা তাহলে আপনার সম্মতি আছে?
সরমা হাসলেন তারপর বললেন,সম্মতি বললে সম্মতি।আমি জানি মানুষ পচে মরার পর,তার আগে না।ভুল করে আবার তা মানুষই সংশোধন করতে পারে। বিশ্বাস হারানো পাপ।
শিবেন কথা বাড়ায় না।অবাক লাগে এই বিধবা মহিলা যেভাবে ভাবতে পারেন সে কেন পারে না।মাসীমা লেখাপড়া বেশিদুর করেনি।কিন্তু লেখাপড়া জানা মানুষ কি জীবনকে এভাবে ভাবতে পারে?
--যাও বাবা তোমরা বেরিয়ে পড়ো।সরমা বললেন নীলু,ওর বাড়ীর লোককেও বিষয়টা জানানো উচিত।
বাংলোর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে ট্যাক্সি,এসপির বাংলো সবাই চেনে। ড্রাইভারের ডাকে সম্বিত ফেরে।তাকিয়ে দেখল,লাইট জ্বলছে।কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে নীল।দুজন সান্ত্রি এসে স্যালুট করে দাড়ায়।নীল হাত মাথায় ঠেকিয়ে ভিতরে চলে যায়।এতরাত হল কেউ কি ঘুমায়নি?দরজার সামনে দাড়াতে দরজা খুলে দিল দিলু।
--আচ্ছা ভাইজান তোমার আক্কেলটা কি?বাদলার দিন বলা নেই কওয়া নেই।তুমি কি ভাবো কেউ চিন্তা করার নেই?
এই ভয়টা করছিল নীল।মাকে কিছু একটা বোঝালে বোঝে কিন্তু একে কে বোঝাবে?দিলুটা মাথা খারাপ করে দেবে।কিছু বলা যাবে না তাহলে আবার মার অভিমান হবে।
--এত গুলো কথা বললাম তা একটা জবাব তো দিতে হয়?দিলু গলা চড়িয়ে ডাক দেয়,আম-মু-উ-উ।
--চুপ কর দিলু, খুব ক্লান্ত লাগছে কাল সব বলবো।
--তা না হয় বললে,কিন্তু এভাবে চললে শরীর ঠিক থাকবে ভেবেছো?
--আচ্ছা এরপর তোর কথা শুনে চলবো।
--মনে থাকে যেন।দিলু ভাত দেবার ব্যবস্থা করে।
--এ্যাই তুই কি এ বাড়ির চাকর?
নীল তাকিয়ে দেখল সরমা।বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।গোলমালে ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
--আম্মু আপনি আবার এলেন কেন?
--তুই বেশি চালাকি করবি না।সর আমি ভাত দিচ্ছি।
--আপনি কি বাড়ির দাসী নাকি?
--দাড়া তোর মস্করা করা দেখাচ্ছি।
আনোয়ার হোসেন দিলু পালিয়ে যায়।মা মুখ টিপে হাসেন।
--তোমার ভয়ে পালাল।নীল বলে।
--ও পালাবে?দেখ কোথায় আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে।
বলতে না বলতেই দাত বের করে হাজির দিলু।
--কোথায় থাকিস এত রাত অবধি?দিলু তো তোকে খুজতে বের হচ্ছিল।আমিই মানা করলাম।ক'দিন আগে একটা খুনেকে ধরেছিস রাগ থাকতে পারে,ও বলছিল।
যতক্ষন থাকবে মা বকে যাবে্ন।নীল কোন উত্তর দেয় না। মনে তখনও ভাসছে দীপুর ছবি।
সারারাত ঘুমোতে পারে না দীপা।সারা শরীরে নীলের স্পর্শ জড়িয়ে আছে।কেমন অসংকোচে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল কোন আড়ষ্টতা নেই দ্বিধা নেই। অতীত নিয়ে একটা প্রশ্নও নেই।কত কথা হল কি সুন্দর করে কথা বলে। হায় ভগবান আগে কেন মুখ ফুটে একটা শব্দ বের হলনা?
দীপার সম্পর্কে সব কথা জানা হয় নি,জানার প্রয়োজন বোধ করে না।বুঝেছে দীপু তাকে সত্যিই ভালবাসে। কথাটা পাড়তে হবে মার কাছে।এই রাতে নয় কাল সকালে রয়েসয়ে মার মনোভাবটা বুঝতে হবে।মায়ের অমতে কোন কিছু করা তার পক্ষে অসম্ভব।
কাকের ডাকে ভোর হয়।সরমা ছেলের মাথার কাছে চা নামিয়ে রেখে ছেলেকে ডাকেন।নীল ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে,কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছে।
--মা আমার কাছে একটু বসবে? মাকে বলে নীল।
--এখন? অবাক হয়ে ছেলেকে দেখে্ন সরমা। আচ্ছা,রান্নাটা নামিয়ে আসছি।
ছেলে মুখ ফুটে বলেছে তাতেই খুশি সরমা।
একজন কনেষ্টবল এসে স্যালুট করে দাঁড়ায়,স্যর ডিএম সাহেবের ফোন।নীল দ্রুত অফিস ঘরের দিকে যায়।কিছুক্ষন পর ফিরে আসতে দিলু বলে, ভাই জান,আম্মু তো গ্রীন সিগন্যাল দিল।এইবার ঝাপাইয়া পড়েন।নীল চোখ পাকাতে দিলু চলে যায়। শিবেনকে ফোন করে নীল।
--কি ব্যাপার?
--শিবু খুব জরুরী দরকার। একবার সময় নিয়ে আসতে পারবি?
--এভাবে কেন কথা বলছিস? কি হয়েছে কি?
--অনেক কথা, তুই আয় সব বলবো। এখানেই খাওয়া-দাওয়া করবি।ফোন রেখে দেয় নীল।এই সময় শিবুর মত একজনকে খুব দরকার।
শিবেনের কপালে ভাজ পড়ে নিশ্চয়ই কিছু গুরুতর ব্যাপার। বিষয়টা পারিবারিক না অফিস সংক্রান্ত? অফিসের নানা বিষয় নিয়ে নীল বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শ করে।একজন আইপিএস অফিসার তারমত একজন ব্যাঙ্ক কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে শিবেন এজন্য নিজেকে সম্মানিত বোধ করে।নীলের সব ব্যাপারে একটু খুতখুতানি থাকলেও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে অসম্ভব দৃঢ়তা।
পায়েল এসে জিজ্ঞেস করল,কার ফোন গো?তোমার বন্ধু দেবদাস?
শিবেন হাসে,বিয়ের পর ছেলেবেলার সব গল্পই বউয়ের সঙ্গে করেছে।পায়েল আড়ালে নীলকে দেবদাস বললেও নীলকে খুব সমীহ করে।পায়েল জিজ্ঞেস করে,কি বলছিল নীল ঠাকুর-পো?
--বলছিল কি দরকার আছে,যেতে।
--তাহলে আজ ব্যাঙ্ক কামাই।একটা কথা জিজ্ঞেস করব,সত্যি করে বলবে?
পায়েল আবার কি জানতে চায়? শিবেন বউয়ের দিকে তাকায়।
--মেয়েটা কি খুব সুন্দরী ছিল?
শিবেন স্বস্তির শ্বাস ফেলে,মেয়েলী কৌতূহল।তারপর মজা করে বউকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার কাছে তোমার মত সুন্দরী কাউকে দেখিনা।
পায়েল বলল,ইয়ার্কি না--তুমি আমার কথার উত্তর দাও।
শিবেন গম্ভীর হয়ে যায়।কি বলবে রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতি?হালকা সুরে বলে, কবেকার কথা সেকি মনে আছে?অবাক লাগে এরকম একটা মেয়ে কি করে এমন ভুল করলো?
--হ্যাগো তুমি কোনো ভুল করোনি তো?
শিবেন ঘুরে পায়েলকে দেখে প্রশ্নের অর্থ বুঝতে পারে,পায়েলকে জড়িয়ে ধরে পিষ্ঠ করতে করতে বলল,ভুল কি ঠিক জানিনা,আমি সুখী,কোনো আক্ষেপ নেই আমার।
--কি হচ্ছে কি কেউ এসে পড়বে--ছাড়ো
ডিএম সাহেব আবার নতুন কি খবর শোনায়,নীল দুজন দেহরক্ষী নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।যাবার আগে দিলুকে বলে গেল,শিবেন আসবে।আমি কিছুক্ষনের মধ্যে আসছি।আসলে বসতে বলবি।
--না দাঁড়িয়ে থাকতে বলবো।তুমি যেখানে যাচ্ছো যাও।দিলু উত্তর দিল।
এমনভাবে নীলু ডাকল শিবেনের পক্ষে আজ আর ব্যাঙ্কে যাওয়া হবে না।পায়েল বলছিল কি রকম বন্ধু তুমি বউ কোলে নিয়ে শুয়ে থাকো বিবেকে বাধে না?
--কি মুস্কিল মাসীমা বলছেন আমিও বলেছি শুনলে তো? দোকান থেকে পছন্দমত একটা বউ কিনে কি ওর হাতে তুলে দেবো?
খিল খিল করে হেসে ফেলে পায়েল।দোকানে সাজানো থাকে ম্যানিকুইন সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে শাড়ী ব্লাউজ পরা দেখতেই ভাল লাগে কিন্তু ওই পুতুল দিয়ে কি বউয়ের কাজ হবে? শিবেন বেরিয়ে পড়ে,বাসে এসপি বাংলো যেতে মিনিট তিরিশের পথ।যখন পৌছাল শুনলো আধঘণ্টা আগে নীল বেরিয়েছে।
মাসীমার কাছে সব কথা শুনে শিবেনের খুব ভাল লাগে।যার কোনো খোজ নেই বেচে আছে কি জানা নেই তার জন্য অহেতুক অপেক্ষা করার কোনো অর্থ হয়না।প্রায় বারোটা বাজিয়ে নীল এল।
নীলকে খুব গম্ভীর মনে হয়।শিবেন বন্ধুকে চেনে জিজ্ঞেস করে,কোথায় গেছিলি?
--সর্বত্র গোলমাল।
--কেন কি হল?
--ডিএম সাহেব ডাব্বুর কেস ফাইল মি. সহায়কে দিতে বললেন।কেসটা আমার হাত থেকে নিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য কি বুঝতে পারছিস?
--সব ব্যাপারে নিজেকে ইনভল্ভ করার দরকার কি?তোর যা করার তুই করেছিস, এবার হ্যাণ্ডওভার করতে বলছে করে দিবি।তোর এত কি দায়? শিবেন বলে।
সরমা খেতে দিলেন।খেতে খেতে শিবেন বলল,যাক তুই যে মিতুকে বিয়ে করছিস শুনে খুব ভাল লাগল।
নীলের খাওয়া থেমে যায় অবাক হয়ে বলল,তোকে কে বলল?
--আমি মাসীমার কাছে সব শুনেছি।
--উহ মা তুমি না--তোমাকে এক বলি তুমি আরেক বোঝো,মিতু আমার চেয়ে নয়-দশ বছরের ছোটো।
--তোর বাবা আমার চেয়ে কত বড় জানিস?
--আম্মু আমাদের গ্রামে একজন তার বিবি মারা গেলে যারে বিয়ে করেছে--।
--মা তুমি ওকে আমার ব্যাপারে কথা বলতে মানা করব?
--তোর ব্যাপারে কিছু তো বলেনি ওর গ্রামের একজনের কথা বলছিল।সরমা বললেন,ডাক্তারবাবুর মেয়ের কথা বলেছিলি সেজন্য ভেবেছি--।
--ডক্টর বোসের দুই মেয়ে।
--বড় মেয়ে তো থাকে না।কোথায় গেছে কেউ জানেও না।
নীলু আবার সমস্ত ঘটনা যা যা ঘটেছে বিশদে বলতে থাকে।
--তোর সঙ্গে দীপুর দেখা হয়েছে বলিস নি তো?শিবেন বলল।
সরমা চুপচাপ শুনছিলেন আর মনে পড়ছিল উকিলবাবুর বউয়ের কথা।ডাক্তারবাবুর মেয়ে বাড়ি হতে বেরিয়ে গেছে এই আলোচনা বছর চার-পাঁচ আগে তখন ঘরে ঘরে। উকিলবাবুর বউয়ের সৌজন্যে সরমাও কিছুটা জানে্ন।নীল কথা শেষ করে মায়ের মুখের দিকে তাকায় অপেক্ষায় অধীর।
--যা আমি ভাল করে জানি না সে বিষয়ে আমি কি বলব?মানুষ আশা করে তাই হতাশ হয়, হতাশা থেকে মর্মাহত ।কেউ বাস্তবকে মেনে নিয়ে নতুন করে শুরু করে আবার কেউ মেনে নিতে পারে না অভিমানে আত্মগ্লানিতে আত্মনিগ্রহ করে।সরমা একটু থামেন।
আনোয়ার হোসেনও গভীর মনোযোগ দিয়ে তার আম্মুর কথা শোনে।কথা শুনে মনে হয় তার আম্মু সহজ মানুষ না।
আবার সরমা শুরু করে্ন,তোমাকে বুঝতে হবে এতদিন পরে কেন? একি নিছক ভালবাসা নাকি বড় চাকুরিয়ার প্রলোভন? তুমি যদি সুখী হও তাতেই আমি খুশি। আমি তার কাছে অন্যকোন দাবী করতে যাব না।বিধাতা যা দিয়েছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
--আমু এইটা ন্যয্য কথা বলেছেন।জানেন আম্মু,আমিও ভাল হতে চেয়েছিলাম। যখন সেই সুযোগ পেলাম না,চোর-জোচ্চুরির পথ ধরলাম।
--চুরি করলে ঘেটি ধরে বিদায় করবো।সরমা বলেন।
--যা পারবেন না তা বলেন কেন?
--দেখবি পারি কিনা?সরমা ফুসে ওঠে্ন।
--ঘেটি ধরতে পারবেন কিন্তু বেটারে বিদায় করতে পারবেন না।
পেটে না ধরলেও এই ছেলেটা সরমার কাছে নীলুর চেয়ে কম নয়।প্রথম যখন এল মনে একটু খুতখুতানি ছিল না বললে মিথ্যে বলা হবে।অজ্ঞাতসারে কখন যে হৃদয়ে পাকা আসন করে নিয়েছে বুঝতেই পারেন নি।মানুষের সম্পর্কগুলো বড় অদ্ভুত। পরিবেশ গম্ভীর হয়ে ওঠে।
শিবেন বলল,মাসীমা তাহলে আপনার সম্মতি আছে?
সরমা হাসলেন তারপর বললেন,সম্মতি বললে সম্মতি।আমি জানি মানুষ পচে মরার পর,তার আগে না।ভুল করে আবার তা মানুষই সংশোধন করতে পারে। বিশ্বাস হারানো পাপ।
শিবেন কথা বাড়ায় না।অবাক লাগে এই বিধবা মহিলা যেভাবে ভাবতে পারেন সে কেন পারে না।মাসীমা লেখাপড়া বেশিদুর করেনি।কিন্তু লেখাপড়া জানা মানুষ কি জীবনকে এভাবে ভাবতে পারে?
--যাও বাবা তোমরা বেরিয়ে পড়ো।সরমা বললেন নীলু,ওর বাড়ীর লোককেও বিষয়টা জানানো উচিত।