18-05-2020, 03:41 AM
(This post was last modified: 18-05-2020, 03:47 AM by eklasayan. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
দ্বিতীয় পর্ব : অজানা দরজা
সৌমিত্র : আকাশ ! আমি সিটি হসপিটাল এ যাচ্ছি | ঐশীর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে |
আকাশ : কি ??? ঐশী ঠিক আছে তো ???
সৌমিত্র : না আকাশ, প্রচন্ড রক্ত বের হচ্ছে, মাথায় ভালো রকম আঘাত লেগেছে | আমি তোকে লোকেশান টা সেন্ড করে দিচ্ছি, ঐশীর গাড়িটা তুই একটু নিয়ে গিয়ে গ্যারেজে দিয়ে দিবি ??
আকাশ : হ্যাঁ, তুই লোকেশান সেন্ড কর, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি | তুই আংকেল কে কল করেছিস ???
সৌমিত্র : না, আমি কল করিনি | আগে ওকে হসপিটাল এ অ্যাডমিট করতে দে | আর শোন ওকে ভর্তি করার জন্য তোর বাবার হেল্প লাগতে পারে, এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট কেস, সাথে সাথে ভর্তি নাও করতে পারে, তুই একটু জানিয়ে রাখ, আমি দরকার পড়লে আংকেল কে কল করবো |
আকাশ : চিন্তা করিস না !! আমি বাবাকে বলে রাখছি | আর সৌমিত্র তুই এখনই পায়েলকে ঐশীর ব্যাপারে কিছু বলিস না, তুই তো ওকে জানিস, অযথায় প্যানিক করতে থাকবে | আমি কলেজ ক্যাফেতে ওর সাথে দেখা করে বলে দেবো |
সৌমিত্র : আকাশ..... প্লিজ তুই অনন্যাকে এই ব্যাপারে একটু বলে দিবি ?? আমি আজ ওর সাথে দেখা করতেই যাচ্ছিলাম, কিন্তু তার মাঝেই এটা ঘটলো |
আকাশ : আমি ওকে জানিয়ে দেবো | তুই এখন আর সময় নষ্ট না করে ঐশীকে নিয়ে হসপিটাল এ পৌঁছো | আশা করি ও খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে |
সৌমিত্র ঐশীর দিকে তাকালো | ঐশীর মুখটা ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে | ওকে ডাকতে লাগলো.........
সৌমিত্র : ঐশী !!! চোখ খোলো | (খুব ভালো করেই জানে যে ঐশীর চোখ খোলা রাখতে হবে, নয় তো ওর বিপদের সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে)
সৌমিত্র এটাই বুঝতে পারছে না যে ঐশীকে এই ভাবে দেখে হঠাৎ করেই ওর চোখে জল এসে গেলো কেন ??? হয়তো ওকে ছোটো থেকে চেনে বলে |
***************************
সৌমিত্র : প্লিজ আংকেল, শান্ত হও | আমি বুঝতে পারছি ওকে এই ভাবে দেখতে পারাটা খুব কষ্টের, কিন্তু ডক্টর আমাকে বলেছে, বেশি বিচলিত হওয়ার দরকার নেই | এখন ও আউট অফ ডেঞ্জার | শুধু এখন ওর জ্ঞ্যান ফেরার অপেক্ষা |
রজত : সৌমিত্র !!! আজ ওই সময় তুমি ওই জায়গায় না পৌঁছালে কি যে হতো, হয়তো আমার মেয়েকে আর ফিরেই পেতাম না |
আশা দৌড়ে এসে সৌমিত্র কে জড়িয়ে ধরলো | ওকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো |
সৌমিত্র : আন্টি !! প্লিজ এইভাবে কাঁদবে না | ঐশী একদম ঠিক আছে | বিশ্বাস করো |
আশা : এই সব কিছুই আমার জন্য হয়েছে | আমিই একমাত্র ওর এই অবস্থার জন্য দায়ী |
সৌমিত্র আর রজত দুজনেই শকড হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো |
রজত ভাবতে লাগলো যে এই অ্যাক্সিডেন্টের জন্য আশা এরকম রিয়্যাক্ট করছে কেন !!!
সৌমিত্র : আন্টি প্লিজ !! শান্ত হও | সব ঠিক হয়ে যাবে |
আশা : না বাবু !!! আমিই ওকে বার বার ওর মন ডিস্ট্র্যাক্ট করছিলাম | বার বার ওকে তোমাকে বিয়ে করার কথা বলে | আর ঠিক তখনই ওর অ্যাক্সিডেন্ট টা হয় |
সৌমিত্র আর রজত আশার কথা শুনে একদম শকড হয়ে যায় |
***************************
ডক্টর : আরে রজত ইয়ার !!! (রজতকে জড়িয়ে ধরে) এখন ভালো আছে |
রজতও ওর ছোটো বেলার বন্ধুকে ডক্টর হিসেবে দেখে জড়িয়ে ধরলো |
ডক্টর : যে কোনো মুহূর্তে ওর জ্ঞ্যান ফিরে আসবে | ভেতরে আসতে পারিস |
রজত আর আশা ভেতরে গেলো | সৌমিত্র বাইরেই অপেক্ষা করতে লাগলো |
*************************
ডক্টর : ঐশী মা..... চোখ খোলো |
ঐশী কিছুটা চমকে উঠলো, তারপর ওর চোখ খোলার চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু প্রথম চেষ্টাতে পুরোপুরি চোখ খুলতে ব্যর্থ হলো |
ধীরে ধীরে ঐশী ওর চোখটা খুললো | আর ডক্টর এর পাশে দুজন অচেনা মানুষকে দেখতে পেলো |
ঐশী : আমি কোথায় আছি ?? (খুব ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলো)
ডক্টর : ভয় নেই মা..... তুমি হসপিটাল এ আছো | কয়েক ঘন্টা আগে তোমার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল |
ঐশী : (উঠে বসে) অ্যাক্সিডেন্ট???!!!
আশা ওর কাঁধে হাত রাখলো |
ঐশী প্রথমে আশার মুখের দিকে দেখলো, তারপর ওর হাতের দিকে তাকালো, আর একটু যেন শিউরে উঠলো |
ঐশী : ডক্টর ইনি কে ??
রজত আর আশা দুজনেই পুরো শকড হয়ে গেলো |
ডক্টর : ঐশী !!!!
ঐশী : আমার নাম ঐশী ??
ডক্টর : ওহ: নো !!! আমার মনে হয় ও ওর স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে |
ঐশী এখনও অবাক হয়ে রয়েছে |
আশা জোরে কেঁদে উঠলো |
সৌমিত্র বাইরে অনন্যার সাথে কথা বলছিল | ভেতরে কান্নার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিয়ে ভেতরে এলো | ভেতরে এসে দেখলো ঐশী বেডে বসে আছে, আর রজত আংকেল আর আশা আন্টি দুজনেই অবাক হয়ে আছে |
সৌমিত্রকে দেখে ঐশীর চোখে খুশি ফুটে উঠলো | ঐশী বেড থেকে নেমে প্রায় দৌড়েই সৌমিত্রর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো |
সৌমিত্র ঐশীর এরকম কাজ দেখে শকড হয়ে গেল |
ঐশী একবার সৌমিত্রর মুখের দিকে দেখলো তারপর আবার জড়িয়ে ধরলো |
সৌমিত্র একদম হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইলো |
ঐশী : থ্যাংক ইউ সৌমিত্র তুমি এসে গিয়েছো |
ঐশী সৌমিত্রকে ছেড়ে দিয়ে ওর মা বাবা কে দেখিয়ে বললো.......
ঐশী : তুমি ওদের চেনো ?? ওর বলছে ওরা নাকি আমার মা বাবা |
সৌমিত্র একবার ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তারপর একবার ঐশীর দিকে তাকালো, তারপর ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে দেখলো | ডক্টর ইশারায় ওকে চুপ করে থাকতে বললো |
ডক্টর : তুমি ওকে চেনো ঐশী ??
ঐশী : হ্যাঁ ডক্টর | ও তো সৌমিত্র |
ডক্টর : ওকে |
ঐশী : (সৌমিত্রর হাতটা জড়িয়ে ধরে) ও আমার হাজব্যান্ড |
কথাটা শুনে সৌমিত্র আরোই শকড হয়ে গেলো |
সৌমিত্র : কি ???!!! আমি মানে.......
ডক্টর : সৌমিত্র !! আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই |
সৌমিত্র : হ্যাঁ, কিন্তু........
ডক্টর : প্লিজ, সৌমিত্র এটা খুব আর্জেন্ট |
*************************
সৌমিত্র : আংকেল, এটা ইম্পসিবল |
রজত : সৌমিত্র, প্লিজ অন্তত আমাদের জন্য তুমি এটা করো |
সৌমিত্র : আমি বুঝতে পারছি তোমাদের কাছে ওর গুরুত্ব কতটা, কিন্তু আংকেল একটু বোঝার চেষ্টা করো, এতে কতটা পরিমাণ রিস্ক আছে !!! যখন ওর সব স্মৃতি ফিরে আসবে তখন এটার ব্যাপারে সবকিছু জানতে পারবে, কিভাবে আমি ওর হাজব্যান্ডের অ্যাক্টিং করবো ??!!!
রজত : সৌমিত্র, আমার তোমার ওপর পুরো ভরসা আছে | আমি নিশ্চিত যে তুমি এমন কিছু করবে না, যেটাতে আমাদের দুটো পরিবারের মান সম্মান সব নষ্ট হবে |
সৌমিত্র : আংকেল, এটা ওই রকম কোনো ব্যাপার নয় | আমি বলতে চাইছি যে......
রজত : প্লিজ সৌমিত্র..... আমি হাত জোড় করছি..... আমার মেয়েটাকে বাঁচাও |
সৌমিত্র : আংকেল !! আংকেল প্লিজ শান্ত হও | আমার পক্ষে যতটা সম্ভব আমি করবো | কিন্তু একসাথে সব সময় থাকা, আমাকে ওর হাজব্যান্ড মনে করা, আর তুমি বুঝতেই পারছো আমি কি বলতে চাইছি...... ও যদি......
রজত : আমি তোমাকে ভালো করে চিনি সৌমিত্র, তুমি খুব ভালো করে ওর খেয়াল রাখবে |
সৌমিত্রকে রাজি হতেই হলো | যতই হোক আশা আন্টি আর রজত আংকেল কে ওর বাবার বন্ধু হওয়ার জন্য খুব রেসপেক্ট করে এবং ভালোবাসে |
সৌমিত্র : ওকে আংকেল | শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি এটা করবো | কিন্তু যদি কোনো কিছু হাতের বাইরে চলে যায়, আমার কন্ট্রোলের বাইরে চলে যায় !!!!
রজত : আমি যেতে দেবো না |