09-05-2020, 02:06 PM
(This post was last modified: 09-05-2020, 03:37 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[৫৬]
পারমিতা আগে কখনো কলকাতায় যায় নি। কলেজে ভর্তি হতে অনির্বানকে সঙ্গে নিয়ে গেল।সত্য মিথ্যে মিলিয়ে কত কথা শুনেছে কলকাতাকে নিয়ে সেই কলকাতাকে দেখবে স্বচক্ষে ভেবে রোমাঞ্চিত হয় পারমিতা।অনির্বান কলকাতায় পড়াশুনা করেছে।কোথায় কলেজ কিভাবে যেতে হয় সব তার জানা।মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে নীলদাকে জানানো হয়নি। সুচিদিরা মঙ্গল-বুধবার নাগাদ আসবে।তার আগেই ফিরে আসতে পারবে।অনু বলছিল জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।পাকাপাকি ভাবে তখন থাকতে হবে কলকাতায়।
ব্রেক ফাষ্ট সেরে সুচিস্মিতা বাথরুমে গেল।নীলাভ সেন খবর কাগজে চোখ বোলাচ্ছেন।ভাল করে সাবান ঘষে সারা শরীরে,নীলু কখন কোথায় চুমু খায় তার ঠিক নেই।প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাবান ঘষে ঘষে পরিস্কার করে।স্তনে সাবান ডলতে ডলতে হাসি পেল।দুধ চুষতে কি যে ভালবাসে বেচারি।নিজেকে তখন কেমন মা-মা বলে মনে হয়।মনে হল কে যেন এল?বাথরুম থেকে শুনতে পেল নীলুর গলা।
--আরে? আসুন মি.সহায়।
সস্ত্রীক ডিএম সাহেব হাসতে হাসতে ঢুকলেন।আলাপ করিয়ে দিলেন,আমার ওয়াইফ মীনাক্ষী।ম্যাডাম কি বেরিয়েছেন?
--না না।বসুন,এখুনি আসছে।
নমস্কার প্রতি নমস্কারের পর ওরা বসলেন।
--আমার ওয়াইফ বাঙালি আছেন।
সদ্যস্নাত সুচিস্মিতা প্রবেশ করে বলে,আলাপ করাতে হবে না।আমি সুচিস্মিতা,বাথরুম থেকে সব শুনেছি।
মীনাক্ষী হেসে জিজ্ঞেস করেন,এত সকাল সকাল স্নান করলেন,কোথাও বেরোবেন?
--দেরী আছে।আসুন আমরা ওঘরে গিয়ে বসি।সুচি বলে।
ওরা পাশের ঘরে গেলে মি.সহায় মুখ তুলে নীলুর দিকে তাকিয়ে বলেন,মি.সেন প্রসাদজীর কাছে শুনলাম আপনি নিজে বিল পেমেণ্ট করবেন?
--সেটাই তো উচিত।আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে এসেছি।
কাধ ঝাকিয়ে মি সহায় বলেন,আমরা এক ব্যাচের আপনি আমার বন্ধুলোক।কিছু মনে করবেন না,একটা কথা বলি।
নীলু কৌতুহলি দৃষ্টিতে সহায়ের দিকে তাকালেন।সহায় বলতে থাকেন,আপনার জেলার কিছু কিছু খবর আমার কাছে আসে।
--সে তো মালদহের কথাও আমি কিছু কিছু জানি না তা নয়।
--দেখুন মি.সেন বন্ধু হিসেবে একটা কথা বলছি,একটু adjust করে চলুন।
নীলাভ সেন মাথা নীচু করে কি ভাবলেন।মি. সহায়ের কানে হয়তো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিরোধের কথা এসে থাকবে।
--দেখুন সহায় আপনি আমার বন্ধু,একটা কথা আপনাকে বলি,adjustment আর compromise শব্দদুটো আলাদা অর্থ বহন করে।আমার স্যার বলতেন--।
--প্লীজ..আপনার স্যারের কথা আপনার কাছে আগে অনেক শুনেছি।আচ্ছা বলুন তো আপনার স্যার তাকে আমি শ্রদ্ধা করি,তিনি সারা জীবনে কি পেলেন?
--স্যার বলতেন,ফুলের গন্ধ দেখা যায় না,অনুভবে বোঝা যায় উপলব্ধি করতে হয়।
--এসব দার্শনিক কথা আমি বুঝবো না।
--আমি সব বুঝেছি তা নয় কিন্তু ভাল লাগতো।মি.সহায় আপনি স্বামীজীর কথা শুনেছেন?
--হি ইজ এ্যা গ্রেট ম্যান।
--ওর নাম ছিল নরেন।বাবা মারা যাবার পর খুব অভাবে পড়লেন। তার গুরু রামকৃষ্ণদেবের কাছে গিয়ে বললেন,গুরুজি আপনি মাকে বলে আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিন। গুরুজি বললেন,তোমার কথা তুমি নিজে মাকে বলো।তারপর ঠাকুর ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।কিছুক্ষন পর নরেন বেরিয়ে এলেন।গুরুজি বললেন,কি রে চাকরি চেয়েছিস? স্বামীজি কি বললেন জানেন?
--এইটা আমার জানা নাই।সহায় উত্তর দিলেন।
নীলাভ সেন হেসে বললেন,স্বামীজি বললেন,মায়ের কাছে গিয়ে তুচ্ছ চাকরি চাইতে নিজেকে খুব ছোটো মনে হল।সুযোগ যখন পেয়েছি আরো বড় কিছু চাইতে হবে।
--কি চাইলেন?
--চাইলেন জ্ঞান দাও ভক্তি দাও বিবেক দাও।মি সহায় কোনটা কার কাছে বড় পাওয়া তার বিচার করার অধিকার কি আমাদের আছে?
মীনাক্ষী কথা বলতে বলতে কান খাড়া করে পাশের ঘরের কথা শুনছিলেন।সুচিকে জিজ্ঞেস করেন,মি সেনকে মনে হয় খুব এ্যারোগেণ্ট টাইপ আপনার এ্যাডজাষ্ট করতে অসুবিধে হয় না?
--না না ও খুব সহজ সরল লাভিং টাইপ।
মীনাক্ষী হা করে চেয়ে থাকেন।দুনিয়ায় সহজভাবে চলা সহজ করে বলা কত কঠিন ব্যাপার মীনাক্ষীর ত জানার কথা নয়। সুচিস্মিতা বলে,আমরা খুব সুখে আছি।
মীনাক্ষীর কথাটা খুব ভাল লাগে না। তার স্বামী মনু দু-হাতে রোজগার করে সংসারে তার কোনো অভাব নেই তবু সব সময় কিসের এক হাহাকার ঘিরে আছে সারাক্ষন।প্রাণহীন শুষ্ক খাতির সম্মানের একঘেয়ে ঘেরাটোপে হাপ ধরে যায়।
মি সহায় বলেন,আমাদের কাজের ক্ষেত্রের সীমা-পরিসীমা নেই।রাতে শুয়ে আছি ফোন বেজে উঠল।জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ কিইনা করতে হয়।কদিন আগে এখানে একটা ঝামেলা থানা থেকে একেবারে ডিএম অফিসে এসে পড়ল।শাসক দলের এক নেতার ভাই-পোর বিরুদ্ধে অভিযোগ সে নাকি একটী আদিবাসী মেয়েকে ;., করেছে।সত্যি মিথ্যে জানিনা--যদি সত্যিও হয়,ঠিক আছে একটা মিটমাট করে নিলেই হয়।তা না রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে তিল সে তাল বানা দিয়া।ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করার পর বিক্ষোভ থামে।তারপর দিনই ছেলেটির জামীন হয়ে যায়।আদিবাসী মেয়েটির তাতে ক্ষতি পুরণ হল? আমি কোন দিকে যাবো বলুন?পাব্লিক আমাকে ভুল বুঝলো।এই সব মেয়েরা যেন প্রথম ধর্ষিতা হল?
নীলাভ সেন বলেন,আপনার কাজের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।এরকম ঘটনা যখন আমাদের সামনে আসে আমাদের মনে দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা সংস্কার দিয়ে বিচার করি। একটি নারী লাঞ্ছিতা হয়েছেন না ভেবে আমরা দেখি একটি আদিবাসী মেয়ে লাঞ্ছিতা হয়েছে।কে অপরাধী সমাজের কোন স্তরের মানুষ সে?এই সব বিষয় এসে আমাদের দেখাকে ভাবাকে প্রভাবিত করে।ফলে যা হবার তাই হয়।নীচু তলার মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে ভাবি না,মনে করি এই লাঞ্ছনাপীড়িত জীবন তাদের স্বাভাবিক জীবন।
মি সহায় গুম হয়ে কিছুক্ষন ভাবলেন তারপর উঠে দাড়িয়ে বললেন,আসি।উইশ ইউ অল দা বেষ্ট।করমর্দন করে বিদায় নিলেন।
নীলু গাড়ীর কথা বললেও রাজি হয়না, রিক্সায় উঠে সুচিস্মিতা রওনা হল কলেজের উদ্দেশ্যে,ভেবেছিল শেষদিন একটু তাড়াতাড়ি যাবে।কলেজে পৌছে দেখল,কলেজের তিনতলার ছাদ হয়ে গেছে।এখন ইটের গাথনি হচ্ছে।কলেজের মাঠে বড়দি আর সুখেনবাবু দাঁড়িয়ে কি সব কথা বলছেন।ছুটির মধ্যে প্রতিদিন কলেজে আসতেন সুখেনবাবু,কলেজের কাজ তদারক করার জন্য।
সুচিকে দেখে সুখেন বাবু বললেন,ছুটি কেমন কাটলো?
--ভাল।কলেজ তিন তলা হয়ে গেল?
--ডিএম গ্রাণ্টের সব ব্যবস্থা করে গেলেও কতবার গিয়ে তদবির করতে হয়েছে,বড়দি জানেন।
সুপর্ণা মিত্র সায় দিলেন।
সুচিস্মিতা ভাবছে কি ভাবে কথাটা বলবে?ঘণ্টা পড়ে গেল,ফার্ষ্ট পিরিয়ডে ক্লাস আছে সুচিস্মিতার।
--স্যার আমি ক্লাসে যাচ্ছি,আপনি কিছুক্ষন আছেন তো?আপনার সঙ্গে দরকার আছে।
সুখেনবাব বিগলিতভাবে বলেন,আমার সঙ্গে?ঠিক আছে আসুন আমি আছি।
বড়দি মুচকি হাসলেন।সুচি এ্যাটেন্ড্যাণ্ট রেজিষ্টার নিয়ে ক্লাসে চলে গেল।সুখেনবাবু সেদিকে তাকিয়ে বলেন,বড়দি মিস বোসকে একটূ অন্য রকম লাগছে না?
সুপর্ণা মিত্র হেসে বললেন,সুখেন বাবু আপনি খেয়াল করেন নি, ওর সিথিতে সিদুরের রেখা।এখন আর মিস নেই।
--তাহলে মনে হয় সেই সংবাদ দেবার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন।
কলেজের আজ প্রথমদিন,এক পিরিয়ড পর ছুটির ঘণ্টা বেজে গেল।মেয়েরা হৈ-হৈ করে বাড়ী মুখো ছুটলো।দিদিমণিরা সবাই টিচারস রুমে জড়ো হল।সবাই সুচিস্মিতাকে দেখে মুচকি হাসি বিনিময় করে।সুখেন বাবু ঢুকে বললেন, কনগ্রাচুলেশন।মিসেস--?
সুচিস্মিতা লাজুক হেসে বলে,সেন।
--আমাদের ফাকি দেওয়া চলবে না।সবাই একযোগে বলে।
অনসুয়া বলে,সুচিদি একটা গান দিয়ে সেলিব্রেট করো।ফাংশনের ব্যস্ততায় ভাল করে শুনতে পারিনি।
সুচিস্মিতা মাথা নীচু করে বসে থাকে।সুখেনবাবু বলেন,হ্যা মিসেস সেন একটা গান হোক।
সুচিস্মিতা মুখ তুলে সবার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হাসে।তারপর শুরু করে,পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহ ভাই/সবারে আমি প্রণাম করে যাই...।
টিচারস রুমের পরিবেশ থমথমে।গান থামলে সুপর্ণা মিত্র বলেন, সুচিস্মিতা একী গান গাইলে?
--হ্যা বড়দি আমাকে চলে যেতে হবে।ব্যাগ থেকে পদত্যাগ পত্র বের করে সুখেন বাবুর দিকে এগিয়ে দিল।
কারো মুখে কোনো কথা নেই,ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই স্তব্ধ।সুপর্ণা মিত্র বললেন,খুব খারাপ লাগছে ছুটির পর এরকম একটা সংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ইচ্ছে না থাকলেও আমাদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।সুচিস্মিতা খুব অল্পদিনে ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।আমাদেরও হৃদ্য সম্পর্কের বাধনে বেধেছিলেন।
--আমিও এই সংবাদ কিভাবে জানাবো ভেবে কাল সারারাত ভাল করে ঘুমোতে পারিনি।আপনাদের কথা কোনোদিন আমি ভুলবো না।আর আপনাদের আমি ফাকি দিতে চাইনা,যদি অনুগ্রহ করে সন্ধ্যেবেলা উত্তরবঙ্গ লজে পায়ের ধুলো দেন আমি খুশি হবো।স্যার আপনিও আসুন,আপনার স্নেহের কথাও আমি ভুলবো না।
সুচিস্মিতা পিয়ন দারোয়ানকেও আলাদা করে বলল।
--হ্যা হ্যা আমরা যাবো তবে সন্ধ্যে বেলা নয় একটূ বেলা করে যাবো।
হোটেলে ফিরে কথাটা জানাতে নীলুও খুব খুশি হল।ইস তুমি আগে বললে মি.সহায়কেও সস্ত্রীক বলা যেত।খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের ফুলশয্যা কি বলো?
--তোমার খালি এক চিন্তা,হ্যাংলা কোথাকার।
উত্তরবঙ্গ লজের ডাইনিং হল যত্ন করে সাজালেন প্রসাদজী।পয়ত্রিশ জনের মত অতিথি আসতে পারেন শুনে নিয়েছেন প্রসাদজি।কিছু অতিরিক্ত চেয়ার দিতে হল।
বিছানায় আধশোয়া হয়ে চা খেতে খেতে বই পড়ছেন নীলাভ সেন।সুচি চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তার লোকজন দেখছে।কিভাবে কি হয়ে গেল সব।এত তাড়াতাড়ি কলেজ ছেড়ে দিতে হবে ছুটিতে যখন ফিরছিল মনেও হয়নি। নজরে পড়ল সুখেনবাবু রিক্সা থেকে নামছেন।
--এই তুমি রেডি হয়ে নেও,সুখেনবাবু এসে গেছেন।
--সেকি সবে তো সন্ধ্যে হল।এ ঘরেই নিয়ে এসো।
সুচি দ্রুত নীচে নেমে গেল।সুখেন বাবু পায়জামা পাঞ্জাবী পরে এসেছেন।সুচি এগিয়ে গিয়ে বলে,আসুন স্যার।
--উপরে উঠতে হবে?
--হ্যা স্যার দোতলায়।
সুখেনবাবু সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করেন,মনে হচ্ছে আমি প্রথম?
সিড়ির মুখে নীলাভ সেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুখেন বাবু জিজ্ঞেস করেন,স্যার আপনি?আমাকে চিনতে পারছেন?মিসেস সেন আপনার ডিএম সাহেবের কথা মনে আছে?
সুচি লাজুক হেসে বলে,ওকে আমি কি করে ভুলবো?
বিষয়টা বুঝতে পেরে লজ্জা পেলেন সুখেন বাবু।নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,স্যার আপনি কলেজকে গ্রাণ্ট মঞ্জুর করে গেছেন,বিনিময়ে কলেজও আপনাকে কম দেয়নি।
ঘরে ঢুকে একটা সোফায় বসলেন সুখেন বাবু।নীলাভ সেন বলেন,কলেজকে টাকা দিয়েছে সরকার আর সুচি আমার বহুকালের বরং বলতে পারেন আমি আমার জিনিস ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।
--কামনা করি আপনাদের জীবন সুখের হোক।সুখেন বাবু বললেন।
দিদিমণিরা একে একে আসতে শুরু করেন।সবার হাতেই রজনী গন্ধার তোড়া।সবাই এখন ডায়েনিং হলে। যেহেতু সুচির স্বামী, সেজন্য নীলাভ সেনের সঙ্গে আগের দুরত্ব নেই,হাসি-ঠাট্টাতে মেতে উঠল সবাই।একসময় সুপর্ণা মিত্র কাছে এসে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করেন,আপনাদের কি প্রেমের বিয়ে?
--বলতে পারেন।
সুপর্ণা মিত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করেন,কিছু মনে করবে না একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি। আপনি কি দেখে আকর্ষিত হয়েছেন?
নীলাভ সেন আপাদ মস্তক দেখলেন বড়দিকে,প্রায় পঞ্চাশ ছুই-ছুই বয়স।দেখুন মিসেস মিত্র সত্যি কথা বলতে কি আমি সেভাবে কিছুই দেখিনি একসঙ্গে পড়তাম বলে কাছাকাছি আসা।সব সময় কাছে কাছে থাকতে আমার ভাল লাগতো।আমার পক্ষে বললে ভাল লাগতো আবার বিপক্ষে বললেও ভাল লাগতো।মোদ্দা কথা ও আমাকে নিয়ে ভাবছে আমাকে নিয়ে বলছে এটাই আমাকে আনন্দ দিত।
সুপর্ণা মিত্র বললেন,আপনি সুন্দর কথা বলেন।
এক সময় অনসুয়া কাছে এসে নীচু গলায় বলল,যাক তুমি তাহলে বিয়ে করলে?
অনসুয়া হোস্টেলে তার রুমমেট ছিল।সুচি বলল,তোমার দেখাশুনা চলছিল কি হল?
--আমাকে পছন্দ করলেও টিচারদের বেতনের স্কেল পছন্দ হয়নি।
সুচি ভাবে ভালো লাগা মন্দ লাগা নয় লাভ লোকসানের হিসেবটাই বড়কথা।
ভোজন পর্ব মিটে অতিথি বিদায় নিতে নিতে রাত দশটা বেজে গেল।রজনী গন্ধা ফুল সব নিজের ঘরে নিয়ে বিছানায় ছড়িয়ে দিলেন নীলাভ সেন।সুচি অবাক হয়ে বলে,একী পাগলামী হচ্ছে?
--আজ আমাদের ফুলশয্যা।
--না না এগুলো সরাও,কাপড়ে দাগ লেগে যাবে।
--কাপড় না পরলেই হল।
--খুব অসভ্য হয়ে যাচ্ছো তুমি।
নীলু দরজা বন্ধ করে সুচির কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করলো।নীলুর শক্তির সঙ্গে এটে উঠতে না পেরে সুচি একটা স্তনের বোটা মুখে পুরে দিতে নীলু শান্ত হয়ে গেল।সুচি পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবে অনিমেশোর মত নীলুর করার জন্য অতটা ব্যগ্রতা নেই কেবল ছুয়ে থাকতে পারলেই আনন্দ।নীচু হয়ে গালে চুমু খেল।
পারমিতা আগে কখনো কলকাতায় যায় নি। কলেজে ভর্তি হতে অনির্বানকে সঙ্গে নিয়ে গেল।সত্য মিথ্যে মিলিয়ে কত কথা শুনেছে কলকাতাকে নিয়ে সেই কলকাতাকে দেখবে স্বচক্ষে ভেবে রোমাঞ্চিত হয় পারমিতা।অনির্বান কলকাতায় পড়াশুনা করেছে।কোথায় কলেজ কিভাবে যেতে হয় সব তার জানা।মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে নীলদাকে জানানো হয়নি। সুচিদিরা মঙ্গল-বুধবার নাগাদ আসবে।তার আগেই ফিরে আসতে পারবে।অনু বলছিল জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।পাকাপাকি ভাবে তখন থাকতে হবে কলকাতায়।
ব্রেক ফাষ্ট সেরে সুচিস্মিতা বাথরুমে গেল।নীলাভ সেন খবর কাগজে চোখ বোলাচ্ছেন।ভাল করে সাবান ঘষে সারা শরীরে,নীলু কখন কোথায় চুমু খায় তার ঠিক নেই।প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাবান ঘষে ঘষে পরিস্কার করে।স্তনে সাবান ডলতে ডলতে হাসি পেল।দুধ চুষতে কি যে ভালবাসে বেচারি।নিজেকে তখন কেমন মা-মা বলে মনে হয়।মনে হল কে যেন এল?বাথরুম থেকে শুনতে পেল নীলুর গলা।
--আরে? আসুন মি.সহায়।
সস্ত্রীক ডিএম সাহেব হাসতে হাসতে ঢুকলেন।আলাপ করিয়ে দিলেন,আমার ওয়াইফ মীনাক্ষী।ম্যাডাম কি বেরিয়েছেন?
--না না।বসুন,এখুনি আসছে।
নমস্কার প্রতি নমস্কারের পর ওরা বসলেন।
--আমার ওয়াইফ বাঙালি আছেন।
সদ্যস্নাত সুচিস্মিতা প্রবেশ করে বলে,আলাপ করাতে হবে না।আমি সুচিস্মিতা,বাথরুম থেকে সব শুনেছি।
মীনাক্ষী হেসে জিজ্ঞেস করেন,এত সকাল সকাল স্নান করলেন,কোথাও বেরোবেন?
--দেরী আছে।আসুন আমরা ওঘরে গিয়ে বসি।সুচি বলে।
ওরা পাশের ঘরে গেলে মি.সহায় মুখ তুলে নীলুর দিকে তাকিয়ে বলেন,মি.সেন প্রসাদজীর কাছে শুনলাম আপনি নিজে বিল পেমেণ্ট করবেন?
--সেটাই তো উচিত।আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে এসেছি।
কাধ ঝাকিয়ে মি সহায় বলেন,আমরা এক ব্যাচের আপনি আমার বন্ধুলোক।কিছু মনে করবেন না,একটা কথা বলি।
নীলু কৌতুহলি দৃষ্টিতে সহায়ের দিকে তাকালেন।সহায় বলতে থাকেন,আপনার জেলার কিছু কিছু খবর আমার কাছে আসে।
--সে তো মালদহের কথাও আমি কিছু কিছু জানি না তা নয়।
--দেখুন মি.সেন বন্ধু হিসেবে একটা কথা বলছি,একটু adjust করে চলুন।
নীলাভ সেন মাথা নীচু করে কি ভাবলেন।মি. সহায়ের কানে হয়তো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিরোধের কথা এসে থাকবে।
--দেখুন সহায় আপনি আমার বন্ধু,একটা কথা আপনাকে বলি,adjustment আর compromise শব্দদুটো আলাদা অর্থ বহন করে।আমার স্যার বলতেন--।
--প্লীজ..আপনার স্যারের কথা আপনার কাছে আগে অনেক শুনেছি।আচ্ছা বলুন তো আপনার স্যার তাকে আমি শ্রদ্ধা করি,তিনি সারা জীবনে কি পেলেন?
--স্যার বলতেন,ফুলের গন্ধ দেখা যায় না,অনুভবে বোঝা যায় উপলব্ধি করতে হয়।
--এসব দার্শনিক কথা আমি বুঝবো না।
--আমি সব বুঝেছি তা নয় কিন্তু ভাল লাগতো।মি.সহায় আপনি স্বামীজীর কথা শুনেছেন?
--হি ইজ এ্যা গ্রেট ম্যান।
--ওর নাম ছিল নরেন।বাবা মারা যাবার পর খুব অভাবে পড়লেন। তার গুরু রামকৃষ্ণদেবের কাছে গিয়ে বললেন,গুরুজি আপনি মাকে বলে আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিন। গুরুজি বললেন,তোমার কথা তুমি নিজে মাকে বলো।তারপর ঠাকুর ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।কিছুক্ষন পর নরেন বেরিয়ে এলেন।গুরুজি বললেন,কি রে চাকরি চেয়েছিস? স্বামীজি কি বললেন জানেন?
--এইটা আমার জানা নাই।সহায় উত্তর দিলেন।
নীলাভ সেন হেসে বললেন,স্বামীজি বললেন,মায়ের কাছে গিয়ে তুচ্ছ চাকরি চাইতে নিজেকে খুব ছোটো মনে হল।সুযোগ যখন পেয়েছি আরো বড় কিছু চাইতে হবে।
--কি চাইলেন?
--চাইলেন জ্ঞান দাও ভক্তি দাও বিবেক দাও।মি সহায় কোনটা কার কাছে বড় পাওয়া তার বিচার করার অধিকার কি আমাদের আছে?
মীনাক্ষী কথা বলতে বলতে কান খাড়া করে পাশের ঘরের কথা শুনছিলেন।সুচিকে জিজ্ঞেস করেন,মি সেনকে মনে হয় খুব এ্যারোগেণ্ট টাইপ আপনার এ্যাডজাষ্ট করতে অসুবিধে হয় না?
--না না ও খুব সহজ সরল লাভিং টাইপ।
মীনাক্ষী হা করে চেয়ে থাকেন।দুনিয়ায় সহজভাবে চলা সহজ করে বলা কত কঠিন ব্যাপার মীনাক্ষীর ত জানার কথা নয়। সুচিস্মিতা বলে,আমরা খুব সুখে আছি।
মীনাক্ষীর কথাটা খুব ভাল লাগে না। তার স্বামী মনু দু-হাতে রোজগার করে সংসারে তার কোনো অভাব নেই তবু সব সময় কিসের এক হাহাকার ঘিরে আছে সারাক্ষন।প্রাণহীন শুষ্ক খাতির সম্মানের একঘেয়ে ঘেরাটোপে হাপ ধরে যায়।
মি সহায় বলেন,আমাদের কাজের ক্ষেত্রের সীমা-পরিসীমা নেই।রাতে শুয়ে আছি ফোন বেজে উঠল।জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ কিইনা করতে হয়।কদিন আগে এখানে একটা ঝামেলা থানা থেকে একেবারে ডিএম অফিসে এসে পড়ল।শাসক দলের এক নেতার ভাই-পোর বিরুদ্ধে অভিযোগ সে নাকি একটী আদিবাসী মেয়েকে ;., করেছে।সত্যি মিথ্যে জানিনা--যদি সত্যিও হয়,ঠিক আছে একটা মিটমাট করে নিলেই হয়।তা না রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে তিল সে তাল বানা দিয়া।ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করার পর বিক্ষোভ থামে।তারপর দিনই ছেলেটির জামীন হয়ে যায়।আদিবাসী মেয়েটির তাতে ক্ষতি পুরণ হল? আমি কোন দিকে যাবো বলুন?পাব্লিক আমাকে ভুল বুঝলো।এই সব মেয়েরা যেন প্রথম ধর্ষিতা হল?
নীলাভ সেন বলেন,আপনার কাজের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।এরকম ঘটনা যখন আমাদের সামনে আসে আমাদের মনে দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা সংস্কার দিয়ে বিচার করি। একটি নারী লাঞ্ছিতা হয়েছেন না ভেবে আমরা দেখি একটি আদিবাসী মেয়ে লাঞ্ছিতা হয়েছে।কে অপরাধী সমাজের কোন স্তরের মানুষ সে?এই সব বিষয় এসে আমাদের দেখাকে ভাবাকে প্রভাবিত করে।ফলে যা হবার তাই হয়।নীচু তলার মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে ভাবি না,মনে করি এই লাঞ্ছনাপীড়িত জীবন তাদের স্বাভাবিক জীবন।
মি সহায় গুম হয়ে কিছুক্ষন ভাবলেন তারপর উঠে দাড়িয়ে বললেন,আসি।উইশ ইউ অল দা বেষ্ট।করমর্দন করে বিদায় নিলেন।
নীলু গাড়ীর কথা বললেও রাজি হয়না, রিক্সায় উঠে সুচিস্মিতা রওনা হল কলেজের উদ্দেশ্যে,ভেবেছিল শেষদিন একটু তাড়াতাড়ি যাবে।কলেজে পৌছে দেখল,কলেজের তিনতলার ছাদ হয়ে গেছে।এখন ইটের গাথনি হচ্ছে।কলেজের মাঠে বড়দি আর সুখেনবাবু দাঁড়িয়ে কি সব কথা বলছেন।ছুটির মধ্যে প্রতিদিন কলেজে আসতেন সুখেনবাবু,কলেজের কাজ তদারক করার জন্য।
সুচিকে দেখে সুখেন বাবু বললেন,ছুটি কেমন কাটলো?
--ভাল।কলেজ তিন তলা হয়ে গেল?
--ডিএম গ্রাণ্টের সব ব্যবস্থা করে গেলেও কতবার গিয়ে তদবির করতে হয়েছে,বড়দি জানেন।
সুপর্ণা মিত্র সায় দিলেন।
সুচিস্মিতা ভাবছে কি ভাবে কথাটা বলবে?ঘণ্টা পড়ে গেল,ফার্ষ্ট পিরিয়ডে ক্লাস আছে সুচিস্মিতার।
--স্যার আমি ক্লাসে যাচ্ছি,আপনি কিছুক্ষন আছেন তো?আপনার সঙ্গে দরকার আছে।
সুখেনবাব বিগলিতভাবে বলেন,আমার সঙ্গে?ঠিক আছে আসুন আমি আছি।
বড়দি মুচকি হাসলেন।সুচি এ্যাটেন্ড্যাণ্ট রেজিষ্টার নিয়ে ক্লাসে চলে গেল।সুখেনবাবু সেদিকে তাকিয়ে বলেন,বড়দি মিস বোসকে একটূ অন্য রকম লাগছে না?
সুপর্ণা মিত্র হেসে বললেন,সুখেন বাবু আপনি খেয়াল করেন নি, ওর সিথিতে সিদুরের রেখা।এখন আর মিস নেই।
--তাহলে মনে হয় সেই সংবাদ দেবার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন।
কলেজের আজ প্রথমদিন,এক পিরিয়ড পর ছুটির ঘণ্টা বেজে গেল।মেয়েরা হৈ-হৈ করে বাড়ী মুখো ছুটলো।দিদিমণিরা সবাই টিচারস রুমে জড়ো হল।সবাই সুচিস্মিতাকে দেখে মুচকি হাসি বিনিময় করে।সুখেন বাবু ঢুকে বললেন, কনগ্রাচুলেশন।মিসেস--?
সুচিস্মিতা লাজুক হেসে বলে,সেন।
--আমাদের ফাকি দেওয়া চলবে না।সবাই একযোগে বলে।
অনসুয়া বলে,সুচিদি একটা গান দিয়ে সেলিব্রেট করো।ফাংশনের ব্যস্ততায় ভাল করে শুনতে পারিনি।
সুচিস্মিতা মাথা নীচু করে বসে থাকে।সুখেনবাবু বলেন,হ্যা মিসেস সেন একটা গান হোক।
সুচিস্মিতা মুখ তুলে সবার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হাসে।তারপর শুরু করে,পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহ ভাই/সবারে আমি প্রণাম করে যাই...।
টিচারস রুমের পরিবেশ থমথমে।গান থামলে সুপর্ণা মিত্র বলেন, সুচিস্মিতা একী গান গাইলে?
--হ্যা বড়দি আমাকে চলে যেতে হবে।ব্যাগ থেকে পদত্যাগ পত্র বের করে সুখেন বাবুর দিকে এগিয়ে দিল।
কারো মুখে কোনো কথা নেই,ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই স্তব্ধ।সুপর্ণা মিত্র বললেন,খুব খারাপ লাগছে ছুটির পর এরকম একটা সংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ইচ্ছে না থাকলেও আমাদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।সুচিস্মিতা খুব অল্পদিনে ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।আমাদেরও হৃদ্য সম্পর্কের বাধনে বেধেছিলেন।
--আমিও এই সংবাদ কিভাবে জানাবো ভেবে কাল সারারাত ভাল করে ঘুমোতে পারিনি।আপনাদের কথা কোনোদিন আমি ভুলবো না।আর আপনাদের আমি ফাকি দিতে চাইনা,যদি অনুগ্রহ করে সন্ধ্যেবেলা উত্তরবঙ্গ লজে পায়ের ধুলো দেন আমি খুশি হবো।স্যার আপনিও আসুন,আপনার স্নেহের কথাও আমি ভুলবো না।
সুচিস্মিতা পিয়ন দারোয়ানকেও আলাদা করে বলল।
--হ্যা হ্যা আমরা যাবো তবে সন্ধ্যে বেলা নয় একটূ বেলা করে যাবো।
হোটেলে ফিরে কথাটা জানাতে নীলুও খুব খুশি হল।ইস তুমি আগে বললে মি.সহায়কেও সস্ত্রীক বলা যেত।খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের ফুলশয্যা কি বলো?
--তোমার খালি এক চিন্তা,হ্যাংলা কোথাকার।
উত্তরবঙ্গ লজের ডাইনিং হল যত্ন করে সাজালেন প্রসাদজী।পয়ত্রিশ জনের মত অতিথি আসতে পারেন শুনে নিয়েছেন প্রসাদজি।কিছু অতিরিক্ত চেয়ার দিতে হল।
বিছানায় আধশোয়া হয়ে চা খেতে খেতে বই পড়ছেন নীলাভ সেন।সুচি চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তার লোকজন দেখছে।কিভাবে কি হয়ে গেল সব।এত তাড়াতাড়ি কলেজ ছেড়ে দিতে হবে ছুটিতে যখন ফিরছিল মনেও হয়নি। নজরে পড়ল সুখেনবাবু রিক্সা থেকে নামছেন।
--এই তুমি রেডি হয়ে নেও,সুখেনবাবু এসে গেছেন।
--সেকি সবে তো সন্ধ্যে হল।এ ঘরেই নিয়ে এসো।
সুচি দ্রুত নীচে নেমে গেল।সুখেন বাবু পায়জামা পাঞ্জাবী পরে এসেছেন।সুচি এগিয়ে গিয়ে বলে,আসুন স্যার।
--উপরে উঠতে হবে?
--হ্যা স্যার দোতলায়।
সুখেনবাবু সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করেন,মনে হচ্ছে আমি প্রথম?
সিড়ির মুখে নীলাভ সেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুখেন বাবু জিজ্ঞেস করেন,স্যার আপনি?আমাকে চিনতে পারছেন?মিসেস সেন আপনার ডিএম সাহেবের কথা মনে আছে?
সুচি লাজুক হেসে বলে,ওকে আমি কি করে ভুলবো?
বিষয়টা বুঝতে পেরে লজ্জা পেলেন সুখেন বাবু।নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,স্যার আপনি কলেজকে গ্রাণ্ট মঞ্জুর করে গেছেন,বিনিময়ে কলেজও আপনাকে কম দেয়নি।
ঘরে ঢুকে একটা সোফায় বসলেন সুখেন বাবু।নীলাভ সেন বলেন,কলেজকে টাকা দিয়েছে সরকার আর সুচি আমার বহুকালের বরং বলতে পারেন আমি আমার জিনিস ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।
--কামনা করি আপনাদের জীবন সুখের হোক।সুখেন বাবু বললেন।
দিদিমণিরা একে একে আসতে শুরু করেন।সবার হাতেই রজনী গন্ধার তোড়া।সবাই এখন ডায়েনিং হলে। যেহেতু সুচির স্বামী, সেজন্য নীলাভ সেনের সঙ্গে আগের দুরত্ব নেই,হাসি-ঠাট্টাতে মেতে উঠল সবাই।একসময় সুপর্ণা মিত্র কাছে এসে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করেন,আপনাদের কি প্রেমের বিয়ে?
--বলতে পারেন।
সুপর্ণা মিত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করেন,কিছু মনে করবে না একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি। আপনি কি দেখে আকর্ষিত হয়েছেন?
নীলাভ সেন আপাদ মস্তক দেখলেন বড়দিকে,প্রায় পঞ্চাশ ছুই-ছুই বয়স।দেখুন মিসেস মিত্র সত্যি কথা বলতে কি আমি সেভাবে কিছুই দেখিনি একসঙ্গে পড়তাম বলে কাছাকাছি আসা।সব সময় কাছে কাছে থাকতে আমার ভাল লাগতো।আমার পক্ষে বললে ভাল লাগতো আবার বিপক্ষে বললেও ভাল লাগতো।মোদ্দা কথা ও আমাকে নিয়ে ভাবছে আমাকে নিয়ে বলছে এটাই আমাকে আনন্দ দিত।
সুপর্ণা মিত্র বললেন,আপনি সুন্দর কথা বলেন।
এক সময় অনসুয়া কাছে এসে নীচু গলায় বলল,যাক তুমি তাহলে বিয়ে করলে?
অনসুয়া হোস্টেলে তার রুমমেট ছিল।সুচি বলল,তোমার দেখাশুনা চলছিল কি হল?
--আমাকে পছন্দ করলেও টিচারদের বেতনের স্কেল পছন্দ হয়নি।
সুচি ভাবে ভালো লাগা মন্দ লাগা নয় লাভ লোকসানের হিসেবটাই বড়কথা।
ভোজন পর্ব মিটে অতিথি বিদায় নিতে নিতে রাত দশটা বেজে গেল।রজনী গন্ধা ফুল সব নিজের ঘরে নিয়ে বিছানায় ছড়িয়ে দিলেন নীলাভ সেন।সুচি অবাক হয়ে বলে,একী পাগলামী হচ্ছে?
--আজ আমাদের ফুলশয্যা।
--না না এগুলো সরাও,কাপড়ে দাগ লেগে যাবে।
--কাপড় না পরলেই হল।
--খুব অসভ্য হয়ে যাচ্ছো তুমি।
নীলু দরজা বন্ধ করে সুচির কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করলো।নীলুর শক্তির সঙ্গে এটে উঠতে না পেরে সুচি একটা স্তনের বোটা মুখে পুরে দিতে নীলু শান্ত হয়ে গেল।সুচি পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবে অনিমেশোর মত নীলুর করার জন্য অতটা ব্যগ্রতা নেই কেবল ছুয়ে থাকতে পারলেই আনন্দ।নীচু হয়ে গালে চুমু খেল।