07-05-2020, 10:26 AM
(This post was last modified: 06-05-2021, 10:02 PM by kumdev. Edited 7 times in total. Edited 7 times in total.)
[৪৮]
ঘুম ভাঙ্গতে চমকে ওঠে সুচিস্মিতা,কোথায় শুয়ে সে?পাশে অঘোরে ঘুমোচ্ছে নীল।রাতের কথা মনে পড়তে লজ্জায় রক্তিম হয়।পাশে শায়িত নীলুকে ঘুমিয়ে কাদা। বলেছিল সারারাত ঘুমোবে না।বুকের উপর নীলুর হাত। সন্তর্পনে হাতটা সরিয়ে উঠে বসে সুচিস্মিতা। খাট থেকে নেমে শাড়ি পরে দেখলো নীলুকে।অসভ্য ঘেন্না-পিত্তি নেই ঐখানে কেউ মুখ দেয়।জিভ ছোয়াতে অনুভব করেছিল সারা শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ। লুঙ্গিটা উপরে তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কেমন নিরীহভাবে নেতিয়ে রয়েছে নীলুর পুরুষাঙ্গ।প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেছিল।আবার লুঙ্গিটা নামিয়ে দিল।পাঞ্চালিদি না বললেও একদিন না একদিন দেখতোই,বেশ করেছি উরুতে লিখেছি ভালবাসি তাই লিখেছি। ঘড়িতে দেখল আটটার দিকে ঘড়ির কাটা।লজ্জা পেয়ে যায় কি ভাবছে সব।নীলুকে ডাকবে কি না একবার ভাবে,তারপর কি মনে করে দরজা খুলে বাইরে আসতে সুরঞ্জনার সঙ্গে দেখা।
--তুই উঠেছিস?দেখ নীচে কে তোদের খোজ করছে।
এখন আবার কে এল?হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নীচে নেমে এল সুচিস্মিতা।কাছে গিয়ে চিনতে পারে,ধনেশ।তার সঙ্গে কলেজে পড়তো।কি চেহারা হয়েছে,একেবারে কোল বালিশ।পেটটা বিশাল জালার মত।ধনেশ উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,কি রে চিনতে পারছিস?
--ধনেশ তো?
--যাক চিনতে পেরেছিস তাহলে?আমি এখন কলেজের সেক্রেটারি।
--তোর বাবা কেমন আছেন? তুই হঠাৎ কি মনে করে?
--বাবা তো পার্টি নিয়েই আছে।শোন যে কথা বলতে এসেছিলাম,নীলু আমাদের অঞ্চলের গর্ব।আমাদের কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কলেজের পক্ষ থেকে নীলুকে সম্বর্ধনা দেবো।নীলু কোথায়?
পারমিতা চা নিয়ে এল।সুচি বলে নে চা খা।নীলু এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি।কিছু মনে করিস না,আমরা আজ চলে যাবো।আবার আসবো তখন না হয়--কি বলিস?
দপ করে নিভে গেল ধনেশ। খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম।আমার আরো আগে আসা উচিত ছিল।যা কাজের ঝামেলা।
একটা পুরানো কথা মনে পড়তে হাসি পেয়ে গেল।এই ধনেশ প্রেম পত্র লিখেছিল পাঞ্চালিদিকে।সবাইকে সেই চিঠি পড়ে শোনাতে ধনেশের কাদো-কাদো অবস্থা।পাঞ্চালিদি বলেছিল যার জন্য ছিপ ফেলেছে সে ধরা দেয়নি এরকম কি একটা কথা।কাকে আশা করেছিল? নীলুকে নয়তো? হতেও পারে,সেই জন্যেই বোধহয় তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো।আজ আর সুচিস্মিতার কোনো ক্ষোভ নেই।দোর্দণ্ড প্রতাপ ডিএম সাহেব কাল রাতে এমন করছিল,ভেবে মজা পেল।অবশ্য মনে যাই হোক নীলু ইচ্ছেকে দমন করতে পারে।
--হ্যারে ধনেশ তুই এমনি কি করিস?
--ছোটোখাটো একটা চাকরি করি ভাবছি ছেড়ে দেবো।
--অন্য কোথাও চাকরি পেয়েছিস?
--না পার্টির হোলটাইমার হবো।এমনিতে মাসের আধ্যেকদিন অফিস কামাই হয়ে যায়। তোর কণিকাম্যামের কথা মনে আছে?
--আমাদের ইংরাজি পড়াতেন?
--তাকে নিয়ে পার্টিতে খুব ক্ষোভ।বাবাই থামিয়ে রেখেছে।অদ্ভুত ব্যাপার--একদিন এই কেসি অপমান করেছিল বাবাকে।
--কণিকা ম্যাম কি করেছেন?
--সে অনেক নোংরা ব্যাপার আমি তোকে বলতে পারবো না।
পারমিতা বোর হচ্ছিল,উঠে দাঁড়িয়ে বলল,যাই নীলদা কি করছে দেখি।
--বলিস তো ধনেশ এসেছে।সুচিস্মিতা বলে।
ঘুম ভাঙ্গলেও নীলাভ সেন মটকা মেরে পড়েছিলেন বিছানায়।পারমিতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,আসতে পারি?
নীলাভ সেন ধড়ফড় করে উঠে বসে বলেন,এসো।
--সুপ্রভাত।পারমিতা বলে।
--ঘর আলোয় ভরে গেল।প্রভাতে এই মুখ দেখে খুব ভাল লাগলো।মনে হচ্ছে আজকের যাত্রা শুভ হবে।
--নীলদা তোমার মুখে এসব কথা শোভা পায় না।ধারণা ছিল তুমি সহজ কথা সহজভাবে বলতে ভালবাসো।এরকম বানিয়ে কথা বলা বিয়ের পর শুরু করলে নাকি?
--তোমার ধারণা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।কিন্তু এইমাত্র যা বলেছি সহজ বিশ্বাস থেকে বলেছি।
--ধন্যবাদ।আচ্ছা নীলদা তুমি কি সুচিদিকে ভয় পাও?
--কেন ভয় পাবো কেন?বড়লোকের আদুরে মেয়ে মনে করে তাদের ইচ্ছেতে দুনিয়া চলছে।
--তার মানে তুমি ভয় পাওনা?
--তুমি আমার বাংলোয় এস একদিন দেখবে আমার ভয়ে সব তটস্থ।
--বাড়ি ফিরে এখন তোমার বাংলো হবে আমার বেড়াবার জায়গা।
--তোমার জন্য অবারিত দ্বার।
--ও হ্যা,নীচে কে একজন ধনেশবাবু এসেছে।সুচিদি তোমাকে বলতে বলল।
--এক গামলা দুধে এক ফোটা কেরোসিন যথেষ্ট।বিরসভাবে বলেন নীল।
--ধনেশ কে গো?মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি?
--আমার সঙ্গে পড়তো।নানাভেবে হেনস্থা করার চেষ্টা করতো যদিও পাঞ্চালিদির জন্য সফল হয়নি।হেসে বলে,পাঞ্চালিদিকে খুব ভয় পেতো।
--সুচিদি বলেছে পাঞ্চালির কথা।কাল যে মহিলা তোমার সঙ্গে এসেছিল?
--সুচি কি বলেছে?
--খারাপ কথা কিছু নয়।বলছিল কলেজে পাঞ্চালি ছিল তোমার অভিভাবক।
--সুচি কারো সম্পর্কে খারাপ কথা বলেনা।ও সত্যিই পবিত্র।
--পবিত্র কিনা জানি না।সুচিদির মধ্যে দেখেছি অনমনীয় জিদ।বড়মাসীমণি কত বোঝালো কিন্তু সুচিদির এককথা বিয়ের কথা ভাবছে না।সুচিদির জন্যই এই বিয়ে সম্ভব হয়েছে।
--আমার অফিসে সুচি গিয়ে ফিরে এসেছে শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না। সবাইকে বলে দেবো তুমি always welcome.
নীল খালি গায়ে লুঙ্গি পরা,এভাবে আগে দেখেনি,দারুণ ফিগার।পারমিতা জিজ্ঞেস করে,নীলদা তুমি কি শরীর চর্চা করতে?
নীল ম্লান হাসে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।যেভাবে দিন কেটেছে কোনদিন এসব কথা মনে হয়নি,পারমিতাকে বলেন,আমরা খুব গরীব ছিলাম।নানা সমস্যায় চিন্তায় ছিলাম জর্জরিত সারাক্ষন,শরীর চর্চার কথা মনেও আসেনি।সুচি আমাকে নিয়মিত টিফিন যোগান দিত।ঐ আমার ভালমন্দ খাওয়া।
সুচিদির কাছে শুনেছে সারাদিন সারা পাড়া টো-টো করে ঘুরে বেড়াতো।মেয়েদের ব্যাপারে ছিল না আলাদা কোনো কৌতুহল।তবে মেয়েরা ওকে খুব পছন্দ করতো।পারু বলল,কিন্তু এখন একটু শরীর-চর্চা কোরো।বিয়ের পর বিশেষ একধরণের হরমোন নির্গত হয় তার ফলে মুটিয়ে যাবার সম্ভাবনা।
--তুমি তো ডাক্তারীতে এখনো চান্স পাওনি এতসব জানলে কোথা থেকে?
--আমি চান্স পাবো সিয়োর নাহলে ভাবছি এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ লাইনে যাবো।তুমি সাহায্য করবে না?
--তোমার জন্য আমি কি না পারি।
--ওঃ নীলদা আই লাভ ইউ--বলে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রাখে।
আচমকা সুচিস্মিতা ঢুকে বলে,তোকে যে বললাম নীলুকে খবর দিতে,এখানে এসে গল্পে মজে গেছিস?আর শোন কলেজে কিন্তু যাকে তাকে এরকম হাগ করবি না।
পারমিতা লজ্জা পেয়ে যায়।নীলু বলে,পারু এসে যখন বলল,সুপ্রভাত। সারা ঘর আলোয় ভোরে গেল।
--এরকম বললে বোনটি আমার ফুলে ফেটে যাবে।তুমি নীচে যাও অন্ধকার বসে আছে।
একটা জামা গায়ে চড়িয়ে নীলাভ সেন নীচে নেমে গেল।সুচি পারমিতাকে বলে,ওকে এককাপ চা দিয়ে আয়।আমি দেখি মা কি করছে।
নীচে নেমে নীল দেখল এক ভদ্রলোক মোটাসোটা মত ঘন ঘন উপর দিকে দেখছে।চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু নামটা মনে করতে পারছেনা।কাছে যেতেই লোকটি দাঁড়িয়ে হেসে বলে,কিরে নীলু চিনতে পারছিস?তোরা হুট করে বাড়ী বিক্রি করে কোথায় উধাও হলি।
নীলর এবার মনে পড়ে পারু বলছিল ধনেশের কথা।,মোটা হয়ে চেহারাটা বদলে গেছে।হেসে বলে,কি খবর?
--সুচির কাছে শুনলাম আজ চলে যাচ্ছিস।
--হ্যা অনেক কাজ পড়ে আছে,আর ওরও কলেজ খোলার সময় হয়ে এল।
--তুই সুচিকে বিয়ে করলি?আমাদের সময় কলেজে সুচিই ছিল বেষ্ট।কলেজ কেন আশপাস সারা অঞ্চলে সুচিকে আমার সেরা মনে হত।
--প্রেমে পড়েছিলি নাকি?
--হ্যা-হ্যা-হ্যা।এমন গম্ভীর ভাবে থকতো সব সময় তাছাড়া ওদের স্ট্যাটাস--সাহস হয়নি।তুমি ছুপা রুস্তম ঠিক ম্যানেজ করে নিয়েছো।হ্যা-হ্যা-হ্যা।
কি করে ম্যানেজ করেছে সেসব গল্প ধনেশকে করার ইচ্ছে হল না।জিজ্ঞেস করল,পাড়ার খবর বল,কেমন আছে সব?
ধনেশ একটু চুপ করে থেকে,উদাসভাবে বলে,ঐ চলে যাচ্ছে একরকম।পার্টিতে এখন লোকজন খুব আসতে চায় না।তোর কণিকা ম্যামের কথা মনে আছে?
কণিকাম্যাম আমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ দিয়েছিলেন।গোবর্ধনবাবুর খেচা দেখে নীলু জানতে পারে কি করে খেচতে হয়।
--মাইরি ভদ্রমহিলাকে নিয়ে পার্টিতে খুব আলোচনা।
--কেন উনি কি পার্টির বিরোধীতা করছেন?
--সেসব নয়--নানা নোংরামো সুচিকে বলতে পারিনি।বাচা-বাচ্চা ছেলেরা পড়তে যায় পড়া না পারলে শালা বয়স তো কম হয়নি এই বয়সে ধোন চেপে ধরে টানে--আরও নানা রকম, আমি সেক্রেটারি আমাকে গ্রাহ্যিই করে না,বাবার জন্য কিছু বলতেও পারিনা।ওনাকে বাবা কেন এত শ্রদ্ধা করে কে জানে।
নীলুর ভাল লাগছিল না।এসব কথা শুনলে মনে পড়ে নির্মল স্যারের কথা।বলতেন,"বুঝতে পারছি কিন্তু বাধা দিতে পারছি না।কেউ শুনবে না আমার কথা,সময়টাই এমন। অদ্ভুত নেশায় ছুটে চলেছে।"
--আমি এখন কলেজের সেক্রেটারি।
--খুব ভাল।দ্যাখ কলেজের যাতে আরও উন্নতি করা যায়।
--অবশ্যই।আজকাল আবার ফ্যাশন হয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম।সব ওদিকে ছুটছে।ওদের কে বোঝাবে মাতৃভাষা হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ। আসি রে?
--হ্যা ভালো লাগল তোর সঙ্গে দেখা হয়ে।
ঘরে ঢুকে দেখল দুই বোন বসে গল্প করছে।নীলুকে দেখে পারমিতা জিজ্ঞেস করে,কি গল্প হচ্ছিল নীচে? কিশোর কালের কথা?
নীলু মজা করে বলে,আমার বউকে দেখে সবাই জ্বলছে আর লুচির মত ফুলছে।
পারমিতা খিলখিল হেসে গড়িয়ে পড়ে।সুচিস্মিতা বলে,এই ছ্যাবলামিতে হাসির কি হল?
--আচ্ছা নীলদা তোমার খারাপ লাগে না যখন সবাই নজর দেয়?
--এতো পড়ে পাওয়া ধন নয় রীতিমত সাধনা করে পাওয়া,হারাবার ভয় পাই না।আড়চোখে সুচিকে দেখেন,লজ্জানত মুখ ভারী সুন্দর লাগছে।সুচি বলল,দাড়ি-টাড়ি কামিয়ে স্নান সেরে তৈরী হয়ে নেও।
--সুচি চা-টা ঠিক জমলো না।আর এককাপ চা হবে?
--দিচ্ছি একেবারে শ্বাশুড়ির ধাত পেয়েছে।সুচিস্মিতা চলে যেতে পারু বলে,মাসীমণির খুব চায়ের নেশা।অল্প অল্প করে অনেকবার চা চাই।
সুরঞ্জনা মুখভার করে বসে আছেন।সুচি বলল,মাম্মী এরকম করলে যাবো কি করে?আমি তো একেবারে যাচ্ছি না।
সুরঞ্জনা মুখ তুলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,ছেলেটা খুব শান্ত সভ্য ওকে দেখিস মা।
এর মধ্যেই ছেলেটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। সুচিস্মিতা ভাবে হ্যা খুব সভ্য কাল রাতে কোথায় কোথায় চুমু দিয়েছে সেতো তোমাকে বলা যাবে না।
ঘুম ভাঙ্গতে চমকে ওঠে সুচিস্মিতা,কোথায় শুয়ে সে?পাশে অঘোরে ঘুমোচ্ছে নীল।রাতের কথা মনে পড়তে লজ্জায় রক্তিম হয়।পাশে শায়িত নীলুকে ঘুমিয়ে কাদা। বলেছিল সারারাত ঘুমোবে না।বুকের উপর নীলুর হাত। সন্তর্পনে হাতটা সরিয়ে উঠে বসে সুচিস্মিতা। খাট থেকে নেমে শাড়ি পরে দেখলো নীলুকে।অসভ্য ঘেন্না-পিত্তি নেই ঐখানে কেউ মুখ দেয়।জিভ ছোয়াতে অনুভব করেছিল সারা শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ। লুঙ্গিটা উপরে তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কেমন নিরীহভাবে নেতিয়ে রয়েছে নীলুর পুরুষাঙ্গ।প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেছিল।আবার লুঙ্গিটা নামিয়ে দিল।পাঞ্চালিদি না বললেও একদিন না একদিন দেখতোই,বেশ করেছি উরুতে লিখেছি ভালবাসি তাই লিখেছি। ঘড়িতে দেখল আটটার দিকে ঘড়ির কাটা।লজ্জা পেয়ে যায় কি ভাবছে সব।নীলুকে ডাকবে কি না একবার ভাবে,তারপর কি মনে করে দরজা খুলে বাইরে আসতে সুরঞ্জনার সঙ্গে দেখা।
--তুই উঠেছিস?দেখ নীচে কে তোদের খোজ করছে।
এখন আবার কে এল?হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নীচে নেমে এল সুচিস্মিতা।কাছে গিয়ে চিনতে পারে,ধনেশ।তার সঙ্গে কলেজে পড়তো।কি চেহারা হয়েছে,একেবারে কোল বালিশ।পেটটা বিশাল জালার মত।ধনেশ উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,কি রে চিনতে পারছিস?
--ধনেশ তো?
--যাক চিনতে পেরেছিস তাহলে?আমি এখন কলেজের সেক্রেটারি।
--তোর বাবা কেমন আছেন? তুই হঠাৎ কি মনে করে?
--বাবা তো পার্টি নিয়েই আছে।শোন যে কথা বলতে এসেছিলাম,নীলু আমাদের অঞ্চলের গর্ব।আমাদের কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কলেজের পক্ষ থেকে নীলুকে সম্বর্ধনা দেবো।নীলু কোথায়?
পারমিতা চা নিয়ে এল।সুচি বলে নে চা খা।নীলু এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি।কিছু মনে করিস না,আমরা আজ চলে যাবো।আবার আসবো তখন না হয়--কি বলিস?
দপ করে নিভে গেল ধনেশ। খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম।আমার আরো আগে আসা উচিত ছিল।যা কাজের ঝামেলা।
একটা পুরানো কথা মনে পড়তে হাসি পেয়ে গেল।এই ধনেশ প্রেম পত্র লিখেছিল পাঞ্চালিদিকে।সবাইকে সেই চিঠি পড়ে শোনাতে ধনেশের কাদো-কাদো অবস্থা।পাঞ্চালিদি বলেছিল যার জন্য ছিপ ফেলেছে সে ধরা দেয়নি এরকম কি একটা কথা।কাকে আশা করেছিল? নীলুকে নয়তো? হতেও পারে,সেই জন্যেই বোধহয় তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো।আজ আর সুচিস্মিতার কোনো ক্ষোভ নেই।দোর্দণ্ড প্রতাপ ডিএম সাহেব কাল রাতে এমন করছিল,ভেবে মজা পেল।অবশ্য মনে যাই হোক নীলু ইচ্ছেকে দমন করতে পারে।
--হ্যারে ধনেশ তুই এমনি কি করিস?
--ছোটোখাটো একটা চাকরি করি ভাবছি ছেড়ে দেবো।
--অন্য কোথাও চাকরি পেয়েছিস?
--না পার্টির হোলটাইমার হবো।এমনিতে মাসের আধ্যেকদিন অফিস কামাই হয়ে যায়। তোর কণিকাম্যামের কথা মনে আছে?
--আমাদের ইংরাজি পড়াতেন?
--তাকে নিয়ে পার্টিতে খুব ক্ষোভ।বাবাই থামিয়ে রেখেছে।অদ্ভুত ব্যাপার--একদিন এই কেসি অপমান করেছিল বাবাকে।
--কণিকা ম্যাম কি করেছেন?
--সে অনেক নোংরা ব্যাপার আমি তোকে বলতে পারবো না।
পারমিতা বোর হচ্ছিল,উঠে দাঁড়িয়ে বলল,যাই নীলদা কি করছে দেখি।
--বলিস তো ধনেশ এসেছে।সুচিস্মিতা বলে।
ঘুম ভাঙ্গলেও নীলাভ সেন মটকা মেরে পড়েছিলেন বিছানায়।পারমিতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,আসতে পারি?
নীলাভ সেন ধড়ফড় করে উঠে বসে বলেন,এসো।
--সুপ্রভাত।পারমিতা বলে।
--ঘর আলোয় ভরে গেল।প্রভাতে এই মুখ দেখে খুব ভাল লাগলো।মনে হচ্ছে আজকের যাত্রা শুভ হবে।
--নীলদা তোমার মুখে এসব কথা শোভা পায় না।ধারণা ছিল তুমি সহজ কথা সহজভাবে বলতে ভালবাসো।এরকম বানিয়ে কথা বলা বিয়ের পর শুরু করলে নাকি?
--তোমার ধারণা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।কিন্তু এইমাত্র যা বলেছি সহজ বিশ্বাস থেকে বলেছি।
--ধন্যবাদ।আচ্ছা নীলদা তুমি কি সুচিদিকে ভয় পাও?
--কেন ভয় পাবো কেন?বড়লোকের আদুরে মেয়ে মনে করে তাদের ইচ্ছেতে দুনিয়া চলছে।
--তার মানে তুমি ভয় পাওনা?
--তুমি আমার বাংলোয় এস একদিন দেখবে আমার ভয়ে সব তটস্থ।
--বাড়ি ফিরে এখন তোমার বাংলো হবে আমার বেড়াবার জায়গা।
--তোমার জন্য অবারিত দ্বার।
--ও হ্যা,নীচে কে একজন ধনেশবাবু এসেছে।সুচিদি তোমাকে বলতে বলল।
--এক গামলা দুধে এক ফোটা কেরোসিন যথেষ্ট।বিরসভাবে বলেন নীল।
--ধনেশ কে গো?মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি?
--আমার সঙ্গে পড়তো।নানাভেবে হেনস্থা করার চেষ্টা করতো যদিও পাঞ্চালিদির জন্য সফল হয়নি।হেসে বলে,পাঞ্চালিদিকে খুব ভয় পেতো।
--সুচিদি বলেছে পাঞ্চালির কথা।কাল যে মহিলা তোমার সঙ্গে এসেছিল?
--সুচি কি বলেছে?
--খারাপ কথা কিছু নয়।বলছিল কলেজে পাঞ্চালি ছিল তোমার অভিভাবক।
--সুচি কারো সম্পর্কে খারাপ কথা বলেনা।ও সত্যিই পবিত্র।
--পবিত্র কিনা জানি না।সুচিদির মধ্যে দেখেছি অনমনীয় জিদ।বড়মাসীমণি কত বোঝালো কিন্তু সুচিদির এককথা বিয়ের কথা ভাবছে না।সুচিদির জন্যই এই বিয়ে সম্ভব হয়েছে।
--আমার অফিসে সুচি গিয়ে ফিরে এসেছে শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না। সবাইকে বলে দেবো তুমি always welcome.
নীল খালি গায়ে লুঙ্গি পরা,এভাবে আগে দেখেনি,দারুণ ফিগার।পারমিতা জিজ্ঞেস করে,নীলদা তুমি কি শরীর চর্চা করতে?
নীল ম্লান হাসে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।যেভাবে দিন কেটেছে কোনদিন এসব কথা মনে হয়নি,পারমিতাকে বলেন,আমরা খুব গরীব ছিলাম।নানা সমস্যায় চিন্তায় ছিলাম জর্জরিত সারাক্ষন,শরীর চর্চার কথা মনেও আসেনি।সুচি আমাকে নিয়মিত টিফিন যোগান দিত।ঐ আমার ভালমন্দ খাওয়া।
সুচিদির কাছে শুনেছে সারাদিন সারা পাড়া টো-টো করে ঘুরে বেড়াতো।মেয়েদের ব্যাপারে ছিল না আলাদা কোনো কৌতুহল।তবে মেয়েরা ওকে খুব পছন্দ করতো।পারু বলল,কিন্তু এখন একটু শরীর-চর্চা কোরো।বিয়ের পর বিশেষ একধরণের হরমোন নির্গত হয় তার ফলে মুটিয়ে যাবার সম্ভাবনা।
--তুমি তো ডাক্তারীতে এখনো চান্স পাওনি এতসব জানলে কোথা থেকে?
--আমি চান্স পাবো সিয়োর নাহলে ভাবছি এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ লাইনে যাবো।তুমি সাহায্য করবে না?
--তোমার জন্য আমি কি না পারি।
--ওঃ নীলদা আই লাভ ইউ--বলে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রাখে।
আচমকা সুচিস্মিতা ঢুকে বলে,তোকে যে বললাম নীলুকে খবর দিতে,এখানে এসে গল্পে মজে গেছিস?আর শোন কলেজে কিন্তু যাকে তাকে এরকম হাগ করবি না।
পারমিতা লজ্জা পেয়ে যায়।নীলু বলে,পারু এসে যখন বলল,সুপ্রভাত। সারা ঘর আলোয় ভোরে গেল।
--এরকম বললে বোনটি আমার ফুলে ফেটে যাবে।তুমি নীচে যাও অন্ধকার বসে আছে।
একটা জামা গায়ে চড়িয়ে নীলাভ সেন নীচে নেমে গেল।সুচি পারমিতাকে বলে,ওকে এককাপ চা দিয়ে আয়।আমি দেখি মা কি করছে।
নীচে নেমে নীল দেখল এক ভদ্রলোক মোটাসোটা মত ঘন ঘন উপর দিকে দেখছে।চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু নামটা মনে করতে পারছেনা।কাছে যেতেই লোকটি দাঁড়িয়ে হেসে বলে,কিরে নীলু চিনতে পারছিস?তোরা হুট করে বাড়ী বিক্রি করে কোথায় উধাও হলি।
নীলর এবার মনে পড়ে পারু বলছিল ধনেশের কথা।,মোটা হয়ে চেহারাটা বদলে গেছে।হেসে বলে,কি খবর?
--সুচির কাছে শুনলাম আজ চলে যাচ্ছিস।
--হ্যা অনেক কাজ পড়ে আছে,আর ওরও কলেজ খোলার সময় হয়ে এল।
--তুই সুচিকে বিয়ে করলি?আমাদের সময় কলেজে সুচিই ছিল বেষ্ট।কলেজ কেন আশপাস সারা অঞ্চলে সুচিকে আমার সেরা মনে হত।
--প্রেমে পড়েছিলি নাকি?
--হ্যা-হ্যা-হ্যা।এমন গম্ভীর ভাবে থকতো সব সময় তাছাড়া ওদের স্ট্যাটাস--সাহস হয়নি।তুমি ছুপা রুস্তম ঠিক ম্যানেজ করে নিয়েছো।হ্যা-হ্যা-হ্যা।
কি করে ম্যানেজ করেছে সেসব গল্প ধনেশকে করার ইচ্ছে হল না।জিজ্ঞেস করল,পাড়ার খবর বল,কেমন আছে সব?
ধনেশ একটু চুপ করে থেকে,উদাসভাবে বলে,ঐ চলে যাচ্ছে একরকম।পার্টিতে এখন লোকজন খুব আসতে চায় না।তোর কণিকা ম্যামের কথা মনে আছে?
কণিকাম্যাম আমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ দিয়েছিলেন।গোবর্ধনবাবুর খেচা দেখে নীলু জানতে পারে কি করে খেচতে হয়।
--মাইরি ভদ্রমহিলাকে নিয়ে পার্টিতে খুব আলোচনা।
--কেন উনি কি পার্টির বিরোধীতা করছেন?
--সেসব নয়--নানা নোংরামো সুচিকে বলতে পারিনি।বাচা-বাচ্চা ছেলেরা পড়তে যায় পড়া না পারলে শালা বয়স তো কম হয়নি এই বয়সে ধোন চেপে ধরে টানে--আরও নানা রকম, আমি সেক্রেটারি আমাকে গ্রাহ্যিই করে না,বাবার জন্য কিছু বলতেও পারিনা।ওনাকে বাবা কেন এত শ্রদ্ধা করে কে জানে।
নীলুর ভাল লাগছিল না।এসব কথা শুনলে মনে পড়ে নির্মল স্যারের কথা।বলতেন,"বুঝতে পারছি কিন্তু বাধা দিতে পারছি না।কেউ শুনবে না আমার কথা,সময়টাই এমন। অদ্ভুত নেশায় ছুটে চলেছে।"
--আমি এখন কলেজের সেক্রেটারি।
--খুব ভাল।দ্যাখ কলেজের যাতে আরও উন্নতি করা যায়।
--অবশ্যই।আজকাল আবার ফ্যাশন হয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম।সব ওদিকে ছুটছে।ওদের কে বোঝাবে মাতৃভাষা হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ। আসি রে?
--হ্যা ভালো লাগল তোর সঙ্গে দেখা হয়ে।
ঘরে ঢুকে দেখল দুই বোন বসে গল্প করছে।নীলুকে দেখে পারমিতা জিজ্ঞেস করে,কি গল্প হচ্ছিল নীচে? কিশোর কালের কথা?
নীলু মজা করে বলে,আমার বউকে দেখে সবাই জ্বলছে আর লুচির মত ফুলছে।
পারমিতা খিলখিল হেসে গড়িয়ে পড়ে।সুচিস্মিতা বলে,এই ছ্যাবলামিতে হাসির কি হল?
--আচ্ছা নীলদা তোমার খারাপ লাগে না যখন সবাই নজর দেয়?
--এতো পড়ে পাওয়া ধন নয় রীতিমত সাধনা করে পাওয়া,হারাবার ভয় পাই না।আড়চোখে সুচিকে দেখেন,লজ্জানত মুখ ভারী সুন্দর লাগছে।সুচি বলল,দাড়ি-টাড়ি কামিয়ে স্নান সেরে তৈরী হয়ে নেও।
--সুচি চা-টা ঠিক জমলো না।আর এককাপ চা হবে?
--দিচ্ছি একেবারে শ্বাশুড়ির ধাত পেয়েছে।সুচিস্মিতা চলে যেতে পারু বলে,মাসীমণির খুব চায়ের নেশা।অল্প অল্প করে অনেকবার চা চাই।
সুরঞ্জনা মুখভার করে বসে আছেন।সুচি বলল,মাম্মী এরকম করলে যাবো কি করে?আমি তো একেবারে যাচ্ছি না।
সুরঞ্জনা মুখ তুলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,ছেলেটা খুব শান্ত সভ্য ওকে দেখিস মা।
এর মধ্যেই ছেলেটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। সুচিস্মিতা ভাবে হ্যা খুব সভ্য কাল রাতে কোথায় কোথায় চুমু দিয়েছে সেতো তোমাকে বলা যাবে না।