07-05-2020, 03:33 AM
রক্তের রং
লাল বাজারে মিটিং, ডেকেছেন খোদ কমিশনার সাহেব। অগত্যা সমরেশ বাবু সকাল সকাল ইস্তিরি করা পোষাক পরে হাজির। যদিও কি নিয়ে তলব সেটা অবশ্য অজানা নয়। নয় নয় করে ২৬ বছর হয়ে গেল এই চাকরি তে। ঢুকেছিলেন এসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর হয়ে। আর আজ যাদবপুর থানার ইনচার্জ। আর তলব টাও সেই জন্যই, খুনের কেস। তাও পূর্বতন সাংসদের বাড়ি। অত ভেবে যদিও লাভ নেই, কপালে যা থাকে এই ভেবে ঢুকলেন । ঢুকতেই দেখা পেলেন সঞ্জীব বাবুর, সঞ্জীব রায়… একই ব্যাচ।
- মর্নিং সঞ্জীব
- গুড মর্নিং সমরেশ
- ব্যাড মর্নিং বল ভাই,
- আরে বাবা পুলিশের জীবনে তো মার্ডার কেস নর্মাল, অত ঘাবড়াচ্ছ কেন?
- আরে কমিশনার ডেকেছে রে ভাই।
- আরে আমি তো মেল আর ফোন গুলো করলাম, আমি জানবোনা ?
- ফোন গুলো মানে?
- মানে শুধু তুমি না, আরও তাবড় তাবড় দের ডাকা হয়েছে। তাই ঘাবড়িও না, তোমার ওপর দিয়ে বেশি ঝড় যাবে না।
- কমিশনার তো শুনেছি রাগী খুব।
- ধুর, এসব কোথায় শোন বলত? একদম বিন্দাস লোক। তবে হ্যাঁ কালো কে কালো আর সাদা কে সাদা বলেন।
- তাও রে ভাই, এই বয়েসে আবার ট্রান্সফার হলে চাপ।
- আরে ভাবো কেন অত, মেয়ের খবর কি?
- সে তো ফাইনাল ইয়ার, বলছে পড়ছি আর আমি তো দেখি খালি ফেসবুকে ছবি দিয়েই যাচ্ছে।
- পড়ার ছবি?
- তাহলেই হয়েছে, ওটুকু ছাড়া বাকি সবই দিচ্ছে।
- আর বউদির খবর কি?
- সে তো ভাই দিন দিন হাতি হচ্ছে। দু হাতে আজকাল আর আঁটছে না।
- বাবাঃ আঁটাবার সুযোগ পাচ্ছ? নাকি এখনও বউকে চোখে হারাচ্ছ?
- ভাই তোমার মত কপাল করে তো আসিনি, তাই হাতি হোক বা জলহস্তি গাড়ি ওখানেই গ্যারেজ করা ছাড়া উপায় নেই।
- হাহাহাহাহাহহা ভালো বলেছ।
- তা ভাই আজকের মিটিং হবে কোথায়?
- কনফারেন্স রুমে, দোতলায় উঠে সোজা গিয়ে বাঁদিকে। তুমি যাও, আমি এদিকে ইটিং এর ব্যাপারটা দেখে নি।
- গাল খাবার পর কি আর জায়গা থাকবে পেটে?
- পুলিশের পেট তো অতল হয়, শাস্ত্রে বলে। জানোনা ?
- বেশ যাই।
কনফারেন্স রুমের দরজা ঠেলে ঢুকলেন সমরেশ বাবু, ঢুকতেই দেখতে পেলেন চার জন বসে আছে তাঁর আগে থেকেই। চোখ বুলিয়ে বুঝলেন তারা তে এরা সবাই উঁচুতে।
- আরে সমরেশ না?
- হ্যাঁ
- চিনতে পারলি না? আমি অরুপ।
- কোন অরুপ?
- ওরে আহাম্মক, আমি অরপ শাসমল, আশুতোষ ৯২ এর ব্যাচ।
- মুত্রমল?
- হারামি শালা, আমাকে ভুলে গেছিস কিন্তু ওই নামটা মনে রেখেছিস।
- কিন্তু তুই এতো রোগা হলি কি করে?
- সুগার ভাই সুগার, এখন তো বউয়ের থেকে ইনসুলিন কে বেশি ভালবাসি রে।
- বলিস কি রে, তোর এতো বাজে হাল।
- কি আর করা যাবে, তুই বল তোর খবর কি?
- চলে যাচ্ছে, নেতা মন্ত্রীদের আশীর্বাদে।
- তুই এতো মিইয়ে গেছিস কেন?
- ভাই এতো বছরের চাকরিতে এই প্রথম কমিশনারের তলব,
- আরে ধুর ধুর, ওসব ছাড় পরিচয় করিয়ে দি … এই হল সুখেন বিশ্বাস, উনি দক্ষিন পূর্ব দেখেন। এই হল রাজকুমার মজুমদার, উনি দক্ষিন পশ্চিম দেখেন। এই হল সুভাষ দত্ত, উনি স্পেশাল ব্রাঞ্চ দেখেন।
সমরেশ বাবু সবার সাথেই করমর্দন করলেন।
- কিন্তু অরুপ তুই?
- আমি কি? ও আমি তো তোর জায়গা দেখি রে, সাউথ সাবারবান দেখি রে, বিকাশ বাবু তো পা ভেঙ্গে পড়ে আছে।
- ও আচ্ছা, তাহলে তো স্যার বলতে হয়।
অরুপ সমরেশের কানে কানে বলল
- তাহলে মুখে মুতে দেব বাঁড়া।
বলতে বলতেই দরজা খুলে ঢুকলেন কমিশনার পীযূষ সমাদ্দার। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট ঠুকল। পীযূষ বাবু চেয়ারে বসলেন, তারপর বললেন,
- আজকের মিটিং কেন ডাকা হয়েছে আশা করি সবাই জানেন।
সবাই ঘাড় নাড়ল, দেখাদেখি সমরেশ বাবুও। পীযূষ বাবু আবার বলতে শুরু করলেন
- দেখুন সোজাসুজি ভাবেই বলি, অঞ্জন মিত্র হয়ত এখন আর সাংসদ নেই, তবুও ওনার দাপট কিন্তু কম নয়। এক কালে সিনেমা কাঁপিয়েছেন, তাই কানেকশন ওনার এখনও বেশ ভালই। সুতরাং তাঁর মেয়ের খুন নিয়ে জলঘোলা যে কম হবেনা সেটা আপনারা আশা করি বোঝেন। সংবাদ মাধ্যম আর উপর মহল দুদিক থেকেই চাপ দেবে আর সেটা আসবে আমাদের ওপরেই। আর তাই এই মিটিং ডেকেছি। ঘটনাস্থল যেহেতু যাদবপুর, তাই যাদবপুর থানা তো কেস টা নিয়ে ডিল করবেই, তাছাড়া একটা স্পেশাল টিম ও তৈরি করা হবে। আর এটা নিয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স ও ডেকেছি। সেখানেই এটা উল্লেখ করবো। যাদবপুর থানার ইনচার্জ … কি যেন নাম … সমরেশ বাবু, আপনি রিপোর্ট এনেছেন তো?
- হ্যাঁ হ্যাঁ সার, এই যে ।
- আমাকে নয় অরুপ বাবু কে দিন। অরুপ বাবু আপনি প্রেস কনফারেন্সে এ থাকবেন আমার সাথে, সেখানে কেসের প্রেসেন্ট স্ট্যাটাস আপনি বলবেন। ওকে?
- ওকে স্যার।
অরুপ বাবু সমরেশ বাবুর কাছ থেকে ফাইল টা নিয়ে খুলে দেখতে লাগলেন।
এই সময় একজন ট্রে তে করে চা আর কেক নিয়ে ঢুকল।
- নিন সবাই চা নিন, খেতে খেতেই আলোচনা করা যাক। … পীযূষ বাবু বললেন।
সবাই একে একে চায়ের কাপ গুলো নিয়ে নিলেন।
কেকের টুকরোয় কামড় দিয়ে পীযূষ বাবু আবার বললেন
- দেখুন আমি খুব বড় টিম বানাতে চাইনা, একজন সিনিয়ার ইনস্পেক্টর, একজন এ সি পি আর একজন ইনভেস্টিগেটিং অফিসার মনে হয় যথেষ্ট। বাকি তো যাদবপুর থানাও আমাদের হেল্প করবে। আপনারা কি বলেন।
- হ্যাঁ স্যার এনাফ হবে। … অরুপ বাবু বললেন।
- বেশ তাহলে আপনারাই বলুন, কে লীড করতে চান?
সবাই একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন, কিন্তু কেউ আগ বাড়িয়ে নিজের নাম টা বললেন না। এসব দেখে পীযূষ বাবুই আবার বললেন
- দেখুন নেতা মন্ত্রীর মেয়ের কেস, কেস সল্ভড হলে কিন্তু নাম, যশ সবই আছে। আবার কেস বেশী টাইম নিলে জনতা এবং জননেতা দুজনের রোষ ও আছে। এবার আপনারাই বলুন।
কিছু মিনিট নীরবতার পর সুভাষ বাবু বললেন,
- স্যার, কেস তো যাদবপুর থানার আন্ডারে, তাহলে অরুপ ই হ্যান্ডেল করুক। ওর আন্ডারেই থাকবে তাহলে পুরোপুরি।
- হুম, মন্দ সাজেশন না, অরুপ বাবু আপনার কি মত?
অরুপ বাবু খুশি না হলেও খুশি হবার ভান করে বললেন
- হ্যাঁ স্যার নো প্রবলেম।
- না হলেই ভালো, এ যত তাড়াতাড়ি শেষ হয় ততই ভালো।
- হ্যাঁ স্যার, আর আমরা তো আছি সাপোর্টের জন্য। … সুখেন বাবু বললেন
- বেশ, তাহলে সিনিয়ার ইনস্পেক্টর আর ইনভেস্টিগাটিং অফিসার কে কে হবে?
- স্যার আমি একজনের নাম সাজেস্ট করতে পারি, করব? …… সুভাষ বাবূ বললেন।
- বলুন, I am all ears.
- নতুন অফিসার,তিনবছর আগের জয়েনিং। স্পেশাল ব্রাঞ্চেই ছিল প্রথমে, চটপটে, চোখ কান খোলা রাখার বদভ্যাস আছে। ট্রেনিং কলেজে ভালো শ্যুটার ছিল, এখনও নিয়মিত শনিবার করে শ্যুটিং প্রাক্টিসে যায়। ইন্টেরোগেশন এও অনেক সিনিয়ার কে লজ্জায় ফেলতে পারে। নাম সব্যসাচী সান্যাল।
- এ কি আপনার জামাই নাকি? সার্টিফিকেটের তো বন্যা বইয়ে দিলেন সুভাষ বাবু। হা হা হা হা করে হেসে বললেন পীযূষ বাবু।
- স্যার এরা জামাই হবার জন্য নয়, এদের ক্রিমিনালের গুলিতে মরার কথা।
- বটে? আপনি এতো ভরসা করেন? একবার তো বাজিয়ে দেখতে হচ্ছে।
- লালবাজারেই তো আছে স্যার ৬ মাস ধরে, সারভেলেন্স টিমে।
- তাই নাকি ? ওকে ……
বেল বাজিয়ে বাইরে দাঁড়ান এক কনস্টেবল কে ডাকলেন, সে ভিতরে আসতেই পীযূষ বাবু বললেন
- সঞ্জীব বাবু কে গিয়ে বলুন সারভেলেন্সের সব্যাসাচী সান্যাল কে ডাকছি, আর্জেন্ট।
কনস্টেবল স্যালুট ঠুকে চলে গেল। পীযূষ বাবু আবার বলে উঠলেন
- এ তো গেল ইনভেস্টিগেটিং অফিসার, সিনিয়ার ইনস্পেক্টর কে হবে? সুভাষ বাবু এনি মোর সাজেশনস?
- স্যার সব্যসাচীকে আগে বাজিয়ে দেখে নিন, মনে হয় না আর কোন সিনিয়রা লাগবে।
- কেন?
- খাটিয়ে ছেলে স্যার, ২৪ ঘন্টাই ফিল্ডে থাকতে পারে যদি লাগে।
- আপনি তো দরাজ হাতে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন মশাই। অরুপ বাবু আপনি শুনেছেন এরকম সব্যসাচীর কথা?
- আমি তো শুনিনি স্যার …… অরুপ বাবু বললেন।
- সুখেন বাবু, রাজকুমার বাবু আপনারা চেনেন নাকি?
- সুভাষ বাবু, এটা কি বেলুড় কেসের সেই সব্যসাচী? …… সুখেন বাবু বললেন।
- হ্যাঁ সুখেন বাবু, সেই ।
- সুখেন বাবু আপনি চেনেন? …… পীযূষ বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
- চিনিনা কিন্তু নাম শুনেছি, খুবই এফেক্টিভ্লি ২০ ঘন্টার মধ্যে একটা মার্ডার কেস সল্ভ করেছিলো। প্রায় ২ সপ্তাহ কিচ্ছু কিনারা করা যায়নি। স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইনভল্ভ হয়েছিল শেষমেশ। পলিটিকাল মার্ডার ছিল, রুলিং পার্টির সুপারি কিলারের কাজ করত অভিযুক্ত। রুলিং পার্টি আন্ডারগ্রাউন্ডে রেখেছিলো। এই সব্যসাচী ট্রেস করে, বড়বাজারের মত জায়গায় পায়ে শুট করে এরেস্ট করে।
- তা এরকম একজনকে সারভেলেন্সে কেন?
- রাজার সঙ্গে বিবাদ করে কি রাজ্যে থাকা যায় স্যার? …… সুভাষ বাবু বলে উঠলেন।
- সুভাষ বাবু, আপনি কিন্তু ভালো নেতা হবেন। দারুন বললেন কিন্তু।
এমন সময় কনফারেন্স রুমের দরজা ঠেলে একটি কনস্টেবল ঢুকে এসে বলল
- স্যার, সব্যসাচী সান্যাল এসেছে, ভিতরে পাঠাবো?
- হ্যাঁ হ্যাঁ পাঠাও …… পীযূষ বাবু বললেন।
লাল বাজারে মিটিং, ডেকেছেন খোদ কমিশনার সাহেব। অগত্যা সমরেশ বাবু সকাল সকাল ইস্তিরি করা পোষাক পরে হাজির। যদিও কি নিয়ে তলব সেটা অবশ্য অজানা নয়। নয় নয় করে ২৬ বছর হয়ে গেল এই চাকরি তে। ঢুকেছিলেন এসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর হয়ে। আর আজ যাদবপুর থানার ইনচার্জ। আর তলব টাও সেই জন্যই, খুনের কেস। তাও পূর্বতন সাংসদের বাড়ি। অত ভেবে যদিও লাভ নেই, কপালে যা থাকে এই ভেবে ঢুকলেন । ঢুকতেই দেখা পেলেন সঞ্জীব বাবুর, সঞ্জীব রায়… একই ব্যাচ।
- মর্নিং সঞ্জীব
- গুড মর্নিং সমরেশ
- ব্যাড মর্নিং বল ভাই,
- আরে বাবা পুলিশের জীবনে তো মার্ডার কেস নর্মাল, অত ঘাবড়াচ্ছ কেন?
- আরে কমিশনার ডেকেছে রে ভাই।
- আরে আমি তো মেল আর ফোন গুলো করলাম, আমি জানবোনা ?
- ফোন গুলো মানে?
- মানে শুধু তুমি না, আরও তাবড় তাবড় দের ডাকা হয়েছে। তাই ঘাবড়িও না, তোমার ওপর দিয়ে বেশি ঝড় যাবে না।
- কমিশনার তো শুনেছি রাগী খুব।
- ধুর, এসব কোথায় শোন বলত? একদম বিন্দাস লোক। তবে হ্যাঁ কালো কে কালো আর সাদা কে সাদা বলেন।
- তাও রে ভাই, এই বয়েসে আবার ট্রান্সফার হলে চাপ।
- আরে ভাবো কেন অত, মেয়ের খবর কি?
- সে তো ফাইনাল ইয়ার, বলছে পড়ছি আর আমি তো দেখি খালি ফেসবুকে ছবি দিয়েই যাচ্ছে।
- পড়ার ছবি?
- তাহলেই হয়েছে, ওটুকু ছাড়া বাকি সবই দিচ্ছে।
- আর বউদির খবর কি?
- সে তো ভাই দিন দিন হাতি হচ্ছে। দু হাতে আজকাল আর আঁটছে না।
- বাবাঃ আঁটাবার সুযোগ পাচ্ছ? নাকি এখনও বউকে চোখে হারাচ্ছ?
- ভাই তোমার মত কপাল করে তো আসিনি, তাই হাতি হোক বা জলহস্তি গাড়ি ওখানেই গ্যারেজ করা ছাড়া উপায় নেই।
- হাহাহাহাহাহহা ভালো বলেছ।
- তা ভাই আজকের মিটিং হবে কোথায়?
- কনফারেন্স রুমে, দোতলায় উঠে সোজা গিয়ে বাঁদিকে। তুমি যাও, আমি এদিকে ইটিং এর ব্যাপারটা দেখে নি।
- গাল খাবার পর কি আর জায়গা থাকবে পেটে?
- পুলিশের পেট তো অতল হয়, শাস্ত্রে বলে। জানোনা ?
- বেশ যাই।
কনফারেন্স রুমের দরজা ঠেলে ঢুকলেন সমরেশ বাবু, ঢুকতেই দেখতে পেলেন চার জন বসে আছে তাঁর আগে থেকেই। চোখ বুলিয়ে বুঝলেন তারা তে এরা সবাই উঁচুতে।
- আরে সমরেশ না?
- হ্যাঁ
- চিনতে পারলি না? আমি অরুপ।
- কোন অরুপ?
- ওরে আহাম্মক, আমি অরপ শাসমল, আশুতোষ ৯২ এর ব্যাচ।
- মুত্রমল?
- হারামি শালা, আমাকে ভুলে গেছিস কিন্তু ওই নামটা মনে রেখেছিস।
- কিন্তু তুই এতো রোগা হলি কি করে?
- সুগার ভাই সুগার, এখন তো বউয়ের থেকে ইনসুলিন কে বেশি ভালবাসি রে।
- বলিস কি রে, তোর এতো বাজে হাল।
- কি আর করা যাবে, তুই বল তোর খবর কি?
- চলে যাচ্ছে, নেতা মন্ত্রীদের আশীর্বাদে।
- তুই এতো মিইয়ে গেছিস কেন?
- ভাই এতো বছরের চাকরিতে এই প্রথম কমিশনারের তলব,
- আরে ধুর ধুর, ওসব ছাড় পরিচয় করিয়ে দি … এই হল সুখেন বিশ্বাস, উনি দক্ষিন পূর্ব দেখেন। এই হল রাজকুমার মজুমদার, উনি দক্ষিন পশ্চিম দেখেন। এই হল সুভাষ দত্ত, উনি স্পেশাল ব্রাঞ্চ দেখেন।
সমরেশ বাবু সবার সাথেই করমর্দন করলেন।
- কিন্তু অরুপ তুই?
- আমি কি? ও আমি তো তোর জায়গা দেখি রে, সাউথ সাবারবান দেখি রে, বিকাশ বাবু তো পা ভেঙ্গে পড়ে আছে।
- ও আচ্ছা, তাহলে তো স্যার বলতে হয়।
অরুপ সমরেশের কানে কানে বলল
- তাহলে মুখে মুতে দেব বাঁড়া।
বলতে বলতেই দরজা খুলে ঢুকলেন কমিশনার পীযূষ সমাদ্দার। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট ঠুকল। পীযূষ বাবু চেয়ারে বসলেন, তারপর বললেন,
- আজকের মিটিং কেন ডাকা হয়েছে আশা করি সবাই জানেন।
সবাই ঘাড় নাড়ল, দেখাদেখি সমরেশ বাবুও। পীযূষ বাবু আবার বলতে শুরু করলেন
- দেখুন সোজাসুজি ভাবেই বলি, অঞ্জন মিত্র হয়ত এখন আর সাংসদ নেই, তবুও ওনার দাপট কিন্তু কম নয়। এক কালে সিনেমা কাঁপিয়েছেন, তাই কানেকশন ওনার এখনও বেশ ভালই। সুতরাং তাঁর মেয়ের খুন নিয়ে জলঘোলা যে কম হবেনা সেটা আপনারা আশা করি বোঝেন। সংবাদ মাধ্যম আর উপর মহল দুদিক থেকেই চাপ দেবে আর সেটা আসবে আমাদের ওপরেই। আর তাই এই মিটিং ডেকেছি। ঘটনাস্থল যেহেতু যাদবপুর, তাই যাদবপুর থানা তো কেস টা নিয়ে ডিল করবেই, তাছাড়া একটা স্পেশাল টিম ও তৈরি করা হবে। আর এটা নিয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স ও ডেকেছি। সেখানেই এটা উল্লেখ করবো। যাদবপুর থানার ইনচার্জ … কি যেন নাম … সমরেশ বাবু, আপনি রিপোর্ট এনেছেন তো?
- হ্যাঁ হ্যাঁ সার, এই যে ।
- আমাকে নয় অরুপ বাবু কে দিন। অরুপ বাবু আপনি প্রেস কনফারেন্সে এ থাকবেন আমার সাথে, সেখানে কেসের প্রেসেন্ট স্ট্যাটাস আপনি বলবেন। ওকে?
- ওকে স্যার।
অরুপ বাবু সমরেশ বাবুর কাছ থেকে ফাইল টা নিয়ে খুলে দেখতে লাগলেন।
এই সময় একজন ট্রে তে করে চা আর কেক নিয়ে ঢুকল।
- নিন সবাই চা নিন, খেতে খেতেই আলোচনা করা যাক। … পীযূষ বাবু বললেন।
সবাই একে একে চায়ের কাপ গুলো নিয়ে নিলেন।
কেকের টুকরোয় কামড় দিয়ে পীযূষ বাবু আবার বললেন
- দেখুন আমি খুব বড় টিম বানাতে চাইনা, একজন সিনিয়ার ইনস্পেক্টর, একজন এ সি পি আর একজন ইনভেস্টিগেটিং অফিসার মনে হয় যথেষ্ট। বাকি তো যাদবপুর থানাও আমাদের হেল্প করবে। আপনারা কি বলেন।
- হ্যাঁ স্যার এনাফ হবে। … অরুপ বাবু বললেন।
- বেশ তাহলে আপনারাই বলুন, কে লীড করতে চান?
সবাই একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন, কিন্তু কেউ আগ বাড়িয়ে নিজের নাম টা বললেন না। এসব দেখে পীযূষ বাবুই আবার বললেন
- দেখুন নেতা মন্ত্রীর মেয়ের কেস, কেস সল্ভড হলে কিন্তু নাম, যশ সবই আছে। আবার কেস বেশী টাইম নিলে জনতা এবং জননেতা দুজনের রোষ ও আছে। এবার আপনারাই বলুন।
কিছু মিনিট নীরবতার পর সুভাষ বাবু বললেন,
- স্যার, কেস তো যাদবপুর থানার আন্ডারে, তাহলে অরুপ ই হ্যান্ডেল করুক। ওর আন্ডারেই থাকবে তাহলে পুরোপুরি।
- হুম, মন্দ সাজেশন না, অরুপ বাবু আপনার কি মত?
অরুপ বাবু খুশি না হলেও খুশি হবার ভান করে বললেন
- হ্যাঁ স্যার নো প্রবলেম।
- না হলেই ভালো, এ যত তাড়াতাড়ি শেষ হয় ততই ভালো।
- হ্যাঁ স্যার, আর আমরা তো আছি সাপোর্টের জন্য। … সুখেন বাবু বললেন
- বেশ, তাহলে সিনিয়ার ইনস্পেক্টর আর ইনভেস্টিগাটিং অফিসার কে কে হবে?
- স্যার আমি একজনের নাম সাজেস্ট করতে পারি, করব? …… সুভাষ বাবূ বললেন।
- বলুন, I am all ears.
- নতুন অফিসার,তিনবছর আগের জয়েনিং। স্পেশাল ব্রাঞ্চেই ছিল প্রথমে, চটপটে, চোখ কান খোলা রাখার বদভ্যাস আছে। ট্রেনিং কলেজে ভালো শ্যুটার ছিল, এখনও নিয়মিত শনিবার করে শ্যুটিং প্রাক্টিসে যায়। ইন্টেরোগেশন এও অনেক সিনিয়ার কে লজ্জায় ফেলতে পারে। নাম সব্যসাচী সান্যাল।
- এ কি আপনার জামাই নাকি? সার্টিফিকেটের তো বন্যা বইয়ে দিলেন সুভাষ বাবু। হা হা হা হা করে হেসে বললেন পীযূষ বাবু।
- স্যার এরা জামাই হবার জন্য নয়, এদের ক্রিমিনালের গুলিতে মরার কথা।
- বটে? আপনি এতো ভরসা করেন? একবার তো বাজিয়ে দেখতে হচ্ছে।
- লালবাজারেই তো আছে স্যার ৬ মাস ধরে, সারভেলেন্স টিমে।
- তাই নাকি ? ওকে ……
বেল বাজিয়ে বাইরে দাঁড়ান এক কনস্টেবল কে ডাকলেন, সে ভিতরে আসতেই পীযূষ বাবু বললেন
- সঞ্জীব বাবু কে গিয়ে বলুন সারভেলেন্সের সব্যাসাচী সান্যাল কে ডাকছি, আর্জেন্ট।
কনস্টেবল স্যালুট ঠুকে চলে গেল। পীযূষ বাবু আবার বলে উঠলেন
- এ তো গেল ইনভেস্টিগেটিং অফিসার, সিনিয়ার ইনস্পেক্টর কে হবে? সুভাষ বাবু এনি মোর সাজেশনস?
- স্যার সব্যসাচীকে আগে বাজিয়ে দেখে নিন, মনে হয় না আর কোন সিনিয়রা লাগবে।
- কেন?
- খাটিয়ে ছেলে স্যার, ২৪ ঘন্টাই ফিল্ডে থাকতে পারে যদি লাগে।
- আপনি তো দরাজ হাতে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন মশাই। অরুপ বাবু আপনি শুনেছেন এরকম সব্যসাচীর কথা?
- আমি তো শুনিনি স্যার …… অরুপ বাবু বললেন।
- সুখেন বাবু, রাজকুমার বাবু আপনারা চেনেন নাকি?
- সুভাষ বাবু, এটা কি বেলুড় কেসের সেই সব্যসাচী? …… সুখেন বাবু বললেন।
- হ্যাঁ সুখেন বাবু, সেই ।
- সুখেন বাবু আপনি চেনেন? …… পীযূষ বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
- চিনিনা কিন্তু নাম শুনেছি, খুবই এফেক্টিভ্লি ২০ ঘন্টার মধ্যে একটা মার্ডার কেস সল্ভ করেছিলো। প্রায় ২ সপ্তাহ কিচ্ছু কিনারা করা যায়নি। স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইনভল্ভ হয়েছিল শেষমেশ। পলিটিকাল মার্ডার ছিল, রুলিং পার্টির সুপারি কিলারের কাজ করত অভিযুক্ত। রুলিং পার্টি আন্ডারগ্রাউন্ডে রেখেছিলো। এই সব্যসাচী ট্রেস করে, বড়বাজারের মত জায়গায় পায়ে শুট করে এরেস্ট করে।
- তা এরকম একজনকে সারভেলেন্সে কেন?
- রাজার সঙ্গে বিবাদ করে কি রাজ্যে থাকা যায় স্যার? …… সুভাষ বাবু বলে উঠলেন।
- সুভাষ বাবু, আপনি কিন্তু ভালো নেতা হবেন। দারুন বললেন কিন্তু।
এমন সময় কনফারেন্স রুমের দরজা ঠেলে একটি কনস্টেবল ঢুকে এসে বলল
- স্যার, সব্যসাচী সান্যাল এসেছে, ভিতরে পাঠাবো?
- হ্যাঁ হ্যাঁ পাঠাও …… পীযূষ বাবু বললেন।