06-05-2020, 12:01 PM
(This post was last modified: 06-05-2021, 09:39 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[৪৩]
স্নানের পর ঝরঝরে লাগে শরীর।সবাই একসঙ্গে বৈঠক খানায় বসে চা টিফিন খায়। ব্যারিষ্টার বোস তার চেম্বারে কথা বলছেন মক্কেলদের সঙ্গে।সুরঞ্জনা গম্ভীর বেশি কথা বলেন না।এই পরিবেশ ভাল লাগে না অনির্বানের,মিতুর সঙ্গে গল্প করছে। তারপর স্থির করে দুজনে পাড়ায় ঘুরে আসবে।
সুচিস্মিতাকে বলে,দিদিভাই আমরা বের হচ্ছি তুমি যাবে?
ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে সুচিস্মিতা বলে,নারে এবেলা যাব না,ঘুম পাচ্ছে তোরা যা।অনির্বান আর পারমিতা বেরোতে যাবে টুকুন এসে বলে,আমিও যাবো।
--ভাই আয় আমরা দুজনে বিশ্রাম করি।সুচিস্মিতা টুকুনকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
ঘরে এখন কেবল দুই বোন।থম থমে পরিবেশ।সুরঞ্জনা বুঝতে পারেন কিছু বলার জন্য উসখুস করছে নীলাঞ্জনা।নতুন স্বামীকে নিয়ে ভালই আছে,চেহারায় আগের থেকে চমক এসেছে। ওর ছেলেটা সুচির সঙ্গে খুব ভাব।
--আচ্ছা বড়দিভাই তোমার দেওর আর যোগাযোগ রাখে না?
--কেন রাখবে না। প্রায় শনিবার আসে রবিবার চলে যায়।
--তাহলে কাল আসবে?
---আসার তো কথা।
মৃন্ময় বোস ঢূকলেন।কেমন আছো নীলা?এখন তোমার তো ছুটি?
--হ্যা।জাম্বু আপনারও তো ছুটি।
--কোর্ট বন্ধ কিন্তু আমাদের ছুটি কোথায়?তোমার বোনঝি কি করে এখন?
নীলাঞ্জনা একটূ সময় নিলেন প্রশ্নটা বুঝতে।তারপর বলেন, ওঃ সুচি? এখন একটা কলেজে আছে।
--কলেজে? কিছুক্ষন পর বলেন,হউম ইদানীং মাষ্টারদের মাইনে শুনেছি ভাল হয়েছে।
এই আলোচনা ভাল লাগছে না,সুরঞ্জনা উঠে চলে যান।মৃন্ময় বোস বলেন,আমাকে এক কাপ চা দিতে বোলো তো।তুমি চা খাবে?
নীলাঞ্জনা বলেন,হ্যা দিদিভাই আমাকেও একটু দিও।
সুরঞ্জনা উপরে এসে তরঙ্গকে চায়ের ফরমাস দিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে গেলেন সুচিস্মিতা ভাইকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মমতা মাখানো দৃষ্টিতে ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন।চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। শান্ত শিষ্ট মেয়েটি কতটুকু ছিল এখন একেবারে বদলে গেছে। কেন এমন হল?কোন আব্দারই তো অপুর্ণ রাখেন নি।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
হাটতে হাটতে পারমিতারা বাজারের কাছে চলে আসে।পারমিতা কি মনে হতে বলে,অনু তুমি লক্ষ্য করেছো দুইবোনের মধ্যে কোন মিল নেই?
--নীলাদি অনেক জলি,মনটাও আধুনিক। অনির্বান বলেন।
--কেমন একটা গুমোট পরিবেশ ভাগ্যিস দিদিভাইয়ের কাকু নেই। আমার কেমন ভদ্রলোককে হিপোক্রিট টাইপ মনে হয়।
--সুচি একেবারে অন্য রকম ব্যারিষ্টার সাহেবের মেয়ে বলে মনে হয় না।
পাশ দিয়ে এক ভদ্রমহিলা যেতে গিয়ে থমকে দাড়ালেন।দ্বিধা জড়িত স্বরে জিজ্ঞেস করেন,আপনারা সুচিস্মিতাদের বাড়িতে এসেছেন?
--হ্যা কেন?
--সুচি আমার ক্লাস ফ্রেণ্ড আমরা একই কলেজে পড়তাম।কতদিন ওকে দেখিনি।
--সুচিদি এসেছে।আপনার নামটা কি বলবেন? পারমিতা জিজ্ঞেস করে।
--পাঞ্চালিদি বললেই চিনবে।
--নীলাভ সেনকে চেনেন?
--না। সুচি আমাদের কলেজে পড়তো তাই চিনি।কি নাম বললেন নীলাভ সেন মানে নীলু?
--হ্যা উনিও আসবেন।
--ওকে খুব ভাল করে চিনি কিন্তু ওরা তো বাড়ী বিক্রি করে চলে গেছে।
পারমিতার বেশ মজা লাগে,হেসে বলে,নীলাভ সেনের সঙ্গেই তো সুচিদির বিয়ে।
বিয়ে! পাঞ্চালি চমকে ওঠে।চোখ বড় বড় করে পারমিতাকে লক্ষ্য করে।বোঝার চেষ্টা করে এরা কারা?
--আমি সুচিদির মাসতুতো বোন,পারমিতা।
--সুচি আপনাদের বাড়ীতেই ছিল?ব্যারিষ্টার বোস কি রাজী হয়েছেন?জানেন নীলু খুব চাপা ছেলে কষ্ট পেলেও বাইরে থেকে কিছু বুঝতে পারবেন না।
--আমি সুচিদিকে বলবো আপনার কথা।হাতে ধরা বাচ্চাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে,এটি কে?
--আমার ছেলে।ভীষণ শয়তান--ওর বাপের মত।ওর দিদিটা কি শান্ত ও খুব জেদি।
একটু দূরে অনির্বান ইশারা করতেই পারু বলে,এখন আসি।
--উনি কে?জিজ্ঞেস করে পাঞ্চালি।
--আমার বাপি।পারমিতা এগিয়ে যায়।
পাঞ্চালির মনে পড়ে কত কথা।নীলুটা খুব নিরীহ ছিল কলেজে-কলেজে সারাক্ষন আগলে আগলে রাখতো পাঞ্চালি।কিছু স্মৃতি ভেসে উঠতে মুখ লাল হয়।দেবজয়ার নীলুকে খুব পছন্দ ছিল খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করতো নীলুর কথা।বেশিদিন কলেজে ছিল না,অন্য কলেজে চলে গেছিল।কলকাতায় দেবজয়ার খুব নাম।টিভিতে একদিন ওর নাচ দেখেছে।যাঃ জিজ্ঞেস করা হয়নি নীলু এখন কোথায় আছে কি করে?
সুচিস্মিতার ঘুম ভাঙ্গতে মনে পড়ল বাপির কথা।বৈঠকখানায় গিয়ে দেখল বাপি মাম্মীর সঙ্গে কথা বলছেন।সুচি ঢুকে প্রণাম করে।মৃন্ময়বাবু অন্যদিকে তাকিয়ে বসে থাকেন উদাসীন।সুচি চলে যাচ্ছিল সুরঞ্জনার ইঙ্গিতে মৃন্ময়বাবু বলেন,কি করো তুমি এখন?
বাপির কথা কানে যেতেই সুচি ঘুরে দাড়াল।বুকের কাছে একদলা কান্না ঠেলে উঠতে চাইল।অনেক কষ্টে দমন করে বলে,একটা কলেজে আছি।সি এস সি-র বিজ্ঞাপন বেরোলে ভাবছি পরীক্ষায় বসবো।
--কোথায় কলেজ বীরভুমে?
--মালদহে কমলাবাড়ি।
--অ।তারমানে তুমি আবার চলে যাবে?মৃন্ময় বোস ভেবেছিলেন মেয়ে ফিরে এসেছে।
--তুই আবার চলে যাবি?বাপ-মার জন্য তোর কোনো মায়া নেই? সুরঞ্জনার গলায় বিস্ময়।
চকিতে মনে হয় মাসীমণি কি সব কথা এখনো বলেনি?সুচি মায়ের পাশে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,মাম্মী তুমিও তো একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছো।এই তো জীবন মেয়েদের।
'ছাড়' হাত ছাড়িয়ে দিয়ে সুরঞ্জনা বলেন,তুই এখন আমাকে শেখাবি?
--তোমাদের খুশি করতে একদিন আমি পলাশডাঙ্গা ছেড়েছিলাম।
--এখন তার বদলা নিচ্ছিস?
--মাম্মী বাপ-মায়ের ঋণ কি কেউ পরিশোধ করতে পারে?বলো কি হলে তুমি সুখী হবে?
--তুই বিয়ে কর।
সুচিস্মিতা মনে মনে কি ভাবে,আড় চোখে বাপিকে দেখে বলে, ঠিক আছে।আমি একটু বেরোচ্ছি।
সুচি কি বলল?ঠিক শুনেছেন তো সুরঞ্জনা?স্বামীকে বলেন, তুমি শুনলে সুচি কি বলল?
পারমিতা বলছিল পাঞ্চালিদির সঙ্গে দেখা হয়েছে।তার মানে পাঞ্চালিদি এখন বাপের বাড়ীতে? হাটতে হাটতে চলেছে অনির্দেশ।পলাশডাঙ্গা সেই আগের মত নেই।বাড়ী ঘর দোর বদলেছে,বদলেছে রাস্তার মানুষজন।পার্টি অফিস এখন অট্টালিকা।লোক গিজগিজ করছে,একজন বয়স্ক লোককে দেখে মনে হল গোবর্ধন বাবু। ভদ্রলোক তাকে বারবার দেখছিলেন।ওর ছেলে ধনেস না কি যেন নাম?পাঞ্চালিদির বাড়ির কাছে এসে ইতস্তত করে।পাঞ্চালিদি দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বলে,কিরে সুচি না?আয় ভিতরে আয়।
কেমন গিন্নি-গিন্নি দেখতে হয়েছে পাঞ্চালিদিকে।ক্যারাটে নিশ্চয়ই ছেড়ে দিয়েছে। এদেশে মেয়েদের পক্ষে বেশি ভাগ ক্ষেত্রে কোন শিক্ষা বিয়ের পর কাজে লাগেনা।
দুই বন্ধুতে পুরানো দিনের অনেক কথা হল।সুচি জিজ্ঞেস করে,তোমার স্বামী কেমন হল?
পাঞ্চালি এক মুহুর্ত থেমে বলে,মেজাজি মস্তান টাইপ এক-একসময় মনে হয় শালা ক্যারাটের প্যাচ দেবো নাকি?
খিলখিল করে হেসে ফেলে সুচিস্মিতা।
--হাসিস না।পরে বুদ্ধি করে অন্য অস্ত্র প্রয়োগ করলাম।ব্যাস বাছাধন তাতেই কাহিল।
পাঞ্চালিদি আগের মতই আছে জিজ্ঞেস করে,কি অস্ত্র?
--আহা ন্যাকা কিছু জানে না।মেয়েদের ভগবান এক সাঙ্ঘাতিক অস্ত্র দিয়েছে তার কাছে সব মর্দাঙ্গী কাত।
সুচি বুঝতে পারে পাঞ্চালিদির ইঙ্গিত।তার কান লাল হয়, অনসুয়াও এরকম বলেছিল।
--আমার বিয়ের দিন নীলুর বাবা মারা গেল,বিয়েতে আসতে পারেনি।ওর মনটা খুব নরম--ও হ্যা শুনলাম তুই নাকি ওকে বিয়ে করছিস?
--কোথায় শুনলে?
--তোর বোন কি যে নাম--কিচ্ছু মনে থাকে না।
--পারমিতা?
--হ্যা-হ্যা,তোর বোনটা বেশ জলি। ওর বাপিকেও দেখলাম বেশ ইয়াং।
--মেশোর নাম অনির্বান দাশগুপ্ত।কলেজে অধ্যাপনা করেন।
--তোর মাসীও তো অধ্যাপিকা?তুইও নিশ্চয়ই--।
--কলেজ টিচার।
--ঐ হল পড়াশুনার লাইনে।আচ্ছা মাসীমা-মেশোমশায় রাজি হয়েছেন?
--ওরা এখনো জানে না।
তুমুল ঝড়ের আশঙ্কায় বুক কেপে ওঠে পাঞ্চালির।ব্যারিষ্টার সাহেবের উচু মহলে খুব প্রভাব,শেষে নীলুর কপালে কি আছে ভগবান জানে।সুচির উপর রাগ হয় কেন বেচারিকে নিয়ে এরকম করছে? নীলু তো কারো ক্ষতি করেনি।চিন্তিত ভাবে বলে,জানিস একবার তোর কাকু নীলুকে গলাধাক্কা দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিল?
--জানি,আমি তখন ছিলাম না।আসি পাঞ্চালিদি।কাল নীলুর আসার কথা--না আসলে ওর মজা বের করছি।তুমি পারলে এসো,নীলু তোমাকে খুব ভালবাসে।
সুচি বেরিয়ে গেল।পাঞ্চালি ভাবে এখনো নীলুকে ধরে বসে আছে,ধৈর্য আছে মেয়েটার।বিয়ে হলে ভাল আজ আর ওকে খারাপ লাগে না।
সুচিস্মিতা বাড়ি ঢুকতে নীলাঞ্জনা বলেন,কোথায় গেছিলি তুই?
আশপাশ ভাল করে দেখে সুচিস্মিতা চুপি চুপি জিজ্ঞেস করে, মাসীমণি তুমি মাম্মীকে কিছু বলোনি?
--সে কথাই তো বলছি।বড়দিভাই সব সময় এমন প্যাচার মত মুখ করে আছে বলার সুযোগ পেলাম কই?তবে এখন দেখলাম মুড বেশ ভাল,ভাবছি এইবার বলবো।
--না,আর বলার দরকার নেই।
--কি বলছিস তুই?অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন নীলাঞ্জনা।
সুচিস্মিতা মিটমিট করে হাসে।নীলাঞ্জনা বলেন,ও বলেছে আসবে, আমি কথা দিয়েছি যাতে ওর কোন অসম্মান না হয়।
--এবার সে দায়িত্ব আমি নিলাম মাসীমণি।
নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বোন-ঝিকে দেখে,কি করতে চাইছে সুচি?বড়দিভাই বলবে আমিই ওকে শিখিয়েছি।
স্নানের পর ঝরঝরে লাগে শরীর।সবাই একসঙ্গে বৈঠক খানায় বসে চা টিফিন খায়। ব্যারিষ্টার বোস তার চেম্বারে কথা বলছেন মক্কেলদের সঙ্গে।সুরঞ্জনা গম্ভীর বেশি কথা বলেন না।এই পরিবেশ ভাল লাগে না অনির্বানের,মিতুর সঙ্গে গল্প করছে। তারপর স্থির করে দুজনে পাড়ায় ঘুরে আসবে।
সুচিস্মিতাকে বলে,দিদিভাই আমরা বের হচ্ছি তুমি যাবে?
ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে সুচিস্মিতা বলে,নারে এবেলা যাব না,ঘুম পাচ্ছে তোরা যা।অনির্বান আর পারমিতা বেরোতে যাবে টুকুন এসে বলে,আমিও যাবো।
--ভাই আয় আমরা দুজনে বিশ্রাম করি।সুচিস্মিতা টুকুনকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
ঘরে এখন কেবল দুই বোন।থম থমে পরিবেশ।সুরঞ্জনা বুঝতে পারেন কিছু বলার জন্য উসখুস করছে নীলাঞ্জনা।নতুন স্বামীকে নিয়ে ভালই আছে,চেহারায় আগের থেকে চমক এসেছে। ওর ছেলেটা সুচির সঙ্গে খুব ভাব।
--আচ্ছা বড়দিভাই তোমার দেওর আর যোগাযোগ রাখে না?
--কেন রাখবে না। প্রায় শনিবার আসে রবিবার চলে যায়।
--তাহলে কাল আসবে?
---আসার তো কথা।
মৃন্ময় বোস ঢূকলেন।কেমন আছো নীলা?এখন তোমার তো ছুটি?
--হ্যা।জাম্বু আপনারও তো ছুটি।
--কোর্ট বন্ধ কিন্তু আমাদের ছুটি কোথায়?তোমার বোনঝি কি করে এখন?
নীলাঞ্জনা একটূ সময় নিলেন প্রশ্নটা বুঝতে।তারপর বলেন, ওঃ সুচি? এখন একটা কলেজে আছে।
--কলেজে? কিছুক্ষন পর বলেন,হউম ইদানীং মাষ্টারদের মাইনে শুনেছি ভাল হয়েছে।
এই আলোচনা ভাল লাগছে না,সুরঞ্জনা উঠে চলে যান।মৃন্ময় বোস বলেন,আমাকে এক কাপ চা দিতে বোলো তো।তুমি চা খাবে?
নীলাঞ্জনা বলেন,হ্যা দিদিভাই আমাকেও একটু দিও।
সুরঞ্জনা উপরে এসে তরঙ্গকে চায়ের ফরমাস দিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে গেলেন সুচিস্মিতা ভাইকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মমতা মাখানো দৃষ্টিতে ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন।চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। শান্ত শিষ্ট মেয়েটি কতটুকু ছিল এখন একেবারে বদলে গেছে। কেন এমন হল?কোন আব্দারই তো অপুর্ণ রাখেন নি।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
হাটতে হাটতে পারমিতারা বাজারের কাছে চলে আসে।পারমিতা কি মনে হতে বলে,অনু তুমি লক্ষ্য করেছো দুইবোনের মধ্যে কোন মিল নেই?
--নীলাদি অনেক জলি,মনটাও আধুনিক। অনির্বান বলেন।
--কেমন একটা গুমোট পরিবেশ ভাগ্যিস দিদিভাইয়ের কাকু নেই। আমার কেমন ভদ্রলোককে হিপোক্রিট টাইপ মনে হয়।
--সুচি একেবারে অন্য রকম ব্যারিষ্টার সাহেবের মেয়ে বলে মনে হয় না।
পাশ দিয়ে এক ভদ্রমহিলা যেতে গিয়ে থমকে দাড়ালেন।দ্বিধা জড়িত স্বরে জিজ্ঞেস করেন,আপনারা সুচিস্মিতাদের বাড়িতে এসেছেন?
--হ্যা কেন?
--সুচি আমার ক্লাস ফ্রেণ্ড আমরা একই কলেজে পড়তাম।কতদিন ওকে দেখিনি।
--সুচিদি এসেছে।আপনার নামটা কি বলবেন? পারমিতা জিজ্ঞেস করে।
--পাঞ্চালিদি বললেই চিনবে।
--নীলাভ সেনকে চেনেন?
--না। সুচি আমাদের কলেজে পড়তো তাই চিনি।কি নাম বললেন নীলাভ সেন মানে নীলু?
--হ্যা উনিও আসবেন।
--ওকে খুব ভাল করে চিনি কিন্তু ওরা তো বাড়ী বিক্রি করে চলে গেছে।
পারমিতার বেশ মজা লাগে,হেসে বলে,নীলাভ সেনের সঙ্গেই তো সুচিদির বিয়ে।
বিয়ে! পাঞ্চালি চমকে ওঠে।চোখ বড় বড় করে পারমিতাকে লক্ষ্য করে।বোঝার চেষ্টা করে এরা কারা?
--আমি সুচিদির মাসতুতো বোন,পারমিতা।
--সুচি আপনাদের বাড়ীতেই ছিল?ব্যারিষ্টার বোস কি রাজী হয়েছেন?জানেন নীলু খুব চাপা ছেলে কষ্ট পেলেও বাইরে থেকে কিছু বুঝতে পারবেন না।
--আমি সুচিদিকে বলবো আপনার কথা।হাতে ধরা বাচ্চাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে,এটি কে?
--আমার ছেলে।ভীষণ শয়তান--ওর বাপের মত।ওর দিদিটা কি শান্ত ও খুব জেদি।
একটু দূরে অনির্বান ইশারা করতেই পারু বলে,এখন আসি।
--উনি কে?জিজ্ঞেস করে পাঞ্চালি।
--আমার বাপি।পারমিতা এগিয়ে যায়।
পাঞ্চালির মনে পড়ে কত কথা।নীলুটা খুব নিরীহ ছিল কলেজে-কলেজে সারাক্ষন আগলে আগলে রাখতো পাঞ্চালি।কিছু স্মৃতি ভেসে উঠতে মুখ লাল হয়।দেবজয়ার নীলুকে খুব পছন্দ ছিল খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করতো নীলুর কথা।বেশিদিন কলেজে ছিল না,অন্য কলেজে চলে গেছিল।কলকাতায় দেবজয়ার খুব নাম।টিভিতে একদিন ওর নাচ দেখেছে।যাঃ জিজ্ঞেস করা হয়নি নীলু এখন কোথায় আছে কি করে?
সুচিস্মিতার ঘুম ভাঙ্গতে মনে পড়ল বাপির কথা।বৈঠকখানায় গিয়ে দেখল বাপি মাম্মীর সঙ্গে কথা বলছেন।সুচি ঢুকে প্রণাম করে।মৃন্ময়বাবু অন্যদিকে তাকিয়ে বসে থাকেন উদাসীন।সুচি চলে যাচ্ছিল সুরঞ্জনার ইঙ্গিতে মৃন্ময়বাবু বলেন,কি করো তুমি এখন?
বাপির কথা কানে যেতেই সুচি ঘুরে দাড়াল।বুকের কাছে একদলা কান্না ঠেলে উঠতে চাইল।অনেক কষ্টে দমন করে বলে,একটা কলেজে আছি।সি এস সি-র বিজ্ঞাপন বেরোলে ভাবছি পরীক্ষায় বসবো।
--কোথায় কলেজ বীরভুমে?
--মালদহে কমলাবাড়ি।
--অ।তারমানে তুমি আবার চলে যাবে?মৃন্ময় বোস ভেবেছিলেন মেয়ে ফিরে এসেছে।
--তুই আবার চলে যাবি?বাপ-মার জন্য তোর কোনো মায়া নেই? সুরঞ্জনার গলায় বিস্ময়।
চকিতে মনে হয় মাসীমণি কি সব কথা এখনো বলেনি?সুচি মায়ের পাশে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,মাম্মী তুমিও তো একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছো।এই তো জীবন মেয়েদের।
'ছাড়' হাত ছাড়িয়ে দিয়ে সুরঞ্জনা বলেন,তুই এখন আমাকে শেখাবি?
--তোমাদের খুশি করতে একদিন আমি পলাশডাঙ্গা ছেড়েছিলাম।
--এখন তার বদলা নিচ্ছিস?
--মাম্মী বাপ-মায়ের ঋণ কি কেউ পরিশোধ করতে পারে?বলো কি হলে তুমি সুখী হবে?
--তুই বিয়ে কর।
সুচিস্মিতা মনে মনে কি ভাবে,আড় চোখে বাপিকে দেখে বলে, ঠিক আছে।আমি একটু বেরোচ্ছি।
সুচি কি বলল?ঠিক শুনেছেন তো সুরঞ্জনা?স্বামীকে বলেন, তুমি শুনলে সুচি কি বলল?
পারমিতা বলছিল পাঞ্চালিদির সঙ্গে দেখা হয়েছে।তার মানে পাঞ্চালিদি এখন বাপের বাড়ীতে? হাটতে হাটতে চলেছে অনির্দেশ।পলাশডাঙ্গা সেই আগের মত নেই।বাড়ী ঘর দোর বদলেছে,বদলেছে রাস্তার মানুষজন।পার্টি অফিস এখন অট্টালিকা।লোক গিজগিজ করছে,একজন বয়স্ক লোককে দেখে মনে হল গোবর্ধন বাবু। ভদ্রলোক তাকে বারবার দেখছিলেন।ওর ছেলে ধনেস না কি যেন নাম?পাঞ্চালিদির বাড়ির কাছে এসে ইতস্তত করে।পাঞ্চালিদি দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বলে,কিরে সুচি না?আয় ভিতরে আয়।
কেমন গিন্নি-গিন্নি দেখতে হয়েছে পাঞ্চালিদিকে।ক্যারাটে নিশ্চয়ই ছেড়ে দিয়েছে। এদেশে মেয়েদের পক্ষে বেশি ভাগ ক্ষেত্রে কোন শিক্ষা বিয়ের পর কাজে লাগেনা।
দুই বন্ধুতে পুরানো দিনের অনেক কথা হল।সুচি জিজ্ঞেস করে,তোমার স্বামী কেমন হল?
পাঞ্চালি এক মুহুর্ত থেমে বলে,মেজাজি মস্তান টাইপ এক-একসময় মনে হয় শালা ক্যারাটের প্যাচ দেবো নাকি?
খিলখিল করে হেসে ফেলে সুচিস্মিতা।
--হাসিস না।পরে বুদ্ধি করে অন্য অস্ত্র প্রয়োগ করলাম।ব্যাস বাছাধন তাতেই কাহিল।
পাঞ্চালিদি আগের মতই আছে জিজ্ঞেস করে,কি অস্ত্র?
--আহা ন্যাকা কিছু জানে না।মেয়েদের ভগবান এক সাঙ্ঘাতিক অস্ত্র দিয়েছে তার কাছে সব মর্দাঙ্গী কাত।
সুচি বুঝতে পারে পাঞ্চালিদির ইঙ্গিত।তার কান লাল হয়, অনসুয়াও এরকম বলেছিল।
--আমার বিয়ের দিন নীলুর বাবা মারা গেল,বিয়েতে আসতে পারেনি।ওর মনটা খুব নরম--ও হ্যা শুনলাম তুই নাকি ওকে বিয়ে করছিস?
--কোথায় শুনলে?
--তোর বোন কি যে নাম--কিচ্ছু মনে থাকে না।
--পারমিতা?
--হ্যা-হ্যা,তোর বোনটা বেশ জলি। ওর বাপিকেও দেখলাম বেশ ইয়াং।
--মেশোর নাম অনির্বান দাশগুপ্ত।কলেজে অধ্যাপনা করেন।
--তোর মাসীও তো অধ্যাপিকা?তুইও নিশ্চয়ই--।
--কলেজ টিচার।
--ঐ হল পড়াশুনার লাইনে।আচ্ছা মাসীমা-মেশোমশায় রাজি হয়েছেন?
--ওরা এখনো জানে না।
তুমুল ঝড়ের আশঙ্কায় বুক কেপে ওঠে পাঞ্চালির।ব্যারিষ্টার সাহেবের উচু মহলে খুব প্রভাব,শেষে নীলুর কপালে কি আছে ভগবান জানে।সুচির উপর রাগ হয় কেন বেচারিকে নিয়ে এরকম করছে? নীলু তো কারো ক্ষতি করেনি।চিন্তিত ভাবে বলে,জানিস একবার তোর কাকু নীলুকে গলাধাক্কা দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিল?
--জানি,আমি তখন ছিলাম না।আসি পাঞ্চালিদি।কাল নীলুর আসার কথা--না আসলে ওর মজা বের করছি।তুমি পারলে এসো,নীলু তোমাকে খুব ভালবাসে।
সুচি বেরিয়ে গেল।পাঞ্চালি ভাবে এখনো নীলুকে ধরে বসে আছে,ধৈর্য আছে মেয়েটার।বিয়ে হলে ভাল আজ আর ওকে খারাপ লাগে না।
সুচিস্মিতা বাড়ি ঢুকতে নীলাঞ্জনা বলেন,কোথায় গেছিলি তুই?
আশপাশ ভাল করে দেখে সুচিস্মিতা চুপি চুপি জিজ্ঞেস করে, মাসীমণি তুমি মাম্মীকে কিছু বলোনি?
--সে কথাই তো বলছি।বড়দিভাই সব সময় এমন প্যাচার মত মুখ করে আছে বলার সুযোগ পেলাম কই?তবে এখন দেখলাম মুড বেশ ভাল,ভাবছি এইবার বলবো।
--না,আর বলার দরকার নেই।
--কি বলছিস তুই?অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন নীলাঞ্জনা।
সুচিস্মিতা মিটমিট করে হাসে।নীলাঞ্জনা বলেন,ও বলেছে আসবে, আমি কথা দিয়েছি যাতে ওর কোন অসম্মান না হয়।
--এবার সে দায়িত্ব আমি নিলাম মাসীমণি।
নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বোন-ঝিকে দেখে,কি করতে চাইছে সুচি?বড়দিভাই বলবে আমিই ওকে শিখিয়েছি।