04-05-2020, 12:39 PM
(This post was last modified: 04-05-2021, 12:37 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[৩৭]
রাতে শুয়ে শুয়ে সুচিস্মিতা ভাবছে একটা ফয়শলা হওয়া দরকার।বিষয়টা কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। একটা হেস্তনেস্ত করে একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে।ভাল মন্দ যাহাই ঘটুক সত্যরে লও সহজে।মনে পড়ল কবির বানী। কলেজের দিদিমনি পরিচয় দিয়ে আলাপ করা যেতে পারে।শবরীর প্রতিক্ষা সম্পর্কে মতামত জানতে চাইবে।বিরক্ত হলে চলে আসবে।
পারমিতা পাশে শুয়ে উসখুস করে।মালদা থেকে ফেরার পর থেকে দিদিভাইয়ের একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।বয়সে ছোটো হলেও দিদিভাইয়ের সঙ্গে তার বন্ধুতের সম্পর্ক।কোনো কিছুই গোপন করে না এবার মনে হল কিছু একটা চেপে যাচ্ছে।পাশ ফিরে একটা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সুচিকে।
--কি হল পারু ঘুমোস নি?
--দিদিভাই তোমার মত অত পড়াশুনা করিনি ঠিক কিন্তু আমাকে বোকা ভেবোনা।
সুচি পাশ ফিরে পারুকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমার আদুরে বোনটাকে আমি বোকা ভাবতে পারি।
--এই সব বলে তুমি সব তালগোল পালিয়ে দিচ্ছো।
সুচি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,আমারই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
--সেইজন্যই তো বলছি আমাকে সব খুলে বলো তাহলে তোমার মনের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা হবে।
সুচি কলেজের সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলল।পারমিতা কিছুক্ষন চুপচাপ তারপর বলল,তুমি শিক্ষিকা তোমার উচিত ছিল কাছে গিয়ে আলাপ করা।
--তখন তো বুঝিনি অত তাড়াতাড়ি চলে যাবে।
--তুমি বলছো নীলদা এখানে এসেছে?
--আমি কখন বললাম?
--যাইহোক ঐ ডিএম এখানে এসেছে।শোনো দিদিভাই কালই চলো--।
--মাসীমণি থাকবে না তুই গেলে টুকুনকে কে দেখবে?আমি একাই যাব।
--ঠিক আছে।সরাসরি কথা বলো।যদি দেখ সত্যি সত্যি বিয়ে করেছে তাহলে কথা বলে বিব্রত করার মানে হয়না।
--সবে এল কটা দিন যাক।
--না না দিদিভাই আমার কথা শোনো তুমি কালই যাবে।
সকাল হতে ব্যস্ততা শুরু হয়।স্নান করে অনির্বান নীলাঞ্জনা খেতে বসে গেল।দুজনকেই কলেজ যেতে হবে।এখনো গরমের ছুটি পড়েনি।টুকুন বসেছে মায়ের সঙ্গে।নীলাঞ্জনা বললেন,দিদিভাইকে পেয়ে আড্ডা দিতে বসে যেওনা।খেয়ে দেয়ে যা করার কোরো।
পারু সুচির দিকে তাকিয়ে হাসল।
মাসীমণি বেরোবার পর সুচি বলল,পারু আমি আসি।
--শোনো দিদিভাই প্রথমে কনফার্ম হবে বিয়ে করেছে কিনা।আর বিয়ে করলেও আপসেট হবে না।বড়মাসী বলল,মেশোর বন্ধুর ছেলে ডাক্তার--।
--ভাগ তুই কি মনে করিস তোর দিদিভাই এত ঠুনকো?
পারু খিল খিল করে হেসে বলল,অল দা বেস্ট।
রিক্সাওলাকে বলতে বোঝা গেল ভালই চেনে।তিরিশ টাকা ভাড়।সুচি রিক্সায় উঠতে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে রিক্সাওলা বলল,এই বাবুটা নতুন এসেছে।
--উনি কেমন লোক?
--লোক খারাপ না।কিন্তু অফিসের লোকজন তার কাছে ঘেঁষতে দেয় না।কাছে যেতি না পারলে মানুষ কি করে তার কথা বলবে বলেন?
বাংলোর কাছে নেমে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে সুচিস্মিতা। গেটে সশস্ত্র পুলিশ দাঁড়িয়ে বাঙালি বলে মনে হয় না।তাহলে কি ফিরে যাবে? একটা বছর পাঁ-ছয়ের বাচ্চা এসে দিব্য হাত ধরে জিজ্ঞেস করে,তুমি কে বতে?
--আমি সুচিস্মিতা।তোমার নাম কি?
--কুনটো বলবো?মা বলে সোনু সাহেব বলে,সাহেব।
--তুমি এখানে কোথায় থাকো?
--আমি এখানেই থাকি বতে।লতুন আসছি।
সুচিস্মিতার মনে হল এই বোধ হয় ডিএমের ছেলে।জিজ্ঞেস করে,সাহেব কোথায়?
--ঘরে শুয়ে আছে শরীল ভাল নাই বতে।তুমি দেখবে?
সুচিস্মিতার মনে হল সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।তোমার সাহেব রাগ করবে না?
--উঃ রাগ করলে দেখাই দিবো।ছেলেটি হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল।দুর থেকে সিপাইরা দেখছে। বয়সের তুলনায় ছেলেটা বেশ চটপটে।শ্যামলা রঙ নাদুস নুদুস চেহারা,আদর করতে ইচ্ছে হয়।আগে জানলে টফি কিম্বা ক্যাডবেরি কিছু একটা হাতে করে আনা যেতো।
একজন মহিলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,সোনু কুথা যাচ্ছিস?
--সাহেবের কাছে লিয়ে যাচ্ছি।
--সাহেবের শরীর ভাল নাই,তু দাড়া কেনে।
মহিলা ঘরে ঢুকে বেরিয়ে এসে বলল,সাহেব অফিসে যাচ্ছে আপনে অফিসে যান কেনে।
--সাহেবের স্ত্রী নেই?
মহিলা হেসে ফেলল।সাহেব বিহাই করে নাই বটে ইস্তিরি কুথা থিক্যে আইসবে?
সুচিস্মিতা আশ্বস্থ হয়।মনে হচ্ছে এই নীলু হবে।একতলায় অফিস,সুচিস্মিতা নীচে নেমে এল।অফিসের সামনে একটা টাটাসুমো দাঁড়িয়ে, আশে পাশে বেশ কিছু ছেলে ছোকরা দাঁড়িয়ে গুলতানি করছে।
একজন সিপাহী এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,কাউকে খুজছেন?
--ডিএমের সঙ্গে দেখা করব।
সুচিস্মিতাকে নিয়ে সিকদারবাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। সিকাদারবাবু জিজ্ঞেস করেন,কি ব্যাপার?
--ডিএমের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
--আজ পার্টির লোকজন এসেছে।একটু ইতস্তত করে একটা স্লিপ এগিয়ে দিয়ে বলল,ডিটেলস লিখে দিয়ে ভিজিটরস রুমে বসুন।
সুচিস্মিতা লিখল,বিষয় ব্যক্তিগত।নাম সুচিস্মিতা বোস,পলাশডাঙ্গা।কিভেবে বোসের পর লিখল সেন।
সিকদারবাবুকে স্লিপ দিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বললেন,মিসেস সেন পলাশডাঙ্গা থেকে এসেছেন?
--আমার বাড়ী পলাশডাঙ্গা এখন এখানে লায়েকবাজারে থাকি।
--ঠিক আছে বসুন।সাহেবের শরীরটা ভাল নেই তার উপর পার্টির লোকজন-।
সুচি ভিজিটরস রুমে দেখল আগে থেকেই জনা সাত-আট জন বিরক্তিকর মুখে বসে আছে। সুচিস্মিতা বসে অপেক্ষা করে। মনে হাসে একসময় যে নীলু তাকে খুশি করার জন্য ব্যস্ত থাকতো আজ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য হত্যে দিয়ে বসে আছে।
হঠাৎ সাহেবের ঘর থেকে মোটা মত লোক উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে এল।পিছনে কয়েকজন হাতে কিছু মালপত্র।মোটা লোকটি বলল,সহজ পথে চলে এ্যাই এগুলো গাড়ীতে তোল।শালা জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ।ওরা বেরিয়ে যেতে সিকদারবাবু এসে বললেন,স্যারের শরীর ভালো নয়।আপনার কাল আসুন।
--এতক্ষন ধরে বসে আছি আবার কাল--।
--আমি সব শ্লিপ রেখে দিচ্ছি।আপনাদের আগে ডাকা হবে।
সুচির মাথা ঝম ঝিম করে উঠল,জিজ্ঞেস করে আপনি আমার শ্লিপটা দেখি্যেছিলেন?
--সব দেখিয়েছি।আমি কি মিথ্যে বলছি?আসলে ওরা কিছু উপহার নিয়ে এসেছিল স্যার নিতে রাজী হন নি।এই নিয়ে গোলমাল।
--বুঝলাম তাতে আমাদের অপরাধ কি?
--ম্যাডাম ঘড়ি দেখেছেন?ভিজিটিং আউয়ারস কটা অবধি?
সুচিস্মিতা টলতে টলতে রিক্সায় উঠল। সে কেন সুচিস্মিতা বোস সেন লিখতে গেল?
রিক্সায় উঠে রুমাল বের করে চোখ মুছলো।একসময় নীলু বাড়ীর নীচে ঘোরাঘুরি করত এক পলক দেখা পাওয়ার জন্য।কত বদলে দেয় মানুষকে ক্ষমতা।অথচ সে নীলুকে কত উচ্চ আসনে বসিয়েছিল। পারুকে কি বলবে সে? লজ্জায় গ্লানিতে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। পলাশডাঙ্গা দেখেও চিনতে পারেনি কি করে বিশ্বাস করবে।
চাপা দরজা খুলে দিল।সুচি জিজ্ঞেস করে,পারু কই?
--ভাইরে ঘুম পাড়ায়।
চেঞ্জ করে বাথরুমে ঢুকলো। বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার খুলে দিয়েও স্বস্তি হয়না।সারা শরীরে যেন ক্লেদ জড়িয়ে আছে।নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হচ্ছে।শাওয়ারে জল আর চোখের জল একাকার।একবার মনে হয় ভদ্রলোক নীলু নাও তো হতে পারে।হলেও অনেক বদলে গেছে নীলু।
--দিদিভাই ফিরেছে?তাহলে ভাত দাও।
পারুর গলা পেয়ে সুচি নিজেকে প্রস্তুত করে।ওকে কিছু বুঝতে দেবে না।একটাই ভুল করেছে আগ বাড়িয়ে কেন নামের পরে সেন লিখতে গেল?স্নানের পর এখন ভাল লাগছে।নীলুর সঙ্গে তার এমন কি সম্পর্ক ছিল?তবে একবার দেখা করতে পারতো।পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা কি খুশি হইনা।
দুজনে খেতে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করে,টুকুন ঘুমিয়েছে?
--হুউম।পারমিতা বুঝতে পারে কিছু হয়েছে।দিদিভাইকে একটু সময় দিতে হবে।
পারমিতা লক্ষ্য করে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে দিদিভাই।উঠে কাছে গিয়ে বলে,এই অবেলায় খেতে ইচ্ছে না করলে খেও না।
পাশ ফিরে দেখে পারমিতাকে দেখে বুকের মধ্যে কান্না উথলে ওঠে। এই মেয়েটা তাকে একটু বোঝে।
--কি হয়েছে দিদিভাই?নীলু কি ম্যারেড? মমতা ভরা গলায় বলে পারমিতা।
সুচিস্মিতা ভাত রেখে উঠে দাড়ায়।বেসিনে হাত ধুয়ে বলল,কতদিন বাপি মাম্মীকে দেখিনি।ভাবছি পলাশডাঙ্গা হতে ঘুরে আসব।
--মামণি তো বলেছে কলেজে ছুটি পড়লে বড়দিভাইয়ের বাড়ী যাবে।
--আজকের কথা মাসীমণিকে কিছু বলিস না।
--কলেজে বড়দি বলেছিলেন লেখালিখি করার কথা।লেখালিখি করলে হয়তো মনটা হালকা হবে।
--আমিও বলছি তোমার লেখার হাত খুব ভাল।গরমের ছুটিটা একটা কিছু লেখো।
সারা দুপুর দু-বোনের মধ্যে অনেক কথা হয়।সব কথা পরিষ্কার করে না বললেও পারমিতার মনে হয় কোথাও একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে।এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম ভাঙ্গে চাপার ডাকে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চা খেতে ওরা তৈরী হয়।বিকেলে ওরা হাটতে বের হয়।টুকুনও উঠে পড়ে।
--দেখেছো ওকে কেউ ডাকেনি ঠিক উঠে পড়েছে।পারমিতা বলল।
--আঃ পারু ওকে তো কোলে নিতে হয়না,তুই ওরকম করিস কেন?
--কোলে নিতে হয়না কিন্তু ওর জন্য জোরে হাটতে পারি না।
চওড়া রাস্তা যান বাহন বলতে অটো রিক্সা মাঝে মাঝে কিছু প্রাইভেট কার।রাস্তার দু-পাশে বিস্তীর্ণ ফাকা জমিন।অঞ্চলটা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।হাটার পক্ষে প্রশস্ত।
তারাপীঠকে পিছনে রেখে দক্ষিন দিকে সোজা গেলে শান্তি নিকেতন।সুচি বলল, একদিন শান্তি নিকেতন যাবার খুব ইচ্ছে।
রাতে শুয়ে শুয়ে সুচিস্মিতা ভাবছে একটা ফয়শলা হওয়া দরকার।বিষয়টা কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। একটা হেস্তনেস্ত করে একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে।ভাল মন্দ যাহাই ঘটুক সত্যরে লও সহজে।মনে পড়ল কবির বানী। কলেজের দিদিমনি পরিচয় দিয়ে আলাপ করা যেতে পারে।শবরীর প্রতিক্ষা সম্পর্কে মতামত জানতে চাইবে।বিরক্ত হলে চলে আসবে।
পারমিতা পাশে শুয়ে উসখুস করে।মালদা থেকে ফেরার পর থেকে দিদিভাইয়ের একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।বয়সে ছোটো হলেও দিদিভাইয়ের সঙ্গে তার বন্ধুতের সম্পর্ক।কোনো কিছুই গোপন করে না এবার মনে হল কিছু একটা চেপে যাচ্ছে।পাশ ফিরে একটা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সুচিকে।
--কি হল পারু ঘুমোস নি?
--দিদিভাই তোমার মত অত পড়াশুনা করিনি ঠিক কিন্তু আমাকে বোকা ভেবোনা।
সুচি পাশ ফিরে পারুকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমার আদুরে বোনটাকে আমি বোকা ভাবতে পারি।
--এই সব বলে তুমি সব তালগোল পালিয়ে দিচ্ছো।
সুচি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,আমারই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
--সেইজন্যই তো বলছি আমাকে সব খুলে বলো তাহলে তোমার মনের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা হবে।
সুচি কলেজের সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলল।পারমিতা কিছুক্ষন চুপচাপ তারপর বলল,তুমি শিক্ষিকা তোমার উচিত ছিল কাছে গিয়ে আলাপ করা।
--তখন তো বুঝিনি অত তাড়াতাড়ি চলে যাবে।
--তুমি বলছো নীলদা এখানে এসেছে?
--আমি কখন বললাম?
--যাইহোক ঐ ডিএম এখানে এসেছে।শোনো দিদিভাই কালই চলো--।
--মাসীমণি থাকবে না তুই গেলে টুকুনকে কে দেখবে?আমি একাই যাব।
--ঠিক আছে।সরাসরি কথা বলো।যদি দেখ সত্যি সত্যি বিয়ে করেছে তাহলে কথা বলে বিব্রত করার মানে হয়না।
--সবে এল কটা দিন যাক।
--না না দিদিভাই আমার কথা শোনো তুমি কালই যাবে।
সকাল হতে ব্যস্ততা শুরু হয়।স্নান করে অনির্বান নীলাঞ্জনা খেতে বসে গেল।দুজনকেই কলেজ যেতে হবে।এখনো গরমের ছুটি পড়েনি।টুকুন বসেছে মায়ের সঙ্গে।নীলাঞ্জনা বললেন,দিদিভাইকে পেয়ে আড্ডা দিতে বসে যেওনা।খেয়ে দেয়ে যা করার কোরো।
পারু সুচির দিকে তাকিয়ে হাসল।
মাসীমণি বেরোবার পর সুচি বলল,পারু আমি আসি।
--শোনো দিদিভাই প্রথমে কনফার্ম হবে বিয়ে করেছে কিনা।আর বিয়ে করলেও আপসেট হবে না।বড়মাসী বলল,মেশোর বন্ধুর ছেলে ডাক্তার--।
--ভাগ তুই কি মনে করিস তোর দিদিভাই এত ঠুনকো?
পারু খিল খিল করে হেসে বলল,অল দা বেস্ট।
রিক্সাওলাকে বলতে বোঝা গেল ভালই চেনে।তিরিশ টাকা ভাড়।সুচি রিক্সায় উঠতে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে রিক্সাওলা বলল,এই বাবুটা নতুন এসেছে।
--উনি কেমন লোক?
--লোক খারাপ না।কিন্তু অফিসের লোকজন তার কাছে ঘেঁষতে দেয় না।কাছে যেতি না পারলে মানুষ কি করে তার কথা বলবে বলেন?
বাংলোর কাছে নেমে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে সুচিস্মিতা। গেটে সশস্ত্র পুলিশ দাঁড়িয়ে বাঙালি বলে মনে হয় না।তাহলে কি ফিরে যাবে? একটা বছর পাঁ-ছয়ের বাচ্চা এসে দিব্য হাত ধরে জিজ্ঞেস করে,তুমি কে বতে?
--আমি সুচিস্মিতা।তোমার নাম কি?
--কুনটো বলবো?মা বলে সোনু সাহেব বলে,সাহেব।
--তুমি এখানে কোথায় থাকো?
--আমি এখানেই থাকি বতে।লতুন আসছি।
সুচিস্মিতার মনে হল এই বোধ হয় ডিএমের ছেলে।জিজ্ঞেস করে,সাহেব কোথায়?
--ঘরে শুয়ে আছে শরীল ভাল নাই বতে।তুমি দেখবে?
সুচিস্মিতার মনে হল সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।তোমার সাহেব রাগ করবে না?
--উঃ রাগ করলে দেখাই দিবো।ছেলেটি হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল।দুর থেকে সিপাইরা দেখছে। বয়সের তুলনায় ছেলেটা বেশ চটপটে।শ্যামলা রঙ নাদুস নুদুস চেহারা,আদর করতে ইচ্ছে হয়।আগে জানলে টফি কিম্বা ক্যাডবেরি কিছু একটা হাতে করে আনা যেতো।
একজন মহিলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,সোনু কুথা যাচ্ছিস?
--সাহেবের কাছে লিয়ে যাচ্ছি।
--সাহেবের শরীর ভাল নাই,তু দাড়া কেনে।
মহিলা ঘরে ঢুকে বেরিয়ে এসে বলল,সাহেব অফিসে যাচ্ছে আপনে অফিসে যান কেনে।
--সাহেবের স্ত্রী নেই?
মহিলা হেসে ফেলল।সাহেব বিহাই করে নাই বটে ইস্তিরি কুথা থিক্যে আইসবে?
সুচিস্মিতা আশ্বস্থ হয়।মনে হচ্ছে এই নীলু হবে।একতলায় অফিস,সুচিস্মিতা নীচে নেমে এল।অফিসের সামনে একটা টাটাসুমো দাঁড়িয়ে, আশে পাশে বেশ কিছু ছেলে ছোকরা দাঁড়িয়ে গুলতানি করছে।
একজন সিপাহী এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,কাউকে খুজছেন?
--ডিএমের সঙ্গে দেখা করব।
সুচিস্মিতাকে নিয়ে সিকদারবাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। সিকাদারবাবু জিজ্ঞেস করেন,কি ব্যাপার?
--ডিএমের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
--আজ পার্টির লোকজন এসেছে।একটু ইতস্তত করে একটা স্লিপ এগিয়ে দিয়ে বলল,ডিটেলস লিখে দিয়ে ভিজিটরস রুমে বসুন।
সুচিস্মিতা লিখল,বিষয় ব্যক্তিগত।নাম সুচিস্মিতা বোস,পলাশডাঙ্গা।কিভেবে বোসের পর লিখল সেন।
সিকদারবাবুকে স্লিপ দিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বললেন,মিসেস সেন পলাশডাঙ্গা থেকে এসেছেন?
--আমার বাড়ী পলাশডাঙ্গা এখন এখানে লায়েকবাজারে থাকি।
--ঠিক আছে বসুন।সাহেবের শরীরটা ভাল নেই তার উপর পার্টির লোকজন-।
সুচি ভিজিটরস রুমে দেখল আগে থেকেই জনা সাত-আট জন বিরক্তিকর মুখে বসে আছে। সুচিস্মিতা বসে অপেক্ষা করে। মনে হাসে একসময় যে নীলু তাকে খুশি করার জন্য ব্যস্ত থাকতো আজ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য হত্যে দিয়ে বসে আছে।
হঠাৎ সাহেবের ঘর থেকে মোটা মত লোক উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে এল।পিছনে কয়েকজন হাতে কিছু মালপত্র।মোটা লোকটি বলল,সহজ পথে চলে এ্যাই এগুলো গাড়ীতে তোল।শালা জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ।ওরা বেরিয়ে যেতে সিকদারবাবু এসে বললেন,স্যারের শরীর ভালো নয়।আপনার কাল আসুন।
--এতক্ষন ধরে বসে আছি আবার কাল--।
--আমি সব শ্লিপ রেখে দিচ্ছি।আপনাদের আগে ডাকা হবে।
সুচির মাথা ঝম ঝিম করে উঠল,জিজ্ঞেস করে আপনি আমার শ্লিপটা দেখি্যেছিলেন?
--সব দেখিয়েছি।আমি কি মিথ্যে বলছি?আসলে ওরা কিছু উপহার নিয়ে এসেছিল স্যার নিতে রাজী হন নি।এই নিয়ে গোলমাল।
--বুঝলাম তাতে আমাদের অপরাধ কি?
--ম্যাডাম ঘড়ি দেখেছেন?ভিজিটিং আউয়ারস কটা অবধি?
সুচিস্মিতা টলতে টলতে রিক্সায় উঠল। সে কেন সুচিস্মিতা বোস সেন লিখতে গেল?
রিক্সায় উঠে রুমাল বের করে চোখ মুছলো।একসময় নীলু বাড়ীর নীচে ঘোরাঘুরি করত এক পলক দেখা পাওয়ার জন্য।কত বদলে দেয় মানুষকে ক্ষমতা।অথচ সে নীলুকে কত উচ্চ আসনে বসিয়েছিল। পারুকে কি বলবে সে? লজ্জায় গ্লানিতে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। পলাশডাঙ্গা দেখেও চিনতে পারেনি কি করে বিশ্বাস করবে।
চাপা দরজা খুলে দিল।সুচি জিজ্ঞেস করে,পারু কই?
--ভাইরে ঘুম পাড়ায়।
চেঞ্জ করে বাথরুমে ঢুকলো। বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার খুলে দিয়েও স্বস্তি হয়না।সারা শরীরে যেন ক্লেদ জড়িয়ে আছে।নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হচ্ছে।শাওয়ারে জল আর চোখের জল একাকার।একবার মনে হয় ভদ্রলোক নীলু নাও তো হতে পারে।হলেও অনেক বদলে গেছে নীলু।
--দিদিভাই ফিরেছে?তাহলে ভাত দাও।
পারুর গলা পেয়ে সুচি নিজেকে প্রস্তুত করে।ওকে কিছু বুঝতে দেবে না।একটাই ভুল করেছে আগ বাড়িয়ে কেন নামের পরে সেন লিখতে গেল?স্নানের পর এখন ভাল লাগছে।নীলুর সঙ্গে তার এমন কি সম্পর্ক ছিল?তবে একবার দেখা করতে পারতো।পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা কি খুশি হইনা।
দুজনে খেতে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করে,টুকুন ঘুমিয়েছে?
--হুউম।পারমিতা বুঝতে পারে কিছু হয়েছে।দিদিভাইকে একটু সময় দিতে হবে।
পারমিতা লক্ষ্য করে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে দিদিভাই।উঠে কাছে গিয়ে বলে,এই অবেলায় খেতে ইচ্ছে না করলে খেও না।
পাশ ফিরে দেখে পারমিতাকে দেখে বুকের মধ্যে কান্না উথলে ওঠে। এই মেয়েটা তাকে একটু বোঝে।
--কি হয়েছে দিদিভাই?নীলু কি ম্যারেড? মমতা ভরা গলায় বলে পারমিতা।
সুচিস্মিতা ভাত রেখে উঠে দাড়ায়।বেসিনে হাত ধুয়ে বলল,কতদিন বাপি মাম্মীকে দেখিনি।ভাবছি পলাশডাঙ্গা হতে ঘুরে আসব।
--মামণি তো বলেছে কলেজে ছুটি পড়লে বড়দিভাইয়ের বাড়ী যাবে।
--আজকের কথা মাসীমণিকে কিছু বলিস না।
--কলেজে বড়দি বলেছিলেন লেখালিখি করার কথা।লেখালিখি করলে হয়তো মনটা হালকা হবে।
--আমিও বলছি তোমার লেখার হাত খুব ভাল।গরমের ছুটিটা একটা কিছু লেখো।
সারা দুপুর দু-বোনের মধ্যে অনেক কথা হয়।সব কথা পরিষ্কার করে না বললেও পারমিতার মনে হয় কোথাও একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে।এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম ভাঙ্গে চাপার ডাকে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চা খেতে ওরা তৈরী হয়।বিকেলে ওরা হাটতে বের হয়।টুকুনও উঠে পড়ে।
--দেখেছো ওকে কেউ ডাকেনি ঠিক উঠে পড়েছে।পারমিতা বলল।
--আঃ পারু ওকে তো কোলে নিতে হয়না,তুই ওরকম করিস কেন?
--কোলে নিতে হয়না কিন্তু ওর জন্য জোরে হাটতে পারি না।
চওড়া রাস্তা যান বাহন বলতে অটো রিক্সা মাঝে মাঝে কিছু প্রাইভেট কার।রাস্তার দু-পাশে বিস্তীর্ণ ফাকা জমিন।অঞ্চলটা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।হাটার পক্ষে প্রশস্ত।
তারাপীঠকে পিছনে রেখে দক্ষিন দিকে সোজা গেলে শান্তি নিকেতন।সুচি বলল, একদিন শান্তি নিকেতন যাবার খুব ইচ্ছে।