03-05-2020, 03:29 PM
(This post was last modified: 30-04-2021, 10:42 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[৩৬]
নীলাঞ্জনার ঘুম ভেঙ্গে যায়।বুকের মধ্যে মুখ গুজে অনি।খাট থেকে নেমে নাইটি গায়ে চাপিয়ে দেখে অনি গভীর ঘুমে অচেতন।আবছা আলো এসে পড়েছে অনির উলঙ্গ শরীরে। কাল রাতে অনেক পরিশ্রম করিয়েছে বেচারীকে দিয়ে।ঠেলেঠুলে কোমরে জড়িয়ে দিল লুঙ্গিটা।মনে হল কলিং বেল বাজলো। কে এল এত সকালে?নীলাঞ্জনার কপালে ভাজ পড়ে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।দুধঅলা এত সকালে আসে না।ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়ালে ঘড়ির দিকে দেখল,চারটে বেজে দশ মিনিট। দরজা খুলে অবাক,একী সুচি তুই?
–ছুটি পড়ে গেল চলে এলাম।একগাল হেসে বলে সুচিস্মিতা।টুকুন কোথায়?
–টুকুন দিদির সঙ্গে ঘুমোচ্ছে।যতক্ষন ঘুমিয়ে থাকে শান্তি।
নীলাঞ্জনা দরজা বন্ধ করে চাপাকে ডাকতে গেলেন।চাপা জেগে বসে আছে।চা করার ফরমাস করে বলেন,কিরে রাতে ঘুমোস নি?
–কি করে ঘুম আসবে বলো?
ঠোটে ঠোট চেপে এক মুহুর্ত ভেবে নীলাঞ্জনা বলেন,কিছু না করলে খালি খালি ধরলো?
–বিশ্বাস করো মাওবাদী টাদী ও কিসসু জানে না।ফুপিয়ে কেদে ফেলে চাপা।
–আচ্ছা তুই চা কর,দেখি কি করা যায়।সুচি এসেছে।
সুচিস্মিতা দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করতে থাকে।নীলাঞ্জনা বাইরে শব্দ করতে বলল,এসো।
নীলাঞ্জনা চিন্তিত মুখে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করেন,তুই কখন রওনা দিয়েছিস?
–কাল রাতে।ভোরবেলা এসে পৌছেছে ট্রেন।
–মুখ ধুয়ে নে,চাপা চা করছে।এদিকে হয়েছে এক ঝামেলা।চাপা কান্না কাটি শুরু করেছে।
–কেন?কি ঝামেলা?
–ওর ভাইকে পুলিশে ধরেছে।দেখি একজন উকিল-টুকিল ধরে কিছু করা যায় কি না?তুই একটু গড়িয়ে নে।
--পারু ওঠেনি?
--ও উঠবে এত সকালে? পারুর আকাশে এখনো চাঁদ জ্বলজ্বল করছে।
অনির্বান ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে প্রস্তুত হতে থাকে।নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,তুমি রেডি?
–আমি চা খেয়েই বেরবো।অনির্বান বললেন।
–আমিও যাবো তোমার সঙ্গে।নীলাঞ্জনা বলেন।
চাপা চা নিয়ে ঢুকলো।নীলাজনা জিজ্ঞেস করেন,তোমার ভাইয়ের নাম কি ?
–সুদাম মাহাতো।সাতপাচে থাকে না,পাটি-ফাটি কিছু বোঝেই না।
–ঠিক আছে আমরা যাচ্ছি।তুমি চিন্তা কোর না।সান্ত্বনা দিলেন নীলাঞ্জনা।
পারমিতার ঘুম ভেঙ্গে গেছে,বিছানা ছেড়ে ওঠেনি।বেরোবার আগে নীলাঞ্জনা পারুর ঘরে গিয়ে বললেন,আমরা বেরোচ্ছি।ভাই রইল দেখো।সুচি এসেছে।
--দিদিভাই এসেছে!কোথায়?তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে।
--ঘূমোচ্ছে।এখন বিরক্ত কোর না।সারারাত জার্নি করে এসেছে।
ব্যাজার মুখে শুয়ে পড়ে পারমিতা।
অনির্বান ঢুকে বলল,গুড মর্নিং মিতা।
--মর্নিং।অনি তুমি যাচ্ছো না?
--আমরা দুজনেই যাচ্ছি।
ওরা বেরিয়ে যেতে ঘাড় উচু করে ঘড়ি দেখল।আটটা বেজে গেছে।পারমিতা বিছানা ছেড়ে উঠে মনে মনে বলল,ঘুম বের করছি। গলা চড়িয়ে বলল, চাপামাসী চা দাও।
সুন্দর নাচছে দেবজয়া।চোখে মুখে আকুতি।আলোর রঙ বদলাচ্ছে।নীল আলোতে স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরী হয়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে সুচি।
--সুচি তুমি এখানে?
পিছন ফিরে দেখল নীল।
--কত খুজেছি তোমায়।
-- বানিয়ে বলার স্বভাব তোমার গেলনা,মিথ্যুক কোথাকার?
--বিশ্বাস কর চোখ ছুয়ে বলছি।নীলু এগিয়ে এসে কাধে হাত রাখে।তুমি আমার গায়ে হাত দেবে না, হাত সরাও।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল।
পারমিতা অবাক হয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,দিদিভাই আমি।
সুচিস্মিতা চোখ মেলে তাকিয়ে পারুকে দেখে বলল,তুই এখানে?
--কিসব আবোল তাবোল বলছো?স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
সুচিস্মিতা উঠে বসে বলল,নিজে সারারাত ঘুমিয়ে এখন আমাকে জ্বালাতে এলি?মাসীমণি কোথায়?
--অনি মামণি বেরিয়েছে,তোমাকে বলেনি?
--ও হ্যা চাপাদির ভাইকে পুলিশে ধরেছে।
মারমিতা গলা তুলে বলল,চাপামাসী চা জল খাবার হল?
সুচিস্মিতা চাদর সরিয়ে বসার জায়গা করতে পারমিতা বসে জিজ্ঞেস করে,গরমের ছুটি কতদিন?
--প্রায় মাস খানেক।
--কাকে স্বপ্ন দেখছিলে বলতো?পারুর মুখে দুষ্টু হাসি।
চাপা দুটো প্লেটে লুচি তরকারী নিয়ে এসে বলল,এখানে দেবো?
পারু হাত বাড়ীয়ে প্লেট দুটো নিয়ে বলল,দশ মিনিট পর চা দিও।
সুচি উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে বলল, ছুটির আগে কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল।তোকে খুব মিস করছিলাম।
--তুমি গান গেয়েছো?
--মেয়েদের দিয়ে একটা নৃতনাট্য করিয়েছি।
--চণ্ডালিকা না নটির পুজো?
--আমি স্ক্রিপ্ট বানিয়েছি শবরীর প্রতিক্ষা।
--তুমি বানিয়েছো?
--হ্যা ব্যাগে আছে তোকে পড়াবো।তোর মতামত জানতে চাই।
--ওদের কেমন লেগেছে?
--বলল তো ভালোই।জানিস ডিএম এসেছিল।দেখতে দেখতে ওর নাকি চোখে জল এসে গেছিল।
--কই দেখি তোমার স্ক্রিপ্ট?
সুচি খাওয়া শেষ করে উঠে ব্যাগ থেকে স্ক্রিট বের করে পারুর হাতে দিল।সুচি জানে তার বোনটি এমনিতে হালকা কথাবার্তা বললেও ওর মধ্যে একটা চিন্তাশীল বিচক্ষন মন আছে।পারু স্ক্রিপ্ট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চোখ বোলাতে থাকে।
সুচি অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে পারু কি বলে?পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক সময় গুম মেরে কি যেন ভাবে।পড়ছে কি পড়ছে না বোঝা যায় না।চাপা চা দিয়ে গেল।
চায়ে চুমুক দিয়ে সুচি জিজ্ঞেস করে, কিরে কি ভাবছিস?
--দিদিভাই তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
সুচি সন্ধিৎসু চোখে তাকায়।
--তুমি নীলদাকে এখনো ভুলতে পারোনি তাই না?
--ওখানে নীলুর নাম কোথায় পেলি?
--তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছো।
--ভুলব কেন?নীলু পাঞ্চালিদি বন্দনা শ্রীময়ি ধনেশ সুদীপ--।
--থাক আর বলতে হবে না। আমার উত্তর পেয়ে গেছি।দিদিভাই ওকে কোনোদিন দেখিনি ভবিষ্যতেও দেখব কিনা জানি না আস্তে আস্তে আমিও ওর প্রেমে পড়ে গেছি।
--পড়াচ্ছি,খুব ফাজিল হয়ে গেছিস? শোন পারু ছেলেটা খুব সাদাসিধে সরল কলেজে ওর এই সিমপ্লিসিটি ভালো লেগেছিল।এরকম সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।কলেজে চেনা জানার মধ্যে তোর অনেকের মধ্যে একজনকে একটু আলাদা এরকম মনে হয়নি কখনো?
পারমিতা হাসল।এক মুহূর্ত ভেবে বলল,পড়তে ভালই লেগেছে।তোমার আরেকটি গুণ আবিষ্কার করলাম।এবার এটা কতটা বাস্তবায়িত করতে পেরেছে তোমার ছাত্রীরা সেটা তুমি বলতে পারবে।স্ক্রিপ্টের মধ্যে একটা মেলাঙ্কলি সুর মনকে আচ্ছন্ন করে।
ডিএমের নাম নীলাভ সেন পারুর কাছে চেপে গেল সুচি।ওকে বললে আবার এই নিয়ে ঠাট্টা তামাশা শুরু করে দেবে।
টুকুন ঘুম থেকে উঠে সুচির কোলে উঠে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করল কেমন আছো?
-- বালো।তুমি বালো আছো?
যাক বেলা হল স্নানে যেতে হবে।স্নান করলে শরীর ঝরঝরে হবে।সুচি জিজ্ঞেস করে,কিরে তুই যাবে না আমি যাবো?
--তুমিই যাও ধকল করে এসেছো।স্নান করলে ফ্রেশ লাগবে।এসো আমার কাছে এসো।হাত বাড়িয়ে টুকুনকে নিল পারু।
তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।পারুকে অনেক কথা বলেনি ওকে বলেই বা কি হবে?চকিতে একটা চিন্তা মনে ঝিলিক দিয়ে গেল।একদিন এখানকার ডিএম অফিসে গেলে কেমন হয়?অন্তত ব্যাপারটা কনফার্ম হওয়া যেতো।নীলুই ডিএম কিনা আর এই ডিএম বিয়ে করেছে কিনা?বড়দি বলছিল বিয়ের পর ছেলেদের আচরণ যেমন হয় এর নাকি সেরকম নয়।ঠোটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়।
পার্টি অফিসের সামনে জিপ এসে দাড়াতে কমরেড জেপি জিপ থেকে নেমে পার্টি অফিসে ঢুকে চেয়ারে বসলেন।সবাই চুপচাপ দাদা কি বলেন শোনার জন্য।
--বরেন ডিএমের সঙ্গে এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট হয়েছে?
--হ্যা সিকদারবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।
--ডিএমের বয়স বেশী না বিয়ে করেনি।ভাগ্যিস জানতে পেরেছি।জামদানী শাড়ি কিনে বসে আছি।ডিএম কি শাড়ী পরবে?
সবাই জেপির রসিকতায় হো-হো করে হেসে উঠল।
-- কটায় এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট কিছু বলেছে?
--ভিজিটং আউয়ারসে যেতে হবে।দশটা থেকে এগারোটা।
ডিএমকে দেবার জন্য উপহার সামগ্রীর মধ্যে থেকে শাড়ীটা সরিয়ে রাখা হল জেপির নির্দেশে।জেলায় কোনো ডিএম এলে পার্টির পক্ষ হতে উপহার দেওয়া রেওয়াজ চলে আসছে।
স্নান করে সবাই অপেক্ষা করছে।টুকুনকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে মাসীমণী এলে খাবে বলে বসে আছে সুচি।চাপারানি হাসদা রান্না ঘরে বসে ভাবছে ভাইয়ের কথা। দিদিমনির ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে।
নীলাঞ্জনা ফিরলেন তখন প্রায় একটা বাজে।পারু জিজ্ঞেস করে,ছেড়েছে?
--তোর অনুকে জিজ্ঞেস কর।কোথা থেকে একটা ঘাটের মড়া উকিল ধরে এনেছে ভাল করে কথা বলতেই পারে না।
--আমি এইসব করেছি নাকি কখনো?অনির্বান বলল।
--কি হয়েছে বলবে তো?চাপাদি অস্থির হয়ে বসে আছে।
অনির্বান ব্যাপারটা বিশদে বলে,পুলিশ ভ্যানে আসামীদের নামাতে দেখল ওর মধ্যে সুদাম নেই।খোজ নিতে জানাল থানায় খোজ নিতে।গেলাম থানায় সেখানে ওসি গৌরাঙ্গবাবু বললেন,আসামীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।জিজ্ঞেস করলাম ধরলেন কেন আবার ছেড়েই বা দিলেন কেন?ভদ্রলোক রেগে গিয়ে বলল,আপনি কে?
ঝামেলার ভয়ে কথা বাড়ালাম না। থানা থেকে বেরোতে এক কনেস্টবল বলল,নয়া ডিএম এসছিল থানায়।খুব বকাবকি করেছে।ব্যাস তারপর সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে।
ঝুটমুট ধরেছিল।
যাক ছাড়া পেয়েছে চাপা আড়াল থেকে সব শুনছিল,জিজ্ঞেস করল,দিদিমণি এবার খেতে দিই।
--কিরে তোরা খাসনি?তোরা তো খেয়ে নিতে পারতিস।
সবাই একসঙ্গে খেতে বসে যায়।সুচি খেতে খেতে বড়দির কথাটা ভাবে,এমন হৃদয়বান মানুষ মিথ্যে বলতে পারেনা।নিজের উপর ভীষণ রাগ হয়।যখন নামটা শুনলো তখন বেরিয়ে কেন ভালোভাবে দেখল না ওটা নীলু নাকি অন্য কেউ?
নীলাঞ্জনার ঘুম ভেঙ্গে যায়।বুকের মধ্যে মুখ গুজে অনি।খাট থেকে নেমে নাইটি গায়ে চাপিয়ে দেখে অনি গভীর ঘুমে অচেতন।আবছা আলো এসে পড়েছে অনির উলঙ্গ শরীরে। কাল রাতে অনেক পরিশ্রম করিয়েছে বেচারীকে দিয়ে।ঠেলেঠুলে কোমরে জড়িয়ে দিল লুঙ্গিটা।মনে হল কলিং বেল বাজলো। কে এল এত সকালে?নীলাঞ্জনার কপালে ভাজ পড়ে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।দুধঅলা এত সকালে আসে না।ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়ালে ঘড়ির দিকে দেখল,চারটে বেজে দশ মিনিট। দরজা খুলে অবাক,একী সুচি তুই?
–ছুটি পড়ে গেল চলে এলাম।একগাল হেসে বলে সুচিস্মিতা।টুকুন কোথায়?
–টুকুন দিদির সঙ্গে ঘুমোচ্ছে।যতক্ষন ঘুমিয়ে থাকে শান্তি।
নীলাঞ্জনা দরজা বন্ধ করে চাপাকে ডাকতে গেলেন।চাপা জেগে বসে আছে।চা করার ফরমাস করে বলেন,কিরে রাতে ঘুমোস নি?
–কি করে ঘুম আসবে বলো?
ঠোটে ঠোট চেপে এক মুহুর্ত ভেবে নীলাঞ্জনা বলেন,কিছু না করলে খালি খালি ধরলো?
–বিশ্বাস করো মাওবাদী টাদী ও কিসসু জানে না।ফুপিয়ে কেদে ফেলে চাপা।
–আচ্ছা তুই চা কর,দেখি কি করা যায়।সুচি এসেছে।
সুচিস্মিতা দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করতে থাকে।নীলাঞ্জনা বাইরে শব্দ করতে বলল,এসো।
নীলাঞ্জনা চিন্তিত মুখে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করেন,তুই কখন রওনা দিয়েছিস?
–কাল রাতে।ভোরবেলা এসে পৌছেছে ট্রেন।
–মুখ ধুয়ে নে,চাপা চা করছে।এদিকে হয়েছে এক ঝামেলা।চাপা কান্না কাটি শুরু করেছে।
–কেন?কি ঝামেলা?
–ওর ভাইকে পুলিশে ধরেছে।দেখি একজন উকিল-টুকিল ধরে কিছু করা যায় কি না?তুই একটু গড়িয়ে নে।
--পারু ওঠেনি?
--ও উঠবে এত সকালে? পারুর আকাশে এখনো চাঁদ জ্বলজ্বল করছে।
অনির্বান ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে প্রস্তুত হতে থাকে।নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,তুমি রেডি?
–আমি চা খেয়েই বেরবো।অনির্বান বললেন।
–আমিও যাবো তোমার সঙ্গে।নীলাঞ্জনা বলেন।
চাপা চা নিয়ে ঢুকলো।নীলাজনা জিজ্ঞেস করেন,তোমার ভাইয়ের নাম কি ?
–সুদাম মাহাতো।সাতপাচে থাকে না,পাটি-ফাটি কিছু বোঝেই না।
–ঠিক আছে আমরা যাচ্ছি।তুমি চিন্তা কোর না।সান্ত্বনা দিলেন নীলাঞ্জনা।
পারমিতার ঘুম ভেঙ্গে গেছে,বিছানা ছেড়ে ওঠেনি।বেরোবার আগে নীলাঞ্জনা পারুর ঘরে গিয়ে বললেন,আমরা বেরোচ্ছি।ভাই রইল দেখো।সুচি এসেছে।
--দিদিভাই এসেছে!কোথায়?তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে।
--ঘূমোচ্ছে।এখন বিরক্ত কোর না।সারারাত জার্নি করে এসেছে।
ব্যাজার মুখে শুয়ে পড়ে পারমিতা।
অনির্বান ঢুকে বলল,গুড মর্নিং মিতা।
--মর্নিং।অনি তুমি যাচ্ছো না?
--আমরা দুজনেই যাচ্ছি।
ওরা বেরিয়ে যেতে ঘাড় উচু করে ঘড়ি দেখল।আটটা বেজে গেছে।পারমিতা বিছানা ছেড়ে উঠে মনে মনে বলল,ঘুম বের করছি। গলা চড়িয়ে বলল, চাপামাসী চা দাও।
সুন্দর নাচছে দেবজয়া।চোখে মুখে আকুতি।আলোর রঙ বদলাচ্ছে।নীল আলোতে স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরী হয়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে সুচি।
--সুচি তুমি এখানে?
পিছন ফিরে দেখল নীল।
--কত খুজেছি তোমায়।
-- বানিয়ে বলার স্বভাব তোমার গেলনা,মিথ্যুক কোথাকার?
--বিশ্বাস কর চোখ ছুয়ে বলছি।নীলু এগিয়ে এসে কাধে হাত রাখে।তুমি আমার গায়ে হাত দেবে না, হাত সরাও।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল।
পারমিতা অবাক হয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,দিদিভাই আমি।
সুচিস্মিতা চোখ মেলে তাকিয়ে পারুকে দেখে বলল,তুই এখানে?
--কিসব আবোল তাবোল বলছো?স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
সুচিস্মিতা উঠে বসে বলল,নিজে সারারাত ঘুমিয়ে এখন আমাকে জ্বালাতে এলি?মাসীমণি কোথায়?
--অনি মামণি বেরিয়েছে,তোমাকে বলেনি?
--ও হ্যা চাপাদির ভাইকে পুলিশে ধরেছে।
মারমিতা গলা তুলে বলল,চাপামাসী চা জল খাবার হল?
সুচিস্মিতা চাদর সরিয়ে বসার জায়গা করতে পারমিতা বসে জিজ্ঞেস করে,গরমের ছুটি কতদিন?
--প্রায় মাস খানেক।
--কাকে স্বপ্ন দেখছিলে বলতো?পারুর মুখে দুষ্টু হাসি।
চাপা দুটো প্লেটে লুচি তরকারী নিয়ে এসে বলল,এখানে দেবো?
পারু হাত বাড়ীয়ে প্লেট দুটো নিয়ে বলল,দশ মিনিট পর চা দিও।
সুচি উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে বলল, ছুটির আগে কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল।তোকে খুব মিস করছিলাম।
--তুমি গান গেয়েছো?
--মেয়েদের দিয়ে একটা নৃতনাট্য করিয়েছি।
--চণ্ডালিকা না নটির পুজো?
--আমি স্ক্রিপ্ট বানিয়েছি শবরীর প্রতিক্ষা।
--তুমি বানিয়েছো?
--হ্যা ব্যাগে আছে তোকে পড়াবো।তোর মতামত জানতে চাই।
--ওদের কেমন লেগেছে?
--বলল তো ভালোই।জানিস ডিএম এসেছিল।দেখতে দেখতে ওর নাকি চোখে জল এসে গেছিল।
--কই দেখি তোমার স্ক্রিপ্ট?
সুচি খাওয়া শেষ করে উঠে ব্যাগ থেকে স্ক্রিট বের করে পারুর হাতে দিল।সুচি জানে তার বোনটি এমনিতে হালকা কথাবার্তা বললেও ওর মধ্যে একটা চিন্তাশীল বিচক্ষন মন আছে।পারু স্ক্রিপ্ট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চোখ বোলাতে থাকে।
সুচি অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে পারু কি বলে?পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক সময় গুম মেরে কি যেন ভাবে।পড়ছে কি পড়ছে না বোঝা যায় না।চাপা চা দিয়ে গেল।
চায়ে চুমুক দিয়ে সুচি জিজ্ঞেস করে, কিরে কি ভাবছিস?
--দিদিভাই তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
সুচি সন্ধিৎসু চোখে তাকায়।
--তুমি নীলদাকে এখনো ভুলতে পারোনি তাই না?
--ওখানে নীলুর নাম কোথায় পেলি?
--তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছো।
--ভুলব কেন?নীলু পাঞ্চালিদি বন্দনা শ্রীময়ি ধনেশ সুদীপ--।
--থাক আর বলতে হবে না। আমার উত্তর পেয়ে গেছি।দিদিভাই ওকে কোনোদিন দেখিনি ভবিষ্যতেও দেখব কিনা জানি না আস্তে আস্তে আমিও ওর প্রেমে পড়ে গেছি।
--পড়াচ্ছি,খুব ফাজিল হয়ে গেছিস? শোন পারু ছেলেটা খুব সাদাসিধে সরল কলেজে ওর এই সিমপ্লিসিটি ভালো লেগেছিল।এরকম সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।কলেজে চেনা জানার মধ্যে তোর অনেকের মধ্যে একজনকে একটু আলাদা এরকম মনে হয়নি কখনো?
পারমিতা হাসল।এক মুহূর্ত ভেবে বলল,পড়তে ভালই লেগেছে।তোমার আরেকটি গুণ আবিষ্কার করলাম।এবার এটা কতটা বাস্তবায়িত করতে পেরেছে তোমার ছাত্রীরা সেটা তুমি বলতে পারবে।স্ক্রিপ্টের মধ্যে একটা মেলাঙ্কলি সুর মনকে আচ্ছন্ন করে।
ডিএমের নাম নীলাভ সেন পারুর কাছে চেপে গেল সুচি।ওকে বললে আবার এই নিয়ে ঠাট্টা তামাশা শুরু করে দেবে।
টুকুন ঘুম থেকে উঠে সুচির কোলে উঠে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করল কেমন আছো?
-- বালো।তুমি বালো আছো?
যাক বেলা হল স্নানে যেতে হবে।স্নান করলে শরীর ঝরঝরে হবে।সুচি জিজ্ঞেস করে,কিরে তুই যাবে না আমি যাবো?
--তুমিই যাও ধকল করে এসেছো।স্নান করলে ফ্রেশ লাগবে।এসো আমার কাছে এসো।হাত বাড়িয়ে টুকুনকে নিল পারু।
তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।পারুকে অনেক কথা বলেনি ওকে বলেই বা কি হবে?চকিতে একটা চিন্তা মনে ঝিলিক দিয়ে গেল।একদিন এখানকার ডিএম অফিসে গেলে কেমন হয়?অন্তত ব্যাপারটা কনফার্ম হওয়া যেতো।নীলুই ডিএম কিনা আর এই ডিএম বিয়ে করেছে কিনা?বড়দি বলছিল বিয়ের পর ছেলেদের আচরণ যেমন হয় এর নাকি সেরকম নয়।ঠোটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়।
পার্টি অফিসের সামনে জিপ এসে দাড়াতে কমরেড জেপি জিপ থেকে নেমে পার্টি অফিসে ঢুকে চেয়ারে বসলেন।সবাই চুপচাপ দাদা কি বলেন শোনার জন্য।
--বরেন ডিএমের সঙ্গে এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট হয়েছে?
--হ্যা সিকদারবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।
--ডিএমের বয়স বেশী না বিয়ে করেনি।ভাগ্যিস জানতে পেরেছি।জামদানী শাড়ি কিনে বসে আছি।ডিএম কি শাড়ী পরবে?
সবাই জেপির রসিকতায় হো-হো করে হেসে উঠল।
-- কটায় এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট কিছু বলেছে?
--ভিজিটং আউয়ারসে যেতে হবে।দশটা থেকে এগারোটা।
ডিএমকে দেবার জন্য উপহার সামগ্রীর মধ্যে থেকে শাড়ীটা সরিয়ে রাখা হল জেপির নির্দেশে।জেলায় কোনো ডিএম এলে পার্টির পক্ষ হতে উপহার দেওয়া রেওয়াজ চলে আসছে।
স্নান করে সবাই অপেক্ষা করছে।টুকুনকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে মাসীমণী এলে খাবে বলে বসে আছে সুচি।চাপারানি হাসদা রান্না ঘরে বসে ভাবছে ভাইয়ের কথা। দিদিমনির ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে।
নীলাঞ্জনা ফিরলেন তখন প্রায় একটা বাজে।পারু জিজ্ঞেস করে,ছেড়েছে?
--তোর অনুকে জিজ্ঞেস কর।কোথা থেকে একটা ঘাটের মড়া উকিল ধরে এনেছে ভাল করে কথা বলতেই পারে না।
--আমি এইসব করেছি নাকি কখনো?অনির্বান বলল।
--কি হয়েছে বলবে তো?চাপাদি অস্থির হয়ে বসে আছে।
অনির্বান ব্যাপারটা বিশদে বলে,পুলিশ ভ্যানে আসামীদের নামাতে দেখল ওর মধ্যে সুদাম নেই।খোজ নিতে জানাল থানায় খোজ নিতে।গেলাম থানায় সেখানে ওসি গৌরাঙ্গবাবু বললেন,আসামীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।জিজ্ঞেস করলাম ধরলেন কেন আবার ছেড়েই বা দিলেন কেন?ভদ্রলোক রেগে গিয়ে বলল,আপনি কে?
ঝামেলার ভয়ে কথা বাড়ালাম না। থানা থেকে বেরোতে এক কনেস্টবল বলল,নয়া ডিএম এসছিল থানায়।খুব বকাবকি করেছে।ব্যাস তারপর সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে।
ঝুটমুট ধরেছিল।
যাক ছাড়া পেয়েছে চাপা আড়াল থেকে সব শুনছিল,জিজ্ঞেস করল,দিদিমণি এবার খেতে দিই।
--কিরে তোরা খাসনি?তোরা তো খেয়ে নিতে পারতিস।
সবাই একসঙ্গে খেতে বসে যায়।সুচি খেতে খেতে বড়দির কথাটা ভাবে,এমন হৃদয়বান মানুষ মিথ্যে বলতে পারেনা।নিজের উপর ভীষণ রাগ হয়।যখন নামটা শুনলো তখন বেরিয়ে কেন ভালোভাবে দেখল না ওটা নীলু নাকি অন্য কেউ?