02-05-2020, 02:56 PM
(This post was last modified: 30-04-2021, 10:39 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
[৩৩]
হ্যালো মাইক টেশটিং …ওয়ান…টু…থ্রি….।সকাল থেকে ব্যস্ত কমলাবাড়ি কলেজ প্রঙ্গন।সুচিস্মিতা মেয়েদের বলেছে তিনটের মধ্যে যেন সবাই কলেজে চলে আসে। অনসুয়া নেপথ্য হতে পাঠ করবে।ওর গলার স্বর বেশ মিষ্টি।অনেক খেটেছে সুচিস্মিতা তা ছাড়া আর কিইবা করতে পারে,কেমন করবে মেয়েরা কে জানে।অনসুয়াও স্ক্রিপ্টের তারিফ করেছে।
সন্ধ্যে নামার আগেই ভরে গেল মাঠ। সুপর্ণা মিত্র সুন্দর সেজে এসেছেন।অনসুয়া মুচকি হেসে বলল,বড়দি পার্লারে গিয়ে সেজে এসেছেন। একটা ঘরে মেয়েদের সাজাচ্ছেন মেক আপ ম্যান। সুচিস্মিতা তাকে সাহায্য করছে।সুখেনবাবু ধুতি পাঞ্জাবী পরে একেবার বর বেশে হাজির।ডি এমের গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ভীড় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিল।ডি এম সাহেবের একপাশে সুখেন বাবু আর একপাশে ডি আই মিঃ চাকলাদার। দিদিমণিদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হল বড়দি মঞ্চে ঢুকে সবাইকে নমস্কার করলেন।
সুখেনবাবু উঠে ঘোষণা করলেন,মাননীয় ডি এম সাহেবকে আমাদের মধ্যে পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি।তিনি ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের আবানে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন সে জন্য কলেজের পক্ষ হতে তাকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন বিদ্যালয় পরিদরশক মি.চাকলাদার তাকেও আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।এবার বিশিষ্ট অতিথিদের মাল্যভুষিত করে বরণ করার পালা।
সুখেনবাবু বড়দির দিকে তাকালেন।বড়দি চোখের ইশারায় কি যেন বলে একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন। সুখেবাবু চিরকুটে চোখ বুলিয়ে বললেন,আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রীমতী জয়ী সরকার প্রধান অতিথিকে মাল্যদান করছে।
একটি সুবেশা পুতুলের মত মেয়ে মালা নিয়ে মঞ্চে বসা ডি এম সাহেবের গলায় পরিয়ে দিল।করতালিতে মুখর হল,সুখেনবাবু আবার বললেন,এবার অতিথিকে মাল্যদান করবে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রী মতী সুলেখা সান্যাল।
সুচিস্মিতা চন্দনের টিপ দিয়ে সাজাচ্ছে শবরী রুপী দেবজয়াকে।বাইরে তখন সুখেনবাবুর বক্তৃতা শুরু হয়ে গেছে।বিদ্যালয়ের প্রশংসা ডিএম সাহেবে প্রশংসা কি কষ্টের মধ্যে বিদ্যালয় চালাতে হচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তিনি বললেন।পরিশেষে আকুলভাবে ডি এম সাহেবের সহযোগিতা কামনা করলেন।বক্তৃতা শেষ করে বললেন,এবার আমি আমাদের জেলা শাসক শ্রী নীলাভ সেনকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।শ্রী নীলাভ সেন।
নামটা কানে যেতে সুচিস্মিতার হাত কেপে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।দ্রুত সাজানো শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে।আড়াল থেকে দেখে,মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক।এক মাথা কালো চুল কানের কাছে চিক চিক করছে কয়েক গাছা রুপোলি চুল।চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা।একী নীল?চেনাই যাচ্ছে না।সেই বোকা বোকা চেহারা আর নেই।ঠোটের নীচে গাম্ভীর্য। তার ভুলও হতে পারে। মাননীয় সভাপতি,জেলা পরি দর্শক এবং প্রধান শিক্ষিকা অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী সর্বোপরি আমার স্নেহের ছাত্রী বৃন্দ।উপস্থিত অন্যান্য সুধী বৃন্দ,আজকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কাছে শুনলাম,ছাত্রীদের দ্বারা পরিবেশিত হবে “শবরীর প্রতীক্ষা”,আপনারা তার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন আমি জানি।নিয়ম রক্ষার খাতিরে দু-একটা কথা আমি বলছি। আজ আমার মনে পড়ছে ছাত্র জীবনের কথা।জীবনের সব থেকে গুরুত্ব পুর্ণ ছাত্র জীবন।জীবনের এক চরম অধ্যায় কৈশোর শেষ হয়ে যৌবন অভিমুখে যাত্রা…আজও আমাকে হাতছানি দেয় সেই কলেজ জীবন। বড় হলে একদিন তোমরাও বুঝবে।….. শিশু কিশোর চিত্ত ঈশ্বরের আবাসন।এখানে কোন মালিন্য নেই।এদের সাহচর্যে দূর হয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত গ্লানি।…আমার বাড়িতেও একটা ছেলে আছে। সারাক্ষন তার মায়ের সঙ্গে কাটে….সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে যখন আসি মনের সমস্ত ক্লান্তি অবসাদ যেন মুহুর্তে সরে গিয়ে পাই অপার শান্তি... ভদ্রলোক বিবাহিত? এত বয়স হয়েছে বিয়ে হওয়া স্বাভাবিক।সুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।
…..আমাকে এমন সময় ডাকা হল যখন আমার বদলির খাড়া ঝুলছে মাথার উপর …অন্যত্র বীরভুমে…তবু আমি কথা দিচ্ছি যাবার আগে যতদুর সম্ভব কিছু একটা করে যাবো…সম্পাদক মশাইকে অনুরোধ অফিসে তিনি যেন দেখা করেন…তাছাড়া ডি আই সাহেব থাকলেন অতি অমায়িক মানুষ….সবাইকে আমার প্রীতি-শুভেচ্ছা ভালবাসা ও নমস্কার জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি।
ভদ্রলোক কোন কলেজে পড়তেন বললে বোঝা যেতো উনি নীল কিনা?নামের মিল থাকলেও কথা বলার ঢং একেবারে অন্য রকম।একবার ইচ্ছে হল সামনা-সামনি হবে কিনা পরমুহুর্তে নিজেকে সংযত করে সুচিস্মিতা।কি দরকার বিয়ে-থা করে সংসারী হয়েছে যদি নীলও হয় তাহলে মিথ্যে বিড়ম্বনা বাড়িয়ে কি লাভ?সাজ ঘরে ফিরে দেখল প্রস্তুতি সারা।সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে, অনসুয়া কোথায়?
মেয়েরা বলল,দিদিমণি অনসুয়াদি মাইক ম্যানের সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করতে গেছেন।
দর্শক আসনের সামনের সারিতে নীলাভ সেন তার একপাশে বড়দি অন্যপাশে মি.চাকলাদার।পর্দা উঠতে সুরু হল দিদিমণিদের "নব আনন্দে জাগো" উদবোধনী সঙ্গীত।
অনসুয়া এসে খবর দিল,ডিএম সাহেবের তাড়া আছে।বড়দি বললেন, উদবোধনী সঙ্গীতের পরই নাচ শুরু করতে হবে।পুরস্কার বিতরণী পরে। বিরক্তিকর লাগে এভাবে হুট করে ফরমাশ করলে হয়?তাগাদা দিল সুচি,তাড়াতাড়ি করো দেবজয়া।দেবজয়ার প্রধান ভুমিকা।অনসুয়া মাইকে ঘোষণা করল,মঞ্চ গুছিয়ে নিতে দু-মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর আবার পর্দা উঠল,আলো জ্বলতেই মঞ্চে নাচের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা দেবজয়া ধীরে ধীরে চোখ তোলে।শুরু হল "শবরীর প্রতীক্ষা।"
মঞ্চে আশ্রম পরিবেশ।সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে। পিছন থেকে বর্ণণা করছে অনসুয়া।দেখতে দেখতে নীলাভ সেন বলেন, রামায়ণে রাম-রাবণের কথা আছে জানি।এইসব ছোটো ছোটো উপকাহিনীর খবর সবাই জানে না।স্ক্রিপ্ট কোথায় পেলেন?
–আমাদের দিদিমণিরাই সব করেছেন।বড়দি বললেন।
–বেশ সুন্দর নাচছে কিন্তু।
–কেউ নাচ শেখে না।দিদিমণিরাই ট্রেণ্ড করেছেন।
–উনি নিশ্চয় নাচ জানেন?
–শান্তি নিকেতনের ছাত্রী ছিলেন।
পাশে বসা সুখেন বাবু অত্যন্ত বিরক্ত।ইচ্ছে ছিল ডি এমের পাশে বসবেন তার আগেই সুপর্ণা মিত্তির বসে পড়েছে।এমন ঢলাঢলি জানে ডি এম দেখে একেবারে গদগদ।বিয়ে হয়েছে ঘরে স্বামী আছে তবু ছোকছোকানি গেলনা।দেখো কেমন সেজেছে যেন কচি খুকি।সুপর্ণা মিত্র লক্ষ্য করেন ডি এম সাহেবের চোখ চিকচিক করছে।চোখাচুখি হতেই নীলাভ সেন লজ্জিতভাবে বলেন,আমি একটু সেণ্টিমেণ্টাল।রুমালে চোখ মুছলেন। শবরীর ভুমিকায় মেয়েটির চোখের ভাষায় ফুটে উঠেছে হাহাকার। বুকের চাপা বেদনা যেন শারীরি ভঙ্গীতে স্পষ্ট।
শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না ডি এম সাহেব।ওসি এসে খবর দিলেন,এস পি সাহেব কি জরুরী ব্যাপারে কথা বলতে চান।নীলাভ সেন দুঃখ প্রকাশ করে বিদায় নিলেন।সুখেন বাবু এগিয়ে দিতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন,স্যর আমি দু একদিনের মধ্যে দেখা করছি।
–অবশ্যই দেখা করবেন।
অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত এগারোটা বেজে গেল।সবাই খুব প্রশংসা করলো। এত অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে এমন সুন্দর হবে কেউ ভাবেনি।অন্যান্য দিদিমণিরা সামনে প্রশংসা করলেও ভিতরে ভিতরে আশাহত।ধারণা ছিল হাস্যকর কিছু হবে। রামায়নের কাহিনী কেউ এখনকার দর্শক ভাল ভাবে নেবে না।কাল প্রায় সবাই বাইরে থেকে আসছে। আধুনিক গান গম্ভীরা গানের দল প্রভৃতি অংশ নেবে। সুচিস্মিতা এসে খোজ করতে জানলো ডি এম চলে গেছেন।মনে একটা আফশোস রয়ে গেল জানা হল না কে এই নীলাভ সেন? অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হল যদি ইনি নীলু হন তাহলে হয়তো কষ্ট পেতো।
দিন তিনেক পর আবার কলেজ শুরু হল।দুদিন পর গরমের ছুটি তাই কেমন একটা গাছাড়া ভাব।ছুটি পড়লে মাসীমণির কাছে যাবে,কতদিন দেখা হয় না টুকুনের সঙ্গে তাছাড়া পারমিতা আছে।
হ্যালো মাইক টেশটিং …ওয়ান…টু…থ্রি….।সকাল থেকে ব্যস্ত কমলাবাড়ি কলেজ প্রঙ্গন।সুচিস্মিতা মেয়েদের বলেছে তিনটের মধ্যে যেন সবাই কলেজে চলে আসে। অনসুয়া নেপথ্য হতে পাঠ করবে।ওর গলার স্বর বেশ মিষ্টি।অনেক খেটেছে সুচিস্মিতা তা ছাড়া আর কিইবা করতে পারে,কেমন করবে মেয়েরা কে জানে।অনসুয়াও স্ক্রিপ্টের তারিফ করেছে।
সন্ধ্যে নামার আগেই ভরে গেল মাঠ। সুপর্ণা মিত্র সুন্দর সেজে এসেছেন।অনসুয়া মুচকি হেসে বলল,বড়দি পার্লারে গিয়ে সেজে এসেছেন। একটা ঘরে মেয়েদের সাজাচ্ছেন মেক আপ ম্যান। সুচিস্মিতা তাকে সাহায্য করছে।সুখেনবাবু ধুতি পাঞ্জাবী পরে একেবার বর বেশে হাজির।ডি এমের গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ভীড় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিল।ডি এম সাহেবের একপাশে সুখেন বাবু আর একপাশে ডি আই মিঃ চাকলাদার। দিদিমণিদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হল বড়দি মঞ্চে ঢুকে সবাইকে নমস্কার করলেন।
সুখেনবাবু উঠে ঘোষণা করলেন,মাননীয় ডি এম সাহেবকে আমাদের মধ্যে পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি।তিনি ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের আবানে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন সে জন্য কলেজের পক্ষ হতে তাকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন বিদ্যালয় পরিদরশক মি.চাকলাদার তাকেও আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।এবার বিশিষ্ট অতিথিদের মাল্যভুষিত করে বরণ করার পালা।
সুখেনবাবু বড়দির দিকে তাকালেন।বড়দি চোখের ইশারায় কি যেন বলে একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন। সুখেবাবু চিরকুটে চোখ বুলিয়ে বললেন,আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রীমতী জয়ী সরকার প্রধান অতিথিকে মাল্যদান করছে।
একটি সুবেশা পুতুলের মত মেয়ে মালা নিয়ে মঞ্চে বসা ডি এম সাহেবের গলায় পরিয়ে দিল।করতালিতে মুখর হল,সুখেনবাবু আবার বললেন,এবার অতিথিকে মাল্যদান করবে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রী মতী সুলেখা সান্যাল।
সুচিস্মিতা চন্দনের টিপ দিয়ে সাজাচ্ছে শবরী রুপী দেবজয়াকে।বাইরে তখন সুখেনবাবুর বক্তৃতা শুরু হয়ে গেছে।বিদ্যালয়ের প্রশংসা ডিএম সাহেবে প্রশংসা কি কষ্টের মধ্যে বিদ্যালয় চালাতে হচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তিনি বললেন।পরিশেষে আকুলভাবে ডি এম সাহেবের সহযোগিতা কামনা করলেন।বক্তৃতা শেষ করে বললেন,এবার আমি আমাদের জেলা শাসক শ্রী নীলাভ সেনকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।শ্রী নীলাভ সেন।
নামটা কানে যেতে সুচিস্মিতার হাত কেপে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।দ্রুত সাজানো শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে।আড়াল থেকে দেখে,মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক।এক মাথা কালো চুল কানের কাছে চিক চিক করছে কয়েক গাছা রুপোলি চুল।চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা।একী নীল?চেনাই যাচ্ছে না।সেই বোকা বোকা চেহারা আর নেই।ঠোটের নীচে গাম্ভীর্য। তার ভুলও হতে পারে। মাননীয় সভাপতি,জেলা পরি দর্শক এবং প্রধান শিক্ষিকা অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী সর্বোপরি আমার স্নেহের ছাত্রী বৃন্দ।উপস্থিত অন্যান্য সুধী বৃন্দ,আজকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কাছে শুনলাম,ছাত্রীদের দ্বারা পরিবেশিত হবে “শবরীর প্রতীক্ষা”,আপনারা তার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন আমি জানি।নিয়ম রক্ষার খাতিরে দু-একটা কথা আমি বলছি। আজ আমার মনে পড়ছে ছাত্র জীবনের কথা।জীবনের সব থেকে গুরুত্ব পুর্ণ ছাত্র জীবন।জীবনের এক চরম অধ্যায় কৈশোর শেষ হয়ে যৌবন অভিমুখে যাত্রা…আজও আমাকে হাতছানি দেয় সেই কলেজ জীবন। বড় হলে একদিন তোমরাও বুঝবে।….. শিশু কিশোর চিত্ত ঈশ্বরের আবাসন।এখানে কোন মালিন্য নেই।এদের সাহচর্যে দূর হয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত গ্লানি।…আমার বাড়িতেও একটা ছেলে আছে। সারাক্ষন তার মায়ের সঙ্গে কাটে….সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে যখন আসি মনের সমস্ত ক্লান্তি অবসাদ যেন মুহুর্তে সরে গিয়ে পাই অপার শান্তি... ভদ্রলোক বিবাহিত? এত বয়স হয়েছে বিয়ে হওয়া স্বাভাবিক।সুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।
…..আমাকে এমন সময় ডাকা হল যখন আমার বদলির খাড়া ঝুলছে মাথার উপর …অন্যত্র বীরভুমে…তবু আমি কথা দিচ্ছি যাবার আগে যতদুর সম্ভব কিছু একটা করে যাবো…সম্পাদক মশাইকে অনুরোধ অফিসে তিনি যেন দেখা করেন…তাছাড়া ডি আই সাহেব থাকলেন অতি অমায়িক মানুষ….সবাইকে আমার প্রীতি-শুভেচ্ছা ভালবাসা ও নমস্কার জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি।
ভদ্রলোক কোন কলেজে পড়তেন বললে বোঝা যেতো উনি নীল কিনা?নামের মিল থাকলেও কথা বলার ঢং একেবারে অন্য রকম।একবার ইচ্ছে হল সামনা-সামনি হবে কিনা পরমুহুর্তে নিজেকে সংযত করে সুচিস্মিতা।কি দরকার বিয়ে-থা করে সংসারী হয়েছে যদি নীলও হয় তাহলে মিথ্যে বিড়ম্বনা বাড়িয়ে কি লাভ?সাজ ঘরে ফিরে দেখল প্রস্তুতি সারা।সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে, অনসুয়া কোথায়?
মেয়েরা বলল,দিদিমণি অনসুয়াদি মাইক ম্যানের সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করতে গেছেন।
দর্শক আসনের সামনের সারিতে নীলাভ সেন তার একপাশে বড়দি অন্যপাশে মি.চাকলাদার।পর্দা উঠতে সুরু হল দিদিমণিদের "নব আনন্দে জাগো" উদবোধনী সঙ্গীত।
অনসুয়া এসে খবর দিল,ডিএম সাহেবের তাড়া আছে।বড়দি বললেন, উদবোধনী সঙ্গীতের পরই নাচ শুরু করতে হবে।পুরস্কার বিতরণী পরে। বিরক্তিকর লাগে এভাবে হুট করে ফরমাশ করলে হয়?তাগাদা দিল সুচি,তাড়াতাড়ি করো দেবজয়া।দেবজয়ার প্রধান ভুমিকা।অনসুয়া মাইকে ঘোষণা করল,মঞ্চ গুছিয়ে নিতে দু-মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর আবার পর্দা উঠল,আলো জ্বলতেই মঞ্চে নাচের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা দেবজয়া ধীরে ধীরে চোখ তোলে।শুরু হল "শবরীর প্রতীক্ষা।"
মঞ্চে আশ্রম পরিবেশ।সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে। পিছন থেকে বর্ণণা করছে অনসুয়া।দেখতে দেখতে নীলাভ সেন বলেন, রামায়ণে রাম-রাবণের কথা আছে জানি।এইসব ছোটো ছোটো উপকাহিনীর খবর সবাই জানে না।স্ক্রিপ্ট কোথায় পেলেন?
–আমাদের দিদিমণিরাই সব করেছেন।বড়দি বললেন।
–বেশ সুন্দর নাচছে কিন্তু।
–কেউ নাচ শেখে না।দিদিমণিরাই ট্রেণ্ড করেছেন।
–উনি নিশ্চয় নাচ জানেন?
–শান্তি নিকেতনের ছাত্রী ছিলেন।
পাশে বসা সুখেন বাবু অত্যন্ত বিরক্ত।ইচ্ছে ছিল ডি এমের পাশে বসবেন তার আগেই সুপর্ণা মিত্তির বসে পড়েছে।এমন ঢলাঢলি জানে ডি এম দেখে একেবারে গদগদ।বিয়ে হয়েছে ঘরে স্বামী আছে তবু ছোকছোকানি গেলনা।দেখো কেমন সেজেছে যেন কচি খুকি।সুপর্ণা মিত্র লক্ষ্য করেন ডি এম সাহেবের চোখ চিকচিক করছে।চোখাচুখি হতেই নীলাভ সেন লজ্জিতভাবে বলেন,আমি একটু সেণ্টিমেণ্টাল।রুমালে চোখ মুছলেন। শবরীর ভুমিকায় মেয়েটির চোখের ভাষায় ফুটে উঠেছে হাহাকার। বুকের চাপা বেদনা যেন শারীরি ভঙ্গীতে স্পষ্ট।
শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না ডি এম সাহেব।ওসি এসে খবর দিলেন,এস পি সাহেব কি জরুরী ব্যাপারে কথা বলতে চান।নীলাভ সেন দুঃখ প্রকাশ করে বিদায় নিলেন।সুখেন বাবু এগিয়ে দিতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন,স্যর আমি দু একদিনের মধ্যে দেখা করছি।
–অবশ্যই দেখা করবেন।
অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত এগারোটা বেজে গেল।সবাই খুব প্রশংসা করলো। এত অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে এমন সুন্দর হবে কেউ ভাবেনি।অন্যান্য দিদিমণিরা সামনে প্রশংসা করলেও ভিতরে ভিতরে আশাহত।ধারণা ছিল হাস্যকর কিছু হবে। রামায়নের কাহিনী কেউ এখনকার দর্শক ভাল ভাবে নেবে না।কাল প্রায় সবাই বাইরে থেকে আসছে। আধুনিক গান গম্ভীরা গানের দল প্রভৃতি অংশ নেবে। সুচিস্মিতা এসে খোজ করতে জানলো ডি এম চলে গেছেন।মনে একটা আফশোস রয়ে গেল জানা হল না কে এই নীলাভ সেন? অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হল যদি ইনি নীলু হন তাহলে হয়তো কষ্ট পেতো।
দিন তিনেক পর আবার কলেজ শুরু হল।দুদিন পর গরমের ছুটি তাই কেমন একটা গাছাড়া ভাব।ছুটি পড়লে মাসীমণির কাছে যাবে,কতদিন দেখা হয় না টুকুনের সঙ্গে তাছাড়া পারমিতা আছে।