01-05-2020, 04:06 PM
(This post was last modified: 26-04-2021, 04:16 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[২৭]
বিয়ের ঝামেলা শেষ,আজ কালরাত্রি। কোথাও মেয়েরা জটলা করছে আবার কোন ঘরে ব্যারিষ্টার মৃন্ময় গল্প করছেন অনির্বানের সঙ্গে।চিন্ময় বাইরে গেছে কোন দরকারে।কেতকি একা ঘরে অপেক্ষা করছে একবার অন্তত অনির্বানের সঙ্গে একান্তে কথা বলা দরকার। বিয়ে বাড়িতে ওকে দেখা অবধি একটা দুঃচিন্তা মাথার মধ্যে ঘুর ঘুর করছে।
ব্যারিষ্টার বসু সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিতে অনির্বান জানালেন তিনি সিগারেট খান না।
–আচ্ছা অধ্যাপক যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ভনিতায় হাসি পায় অনির্বানের,বাঙ্গালি সাহেবদের মনে হয় নাটক মঞ্চের অভিনেতা। খোলা মনের মানুষ কোন কথাই তার গোপন নেই।মৃদু হেসে তাকালেন।
–আপনি নীলাকে বিয়ে করছেন ওর এতবড় মেয়ে আছে জেনেও।ভবিষ্যতে কোন কমপ্লিকেসির সম্ভাবনা নেই তো?
--আপনি পারমিতার কথা বলছেন?বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, পারমিতাকে বাদ দিয়ে এখন জীবনকে ভাবতে পারিনা।
–কোন সালে আপনি পাস করেন?উকিলি ঢং প্রশ্ন করেন মৃন্ময় বসু।
–সে এক ভয়ংকর সময়।আমাদের নৈতিকতার ভাঙ্গনের শুরু।ওয়ার্ডসোয়ার্থ লিখেছিলেন, to be young was very heaven…আমার মনে হয় to be young was a sin.
–বিয়ে করেন নি কেন এতদিন?
–একটি ঘটনা…আজ আর তাকে মনে করতে চাই না,নারীর প্রতি এনেছিল বিতৃষ্ণা, হয়তো এভাবেই কাটিয়ে দিতাম বাকী জীবন।নীলাদির সঙ্গে দেখা হবার পর নতুন করে চিনলাম জীবনকে।ফিরে পেলাম বাঁচার আশ্বাস।
–নীলা তো আপনার চেয়ে বয়সে বড় মনে হয়?
–আমি হিসেব করিনি সে ভাবে।
এমন সময় পারমিতা প্রবেশ করে বলে,অনু তুমি ফ্রি হলে একবার দেখা কোরো।
মৃন্ময় অবাক হয়ে বলেন,একী পারু? অনির্বান তোমার চেয়ে বয়সে বড়?
–মেশো সেটা আমাদের বিবেচ্য উই আর ফ্রেণ্ড ।পারমিত মৃদু স্বরে বলল।
অনির্বান ধমকে ওঠেন,মিতু ইটস টূ মাচ!
পারমিতা একমুহুর্ত করুণ দৃষ্টি মেলে অনুকে দেখে তারপর দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
–মিঃ বোস ছেলে মানুষের কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না।
অনির্বান বেরিয়ে পারমিতার খোজ করেন।বারান্দায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে উদাসভাবে।অনির্বান কাছে গিয়ে বলেন,মিতু তুমি রাগ করেছো? পারমিতা বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলে,অনু আমি রাগ করিনি।তুমি আমাকে নিজের মেয়ের মত শাসন করবে কথা দাও ভুল করলে বকবে?
অনির্বান পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে হাত থেমে যায় বলেন,নিজের মেয়ের মত মানে? শোন মিতু,তুমি আমাকে একথা দ্বিতীয়বার বললে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো না।তুমি আমার নীলাদির মেয়ে নীলাদির সুখ নীলাদির দুঃখ–নীলাদির সব আমার নিজের।
–আমার ভুল হয়ে গেছে।অনু তুমি রাগ করোনি তো?চোখ মুছে জিজ্ঞেস করে পারমিতা।
–উনি গুরুজন।সব কথার উত্তর দিতে হবে তার কোন মানে নেই।যাক বলো তোমার কি দরকার বলছিলে?
–তোমায় একটা কাজ দিয়েছিলাম ভুলে গেছো?
–তুমি কাজ দিলে আমি ভুলে যাবো?আমি সারা পাড়া ঘুরে হদিশ পেয়েছি।
–ওকে বলেছো দেখা করার কথা?
–সব কথা শোন,মোটামুটী যা খবর কিছুদিন হল নীলাভ পাড়ায় নেই।বাইরে কোথাও গেছে।
পারমিতার মুখটা কালো হয়ে যায়,বলে,কোথায় গেছে?
–ওর বাবা মারা যাবার পর খুব কষ্টে দিন কাটছিল ওদের।মনে হয় কাজের ধান্দায় গিয়ে থাকবে কোথাও।
–ইস বেচারা।তুমি এসব কথা সুচিদিকে বলতে যেওনা।যাও মেশোর সঙ্গে গল্প করো গে।পারমিতা চলে যেতে উদ্যত হলে অনির্বান বলেন,মিতু তুমি নীলাদিকে দেখেছো?
পারমিতা ঘুরে দাঁড়িয়েঅনুর মুখ দেখে মায়া হয়,মামণির প্রতি রাগ হয় বলে,তোমার নীলাদি মনে হয় অনেকদিন পর তার বড়দিভাইকে পেয়ে সব ভুলে গেছে।
ব্যারিষ্টার বোসের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বোর হয়ে গেছেন অনির্বান। বারান্দার রেলিঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।এই জায়গাটা একটু নির্জন।কোথায় যেন বোমার শব্দ হল। কিছুক্ষন পর দুম দুম করে পর পর বোমা ফাটতে থাকে।অঞ্চলটা উত্তপ্ত হয়ে আছে।সত্তরের দশক বুঝি ফিরে এল আবার।এই শব্দ কি পুলিশের কানে পৌছায় না?
–কি হল খোজ করছিলে কেন?অনির্বান তাকিয়ে দেখেন নীলাদি।
অভিমানী গলায় অনির্বান বলেন,খোজ করছিলাম তোমায় কে বলল,মিতু? আচ্ছা নীলাদি খোজ না করলে তুমি আসতে না?আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?
–পাগলামি করে না।তুমি কি মনে করো আমার দেখতে ইচ্ছে করে না?
=ছাই করে বলে অনির্বান জড়িয়ে ধরে নীলাঞ্জনার ঠোট মুখে পুরে চুষতে থাকেন।
–উম..উমহ…উমহ..।নীলাঞ্জনা শব্দ করে।
অনির্বান ছেড়ে দেবার পর নীলাঞ্জনা বলেন,এবার খুশি?
–তুমি খুশি হয়েছো?
–কি করবো বলো?
–কি এত গল্প তোমার বড়দির সঙ্গে?
–তোমাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল।জিজ্ঞেস করছিল আর সন্তান নেবো কিনা?
–তুমি কি বললে?
–বললাম ঠিক করিনি।অনি পারু রাজি হলে নেবো।এ্যাই জানো আজ রাতে আমরা একসঙ্গে শোবো। বড়দিভাই ব্যবস্থা করবে বলেছে।সবার সামনে তুমি নীলাদি-নীলাদি করবে না, সবাই কি ভাবে বলতো?আমার ভীষণ লজ্জা করে। গাল টিপে দিতে বলেন, আসি,রাতে কথা হবে।
–ঠিক আছে দিদি বলবো না।অনির্বান বলেন।
নীলাঞ্জনা চলে যেতে অনির্বান ভাবলেন,একতলায় বৈঠকখানায় গিয়ে বসা যাক।একটা ঘরের দরজা ভেজানো এই ঘরে কেতকি আছেন।কি করছে বেচারি একা একা?ঘরটা পার হতে যাবেন মনে হল কে যেন হাত ধরে টান দিল।হ্যাচকা টানে ঘরের মধ্যে ঢুকে চিনতে পারলেন কেতকি।পিছন ফিরে দরজা বন্ধ করছেন।
–কি হল দরজা বন্ধ করছো কেন?অনির্বান জিজ্ঞেস করেন।
মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলেন কেতকি।অনির্বান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
–কাল থেকে তোমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।কেতকি বলেন।
–আমার সঙ্গে কি কথা?
–অনির্বান তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিও না।
–তুমি কি এখন কলেজে আছো?
–ওনি প্লীজ চিনু আমাকে অধ্যাপিকা বানিয়েছে বিশ্বাস করো।
–কলেজ শিক্ষিকা পরিচয় দিতে লজ্জা পাও?অথচ মিথ্যে বলতে লজ্জা হয় না?
–তুমি আমাকে নির্লজ্জ বেহায়া যা খুশি বলো,কিন্তু বিশ্বাস করো চিনু আমাকে ওর দাদার সঙ্গে অধ্যাপিকা বলে আলাপ করিয়ে দেয়।আমি বাধা দিতে পারিনি।
–যদি সব জানাজানি হয়ে যায় পরিনাম কি হবে ভেবেছো?
–তুমি না বললে কেউ জানবে না।চিনু বলেছে বিয়ের পর আমরা এখান থেকে চলে যাবো।আচমকা অনির্বানকে জড়িয়ে ধরে কেতকি বলেন, তুমি কি আমার এতবড় ক্ষতি করতে পারবে? শুনেছি তুমি নীলাঞ্জনাদেবীকে বিয়ে করেছো।উনি যদি আমাদের আগের সম্পর্ক জানতে পারেন তাহলে?আমি তোমার ভাল চাই…।
এক ধাক্কায় বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে কেতকিকে বলেন অনির্বান, তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?
কেতকি মাটিতে পড়ে গিয়ে উঠে বসে অনির্বানের ধোনে মুখ গুজে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি পুরানো কথা আজও ভুলতে পারোনি?
–শোন কেতকি সেদিন তুমি যা করেছো তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজ আমি যা পেয়েছি তা আমার কাছে ঈশ্বরের আশির্বাদ।আমার সঙ্গে নীলাদির সম্পর্ক স্বচ্ছ কাচের মত।আমার অতীত নিয়ে নীলাদির ভাবার মত সময় নেই।
বাইরে থেকে কে যেন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।
–দোহাই অনির্বান তুমি ওই আলমারির পিছনে চলে যাও।
অনির্বান আলমারির আড়ালে যেতে কেতকি উঠে দরজা খুলে দিলেন।হাসি মুখে নীলাঞ্জনা প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করেন,কি ঘুমুছিলেন নাকি?
অনির্বান আলমারির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন।তাকে দেখে নীলাঞ্জনা মজা করে বলেন,তুমি এখানে?পুরানো প্রেম ঝালাই করছিলে নাকি?
–কি করবো তুমি তোমার দিদিকে নিয়ে মজে আছো,একা কি করবো বলো?
–তাই?দাড়াও পারুকে ডাকছি।ভাগো এখান থেকে।
অনির্বান দ্রুত পালিয়ে গেল।বিস্ময়ে নির্বাক কেতকি হা করে তাকিয়ে থাকেন।তারপর অস্ফুটে বলেন, আমি ওনাকে ডেকেছিলাম।
–তোমাকে আর সাফাই দিতে হবে না।ওকে আমি চিনি না ভেবেছো?
ভদ্রমহিলা কি সব জানেন?কেতকি ভাবে এখান থেকে না বেরনো অবধি শান্তি নেই।পারু কে?পারুর নাম শুনতেই ভয়ে পালাল।ধন্দ্বে পড়ে যায় কেতকি।
বিয়ের ঝামেলা শেষ,আজ কালরাত্রি। কোথাও মেয়েরা জটলা করছে আবার কোন ঘরে ব্যারিষ্টার মৃন্ময় গল্প করছেন অনির্বানের সঙ্গে।চিন্ময় বাইরে গেছে কোন দরকারে।কেতকি একা ঘরে অপেক্ষা করছে একবার অন্তত অনির্বানের সঙ্গে একান্তে কথা বলা দরকার। বিয়ে বাড়িতে ওকে দেখা অবধি একটা দুঃচিন্তা মাথার মধ্যে ঘুর ঘুর করছে।
ব্যারিষ্টার বসু সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিতে অনির্বান জানালেন তিনি সিগারেট খান না।
–আচ্ছা অধ্যাপক যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ভনিতায় হাসি পায় অনির্বানের,বাঙ্গালি সাহেবদের মনে হয় নাটক মঞ্চের অভিনেতা। খোলা মনের মানুষ কোন কথাই তার গোপন নেই।মৃদু হেসে তাকালেন।
–আপনি নীলাকে বিয়ে করছেন ওর এতবড় মেয়ে আছে জেনেও।ভবিষ্যতে কোন কমপ্লিকেসির সম্ভাবনা নেই তো?
--আপনি পারমিতার কথা বলছেন?বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, পারমিতাকে বাদ দিয়ে এখন জীবনকে ভাবতে পারিনা।
–কোন সালে আপনি পাস করেন?উকিলি ঢং প্রশ্ন করেন মৃন্ময় বসু।
–সে এক ভয়ংকর সময়।আমাদের নৈতিকতার ভাঙ্গনের শুরু।ওয়ার্ডসোয়ার্থ লিখেছিলেন, to be young was very heaven…আমার মনে হয় to be young was a sin.
–বিয়ে করেন নি কেন এতদিন?
–একটি ঘটনা…আজ আর তাকে মনে করতে চাই না,নারীর প্রতি এনেছিল বিতৃষ্ণা, হয়তো এভাবেই কাটিয়ে দিতাম বাকী জীবন।নীলাদির সঙ্গে দেখা হবার পর নতুন করে চিনলাম জীবনকে।ফিরে পেলাম বাঁচার আশ্বাস।
–নীলা তো আপনার চেয়ে বয়সে বড় মনে হয়?
–আমি হিসেব করিনি সে ভাবে।
এমন সময় পারমিতা প্রবেশ করে বলে,অনু তুমি ফ্রি হলে একবার দেখা কোরো।
মৃন্ময় অবাক হয়ে বলেন,একী পারু? অনির্বান তোমার চেয়ে বয়সে বড়?
–মেশো সেটা আমাদের বিবেচ্য উই আর ফ্রেণ্ড ।পারমিত মৃদু স্বরে বলল।
অনির্বান ধমকে ওঠেন,মিতু ইটস টূ মাচ!
পারমিতা একমুহুর্ত করুণ দৃষ্টি মেলে অনুকে দেখে তারপর দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
–মিঃ বোস ছেলে মানুষের কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না।
অনির্বান বেরিয়ে পারমিতার খোজ করেন।বারান্দায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে উদাসভাবে।অনির্বান কাছে গিয়ে বলেন,মিতু তুমি রাগ করেছো? পারমিতা বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলে,অনু আমি রাগ করিনি।তুমি আমাকে নিজের মেয়ের মত শাসন করবে কথা দাও ভুল করলে বকবে?
অনির্বান পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে হাত থেমে যায় বলেন,নিজের মেয়ের মত মানে? শোন মিতু,তুমি আমাকে একথা দ্বিতীয়বার বললে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো না।তুমি আমার নীলাদির মেয়ে নীলাদির সুখ নীলাদির দুঃখ–নীলাদির সব আমার নিজের।
–আমার ভুল হয়ে গেছে।অনু তুমি রাগ করোনি তো?চোখ মুছে জিজ্ঞেস করে পারমিতা।
–উনি গুরুজন।সব কথার উত্তর দিতে হবে তার কোন মানে নেই।যাক বলো তোমার কি দরকার বলছিলে?
–তোমায় একটা কাজ দিয়েছিলাম ভুলে গেছো?
–তুমি কাজ দিলে আমি ভুলে যাবো?আমি সারা পাড়া ঘুরে হদিশ পেয়েছি।
–ওকে বলেছো দেখা করার কথা?
–সব কথা শোন,মোটামুটী যা খবর কিছুদিন হল নীলাভ পাড়ায় নেই।বাইরে কোথাও গেছে।
পারমিতার মুখটা কালো হয়ে যায়,বলে,কোথায় গেছে?
–ওর বাবা মারা যাবার পর খুব কষ্টে দিন কাটছিল ওদের।মনে হয় কাজের ধান্দায় গিয়ে থাকবে কোথাও।
–ইস বেচারা।তুমি এসব কথা সুচিদিকে বলতে যেওনা।যাও মেশোর সঙ্গে গল্প করো গে।পারমিতা চলে যেতে উদ্যত হলে অনির্বান বলেন,মিতু তুমি নীলাদিকে দেখেছো?
পারমিতা ঘুরে দাঁড়িয়েঅনুর মুখ দেখে মায়া হয়,মামণির প্রতি রাগ হয় বলে,তোমার নীলাদি মনে হয় অনেকদিন পর তার বড়দিভাইকে পেয়ে সব ভুলে গেছে।
ব্যারিষ্টার বোসের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বোর হয়ে গেছেন অনির্বান। বারান্দার রেলিঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।এই জায়গাটা একটু নির্জন।কোথায় যেন বোমার শব্দ হল। কিছুক্ষন পর দুম দুম করে পর পর বোমা ফাটতে থাকে।অঞ্চলটা উত্তপ্ত হয়ে আছে।সত্তরের দশক বুঝি ফিরে এল আবার।এই শব্দ কি পুলিশের কানে পৌছায় না?
–কি হল খোজ করছিলে কেন?অনির্বান তাকিয়ে দেখেন নীলাদি।
অভিমানী গলায় অনির্বান বলেন,খোজ করছিলাম তোমায় কে বলল,মিতু? আচ্ছা নীলাদি খোজ না করলে তুমি আসতে না?আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?
–পাগলামি করে না।তুমি কি মনে করো আমার দেখতে ইচ্ছে করে না?
=ছাই করে বলে অনির্বান জড়িয়ে ধরে নীলাঞ্জনার ঠোট মুখে পুরে চুষতে থাকেন।
–উম..উমহ…উমহ..।নীলাঞ্জনা শব্দ করে।
অনির্বান ছেড়ে দেবার পর নীলাঞ্জনা বলেন,এবার খুশি?
–তুমি খুশি হয়েছো?
–কি করবো বলো?
–কি এত গল্প তোমার বড়দির সঙ্গে?
–তোমাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল।জিজ্ঞেস করছিল আর সন্তান নেবো কিনা?
–তুমি কি বললে?
–বললাম ঠিক করিনি।অনি পারু রাজি হলে নেবো।এ্যাই জানো আজ রাতে আমরা একসঙ্গে শোবো। বড়দিভাই ব্যবস্থা করবে বলেছে।সবার সামনে তুমি নীলাদি-নীলাদি করবে না, সবাই কি ভাবে বলতো?আমার ভীষণ লজ্জা করে। গাল টিপে দিতে বলেন, আসি,রাতে কথা হবে।
–ঠিক আছে দিদি বলবো না।অনির্বান বলেন।
নীলাঞ্জনা চলে যেতে অনির্বান ভাবলেন,একতলায় বৈঠকখানায় গিয়ে বসা যাক।একটা ঘরের দরজা ভেজানো এই ঘরে কেতকি আছেন।কি করছে বেচারি একা একা?ঘরটা পার হতে যাবেন মনে হল কে যেন হাত ধরে টান দিল।হ্যাচকা টানে ঘরের মধ্যে ঢুকে চিনতে পারলেন কেতকি।পিছন ফিরে দরজা বন্ধ করছেন।
–কি হল দরজা বন্ধ করছো কেন?অনির্বান জিজ্ঞেস করেন।
মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলেন কেতকি।অনির্বান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
–কাল থেকে তোমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।কেতকি বলেন।
–আমার সঙ্গে কি কথা?
–অনির্বান তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিও না।
–তুমি কি এখন কলেজে আছো?
–ওনি প্লীজ চিনু আমাকে অধ্যাপিকা বানিয়েছে বিশ্বাস করো।
–কলেজ শিক্ষিকা পরিচয় দিতে লজ্জা পাও?অথচ মিথ্যে বলতে লজ্জা হয় না?
–তুমি আমাকে নির্লজ্জ বেহায়া যা খুশি বলো,কিন্তু বিশ্বাস করো চিনু আমাকে ওর দাদার সঙ্গে অধ্যাপিকা বলে আলাপ করিয়ে দেয়।আমি বাধা দিতে পারিনি।
–যদি সব জানাজানি হয়ে যায় পরিনাম কি হবে ভেবেছো?
–তুমি না বললে কেউ জানবে না।চিনু বলেছে বিয়ের পর আমরা এখান থেকে চলে যাবো।আচমকা অনির্বানকে জড়িয়ে ধরে কেতকি বলেন, তুমি কি আমার এতবড় ক্ষতি করতে পারবে? শুনেছি তুমি নীলাঞ্জনাদেবীকে বিয়ে করেছো।উনি যদি আমাদের আগের সম্পর্ক জানতে পারেন তাহলে?আমি তোমার ভাল চাই…।
এক ধাক্কায় বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে কেতকিকে বলেন অনির্বান, তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?
কেতকি মাটিতে পড়ে গিয়ে উঠে বসে অনির্বানের ধোনে মুখ গুজে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি পুরানো কথা আজও ভুলতে পারোনি?
–শোন কেতকি সেদিন তুমি যা করেছো তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজ আমি যা পেয়েছি তা আমার কাছে ঈশ্বরের আশির্বাদ।আমার সঙ্গে নীলাদির সম্পর্ক স্বচ্ছ কাচের মত।আমার অতীত নিয়ে নীলাদির ভাবার মত সময় নেই।
বাইরে থেকে কে যেন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।
–দোহাই অনির্বান তুমি ওই আলমারির পিছনে চলে যাও।
অনির্বান আলমারির আড়ালে যেতে কেতকি উঠে দরজা খুলে দিলেন।হাসি মুখে নীলাঞ্জনা প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করেন,কি ঘুমুছিলেন নাকি?
অনির্বান আলমারির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন।তাকে দেখে নীলাঞ্জনা মজা করে বলেন,তুমি এখানে?পুরানো প্রেম ঝালাই করছিলে নাকি?
–কি করবো তুমি তোমার দিদিকে নিয়ে মজে আছো,একা কি করবো বলো?
–তাই?দাড়াও পারুকে ডাকছি।ভাগো এখান থেকে।
অনির্বান দ্রুত পালিয়ে গেল।বিস্ময়ে নির্বাক কেতকি হা করে তাকিয়ে থাকেন।তারপর অস্ফুটে বলেন, আমি ওনাকে ডেকেছিলাম।
–তোমাকে আর সাফাই দিতে হবে না।ওকে আমি চিনি না ভেবেছো?
ভদ্রমহিলা কি সব জানেন?কেতকি ভাবে এখান থেকে না বেরনো অবধি শান্তি নেই।পারু কে?পারুর নাম শুনতেই ভয়ে পালাল।ধন্দ্বে পড়ে যায় কেতকি।